#আষাঢ়ে_প্রেমের_গল্প
#নুজহাত_আদিবা
পর্ব ২
যদি আমাকে কখনো বলা হতো আমার অপ্রাপ্তি গুলো একটা পৃষ্ঠায় লিখে রাখতে। তাহলে আমি প্রথমেই যে-ই শব্দটা লিখতাম সেটা হলো স্বাধীনতা। আমার জীবনে স্বাধীনতা শব্দটি নেই বললেই চলে। কিছু বললেই এটা করা যাবে না সেটা করা যাবে না। শুধু না আর না! আমার জীবনে এই না শব্দটির সমাপ্তি কোথায় তা আমি নিজেও জানি না। হয়ত কখনো হবে ও না এই শব্দের সমাপ্তি।
ঘুম থেকে উঠেই হাত মুখ ধুয়ে নাস্তা করে স্কুলে যাবার উদ্দেশ্যে তৈরি হলাম। আমার স্কুল আমাদের বাসা থেকে খুব বেশি দূরে না যদিও। কিন্তু আমি আর আব্বা বাসা থেকে একই সময়ে বের হই। তাই আব্বা আমাকে স্কুলে পৌঁছে দিয়েই কাজে যান। আবার দুপুরে আম্মা গিয়ে স্কুল থেকে নিয়ে আসেন। মূলত আমি এখন 1০ এ পড়ি। তাই স্কুলের ক্লাসের পর আলাদা করে স্কুল থেকেই কোচিং করতে হয়।
স্কুলের কোচিং শেষ করে বাসায় এসে খেয়ে দেয়ে একটা ঘুম দিলাম। শরীর খুব ক্লান্ত থাকায় বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই ঘুমের সাগরে তলিয়ে গেলাম। এরপর সন্ধ্যা বেলা ঘুম থেকে উঠেই হাত মুখ ধুয়ে পড়তে বসলাম। তার কিছুক্ষন পরেই আমাকে পড়াতে ম্যাডাম আসলেন।
ম্যাডাম পড়া শেষ করে চলে যাওয়ার পর আমি নিজেও কতক্ষন পড়লাম তারপর আর পড়তে ভালো লাগছিল না। তাই উঠে পড়লাম।
আমি যখনই আমার রুম থেকে বের হয়ে আম্মার রুমে যেতে নিলাম। তখনই আবার হঠাৎ করে কলিংবেল বেজে উঠলো। আমি প্রথমে ভেবেছিলাম আব্বা এসেছে। আব্বা মনে করে গেট খুলতেই দেখি সেদিনের ওই ছেলেটা দাঁড়িয়ে। আমাকে দেখেই সালাম দিয়ে বললেন,
— আন্টি আংকেল আছেন? একটু ডেকে দেওয়া যাবে কী?
— জি ভেতরে আসুন। আমি এখনই ডেকে দিচ্ছি।
আমি দৌড়ে গিয়ে আম্মাকে বললাম,
— আম্মা তোমার সাথে একজন দেখা করতে এসেছে।
— এখন আবার কে এসেছে?
— আমি চিনি না তো। তুমি গিয়ে দেখো কে ওটা।
আম্মা এবার আমাকে বললেন,
— চল আমার সাথে। গিয়ে দেখি কে এসেছে।
আমি আর আম্মা ড্রয়িংরুমে যেতেই ওই ছেলেটা আম্মাকে দেখে বললেন,
— আন্টি আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছেন?
— ওয়ালাইকুম সালাম। এই তো আছি আলহামদুলিল্লাহ। তুমি কেমন আছো বাবা?
— আন্টি আমিও ভালো আছি আলহামদুলিল্লাহ। আসলে আপনাদের বাসায় একটা কাজে এসেছিলাম।
— কী কাজ বাবা?
— আন্টি আগামী শুক্রবার আমার বড় আপুর বিয়ে। তাই বিয়ের কার্ডটা দিতে এসেছিলাম।
এটা বলেই উনি আম্মার দিকে ওনার হাতে থাকা কার্ডটা এগিয়ে দিলেন। আম্মা কার্ডটা হাতে নিয়ে বললেন,
— আচ্ছা, তোমার নামটা যেন কী বাবা?
— বর্ন।
— তোমার আব্বু আসলো না যে। উনি তো অনেকদিন যাবত আমাদের বাসায় আসেন না। আগে তো প্রায়ই তোমার আংকেলের সাথে গল্প করতে আমাদের বাসায় আসতেন।
— আসলে আন্টি আব্বু আজকাল খুব ব্যস্ত থাকেন তো। তাই আসতে পারেন না।
— ওহ,
— আচ্ছা আমি যাই তাহলে আন্টি।
— কিছু খেয়ে যাও বাবা। কিছুই তো খেলে না। এই মেহুল নাস্তা নিয়ে আয় তো।
— আন্টি আরেকদিন আসবো। আজকে আবার কয়েকটা জায়গায় বিয়ের কার্ড দিতে যেতে হবে।
— মাত্রই তো এলে বসো আরেকটু। কিছু খেয়ে যাও।
— আন্টি আরেকদিন আসবো। এখন তাড়া আছে আন্টি। আমি যাই।
এটা বলেই উনি চলে গেলেন। আমিও আমার রুমে চলে এলাম। আমি রুমে গিয়ে চিন্তা করতে লাগলাম ওনার নাম আসলে বর্ন। নামটা কী সুন্দর।
আম্মা হঠাৎ করে আমাকে এসে বললেন কাল না কি অমালিকা আপা আসবেন। ঘর যেন সুন্দর করে গুছিয়ে রাখি। আমি আর আম্মা মিলে আবার ঘর সুন্দর করে সাজিয়ে গুছিয়ে রাখতে শুরু করলাম। আপার সাথে হয়ত দুলাভাই ও আসতে পারে। তাই আরও বেশি পরিস্কার পরিছন্ন করে রাখা হচ্ছে সব কিছু।
আজকে ঘরের জানালাটা খুলতে গিয়ে আবার এক চমক পেলাম। জানালাটা খুলতেই দেখি সামনের বাসার ওই জানালাটা খোলা। আর সবচেয়ে বড় কথা ওই জানালাটা দিয়ে ওই ছেলেটা মানে বর্নকে দেখা যাচ্ছে। আমি পুরো অবাক হয়ে গেলাম। আমার ঘর বরাবরই একটা ছেলের ঘর। কিন্তু আমি সেটা জানি ও না। বাহ! আম্মা যদি কখনো দেখে যে এই সামনের ঘরটা কোনো ছেলের। তাহলে আমাকে সাথে সাথে অমালিকা আপা মানে বড় আপার রুমে আমাকে শিফট করে দেবেন। অতঃপর আমি আবার যখন ঘরের জানালাটা বন্ধ করতে নিবো; সাথে সাথে বর্ন হুট করে আমার দিকে তাকালেন। আমি তাড়াতাড়ি চমকে গিয়ে কোনো রকমে জানালাটা টেনে বন্ধ করে দিলাম।
আম্মা হঠাৎ করে আমাকে এসে বললেন,
— কালকে তো অমালিকা আসবে তাই সব কিছু পরিস্কার করে রেখেছি। ও না কি এবার আসলে তোর ঘরে থাকবে। তাই তোর ঘরের জানালাটা একটু খোল তো অনেকদিন ধরে জানালাটা খোলা ও হয় না। আর পরিস্কার ও করা হয় না জানালাটা। আম্মা এটা বলেই জানালা পরিস্কার করার জন্য সাবান আর পানি আনতে চলে গেলেন।
আমি পরে গেলাম মহা এক বিপদে। আম্মা যদি জানালা খুলে দেখেন যে এখানে একটা ছেলে থাকে তাহলে আমাকে আর এই ঘরেই থাকতে দেবেন না। অমালিকা আপার ঘরে শিফট করে দেবেন আমাকে৷ অমালিকা আপার ঘরে এত সুন্দর বারান্দা, জানালা কিছুই নেই। আমি কীভাবে থাকবো অমন বন্ধ ঘরে?
হঠাৎ করে মাথায় একটা বুদ্ধি আসলো। আমি টুপ করে আমার ঘরের দরজাটা ভেতর থেকে বন্ধ করে। ঘরের জানালাটা খুলে দিয়ে দেখলাম তখন বর্ন ওখানে। আমি ভয়ে ভয়ে ডাক দিয়ে বললাম,
— এই যে শুনছেন?
বর্ন হয়তো আমার কথা শুনতে পেলেন না। আমি এবার আরেকটু জোর গলায় বললাম,
— এই যে শুনছেন?
বর্ন এবার আমার গলার স্বর শুনতে পেয়ে জানালার কাছে এসে বললেন,
— জি আমাকে বলছেন?
— হ্যাঁ।
— কী হয়েছে বলুন?
— আসলে একটা সমস্যা হয়ে গিয়েছে। আপনি একটু সাহায্য করলে ভালো হতো।
— কী সমস্যা? আপনি আমাকে বলতে পারেন কিন্তু। আমি সাধ্যমত চেষ্টা করবো আপনাকে সাহায্য করতে।
— আসলে আপনি কিছুক্ষনের জন্য আপনার জানালাটা বন্ধ করতে পারবেন কী?
— হুম, কিন্তু কেন?
— পরে বলছি। কিন্তু এখন প্লিজ জানালাটা কিছুক্ষনের জন্য বন্ধ করুন।
— আচ্ছা।
এটা বলেই বর্ন জানালাটা টেনে বন্ধ করে দিলেন। আমিও এবার একটু নিশ্চিন্ত হলাম। এরপর আম্মা এসে জানালা খুলে জানালার গ্রিল গুলো সহ জানালার ওই দিকটা পরিস্কার করে চলে গেলেন।
আমি রাতে ঘুমানোর আগে আবার জানালা খুললাম। বর্নকে একটা ধন্যবাদ দেওয়ার জন্য। কিন্তু জানালা খুলে দেখি বর্ন আর জানালা খুলেননি। জানালাটা তখনও বন্ধ। আমার খুব মন খারাপ হলো। আমার মনে হলো বর্ন হয়ত রাগ করেছেন ওই ভাবে হুট করে জানালা বন্ধ করায়।
সকাল ৬ টায় ঘুম থেকে উঠেই যখনই জানালার দিকে চোখ গেল ;আমি তখনই এগিয়ে গেলাম জানালাটা বন্ধ করতে। কালকে রাতে খুব গরম পড়েছিল। তাই আমি জানালাটা খুলে দিয়ে পর্দা গুলো হালকা করে চাপিয়ে দিয়ে ঘুমিয়ে ছিলাম। সকালে উঠে জানালাটা বন্ধ করতে গিয়েই দেখি বর্নের জানালাটা খোলা। বর্ন ওখানে বসে। আমি এবার হালকা করে বর্নকে ডাক দিলাম। বর্ন প্রথম ডাক শুনেই ওনার জানালার সামনে এলেন। আমি এবার বর্নকে দেখে মিহি গলায় বললাম,
— ধন্যবাদ আপনাকে। কালকে আমি ওভাবে হুট করে জানালা বন্ধ করতে বলার জন্য দুঃখিত।
— না না সমস্যা নেই। বেশি প্রবলেম হলে আমাকে বলবেন। আমি সাহায্য করার চেষ্টা করবো।
— জি ধন্যবাদ। আমি ভেবেছিলাম আপনি হয়ত হঠাৎ ওইভাবে জানালাটা বন্ধ করতে বলায় রাগ করেছেন।
— হঠাৎ এটা মনে হলো কেন আপনার?
— আসলে আমি রাতে একবার জানালাটা খুলে ছিলাম। আপনাকে ধন্যবাদ দেওয়ার জন্য। কিন্তু আপনার জানালাটা বন্ধ থাকায় আর সেটা সম্ভব হয়নি।
— না আসলে তেমন কিছু না। আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম তাই আর জানালাটা খোলা হয়নি।
— ওহ, আচ্ছা যাচ্ছি আমি। বিদায়
— হুম, টাটা।
চলবে…