#আসক্তি২ (আ জার্নি অব্ এডিকশান )
পর্বঃ০১
লেখায়ঃআফিয়া আজাদ নিঝুম
“ভাইয়া প্লিজ আমায় একটু সাহায্য করুন। আমায় হাইওয়ে অবধি একটু পৌঁছে দিন। আমার ভীষণ বিপদ।আপনার কাছে হাতজোড় অনুরোধ করছি ভাইয়া।দরকার পরলে পায়ে পরছি আমায় সাহায্য করুন”,হকচকিয়ে পিছনে দুইহাত দুরে সিটকে সরে যায় রাফি।দু’টা শুকনো ঢোক গিলে প্রশ্ন ছোড়ে,”আরে করছেন টা কি?কে আপনি?”
“ভাইয়া সব বলব আগে আমায় গাড়িতে উঠতে দিন”
রাফি বুঝতে পারে না এই মূহূর্তে কি করা উচিত তার।একে তো মেয়ে মানুষ তারউপর বিয়ের সাজে আগুন সুন্দরী যাকে বলে।
“রাফি,তোর হলো?পারবি তো নাকি মেকানিক ডাকব?”
রাফি একবার আগন্তুক মেয়েটিকে আগা-গোড়া পরোখ করে এগিয়ে যায় গাড়ির ব্যাক সিটে বসা গাড়ির মালিকের কাছে।
🌸🌸
শান,ফয়সাল আহমেদ শান।পেশায় এমবিবিএস ডাক্তার।শহরে বেশ নাম ডাক রয়েছে এই ডাক্তারের।অল্পবয়েসে বেশ নামডাক কুড়িয়েছে যিনি।দেখতে যেমন সুন্দর তেমনই সুন্দর তার বাচনভঙ্গি।শুধুমাত্র তার অমায়িক বাচনভঙ্গির ফাঁদে ফেলে হাজারও কঠিন রোগের রোগীকেও তিনি মানসিকভাবে সুস্থ করতে পারেন।তবে রোগী ব্যতিত তিনি কারোর সাথেই প্রয়োজনের বাহিরে অতিরিক্ত টু শব্দটিও করে না।সবসময় চোয়াল শক্ত রাখে।বাহিরে থেকে দেখেই বুঝা যায় তিনি সবসময় রাগী মুডেই থাকেন। সাহস করে কেউ কখনোই তার কারণ জানতে চায় নি।কারণ তিনি রোগী ব্যাতিত অন্যসবার সাথেই স্বল্পভাষী ।
সিলেটের মৌলভীবাজারে কোন কাজে এসেছিল শান।কাজ সেড়ে বাড়ি পৌঁছাতেই বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যে হয়ে যায়।সাথে মাঝরাস্তায় তাদের গাড়িটাও খারাপ হয়ে যায়।ড্রাইভার রাফি গাড়ির সমস্যা খুঁজতেই বনেট তুলে ইঞ্জিন দেখার চেষ্টা করছে। হঠাৎ কোন মেয়েলি ডাকে চমকে পিছু ফিরে। বৌ এর সাজে একজন সুন্দরী মেয়েকে দেখে চোখ কপালে ওঠে রাফির।তাকে চমকে দিয়েই মেয়েটি হাতজোড় করে বার বার সাহায্যের আবেদন করে।
🌸🌸
“ভাইয়া”,একটু ঝুঁকে শানকে সম্বোধন করে রাফি।
শান তখনো ব্লুটুথ কানে, কোলের উপর রাখা ল্যাপটপে দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখেই গমগমে স্বরে জবাব দেয়, “হুমম।হলো?”
“ভাইয়া একটা মেয়…”,বাকিটা আর বলতে পারে না রাফি।শানের টাইপিং বন্ধ দেখে শুকনো ঢোক গিলে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকে।
রাফি পূনারায় গাড়ির সামনে মেয়েটির দিকে দেখে।ড্রাইভিং সিটটার পাশে জানালার কাছে বিপরীত দিকে মুখ করে মাথা উচিয়ে বার বার কিছু একটু দেখছে মেয়েটি।আর হাত মুচরাচ্ছে সমানতালে।
মেয়েটির অনুনয়মাখা মুখটা ভেবে রাফির বড্ডো মায়া হয়।তাই সমস্ত ভয়কে একপাশে রেখে শানকে বলে,”ভাইয়া একজন মেয়ে সাহায্য চাইছে।দেখে মনে হচ্ছে বিয়ে বাড়ির থেকে চলে এসেছে।বার বার বলছে হাইওয়ে অবধি……”
শান এবার ল্যাপটপের পার্ট শব্দ করেই নিচে নামিয়ে রাফির দিকে ঘুরে বলে,”তো?”
“না মানে বলছিলাম যে ভাইয়া….”
“গাড়ির কি সমস্যা?”,রাফির কথা শেষ করতে না দিয়েই শান ফিরতি প্রশ্ন করে।
“পানি ফুরিয়ে গেছে”,বিরসবদনে জবাব দেয় রাফি।
শান আবারও ল্যাপটপ খুলে চোখ গুঁজে বলে,”কাছেপিঠে কোথাও থেকে মিনারেল ওয়াটার নিয়ে আয়।কুলেন্ট ওয়াটার এই গ্রামে তো পাওয়া যাবে না।মিনারেলে কাজ চালাতে হবে।ফাস্ট”
রাফি শুকনো মুখে গাড়ির হুডের কাছে চলে আসে।বোতল টা হাতে নিতে শব্দ হতেই মেয়েটি পিছনে ফিরে বলে,”ভাইয়া কি হলো?আমায় সাহায্য করবেন না?বোঝার চেষ্টা করুন না প্লিজ।বেশি দেরি হলে আমার জীবনটাই শেষ হয়ে যাবে”
বলতে বলতেই এক পর্যায়ে কেঁদে ফেলে মেয়েটি।
রাফির ভীষণ মায়া হলো দেখে।হাত ইশারা করে বললো,”পিছনের সিটে ভাইয়া মানে গাড়ির মালিক বসা আছে।আপনি তাকে গিয়ে বলে দেখতে পারেন”
দূরে একটা এনার্জি বাল্বের ক্ষীন আলোয় বোঝা যায় সেটা হয়ত কোন চা’র দোকান হবে। আলো অনুসরন করে রাফি এগিয়ে যায় সেদিকে।
মৌলভীবাজারের এদিকটা বড্ডো গ্রাম্য;নিশুতি এলাকা।আশেপাশে দূর-দূরান্তেও কোন বাজার বা বাড়ি চোখে পড়ে না।রাস্তায় দু একটা সাইকেল,রিকশা বা মোটরবাইক ছাড়া কিছুই চোখে পড়ে না।
মেয়েটি পা টিপে সন্তর্পণে এগোতে লাগল গাড়ির ব্যাক সিটে বসা মানুষটার কাছে।এই মূহূর্তে কোন গাড়ি চলছে না রাস্তায়।চারিদিকে কেমন থমথমে ভাব।অন্ধকার নেমে এলো খানিক পূর্বেই।গাড়ির ভিতরেও তেমন আলো নেই।ভয়ে বুকের ধুকপুকানি শব্দটা বেড়ে যায়।তবুও যে করেই হোক আজ এই মূহূর্তে তাকে এলাকা ছাড়তে হবে।
আধখোলা জানালার গ্লাসটা চোখে পরলেও ভদ্রতার খাতিরে জানালায় দুটো নক করে মেয়েটি।গাড়ির ভিতর টা অন্ধকার।ল্যাপটপের স্ক্রিনের সাদা আলোতে মানুষটার মুখের ডান পাশটা চোখে পড়ে তার।দুবার নক করার পরেও কোন হেলদোল না পেয়ে আবার নক করে মেয়েটি।
শান আবারও পূর্বের ন্যায় টাইপিং বন্ধ করে কিন্তু মাথা তুলে তাকায় না।
“আমায় কি একটু হেল্প করবেন?বেশি না, হাইওয়ে অবধি”
ভিতর থেকে পুরুষালি গাঢ় মোটাস্বরে ভেসে আসে,”নো”
“কি মানুষ রে বাবা!একেবারেই নো?হুহহ?”,ভ্রুকুচকে যায় মেয়েটির।মুখে ভেঙচি কেটে আনমনে ভাবতে থাকে।
চারিদিকে আবার চোখ বুলিয়ে মেয়েটি গলায় দু’বার হালকা খাকার দিয়ে বলে,”দিন না প্লিইইই….”
“নো মানে না।বাংলা টা বলে দিলাম”,নির্লিপ্ত জবাব শানের।
মুখে বিরক্তিসূচক শব্দ করে মেয়েটি জানলা থেকে সরে আসে।
“কি করব এবার আমি?এতোক্ষনে তো ঐদিকে হৈহুল্লর পরে গেছে।যদি এলাকা না ছাড়তে পারি আমি তো বাঁচতে পারব না।কি করি, কি করি”,হতাশ হয়ে নখ খুঁটতে থাকে সে।কোন কূল কিনারা পায় না।মনে মনে শানের চৌদ্দগুষ্ঠির নামে প্রচুর গালি দিয়ে গাড়ি পাশ কাটিয়ে গাড়ির উল্টোপথে হাঁটা ধরে।
শান এবার মাথা তুলে তাকায়।জানলায় নজর ফেলে কাউকেই দেখতে পায় না।
“কোথায় গেলো মেয়েটা?এখনি তো ছিলো “,আনমনে ভেবে চাপাস্বরে বলে,”হোয়াটএভার”
আবার কিছু একটা টাইপিং এর কাজে লেগে পরে।
🌸🌸
কিছুক্ষন পর রাফি এসে যায়। হাতে দুটো বড় বড় মিনারেল ওয়াটারের বোতল সমেত।এগিয়ে দেয় শানের দিকে,”ভাইয়া এই যে পানি”
শান এবার কান থেকে ব্লুটুথ টা খুলে ল্যাপটপ কোল থেকে নিচে রেখে গাড়ি থেকে নেমে পরে।বোতল দুটো নিয়ে এগিয়ে যায় বনেটের দিকে।বনেট খুলে ইঞ্জিনের রেডিয়েটরে পানি ঢালে।
এদিকে রাফি চোখ বুলিয়ে এদিক সেদিক মেয়েটিকে খুঁজতে থাকে।চোখ যতোদূর যায় সদ্য পিচ ঢালাই চকচকে সরকটার উপর ল্যাম্পপোস্টের আলোর প্রতিফলন খুঁজে পায়।
“মেয়েটা গেলো কই?ভাইয়াকে জিজ্ঞেসা করব একবার”
ভাবতেই শানের কথার শব্দে ভাবনায় ছেঁদ পরে রাফির।
“কমপ্লিট,যা স্টার্ট কর দেখি”,গাড়ির স্টেয়ারিং এর দিকে ইশারা করে বলে শান।
রাফির মাথা থেকে মেয়েটার ভাবনা মূহূর্তেই গায়েব হয়ে যায়।এগিয়ে যায় স্টেয়ারিং এর দিকে।
“ভাইয়া, হইছে ”
বিপরীত মুখী হয়ে শান ফোন টিপছিলো। রাফির কথায় স্বস্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে সে গাড়িতে এসে বসে।
গাড়ি ছুটে চলে ঢাকার উদ্দেশ্যে।
🌸🌸
সিলেট থেকে ঢাকার দূরত্ব কম নয় ;বেশ খানিকটাই।দীর্ঘ ছয় থেকে সাত ঘন্টার দূরত্ব। জ্যাম থাকলে তো কথাই নেই।পুরো রাস্তায় শান ল্যাপটপে মুখ গুঁজে কিছু একটা করছে।রাফি সামনের রেয়ার মিররে শানকে পরপর দেখে ভাবতে থাকে,”একটা মানুষ কী করে এতোটা নিরস হতে পারে!সারাদিন খালি কাজ আর কাজ”
রাত তখন ১২ টা।সামনে তাকিয়ে গাড়ি চালাতেই হঠাৎই আগন্তুক মেয়েটার কথা মাথায় আসে রাফির।পূনারায় শানকে মিররে দেখে কিছু একটা বলতে চাওয়ার সুযোগ খোঁজে সে।
“কিছু বলবি? “,ল্যাপটপে দৃষ্টি রেখেই সাবলীল ভাবে প্রশ্ন করে শান।
হতভম্ব বনে যায় রাফি।অবাক বিষ্ময়ে ভাবতে থাকে ,”না তাকিয়ে কিভাবে বুঝল!”
“কিছু বলতে চাইলে বল,ওতো কিছু না ভেবে”
শানের স্বগতোক্তিতে রাফি চমকে উঠে বলে,”ভাইয়া তখনকার মেয়েটা….?”
“চলে গেছে”,থমথমে কন্ঠে জবাব দেয় শান।
কৌতূহলী রাফি ইচ্ছেকে দমাতে না পেরে রাস্তার দিকে তাকিয়ে বলে,”কোথায় গেলো ভাইয়া?খুব করে সাহায্য চাইছিলো”
শান এবার মাথা তুলে রাফির দিকে তাকায়। সন্দিহান মনে সরুচোখে সেদিকে চেয়ে থাকে।রাফি কয়েক সেকেন্ডের জন্যে মিররে তাকিয়ে পর পর কয়েকবার চোখের পলক ফেলে অপ্রস্তুত হয়ে বলে,”না মানে মেয়েটাকে দেখে সত্যিই মনে হয়েছিল বিপদে পরেছে তাই আর কি…”
মিলিয়ে যায় রাফির কথা।
“কোথায় গেছে, জানি না।”,বলে শান আবার কাজে মন দেয়।কিছু একটা ভেবে আবারও ল্যাপটপের পার্ট নামিয়ে রাফিকে তেড়ছা ভাবে বলে,”আচ্ছা তোর এতো প্রশ্ন কেন? বাই এ্যানি চাঞ্ছ তোর কি কিছু….”
“না না না, ভাইয়া। বিশ্বাস করো আমি চিনি না মেয়েটাকে”
“গাড়ি হসপিটালে নিবি।কাজ আছে। আমায় ড্রপ করে তুই চলে যাস”,রাফির কথার রেশ কাটিয়ে শান বলে।
সম্মতিসূচক ভঙ্গিতে রাফি জবাব দেয়,”আচ্ছা ভাইয়া”
🌸🌸
ত্রিশ মিনিটের পথ অতিক্রম করে গাড়ি এসে পৌঁছায় হসপিটালের সামনে।ঢাকা শহরে এই সময়টাকে দিনের সন্ধ্যেবেলার সাথে তুলনা করা হয়।ঝাঁ চকচকে বিল্ডিং গুলো একের পর এক দাঁড়িয়ে আছে আপন দাম্ভিকতায়।রঙ্গচঙ্গে বাতির ঝলক চারিদিকে।
শান গাড়ি থেকে নেমে চাবি নিয়ে হসপিটালে ঢুকে পরে।রাফি রিকশা করে চলে যায় বাড়িতে।
হসপিটালে এখনো মানুষজনের আনাগোনা বেশ চোখে পরার মতো।শান গায়ের ব্লেজার টা খুলে হাতে ভাঁজ করে নেয়। চশমাটা একহাতে ঠিক করে করিডোর ধরে চলে আসে কেবিনে।উদ্দেশ্য হাতের কাজগুলো সেড়ে তাড়াতাড়ি বাড়ি পৌঁছানো।আজ বড্ডো ক্লান্ত লাগছে তার।
কেবিনে এসে বসতে বসতেই রিনির আগমন।রিনি, শানের বন্ধু।তবে বন্ধু কম অযাচিত কলিগ বেশি।
শানের টেবিলের উপর দুই হাত টান টান করে হাস্যোজ্বল মুখে জিজ্ঞেসা করে, “কাজ কমপ্লিট হলো ডাক্তার সাহেবের?”
“হু”,গম্ভীরভাবে জবাব দেয় শান।
রিনি এগিয়ে এসে শানের পাশে দাঁড়াতে না দাঁড়াতেই বাজখাঁই গলায় শান বলে ওঠে,”তোমায় কতোবার বলেছি না আমার কেবিনে নক না করে আসবে না।আর আমার থেকে মিনিমাম তিন হাত দূরত্ব মেইনটেইন করবে।হোয়াট ইজ দিস?হোয়াট ইজ দিস?”
শেষের কথাটা বেশ রেগে বলে শান।
শানের মুখের রাগিভাবই বলে দেয় সে কতোটা বিরক্ত রিনির উপর।রিনি থমথমে মুখে বলে,”মেয়েদের প্রতি তোমার এতো ক্ষোভ কিসের বলতে পারো?নাকি নাম, যশ,খ্যাতির অহঙ্কার? নাকি রূপের?”
চোখ বন্ধ রেখে হাত মুষ্ঠিবদ্ধ করে শান নিজের রাগকে নিয়ন্ত্রনের চেষ্টা করে। মুখ দিয়ে পর পর কয়েকবার নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে,”রিনি আ’ম টু মাচ টায়ার্ড।প্লিজ ডোন্ট মেইক মি এ্যাংরি।গেট দ্যাট?”
টলমলে চোখে রিনি চেয়ে থাকে শানের দিকে।আজ প্রথম না এরকম বাজে ব্যবহার হসপিটালের প্রায় মহিলা ডাক্তার, নার্সরা পেয়ে থাকে।যারা কারণে অকারণে শানের কাছে ঘেঁষা চেষ্টা করে।
শান দরজার দেখি হাত ইশারা করে বলে,”হুমম”
রিনি এগিয়ে যায় সেদিকে।
এরপর শান নিজের কাজ সম্পন্ন করে গাড়ি স্টার্ট করে রওনা দেয় বাড়ির পথে।
🌸🌸
“ইনায়াহ্ ঘুমিয়েছে?”
“জ্বি, স্যার। তবে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে।আপনাকে ছাড়া ঘুমাতে চায় নি মোটেই।”
শান ঠোঁটে সৌজন্যমূলক হাসি এলিয়ে বলে, “হুমমম।অনেক রাত হয়েছে আপনি রাতটা এখানে থাকুন।কাল ডিউটি শেষে স্যালারি টা সমেত বাড়ি ফিরিয়েন।”
“ওকে স্যার”
#আসক্তি২ (আ জার্নি অব্ এডিকশান)
পর্বঃ০২
লেখায়ঃআফিয়া আজাদ নিঝুম
“হে বিউটিফুল ব্রাইড, হু আর ইউ?”
“পাখি,আই’ম পাখি।এন্ড ইউ?”
“ইনায়াহ্”
“ইনায়াহ্, উমমম।ইওর নেইম ইজ এজ সুইট এজ ইউ”
“ইনায়াহ্ হু’জ দেয়ার?”,রান্নাঘর থেকে ভেসে আসা শানের উচ্চস্বরে বলা কথাটায় দুজনেই সেদিকে দৃষ্টিপাত করে।
ইনায়াহ্ হাস্যোজ্বল মুখে জবাব দেয়, “আমাদের বাড়িতে একটা খুব সুন্দর বউ এসেছে সান সাইন”
“এ্যাএএএ,বাংলা জানে?আমি তো বিদেশির বাচ্চা ভেবে কতো চিপে চুপে কষ্ট করে ইংরেজি গুলো বললাম।”,মুখটা বাংলা পাঁচের মতো করে মাথার ওড়নার আঁচলটা খুঁটতে খুঁটতে আনমনে ভেবে চলে পাখি।
“যাক গে সেসব।আমি আছি কোথায়? “,মাথা উচিয়ে, ঘাড় ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ড্রয়িং রুমটার চারিপাশে চোখ বুলিয়ে নেয় পাখি।
বিশাল বড় ড্রয়িং রুমের মাঝ বরাবর ইমপোর্ডেট সোফা সেটটা নজর কাড়ার মতো।সোফার পিছনের দিকটায় লম্বা হয়ে সামনে একটু ভাঁজ হওয়া একটা সিঁড়ি।যেটা সোজা উপর তলা নির্দেশ করে।উপরে তাকাতেই পাখির চোখ আটকে যায় মাথার উপর ঝুলন্ত বিশালাকার ছ্যান্ডেলিয়ার্সটার (ঝাড়বাতি)উপর।আপনা আপনি মুখটা গোলাকার হয়ে যায় পাখির।খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে বাড়িটার সবটা দেখে চলেছে সে।
“এত্ত বড় বাড়ি!”
(কিছুক্ষন আগে)
সকাল বেলা বুকের উপর নরম কোমল স্নিগ্ধ স্পর্শে ঘুম ভেঙ্গে যায় শানের।চোখ বন্ধ রেখেই ঠোঁটের কোণে মুচকি হেসে ছোট সত্তাটাকে দুহাতে আরো জড়িয়ে নেয়।কপালে গাঢ় চুমু এঁকে বলে,”গুড মর্নিং মাম্মাম”
“আমি তোমার সাথে কথা বলব না “,থমথমে মুখে অভিমানী স্বরে জবাব দেয় ইনায়াহ্।
“সরি বাবা, কাল অনেক কাজ ছিলো…”
“আই ডোন্ট ওয়ান্না হেয়ার এ্যানি অব ইওর এক্সকিউজেস”,বুকে মাথা রেখেই বলে ইনায়াহ্।
“আজ ফ্রাই ডে।আজ সারাদিন সান সাইনের সাথে অনেক মজা হবে,ডু ইউ ওয়ান্না এনজয়?”
মাথা তুলে চোখে মুখে খুশির ঝলকানি তুলে ইনায়াহ্ জবাব দেয়,”ইয়েপপপ”
এরপর ইনায়াহ্কে ফ্রেশ করে দিয়ে শান নিজে ফ্রেশ হতে চলে যায় ওয়াশরুমে।
“তুমি গার্ডেনে যাও। ওখানে আব্দুল্লাহ্ চাচা রয়েছে।খেলতে যাও আমি আসছি।কেমন?”
“ঠিকাছে সান সাইন”
বলেই ইনায়াহ্ টেডিবিয়ার হাতে নিচে বাগানে চলে যায়। শান শাওয়ার নিতে টাওয়াল হাতে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়ায়।
একটু পর ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে সোজা রান্নাঘরে চলে যায়।কারণ আজ ইনায়াহ্’র গভারনেস বাসায় রয়েছেন।তার খাবারের বন্দবস্ত করতে হবে।গভারনেস নাভানাই ইনায়াহ্’র দেখাশোনা করেন।সারাদিন ইনায়াহ্’র সাথে থাকেন।ইনায়াহ্’র খাওয়া, গোসল, ঘুম দিনের সমস্ত কাজ তিনি দেখাশোনা করেন।সন্ধ্যেবেলা যখন শান বাড়ি চলে আসে তখন তিনি চলে যান।
“উফ, ঐদিকে সর না ইরা। ঘুমাতে দে জ্বালাস না তো ….”,বলতে বলতেই পাখি পাশ ফিরতেই হাতের কুনই গিয়ে খটাশ করে লাগে লোহার একটা রডের সাথে।চোখ মুখ কুচকে দাঁতে দাঁত চেপে ব্যথা সহ্য করার আপ্রান চেষ্টা করে।কনুইয়ে হঠাৎ ব্যথা পেলে একজন চেতন মানুষেরই কতো কষ্ট হয় সেখানে তো ঘুমন্ত।
কনুই টা ডলতে ডলতে চোখ খোলে।বুঝতে পারে তার থেকে মাত্র দুইহাত উপরে একটা শেড।গতকাল রাতের কথা মনে পড়তেই ধরফরিয়ে ডিকি খুলে বাহিরে বেরিয়ে আসে পাখি।হাই তুলতে তুলতে চারপাশে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টার করে তার বর্তমান অবস্থান।
“কোন বড়লোকের আলিশান মহল হবে হয়ত”,আনমনে ভাবতেই পাখি চোখ ডলে আবার থমকে যায়।
“আমি তো কাল ঐ বদ লোকটার গাড়িতেই উঠেছি।তারমানে এটা তার বাড়ি?এতো সুন্দর বাড়ির বাইরে টা, না জানি ভিতরটা আরো কতো সুন্দর!”
ভাবতেই পাখির চোখ আটকে যায় সদর দরজার সামনে দুইদিকের ক্যাকটাসের উপর।মাঝারি সাইজের গাছ দুটো ফুলে ফুলে ভরে গেছে।চোখের সামনে নিজের আকাঙ্খিত বস্তু দেখে কেউই না ছুঁয়ে থাকতে পারে না।পাখিরও তাই হলো।নিজেকে কন্ট্রোল করা দায় হয়ে গেলো।এগিয়ে গিয়ে ফুল গুলো ছুঁতেই হাতে কাঁটা ফুটে যায়।
“আহ্”,চাপাস্বরে ব্যথাসূচক শব্দ করে পাখি।চোখ মুখ কুচকে ভাবতে থাকে,”সুন্দর জিনিসগুলো বরাবরই কন্টকময় হয় কেন!”
ভাবতে ভাবতেই চোখ আটকে যায় বাড়ির ভিতরকার ড্রয়িং রুমে।বেশ পরিপাটি একটা ঘর।ভিতরে যাওয়ার আগ্রহ যেন ক্রমেই বেড়ে চলেছে পাখির।
“এতো সুন্দর একটা বাড়ি ভিতর টা দেখবি না পাখি? তা কি করে হয়!যা না গিয়ে দেখে আয়”,নিজের মনের কথাকে সায় দিতেই ভিতরে একপা রেখে দুই পা পিছিয়ে আসে পাখি।
“ঐ লোকের বাড়ি হলে তো নির্ঘাত মারা পরব।একেতো চুরি তারপর মহাচুরি। না বলে গাড়ি করে তার সাথে এসেছি। আবার ঘরেও ঢুকছি।ওহহ বাবা,চোখের সামনে অপমানের ঘোর অমানিশা দেখতে পাচ্ছি”,
ভাবতে ভাবতে পাখি আবার চলে আসে গাড়ির কাছে।চারিদিকে কোন মানুষজন নেই।পর পর কয়েকটা বাগান শুধু চোখে পরার মতো।
“আচ্ছা এটা কোন জায়গা?আর আমি কোন জায়গায় যাবো?কি করব এখন কিছুই তো বুঝতেছি না।রানি মাসির দেয়া ঠিকানাও তো হারিয়ে ফেললাম।এবারে?”,বিড়বিড় করতে করতে পাখির দুষ্টু মন আবার বলে ওঠে,”বিয়ের আসর থেকে,আয়ানের হাত থেকে পালিয়ে আসতে পেরেছিস।আর এটুকু পারবি না?আরে যা, গিয়ে না হয় সুযোগ বুঝে বাড়িটা দেখে আবার দৌড়ে ছুটে পালাবি। ব্যাস হয়ে গেলো”
পাখি এবার সাতপাচ না ভেবে এগিয়ে যায় সদর দরজার দিকে।পা টিপে ভিতরে ঢুকতেই কারো কথায় থমকে যায়।
“ইনায়াহ্, মাম এদিকে আসো একটু।সান সাইনকে কিচেনে হেল্প করো।”
পাখির পা থেমে যায় মূহূর্তেই।পরপর কয়েকবার চোখের পলক ফেলে খানিক পূর্বে বলা কথার অস্তিত্ব খুঁজতে সেদিকে এগিয়ে যেতেই।
পাশে থেকে ইনায়াহ্ ডেকে বলে,”হে বিউটিফুল ব্রাইড হু আর ইউ?”
পাখি চমকে আবার পাশে তাকিয়ে দেখে বেশ নাদুসনুদুস চেহারার একটা চার-পাঁচ বছরের ফুটফুটে মেয়ে বাবু।পাতলা পাতলা চুল গুলোয় মাথার উপর দু’পাশে ছোট ছোট দুটো ঝুটি করা।যেটা যে কারোরই হাসির কারণ হবার জন্যে যথেষ্ট।পাখি হাসি আটকে রাখার চেষ্টা করে মুখে দু’বার হাত দেয়।
ইনায়াহ্ নিজের প্রশ্নের জবাব পায় না।সন্দিহান চোখে টেডিবিয়ার টা শক্ত করে জড়িয়ে পাখির পাশে গিয়ে দুইবার ভ্রু নাচায়।যার মানে, “কে তুমি?”
“পাখি,আ’ম পাখি।এন্ড ইউ?”
🌸🌸
“ইনায়াহ্”,বলেই শান দ্রুত ইনায়াহ্’র হাত টেনে নিজের কাছে নিয়ে আসে।পাখি চমকে পিছন ফিরে তাকায়। চোখে চোখ পড়তেই শানকে চিনতে পাখির অসুবিধা হয় না।শুকনো ঢোক গিলে দুই পা পিছিয়ে যায় সে।
“ওহহহ তারমানে এই বাচ্চা এই বদলোকের!দেখতে তো মা শা আল্লাহ্ তার ব্যবহার এতো বাজে!”
এদিকে শান কপালে ভাঁজ ফেলে বাম ভ্রু টা উচিয়ে পাখির দিকে সন্দিহান চোখে চেয়ে থাকে।
“কে তুমি?”,শক্ত কন্ঠে প্রশ্ন শানের।
শান আবার জিজ্ঞেসা করে, “কি চাও?”
পাখি মুখটা থমথমে করে বলে,”আমি পাখি”
“তো এখানে কি?”,বলতেই চোখ বন্ধ করে কন্ঠটা চেনার চেষ্টা করে।শানের তীক্ষ্ণ মেধা বার বার বলছে কন্ঠটা চেনা।
“আমায় কি একটু হেল্প করবেন? বেশি না হাইওয়ে অবধি”,পাখির বলা গতকাল রাতের কথাটা মূহূর্তের মাঝেই শানের মগজে চলে আসে।
কপালের ভাঁজ সরিয়ে চোয়াল শক্ত করে বলে,”তুমি?”
পাখি মুখটা নিচু করে মিনমিনে গলায় বলে,”হুমমম”
“এই মেয়ে তুমি কাল হেল্প চাইছিলা না?”
শান এবার অবাক হয়ে বলে,”তুমি কিভাবে আসলে আমার সাথে?”
পাখি আমতা আমতা করে বলে, “আআপনার গাগাড়ির ডিকিতে”
“হোয়াট?”,অবাক হয়ে যায় শান।
তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে বলে,”কি সমস্যা তোমার, কি চাই?বলো, কেন এসছো?
“কি বলব এবার? আমি তো রানি মাসির দেয়া ঠিকানা টা হারিয়ে ফেলেছি।বলব আমার মেমরি লস হইলো আপনার ডিকিতে রাখা লোহার যন্ত্রপাতিতে।হুমমম।”
নিজের মনে কুবুদ্ধি এটে পাখি বলে,”আসলে আপনার…..”
“কোন চালাকি করবা না, কথা ঘুরিয়ে পেচিয়ে বলবা না।যা বলেছি তার উত্তর দাও”
“আরে বাবা বলছি তো।আপনার গাড়িতে রাখা রডের সাথে লেগে আমার মেমরি লস হইলো মনে হয়।কালকে রাতের আর কোন ঘটনা আমার মনে নাই…..”,বলতে বলতেই শানের দিকে চোখ রেখে বুঝতে পারে এই উত্তর তার বিশ্বাস হয় নি।পরোক্ষনে নিজেও উপলব্ধি করে “এটা কি বললাম।একটা পাঁচ বছরের বাচ্চাও বুঝবে আমি মিথ্যা বলছি”,ভাবতে ভাবতে ইনায়াহ্’র দিকে তাকায় পাখি।
“এই নতুন বউ তুমি না এখনি সান সাইনের কথায় হুমম বললা।রাতে ডিকিতে ঢুকেছো সেটাও বললা।তাহলে তোমার মেমরি লস হলো কেমনে?”,ইনায়াহ্ নিজের গায়ের উপর থেকে শানের হাত টা সরিয়ে টেডি টা একহাতে নিয়ে তৎক্ষণাৎ বলে কথাটা।
শান ইনায়াহ্ কে আবারও টেনে নিজের কাছে আনে।পাখির কাছে দুপা এগিয়ে বলে,”বলবা নাকি পুলিশ ডাকব?”
“পুলিশ! পুলিশ কেন?আমি কি চোর নাকি?”
শান কয়েক সেকেন্ড চোখ বন্ধ করে আবার বলে,”সেটা তো তুমি জানবে আর পুলিশ জানবে”
বলেই শান ল্যান্ডলাইনের দিকে এগিয়ে যায়।
“বলছি বলছি”,শানের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে হন্তদন্ত হয়ে বলে পাখি।
“মেইনটেইন ডিসটেন্স “,দু আঙ্গুল উচিয়ে ইশারা করে পাখিকে পিছিয়ে যেতে বলে শান।এরপর ভ্রু নাচিয়ে ইশারা করে বলতে বলে।
“আমি বিয়ে থেকে পালিয়েছি কোন একটা যৌক্তিক কারণে।আসার সময় আমার পাশের বাড়ির রানি মাসি হাতে একটা ঠিকানা সমেত ফোন ধরিয়ে বলেছিলো’কাগজে দেয়া ঠিকানায় আমার বোনের বাড়ি’আমি যেন সেই স্থানে উঠি।তাড়াহুড়োতে কাগজ টা আর খুলে দেখি নি।পিছনে আমায় খোঁজার জন্যে লোক এসেছিলো।তারা ধরতে পারলে আমায় মেরেই ফেলত।তাই দৌড়ে ছুটে আসতে কাগজ টা আর ফোনটা হারিয়ে ফেলেছি।বড় রাস্তার মাথায় উঠে দেখি আপনাদের গাড়িটা দাঁড়ানো।কোন উপয়ান্তর না পেয়ে আপনাদের থেকে সাহায্য চাই।কিন্তু আপনিতো ডিরেক্ট না করে দেন।তাই বাধ্য হয়েই ডিকিতে…..”
শানের দিকে তাকাতেই থেমে যায় পাখির কথা।
ইনায়াহ্ আবারও শানের হাতটা সরিয়ে পাখির কাছে এগিয়ে এসে বলে,”তুমি তাহলে এখানে থাকো নতুন বউ”
ইনায়াহ্’র কথায় ভ্রু কুচকে শান বলে,”ইনায়াহ্ কাম টু মি”
ইনায়াহ্ শানের দিকে একবার দেখে আবার বলে,”এই বাড়িতে আমি আর সান সাইন থাকি।তুমিও থাকো আমাদের সাথে”
ইনায়াহ্’র কথায় পাখি শানের দিকে চেয়ে ভয়ে গলা শুকিয়ে আসে।রাগে শানের কপালের সব কয়টা রগ টন টন করছে।
“ইনায়াহ্ ভিতরে যাও।নাভানা আন্টিকে নাস্তার জন্যে ডেকে আনো”,পাখির দিকে রাগি চোখে চেয়ে বলে শান।
“ওকে”,বলেই ইনায়াহ্ গেষ্ট রুমের দিকে চলে যায়।পাখি অসহায় মুখ করে সেদিকে চেয়ে থাকে।
“তোমাদের মতো মেয়েদেরকে না আমার বেশ ভালো করেই জানা আছে।সো বের হও বাড়ি থেকে।আউট”,শেষের কথাটা বেশ জোড় দিয়ে বলে শান।
লজ্জায় অপমানে পাখির মরে যেতে ইচ্ছে করছে
“ধুর বাবা কেন যে বাড়ি দেখার ইচ্ছে হলো!”
“কি হলো , শুনতে পাও না?”
শানের কথায় পাখির ভাবনার সুতো ছেড়ে।আমতা আমতা করে বলে,”আমি আসলে বাড়িটা…. ”
শান দুই পা এগিয়ে এসে ধমক দিতে উদ্যত হতেই চোখ আটকে যায় ঠোঁটের নিচের কালো তিল টার উপর।
এতো সময়ের মাঝে একটি বারও পাখিকে ভালো করে দেখে নি শান।
মুখের উপরে ব্রাইডাল মেকাপের কারুকাজ টা নষ্ট হয়ে গেছে।তবুও সৌন্দর্য কমেনি এক ফোটাও।চোখের কাজল লেপ্টে গেছে চারিপাশে।পাগল করার মতো টানা টানা দুটো হরিণী চোখ।পুরু ওষ্ঠযুগলে লিপস্টিকের এলোমেলো দাগ।
এসবের কোন কিছুই শানের নজরে পরছে না।শুধু জ্বলজ্বল করছে ঠোঁটের নিচের ঐ তিলটা।মূহূর্তে রাগ টা তরতর করে বেড়ে ওঠে।হাত মুষ্ঠিবদ্ধ করে বলে,”আউট।আউট রাইট নাউ”
“সান সাইন,তুমি ওকে কেন বকছো?তুমি শুনলে না ওর ঠিকানা ও হারিয়ে ফেলেছে।ও এখন থেকে এ বাড়ি থাকবে।প্লিজ সান সাইন নতুন বউকে বকো না।দেখো না ও কত্তো মিষ্টি দেখতে”, শানের হাত ধরে আদুরে স্বরে বলে ইনায়াহ্।
গভারনেস নাভানা ব্যপার টা কিছুই বুঝতে পারছে না।তিনি আগ্রহও দেখাচ্ছেন না।কারণ এটা ভদ্রতার বাহিরে।যার যার ব্যপার তাদেরকেই বুঝে নিতে দিতে হয়।
শান নাভানার দিকে চেয়ে বলে,”ওয়ান মিনিট প্লিজ”
“জ্বি স্যার”,নাভানা সম্মতি সূচক বাক্যে জবাব দেয়।
🌸🌸
খানিক পরে শান হাতে নাভানার স্যালারি টা সমেত সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে আসে।আড়চোখে একবার পাখির দিকে তাকায়। ইনায়াহ্ পাখির হাত ধরে বার বার মুখের দিকে দেখে মিষ্টি হাসি দিচ্ছে।আর পাখিও ওর সাথে সাথে সৌজন্য হাসি প্রকাশ করছে।
“প্লিজ মিসেস নাভানা”,বলেই শান স্যালারি টা নাভানার দিকে এগিয়ে দেয়।
হাসিমুখে সেটা হাতে নিয়ে নাভানা বলে,”স্যার, সরি টু সে আমি সামনের মাস থেকে আর আসতে পারব না”
ভ্রু কুচকে আসে শানের।
নাভানা আবার বলে,”আমার হাজব্যান্ডের ট্রান্সফার হয়েছে স্যার ফ্রম হেয়ার টু চিটাগং।সো….”
চোখে মুখে চিন্তার ভাঁজ ফেলে শান জবাব দেয়,”ওহহ, ইট’স ওকে”
“ইয়েএএ,সান সাইন আগামি মাস তো কালকেই।তাহলে নতুন বউ এখন থেকে আমার গভারনেস।”,খুশিতে গদগদ হয়ে বলে ইনায়াহ্
শান পাখির দিকে একবার তাকাতেই পূনরায় চোখ পড়ে তিলটার উপর। রাগে চোখ সরিয়ে নিয়ে নাভানাকে বলে, “মিসেস নাভানা সামান্য ব্রেইকফাস্টের এ্যারেইঞ্জ করেছি।প্লিজ হ্যাভ ইট”
“মাই প্লেজার স্যার। বাট সরি, আমার এই মূহূর্তেই যেতে হবে। আর্জেন্ট কাজ আছে”,কৃতজ্ঞভরা কন্ঠে জবাব দেয় নাভানা।শান আর কিছু বলে না।
নাভানা ইনায়াহ্কে আদোর করে চলে যায়।
এপরপর ইনায়াহ্ পাখির হাত টানতে টানতে ওর ঘরে নিয়ে যায়।পাখি পর পর কয়েকবার শানের দিকে চেয়ে দেখে শান চেয়ে আছে ওদের দিকে।
“কিউটি টার নাম তবে ইনায়াহ্!ইনায়াহ্ ঐ বদলোকের মেয়ে হলে ইনায়াহ্’র মা কোথায়?”
“কি করব, ইনায়াহ্’র জন্যে নতুন গভারনেস কোথায় পাব?ঐ মেয়েটা!”,ভাবতেই আবারও তিলটার কথা মাথায় আসে শানের।রাগে গজগজ করে এগিয়ে যায় কিচেনের দিকে।
🌸🌸
শান বুঝে উঠতে পারে না পাখিকে বিশ্বাস করবে কি করে?
“চেনা নেই, জানা নেই।কথায় অবশ্য মনে হলো সে সত্যি বলছে।বাট এক বাড়িতে থাকা?ইম্পসিবল! “,ভাবতে ভাবতে শান চপিং বোর্ডে ছুড়িটা শব্দ করে রাখে।সবজি কাটা বন্ধ করে বাহিরে চোখ রাখে।
চলবে…..
[ রিডার্স 😍💜💜)