#আসক্তি২
পর্বঃ১৮
লেখায়ঃআফিয়া আজাদ নিঝুম
“ওহহহ হো, তাহলে এই কথা?যাওয়ার সময় দরজাটা লাগাই দিলে কি ক্ষতি হতো শুনি?”
“আরে, সে সময় টা দিলে তো!”
“আচ্ছা, ব্যপার না।বাট নিজের মুড নিয়ে থাক।ও যতোক্ষন নিজে থেকে বলে নি ততোক্ষন কিছু বুঝতে দিস না।বুঝেছিস”
“হুমম”
শানের কর্মকান্ডের সমস্ত কথা রাখিকে জানায়। ফোন রেখে ইনায়াহ্’কে নিয়ে ড্রয়িং রুমে পড়তে বসে পাখি।কিছুক্ষন পর শান চলে আসে। টাই খুলতে খুলতে সোফায় গা এলিয়ে দেয়।মাথাটা চেপে ধরে ইনায়াহ্’কে বলে,”মাম্মাম এক গ্লাস পানি দাও তো”
পাখি সেদিকে একবার ক্রুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে ইনায়াহ’কে বলে,”তুমি পড়ো।কারো বেসিক সেন্সের অভাব থাকলে আমার তো আর নেই।পড়তে বসলে যে বাচ্চাদের ডাকতে নেই তা বোধ হয় অনেকে জানে না”
প্রলাপ বকতে বকতে পাখি রান্নাঘর থেকে একগ্লাস পানি এনে শানের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,”হুহমম!”
শান হাত বাড়িয়ে পানিটা নিয়ে দ্রুত শেষ করে গ্লাসটা সেন্টার টেবিলে রাখতে পাখি চট করে তুলে নিয়ে বলে,”কাজ করতে কষ্ট লাগে।কেউ এলোমেলো করলে খুন করতে ইচ্ছে করে”
পূনরায় প্রলাপ বকতে বকতে চলে যায় গ্লাসটা রাখতে।
শান পাখির দিকে তাকিয়ে মিটমিট করে হেসে ভাবে,”মন্দ লাগছে না”
মাথাটা পিছনে এলিয়ে বলে, “মাম মাথাটা একটু টিপে দাও তো”
ইনায়াহ্ এতোক্ষনে মাথা তুলে তাকিয়ে বিরক্ত হয়ে বলে,”উফ,সান সাইন বিরক্ত করো না তো।রাখি ম্যাম হোম ওয়ার্ক দিয়েছে। না করলে কাল পানিশমেন্ট আছে”
“এই রাখি ম্যামই তো কারো মাথাটা একটু একটু করে চিবিয়ে খাচ্ছে”,শানের বিড়বিড় করে বলা কথাটা পাখির কর্ণকুহরে যাওয়ার সাথে সাথে রক্তচক্ষু নিয়ে পাখি ফিরে তাকায়।ঠোঁটের কোনে মুচকি হাসি রেখে মূহূর্তেই চোখ বন্ধ করে ফেলে শান।চোখ বন্ধ রেখেই বলে,”প্লিজ মাম, আসো না।প্রচুর হেডেইক হচ্ছে”
শান বুঝতে পেরেছে ইনায়াহ্’কে ডাকলে পাখি আসবে।তাই বার বার ডেকে চলেছে।
শানের কথা শুনে সেদিন রাতের কথা মনে পড়ে যায় পাখির।সারা শরীর রাগে রি রি করে।থম মেরে বসে ইনায়াহ্’র হোমওয়ার্ক দেখছে।উঠার কোন নাম গন্ধও নাই।পাখির কোন সাড়া না পেয়ে শান আস্তে করে চোখের পাতা খুলে পাখির দিকে চেয়ে থাকে।পাখি সেদিকে তাকাতেই তৃতীয় দফায় পাখির দিকে তাকিয়ে বলে,”প্লিজ”
পাখি একটু এগিয়ে এসে শানের সামনে দাঁড়িয়ে বলে,”সেদিনের কথা মনে আছে ডক্টর শান?”
শান ছোট ছোট চোখে ঘোরলাগা দৃষ্টিতে চেয়ে অস্পষ্ট স্বরে বলে,” সরি ”
পাখি যেন সমস্ত কথা হারিয়ে ফেলে মূহূর্তেই।শানের দিকে চেয়ে লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে করছে ওর।গিয়ে বসে পরে আবার ইনায়াহ্’র কাছে।কিছুক্ষন কিছু একটা ভেবে নিজেকে সামান্য ধাতস্থ করে শানের মাথার পিছনে গিয়ে দাঁড়ায়।আলতো হাতে মাথা বুলিয়ে দিতে শান চোখ বন্ধ করে ফেলে মূহূর্তেই।পাখি ধীরে ধীরে কপাল টিপে দেয়,মাথার চুল সামান্য টেনে দেয়,হাত গলিয়ে ঘাড়ে হাত রাখতে শান চোখ মেলে তাকায়।
সেদিনের কথা ভাবতেই গলা শুকিয়ে কাঠ হয় পাখির।
“আজও কি অপমান করবে নাকি?এই লোকের তো মুড কখন চেঞ্জ হয় বলা মুশকিল”
ভেবে আবারও শানের দিকে তাকায় পাখি।ঘুম জড়ানো এক নেশাতুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে শান।পাখি জড়তা ভুলে আমতাআমতা করে বলে,”অন্যদিকে তাকান”
“কেন?”,একরোখা প্রশ্ন শানের।
শুকনো ঢোক গিলে জবাব দেয় পাখি”আমার অস্বস্তি হচ্ছে”,
শান মুচকি হেসে অন্যদিকে তাকায়।পাখি শানের মাথার উপর হাতদুটো রাক্ষসীর মতো ইশারা করতেই ইনায়াহ্ দেখে ফেলে। মুখ চেপে খিলখিল করে হেসে ওঠে।
🌸🌸
সকাল সকাল আজ রাহেলা চলে এসেছে।শান মর্নিং ওয়াক থেকে এসে ড্রয়িং রুমে দাঁড়াতে রাহেলাকে দেখতে পায়।কপোট অভিমান আর রাগে বলে,”আসলা কেন?থাকতা!দেশের বাড়ি গেছো। তো ঘাঁটি গাড়তা ওখানেই”
রাহেলা শানের অবস্থা বুঝতে পেরে বলে, “তোমাদের ছাড়া মন টেকে না বাপ।তাই….”
“হইছে আর বলতে হবে না”,রাহেলাকে থামিয়ে দিয়ে বলে শান।মুখভরা হাসি উপহার দেয় রাহেলা।
শান ফ্রিজ থেকে পানির বোতলটা বের করে একটু পানি খেয়ে বোতল রাখতে রাখতে বলে,”আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। রাখলে তোমাদেরই ভালো”
রাহেলা প্রশ্নাতুর চোখে চেয়ে বলে,”কি সিদ্ধান্ত বাবা”
ঘেমে একাকার হওয়া টি-শার্টের বুকের কোণা ধরে ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে শান জবাব দেয়,”তোমরা আজ থেকে এ বাড়িতেই থাকছো।এবং সেটা পার্মানেন্ট”
“কিন্তু…..”
“উুহু কোন কিন্তু নয় চাচি।ইতোপূর্বে অনেকবার বলেছি শোন নাই।এইবার শুনতে হবে।আর তাছাড়া পাখি ইনায়াহ’কে নিয়ে একা একা থাকতে একটু ভয় পায়”,চিন্তিত চিত্তে বলে শান।
রাহেলা বুঝতে পারে এদের মাঝে ভাব হয়েছে।খুশি খুশি বলে,”ঠিকাছে আমরা আজই এখানে চলে আসব ”
এরপর সকালের রান্নাটা করে দিয়ে যায় রাহেলা।সকালের খাবার টা খেয়ে পাখি ইনায়াহ’কে নিয়ে স্কুলে চলে যায়।তার কিছুক্ষন পরপর শানও বেরিয়ে যায় হসপিটালের উদ্দেশ্যে।খত হওয়া পায়ের দিকে একবার চেয়ে মুচকি হাসে শান।এরপর পা নাড়িয়ে বুঝতে পারে ব্যথাটা অনেকটাই কম।
স্কুলে ঢুকতে না ঢুকতেই রাখি হাত টেনে নিয়ে যায়।
এরপর চেপে ধরে সমস্ত ঘটনা রিপিট করার জন্যে।পাখি ধীরে ধীরে পূ্ঙ্খানুপূঙ্খ সব কথা রাখিকে জানায় শুধুমাত্র কাল মাথা টিপে দেয়ার কথাটা ছাড়া।
“ওয়াও সো রোম্যান্টিক রে।এক্সাইটিংও বটে।ঐ বদরাগি ডাক্তার যে এমন হবে তা তো কল্পনাও করি নি”,অবাক বিষ্ময়ে বিজ্ঞের মতো করে বলে রাখি।
“হুমম, কবে জানি আবার বদরাগি হয়।হিটলার কোথাকার।এবার একটা অপমানও সহ্য করব না।খুন করে ফেলব একদম”,রাগি রাগি ভাব নিয়ে বলে পাখি।
🌸🌸
অন্যান্য দিনের চেয়ে আজ বেশ রাত করে বাড়ি ফেরে শান।রাত তখন এগারটা বাজে।কারণ বিকেল বেলা ফোন করে জানতে পেরেছে রাহেলারা সমস্ত ব্যাগপত্র সমেত এ বাড়িতে শিফ্ট হয়েছে।তাই কিছু কাজ এগিয়ে রেখে বাড়ি ফিরতে দেরি হয়ে যায় শানের।ড্রয়িং রুমে পা রাখতেই বুঝতে পারে পাখি সোফার একমাথায় মাথা এলিয়ে, আরেক মাথায় পা এলিয়ে শটান হয়ে শুয়ে টিভি দেখছে।দরজা খোলার শব্দে বেশ এলোমেলো গা খানি ঢেকে নেয় পাখি।এরপর সোফায় বসে পরে।শান সেদিকে একবার তাকিয়েই নজর সরিয়ে নেয়।
দরজাটা লাগিয়ে দিতে দিতে বলে,”ঘুমাও নি কেন?”
পাখি কোন প্রতিউত্তর করে না।কারণ সে নিজেও জানে না সে কেন জেগে আছে!
শান আবার কিছু বলতে যাবে তার আগে ফোনে কারো কল চলে আসে।পকেট হাতরিয়ে ফোন বের করে ভ্রুকুচকে স্ক্রিনের দিকে তাকায় শান।
“এই রাত্রেবেলা আননোন নম্বর থেকে ফোন!”,ভাবতে ভাবতে কলটা রিসিভ করে কানে ধরে চুপ করে কন্ঠ বোঝার চেষ্টা করে। এটা নাকি কিছু কিছু লোকের নিঞ্জা টেকনিক।
ওপর পাশ থেকে ইজি চেয়ারের শব্দ ছাড়া কিচ্ছু বোঝা যাচ্ছে না।মূহূর্তে শানের চোখেমুখে গাম্ভীর্যতা চলে আসে।গমগমে স্বরে বলে,”কে ?”
“ইনায়াহ্’কে ও বাড়ি নিয়ে গেলে একটি বার জানানোর প্রয়োজনও মনে করলে না?”,
কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে চোখেমুখে কাঠিন্যতা দৃঢ় করে শান জবাব দেয়,”যেহেতু জানাইনি তারমানে প্রয়োজন মনে করে নি।আর কিছু?”
ভাঙ্গা ভাঙ্গা কন্ঠে ওপাশ থেকে জবাব আসে,”তুমি কি এ জীবনে আমায় এক্সেপ্ট করবে না? মানতে পারবে না? ”
“হয়ত তৃতীয় বারের মতো ভুল করতে চাই না।আপনার মতো মহিলাকে মেনে নেয়ার মতো ভুল তো নয়ই।এক্সেপ্ট করা তো দূরের কথা”,পাখির দিকে তাকিয়ে বলে শান।
এতোক্ষন চুপচাপ পাখি সবটা শুনে যাচ্ছিলো।এখন শানের তাকানোতে কেমন যেন লাগছে।
“কি ভাববেন উনি, আমি আড়িপেতে কথা শুনছি।ছিহ, কেন যে থাকতে গেলাম”,ভাবতে ভাবতে পাখি শানের দিকে তাকায়।
“আপনার আর কিছু বলার আছে?”
“ফোন কাটবে না অনুরোধ রইল।আজ বহুদিন পর এভাবে কথা বললে আমার সাথে।এটা যে কতো বড় পাওয়া একজন মায়ের কাছে তা তুমি বুঝবে না”
“ওহহ শাট আপ!আমি বুঝতে চাইও না।আর কি যেন বললেন? মা! তাই না!তা কোন এঙ্গেল থেকে নিজেকে মা দাবি করেন?আচ্ছা ওয়েট ওয়েট, আমার এতো মূল্যবান সময়গুলো কেন নষ্ট করছি আমি আপনার মতো মহিলার পিছনে!রাখছি,আর নেক্সট টাইম যেন কোন রকম ফোন না আসে।”,কলটা কাটতে উদ্যত হতেই ওপর পাশের আকুতি বেড়ে যায়।
“প্লিজ বাপ আমার, এভাবে কলটা কেটো না। আমার বুকটা হাহাকার করছে তোর জন্যে।আর কতো শাস্তি দিবি আমায়?আমি যে আর পারছি না রে”,বলতে বলতে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।
শান চোখ বন্ধ করে কিছু সময়ের জন্যে। এরপর যখন চোখ খোলে তখন টসটসে লাল দুটো চোখ দেখে আতকে ওঠে পাখি।ছেলে মানুষ যখন কান্না সংবরনের বৃথা চেষ্ট করে তখন তাদের চোখ লাল হয়ে ভয়ানক আকাড় ধারন করে।
“একটি বার মা বলে ডাক না রে বাবা”
“অসম্ভব।আর কিছু বলবেন?”
“আজ এতোগুলো বছর পর তুই আমার কলটা রিসিভ করেছিস, কথা বলেছিস।এমনি সময় তো অন্য কাউকে দিয়ে রিসিভ করাস।জানি না কি কারণে তোর এতোটা উন্নতি হয়েছে!তবে দোয়া করি সে কারণে যেন আমি আমার আগের শানকে ফিরে পাই।যে মা বলতে অজ্ঞান ছিলো”,বলতে বলতেই কলটা কেটে দেয় ওপাশ থেকে।
শান ফোনটা পকেটে ভরে পাখির দিকে একজর তাকায়। এরপর কপাল স্লাইড করতে করতে বলে,”যাও ঘুমাও”
শানের অবস্থা দেখে পাখি আর তেমন কিছু বলতে পারে না।তবে এটা স্পষ্ট বুঝেছে শানের মাঝে চাপা কিছু কষ্ট আছে যেগুলো তার মনের মাঝেই তালাবদ্ধ রয়েছে।
“ডায়নিং এ খাবার রাখা আছে।”,শান্তস্বরে বলে পাখি সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে যায়।
শান সোফায় বসে বাম হাতে দুই ভ্রুর মাঝের অংশটা চিপে ধরে নিজের অতীতটাকে একটু রিমাইন্ড করার চেষ্টা করে।সাথে একটু আগে আসা ফোন কলের মানুষটার কথাও চিন্তা করে।
“জীবনে দুইজন নারীকে নিঃস্বার্থ ভাবে ভালোবেসেছি।দুজনেই ঠকিয়েছে আমায়।বিশ্বাস হয় না আর এ জাতটার প্রতি।পাখিকে চেনার পর নারীর সঙ্গাটা একটু আলাদাই মনে হয়।কেন জানি না একটা অন্যরকম টান কাজ করে।ওকে ছাড়া থাকতে পারি না,কোনকাজ ঠিকমতো করতে পারি না।তাহলে কি আমি সত্যিই ভালোবেসে ফেলেছি ওকে?”
ফোঁস করে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আবার বলে,”পাখিও যদি আমায় ছেড়ে যায়! কি নিয়ে বাঁচব আমি?একা একা কেমন করে কাটাব সময়?তার থেকে কি এটাই বেটার না ওর লাইফটা ওর মতো সেট করে দেয়া?দূর থেকে ভালোবাসব।তাহলে ছেড়ে যাওয়ার ভয় থাকবে না।আর না থাকবে একাকিত্বের ভয়।আর তাছাড়া আমার কাছে থাকলে পাখিকে অনেক বেশি বদনাম কুড়াতে হবে”
বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে আনমনে বলে,”সেটাই করব।তার আগে কয়েকটা কাজ বাকি আছে।ওকে অপমান করে কষ্ট দিয়ে দূরে সরাতে পারব না।আমি ওকে আর কষ্ট দিতে চাই না।ও সেটা ডিজার্ভ করে না।ও সম্মান ডিজার্ভ করে।”
এরপর শান উঠে চলে যায় নিজের ঘরের দিকে।
🌸🌸
রাতের এক তৃতীয়াংশ পার হয়ে যায় তবু শানের চোখে ঘুম নেই।রাতে আসা কলটা সবকিছু এলোমেলো করে দেয় শানের।বড্ডো একা লাগে নিজেকে।বেলকোনি থেকে বিছানা, আবার বিছানা থেকে বেলকোনি পায়চারি করেও কিছুতেই ঘুম আনতে পারল না চোখে।এরপর দরজা খুলে বাহিরে বের হতেই দরজার পাশে রাখা ইনডোর প্ল্যান্টের চারাটা টব সমেত নিচে পরে যায়।হকচকিয়ে সেদিকে চেয়ে হাঁটু গেড়ে বসে শান।একে একে টুকরো সহ মাটির দলা গুলো কুড়িয়ে নেয়।
এদিকে টব ভাঙ্গার শব্দে ঘুম ভেঙ্গে যায় পাখির।শব্দের স্থান খুঁজতেই ইনায়াহ’কে শুয়ে রেখে ধীরপায়ে বাহিরে বেরিয়ে আসে পাখি।এসেই শানকে দেখতে পায় ময়লা গুলো ঝুড়িতে তুলতে।
শান মাথা তুলে পাখির দিকে একবার তাকিয়ে মেকি হেসে বেলে,”বাহিরে বের হতে হাত লেগে পরে গেলো।সরি তোমার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটলো।”
ঝুড়িতে সব ময়লা তুলে হাত ঝেড়ে বলে,”যাও ঘুমাও তুমি।”
পাখি বেশ বুঝতে পারল শান কিছু একটা লুকাচ্ছে।সন্দিহান চোখে তাকিয়ে থাকে শানেরর দিকে।একটা ব্যপার ক্লিয়ার শান চোখ নামিয়ে কথা বলছে।পাখি তখনও সেদিকে চেয়ে আছে।বেসিনে হাত ধুতে ধুতে শান বলে,”জেগে থেকো না। শরীর খারাপ করবে।ঘুমাও”
পাখি এগিয়ে গিয়ে বলে,”ঘুমান নি কেন?”
পাখির এমন প্রশ্নে শান বেশ অপ্রস্তুত হয়ে যায়।নজর এদিক সেদিক করে পাখিকে মিছে রাগ দেখিয়ে বলে,”ঘুমাতে বলছি না!ঘুমাও।যাও”
“দেখি এদিকে ঘুরুন তো”,শানের বাম বাহু ধরে ঘুরিয়ে নেয় পাখি।
শান চোখ তুলে তাকাতেই পাখি থমকে যায়।
অবাক হয়ে আপনাআপনি হাতটা মুখে চলে যায়।
“আপনার চোখে কি হয়েছে?কেঁদেছেন কেন রাত জেগে?”,হন্তদন্ত হয়ে বলে পাখি।শানের চোখ মুখ ফুলে ফেপে উঠেছে অনেক টা।তা দেখে পাখির ভিতরে অজানা কষ্টের ঝড় বয়ে যায় মূহূর্তেই।
“বলুন কেন কেঁদেছেন?”,শানের গা ঝাঁকিয়ে বলে পাখি।
শান নিরুত্তর হয়ে অসহায় চাহনীতে চেয়ে থাকে পাখির দিকে।খুব করে পাখিকে জড়িয়ে ধরে নিজেকে হালকা করার প্রবল মন চাইছে শানের।কিন্তু সেটা উচিত নয়;সমীচীন নয়।
তাই কপোট রাগ দেখিয়ে বলে,”ওসব কিছু না।কাঁদতে যাব কোন দূঃখে!আমি ফয়সাল আহমেদ শান। সহজে ভেঙ্গে পরি না বা তোমার মতো চোখের জল ফেলি না”
পাখি মুখে বিরক্তির ভাব এনে বলে,”অভিনয়টা একদমই কাঁচা।তবুও বলি যদি অভিনয়টা শেষ হয়ে থাকে তবে আমায় জানিয়ে বাঁধিত করবেন কি, আপনার কি হয়েছে?”
“আরে বললাম তো কিছু হয় নি”
“ওকে”,বলেই রাগ দেখিয়ে পাখি চলে যেতেই না চাইতেও পাখির হাতটা টেনে ধরে শান।
পাখির পা থেমে যায় মূহূর্তেই।পিছন ফিরে একবার হাতের দিকে, আরেকবার শানের দিকে তাকায়।কেমন কেমন যেন অজানা অনুভূতি লাগে মনের মাঝে।দুজনের মাঝে কোন কথা আর অবশিষ্ট থাকে না।খানিক পরে পাখি হাতটা মুচরাতেই শান হাত ছেড়ে দেয় চট করে।এপর নিজের ঘরে ঢুকে দ্রুত দরজা লাগিয়ে দেয়।
“আরে, বললেন না যে…..”
পাখি নিজের কথাকে সম্পূর্ণ করতে ব্যর্থ হয়ে ঠোঁট উল্টিয়ে নিজের ঘরে চলে আসে।
#আসক্তি২
পর্বঃ১৯
লেখায়ঃআফিয়া আজাদ নিঝুম
সারা বাড়িতে বিরিয়ানির কড়া সুগন্ধ ছড়িয়ে পরে মূহূর্তেই।শানের নাক এড়ায় না সে সুগন্ধ।ঘুমে ঢুলু ঢুলু চোখ দুটো পিটপিট করে খুলতেই বিরিয়ানির গন্ধে ঘুম উবে যায় মূহুর্তেই।ঠাওর করতে পারে না এতো সকাল সকাল এ বাড়িতে বিরিয়ানির আয়োজন কে করছে!দ্রুত উঠে স্লিপার জোড়া পরে নেয়।ঘর থেকে বের হতেই মাতাল করা সে সুগন্ধ শানকে কাছে টানছে মাত্রাতিরিক্তভাবে।এর একটাই কারণ, শান বিরিয়ানি পাগল।
নিচে নামতে নামতে ড্রয়িং রুমে রাহেলা বেগম সহ ইনায়াহ্’কে খেলতে দেখে শান।
“পাখি কেথায়?”,ওদের মাঝে পাখিকে না পেয়ে আনমনে বলে ওঠে।তখনি রান্নাঘর থেকে হাতা খুন্তির শব্দে শান ধীরপায়ে এগিয়ে যায়।ইনায়াহ্ শানকে দেখে বলে,”আজ ফ্রাই ডে পাইছো না?তাই এতো বেলা করে উঠলে।”
মুচকি হেসে ইনায়াহ্’কে কাছে ডাকে শান।দৌঁড়ে আসে ইনায়াহ্।
“বলো তো আজ কি রান্না হচ্ছে?গেজ গেজ”,
শান বুঝতে পেরেছে কি রান্না হচ্ছে তবুও ভাবুকের মতো মিছেমিছি বলে,”কি হচ্ছে মাম?উমম আমি তো গেজ করতে পারছি না”
“হিহিহি,,,,,আজ তোমার ফেভারিট বিরিয়ানি রান্না হচ্ছে।আর কে রাঁধছে বলো তো?”
শান এবার বেশ অবাক হয়ে প্রশ্ন করে,”কে? ”
“মুন সাইন”
পাখির কথা বুঝতেই অজানা ভালো লাগায় ছেঁয়ে যায় শানের চোখমুখ। প্রশান্তিতে ভরে ওঠে বুকের ভেতর।এদিকে শান আর ইনায়াহ্’র কান্ড দেখে মিটমিট করে হাসছে রাহেলা বেগম।আগ বাড়িয়ে বলেন,”ও নাকি আজ নিজে হাতে বিরিয়ানি রেঁধে আমাদের সবাইকে খাওয়াবে।তাই রান্না ঘরের ত্রিসীমানাতেও আমায় ঢুকতে দেয় নি শান বাবা।একা একা সব করেছে।”
শান মুচকি হেসে ওঠে।প্রিয় মানুষের করা যেকোন কাজ নাকি প্রিয় একটা অনুভূতি জাগায়।সেখানে যদি হয় নিজের পছন্দের খাবার তাহলে তো কথাই নেই।ইনায়াহ্’কে কোলে নিয়েই রান্নাঘরে ঢোকে শান।
“উহুহম উহুহম”,দুইবার গলা খাঁকারি দিতে পাখি পিছু ফিরে একবার তাকাতেই সমস্ত মনোযোগ যেন নষ্ট হয়ে যায়।রান্না থেকে মনের সংযোগ টা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় মূহূর্তেই।এলোমেলো নজরে সেদিকে আরেকবার চেয়ে কাজে পূনরায় মনোনিবেশ করে পাখি।
“কি রান্না হচ্ছে?”,মাথাটা এগিয়ে চুলার উপর রাখা পাতিলের উপর তাক করে বলে শান।পাখি পাশে সরে যায় তৎক্ষণাৎ।
ইনায়াহ্ বিরক্ত হয়ে বলে,”উফ,সান সাইন। এখনি তো বললাম বিরিয়ানি হচ্ছে।তাও জিজ্ঞেসা করছো কেন?”
চোর ধরা পরার মতো অবস্থা হয় শানের।কারণ সে চাইছে পাখি নিজেই তাকে বলুক।
পাখির ঘর্মাক্ত মুখোবয়বের দিকে তাকাতেই শানের কেমন যেন লাগলো।বাহিরে থেকে টাওয়াল ভিজিয়ে এনে বলে,”এটা ইউজ করো।”
পাখি সেদিকে চেয়ে মুচকি হেসে মাথা নিচু করে।ক্ষীনস্বরে বলে,”লাগবে না ”
“নিতে বলছি নাও”,শান একরোখা জবাব দেয়।
পাখি কিছু না বলে টাওয়াল টা হাত বাড়িয়ে নেয়।শান তখনো ঠাঁয় দাঁড়িয়ে পাখিকে দেখে চলছে।কেমন যেন বিব্রতকর পরিস্থিতি লাগছে পাখির কাছে।শান ওর অবস্থা বুঝতে পেরে বাঁকা হেসে বাহিরে চলে যায়।
🌸🌸
“ওয়াও, মুন সাইন এটা সত্যিই খুব টেষ্টি”,খেতে খেতে বলছিলো ইনায়াহ্।আব্দুল্লাহ্ মুচকি হাসি ঠোঁটে এলিয়ে বলে,”সত্যিই মা তোমার রান্নার হাত অনেক সুন্দর”
পাখি সবার প্রশংসা শুনে শুকনো হেসে শানের দিকে তাকায়।কারন তার এই মানুষটার প্রশংসা শোনার জন্যে কান যেন অধীর আগ্রহে বসে আছে।কিন্তু শান কোন কথা ছাড়াই প্রথম থেকেই খেয়েই চলেছে।পাখি পরপর কয়েকটা ঢোক গিলে কিছু বলতে যাবে তার আগে রাহেলা বেগম বলে ওঠেন,”কি ব্যপার শান বাবা তুমি যে কিছু বলছো না?”
এতোক্ষনে মাথা তুলে তাকায় শান।মাংসের টুকরাটা মুখে পুরে দিতে দিতে বলে, “কি বলব? ”
“আরে ভালো হয়েছে সেটা জানি।তোমার কাছে কেমন লেগেছে সেটা বলো”
পাখির দিকে তাকিয়ে শান চোখমুখে গাম্ভীরযতা বজায় রেখে বলে,”হুমম ভালো”
থমথমে হয়ে যায় পাখির মুখ।ঘনকালো অন্ধকারে বিষিয়ে ওঠে মনটা।আনমনে ভাবতে থাকে, “শুধু ভালো”
শান সেদিকে একবার তাকাতেই পাখির চোখে চোখ পড়ে যায়।দ্রুত চোখ সরিয়ে নেয়।
সবার খাওয়া শেষ হলে বাকি খাবার গুলো রান্নাঘরে নিয়ে যায় পাখি।শান ছোট ছোট চোখে ওর দিকে তাকায়।এরপর চারপাশে তাকিয়ে কাউকে কোথাও না পেয়ে সন্তর্পণে রান্নাঘরের দিকে এগিয়ে যায়।কয়েক ইঞ্চি দূরে পাখির পিছনে দাঁড়ায় শান।পিছনে হঠাৎ কারো উপস্থিতি টের পেয়ে চমকে ঘুরে তাকাতেই শানের সাথে ধাক্কা লাগে পাখির।হকচকিয়ে দুপা পিছাতেই কিচেন ডেস্কের সাথে পা থেমে যায়।শানের দিকে একনজর তাকাতেই ঐ চোখে অন্যরকম ঘোর বুঝতে পারে পাখি।দ্রুত চোখ সরিয়ে বলে,”কি?”
শান ওভাবে দাঁড়িয়ে থেকেই জবাব দেয়,”কি?”
পাখি আরেকবার ভ্রুকুচকে তাকাতেই মুচকি হেসে ওঠে শান।একদৃষ্টে পাখি চেয়ে থাকে সেদিকে।ভুবন ভোলানো সে হাসি,জ্বালাময়ী সে হাসি।খুব ইচ্ছে হয় সামনে হাস্যরত মানুষটার হাসিটাকে একবার ছুঁয়ে দিতে।
অজানা ভালো লাগায় নিজের অজান্তে শানের বাম গালে হাত রাখে পাখি।শান গালের উপর রাখা পাখির হাতটার দিকে একবার চেয়ে ছোট ছোট চোখে পাখির দিকে তাকায়।আবেগ গুলো অন্যরকম পরিস্থিতির জানান দেয়।শান দ্রুত দুই পা পিছিয়ে যায়।শানের নড়ে যাওয়াতে দ্বিতীয় দফা হকচকিয়ে ওঠে পাখি।নিজের হাতের অবস্থান দেখে বেশ লজ্জায় পরে যায় সে।হাত সরিয়ে পিছন ঘুরে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকে।লজ্জায় মরি মরি অবস্থা হয় পাখির।ঠোঁটের ঢগায় বিড়বিড় করে,”কেন নিজেকে নিজেতে রাখতে পারি না।কেন এনার সামনে এতো দূর্বল হয়ে পরি!”
“বিরিয়ানি অনেননেক বেশিই টেষ্টি হয়েছিলো”,পাখির ভাবনার মাঝে কথাটা বলে শান রান্নাঘর থেকে বেড়িয়ে যায়।
🌸🌸
বিকেলে বাড়ির সবাই ড্রয়িং রুমে বসে ইনায়াহ্’র সাথে খেলছে।শান উপরে নিজের ঘরে বসে ল্যাপটপে কাজ করছে।এমন সময় দুজন লোক বাড়িতে ঢুকে যায়।আব্দুল্লাহ্ সহাস্যমুখে এগিয়ে এসে বলে,”এতো দেরি করলে কেন তোমরা?শানবাবা জানতে পারলে রেগে যাবে”
নত মস্তকে লোকদুজন জবাব দেয়,”আসলে স্যার আরো দুইটা ইভেন্ট ছিলো আজ তাই….. ”
“হয়েছে আর বাহানার দরকার নাই”,কথার মাঝে শান বলতে বলতে সিঁড়ি দিয়ে নামে।পাখি সেদিকে একবার তাকিয়ে পূনরায় লোক দজনের দিকে তাকায়।কারণ সে বুঝতে পারছে না এনারা কে!
“দেরি করো না। আমি আর কোন দেরি মানতে পারব না।কাল অনেক কাজ আমি চাই না কালকে অবধি তোমাদের কাজ চলমান থাকুক”,শানের বলা কড়া কথাটায় লোকদুজন মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিয়ে বলে,”ওকে স্যার”
পাখি জিজ্ঞাসিত দৃষ্টিতে সবার দিকে তাকায়।রাহেলা বেগমের দিকে চেয়ে ভ্রু নাচিয়ে বলে,”কি ব্যপার চাচি?”
“আমিও তো বুঝতে পারছি না”
শান ওদের দুজনের কথার ফিসফিসানি শুনে সেদিকে তাকায়।পাখি মুখ বন্ধ করে, চোখ নামিয়ে নেয়।
শান ইনায়াহ্’র দিকে এগিয়ে কোলে তুলে নেয়।দুই গালে চুমু এঁকে পাখির দিকে তাকিয়ে বলে,”আগামি পরশু মানে চব্বিশ মে আমার মামের জন্মদিন”
শানের কথা শেষ হতেই ইনায়াহ্ অবাক হয়ে যায়।খুশিতে ঝলমল করে ওঠে পাখির চোখ।
“সান সাইন আমার তো মনেই ছিলো না”,অবাক বিষ্ময়ে বলে ইনায়াহ্।
“তোমার সান সাইন কি করে ভুলে যায় বলতো!”
রাহেলা বেগমকে উদ্দেশ্য করে বলে, “চাচি উনারা ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট অফিস থেকে এসেছে।বাড়িটা পুরো সাজাবে।আমার পূর্বপরিচিত।একটু দেখে নিও ”
পাখির দিকে তাকিয়ে বলে,”তোমার ফ্রেন্ড রাখি সহ ইনায়াহ্’র প্রিন্সিপাল ম্যামকেও ইনভাইট করো।যদিও আমি করব, তবুও তুমি একটু জানাইও”
ঠোঁট প্রশস্ত করে হেসে পাখি মাথা দুলিয়ে সম্মতি জানায়।
শান স্বগতোক্তি করে বলে,”গেস্ট বলতে ইনায়াহ্’র ফ্রেন্ডস,তাদের ফ্যামিলি,আমার কয়েকজন কলিগ”
🌸🌸
কেটে যায় মাঝখানের একটি দিন।সকাল সকাল ইনায়াহ্’কে গোসল করিয়ে রেডি করিয়ে দেয় পাখি।সুন্দর টকটক লাল রঙ্গের সিন্ড্রেলা ড্রেসে ইনায়াহ্’কে দেখতে একদম পরীর মতোই লাগছে।আয়নায় নিজেকে ঘুরে ফিরে দেখছে ইনায়াহ্।ওর কান্ড দেখে পাখি না হেসে থাকতে পারে না।কোলে উঠিয়ে নিয়ে দু গালে আদোর করে বলে,”পাঁচ বছরে পা রাখলো আমাদের প্রিন্সেস”
ইনায়াহ্ হেসে পাখির গলা জড়িয়ে ধরে।হাত ধরে টেনে এনে বিছানায় বসায়।
“এদিকে আসো তো মুন সাইন”
পাখি ভ্রুকুচকে সেদিকে চলে যায়।
“আজ আমার পাঁচতম জন্মদিন।আমি তো জানি সান সাইন আমায় অনেক অনেক গিফ্ট দেবে।”
এরপর ভাবুক ভঙ্গিতে আবার বলে,”উমম,জানি আমার ফ্রেন্ডসরাও অনেক গিফ্ট করবে।”
পাখি মুচকি হেসে বলে,”হুমমম করবেই তো।”
“হ্যা, তো তুমি আমায় কি দিবা হুমম হুমম?”,ভ্রু নাচিয়ে বলে ইনায়াহ্।
পাখি কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলে ভাবে,”সত্যিই তো, কি দিবো আমি?স্কুলের বেতন তো পাই নি এখনো।আর আমি টাকা কোথায় পাবো?”
“ওহহ মুন সাইন বলো না প্লিজ”
ইনায়াহ্’র ডাকে চমকে ফিরে পাখি বলে,”কি চায় আমার মা টা?”
“যা চাইব দেবে তো?”
“হুমম দিবো তো। বলো না”,ইনায়াহ্’কে আশ্বস্ত করে পাখি।
“আমায় কোনদিন ছেড়ে যাবে না, কথা দাও”,ছলছলে চোখে ইনায়াহ্ নিজের ডান হাতটা বাড়িয়ে দেয় কথা নেয়ার আশায়।
এই ছোট্ট মানুষটার মুখ থেকে এমন আবদার বের হবে পাখি ভাবতেও পারে নি।বুকের ভেতর অজানা মায়ার ঝড় উঠে যায়।ডান হাতে ইনায়াহ’কে দ্রুত কাছে টেনে নিয়ে বুকের সাথে জড়িয়ে নেয়।
“আমি তোমায় কক্ষনো ছেড়ে যাব না মা।আজকের পর তো নয়’ই”,বলেই ইনায়াহ্’র মাথায় চুমু খায়।
সময় গড়াবার সাথে সাথে সকল গেস্টরা চলে আসে।শান রেডি হয়ে নিচে নামে সবার সাথে কুশল বিনিময় করে।চারিদিকে চেয়ে সবাইকেই পায় ;পাখিকে ছাড়া।ইনায়াহ্ ওর বন্ধুদের সাথে খেলছে।
আশপাশে আরেকবার চোখ বুলাতে নাবিদ বলে ওঠে,”কি ভাই কাকে খুঁজছো বলোতো?সবাই তো এসছি?”
শান ওর দিকে না তাকিয়েই বলে,”আরে না তেমন কেউ না।”
নাবিদ সন্দিহান চোখে চেয়ে বলে, “আচ্ছা তোর পাখি কোথায়?”
“হ্যা ওরেই তো খুঁজ……”,বাকি কথা না বলতেই শানের হুশ ফেরে।বুঝতে পারে কি বলতে চলছিলো সে।নাবিদ শব্দ করে হেসে বলে,”ভালোবাসা কখনো লুকিয়ে রাখার জিনিস না।বেড়িয়ে আসবেই”
“আরে ওরকম কিছু না”,কথা শেষ করে উপরে তাকাতেই পাখির দিকে চোখ পড়ে শানের।
হালকা নেভি ব্লু রঙ্গের জামা পরেছে সে।লম্বা, কালো, মসৃন চুল গুলোর অর্ধেকটা কাঁধের উপরে ঝোলানো বাকিটা পিঠের উপর ছড়ানো।শানের যেন নজর সরানো দায় হয়ে পরল।অপলকে চেয়ে আছে সেদিকে।নাবিদ সেদিকে একবার চেয়ে শানের দিকে তাকায়।আশেপাশের সবারই ব্যপারটা নজরে আসে।
পাখি নিচে সবাইকে দেখে কেমন চুপসে যায়। কারণ এখানকার কেউই তার পরিচিত না। শুধুমাত্র পাশে থাকা রাখি ছাড়া।সে কিছুতেই আসতে চায়নি নিচে,রাখি একপ্রকার জোড় করেই এসেছে।সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতেই আশেপাশে ফিসফিসানি শুরু হয়ে যায়।
“হ্যা এই মেয়েটাই মেবি”
“হুম ডক্টর শানের নতুন জিএফ”
“এভাবে না থেকে, বিয়েটা সেড়ে নিলেই তো হয়”
“আরে বড়লোকদের ব্যপার সেপার।বুঝো না”
একেজন মানুষের একেকটা মন্তব্যে জর্জরিত শান-পাখির নামবিহীন এই সম্পর্ক।
পাখি বেশ বুঝতে পারছে তাকে নিয়েই কথা হচ্ছে সবার মাঝে।
শানের ঘাড়ে ডান হাতটা রেখে নাবিদ বলে,”আরে ভাই পরে দেখ।আমাদেরও একটু সময় দে”
বলেই হো হো শব্দে হেসে দেয় শানের পাশে থাকা সব ছেলে বন্ধুরা।শান ভীষণ বিব্রতবোধ করে বলে,”যেরকম ভাবছো সেরকম টা নয়”
“হুম বুঝতে পেরেছি।তবে ভাই এগিয়ে যাওয়া উচিত”,পাশ থেকে একজন ছেলে বলে ওঠে।শান পূনরায় পাখির দিকে তাকাতে রাগে চোখমুখ শক্ত হয়ে আসে।যে রাগ পাখির নজর এড়ায় না।বাড়িভরা মানুষের সমাগমের মাঝে শান বার বার আড়চোখে পাখির দিকে তাকাচ্ছে। পাখির সাথে চোখাচোখি হতেই দ্রুত নজর সরিয়ে নিচ্ছে।কেমন যেন অদ্ভুত অনুভূতির উদয় হচ্ছে।
“তোর ডাক্তার সাহেব তো তোকে চোখে হারাচ্ছে পাখি”,খেতে খেতে বলে রাখি।লজ্জায় কুঁকড়ে যায় পাখি।কপোট রাগ দেখিয়ে বলে, “সেসব কিছু না”
এরপর শানের দিকে তাকাতেই বেশ অবাক হয় পাখি।ও চোখে এক রাশ রাগের বলিরেখা ছাড়া কিচ্ছু বুঝতে পারছে না পাখি।নিজেকে প্রশ্ন করে,”আবার কি করলাম?এতো রেগে তাকাচ্ছে কেন?”
মানুষের সমাগম একটু কমে গেলে শান পাখির কাছকাছি চলে আসে।দাঁতে দাঁত পিষে বলে, “ভিতরে যাও”
পাখি অবাক হয়ে যায়। হঠাৎ কি এমন হলো যে তাকে ভিতরে যেতে হবে।বুঝতে না পেরে নিষ্প্রভ দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে পাখি।শান আবার বলে,”ভিতরে যাও”
পাখি এবার রিনরিন স্বরে প্রশ্ন করে,”কেন?”
“যেতে বলছি, যাও”
পাখি ছোট ছোট চোখ করে তাকাতােই শান চাপা ধমক দিয়ে কাঁধের দিকে ইশারা করে বলে,”লাল স্লিভ টা আমায় ছাড়া এখানে উপস্থিত সবারই নজর কাড়ছে।কাইন্ডলি যদি ভিতরে গিয়ে দেখে আসতেন”
পাখি অবুজের মতো কাঁধে হাত দিতেই বুঝতে পারে অনাকাঙ্ক্ষিত জিনিসটার অস্তিত্ব। আশেপাশে তাকিয়ে দেখে সত্যিই সকলের নজর তার উপর নিবদ্ধ।লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে হচ্ছে পাখির।শানের সামনে থেকে সরতে পারলে যেন বেঁচে যায় সে।দ্রুত পায়ে উপরে নিজের ঘরে চলে যায়।এরপর পুরো সময়টা দরজা বন্ধই রাখে।
🌸🌸
“কি হয়েছে চাচি?”,রাহেলা বেগমের অবস্থা দেখে প্রশ্ন করে শান।বিমর্ষ চিত্তে রাহেলা জবাব দেয়,”আশপাশে কান টেকানো যাচ্ছে না বাবা।ইনায়াহ্’র জন্মদিনের পর থেকে তো আরো বেশি সমালোচনা চলছে”
শান স্মিত হেসে বলে,”কোন ব্যপারে? ”
“তোমার আর পাখি……”,কথা বলতে বলতেই শানের দিকে তাকাতে বাকি কথাটা হারিয়ে যায় রাহেলার।রাগে চোয়াল শক্ত করে বলে,”চাচি আই ডোন্ট কেয়ার”
ফোনে হঠাৎ কারো কল আসায় শান রিসিভ করে কানে ধরে।
“হ্যা বল”
“আসবি না নাকি প্রাণ পাখি আসতে দিচ্ছে না?আরে ভাই প্রফেশনে মন দাও বুঝলে”,নাফিসের তেড়ছাভাবে বলা কথাটা বড্ডো গায়ে লাগে শানের।শানের বুঝতে অসুবিধা হয় না জল অনেকটা বেশিই ঘোলা হয়ে গেছে।রাগে কোন কথা না বলে ফোন কেটে দেয়।এরপর চলে যায় হাসপাতালে।
কাজের ফাঁকে সচরাচর কারো ফোন এলাউ করে না শান।তবুও একটা নম্বর থেকে বার বার কল আসায় বাধ্য হয়ে রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে বলে ওঠে, “তোমার সাথে কিছু কথা আছে?”
শান রেগে গিয়ে ফোনটা কাটতেই আবার বলে,” কাটিও না।কথা শেষ হবে তারপর কাটবে।শান চুপচাপ শুধু শুনে যায়।
“আমি আমার ছেলের কাছে পৃথিবীর সবথেকে খারাপ মা হতে পারি, আমার ছেলে আমার কাছে খারাপ নয়।চারপাশে অনেক কথা শুনা যাচ্ছে।যদি সত্যিই বাড়ির ঐ মেয়েটার সাথে তেমন কম্পর্ক থাকে তবে বিয়ে করে নাও।আমার বিশ্বাস, আমার ছেলে পশ্চিমা বিশ্বের মতো নিজেকে বাঁধবে না”
শান রাগে ফোনটা মেঝেতে আছাড় মারে।মূহূর্তেই ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে যায় সবটা।ব্যপারটা এতো সিরিয়াস ছিলো না ইনায়াহ্’র বার্থডের আগ পর্যন্ত।কাজ শেষে বিক্ষিপ্ত মন নিয়ে বাড়ি ফেরে শান।
🌸🌸
“তাহলে তুমিই সেই মেয়ে তাই না? “,বলেই ভদ্রমহিলা পাখির দিকে কটাক্ষের চোখে তাকায়।পাশের মহিলারা বলাবলি করে, “এতো সুন্দর সে আবার এসব করে বেড়ায় ছিহ।কি যুগ আইলো রে বিয়ে ছাড়াই কি সব চলছে!”
রাহেলা এগিয়ে এসে বলে,”আপনারা এসব কি বলেন?আমি তো থাকি এ বাড়িতে একটা দিনও তো কিছু দেখলাম না আর আপনারা বাহিরে থেকেই সবটা দেখতে পারলেন?”
পাখির বুঝতে অসুবিধা হয় না এনারা পাড়া প্রতিবেশি।একেকজনের কথার টিপ্পনী যে এতো নোংড়া ছিলো তা পাখির ধারনারও বাহিরে।রেগে গিয়ে পাখি বলে,”কি সমস্যা আপনাদের?আপনারা কি জানেন ডাক্তারের সাথে আমার কি সম্পর্ক?মানে, না জেনেই কিছু একটা বলে দিতে পারলে যেন বেঁচে যান। তাই না?”
“এই মেয়ে থামো, জ্ঞান দিতে আসবে না একদম”,পাশ থেকে বলে ওঠে একজন।
“তোমাদের মতো মেয়েদের জন্যেই পাড়ার ছেলেরা খারাপ হয়ে যায়।আচ্ছা তোমার কি লজ্জাবোধ বলতে কিছু নেই?বিয়ে ছাড়াই এভাবে!ছিহ ছিহ ছিহ”
চোখ মুখ শক্ত করে পাখি তর্জনী আঙ্গুল উচিয়ে বলে,”মুখ সামলে কথা বলবেন। আমায় আর পাঁচটা মেয়ের মতো ভাববেন না যারা এসব কথা শুনে চোখের জল ফেলবে।অপরের ব্যপারে কিছু বলার আগে ভালো করে জেনে নিন।”
ভাবগাম্ভীর্যে পরিপূর্ণ একজন মহিলা কটাক্ষ করে বললেন, “তোমাদের মতো মেয়েরা নির্লজ্জ হয়;ঠিক তোমার মতোই”
পাখি কিছু বলতে যাবে তার আতে রাহেলা ওকে থামতে ইশারা করে। এরপর পূর্বের ঐ মহিলা আবার বলতে থাকেন,”কতোটা শেইমলেস তুমি ভেবেছো?একেতো বিয়ে ছাড়াই সংসার পাতছো, তারউপর আবার বড় বড় কথা।তা বলি, এসব এ পাড়ায় চলবে না মা।”
পাখি না পারছে রাহেলার কথার অমান্য করতে না পারছে মহিলাগুলোর বিশ্রী কথার সঠিক জবাব দিতে।
“কি হয়েছে”,ভরসন্ধ্যা বেলায় ড্রয়িংরুমে মহিলা সমাগাম দেখে কিছুটা ভরকে গিয়ে বলে শান।পুরুষালী মোটা স্বরে সবাই ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায় দরজার দিকে।উপস্থিত মহিলাদের মাঝে একজন সহাস্যে বলে,”আরে শান যে।তোমারই অপেক্ষা করছিলাম বাবা।”
“আস্সালামু আলাইকুম চাচি, আপনি!এ সময়!বসেন বসেন “,চোখেমুখে আভিজাত্যের রেখা, সকলের মধ্যমণি অত্র এলাকার চেয়ারম্যানের স্ত্রীকে দেখে সালাম বিনিময় করে শান বসতে বলে।
“ওয়া আলাইকুমুস সালাম, বসতে আসি নি বাবা। কিছু কথা বলতে এসেছিলাম।এসে তো দেখি পরিবেশ একদম ভিন্ন।”,বলেই পাখির দিকে নোংড়াভাবে তাকাচ্ছিলেন তিনি।
শান পাখির দিকে একবার তাকাতেই বুঝতে পারে পাখির চোখের কোনে জল চিকচিক করছে।ভ্রকুচকে সেদিকে চেয়ে আন্দাজ করার চেষ্টা করে বাড়িতে কি হয়েছে।
“তা বলছিলাম কি, তোমার চাচা তো এলাকার অনেক গন্যমান্য মানুষ সহ তোমায় বলেছিলো তুমি শুনো নাই।তাই ভাবছিলাম আমরা ক’জন মহিলা মিলে মেয়েটাকে বুঝাই”,বলে পাখির দিকে ইশারা করে আবার বলেন,”কিন্তু তোমার বাড়ির আশ্রিতা এই মেয়ের তো বেশ উচু গলা দেখি”
শানের বুঝতে অসুবিধা হয় না এনারা কি বলতে এসেছেন।সিনা টান করে মহিলাদের উদ্দেশ্যে বলেন, “আপনাদের কার কি বলার শখ আমায় বলুন?কি জানার আছে আমায় জানান?”
উপস্থিত সবাই একজন আরেকজনের দিকে মুখ চাওয়াচাওয়ি করছে আর চোখের ভাষায় নোংড়া কিছু বোঝাচ্ছে।
“তাহলে বাবা সরাসরি বলি,এ পাড়ায় এসব চলবে না”,কাটকাট স্বরে বলে একজন মহিলা।
শান স্বাভাবিকভাবেই জবাব দেয়, “আপনারা কতোটুকু জানেন? আর কি জানেন আমায় একটু জানাবেন?”
“আমরা যা’ই জানি। এ মহল্লায় তোমরা দুটো যুবক ছেলে মেয়ে একসাথে থাকতে পারবে না।অন্তত এসব নোংড়ামি আমরা মানব না।এটা আবাসিক এলাকা।তুমি ফ্ল্যাটের কোন ভাড়াটিয়া হলে আমাদের কোন মাথাব্যথা ছিলো না।বলতে গেলে তুমি স্থানীয়।তাই এসব বরদাস্ত হবে না এখানে”
মহিলাদের কথা শেষ হতে না হতেই পাখি শানের দিকে একপলক চেয়ে ছলছলে চোখে দৌঁড়ে উপরে নিজের ঘরে চলে যায়।সবাই সেদিকে একবার চেয়ে মুখ বাঁকিয়ে বলে,”তুমি যদি চাও বিয়ে করে সংসার করতে পারো।তাহলে কেউ কিছু বলবে না কিন্তু এসব আমরা কেউ মানব না”
সবাই সমস্বরে বলে, “হ্যা মানব না।আমাদের সন্তানরা কি শিখবে এসব থেকে!”,
শান গম্ভীর মুখে বলে, “দেখছি কি করা যায়।”
মুখ ফিরিয়ে বলে, “আরো কিছু?কিছু বলার থাকলে বলুন নয়ত এবার আসতে পারেন”
🌸🌸
“পাখি খেয়েছে চাচি”,ডিনার টেবিলে বলে শান।রাহেলা থমথমে মুখে জবাব দেয়,”সেই যে সন্ধ্যা বেলা ঘরে ঢুুকল আর বের হয় নি; কথাও বলে নি।শুধু ইনায়াহ্’র সাথে থেকেছে।ইনায়াহ্’র মনও খারাপ”
শান আর কিছু না বলে কিছু একটা ভাবনায় পরে যায়।
“একটা কথা বলব বাবা?”,শানের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে উত্তরের অপেক্ষা করে রাহেলা।
“হুমম কি কথা চাচি?”
“বলি কি, এতো বদনামের থেকে ততুমি বরঞ্চ পাপাখিকে বিয়ে করে নাও।তোমরা দুজনে অনেক ভালো থাকবে”,রাহেলা ভয়ে ভয়ে বলে চুপসে যায়।
শান অবাক হয়ে যায়।কপোট রাগ দেখিয়ে বলে,”চাচি তোমার কি মাথা ঠিক আছে?আমি?আর বিয়ে?অসম্ভব”
“এভাবে কতোদিন চলবে তুমি। শোন সবার জীবনে একজন করে সঙ্গীর প্রয়োজন”
“আমার লাগবে না চাচি”,একরোখা জবাব দেয় শান।রাহেলা গমগমে স্বরে জবাব দেয়,”মেয়েটার তাহলে কি দোষ?ওকে কেন বিনা কারণে বদনাম কুড়াতে হচ্ছে!”
“চাচি তুমি কি সবটা ভুলে গেলে?আমায় ছোটবেলা বড় করে তুললে আর আমার লাইফের ঘটনা গুলোই ভুলে গেলে চাচি?”,রাগ দেখিয়ে বলে শান।
রাহেলা স্বাভাবিক ভাবে জবাব দেয়,”আমি কিচ্ছু ভুলি নি। তবে তোমার জানার কিছু ভুল এখনো রয়েছে।”,
“আমার মৃত্যুশয্যাশায়ী বাবা মিথ্যে বলেছে, এটা বিশ্বাস করতে বলো আমায়,হুমমম?”,জোড়ে চিল্লিয়ে বলে শান।রাহেলা চুপ করে যায় শানের রাগের কাছে।
স্বগতোক্তি করে শান বলে,”আমি কোন মেয়েকেই বিশ্বাস করি না চাচি।তবে হ্যা, পাখির প্রতি কোন অন্যায় আমি হতে দেবো না।কারণ ও আলাদা।ও সম্মানের প্রাপ্য;ঘৃনার নয়”
রাহেলা সুযোগ বুঝে বলে,”ওকে যদি সম্মান করতে চাও তাহলে বিয়ে করে সম্মান দিও”
বলেই রাহেলা কপোট রাগ দেখিয়ে চলে যায়।
শান অবাক চোখে ভাবতে থাকে,”কিভাবে কি করব?মনের বিরুদ্ধে গিয়ে কি করে বিশ্বাস করব তৃতীয় কোন মেয়েকে!হ্যা আমি পাখিকে ছাড়া থাকতে পারি না।মন শুধু পাখিকে দেখতে চায়।এটা যদি ভালোবাসা হয় তবে তাই।তাই বলে বিয়ে!”
🌸🌸
রাতে ঘুমানো টা দায় হয়ে পরে শানের।বার বার রাহেলার কথাগুলো মাথায় ঘোরপাক খায়।সাথে সারদিনের ঘটা সমস্ত ঘটনা।ভোরের আলো ফোটার সাথে সাথে ফোন করে ব্যারিস্টার রাশেদের কাছে।
“হ্যা ঐ কাগজপাতি গুলো রেডি হয়েছে না? হলে, ইমিডিয়েট আমার বাড়িতে নিয়ে আসেন।”
#আসক্তি২
পর্বঃ২০
লেখায়ঃআফিয়া আজাদ নিঝুম
সকাল সকাল শানের ফোনকল পেয়ে ব্যারিস্টার রাশেদ চলে আসে বাড়ি।শান ফ্রেশ হয়ে গম্ভীর মুখে বসে আছে ড্রয়িং রুমে।বাড়ির সকলকে সেখানে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে।শানের কথা অমান্য করার ঔদ্ধত্য কারো নেই।তাই সকলেই সেখানে উপস্থিত;পাখি ব্যাতিত।বার কয়েক দরজায় ডাকা হলেও ঠিকঠাক প্রতিউত্তর মেলে নি পাখির।রাহেলা বেগম আর আব্দুল্লাহ্ বসে একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করছে।তারা বুঝতে পারছে না শান কেন তাদেরকে আজ এভাবে ডেকেছে।দুএকবার প্রশ্ন করলেও শান মুখ গুঁজে কাগজ পাতিতে চোখ রেখেছে ;উত্তর দেয় নি।সবাই বসে অপেক্ষা করছে সঠিক উত্তরের আশায়।
এতোক্ষনে সম্পূর্ণ কাগজ গুলোর এ টু জেট পূ্ঙ্খানুপূঙ্খ ভাবে পড়া শেষ করলো শান।দেখলেই বুঝা যাচ্ছে বেশ মনোযোগ দিয়ে পড়ল সে।মাথা তুলে তাকাতেই ঘুমহীন লাল চোখদুটো কারো নজর এড়ালো না।আশপাশে তাকিয়ে বুঝতে পারলো যাকে কেন্দ্র এ মিটিং সে’ই এখানে অনুপস্থিত। সবার দিকে একবার নজর বুলিয়ে চোখের চশমাটা খুলে সেন্টার টেবিলে রাখে দুহাত মাথার পিছনে সোফায় এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে শান।বন্ধ চোখেই রাশেদকে উদ্দেশ্য করে বলে,”আমি সব কাগজ পড়লাম থ্রোলি।যতোটুকু বুঝলাম কোন সমস্যা নেই।তারপরেও আপনার থেকে জানতে চাই, পরবর্তীতে কোন রকম কোন ঝামেলা হবে না তো!এশিওরিটি দিতে পারবেন?”
ব্যারিস্টার রাশেদ হেসে উত্তর দেন, “কোন সমস্যা হবার কোন স্কোপই তো রাখলেন না স্যার!আর পৈতৃকসূত্রে যেহেতু মালিকানা ম্যাডামের তাই কোন সমস্যা ভবিষ্যতে হবে না”
রাশেদের কথা শুনে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে শান।আনমনে ভাবতে থাকে,”ফাইনালি তুমি সবটা আবার পেতে চলেছো পাখি; যা যা তোমার ছিলো।আমার কতোদিনের পরিশ্রমের ফল এটা!”
পৈতৃকসম্পত্তির কথা ভাবতেই আব্দুল্লাহ্ ভ্রুকুচকে চিন্তিত ভঙ্গিতে রাহেলার দিকে চায়।
শান সেদিকে এক নজর চেয়ে বলে,”পাখি কি আসতে চাইছে না চাচি?”
রাহেলা ঠোঁট উল্টিয়ে জবাব দেয়,”কতোবার তো ডাকলাম।শুধু বললো ‘যাও আসি’
“ওকে”,শুকনো স্বরে বলে শান উঠে দাঁড়ায়।এলোমেলো পায় সিঁড়িতে পা রাখে।
“আমি যা করছি সবটাই তোমার ভালোর জন্যে করছি।তুমি সেই সবকিছুই ফিরে পাবে যার একমাত্র মালকিন তুমি।আর এটাই তোমার জন্যে বেটার অপশন”,ভাবতে ভাবতে সিঁড়ি দিয়ে ওঠে যায় শান।পাখির ঘরের দরজায় দু তিন বার নক করেও কোন সাড়া পায় না।এবার ক্ষীনস্বরে ডেকে ওঠে,”পাখি,পাখি….দরজা টা খোল।জরুরী কিছু কথা আছে”
কয়েকবার ডাকার পর দরজা খুলে দেয় পাখি।শান এগিয়ে যায় সেদিকে।দরজা খুলে পাখি বিছানার এককোনে গিয়ে বসে। শান পিছনে গিয়ে দাঁড়ায়।শান্তস্বরে বলে,”এতোক্ষন নিচে ডাকলাম গেলে না কেন?”
পাখির মৌনতাময় নিরুত্তর ভাবে শান মুচকি হেসে পাখির সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।মুখোমুখি বসে পাখির দিকে তাকায়।
“আমার জীবন এভাবে মোড় নেবে ভাবি নি।এভাবে তোমাতে আসক্ত হবো ভাবি নি।আমার আসক্তিতে পরিনত হবে তাও ভাবতে পারি নি।কিছু কিছু সময় ভালোবাসার মানুষকে দূরে সরিয়ে রাখার মাঝেও সুখ নিহিত থাকে।তার ভালোর জন্যে সবটাই ঠিক”
শানের ভাবনার মাঝে পাখি চোখ তুলে তাকায়।শান মুচকি হেসে দেয়।চোখের দিকে তাকাতেই পাখি বুঝতে পারে শান গত রাতেও ঘুমায় নি।
“কি হয়েছে তোমার?এতো মন খারাপ করে কেউ?চলো নিচে চলো”,বলেই পাখিকে নিচে যাওয়ার জন্যে তাগাদা দেয় শান।পাখি ঠাঁয় বসে থেকেই শানের দিকে চেয়ে থাকে।
“কি হলো চলো!কাজ আছে তো”,মুখটা থমথমে করে বলে শান।
শানের দিকে তাকিয়ে আজ কেন জানে না পাখির বড্ডো বলতে ইচ্ছে করছে, “আমি আপনাকে ভালোবাসি ডাক্তার সাহেব”
কিন্তু বলা আর হয় না।শান ওকে হাত ধরে টেনে নিয়ে যায় নিচে।
সবার মাঝখানে এনে হাত ছেড়ে দেয় শান।রাহেলার পাশে একটা সোফাতে বসতে বলে।এরপর রাশেদকে বলে,”পুরো কাগজপাতি গুলো পূনরায় পাখিকে পড়ে শোনান ”
রাশেদ কথামতো সব কিছু পাখিকে শোনাতেই গা হিম হয়ে আসে পাখির।পুরো শরীর কাপতে থাকে।কম্পনরত চোখ জোড়া দিয়ে একবার শানের দিকে তাকায়।কারণ পাখি বিশ্বাসই করতে পারছে না শান এভাবে তার হারানো সম্পদ ফিরিয়ে দিতে পারবে।
“আপনি এসব কোথায় পেলেন, এসব তো বড় বাবার কাছে?”,অবাক বিষ্ময়ে প্রশ্ন করে পাখি।সহাস্যে শান জবাব দেয়,”কিভাবে সবটা ম্যানেজ করেছি সেটা বড় কথা নয় পাখি।তুমি তোমার সবটা ফিরে পেয়েছো সেটাই বড়কথা।বাই দ্য ওয়ে তুমি এতো সম্পদের মালকিন!বাব্বাহ, আমাদেরও কিছু দিয়ে হেল্প করো”
মজার ছলে বলে শান পাখির দিকে তাকায়।আর পাখি অবাক চোখে এখনো তাকিয়ে আছে শানের দিকে।বুঝতে পারছে না এতোসব কিভাবে সম্ভব!
পাখির চোখ পড়তেই চোরের মতো নজর সরিয়ে নেয় শান।হয়ত ধরা পরার ভয়ে।ধরা পরলে নিজেকে ও চোখে বলি দেয়া ছাড়া উপায় থাকবে না যে।
শান আবার বলে,”তোমার রানী মাসি তোমার সাথে কথা বলবে।সময় করে কথা বলে নিও।ওহ তার তো আর দরকার হবে না…”
এবার পাখির বুঝতে অসুবিধা হয় না কিভাবে শান এতোসবটা করতে পারলো।খুশিতে ঝলমলিয়ে ওঠে পাখির চোখ মুখ।সম্পত্তি ফিরে পাবার খুশিতে নয়, রানী মাসির সাথে কথা হবে সে খুশিতে।
রাহেলা বেগমের মুখে হতাশার ছাপ স্পষ্ট।কারণ তিনি ইতোমধ্যে আন্দাজ করতে পেরেছেন শান কি করতে চলেছে।চিন্তিত মুখে শানের দিকে তাকাতেই বুঝতে পারেন ভীষণ চাপা কষ্ট বুকে চেপে আছে ছেলেটা।বুকের ভেতর মুচড়িয়ে ওঠে রাহেলার।হাজার হোক নিজের ছেলের মতো বড় করেছে শানকে।শান সবার দিকে একবার চোখ বুলিয়ে বলে,”তোমার রানী মাসি যে ঠিকানা দিয়েছিলো সেটা আমাদের এই এলাকার পরের এলাকা। বেশি দূরে নয়।তোমার আয়ান ভাই সে বার তোমায় খুঁজতে সেখানেই এসেছিলো।তারপর তোমার সাথে দেখা হয়।তো যাই হোক,তুমি এখন চাইলে তোমার নিজ বাড়িতে দাপুটের সাথে থাকতে পারবা।নয়ত রানী মাসির আত্মীয়ের বাড়িতে থাকতে পারবা।চয়েজ ইওরস।
তবে আমি এশিওরিটি দিচ্ছি তোমার বড় বাবার ফ্যামিলি তোমার বিন্দুমাত্র ক্ষতি করতে পারবে না”
শানের কথা শুনে পাখির বোঝার বাকি নেই শান তাকে নিজ বাড়িতে পাঠাতে চাইছে।অবাক হয়ে ভাবে,”আমি তো এসব কিছু চাই না ডাক্তার সাহেব।আমি তো……”
“পাখি, গেট রেডি।তোমাদের এলাকায় যাবো।তোমাকে সেখানে সবটা বুঝিয়ে তারপর আবার আমায় ব্যাক আসতে হবে”,পাখির ভাবনার মাঝে ছেঁদ পরে শানের কথায়।
বুকের ভিতর জমাট বাঁধা কষ্ট গুলো জল হয়ে ঝড়তেই পাখি উঠে উপরে চলে যায়।শান সহ উপস্থিত সবাই বিষ্মিত হয় পাখির অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যবহারে।শানও উঠে পিছনে যেতে সিঁড়ির কাছে পা রাখতেই রাহেলা দারাজ কন্ঠে বলে ওঠে,”থামো”
শান থেমে গিয়ে পিছনে তাকায়।রাহেলা কাছে গিয়ে বলে,”এতো বড় একটা সিদ্ধান্ত নিতে পারলে শানবাবা!মানলাম পাখির অতীত ফিরিয়ে দিয়ে ওকে ভালো রাখতে চাও। তাই বলে মেয়েটাকে এভাবে দূরে সরাতে পারলে!পারবে তো ওকে ছাড়া ভালো থাকতে!”
রাহেলার কথায় নজর এদিক সেদিক করে শান।কোন জবাব দিতে পারে না।রাহেলা বেগম স্বগতোক্তি করে বলে,”এবার এটা বিশ্বাস করতে বলো না যে, তুমি পাখিকে ভালোবাসো না”
জড়িয়ে আসা কন্ঠে শান জবাব দেয়,”সেসব কিছু না চাচি।সত্যি আমি ওকে ভালোবাসি না”
“তোমায় আমি ছোট থেকে এই দুহাতে বড় করে তুলেছি বাপ।শুধু জন্মটাই দিই নি।তাই তোমাকে চেনাতে এসো না”,করুনস্বরে বলে রাহেলা।
চোখের কোণদ্বয় দু আঙ্গুলে মুছে শান জবাব দেয়,”আমার সিদ্ধান্তই ওর জন্যে মঙ্গল চাচি।ও কখনো আমার সাথে ভালো থাকতে পারবে না।এ জীবনে আর কোন বিচ্ছেদ আমি কষ্ট সহ্য করতে পারব না।নিরর্থক জীবনে জড়াতে চাই না ওকে”
শেষের কথাটা বেশ গমগমে স্বরে বলে শান সিঁড়ি দিয়ে উপরে চলে যায়।
ঘরের দরজায় নক করতেই বুঝতে পারে দরজা খোলা ;তবে ভিড়ানো।সন্তর্পণে ভিতরে ঢুকে বুঝতে পারে পাখি উপর হয়ে বালিশে মুখ চেপে শব্দ করে কাঁদছে।বালিশের বদৌলতে সে কান্নার আওয়াজ চারদেয়ালেই সীমাবদ্ধ থাকছে।পাখির কান্নার স্বর এতো করুন লাগছে যে শানের অন্তরেও প্রবল স্রোত বয়ে চলছে।বেশ বুঝতে পারছে শান, পাখির কান্নার পিছনের আসল কারণ।
“উহুহম উহুহহ “,দুইবার গলায় শব্দ করে শান।পাখি তবু ফেরে না।আরেকবার শব্দ করতেই পাখি তড়িৎগতিতে উঠে এসে শানের টি-শার্টের কলার চেপে ধরে।চোখে চোখ রাখে শানের।মুচকি হাসি ঠোটেঁ বজায় রেখে শান বলে,”কি?”
রাগে রি রি করা শরীর নিয়ে পাখি আগুন চোখে শানের দিকে তাকিয়ে বলে,”খুব মহান তুই তাই না?মহান সাজতে চাস তাই না?কাপুরুষ কোথাকার, নিজের মনের কথা বলতে এতো কিসের ভয় তোর?আমি কি একবারও বলেছি আমার সহায় সম্পত্তি ফেরত চাই?”
কিছুক্ষন থেমে অঝোড়ে চোখের অশ্রু বিষর্জন দিয়ে পাখি আবার বলে,”কেন এমন করছেন আমার সাথে?কেন সবটা বলে দিচ্ছেন না ডাক্তার সাহেব?আমাকে এভাবে দূরে সরানোর মানে কি?”
পাখির আজকের ব্যবহারে শান স্তম্ভিত হয়ে যায়।ভাবতেও পারে নি সে এমন ভাবে নিজেকে বোঝাবে।অনুভূতিহীন চোখে শুধু পাখির আচরন দেখে চলছে শান।
“এভাবে চলতে থাকলে আমি কোনদিনও পাখিকে নিজের থেকে আলাদা করতে পারব না। কিন্তু সেটা তো আদৌ অসম্ভব”,ভেবে শান কলারে চেপে রাখা পাখির হাতদুটো আলগা করে চেপে ধরে।মিছে হাসি ঠোঁটে রেখে বলে,”হোয়াট ননসেন্স!কিসের মনের কথা?আর আজ হোক বা কাল তোমাকে তো যেতেই হতো।তুমি একটা মেয়ে মানুষ তোমার তো বদনাম হচ্ছে”,বলেই শান আড়চোখে তাকায় পাখির দিকে।
“ততোমার কি ববদনামের ভয় নেই?কেন তুমি আমার জন্যে নিজের লাইফকে কালিমাময় করবে! “,পূনরায় বলে শান পাখির দিকে তাকায়।সত্যি বলতে শানের ইচ্ছে করছে পাখির মুখ থেকে ভালোবাসি কথাটা শোনার।
কলার ছেড়ে পাখি চোখ মুছে নেয়।শানের প্রতিউত্তরে কি বলবে বুঝতে পারে না পাখি।হাজার কথা বলতে চাওয়া মন আজ সবকথা ভুলে গেছে।দুই পা পিছিয়ে আসে পাখি।বলতে চেয়েও বলা হয় না,”আপনাকে ভালোবাসি। আমাকে আপনার কাছে রাখার ব্যবস্থা করুন”
শান মুচকি হেসে বলে,”চলো;তোমার গ্রামে”
পাখি অবাক হয়েই চেয়ে থাকে শানের দিকে। ও চোখের ভাষা বুঝতে বিন্ধু পরিমান সময় লাগে না শানের।দ্রুত চোখ সরিয়ে পিছু ফিরে আসতেই পাখির কথায় থমকে যায়।
“আই লাভ ইউ “,সকল জড়তা, সকল মৌনতা ভেঙ্গে অস্পষ্ট স্বরে জবাব দেয় পাখি। নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারে না শান।হতভম্বের ন্যায় বিপরীত মুখেই দাঁড়িয়ে থাকে।পাখি এবার দুজনার মাঝের দুহাতের দূরত্ব ঘুচিয়ে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে শানকে।নিজের বুকের কাছে পাখির হাতের শক্ত বাঁধনে নিজেকে অজানা মায়ার বাঁধনে আবিষ্কার করে শান।
শানের পিঠে মাথা ঠেকিয়ে পাখি স্বপক্ষ নিয়ে আবার বলে,”আমি আপনাকে খুব ভালোবাসি। আমি পারব না আপনাকে ছেড়ে থাকতে।কোথাও যাবো না আমি।ওরা আমায় মেনে নিবে না।”
বলতে বলতে কেঁদে ফেলে পাখি।
পিঠের উপর উষ্ণ নিঃশ্বাস শানের হার্ট বিটকে দ্বিগুন বাড়িয়ে দেয়।শুকনো ঢোক গিলে বুঝতে পারে সেকেন্ডের সাথে সাথে পাখির ভাবনা গুলো ভাষা আকাড়ে মুখ দিয়ে বের হচ্ছে।আর সাথে সাথে শানও আটকা পরছে পাখির মায়াজালে।না পারছে পাখিকে নিজের থেকে সরাতে, না পারছে একেবারে নিজের করে রাখতে।
কিছু সময় পর শান নিজেকে ধাতস্ত করে, “আর যাই হোক আমি ওর লাইফটা এভাবে নষ্ট করার অধিকার রাখি না”,
তাই তো নিজেকে কঠিন করে বলে,”দেখলে তোমাদের মতো মেয়েরা এমনই।একটু কি ভালো করে কথা বলা শুরু করেছি,সম্মান দিচ্ছি ;তো মাথায় চরে বসেছ।ছাড়ো বলছি। এই জন্যেই মেয়েদেরকে ঘৃনা করি আমি”
বাজখাঁই গলায় বলে শান ইতস্তত করে।কিন্তু পাখির হাতের বাঁধনটা খুলে দেয়ার দূঃসাহস হয় না শানের।
শানের এবারের কথাগুলো মানতে কষ্ট হচ্ছে পাখির।বুক ছিড়ে কান্না আসতে চাইছে।কিছু বলতে যেয়েও পারছে না। নিজেকে ছ্যাচড়া মনে হচ্ছে ভীষণ।খুব ধীরে নিজের হাতের বাঁধন থেকে শানকে মুক্ত করে পূনরায় দুইপা পিছিয়ে নিজের পূর্বের অবস্থানে চলে যায়।আঁতে ঘা লাগছে পাখির।ইচ্ছে করছে এই মূহূর্তে অতল গহ্বরে তলিয়ে যেতে।
ঘাড় বাঁকিয়ে পাখির মুখের দিকে একবার চেয়ে শান দ্রুত ঘর প্রস্থান করে।আরেকটু সময় থাকলে হয়ত পরিকল্পনা মোতাবেক সাজানো সবটা ভেঙ্গে চুড়মার হয়ে যেত।
রেডি হয়ে শান ড্রয়িং রুমে পাখির জন্যে অপেক্ষা করে।রাশেদকে বলে সমস্ত কাগজপাতি আরেকবার চেইক করিয়ে নেয়।স্বাভাবিক স্বরে বলে,”সবটা দেখে নিন।দূরের পথ কোন কাগজ ছেড়ে গেলে সেটা আর নিতে আসা সম্ভব নাও হতে পারে।আর আমি চাই না ওখানে গিয়ে কোন কাগজের অভাবে সবটা ভুন্ডুল হয়ে যাক”
“জ্বি স্যার”,বলেই রাশেদ কাগজ গুলো দেখে ব্যাগে ঢুকায়।
সিঁড়ির দিকে তাকাতেই শান বুঝতে পারে অনুভূতিহীন চাহনীতে এলোমেলো পায়ে পাখি নিচে নেমে আসছে।পাখির এ রূপ যে কতোটা কষ্টদায়ক তা হারে হারে টের পাচ্ছে শান।রাহেলা পাখির দিকে তাকাতেই নিজেকে সংবরন করতে পারে না।পাখিকে বুকে জড়িয়ে চাপাস্বরে কেঁদে ফেলে।এতোদিনের পরিচয়ে বেশ মায়া জন্মেছে মেয়েটার উপর।আব্দুল্লাহ্ গম্ভীর মুখে এগিয়ে গিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,”জীবনে অনেক সুখী হবে তুমি।অনেক ভালো থাকবে”
পাখি নিষ্প্রান চোখে শানের দিকে চোখ বুলিয়ে রাহেলাকে বলে,”চাচি, ইনায়াহ্ স্কুল থেকে ফিরে আমার কথা বলবে।বলবেন, আমি জগতের সবথেকে খারাপ মানুষ যে ওকে দেয়া কথা রাখতে পারি নি।ওর যত্ন নিবেন।হাইপার হতে দিবেন না”
“ওকে নিয়ে এতো দূঃচিন্তা করতে হবে না।মাম আগের থেকে অনেকটাই বেটার।আশা করি আগের মতো এ্যাটাক আসবে না”,শান্তস্বরে বলে শান।
রাহেলাকে উদ্দেশ্য করে বলে,”আমি না আসা পর্যন্ত ইনায়াহ্’কে একটু ভুলিয়ে রেখো চাচি”
পাখি অবাক বিষ্ময়ে ছলছল চোখে সেদিকে চেয়ে থাকে।শান নজর সরিয়ে রাহেলাকে বলে,”আমি আসছি চাচি”
বলেই সদর দরজায় পা রাখে।
সবার সাথে শেষবারের মতো কথা বলে পাখিও বেরিয়ে আসে শানের পিছু পিছু।
🌸🌸
গাড়ির দরজা খোলার পূর্ব মূহূর্তে শানের ফোনে কল আসে কারো।
“হ্যা পরশ বল,ওদিকে কি অবস্থা? ”
…..
“আচ্ছা আমি যাচ্ছি ওখানে।”
……
“ওকে সমস্যা নেই, কোন ঝামেলা হলে তোকে ইনফর্ম করব। একটু সজাগ থাকিস”,বলেই কলটা কেটে দেয় শান।
পাখির গ্রামের বাড়ির এলাকায় তার বড় বাবাই সবকিছু।তার দুষ্কৃতিকারী ছেলেদের ভয়ে তটস্থ থাকে পুরো এলাকা।রাজনৈতিক দলে নাম লেখানো কিনা!তাই সবটা খোঁজ নিয়ে থানায় জানিয়ে রাখে শান।মূলত ঐ এলাকার থানার এস আই পদে নিযুক্ত শানের প্রিয় বন্ধু পরশ।
গাড়ির দরজা খুলতে গিয়ে খেয়াল হয় পাখি একদৃষ্টে অন্যদিকে চেয়ে আছে।গাড়ির দরজায় ইচ্ছেকৃত দুইবার নক করে শান।পাখি ঘুরে তাকালে ইশারায় বসতে বলে।পাখি আরেকবার বাড়ির পুরো এরিয়া টা ঘুরে দেখে আনমনে ভাবে,”কিভাবে এসেছিলাম আর কিভাবে যেতে হচ্ছে!নিয়তি বড় অদ্ভুত চিজ”
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বসে পরে সামনে শানের পাশের সিটে।শান কিছুক্ষন অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে পাখির দিকে।পাখি সেদিকে চোখ পড়তেই রাগে, ক্ষোভে, অভিমানে দৃষ্টি সরিয়ে নেয় তড়িৎগতিতে। মুচকি হেসে শান ওর খুব কাছাকাছি চলে আসে।ভীষণ অবাক হয় পাখি।ভিতরে অজানা ভালো লাগা কাজ করে,”এই বুঝি তিনি বলবেন তার মনের কথা”
পাখিকে অবাক করে দিয়ে শান ওর সিট বেল্ট বেঁধে দেয়।এরপর শান্ত চাহনীতে চেয়ে থাকে কিছুক্ষন।
মনে মনে বলে ওঠে,”সরি পাখি।আ’ম টু মাচ হেল্পলেস।আমি পারব না আমার সাথে তোমায় জড়াতে”
পাখি শানের বুকে দুহাত ঠেলে দূরে সরিয়ে দেয়। হকচকিয়ে ওঠে শান।
“একদম কাছে ঘেঁষার চেষ্টা করবেন না।কাওয়ার্ড কোথাকার”
দাঁতে দাঁত চেপে বলে পাখি। মুচকি হেসে সরে আসে শান।
ব্যারিস্টার রাশেদ তার একজন সহকারী সহ নিজের গাড়িতে বসে।এরপর দুটা গাড়ি ছুটে চলে সিলেটের উদ্দেশ্যে।
পুরো রাস্তা দু ঠোঁটে একটা কথাও বলে নি পাখি।জানলায় দুহাত রেখে শানের দিকে পিঠ করে বসে ছিলো।শান বার বার সোজা হতে বললেও কোন কথা শোনে নি পাখি।নিজের মতো রাস্তার দিকে চেয়ে ছিলো।
🌸🌸
দীর্ঘ সাত ঘন্টার জার্নি পেরিয়ে শানরা এসে পৌঁছায় পাখির গ্রামের বাড়িতে।গাড়ি থেকে নেমে নিজ বাড়িতে পা রাখা পর্যন্ত পুরোটা সময় পাখি শানের সাথে সাথে ছিলো।ভয়ে কাঁপছিল মৃদু মৃদু।শান বার বার তাকে আশ্বস্ত করছিলো, ” কিছু হবে না।সব লিগ্যাল কাগজ আর কোর্ট নোটিশ আমাদের কাছে আছে”
পাখিদের বাড়ির আঙ্গিনায় পা রাখতেই মানুষের সমাগমে ভরে উঠল পুরো বাড়ি।গুজুরগুজুর, ফিসিরফিসিরে বাতাস ভারি হয়ে উঠলো।কিছুক্ষন পর রানি মাসি দৌঁড়ে এসে শানদের বসার ব্যবস্থা করলেন।পাখি তাকে দেখে নিজেকে আর নিজের মাঝে রাখতে পারলেন না।ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলে।মাথায় হাত বুলিয়ে রানি মাসি শ্বান্তনা দিচ্ছিলো পাখিকে।
অল্পকিছু সময় পর লম্বা,সুঠামদেহি পালোয়ান গোছের একজন লোক আসলো।সবাই তাকে সালাম সমাদর করে বসতে দিলো।এরপর সুদর্শন একজন যুবক চলে আসলে তাকেও সালাম, সমাদরে বসতে দিলেন সবাই।তাকে দেখে পাখির গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে এলো।শান একবার পাখির দিকে তাকাতেই ভয়ার্ত মুখ দেখে বুঝতে পারলেন এই সেই আয়ান।যে পাখির সাথে প্রতারনা করেছিলো।রাগে চোয়াল শক্ত হয়ে আসে শানের।কোনমতে রাগকে কন্ট্রোল করে বসে পরে চেয়ারে।পাখি পা টিপে টিপে শানের পাশে গিয়ে দাঁড়ায়।একে একে এলাকার অনেক গন্যমান্য ব্যক্তিরাও এসে উপস্থিত।এরপর কয়েকজন ছেলে সহ ঠাঁটবাট বজায় রেখে একজন বখাটে টাইপ ছেলের আগমন ঘটে।শান সরু চোখে তাকিয়ে বুঝতে পারে এই হলো রায়ান।
সকলের উপস্থিতির পর রাশেদ সৌজন্যমূলক হাসি দিয়ে তার এসিস্ট্যান্ট ফরহাদ কে ইশারা করে কাগজ গুলো বের করতে।চারিদিকে পিনপতন নীরবতা বিরাজমান।ফরহাদ কথামতো কাগজপত্র গুলো চেয়ারম্যান সাহেবের কাছে হস্তান্তর করে।চেয়ারম্যান সেগুলোতে চোখ বুলিয়ে মুচকি হেসে বলে, “এখানে আর কি’ই বা বলার থাকে।সবই কাগজে পানির মতো পরিষ্কার।”
এরপর পাখির বাবার উদ্দেশ্যে রিনরিনে স্বরে বলে,”আজদ সাহেব পাখি’ই সকল সম্পত্তির উত্তরাধিকারী।”
বেশ গাম্ভীর্যতা পাখির বড় বাবা আজাদ সাহেবের চোখে মুখে।
কানে কানে ফিসফিস করে চেয়ারম্যান বলে,”সব কাগজ পরিষ্কার ভাই সাহেব।ঝামেলা বাড়ানোর দরকার নাই।হিতে বিপরীত হয়ে যাবে।বলি কি, সবকিছু ছেড়ে দেন।”
শানকে ইশারা করে বলে,”ঐ ছেলের বন্ধু আমাদের এস আই পরশ।এখানে ভুলভাল কিছু হলে সবাই ফেঁসে যাবো”
এরপর গলা খাঁকারি দিয়ে বলে, “তো হলোই তো, আজ থেকে মৃত মাজিদের স্থাবর -অস্থাবর সকল সম্পদের মালিক তারই একমাত্র মেয়ে পাখি।আর এখন থেকে সে সমস্ত সম্পদের ভোগদখল করতে পারবে।তারপ্রতি কোন বিপদ আসবে না।আশা করি ব্যারিস্টার সাহেবের আর কোন কথা থাকার কথা না”
শান এদের ব্যপারে যা শুনেছিলো তাতে একটুও মানতে পারছে না এতো তাড়াতাড়ি সবটা মেনে নিবে ওরা।কিন্তু শানকে অবাক করে দিয়ে মিটিং সেখানেই শেষ করার ঘোষনা দেয়া হয়।
হুংকার দিয়ে কেউ একজন বলে ওঠে,”এক মিনিট”
সবাই সেদিকে দৃষ্টি রেখে বুঝতে পারে আয়ান বলল কথাটা।
“আমার কিছু কথা আছে চেয়ারম্যান চাচা”, বলেই সবার দিকে নজর বুলিয়ে পাখির মুখোমুখে গিয়ে দাঁড়ায় আয়ান।আয়ানের কথায় সবাই আবারও নিজ নিজ জায়গায় বসে পরে।শান ছোট ছোট চোখে বোঝার চেষ্টা করে সে পাখির সাথে কি করতে চলেছে।হাতের মুঠি শক্ত করে শান। আয়ান সানগ্লাস টা খুলে ফুঁ দিয়ে বলে ওঠে,”আমার সাথে পাখির বিয়ের প্রায় সবকিছুই ঠিক ছিলো।বিয়ের আসর থেকে পালিয়ে যায় পাখি।তাও আজ থেকে প্রায় দুই আড়াই মাস আগে।তাই নয় কি? ”
আয়ানের কথার পিঠে অনেকেই কথা মিলিয়ে বলে,”হ্যা তা তো ঠিক”
“যতোদূর জেনেছি, খবর নিয়েছি পাখি সেদিন রাতে এই ডাক্তারের সাথে তার বাড়িতে চলে যায়।তাহলে এই দুই আড়াই মাস পাখি তো ডাক্তারের বাড়িতেই ছিলো। হিসেবে কি তাই মেলে?”,সকলের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছোড়ে আয়ান।
উপস্থিত সকল লোকজন ভেবে বলে,”হ্যা তাই তো”
“এখন আমার কথা, ডাক্তার সাহেব একজন অবিবাহিত ব্যাচেলর মানুষ।নিজের ভাগ্নিকে মেয়ের পরিচয়ে বড় করছে।এরপর আমাদের পাখি গিয়ে সে বাড়িতে ছিলো গত দিনগুলো।তারমানে এতোদিন দুজন এক বাড়িতেই ছিলো।আপনাদের কি মনে হয় আমাদের মেয়ে এখনো ঠিক বা কুমারি রয়েছে?”,রক্তচোক্ষু নিয়ে বলে আয়ান।
আয়ানের কথার পর দুহাতে কান চেপে কেঁদে ফেলে পাখি। অনেকেই বলে, “সত্যিই তো। এটা তো ভাবা হয় নি।তাতে আবার শহর এলাকার লোক।”
আয়ানের কথায় শানের বোঝার বাকি নেই ঢেউ এবার কোথায় গিয়ে ঠেকবে।রাগে চোয়াল শক্ত করে চেয়ে থাকে আয়ানের দিকে।আয়ান কটাক্ষের চোখে চেয়ে শানের মুখোমুখি এসে দাঁড়িয়ে বলে,”এগুলো তো আমাদের এলাকায় চলবে না ডাক্তার সাহেব।এতোদিন ধরে একটা মেয়েকে বিবাহ ছাড়াই নিজের কাছে রাখলেন,ফূর্তি করলেন।তারপর রুচি উঠি গেলো ফিরিয়ে দিলেন!বাহ বাহ বাহ।এটা কি করে মেনে নেই বলুন…..”
“মাইন্ড ইওর ল্যাঙ্গুয়েজ, ব্লাডি চিপ”,দাঁত চিবিয়ে বলে শান।আয়ান চাপাস্বরে বলে,”এটা ঢাকা নয় ;সিলেট।কোন বাড়াবাড়ি করলে একদম শেষ করে দেব”
শানের রাগ তবুও কন্ট্রোল করা দায় হয়ে পরে যায়।
আয়ানের কথায় কান গরম হয়ে আসে পাখির।রাগে,ভয়ে চোখ ফেটে জল গড়িয়ে পরে।ভয়কে একপাশে রেখে ঝনঝনে গলায় বলে,”এরকম বাজে কথা বলতে জিহ্ব কাপঁল না তোমার?”
“একদম চুপ থাকবি মা*…”,আয়ানের কথা শেষ হবার পরপরই গালে কষিয়ে থাপ্পড় বসিয়ে দেয় শান।রাগে চোয়াল শক্ত করে আয়ানের কলার চেপে ধরে নাক বরাবর একটা ঘুষি মারে।ঘটনাটা এতোটাই তাড়াতাড়ি ঘটে গেলো যে আয়ান প্রতিহত করার সুযোগ টাই পেলো না। রায়ান তার পালিত প্রানীগুলো নিয়ে এগিয়ে আসতেই চেয়াম্যান সাহেব তাদের আটকে দেয়ে।ফিসফিসিয়ে বলে,”শান্ত হও।দেখতে থাকো কিছুক্ষন”
শান রক্তচোক্ষু নিয়ে আয়ানের দিকে তাকিয়ে রাগে কাঁপতে কাঁপতে বলে,”ওর সমন্ধ্যে আর একটাও বাজে কথা নয়।জিহ্ব টেনে টুকরো টুকরো করে কুকুরকে খাওয়াবো।”
পাখি গিয়ে সামনে দাঁড়িয়ে শানের চোখে চোখ রেখে বলে,”এসব কথা মানায় না আপনাকে।জানতেন না এরকম কিছু হবে?বলি নি আমি কেউ আমায় মেনে নেবে না।তাহলে এখন এতো জ্বলছে কেন!এগুলো আমার শোনা কপাল, শুনতেছি।”
শান রেগে গিয়ে কলার ছেড়ে দেয়।আয়ান রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে রায়ানকে ইশারা করতেই দ্রুত রায়ান ছেলেপেলে সহ শান সহ রাশেদকে ঘিরে ধরে।জোড় জবরদস্তি করে তাদের থেকে ফোন, কাগজ পাতি সব কেড়ে নেয়।এরপর নাক চেপে ধরে এলাকাবাসির উদ্দেশ্য আয়ান বলে,”আপনারা কোনটা চান, এই নষ্ট মেয়েকে গ্রামে ফেরাতে নাকি ডাক্তারের সাথেই বিয়ে দিতে?”
স্বভাবতই সবাই চাইবে ডাক্তার শানের সাথেই পাখির বিয়ে হোক।কারণ কোন সমাজই এরকম মেয়েকে মেনে নিবে না।
এলাকাবাসিরা সমস্বরে বলে ওঠে,”ওদের বিয়ে করিয়ে দাও ”
শান অবাক হয়ে যায় ঘটনার আকষ্মিকতায়। সে কোষ্মিনকালেও ভাবে নি এরকম পরিস্থিতি দাঁড়াবে।
“আমি জানি আপনি আমাকে চান না।আমাকে কাছে রাখতে চান না।আপনাকে গ্যারাকলে পরতে হলো আমার জন্যে”,আনমনে ভেবে পাখি এসে আয়ানের পা জড়িয়ে বলে,”উনাকে যেতে দাও প্লিজ।আমার সাথে তার কোন রকম কোন সম্পর্ক নেই।বিশ্বাস করো”
আয়ান পা ছাড়িয়ে নিচু হয়ে বলে,”তোর সাথে কোন কথা থাকতে পারে না আমার। ওর সাথেই তোর বিয়ে হবে আজ এই মূহূর্তে।”
পাখি কান্নারত অবস্থায় শানের দিকে তাকাতেই বুঝতে পারে শানকে কতোটা অসহায় লাগছে।
শান চাইলেও পারছে না পরশকে একটা ফোন করতে। ফোন গুলো কেড়ে নিয়েছে রায়ান।
“কি থেকে কি হলো?না চাইতেও এ কোন সম্পর্কে বাঁধা পড়লাম”,ভেবে শুকনো ঢোক গিলে পাখির দিকে তাকায় শান।
এরপর সন্ধ্যাবেলায় কাজি ডেকে এলাকাবাসির উপস্থিতিতে জোড় জবরদস্তি বিয়ে দেয়া হয় শান-পাখির।(📯📯📯)
চলবে….
[