আষাঢ়ে শ্রাবণের বর্ষণ পর্ব -৫০+৫১

#আষাঢ়ে_শ্রাবণের_বর্ষণ
#মাইশাতুল_মিহির

[পর্ব-৫০]

কোলাহলপূর্ণ শাহ্‌ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। যে যার মতো ব্যস্ত। কেউ আপনজন কে বিদায় জানাতে এসেছে। আবার কেউ বহুদিন পর আপন মানুষদের নিতে এসেছে। এতো এতো মানুষদের ভীরে চুপচাপ এক পাশে বসে আছে রাজ। হাতে তার মোবাইল। স্কিনে ভেসে আছে পুরনো দীবার শাড়ি পরা সেই ছবি। যেটা মেলাতে লুকিয়ে তুলেছিলো রাজ। সেই ছবির দীবার সঙ্গে বর্তমানের দীবার অনেক পার্থক্য। তবুও রাজ দীবাকেই ভালোবেসে এসেছে। নিয়তি বোধহয় দীবাকে তার জন্য রাখে নি। কিন্তু দীবাকে ভালোবাসার সুন্দর সুন্দর অনুভূতি অনুভব করিয়েছে। দীর্ঘশ্বাস ফেললো রাজ। মনের বিরুদ্ধে গিয়ে দীবার ছবিটা ডিলেট করে দিলো। পুরনো স্মৃতি গুলো ভয়ে বেড়ানোর কি দরকার? সব কিছু ভুলে গেলেই ভালো। ছবিটা ডিলেট করার পর দীবার আরো একটা ছবি পেলো রাজ। এই ছবিটা তুলেছিলো গতবছর এইসএসসিদের র‍্যাগ ডের দিন। এটাও ডিলেট করে দিতে গিয়েও থেমে গেলো। দীবার পিছনে আরো একটা মেয়েকে এতোদিনে খেয়াল করলো সে। মেয়েটা নুরা। নুরার এই হাস্যউজ্জ্বল চেহারাটা দেখে মুহূর্তেই থমকে গেলো রাজ। বুকে চিনচিন ব্যাথা অনুভব করতে লাগলো। খালি খালি লাগলো নিজেকে। কিছু একটার অভাববোধ করতে লাগলো তার মন। ছবিটা Crop করে শুধুমাত্র নুরাকে রাখলো। ছবিটার দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ। কেন জানি নুরার ছবিটা কাটতে ইচ্ছে করলো না। নুরার সঙ্গে কাটানো সেই অল্পসল্প মুহূর্ত গুলো মনে করলো রাজ। ভালোলাগার পাশাপাশি নিজেকে একা একা অনুভব করলো।

‘এটা কে হয় তোমার?’

একজন ভদ্রমহিলার ডাকে পাশে ফিরে তাকালো রাজ। মহিলাটির বয়স আনুমানিক ষাটের কাছাকাছি। গায়ের চামড়া কুঁচকে গেছে একদম। পোশাকাশে আভিজাত্যের ছোঁয়া রয়েছে। মহিলাটির কথার প্রত্যুত্তর করলো না রাজ। আসলেই নুরা তার কে হয়? কেন-ই বা নুরার ছবি তার কাছে রাখবে? মহিলার থেকে চোখ ফিরিয়ে ছবিটার দিকে তাকালো। মৃদু গলায় শুধাল, ‘কেউ না।’

রাজের প্রত্যুত্তর শুনে ভদ্রমহিলা হেসে উঠলো। হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললো, ‘মোবাইলটা এদিকে দাও দেখি।’

রাজ বাধ্য ছেলের মতো মোবাইলটা মহিলার দিকে এগিয়ে দিলো। ভদ্রমহিলা কিছুক্ষণ সময় নিয়ে নুরার ছবিটা দেখে রাজের দিকে মোবাইলটা এগিয়ে দিয়ে বললো, ‘নাতবউয়ের নাম কি?’

‘নাতবউ’ শব্দটা শুনে থমথমে খেলো রাজ। হতভম্ব হয়ে তাকালো মহিলাটির দিকে। মানছে মহিলাটি তার দাদীর বয়সী। তাই বলে নুরাকে সরাসরি নাতবউ ডাকবে? অপ্রস্তুত রাজ কোনো রকমে উত্তর দিলো, ‘নুরা হোসাইন।’

‘ভালোবাসো তাকে?’

প্রশ্নটা শুনেই যেন থমকে গেলো রাজ। তাৎক্ষনাৎ নুরার ছবিটার দিকে তাকাতেই মুহূর্তেই তার কয়েকটা হার্টবিট মিস হয়ে গেলো। ঢুকঢুক শব্দ তুলে হৃদযন্ত্রটা কাঁপতে লাগলো। প্রশ্নের উত্তরটা কেন জানি বলতে পারছে না। কিন্তু সে তো নুরাকে ভালোবাসে না। তাহলে এমন অদ্ভুত অনুভূতির স্বীকার হচ্ছে কেন সে? উত্তর দিতে না চাইলেও গলা দিয়ে তার কথা বেরুলো না। রাজকে নিশ্চুপ থাকতে দেখে ভদ্র মহিলা স্মিতি হাসলো। তারপর কাঁপা কাঁপা গলায় বলে উঠলো, ‘দেখো বাবা, জীবনে আর যা-ই করো কখনো কাউকে ছেড়ে যাবার সিদ্ধান্ত নিও না। একবার ছেড়ে গেলে দ্বিতীয়বার ফিরিয়ে আনার সুযোগ থাকে না। জেদ বাদ দিয়ে মনের কথা শুনো। মেয়েটা দেখতে অনেক মিষ্টি। তোমাদের ভালো মানাবে। নিষ্পাপ মেয়েটাকে কষ্ট দিও না।’

মহিলাটির কথা শেষ হতেই রাজ হুট করে অস্থির কন্ঠে বলে উঠলো, ‘দাদী? আমার কেন জানি মনে হচ্ছে নুরাকে আমার প্রয়োজন। আবার মনে হচ্ছে নুরাকে তো আমি ভালোবাসি না। ওর সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। তাহলে তাকে ছেড়ে যেতে খারাপ লাগছে কেন? নুরার কথা মনে পরতেই অদ্ভুত ভাবে মনে ভালোলাগা কাজ করে। আমি…”

রাজের কথা সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই ভদ্রমহিলা বলে উঠলো, ‘তাহলে ছেড়ে যাচ্ছো কেন? যার কাছে তোমার প্রশান্তি মিলে তার কাছে থেকে যাও।’

রাজ নিরবে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো, ‘কিন্তু দেশে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব না।’

এইটুকু বলে থামলো ভদ্রমহিলা। তখুনি সেখানে উপস্থিত হলো একটা ছেলে। ছেলেটা এসেই বৃদ্ধাকে জড়িয়ে ধরে বলে উঠলো, ‘দাদু কেমন আছেন?’

হাসতে হাসতে নাতিনের সঙ্গে কথা বলতে বলতে চলে গেলো ভদ্রমহিলা। স্তব্ধ হয়ে বসে রইলো রাজ। নিশ্চুপ সে। আবারো সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগতে লাগলো। বারবার নুরার মুখখানি চোখের সামনে ভেসে উঠছে। নুরা? ঠোঁট নাড়িয়ে কয়েকবার নুরার নামটা আওড়ালো রাজ। তপ্ত শ্বাস ফেলে চুল গুলো খামচে ধরলো। চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে কয়েকবার নিশ্বাস নিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করলো।
___________________

শ্রাবণের আকাশে কালো মেঘ জমেছে। বিষণ্ণ কালো মেঘের ছায়ায় ঢেকে আছে গোলাকার চাঁদটা। পরিবেশ করেছে অন্ধকারাচ্ছন্ন। মেঘাচ্ছন্ন আকাশে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। অস্থির নুরা বারংবার মোবাইলে সময় দেখছে। তার মনে হচ্ছে রাস্তাটা দ্রুত এগুচ্ছে না।

‘তাড়াতাড়ি চালান চাচা। দেরি হয়ে যাচ্ছে।’

ড্রাইভার কে তাড়া দিয়ে বলে উঠলো নুরা। গলা শুকিয়ে আছে তার। বারবার মোবাইলে সময় দেখছে। কলিজা ধুকধুক করছে। দেরি করা যাবে না। যেভাবেই হোক রাজকে আটকাতে হবে। কিন্তু তার মনে হচ্ছে রাস্তা যেন শেষ হচ্ছেই না। তাই আবারো তাড়া দিলো। এবার ড্রাইভার কিছুটা অসন্তুষ্ট হয়ে বলে ফেললো, ‘আর কত জোরে চালাইতাম? আইয়া পরছি। আরেকটু বও।’

নুরার অস্থিরতা কমলো না। বাম হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে কপালের ঘাম মুছে নিলো। মনে মনে আল্লাহর নাম জপতে লাগলো। এয়ারপোর্টের সামনে গাড়ি থামতেই নুরা গাড়ি থেকে নামতে নামতে বললো, ‘চাচা, বাড়ি থেকে তাড়াতাড়ি বেড়িয়েছি তো তাই টাকা আনতে মনে নেই। ভাড়া টা কালকে দিবো।’

নুরা পরিচিত হওয়ায় মেনে নিলো লোকটা, ‘আইচ্ছা তুমি যাও।’

গাড়ি থেকে নেমেই সোজা এয়ারপোর্টের ভিতরে ঢুকলো নুরা। লেহেঙ্গা ধরে হাঁটতে হাঁটতে সামনে এগিয়ে গেলো। আশেপাশে মানুষজনের ভীর। এতো এতো মানুষের ভীর রাজকে খুঁজে বের করা কষ্টকর। তবুও নুরা খুঁজছে। ঘড়িতে সময় দেখে আবারো অস্থির হয়ে চারপাশে চোখ বুলাচ্ছে। চেহারায় তার ক্লান্তিজনক। কপালে জমে আছে বিন্দু বিন্দু ঘামের কণা। সেদিকে পাত্তা নেই নুরার। এয়ারপোর্টের ভিতরটায় খুঁজতে খুঁজতে হঠাৎ-ই চোখ পরলো যাত্রী বসে থাকার চেয়ার গুলোর দিকে। সেখানেই চুপচাপ বসে আছে রাজ। তাকে দেখেই শব্দ করে একটা নিশ্বাস ছুড়লো নুরা। নিজেকে স্বাভাবিক রেখে রাজের দিকে এগিয়ে গেলো।

রাজ মাথা তুলে সামনে তাকাতেই নুরাকে দেখতে পেয়ে বিস্মিত হলো। এখানে নুরার আসার ব্যাপারটা সম্পূর্ণ কল্পনাতীত ছিলো তার কাছে। অবাক চোখেমুখে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো রাজ। ভয়ানক আশ্চর্য হয়ে প্রশ্ন করে উঠলো, ‘তুমি এখানে?’

এতোক্ষণ অস্থির থাকার কারণে নুরার হার্টবিট দ্রুত চলছে। হাঁপাচ্ছে সে। কোনো রকমে শুকনো ঢোক গিলে বললো, ‘চলে যাচ্ছেন কেন?’

নুরার এখানে আসার ব্যাপারটা রাজ এখনো হজম করতে পারলো না। হতভম্ব, বিস্মিত হয়ে বলল, ‘যাওয়ার কারণ তুমি জানো। কিন্তু তুমি এখানে.??’

লেহেঙ্গা ধরে রাজের দিকে দু-কদম এগিয়ে এলো নুরা। অস্থির কন্ঠে বলে উঠলো, ‘কতোবার বুঝানোর চেষ্টা করেছি আপনি থেকে যান। এক জনের জন্য পরিবার ছেড়ে যাওয়া একদম ভুল সিদ্ধান্ত। প্লিজ যাবেন না।’

ফুঁশ করে তপ্ত শ্বাস ফেললো রাজ। শান্ত কন্ঠে নুরাকে বুঝাতে চাইলো, ‘নুরা এই ব্যাপারে আগেই আমাদের কথা হয়েছে। আর বলতে চাইছি না। তুমি কি এখানে একা এসেছো?’

তখুনি সেখানে উপস্থিত হলো একজন গার্ড। লোকটা এসে সকল আরোহীদের ভিতরে যাওয়ার কথা জানালো। সবাই এক এক করে উঠে ভিতরে যেতে লাগলো।তাদের যেতে দেখেই অস্থির হয়ে উঠলো নুরা। কম্পিত কন্ঠে রাজকে আকুতি করে বলে উঠলো, ‘প্লিজ স্যার থেকে যান। এই, এই ভুল সিদ্ধান্তটা বদলে ফেলুন। আরো অনেক উপায় আছে দীবাকে ভুলে থাকার। প্লিজ দেশ ছাড়বেন না। প্লিজ।’

গার্ড সবাইকে তাড়া দিলো। রাজ কোনো কিছু না ভেবে ব্যাগটা হাতে নিয়ে নুরাকে শান্ত কন্ঠে বললো, ‘বাড়ি যাও নুরা।’

স্তব্ধ হয়ে গেলো নুরা। রাজকে চলে যেতে দেখে ভাবার আর সময় পেলো না। পিছন থেকেই চেঁচিয়ে ডেকে উঠলো ‘আই লাভ ইউ স্যার।’

তাৎক্ষনাৎ দাঁড়িয়ে পরলো রাজ। কান দুটো টার বেজে উঠলো নুরার কথায়। বিস্ময়ের চূড়ান্ত পর্যায়ে। অবাক চোখেমুখে পিছু ফিরে নুরার দিকে তাকালো। বিশ্বাস হলো না কিছুতেই। নুরা জোরপূর্বক শুকনো ঢোক গিললো। ধীর পায়ে রাজের দিকে একটু এগিয়ে জড়তাহীন গলায় বললো, ‘আই রিয়েলি লাভ ইউ স্যার। প্লিজ ট্রাস্ট মি। এভাবে ছেড়ে যাবেন না। সব কিছুর সমাধান ছেড়ে যাওয়া হয় না।’

বাকহারা হয়ে পরেছে রাজ। প্রত্যাশার থেকে যখন মানুষ একটু বেশি কিছু পেয়ে যায় তখুনি সে প্রতিক্রিয়াহীন হয়ে পরে। যেমনটা হয়েছে রাজ। এই মুহূর্তে প্রত্যুত্তর করার মতো কোনো শব্দ খুঁজে পেলো না। স্তব্ধ হয়ে নুরার চোখে অবাক হয়ে চেয়ে রইলো। তখুনি পিছন থেকে সেই গার্ড ডেকে উঠলো। গার্ডের ডাক শুনে হুশ আসলো রাজের। নুরার দিকে বিস্মিত চোখে একবার তাকিয়ে চুপচাপ ভিতরে চলে গেলো।

চোখের কার্নিশে জমে এলো নোনাজল। বাকরুদ্ধ নুরা। নিজেকে বড্ড বেহায়া মনে হলো তার। ভীষণ কষ্টে ঠোঁট ভেঙ্গে এলো। নিজেকে স্বাভাবিক রাখতে পারলো না আর। নিঃশব্দে অঝোরে কেঁদে উঠলো। দাঁড়িয়ে না থেকে বেড়িয়ে এলো এয়ারপোর্ট থেকে। বাহিরে এসেও কান্না থামছে না। আকাশটা বিরাট শব্দ তুলে চারপাশ কাঁপিয়ে তুললো। গুড়িগুড়ি মেঘের গর্জনে চারপাশ কম্পিত। প্রকৃতিও যেন আজ সঙ্গ দিলো নুরার। বুঝাতে চাইলো, দুনিয়াতে কেউ একা কষ্ট পায় না। কষ্টের সইতে পারলেই স্বস্তি মিলে।

____________________

স্টেজ থেকে অনেকটা দূরে দাঁড়িয়ে আছে দীবা। অতিরিক্ত চিন্তায় নখ কামড়াচ্ছে। মোবাইলে সময় দেখলেই তার কান্না পাচ্ছে। তখন কোন বদলের মা/র খেয়ে নুরাকে এয়ারপোর্ট যাওয়ার কথা বললো সে? গায়ের হলুদ প্রায় শেষ। অথচ নুরার আসার কোনো নাম নেই। সবাইকে সে কি জবাব দিবে? তাছাড়া নুরা একা একা কোথায় আছে, কি করছে কিছুই জানে না। কল দেবার পরেও নো রেসপন্স আসছে। বদল মেয়ে রাজ জাহান্নামে যাক না তাতে তোর কি? বাড়ি ফিরে আসছিস না কেন তুই? মনে মনে যা আসছে তা দিয়েই একবার নুরাকে, একবার রাজকে তো আরেকবার নিজেকেই বকছে দীবা। তাকে এতো চিন্তিত দেখে রিমি এগিয়ে আসলো। এসেই প্রশ্ন ছুড়লো, ‘ছিঃ নখ কামড়াচ্ছিস কেন? ভাই কি তোকে কিছু খেতে দেয় না? নাকি জামাইয়ের টাকা পয়শা কিছু নাই?’

দীবা প্রত্যুত্তর করলো না। হাত নামিয়ে ঠোঁট উলটে কাদুকাদু চেহারায় রিমির দিকে তাকালো। অবস্থা খুবই গুরুতর। দীবাকে এতো সিরিয়াস দেখে নিজেও সিরিয়াস হলো রিমি। আলতো গলায় জিজ্ঞাসা করলো, ‘কি হয়েছে?’

দীবা কাদুকাদু গলায় বললো, ‘নুরা….”

এইটুকু বলতেই রিমি আশেপাশে তাকিয়ে বলল, ‘আসলেই তো। নুরাকে দেখছি না যে। কোথায়?’

‘এয়ারপোর্ট গেছে।’

‘কি?’ আতঙ্কিত হয়ে চেঁচিয়ে উঠলো রিমি। বিস্ময়ের কারণে চোখ কোটর ছেড়ে বেড়িয়ে আসার উপক্রম। আশ্চর্যান্বিত হয়ে অস্ফুটিত কন্ঠে বলে উঠলো, ‘মা..মানে? ওখানে কি করছে?’

দীবা সম্পূর্ণ ঘটনা খুলে বললো। কাহিনী শুনেই দাঁতে দাঁত চিবিয়ে দীবার বাহুতে চাপড় দিয়ে কপাট রাগ দেখিয়ে বললো, ‘তোর বুদ্ধি কি সব রাউজান গেছে? এতো বড় একটা কাহিনী ঘটালি অথচ জানালি না। কখন গেছে নুরা?’

ব্যাথায় চোখমুখ কুঁচকে ফেললো দীবা। বিরক্ত হয়ে বলল, ‘তুই যখন বারান্দায় প্রেম করছিলি তখন।’

থমথমে খেলো রিমি। তার আর অভ্রের ব্যাপার আজ নাহয় কাল সে নিজেই দীবা নুরাকে জানাতো। সে জানানোর আগেই নাহয় জেনে গেলো। ব্যাপার না। কিন্তু নুরা এখনো আসছে না কেন? চিন্তিত হয়ে ঠোঁট কামড়ে ধরলো। কপালে পরলো ভাজ।
.

হলুদের অনুষ্ঠান শেষে মেহমান বিদায় নিয়ে চলে যেতে লাগলো। অন্যান্য সময় হলে ঠিকই জমিয়ে মাস্তি করতো দুজন। কিন্তু আজ পরিস্থিতি ভিন্ন, তাই আনন্দ তো দূর তাদের মুখে ভীতি ব্যতিত হাসির ছিটেফোঁটাও নেই। একপাশে একে অপরের হাত ধরে ভয়ার্ত চোখেমুখে দাঁড়িয়ে আছে দুজন।।এখানে দাঁড়িয়ে না থেকে রুমে চলে যাওয়া ভালো মনে করে রিমি দীবাকে নিয়ে যেতে নিলেই আবরার ডেকে উঠলো, ‘নুরা কোথায়? অনেকক্ষণ ধরে দেখছি না তাকে।’

দীবা কোনো রকমে উত্তর দিলো, ‘নুরার শরিরটা খারাপ লাগছে তাই রুমে চলে গেছে অনেক আগেই। আমরাও গিয়ে দেখি তার কিছু লাগবে কিনা।’

আবরার কিছু বললো না। ইশারায় যেতে বললে দুজন এক প্রকার দৌড়ে বাড়ির ভিতরে গেলো। দুজনের ভীতিকর চেহারা আর দৌড়ানো দেখে সন্দেহ হলো আবরারের। কিন্তু বেশি আমলে নিলো না। সাবিতকে অন্যান্য কাজে সাহায্য করার জন্য হাত বাড়ালো।

চলমান..#আষাঢ়ে_শ্রাবণের_বর্ষণ
#মাইশাতুল_মিহির

[পর্ব-৫১]

শ্রাবণের চৌদ্দতম দিন পেরিয়ে পনেরো-তম দিন আসলো। রাতের ঘড়ি বারোটা আটের ঘরে। চারপাশ নিরব নিস্তর। দূরের অম্বরে কিয়ৎক্ষণ আগেও গুড়িগুড়ি মেঘের আড়ম্বর এখন থেমে গেছে। শীতল প্রভঞ্জনে চারপাশ উচ্ছ্বাসিত। ছোট একটা পুকুরের সামনে ইটের তৈরি বেঞ্চের উপরে বসে আছে নুরা। তাকিয়ে আছে পুকুরের নিশ্চুপ জলরাশির দিকে। চোখে নোনাজল। কাঁদছে অঝোরে। নিয়তি বোধহয় তার জন্য এমন কিছুই রেখেছিলো? কেন-ই বা সেদিন রাজের উপর ভালোলাগা কাজ করেছিল? আরো কতোশতো মানুষকে তো প্রথম দেখাতেই ভালোলাগে। কিন্তু এই অল্পসল্প ভালোলাগা থেকে রাজের প্রতিই কেন ভালোবাসা সৃষ্টি হলো? ভাবতেই ঠোঁট কামড়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো আবারো।

নিস্তব্ধ নিশ্চুপ পরিবেশে হঠাৎ-ই পিছনে কারোর অস্তিত্ব টের পেলো নুরা। কান্না থামিয়ে পিছু ফিরে তাকাতেই স্তব্ধ হয়ে গেলো সে। অবাক হয়ে ফ্যালফ্যাল চোখে তাকিয়ে রইলো সামনে। মোবাইল অন করে সময় দেখলো একবার। এগারোটা দশ বাজে। মোবাইল থেকে চোখ তুলে আবারো সামনে তাকালো। বিস্মিত হয়ে অস্ফুটিত কন্ঠে বলে উঠলো, ‘আপনি যান নি?’

রাজ কাধ থেকে ব্যাগটা নামিয়ে পাশে রাখলো। নুরার দিকে তাকিয়ে আলতো গলায় শুধাল, ‘দূর থেকে ভালোবেসে প্রথম ভুল করেছিলাম। এখন আবার দূরে চলে গিয়ে দ্বিতীয় ভুল করতে চাই না।’

হতভম্ব নুরা এখনো প্রথমের মতো বিস্মিত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। প্রতিক্রিয়াহীন হয়ে পরেছে সে। কথা বলার মতো কিছু খুঁজে পেলো না। রাজ ধীর পায়ে এগিয়ে নুরার সামনে এসে দাঁড়ালো। কান্নারত মায়াবী মুখখানির দিকে এক দৃষ্টিতে তাকালো। নাক গাল দুটো অসম্ভব লাল হয়ে আছে। চোখে এখনো জমে আছে পানির বিন্দু কণা। যা ল্যাম্পপোস্টের কৃত্তিম আলোতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। দীর্ঘশ্বাস ফেললো রাজ। কেউ একজন তাকে এতো ভালোবাসতো তা একদম কল্পনাতীত ছিলো। যদি না নুরা তখন প্রকাশ করতো তাহলে বোধহয় দেশের বাহিরে গিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো পস্তাতে হতো। নুরার চোখে চোখ রেখে মৃদু গলায় বললো, ‘আমার বিষণ্ণ বিকেল গুলো কাটিয়ে এবার একটুখানি সুখের ছোঁয়া চাই তোমার কাছে। সেই সুখটা কি দিবে আমায়?’

ঠোঁট ভেঙ্গে মাথা নিচু করে আবারো নিঃশব্দে কেঁদে উললো নুরা। নিশ্চুপ রাজ নুরার দিকে তাকিয়ে রইলো। নুরার এই কষ্টকর কান্না বুকে গিয়ে লাগলো তার। দীর্ঘশ্বাস ফেললো নিরবে। নুরার গালে দুই হাত রেখে বললো, ‘খুব কাঁদিয়েছি তোমাকে তাই না? আই’ম সরি!’

কাঁদছেই নুরা। প্রত্যুত্তর করার মতো কিছু খুঁজে পাচ্ছে না। ভাবতে কষ্ট হচ্ছে রাজ তার কাছে ফিরে এসেছে। সত্যি কি তাই? সে এতোটাই ভাগ্যবতী? কান্না পাচ্ছে ভীষণ। ফুঁপিয়ে উঠলো সে। রাজ নুরার গালে হাত রেখে নুরার মাথাটা তুললো। চোখের পানি মুছে দিতে দিতে বললো, ‘ফিরে এসেছি তো। কান্না করছো কেন তাহলে?’

নুরা কান্নায় ভাঙ্গা গলায় কোনো রকমে বলল, ‘আমি ভেবেছি আপনি চলে গেছেন।’

রাজ আদুরে হাতে নুরার চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো, ‘আর কখনোই যাবো না। এবার কান্না থামাও।’

নুরা লাল হয়ে আসা চোখ দুটো তুলে রাজের দিকে তাকালো। নাক টেনে অস্ফুটভাবে বললো, ‘প্রমিস?’

আলতো ভাবে হাসলো রাজ। নুরার চোখের পানি মুছে দিয়ে শুধাল, ‘প্রমিস!’

তখুনি সুবিশাল আকাশ টা কাঁপিয়ে বজ্রপাত পড়লো। বিদ্যুৎ চমকানোর কারণে অন্ধকারাচ্ছন্ন চারপাশ হুট করেই আলোকিত হয়ে আবারো আঁধারে লুকালো। ঝিরিঝিরি বৃষ্টির ফোটা ধরনী তে পড়তে শুরু করলো। রাজ মাথা তুলে আকাশের দিকে তাকালো। নুরার ডান হাতের কব্জি ধরে বললো, ‘বৃষ্টি হচ্ছে গাড়িতে আসো।’

বাধা দিতে ইচ্ছে হলো নুরার। তার মনে অবাধ্য কিছু অভিলাষ জমলো। তার ইচ্ছে করলো বৃষ্টির ফোটার সঙ্গে সঙ্গে নিজের মনের পুরনো সব গ্লানি মুছে দিতে। বিষণ্ণ মনটাকে পুলকিত করতে। জীবনের সুন্দর ও নতুন একটা অধ্যায়ের সূচনা করতে। তাই মিনতি করে বললো, ‘একটু বৃষ্টিতে ভিজি?’

ভ্রুঁ জোড়া কুঁচকে তাকিয়ে রইলো রাজ। প্রত্যুত্তর না করে নুরার হাত ধরে রাখলো। নুরা আবারো আবদার করলো, ‘প্লিজ একটু!’

রাজ গম্ভীর মুখে শুধাল, ‘না। এখন বৃষ্টি ভিজলে জ্বর আসবে।’

মাথার উপরে বিশালাকৃতির গাছের ডালপালা আকাশটা ঘিরে রেখেছে। তাই ভারি বর্ষণের ফোটা গুলো ধরনী ছুলেও রাজনুর কে ভেজাতে পারলো না। ভিজতে না পারায় কিছুটা মন খারাপ হলো নুরার। আশেপাশে তাকিয়ে একটু দূরে টিনের ছাউনি নজরে আসলো তার। সেই টিনের ছাউনি টা হাত দিয়ে দেখিয়ে বললো, ‘ওটার নিচে বসে বৃষ্টি দেখি?’

রাজ হাত ঘড়িতে সময় দেখলো। ছাউনিটার দিকে তাকালো একবার। নুরার এই নিষ্প্রভ চেহারার আবদার অপূরণ রাখতে পারলো না। সম্মতি দিয়ে নুরার হাত ধরেই টিনের ছাউনির নিচে গিয়ে দাঁড়ালো। খুশির হলো নুরা। মুচকি হেসে বৃষ্টিবিলাস করতে লাগলো। এক হাত বাড়িয়ে বৃষ্টির ফোটা গুলো ছুঁয়ে দিতে লাগলো সে। পকেটে হাত গুঁজে পলকহীন দৃষ্টিতে নুরার এই প্রাণোচ্ছল হাসি দেখছে রাজ। বুকের বাম পাশে ঢিপঢিপ শব্দ তুলে হৃদযন্ত্রটা দৌড়াচ্ছে। অদ্ভুত প্রশান্তি নামক এক সুন্দর অনুভূতি কাজ করছে তার মনে। তবে কি নুরাকে সে ভালোবাসতে শুরু করেছে? নুরার এই নিষ্পাপ ভালোবাসা শুধুই তার জন্য? সে আদৌতে এতোটা ভাগ্যবান? নিরবে দীর্ঘশ্বাস ফেললো রাজ। নুরার সঙ্গে শেষ অব্ধি পথ চলার প্রতিজ্ঞা করে নিলো মনে মনে। যতো যাই হোক, নুরার ভালোবাসা হারানোর সাধ্য তার নেই।
___________________

দুতলার করিডোরের এক পাশে দাঁড়িয়ে পায়চারি করছে দীবা। চিন্তিত চোখে মুখে আঙ্গুলের নখ কামড়ে এপাশ থেকে ওপাশ যাচ্ছে। রিমি কান থেকে মোবাইল নামিয়ে মলিন চেহারায় বললো, ‘কল ধরেনি!’

রিমির কথা কর্ণপাত হতেই দাঁড়িয়ে পরলো দীবা। অতিরিক্ত দুশ্চিন্তার কারণে অবস্থা তার খারাপ হয়ে গেলো। ভয়ে হাত পা জমে এলো। চোখে পানি জমে টলমল করতে লাগলো। ঠোঁট ভেঙ্গে অস্পষ্ট কন্ঠে নিজেকে দোষারোপ করে বলল, ‘সব দোষ আমার। আমি যদি তখন নুরাকে যাওয়ার কথা না বলতাম তাহলে এমন হতো না। কেন তখন নুরাকে যেতে দিলাম।’

কথাটা বলেই কেঁদে ফেললো দীবা। চোখ দুটো তার লাল হয়ে এলো। রিমি নিজেও দুশ্চিন্তায় কাতর। কান্না পাচ্ছে ভীষণ। মন অস্থির তবুও দৃঢ় কন্ঠে দীবাকে শান্ত করতে চাইলো, ‘প্লিজ কাঁদিস না।’

তার কথা দীব শুনছে না। নিঃশব্দে অনবরত কেঁদেই চলেছে। হতবাক রিমি। পরিস্থিতি এখন কিভাবে সামাল দিবে সে? ঠোঁট কামড়ে ভাবলো কিছুক্ষণ। বহু চিন্তাভাবনার পর অভ্রের কথা মাথায় আসলো তার। সকচকিত হলো মন। মোবাইল হাতে নিয়ে অভ্রের নাম্বারে ডায়াল করলো। অভ্র রুমেই ছিলো তাই আসতে বেশি দেরি করেনি। তাকে ডাকার কারণ জানতে চাইলে রিমি সব খুলে বললো। সম্পূর্ণ ঘটনা শুনেই হতবাক অভ্র। হতভম্ব হয়ে দীবার দিকে তাকালো। অপরাধীর ন্যায় মাথা নিচু করে কাচুমুচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে দীবা। অভ্র হঠাৎ-ই কপাট রাগ দেখিয়ে বলে উঠলো, ‘আশ্চর্য ভাবি আপনি কি ছোট বাচ্চা? এমন একটা কাজ করার আগে ভাবা উচিত ছিল না আপনার? বড়দের সাথেও একবার কথা বলতে পারতেন।’

প্রায় দেড় মাস হবে অভ্র শান্তি নিবাসে আছে। এতোদিন এখানে থেকে বাড়ির মানুষ গুলো সঙ্গে সম্পর্ক খুব নিবিড় হয়েছে। সবাইকে তার নিজের বড্ড আপন মনে হয়। তাই সবার ভালো খারাপের চিন্তা না চাইতেও চলে আসে। ঠিক তেমনি এখন নুরার জন্য হচ্ছে। এতো বড় সাংঘাতিক একটা ঘটনা কাউকে না জানিয়ে করায় রাগ সামলাতে পারলো না। দীবাকে কথাটা রেগে বলে ফেললো। এমনিতেই ভয়ে চুপসে আছে দীবা। তার উপর আবার এখন অভ্রের কথা গুলো। আবারো কান্নায় ভেঙ্গে পরলো। তাকে এভাবে কাঁদতে দেখে অভ্র রাগ সংযত রেখে স্বাভাবিক ভাবে কোনো রকমে বললো, ‘প্লিজ ভাবি কান্না থামান। আপনার এই কান্না আমার রাগ বাড়াচ্ছে।’

ভয়ার্ত রিমি দীবার বাহু ধরে কান্না থামাতে বললো। দীবা অনেকটা সময় কান্না থামিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করলো। অভ্র রিমির থেকে নুরার নাম্বারটা নিয়ে লোকেশন চেক করলো। ভাগ্যিস মোবাইল বন্ধ না থাকায় লোকেশন শো করেছে। নুরার অবস্থান জানার পরেই স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো অভ্র। মোবাইলটা পকেটে রেখে রিমিকে বললো, ‘রুমে যাও দুজন। আমি নুরাকে আনতে যাচ্ছি।’

রিমি অস্থির গলায় ঝটপট বলে উঠলো, ‘একা যাবে কেন? আমিও যাবো তোমার সাথে।’

অভ্র কোনো রকমে নিজের রাগ সামলে বললো, ‘আমি তো যাচ্ছি। তুমি কেন যাবে এতো রাতে?’

রিমি আকুতি করে বললো, ‘প্লিজ অভ্র আমিও যাবো। আমার টেনশন হবে নাহয়। প্লিজ!’

‘কোথায় যাওয়ার কথা হচ্ছে?’

অভ্র প্রত্যুত্তর করার আগেই পিছন থেকে আবরারের কণ্ঠস্বর ভেসে আসতেই চমকে উঠলো রিমি ও দীবা। ভয়ার্ত চোখেমুখে আবরারের দিকে তাকিয়ে শুকনো ঢোক গিললো। একে অপরের বাহু শক্ত করে চেপে ধরে দাঁড়িয়ে রইলো। স্বাভাবিক অভ্র। নির্বিকার ভাবে আবরারের কপ্রশ্নের উত্তরে জানালো, ‘তাদের নাকি এখন আইসক্রিম খেতে ইচ্ছে করছে। তাই আইসক্রিম আনতে যাচ্ছিলাম।’

রিমি ও দীবা স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো এই ভেবে যে অভ্র খুব সহজেই ব্যাপারটা সামলে নিয়েছে। কিন্তু তার এই কথা কি আদৌ বিশ্বাস করেছে আবরার? চোখ ঘুরিয়ে আবরারের দিকে তাকালো দুজন। সব কিছু যেন ঠিক হয়ে যায় বলে প্রার্থনা করতে লাগলো।

অভ্রের কথা শুনে ভ্রুঁ কুঁচকালো আবরার। সন্দিহান চোখে তিনজনের দিকে তাকিয়ে বললো, ‘এতো রাতে আইসক্রিম খেতে হবে কেন? সকাল হলেই তো যেতে পারো।’

অভ্র শব্দ করে একটা নিশ্বাস ছুড়লো। হতাশ হতাশ ভাব নিয়ে বলে উঠলো, ‘ট্রুথ এন্ড ডেয়ার খেলছিলাম। আমাকে ডেয়ার দিলো এখুনি এনে দিতে হবে। তাই বাধ্য হয়েই যাবো বলছি।’

আবরার কপালে কিঞ্চিৎ ভাজ ফেলে তাকিয়ে রইলো। রিমি দীবার হাতে মৃদু ধা’ক্কা দিয়ে কিছু একটা বুঝাতে চাইলো। অদ্ভুত ভাবে দীবা রিমির না বলা ইঙ্গিত টা বুঝতে পারলো। বিলম্ব না করে আবরারের বাহু ধরে বলে উঠলো, ‘উনার ডেয়ার উনি ডান করুক। আপনি এখানে কি করছেন? ঘুমাবেন না? রুমে আসেন তাড়াতাড়ি।’

আবরার দীবার কথা সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে অভ্রকে বললো, ‘তুমি নিজেও কি বাচ্চা অভ্র? রাত কয়টা বাজে খেয়াল আছে তোমার? এতো রাতে বাহিরে যাবে আইসক্রিম আনতে? এখানকার কিছুই তো চিনো না। বাহিরে বের হলে যদি ছিনতাইকারী ধরে?’

‘কিন্তু ভাই ওরা..” অভ্র কথা সম্পূর্ণ করার আগেই তাকে থামিয়ে দিলো আবরার। কঠোরভাবে বলে উঠলো, ‘এখন কোথাও যাচ্ছো না। ঘুমাতে যাও। রিমি তুইও যা।’

হতাশার নিশ্বাস ছুড়লো রিমি। অসহায় চোখে অভ্রের দিকে একবার তাকিয়ে রুমে চলে গেলো। অভ্র নিরুপায় হয়ে পা বাড়ালো। মাথায় ঘুরতে লাগলো অন্য চিন্তা। যেভাবেই হোক বেরুতে হবেই। আরিয়ানকে সঙ্গে নিয়ে বেরুবে? নাকি না? ভাবতে ভাবতে রুমে চলে গেলো। তাদের দুজনকে যেতে দেখে নিজেও নিরাশ হলো। মনমরা করে লেহেঙ্গা ধরে চলে যাবার জন্য পা বাড়াতেই আবরার তার বাহু ধরে থামিয়ে বলে উঠলো, ‘তুমি কোথায় যাচ্ছো?’

দীবা সহজসরল ভাবে শুধাল, ‘রুমেই।’

‘উহুম, তুমি আমার সাথে আসো।’

দীবাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই আবরার তাকে নিজের রুমে নিয়ে গেলো। মনমরা দীবা বাধা দিলো না। রুমে এসে চুপচাপ বিছানায় বসলো। আবরার রুমের দরজা লাগিয়ে আয়নার সামনে গেলো। হাত থেকে ঘড়ি খুলে পকেট থেকে ওয়ালেট বের করে রাখলো। দীবা একবার আবরারের দিকে অসন্তুষ্টজনক চোখে তাকিয়ে বারান্দার দরজার দিকে তাকালো। বাহিরে ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে দেখে আতঙ্কিত হয়ে উঠলো। অস্থির হয়ে বিছানা থেকে উঠে দ্রুত বারান্দার দরজার কাছে আসলো। আকাশের দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত পিষে আর্তনাদ করে উঠলো, ‘বৃষ্টির বাচ্চা তোর এখুনি আসা লাগলো?’

আবরার কপাল কুঁচকালো দীবার আর্তনাদ দেখে। পকেট থেকে মোবাইল বের করে বিছানায় রাখতে রাখতে বললো, ‘এমন ভাবে বলছো যেন বৃষ্টি অনেক বড় অন্যায় করে ফেলেছে।’

দীবা বারান্দা থেকে সরে বিছানার কাছে এসে বিহ্বল হয়ে বললো, ‘অবশ্যই অন্যায় করেছে। এটাকে শুধু অন্যায় না গুরুতর অন্যায় বলে। আসার আর সময় পেলো না? আজকেই কেন আসতে হলো তার? আশ্চর্য!’

আবরার টাওয়াল নিয়ে ওয়াশরুমে যেতে যেতে বললো, ‘বৃষ্টির সময় হয়েছে তাই এসেছে। তোমাকে বলে কয়ে তো আর আসবে না। আজব আজব কথাবার্তা ছাড়ো।’

আবরার ওয়াশরুমের দরজা লাগাতেই আড় চোখে তাকালো দীবা। লেহেঙ্গা ধরে গুটিগুটি পায়ের কদম ফেলে বাহিরে যাবার জন্য পা বাড়াতেই পিছন থেকে ধমকে উঠলো আবরার, ‘এই মেয়ে কোথায় যাচ্ছো?’

দাঁড়িয়ে পরলো দীবা। চোখ দুটো ছানাবড়া হয়ে গেলো। পিছু না ফিরেই কোনো রকমে বললো, ‘আমার রুমে যাচ্ছি। ড্রেস চেঞ্জ করবো।’

‘রুমে যেতে হবে না। এখানেই চেঞ্জ করতে পারবে।’

কটমট চোখে আবরারের দিকে তাকালো দীবা। কপাট রাগ দেখিয়ে বলে উঠলো, ‘হ এখানেই চেঞ্জ করি। আমার সব জমাকাপড় এখানেই রাখা তাই না? চেঞ্জ করে আমি পড়বো টা কি?’

আবরার চোখ ছোট ছোট করে তাকালো দীবার দিকে। আলমারি থেকে নিজের জন্য একটা টিশার্ট বের করতে করতে বললো, ‘সোজা রুমে গিয়ে ড্রেস চেঞ্জ করে আসো।’

দীবা বিরক্তিকর ভাবে বলল, ‘এখানে আসতে পারবো না।’

দীবার দিকে তীক্ষ্ণ চোখে তাকালো আবরার। হকচকিয়ে গেলো দীবা। আমতা আমতা করে কোনো রকমে বললো, ‘আশ্চর্য এভাবে তাকানোর কি আছে? আমার চেঞ্জ করতে দেরি হবে। আপনি চেঞ্জ করে আমার রুমে আসুন তাহলেই হয়। আমাকে কথা শেষ করতে তো দিবেন। রাক্ষসের মতো তাকান শুধু।’

ভ্রুঁ জোড়া উঁচু করে তাকালো আবরার। কি মিথ্যুক এই মেয়ে? সহজেই মিথ্যেটা গুছিয়ে বলে ফেললো। ভাবতেই হাসি পেলো তার। চুপচাপ দীবাকে কিছু না বলে আবারো ওয়াশরুমে চলে গেলো। স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো দীবা। গটগট পায়ে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো।
_____________________

ভারি বর্ষণের মাত্রা কিছুটা কমলো এলো। আকাশটা ঘন কালো মেঘের ছায়া কেটে স্বচ্ছ হয়ে হলো। টিনের উপরে বৃষ্টির ফোটার ঝনঝন শব্দ যেন এক শ্রুতিমধু। ঝড়ো বাতাসের কারণে গায়ে শীত শীত অনুভব হচ্ছে। কাঠের তৈরিকৃত ব্যঞ্চের উপরে পাশাপাশি বসে আছে রাজ ও নুরা। দুজনের মাঝে পিনপতন নিরবতা বিদ্যমান। নুরা পুলকিত মনে বৃষ্টি দেখতে ব্যস্ত। রাজ নিশ্চুপ। বৃষ্টি দেখার ফাঁকে ফাঁকে নুরাকে দেখছে। মনের ভিতরে অদ্ভুত প্রশান্তি অনুভব করছে। দীবাকে হারানোর যন্ত্রণা যেন নুরার দিকে তাকালেই অনায়াসে মুছে যাচ্ছে। নুরাক্ব নিজের পাশে পেয়ে যেন বুকের মধ্যিখানে শান্তি শান্তি লাগছে। ভাবতেই মৃদু হেসে উঠলো রাজ। হাত ঘড়িতে চোখ পড়তেই বিস্মিত হয়ে গেলো। অনেক রাত হয়ে গেছে। নুরার জন্য নিশ্চয় সবাই চিন্তা করবে? নুরা কি বলে এসেছে নাকি লুকিয়ে? কথাটা মাথায় আসতেই চট করে প্রশ্ন করে ফেললো, ‘তুমি যে এখানে এসেছো কেউ জানে?’

নুরা নির্বিকার ভাবে উত্তর দিলো, ‘শুধু দীবা জানে। এতোক্ষণে নিশ্চয় সবাই জেনে গেছে।’

ক্রোধান্তিত হলো রাজ। দাঁতে দাঁত পিষে ‘ড্যাম’ বলে উঠলো। নুরাকে কিছুটা ক্রোধিত গলায় বললো, ‘এটা আগে জানাও নি কেন? আর একা একা এখানে আসার দরকার-ই বা কি ছিলো?’

নুরা তাকালো রাজের দিকে। নিষ্প্রভ কন্ঠে শুধাল, ‘না এলে আপনি হারিয়ে যেতেন।’

নুরার কথাটি কর্ণপাত হতেই নিভলো রাজ। নিরবে দীর্ঘশ্বাস ফেলে উঠে দাঁড়ালো। নুরার দিকে এক হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললো, ‘আসো বাসায় পৌঁছে দেই।’

নুরা রাজের থেকে চোখ ফিরিয়ে হাতের দিকে তাকালো। বিনা সংকোচে রাজের হাত ধরলো। স্মিতি হাসলো রাজ। নুরাকে দাঁড় করিয়ে নুরার কপালের চুল কানের পিছনে গুঁজে দিয়ে বলে উঠলো, ‘একবার যখন হাত ধরেছি, দ্বিতীয়বারের জন্য কখনোই হাত ছাড়বো না। প্রতিজ্ঞা করছি নুরা, পুরনো অতীত সব ভুলে গিয়ে সারাজীবনের জন্য আমি তোমাকেই ভালোবাসবো।’

আলতোভাবে হাসলো নুরা। লজ্জাভূতি হয়ে রাজের থেকে চোখ ফিরিয়ে নিলো। নুরার লজ্জামাখা মুখ দেখে রাজও হাসলো। নুরার হাত ধরে দ্রুত গাড়িতে উঠে বসলো।
_____________________

অভ্র চুপিচুপি পায়ে রুম থেকে বেরুলো। আশেপাশে সতর্ক দৃষ্টি বুলালো একবার। কাউকে দেখতে না পেয়ে রুমের দরজাটা আস্তে ভিড়িয়ে দিলো। শব্দহীন পায়ের কদম ফেলে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতে লাগলো। ডাইনিং টেবিলের কাছে নিশিতাকে দাঁড়িয়ে পানি খেতে দেখে ভড়কে গেলো। দ্রুত পায়ে সিঁড়ির উপরে উঠে পিলারের পিছনে নিজেকে আড়াল করে ফেললো। ঘড়িতে সময় দেখলো একবার। এতো রাতে নিচে এসে পানি খেতে হয়? বিরক্ত হলো কিছুটা। এইদিকে রাত যতো গভীর হবে ততোই বিপদের আশংকা বাড়বে। লম্বা একটা দম নিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করলো অভ্র। নিশিতা জগে পানি ভরে সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠলো অভ্র পিলারের পিছনে দাঁড়িয়েই রইলো চুপিচুপি। টের পেল না নিশিতা। সে নিজের মতো পানির জগ নিয়ে চলে গেলো। নিশিতা যেতেই দ্রুত পায়ে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে এলো। সদর দরজার বাহিরে গিয়েই স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো।
_____________________

কিছুক্ষণ আগে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি থাকলেও এখন আকাশ পরিষ্কার। বৃষ্টির ছিটেফোঁটাও নেই। রাস্তাঘাট বৃষ্টির পানিতে ভিজে একাকার। ঝড়ো বাতাস প্রভাহমান চারপাশে। গাড়ির স্টোরিয়ারিং ধরে বসে আছে রাজ। বাহিরের ভিজে যাওয়া রাস্তার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সে। রাস্তা থেকে চোখ ফিরিয়ে নুরার ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকালো। গাড়ি স্টার্ট করার কয়েক মিনিট পরেই ঘুমিয়ে পরেছিল নুরা। পুরো রাস্তা ঘুমিয়ে বাড়ির কাছে এসেও ঘুমাচ্ছে। গভীর রাত তাই হয়তো ঘুম এতো গভীর। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করার পরেও যখন নুরার ঘুম ভাঙ্গলো না তখন রাজ নিজেই ডাকার সিদ্ধান্ত নিলো।আলতো গলায় কয়েকবার ডেকে উঠলো, ‘নুরা? এসে পরেছি আমরা। উঠো অনেকক্ষণ হয়েছে।’

পিটপিট করে চোখ খুললো নুরা। ঘুম-ঘুম চোখে রাজের দিকে তাকিয়ে বাহিরে তাকালো। বাড়ির গেইটটা দেখেই ধড়ফড়িয়ে উঠলো নুরা। হতভম্ব হয়ে বলে উঠলো, ‘এসে পরেছি আমরা? আমি এখন যাই।’

‘কিন্তু গেইট তো লাগানো। যাবে কিভাবে?’

‘দীবা কিংবা রিমিকে কল দিবো। ভিতরে যেতে তারাই ব্যবস্থা করে দিবে।’

বলেই চটজলদি গাড়ির দরজা খুলে বেরুলো নুরা। গাড়ির দরজা লাগিয়ে দেখলো রাস্তা বৃষ্টির পানিতে টুইটুম্বুর। তাই লেহেঙ্গা ধরে সাবধানে পায়ের কদম ফেলে সামনে এগুতে লাগলো। তখুনি পিছন থেকে রাজ ডেকে উঠলো, ‘নুরা?’

কর্ণপাত হতেই দাঁড়ালো নুরা। রাজের দিকে প্রশ্নাতীত চোখে তাকাতেই রাজ নিষ্প্রতিভ কন্ঠে বলে উঠলো, ‘আমার জীবনে আসার জন্য তোমাকে অনেক ধন্যবাদ।’

বিনিময়ে মুচকি হাসলো নুরা। প্রত্যুত্তর না করে চলে গেলো গেইটের সামনে দাঁড়ালো। রাজের দিকে ফিরে তাকাতেই আলতো হাসলো রাজ। এক হাতে মাথার পিছনের চুল গুলো চুলকে গাড়িতে উঠে বসল। গাড়ি স্টার্ট দিয়ে নুরার দিকে তাকালো আরো একবার। নুরা হাতের ইশারায় টাটা দিতে বিদায় জানালো। অতঃপর রাজ খুশি মনে বাড়ির দিকে গাড়ি ঘুরালো।
____________________

রাজের গাড়ি যেতেই চিন্তিত হয়ে পরলো নুরা। কাকে কল দিবে এখন? দীবাকে? না! দীবার সঙ্গে নিশ্চয় আরব ভাই রয়েছে। দীবাকে কল দিয়ে ভাই জেনে যাবে। তার থেকে ভালো রিমিকে জানাই। মোবাইল পার্স থেকে বের করে অন করতেই চোখ চড়কগাছে উঠে গেছে তার। এতো গুলো মিসকল? খেয়াল করে দেখলো মোবাইল সাইলেন্ট ছিলো। কপাল চাপড়ালো নুরা। ইশ, নিশ্চয় সবাই চিন্তা করছে। এখন সে কি করবে? ভাবতেই গেইট খোলার শব্দ কানে আসলো। ধক করে উঠলো নুরার বুক। হতভম্ব হয়ে পিছু ফিরে তাকাতেই অভ্রকে দেখতে পেয়ে স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো নুরা। বুকে কয়েকবার ফু দিয়ে বললো, ‘ভয় পেয়ে গেছি ভাই।’

নুরাকে দেখেই অভ্রের রাগ বেড়ে গেলো। তাই কপাট রাগ দেখিয়ে বলে উঠলো, ‘ইচ্ছে করছে কয়েকটা থা’প্প’ড় লাগাই গালে। এতো রাতে বাহিরে বেরিয়েছো কেন একা? বলে বেরুলে কি হতো? অন্যদের না বললেও আমাকে বলতে পারতে। আমি কি সাহায্য করতাম না?’

মুখ কালো করে ফেলল নুরা। কোনো প্রকার প্রত্যুত্তর করলো না। অভ্র গেইটের ভিতরে উঁকি দিয়ে বাড়ির পরিবেশটা দেখলো। তারপর নুরাকে ইশারায় ভেতরে যেতে বললো। নুরা চুপিচুপি পায়ে অভ্রের পিছু পিছু বাড়ির ভিতরে ঢুকলো। সদর দরজার ভিতরে ঢুকে সিঁড়ির কাছে যেতেই ভড়কে গেলো নুরা। অভ্র সদর দরজা লাগিয়ে সামনে ফিরে সিঁড়ির উপরে তাকাতেই হতভম্ব প্রায়। নুরা ভয়ে শুকনো ঢোক গিললো। সাবিত সিঁড়ির উপরে দাঁড়িয়ে থেকেই প্রশ্ন করলো, ‘এতো রাতে কোথায় গিয়েছিলে তোমরা?’

নুরা কোনো রকমে ঠোঁট টেনে হাসার চেষ্টার করলো। ভয়ার্ত চোখে অভ্রের দিকে তাকালো। অভ্র স্বাভাবিক ভাবে সিঁড়ির কাছে এসে উত্তর দিলো, ‘তারা তিনজন আমাকে ডেয়ার দিয়েছিল আইসক্রিম খাবে। তাই আইসক্রিম আনতে বাহিরে গিয়েছিলাম। নুরাকে নিতে চাইনি। সে জোরপূর্বক গেছে।’

সাবিত ভ্রুঁ কুচকে দুজনের হাতের দিকে তাকালো। তারপর বললো, ‘তাহলে আইসক্রিম কোথায়?’

এবার নুরা চটজলদি উত্তর দিলো, ‘পাই নি। এতো রাতে আইসক্রিম কোথায় পাবো? অনেক খুঁজেছি। খারাপ লাগছে অনেক।’

শেষের কথাটা একটু মনমরা ভাব নিয়ে বললো নুরা। সাবিত বেচারা একদম সহজসরল টাইপ ছেলে। তাই এইটুকু কথাই তার জন্য যথেষ্ট ছিল। বেশি প্যাচাল না করে বললো, ‘ফিশপার্কে দারুন আইসক্রিম সেল করে। ওখান থেকে খেতে পারো। একদিন সময় করে নিয়ে যাবো তোমাদের।’

অভ্র প্রত্যুত্তরে হেসে সম্মতি দিলো। সাবিতের পাশ কেটে উপরে উঠে গেলো দুইজন। নুরা রুমে এসেই দরজা লাগিয়ে দেখলো রিমি বিছানায় বসে আছে। নুরাকে দেখতে পেয়ে ধড়ফড়িয়ে উঠে দাঁড়ালো। দৌড়ে এসে নুরাকে ঝাপিয়ে ধরে কেঁদে ফেললো। কান্নায় ভাঙ্গা গলায় বলে উঠলো, ‘তুই অনেক খারাপ নুর। আমাকে জানালি না একবার। কত ভয় পেয়েছিলাম জানিস?’

নুরা মৃদু হেসে উঠলো। রিমিকে অনেক কষ্টে শান্ত করার চেষ্টা করলো। তবুও শান্ত হলো না রিমি। ইচ্ছে মতো গালিগালাজ দিলো। তারপর দীবার নাম্বারে ছোট করে একটা টেক্সট দিয়ে জানিয়ে দিলো নুরা এসেছে। ম্যাসেজের শব্দ পেতেই শুয়া লাফিয়ে উঠলো দীবা। চটজলদি মোবাইল বের করে ম্যাসেজটা দেখে খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেলো। এতোটাই খুশি হলো যে ঠোঁটে আমোদিত হাসি রেখেই আবরারকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পরলো। হঠাৎ দীবার এমন কান্ডে বিস্মিত হলো আবরার। বেশি কিছু না ভেবে দীবাকে নিজেও জড়িয়ে ধরলো।

চলমান…

নোট : রিচেক করা হয়। ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। হ্যাপি রিডিং।💙

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here