আষাঢ়ে শ্রাবণের বর্ষণ পর্ব -৩৯

#আষাঢ়ে_শ্রাবণের_বর্ষণ
#মাইশাতুল_মিহির

[পর্ব-৩৯]

(গল্পে উল্লেখিত বাড়ি ও চা বাগান সম্পূর্ণ কাল্পনিক)

বাড়ির দক্ষিণ পাশে রয়েছে বিশাল চা বাগান। প্রায় পঁচিশ শতক জায়গা জুড়ে এই জমিতে চা বাগান করা হয় প্রতি বছর। বাগানের চারপাশে ইটপাথর দিয়ে দেয়াল তৈরী করে ঘিরে রাখা হয়েছে। শুধুমাত্র কর্মচারী ব্যতিত অন্যান্য মানুষ কিংবা পর্যটক দের পর্যন্ত ভিতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না। বাড়ির মালিকরা দেশের বাহিরে থাকায় এই কঠোর নিয়ম জাড়ি করে রেখেছে। বাগানটির নাম “চন্দ্রিমা চা বাগান”। জমিদার আরজু তার মায়ের স্মরণে এই বাগানের নামকরণ করেছে। সেই থেকে এখন অব্দি এখানে অনবরত চা উৎপাদন করা হয়।

দক্ষিণা বাতাস। চা বাগানের সবুজে শ্যামলের সৌন্দর্যে পরিবেশ অতুলনীয় লাগছে। তার উপর আবার শ্রাবণ মাসের প্রথম সাপ্তাহ। গ্রীষ্মকালের মতো বিশাল উল্কাপিণ্ডের তীব্রতর রোদের ঝলক নেই এই মাসে। বর্ষাকাল হওয়ায় পরিবেশটা স্নিগ্ধ। আকাশটা একদম স্বচ্ছ। থোকায় থোকায় সাদা মেঘেদের আনাগোনা চলছে দূর আকাশে। বাগানের পাশে খোলামেলা জায়গায় সবুজ ঘাসে পরিপূর্ণ। সেখানে পিকনিকের আয়োজন বসিয়েছে সবাই। কাঠের তৈরি লম্বা ব্যঞ্চের উপর বিভিন্ন ধরনের ফল, কয়েক প্রকার চাইনিজ খাবার ও বিভিন্ন স্বাদের পানীয় এর সংমিশ্রণে সাজানো হয়েছে। বাগানের মাঝে একটা ছায়াবৃত লম্বা গাছের নিচের আবরার ও রাইমা পাশাপাশি বসে সামনে তাকিয়ে নুরা ও রিমির দুষ্টুমি দেখছে। অভ্র ও আরিয়ান মিলে টেবিলের কাছে দাঁড়িয়ে ফল কাটছে জুশ বানানোর জন্য। কিছুসময় পর সেখানে কথা বলতে বলতে উপস্থিত হলো সাবিত ও রাজিব। দুইজন আবরারের কাছে গিয়ে হাত মিলিয়ে পাশে বসলো। সবার থেকে অনেকটা দূরে দাঁড়িয়ে মোবাইলে কথা বলছে রাজ।
.

ফল কাটার ফাঁকে ফাঁকে আড় চোখে রিমির দিকে তাকাচ্ছে অভ্র। রিমির ব্যবহার আজ অদ্ভুত লাগছে তার। হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো সময় দুপুর এগারোটা। অথচ এখন অব্দি রিমি তার সাথে কথা বলা তো দূর ফিরেও তাকাচ্ছে না। মেয়েটা কি এখনো রেগে আছে তার উপর? চিন্তিত হয়ে নিচের ঠোঁট কামড়ে সামনে তাকালো। হাস্যউজ্জ্বল চেহারার মায়াবী মুখখানি পূর্ণ চোখে দেখলো। কিন্তু অন্যান্য দিনের মতো প্রফুল্লিত হলো না তার মন। অস্থিরতা কাজ করতে লাগলো মনে। যতক্ষণ না রিমির রাগ ভাঙ্গাতে পারছে ততোক্ষণ শান্ত হবে না তার মন।কিন্তু রাগ ভাঙ্গাবে কিভাবে? রিমির পছন্দ অপছন্দ সম্পর্কে কিছুই জানে না। তাহলে কিভাবে কি করবে? আবারো নতুন চিন্তা মাথায় ঢুকলো। অন্যমনস্ক থাকায় ভুলবশত ডান হাতের বৃদ্ধা আঙ্গুলে ফল কাটার ছু:ড়ি লেগে কিছুটা কে:টে গেছে। “Shit” বলে ব্যাথায় মৃদু আর্তনাদ করে উঠলো অভ্র। আরিয়ান তার হাতের দিকে তাকিয়ে ভ্রুঁ কুঁচকে বললো, ‘আল্লাহ! হাত কাটলা কেমনে?’

অল্প কা:টার কারণে রক্ত বেশি আসে নি। অভ্র এই অল্প পরিমাণের রক্তটা টিস্যু পেপার দিয়ে মুছতে মুছতে শুধাল, ‘ঔ একটু লেগে গেছে।’

আরিয়ান আশেপাশে একবার তাকিয়ে অভ্রকে ফিশফিশ করে নিচু গলায় বললো, ‘থাক ভাই এই কথা পাবলিক কইরো না। মেয়ে মানুষেরা উঠতে বসতে উ:ষ্ঠা খায়। কাজ করার সময় হাত কা:টা তাহাদের মানায়। আমাদের না। ছেলেদের হাত পাকাপোক্ত থাকা লাগে। ওই মাইয়া টারে দেখছো?’

রাইমার দিকে ছু:ড়ি তুলে ইশারা দিয়ে বললো আরিয়ান। অভ্র রাইমার দিকে তাকাতেই আরিয়ান আবারো বলে উঠলো, ‘এই মাইয়াটা সাংঘাতিক। সামান্য কয়েকটা ফল কাটতে গিয়া হাত কাটছি একবার টের পাইলে মানসম্মান এক্কেরে ত্যানা ত্যানা কইরা দিবো। তাই ইজ্জত বাঁচাইতে চুপচাপ থাকো।’

আরিয়ানের কথা শুনে শব্দ করে হেসে ফেললো অভ্র। তার এই হাসি শব্দ রিমির কান অব্দি পৌঁছালো। কপাল কুঁচকে অভ্রের দিকে তাকালো। দেখলো অভ্র হেসে হেসে আরিয়ানের সঙ্গে কথা বলছে। তার ভাব দেখে বুঝা যাচ্ছে সে মহাখুশি। কিন্তু এই হাসিখুশি থাকা অভ্রকে দেখে সহ্য করতে পারলো না রিমি। নিরবে দাঁতে দাঁত পিষলো। কাল থেকে সে রেগে আছে অথচ এখন পর্যন্ত তার রাগ ভাঙ্গানোর চেষ্টা করলো না। আর এইদিকে ঠিকই হেসে হেসে কথা বলছে। রিমির রাগ হলো প্রচুর। অভিমান জমলো মনে। অভ্র তাহলে তাকে ভালোবাসে না? তার রাগ অভিমান অভ্রের কাছে কিছুই না? চোখ ঘুরিয়ে আবারো অভ্রের দিকে তাকালো রিমি। না! এই বদ ছেলের সাথে অভিমান রিমির মতো ইন্টেলিজেন্ড একটা মেয়ে কখনোই করবে না। কিছুতেই না। মুখ বাঁকিয়ে নুরার দিকে তাকাতেই নুরার কানের দিকে নজর গেলো তার। নুরার কানের ঝুমকা দেখে প্রশ্ন জাগলো মনে। কিছুদিন আগে সেম ডিজাইনের সাদা লং কুর্তি বানিয়েছিলো তিনজন। কুর্তির সঙ্গে মিলিয়েই এই ইয়ারিং কিনেছিলো। কিন্তু দুর্ভাগ্য বশত নুরার একটা ইয়ারিং ভেঙ্গে গেছে। কিন্তু এখন নুরার কানে সেই ইয়ারিং টা আসলো কোথায় থেকে? মনে প্রশ্ন জাগতেই চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে নুরার উদ্দেশ্যে বলে উঠলো, ‘এই ইয়ারিং কোথায় পেলি?’

নুরা ভাব নিলো একটু। কানের পিছনে চুল গুঁজে লাজুক লাজুক স্বরে বললো, ‘দীবার টা নিয়েছি। সুন্দর লাগছে না আমাকে?’

নুরার প্রত্যুত্তর শুনে বিস্মিত হলো রিমি। চোখ দুটো রশগোল্লা সাইজ করে বললো, ‘তুই না জানিয়ে নিয়েছিস?’

নুরা বিরক্তিতে কপাল কুঁচকে বললো, ‘এখানে জানোর কি আছে? আমারটা ভেঙ্গে গেছে তাই দীবার টা পরেছি। দীবা অন্যটা পরুক।’

রিমি হতাশ হয়ে এক হাতে কপাল চাপড়ালো। তখুনি পিছন থেকে দীবার রাগান্বিত কণ্ঠস্বর কানে আসলো সবার। পিছু ফিরে তাকাতেই দেখলো দীবা লং কুর্তি দুই হাতে হালকা উঠিয়ে দৌড়ে আসছে। তাকে এভাবে আসতে দেখে ভড়কালো নুরা। ভয়ার্ত মনে শুকনো ঢোক গিললো। আবরার চোখ ছোট ছোট করে প্রশ্নাত্মক দৃষ্টিতে তাকালো দীবার দিকে। হঠাৎ দীবার এভাবে দৌড়ে আসার কারণ বুঝতে পারলো না। রাইমা তিনজনের মতিগতি দেখেই বুঝে গেলো তাদের মাঝে আবারো কোনো কারণে বিরাট ঝগড়া লেগেছে। তাই পরিস্থিতি সামলাতে দ্রুত বসা থেকে উঠে নুরা আর রিমির কাছে গেলো। নুরা তাকে দেখে নিজেকে আড়াল করার জন্য রাইমার পিছনে গিয়ে দাঁড়ালো।

দীবা দৌড়ে আসায় হাঁপিয়ে গেছে প্রায়। বড় বড় নিশ্বাস নিতে নিতে নুরাকে আক্রমণ করার চেষ্টা করে বলে উঠলো, ‘চু:ন্নি, আমার ইয়ারিং চুরি করেছিস কেন?’

নুরা রাইমার পিছু থেকে নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করে বললো, ‘ঝুমকায় কারোর নাম লিখা ছিলো না। তাই পরে নিয়েছি।’

দীবা দ্বিগুণ রাগে ঝাঁঝালো গলায় বললো, ‘তাই বলে আমার টা না বলে নিয়ে নিবি? আমার ইয়ারিং দুটো দে। দিতে বলছি তোকে। নুরা?’

‘পারবো না।’ বলে দৌড়াতে লাগলো নুরা। তাকে ধরার জন্য পিছু দৌড়াচ্ছে দীবা। নুরা দৌড়ে আরিয়ানের পিছনে আসলো। তারপর গেলো রাইমার পিছনে। এভাবে এক এক করে দৌড়ে নিজেকে বাঁচাচ্ছে। দীবাও কম কিসের। নুরাকে আজ ছাড়বে না। তাই পিছু দৌড়ানো থামাচ্ছে। দুইজনের এমতাবস্থা দেখে বাকিরা হেসে বেহুঁশ প্রায়। রাইমা আপ্রাণ চেষ্টা করছে দুজনকে থামাতে। কিন্তু পারছে না। অবশেষে আবরার উঠে দাঁড়ালো। দীবার বাহু ধরে থামাতেই দীবা নিজেকে ছাড়ানোর জন্য হাত মোচড়াতে মোচড়াতে নুরার দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে বললো, ‘ছাড়ুন আমার হাত। এই মাইয়াকে যদি না আজকে মজা দেখাইছি। আমার শখের ইয়ারিং চুরি করা? নুরার বাচ্চা।’

নুরা সাবিতের পিছনে দাঁড়িয়ে দীবাকে জিভ কেটে ভেঙচি দিলো। আবরার দীবাকে থামাতে এক হাতে দীবার কোমড় জড়িয়ে ধরে অপর হাতে দীবার দুইহাত মুষ্টিবদ্ধ করলো। তবুও দীবা নুরার দিকে তেড়ে যাবার চেষ্টা করছে। আবরার বললো, ‘ক্লাম ডাউন দীবা। সামান্য একটা ইয়ারিং’য়ের জন্য এভাবে কেউ ঝগড়া করে? অন্যরা কি ভাব্বে বলো তো? তোমরা দুইজন কি এখনো বাচ্চা রয়েছো?’

সবাই কিংকর্তব্যবিমূঢ়। চুপচাপ ঠোঁটে ঠোঁট চেপে হেসে দুইজনের কাণ্ডকারখানা দেখছে শুধু। সেইদিকে বিন্দুমাত্র ধ্যান নেই দীবার। সে আবরারকে ঝাড়ি দিয়ে বলে উঠলো, ‘আশ্চর্য আমাকে বলছেন কেন? এই মেয়ে আমার ইয়ারিং নিয়েছে কেন? নুরা..”

দীবার কথা বলার আগেই নুরা বলে উঠলো, ‘সামান্য একটা ইয়ারিং’ই তো নিয়েছি। তাই এভাবে সাপের মতো তেড়ে আসবি? এই তোর বন্ধুত্ব?’

দীবা কপাট রাগ দেখিয়ে বলে উঠলো, ‘তুই চুরি না করে চাইলে আমি দিতাম না? চুরি করলি কেন? চু:ন্নি।’

নুরা রাগ রাগ গলায় উত্তর দিল, ‘খবরদার একদম চু:ন্নি বলবি না।’

‘চুরি করলে বলবোই। চু:ন্নি! চু:ন্নি!”

আবরার দীবার কোমড় ধরে অন্যদিকে ঘুরালো যেন নুরাকে দেখতে না পায়। দীবাকে শান্ত করতে ফিশফিশ করে বললো, ‘রিলেক্স দীবা। আমি তোমাকে ইয়ারিং কিনে দিবো। এবার ঝগড়া থামাও।’

নতুন ইয়ারিং’য়ের কথা শুনে সকচকিত হলো দীবা। হাসি হাসি চেহারায় আবরারের দিকে তাকিয়ে বললো, ‘আমার অনেক গুলো লাগবে। দিবেন?’

আবরার চোখের ইশারায় হ্যাঁ বুঝালো। মহা খুশি হলো দীবা। আবরার তার কোমড় ছেড়ে দিতেই দীবা নিজের চুল গুলো ঠিক করতে করতে বললো, ‘হে হে। তুই আমার পুরান গুলা নিয়াই পরে থাক। আমি নতুন কিনবো। তখন তোকে দিবো না।’

নুরা ভেঙচি কেটে বললো, ‘নতুন কিনলে এমনিতেই আমার ভাগে আসবে। নো টেনশন।’

দীবাও ভেঙচি কাটলো নুরাকে। তারপর টেবিলের কাছে আসলো কি কি আইটেম আছে দেখার জন্য। রিমি নুরার মাথায় একটা গাট্টা মে:রে বললো, ‘চুরি করে নিজেই চু!ন্নি পদবি পেলি। গা!ধা।’

অন্য সবাই ব্যাপার টা স্বাভাবিক ভাবে নিলেও রাজের কাছে মোটেও স্বাভাবিক লাগলো না। নিরবে চোয়াল শক্ত করে চুপচাপ দূরে দাঁড়িয়ে রইলো সে। প্রথমে দীবার বাচ্চামোতে হাসি পেলেও আবরার দীবার কাছে যাওয়াটা পছন্দ হয় নি। তার উপর আবার যখন দেখলো আবরার দীবার কোমড় জড়িয়ে ধরেছে তখন চোয়াল শক্ত হয়ে এসেছিলো আপনা-আপনি। দীবাকে সে ব্যতিত অন্য কেউ ছোঁবে সেটা সে কখনোই সহ্য করবে না। হিংসে হলো প্রচুর। নিরবে চুপচাপ নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেছে। মনে মনে নিজেকে এই বলে শান্ত্বনা দিয়েছে যে দীবাকে হয়তো রিমি নুরার মতোই বোন হিসেবে ট্রিট করে আবরার। তবুও ক্রোধ কমলো না তার। শতগুণ বেশি রাগ নিয়ে আবরারের দিকে তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে ছিলো কেবল।
________________________

দুপুরের খাবারের আয়োজনটা হলো একদম জমজমাট। খোলা নীল আকাশের নিচে, সবুজ শ্যামল ঘাসের মাঝে বসে সম্পন্ন হলো খাওয়া দাওয়া। হাসি, ঠাট্টা-তামাসার মাধ্যমে উল্লাসিত করেছে চারপাশ। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হলো। সূর্যমামা পশ্চিমাকাশে হেলে গেলো। মৃদু শীতল প্রাণবন্ত বাতাসে মন সবার ফুরফুরে। এবার প্রসঙ্গ উঠলো ফটিকছড়ির কোথায় কোথায় ঘুরতে যাবে এই নিয়ে। সেই অনুযায়ী সবাই প্ল্যান করতে লাগলো।

আয়েশী ভঙ্গি ছেড়ে সোজা হয়ে বসলো আরিয়ান। তারপর সবার উদ্দেশ্যে বললো, ‘হাজারিখিল অভায়রন্য তে যাবো। ট্রি এক্টিভিটি আর জিপ লাইন আছে সেখানে।’

তারপর রাইমার দিকে তাকিয়ে বললো, ‘তোরা তো জিপ লাইনে উঠিস নি? এই চান্সে উঠতে পারবি।’

রাইমা মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে মাথা দুলিয়ে ”হ্যাঁ” জানালো। রিমি আরিয়ানের কথায় সম্মতি দিয়ে উল্লাসিত হয়ে বলে উঠলো, ‘ইয়ে আমিও জিপ লাইলে উঠবো।’

মোবাইলে ইমেল চেক করছিলো রাজিব। আরিয়ানের কথা শুনে ভ্রুঁ কুঁচকে তাকালো তার দিকে। তারপর বললো, ‘এই বর্ষাকালে ট্রি এক্টিভিটি দেখাতে আর জিপ লাইনের চড়ার চিন্তা করছো? বৃষ্টির পানিতে ভিজে গাছ পিচ্ছিল হয়ে আছে। পরে গিয়ে হাত-পা ভাঙ্গবে। এতো রিক্স নেবার দরকার কি?’

আরিয়ান রাজিবের কথার প্রত্যুত্তর করলো, ‘গত দুইদিন বৃষ্টি হয় নি। এই দুইদিনে গাছ শুকিয়ে গেছে। সমস্যা হবে না। বিকেলে ট্রি এক্টিভিটি আর আগামীকাল সকালে জিপ লাইনে। তারপর দাঁতমারা রাবার বাগানে। রাইমার বহু দিনের শখ সেখানে গিয়ে রান্নাবাটি খেলবে।’

আরিয়ানের শেষের কথাটা শুনে রাইমার দিকে তাকিয়ে হেসে ফেললো রাজিব। রাইমা লজ্জাভূতি হয়ে মাথা নিচু করে লাজুক হাসলো। নুরা চোখ ছোট ছোট করে রাইমার লজ্জা মাখা মুখ দেখলো। রিমির হাতে মৃদু ধা:ক্কা দিয়ে চোখের ইশারায় রাইমাকে দেখালো। তারপর ফিশফিশ গলায় বললো, ‘দেখ লজ্জায় কিভাবে ব্লাশিং হচ্ছে। ভাবতে পারছিস দুলাভাই কতো রোমান্টিক? তার মানে স্যার তার থেকেও বেশি রোমান্টিক হবে। উফফ আমাদের বিয়ের কয়েকমাস পরেই খালামনি হবার নিউজ পাবি। হিহি।’

নুরার এমন বেফাঁস কথা শুনে রিমি মুখের সামনে হাত এনে খুকখুক করে কেশে উঠলো। শুকনো ঢোক গিলে ঠোঁটে হাসি রেখেই দাঁতে দাঁত পিষে বললো, ‘আগে শিওর হয়ে নে স্যারের গার্লফ্রেন্ড আছে কিনা। নাহলে তোর এই চিন্তাভাবনা কল্পনাতেই থাকবে।’

নুরা ভাব নিয়ে বললো, ‘আমি শতভাগ নিশ্চিত।’ রিমি প্রত্যুত্তর করলো না আর। উল্লাসকর নয়নে সবার পরিকল্পনা শুনতে লাগলো।

আবরার চুপচাপ এক পাশে বসে দীবার দিকে তাকিয়ে আছে। সাদা রঙের লং কুর্তির সঙ্গে গলায় লাল ওড়না ঝুলানো। উন্মুক্ত চুল গুলো বাতাসে উড়ে উড়ে চোখেমুখে এসে পরছে। হাস্যউজ্জ্বল চেহারায় দীবা অবাধ্য চুল গুলো কানের পিছনে গুঁজে দিচ্ছে। দীবার এই অপরূপ বহিঃপ্রকাশ দেখে বারংবার বিমুখিত হয় আবরার। চোখে কালো রোদ চশমা থাকায় সবার সাথে বসেও অনায়াসে দীবাকে অবলোকন করতে পারছে আবরার।

অল্পসল্প পরিকল্পনা করার পরেও আরিয়ানের মনমতো হচ্ছে। হতাশ হয়ে তপ্ত শ্বাস ফেলে বললো, ‘এই চারদিনে আর কোথায় কোথায় যাওয়া যায়? পাহাড়ে, ঝর্না, ঝিলপাড় এই বর্ষাকালে যাওয়া সম্ভব না। ট্র‍্যাকিং করা তো একেবারে অসম্ভব। ধ্যাৎ!’

আবরার নিজেও অসন্তোষ হয়ে শুধাল, ‘ট্র‍্যাকিং ছাড়া ঘুরাঘুরি একদম পানি ভাতের মতো লাগবে।’

সবার কথোপকথন মৌনতার সঙ্গে শুনছিলো রাজ। অনেকক্ষণ পর মুখ খোলে নিজের মতামত পেশ করলো, ‘রাঙ্গুনিয়া চা বাগান কিন্তু অনেক সুন্দর। চাইলে সেখানেও যেতে পারো।’

দীবা আনন্দিত হয়ে একপ্রকার লাফিয়ে বলে উঠলো, ‘হ্যাঁ রাঙ্গুনিয়া চা বাগান ভিডিওতে দেখেছি। অনেক সুন্দর জায়গা। সেখানই যাবো।’

দীবার আমোদিত চেহারা ও হাসি দেখে মাথা নিচু করে মৃদু হাসলো রাজ। ঠোঁটে হাসি রেখেই দীবার দিকে মুগ্ধ চোখে তাকালো।আরিয়ান ও রাইমা সম্মতি দিলো রাজের কথায়। রাঙ্গুনিয়া যাওয়া ফাইনাল করলো। সবাই একত্রে আড্ডা, হাসি, ঠাট্টা করতে লাগলো। দীবাকে এতো আনন্দিত, উল্লাসিত ও প্রাণচঞ্চল দেখে মুগ্ধ হয়ে এক মনে তাকিয়ে রইলো রাজ। ঠোঁটে তার মৃদু হাসি বিরাজমান।

রাজের এই চাহনী অন্য কেউ খেয়াল না করলেও আবরার ঠিক-ই খেয়াল করেছে। চোখমুখ ও চোয়াল শক্ত করে বসে রইলো চুপচাপ। আবরার এবার শতভাগ নিশ্চিত হলো যে রাজ দীবাকে পছন্দ করে। এতোদিন ভেবেছিলো রোশান উরফে তার নিজের বাপ রাজের সঙ্গে দীবার বিয়ের কথা বলেছে। কিন্তু এখন দেখলো তার উল্টো। রাজ দীবাকে পছন্দ করে। এই জন্যই সেদিন রাজের বাবা বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে? তাহলে রাজ দীবাকে আগে থেকেই চিনতো। শুধুই কি কলেজের টিচার হিসেবে নাকি অন্য মাধ্যমে? হাজার টা প্রশ্ন ঘুরপাক খেলো মাথায়। সব চিন্তা শেষে রাজের উপর ব্যক্তিগত ভাবে ক্ষোভ তৈরি হলো। মারাক্তক রাগান্বিত হলো রাজের উপর। এখানে বসে থাকলে রাগের বহিঃপ্রকাশ পাবে। তাই পরিস্থিতি সামাল দিতে চুপচাপ উঠে দাঁড়ালো চলে যাবার সময়। যাওয়ার আগে দীবাকে চোখে ইশারা করলো যাবার জন্য। তারপর হনহন পায়ে চা বাগান থেকে বাড়ির ভিতরে।

আবরারের তীক্ষ্ণ চোখের দৃষ্টি দেখে বিস্মিত হলো দীবা। আবরার যে কোনো কারণে ভয়ংকর ভাবে রেগে আছে অনায়াসে বুঝে গেলো দীবা। ভয়ার্ত হলো তার মন। প্রশ্ন জাগলো মনে। হঠাৎ এমন কি হলো যে এভাবে রেগে গেলো? সে তো কোনো ভুল করে নি। তাহলে? আশেপাশে সবার দিকে তাকালো। কিভাবে যাবে এখান থেকে? কি বলবে? ঠোঁট কামড়ে ভাবতে লাগলো।

চলমান…#আষাঢ়ে_শ্রাবণের_বর্ষণ
#মাইশাতুল_মিহির

[পর্ব-৪০] প্রথমাংশ

দুইতলার বিশাল লম্বা বারান্দা দিয়ে হাঁটছে দীবা। উদ্দেশ্যে আবরারের রুমে যাওয়া। তবে দীবা মোটেও ভয়ার্ত কিংবা চিন্তিত না। বরঞ্চ ফুরফুরে মনে হেলেদুলে গুনগুন করে গান গাইতে গাইতে আবরারের রুমের দিকে অগ্রসর হচ্ছে।

তোমার ইচ্ছে গুলো, ইচ্ছে গুলো
তোমার ইচ্ছে গুলো ইচ্ছে হলে
আমায় দিতে পারো
আমার ভালো লাগা, ভালোবাসা
তোমায় দেবো আরো।

তুমি হাতটা শুধু ধরো,
আমি হবো না আর কারো।
তোমার স্বপ্ন গুলো আমার চোখে
হচ্ছে জড়সড়।

হঠাৎ-ই কেউ একজন দীবার হাত টেনে অন্ধকার একটা রুমে নিয়ে গেলো। আকস্মিক ঘটনায় ভড়কে গেলো দীবা। প্রকাণ্ড রকমের ভয়ের কারণে চিৎকার করে উঠতে নিলেই জানালার ঝাপসা আলোতে আবরারের মুখশ্রী দেখে ভয়ার্ত মন শান্ত হলো কিছুটা। জোরে জোরে নিশ্বাস নিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করলো। চোখ তুলে আবরারের দিকে তাকাতেই দেখলো আবরার নেশাক্ত চোখে তাকিয়ে আছে তার দিকে। আবরার দীবার দিকে একটু এগিয়ে নিবিড় হলো। দুজনের দূরত্ব ঘুচিয়ে দীবার ঘাড়ে মুখ ডুবালো। ঘাড়ে গভীর একটা চুমু দিয়ে মৃদু কন্ঠে বললো,

‘আমার অনেক ইচ্ছে রয়েছে দীবা। আমার ইচ্ছে তোমাকে কাছে পাবার। তোমার পাশে বসে সূর্যাস্ত দেখার। তোমার হাত ধরে সারাজীবন পথ পাড়ি দেবার। সমুদ্রজলে পাশাপাশি হাত ধরে হাঁটার। আমার আরো অনেক ইচ্ছে আছে দীবা। সব ইচ্ছে আমি তোমাকে দিলাম। এবার পূরণ করার দায়িত্ব তোমার।’

আবেশে চোখ বন্ধ করেছিলো দীবা। আবরারের শার্ট খামচে ধরে আলতোভাবে শুধাল, ‘নিলাম দায়িত্ব। কিন্তু গাড়ি ভাড়াটা আপনার।’

দীবার উন্মুক্ত ফরশা ঘাড়ে ঠোঁট বুলাচ্ছিলো আবরার। এমন প্রত্যুত্তর শুনে মৃদু শব্দ করে হেসে ফেললো। মাথা উঠিয়ে দীবার চোখের দিকে তাকাতেই দীবাও চোখ খোলে আবরারের দিকে তাকালো। দুইজন দুজনের চোখের মায়ায় অনন্ত কালের জন্য আটকে পরলো। অদ্ভুত মায়া, আসক্তি কাজ করলো দুজনের মনে। আবরার দীবার চোখের দিকে তাকিয়ে নেশাক্ত গলায় বলে উঠলো, ‘আই লাভ ইউ দীবা!’

দীবা চোখ বন্ধ করে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে বিরক্তিকর নিশ্বাস ফেললো। তারপর চোখমুখ শক্ত করে আবরারের বুকে ধা:ক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দিলো। হঠাৎ এমন করায় হতভম্ব হয়ে গেলো আবরার। বিস্ময়কর চোখে দীবার দিকে তাকাতেই দীবা রেগে বলে উঠলো, ‘এতো কিপটা কেন আপনি?’

এবার যেন হতবুদ্ধি হলো আবরার। ফ্যালফ্যাল করে চোখে তাকিয়ে অমৃসণ কন্ঠে বললো, ‘কিপটামির কি করলাম?’

‘ক্যান্ডেল, ফুল, বেলুন, চকলেট আরো কতো কিছু দিয়ে সুন্দর করে সাজিয়ে কত রোমান্টিক ভাবে মানুষ প্রপোজ করে। আর আপনি? একটা ফুল তো দূর ভাঙ্গা একটা ঘরে অন্ধকারে প্রপোজ করলেন। এটা কিপটামি না?’

হতভম্ব আবরার কোনো রকমে বললো, ‘এটা ভাঙ্গা ঘর না। আমার রুমটা।’

দীবা দ্বিগুণ রাগে ঝাঁঝালো গলায় বললো, ‘একই তো কথা। বিয়েতেও কোনো অকেশন হলো না। প্রপোজালও সুন্দর ভাবে সারপ্রাইজ দিলেন না। এতো বড় নামকরা নায়ক হয়েও কতো বড় কিপটা।’

‘তুমি তো আমার বউ-ই।’

‘বউ তো কি হয়েছে? তাই বলে একটু সারপ্রাইজ ডিজার্ভ করি না? কিপটার দল।’

রাগে, দুঃখে, মহাকষ্টে কথা গুলো বলে হনহনিয়ে রুমের বাহিরে চলে আসলো দীবা। মনে মনে ভাবলো তার কপাল টাই খারাপ। অত্যন্ত দুঃখময় চেহারায় ঠোঁট উলটে বারান্দা দিয়ে হেঁটে নিচে যাবার জন্য পা বাড়াতে লাগলো। তখুনি আকাশে মেঘেদের ডাক কানে আসলো তার। বিস্মিত হয়ে চটজলদি বারান্দার রেলিং ধরে আকাশের বুকে উঁকি দিলো। ঘন কালো মেঘদের আনাগোনা নজরে এলো তার। শীতলতর বাতাস চারপাশে সু-সু শব্দ তুললো। কিছুক্ষণ আগেও আকাশটা স্বচ্ছ ছিলো একদম। কিন্তু এখন হঠাৎ-ই এমন মেঘাচ্ছন্ন হলো কেন? আকাশ থেকে চোখ নামিয়ে নিচে তাকাতেই দেখলো সবাই দৌড়ে আসছে। তাদের আসতে দেখে দীবা মিষ্টি করে হেসে তাকিয়ে রইলো।

আষাঢ় ও শ্রাবণ মাস দুটোই এমন। এখুনি ঝিরিঝিরি বৃষ্টি, এখুনি আকাশ মেঘাচ্ছন্ন আবার ধরনি কাপিয়ে ভারি বর্ষণ। হুটহাট আবহাওয়ার পরিবর্তন ঘটে। গত দুইদিন বৃষ্টি না হলেও আজ আগাম বার্তা ছাড়া বৃষ্টির আগমন ঘটলো। আকাশের বুক চিঁড়ে একটা দুইটা বৃষ্টির ফোটা পরতে শুরু করলো। দৌড়ে এসেও নিজেদের বাঁচাতে পারলো না কেউ। বাড়ির ভিতরে ঢোকার আগেই বৃষ্টির মাত্রা বেড়ে গেলো। অল্পসল্প ভিজিয়ে দিলো সবাইকে। দৌড়ে এসে সবাই বাড়ির ভিতরে ঢুকলেও বৃষ্টির মধ্যে বাহিরে দাঁড়িয়ে রইলো রাইমা। তাকে ওখানে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বিস্মিত হলো সবাই। দীবার ঠোঁটে আমোদিত মিষ্টি হাসি ফুটে এলো। কারণটা বুঝতে পেরে মহা আনন্দে লাফিয়ে নিচে নামার জন্য দৌড় লাগালো। রাইমাকে বৃষ্টির মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সাবিত ডাকলো, ‘বেকুব, ওখানে দাঁড়িয়ে ভিজছিস কেন? ভিতরে আয়।’

রাইমা ঠোঁটে ঠোঁট চেপে মুচকি হেসে মাথা দুই পাশে দুলালো। অর্থাৎ ভিতরে যাবে না সে। বড় ভাইয়ের কথা উপেক্ষা করে ডেকে উঠলো, ‘নুরা, রিমি ভিজবি তোরা?’

রিমি ও নুরা খুশিতে আত্মহারা হয়ে একে অপরের হাত ধরে চেঁচিয়ে উঠলো। এক দৌড়ে রাইমার কাছে গিয়ে বৃষ্টি ভিজতে লাগলো। সাবিত রেগে ধমকে উঠলো তিনজনকে, ‘তোরা ভিতরে আসবি?’

বোনদের প্রতি ভাইয়ের ভালোবাসা দেখে মৃদু হাসলো রাজ। হালকা ভিজে যাওয়া চুল গুলো এক হাতে ঝাড়তে ঝাড়তে সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠতে লাগলো। তখুনি সিঁড়ি বেয়ে হাসতে হাসতে নিচে নামতে লাগলো দীবা। চোখাচোখি হলো দুজনের। রাজ মুগ্ধকর চোখে দীবার দিকে তাকিয়ে উপরে উঠতে লাগলো। দীবা স্বাভাবিক ভাবে নিচে নেমে সবার কাছে আসলো। বৃষ্টিতে ভিজতে বাহিরে যাবার জন্য পা বাড়াতেই আরিয়ান দীবার বাহু ধরে আটকে ধরে বাধা দিলো। দীবা আকুতি মিনুতি করতে লাগলো। আরিয়ান দীবার এই করুণ চেহারা দেখে আর মানা করতে পারলো না। তাই হাত ছেড়ে দিলো। দীবা খুশিতে আত্মহারা হয়ে বাহিরে গিয়ে তিনজনের সাথে লাফিয়ে লাফিয়ে বৃষ্টি ভিজতে লাগলো। রাইমার ছেলেমানুষির কারণে আনমনে মৃদু হেসে ফেললো রাজিব।

মেয়েদের হাসির শব্দ কানে আসতেই আবরার রুম থেকে বেরুলো। দুতলার বারান্দার রেলিং ধরে রাজকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ভ্রুঁ জোড়া কুঁচকালো আবরার। রাজের ঠোঁটের মৃদু হাসি দেখে চোখের দৃষ্টি তীক্ষ্ণ করলো। রাজের থেকে চোখ ফিরিয়ে বাড়ির নিচে তাকালো। চারজন একত্রে হেলেদুলে বৃষ্টি ভিজতে দেখলো। আবরার আরেকটু খেয়াল করে দেখলো রাজ দীবার দিকে তাকিয়েই হাসছে। চোয়াল শক্ত হয়ে এলো তার। তবুও নিজেকে সংযত রেখে রাজের দিকে এগিয়ে এসে পাশে দাঁড়ালো। দুই হাতে নিজের এলোমেলো চুল গুলো গুছাতে গুছাতে প্রশ্ন করলো, ‘সুন্দর লাগছে তাই না?’

রাজ এখনো মুগ্ধ হয়ে দীবাকে দেখছে। যেন কোনো ঘোরের মধ্যে আছে সে। তাই আবরারের প্রশ্নের প্রত্যুত্তরে আনমনে বলে উঠলো, ‘ভীষণ!’

রাগ বাড়লেও প্রকাশ করলো না আবরার। বাঁকা হাসি দিলো একটা। নিজেও রেলিংয়ে ভর দিয়ে দাঁড়ালো। সামনে তাকিয়েই আবারো প্রশ্ন করলো, ‘দীবাকে কবে থেকে চিনেন?’

রাজ এবারো দীবার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে আনমনে বলে ফেললো, ‘প্রায় ছয় বছর হবে।’

কথাটা বলার পরপরই মস্তিষ্ক সজাগ হলো রাজের। চকচকিয়ে আবরারের দিকে তাকালো। হুট করে কি থেকে কি বলে ফেললো সে? এতো বড় বোকামো তাকে দিয়ে কিভাবে সম্ভব? নিজেই নিজের উপর বিরক্ত হলো রাজ। আবরার নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে অল্প শব্দে হাসলো। তারপর উষ্ঠধয়ে জিভ বুলিয়ে রাজের দিকে সোজা হয়ে দাঁড়ালো। চোখের দৃষ্টি স্বাভাবিক থেকে তীক্ষ্ণ করলো। শান্ত কন্ঠে কাটকাট ভাবে বললো, ‘দীবার থেকে দূরে থাকবেন। আপনার জন্য এটাই ভালো। নাহলে..!’

আবরারের কথা সম্পূর্ণ হতে দিলো না রাজ। তার আগেই বলে উঠলো, ‘ভয় দেখাচ্ছেন?’

আবরার মাথা হালকা নাড়িয়ে বললো, ‘না ভয় দেখাচ্ছি না। ওয়ার্নিং করছি। এন্ড দিস ইজ মাই লাষ্ট ওয়ার্নিং।’

আবরারের কথা শুনে তাচ্ছিল্য হাসলো রাজ। ঠোঁটে হাসি রেখেই আবরারের মুখামুখি সটান হয়ে দাঁড়ালো। পকেটে দুই হাত গুঁজে বললো, ‘আমি দীবার কাছে থাকি কিংবা দূরে, তাতে আপনার কি?’

আবরার বাঁকা হেসে এক হাত উঠিয়ে রাজের কাধে রেখে বললো, ‘এতো তাড়া কিসের? সময় হলে জানতে পারবেন। আপাতত দীবার থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করবেন। শেষবারের জন্য সাবধান করছি।’

রাজের পাশ কাটিয়ে চলে গেলো আবরার। রাজ এখনো কিংকর্তব্যবিমূঢ়। হঠাৎ দীবাকে নিয়ে আবরারের কথা গুলো তার তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে। সন্দেহ প্রগাঢ় হলো তার। তবে বিশ্বাস করতে একটু কষ্ট হলো। এতো বড় সেলেব্রিটি কিনা দীবার মতো সাধারন একটা মেয়েকে পছন্দ করবে? এতোটাই সহজ? ঘাড় ঘুরিয়ে বাড়ির নিচে তাকালো রাজ। দেখলো দীবাকে বৃষ্টি ভিজতে বারণ করছে আবরার। দীবা বারণ না শুনায় আবরার দীবার বাহু টেনে ভিতরে নিয়ে গেলো। ক্রোধান্তিত হলো রাজ। চোয়াল শক্ত করে গটগট পায়ের কদম ফেলে নিজের রুমে চলে গেলো।

চলমান… (রিচেক করা হয় নি। ভুল গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন)

ট্রাইফোগ্রাফি ক্রেডিট : ইফতিহার মিলি. 🦋

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here