#ইংলিশ_টিচার
পর্ব-৯+১০
সুমনা হক
মিলির শাশুড়ি বুঝে গেলো রিমি কেন এসব বলছে তাই সে আর প্রতিবাদ করেনি।
রাতে রিমি মিলি যে রুমে ঘুমাতো সে রুমে গেলো থাকতে আর শুভ তো গেস্ট রুমেই থাকে।
শুভ আসলো রিমির সাথে দেখা করতে।
শুভ বললো
-রিমি আসবো?
-অনুমতি নেওয়ার কিছু নেই আর মাত্র কিছুদিন তারপর এই রুম দুজনের।
-রিমি তুমি কি চাচ্ছো??
-দেখেন আমার বোনকে আপনি বিয়ে করেছেন যেখানে আমার বিয়ে করার কথা, আমি কিন্তু মিলি বিয়ে করেছে বলে রাগ করিনি কিন্তু রখন যখন মিলি যোগ্য না বলে আপনারা তার সাথে খারাপ আচরণ করলেন তার মানে আপনি মিলির থাকে সংসার করবেন না।
তাহলে মাঝখানে আমি কেন সব ছেড়ে দিবো? বিয়ে যেহেতু আবার করবেন তাহলে আমাকেই কেন নয়?
-রিমি আপাতত আমি আবার বিয়ে করবো এমন কিছু ভাবিনি।
-ভাবেননি কেন? আর তাছাড়া ভাবার কিছু নেই এখানে আপনি এই ১ মাসে মিলির খবর নিয়েছেন?
নেননি তো তাহলে? এখন মিলির সাথে আপনার বিয়েটা শুধু নামমাত্র বিয়ে হয়ে গেলো।
তাই আমি চাচ্ছি যা হয়েছে সব ভুলে আমরা আবার নতুন করে সব শুরু করবো।
শুভ চুপ করে আছে দেখে রিমি বললো
-আচ্ছা এই বাসায় নাকি ভুত আছে?
আমার অনেক শখ ভুত দেখার, আসেন দুজন ছাদে গিয়ে ভুতের সাথে আমাদের বিয়ের কথাটা বলে আসি।
শুভ রুম থেকে কিছু না বলে চলে আসলো।
রিমি দরজা বন্ধ করে ঘুমিয়ে গেলো।
তার পরদিন রিমি মিলির শাশুড়ি কে বললো
-আচ্ছা আন্টিজি, এই যে বাংলাদেশ নতুন স্যাটেলাইট পাঠালো মহা আকাশে তা নিয়ে আপনার মতামত টা একটু বলেন।
মিলির শাশুড়ি মায়ের মুখটা পাকা আম গাছ থেকে পরলে যেমন হয় ঠিক তেমন হয়ে গিয়েছিলো।
আচ্ছা এইসব বাদ দেই চলেন আমরা সাহিত্য নিয়ে একটু আলাপ করি।
আচ্ছা আন্টিজি আপনি রবীন্দ্রনাথ এর শেষের কবিতা উপন্যাস টা পড়েছেন??
লাবণ্য কে ভালো লেগেছে?
না না আপনার তো লাবণ্য কে ভালো লাগার কথা না।
মিলির শাশুড়ি কথা না বলে বাংলার পাঁচের মতো মুখ করে কি জানি বিড়বিড় করতে করতে রান্নাঘরে চলে গেলো।
রিমি এবার শুভর রুমে গেলো গিয়ে বললো
-শুভ আপনি কি করছেন?
-কিছুনা।
-কলেজ গেলেন না কেন?মুড ঠিক নেই?আচ্ছা এখন তো মিলি নেই, সে আপনাকে বিরক্ত করছেনা তাও আপনার মুখে হাসি নেই কেন?
-রিমি আপনি কিছু বলতেন?
-নাহ আমি তো আপনার সাথে পড়তে আসছি।আচ্ছা আপনি পথেরপাঁচালি পড়েছেন?
-না পড়িনি আর এখন পড়বো ও না।
-না কেন? এখনি পড়বেন আর ভালো কিছু বই এর নাম বলেন যেগুলো আমি পড়তে পারি।
-রিমি সব সময় সব কিছু করতে তো ভালো লাগেনা।
-কক্সবাজার এ বসে ইংলিশ পাঠ্যবই পড়তে ভালো লাগে আর ছুটির দিনে গল্পের বই পড়তে আপনার ইচ্ছে হচ্ছেনা??
না না না আমি তো এসব বিশ্বাস করিনা।
চলেন বই পড়ি।
শুভ আবারো কিছু না বলে রুম থেকে চলে গেলো।
এভাবেই ১ সপ্তাহ কাটার পর রিমি সবাই কে ডেকেছে।
বাসার সবাই উপস্থিত শুধু একজন কে দেখা যাচ্ছেনা আর সে মিলির শ্বশুর আংকেল, সে বেশ কিছুদিন হলো অফিসের কাজে দেশের বাহিরে আছে।
আচ্ছা এবার বলেন আমাদের কবে বিয়ে টা হচ্ছে?শুভ আপনি শুনতে পাচ্ছেন?
আমার দেওয়া সময় আজ শেষ হচ্ছে তাই তাড়াতাড়ি বলেন।
শুভ বললো
-আমি ডিভোর্স ও দিবো না আর তোমাকে ও বিয়ে করবো না।
-তাহলে কি করবেন?
-জানিনা।
-সব কিছু এমনি থাকবে??
-থাকুক না,তোমারা দুই বোন আমাকে যা বিরক্ত করছো এবার না হয় আমিই একটু বিরক্ত করি।
ডিভোর্স এর কাগজ টা নিয়ে যাও।
শুভ কিন্তু এত্ত দিনে মিলিকে একটু একটু পছন্দ করে ফেলছে কিন্তু শুভর ইগোর জন্য সে বলতে ও পারছেনা যে মিলি যেমনি হোক সে মিলির সাথেই সংসার টা করবে।
রিমি তারিমধ্যে বলতে শুরু করলো
-শুভ আপনাকে সত্যিই আমি ভালো ছেলে ভেবেছিলাম, তাই এখানে এসেছিলাম।ভাবছি ভুল মানুষের হতেই পারে,আর তাই ভুল গুলো শুদ্ধি করতে আপনাকে সময় দিতে আমি এসেছিলাম কিন্তু আপনি বা আপনার পরিবার এর কেউ কিন্তু ভুল গুলো ঠিক করে বলেননি যে আমরা ভুল করেছি।মেয়ে শিক্ষিত হলেই খারাপ হবে আর অশিক্ষিত হলেই ভালো হবে তাও কিন্তু আমি বলিনি। আপনাদের পরিবার এ কেউ যদি পড়ালেখা না করে আপনারা কি তাকে বাসায় থাকার যোগ্য মনে করবেন না??
শুভ আপনি এইটা কবে বুঝবেন যে সুখী হতে হলে সম্পর্কে বুঝাপড়া লাগে আর যেটা আপনি আর মিলির মাঝে ছিলো।
ডিভোর্স লাগবেনা মিলি কে আমরা নিয়ে আসবো এইটা তো কেউ বলেনি।
শুভ আপনার এত্ত ইগো?
আমি তো কি আমার বোনকে ও আর কখনো আপনাদের বাসায় আসতে দিবো না।
আপনারা ভালো থাকেন।
চলবে
#ইংলিশ_টিচার
পর্ব -১০
সুমনা হক
আজ মিলির এইচএসসি পরীক্ষা আর সকাল থেকে মিলি টেনশন এ আছে কি যে হবে তার পরীক্ষার।
এত্তদিন ক্লাস করা হয়নি বাসায় যা পড়াশুনা করেছে তাই যা।
রিমি মিলিকে বলছে
-পরীক্ষার হলে একদম নার্ভাস হবি না।আর কোনো ব্যপারে টেনশন নিবি না।যা হবার তাই হয়েছে আর তো তাই হবে।
-আপু টেনশন এর কিছু নেই আমি জানি কি করতে হবে আমাকে।
-হ্যাঁ তা তো জানি,আমি তোকে অনেক ভরসা করি রে বোন।শোন আমি কিন্তু আজ পরীক্ষার হলে নিয়ে যাবো, একা দিবো না যেতে।
-আপু তোমার যেতে হবে না আমি পারবো একাই যেতে।
-তুই শিওর?
-আরে হ্যা আপু ব্যাপার না।তোমাদের মিলি হলো বিচ্ছু মেয়ে সো নো টেনশন।
সকাল ৯ টা বেজে গেলো মিলি পরীক্ষার হলের সামনে।
মিলির সিট পড়েছে তাদের বাসা থেকে একটু দূরের কলেজে আর আজ প্রথম পরীক্ষা তাই একটু আগেই চলে আসলো মিলি।
কলেজ ড্রেস পড়া এই মিল যেন সেই বাচ্চা পাগলি মিলি।মিলি কলেজ এর গেইট এর সামনে দাঁড়িয়ে সিট প্লেন দেখছে আর ঠিক তখনি কেউ একজন মিলির হাত টা টেনে ধরে সামনে দিকে হাটা দিচ্ছে।
মিলি ভয় পেয়ে চিৎকার করছে আর বলছে “আরে কি করছেন, হাত ছাড়েন বলছি।কি হলো হাত ছাড়েন বলছি।”
লোকটা মিলির হাত ছেড়ে দিয়ে বলে
-এত্ত ভয়!
-স্যার আপনি? কি হয়েছে?
শুভ বললো
-সেটা তো তোমার জানার কথা।সেদিন এভাবে চলে গেলে কেন?
-এমনি।
-এমনি মানে?
-এমনি মানে এমনি।
-মিলি আসলে আমি তোমাকে
-হ্যাঁ আসলে আপনি আমাকে কি?
শুভ ঘড়ির দিকে চেয়ে দেখে সাড়ে ৯ টা বেজে গেছে।
-আচ্ছা আজ থাক পরীক্ষা দাও। পরেরদিন বলবো। তোমার সিট পরেছে দুই তালার ৬ নাম্বার রুমে।আর হ্যাঁ তোমার নতুন ফোন নাম্বার টা দাও তো।
-আমি ফোন ইউজ করি না।আপুর ফোনে কল দিতে পারেন অনেক প্রয়োজন হলে।
-ধুর! রিমিকে কল দিতে হবে থাক কল দিতে হবে না।আচ্ছা আজ পরীক্ষার সময় হয়ে গেছে পরীক্ষা দিয়ে আসো।দেখা হচ্ছে আগামীকাল।
ঠিক তারপর দিন মিলির সাথে শুভ দেখা করে।
মিলি শুভকে বলে
-স্যার আপনি কিছু বলতেন, ভুলে গেছেন?
-না, ভুলবো কেন?
-তাহলে বলেন?
-আসলে আমি এসেছিলাম
-জ্বী।
-মিলি আসলে আমি তোমাকে সরি বলতে চাই।
-তো বাধা কে দিচ্ছে?
-না মানে তোমার ও মনে হয় আমার সরি বলা উচিত?
-সেটা তো জানিনা।
আচ্ছা মিলি আমি না পারিনা কাউকে সরি বলতে,তুমি বুঝতেছো তো?
-জ্বী।
-তাহলে কিছু বলো না কেন??
-বলার কিছু তো নেই।আচ্ছা স্যার এসব থাক। স্যার আমাদের জন্য দোয়া করবেন যেন আপনার মান সম্মান রাখতে পারি।আসলে আপনাকে আমি ডিভোর্স দিয়েছি এটা তো আর কলেজ এর কেউ জানেনা তাই আমি রেজাল্ট খারাপ করলে সবাই আপনাকেই খারাপ বলবে।
স্যার পরীক্ষা শুরু হয়ে যাবে, আমি যাচ্ছি।আর প্লিজ এভাবে আর আসবেন না। আমার ক্লাসমেট গুলো হাসাহাসি করে।
-মিলি তোমার সাইন করা ডিভোর্স লেটার এ আমি সাইন করিনি।
মিলি কিছু না বলে চলে গেলো, এমন ভাব করলো মনে হলো কিছুই শুনতে পায়নি।
হয়তো এবার ও কিছু বলতে চাচ্ছিলো কিন্তু বলা আর হয়ে উঠেনি মিলির ঠিক এর আগের বারের মতো।
মিলি শুভকে আসতে মানা করেছিলো তাই আজ আর শুভ আসেনি মিলির পরীক্ষার হলের কাছে।শুভর হচ্ছে এই এক ইগো।
শুভর অনেকবার ইচ্ছে হচ্ছিলো যাবে মিলির কাছে কিন্তু শুভর সেই ইগোর জন্য আর যাওয়া হয়নি।
মিলির পরীক্ষা শেষ হয়ে গেলো আর এদিকে শুভর কাজের চাপ ও বাড়তে লাগলো। নতুন ক্লাস নতুন ছাত্র ছাত্রী, কিন্তু দিন শেষে বাসায় গিয়ে সে একজন কে প্রচণ্ড মিস করে।আর সে একজন হলো মিলি।
শুভ চিন্তা করতো এই মিলি যে কিনা সারাদিন তার পিছনে লেগে থাকতো, হয় ক্লাসে নয়তো ফেইসবুক এ আর না হয় ফোনে। আর আজ সে মিলি কতদিন হলো একটিবার খবর ও নিলো না।
শুভর মিলির প্রতি প্রচণ্ড রাগ হচ্ছে কিন্তু আজ আর সেই রাগ করে থাকতে পাচ্ছেনা শুভ, মিনিটের মধ্যেই কেমন মিলির প্রতি ভালোলাগা কাজ করছে।
শুভ যতই ভাবছে মিলিকে মনে করবেনা ততই যেন মিলিকে শুভ মনে পড়ছিলো।মিলির জ্বালানো মিলির রাগানো, মিলির পাগলামো সব কিছুতে কেমন জানি ভালোলাগা কাজ করছিলো শুভর।
এদিকে অনেকবার শুভর মা শুভকে বলছিলো ডিভোর্স দিয়ে দিতে আর শুভর বাবা এই বিষয়ে কথাবার্তা তেমন বলতো না।শুভ তার মাকে জানিয়ে দেয় বিয়ে সে একটাই করেছে আর একটাই হবে শেষ বিয়ে আর কোনো বিয়ে সে করবেনা।
আজ মিলির পরীক্ষার রেজাল্ট তাই শুভর অনেক টেনশন হচ্ছে,টেনশন পাশ বা ফেইল নিয়ে না টেনশন হচ্ছে আজ শুভ মিলির বাসায় যাবে আর নিজের সব ইগো বাদ দিয়ে সরি বলবে।
ঘুম থেকে উঠেই শুভ ভাবছে আজ কতদিন পর মিলির সাথে দেখা হবে।কি পড়ে যাবে সেটা বিছানাতে থেকেই ভাবছে, শেষমেশ অনেক ভেবে সাদা একটা শার্ট আর কালো একটা জিন্স পড়ার সিদ্ধান্ত নিলো। বিছানা থেকে উঠে শুভ গোসল করে খাবার না খেয়েই বেড়িয়ে পরে।দোকানে গিয়ে একটা সাদা গোলাপ নিলো কিনে।
গোলাপ টা পকেট এ রেখে চকলেট কিনতে আরেকটা দোকানে যায় সেখান থেকে অনেকগুলো বিভিন্ন ফ্লেবার এর চকলেট কিনে চলে গেলো কলেজে।
শুভ এই কয় দিনে নিজের ইগোর সাথে যুদ্ধ করে জয় পেলো। শুভর মানুষ প্রথমবার প্রেমে পড়লে যেমন হয় ঠিক তেমন লাগছিলো।আজ শুভ ঠিক করেছে মিলি সব বিষয়ে ফেইল করলে মিলির বাসায় গিয়ে তাকে বকা দিবে না।উলটা মিলিকে গিয়ে সেই রাতের জন্য কানে ধরে সরি বলবে।
তারিমধ্যে শুভর হাতে রেজাল্ট চলে আসলো আর সে একটা উঁচু গাছ থেকে পরলো এমন মনে হচ্ছিলো।
শুভর কলিগরা সবাই বলা বলি করছিলো
-শুভ এই ফেইল করা স্টুডেন্ট কে কিভাবে প্লাস পাওয়া স্টুডেন্ট বানালো?
শুভ এটা শুনেই বলে উঠলো
-কই আমি তো কিছু করিনি। মিলি তার নিজ যোগ্যতাবলে প্লাস পেয়েছে, আমি তাকে পড়াশুনাতে সাহায্য করিনি ।
-শুভ মিলি না থাকলে আজ আমাদের কলেজ এর কিন্তু অনেক সমস্যা হতো,আর কিন্তু কেউ এত্ত ভালো রেজাল্ট করেনি।
শুভ হাসি দিয়ে একটা সজোরে নিশ্বাস নিলো।নিশ্বাস নেওয়ার কারণ টা যদিও কলিগদের কাছে অজানা।
শুভ আর কিছু না বলে মিলির বাসায় আসার জন্য রওনা দিয়ে দিলো আর শুভর পকেটে সেই সাদা গোলাপটার দিকে তাকাচ্ছিলো।
চলবে,,