#গল্পঃ_ইচ্ছেটা_তোমারই
#লেখাঃ_মেহেদী_হাসান_রিয়াত
#পর্বঃ__৬
🌹
গাড়ি থেকে নেমে দ্রুত পায়ে ঘরে চলে আসে আকাশ। আখি ধিরে ধিরে ঘরের দিকে আসছে। আকাশের অবাধ্য হলেও ঘরে আসতে কেমন একটা নার্ভাস ফিল করছে সে।
আকাশকে একা ঘরে আসতে দেখে আসিফ চৌধুরি বলে উঠে,
— আকাশ তুই এসেছিস? আখিকে একটা ফোন দিয়ে দেখতো কোথায় আছে? বললো বান্ধবিদের সাথে দেখা করতে গেছে, কিন্তু এখনো আসেনি। কোনো সমস্যা হলোনা তো আবার?
আকাশ টেবিলে হাত বারিয়ে পানির গ্লাসটা হাতে নিয়ে বলে উঠে,
— ফোন করতে হবেনা বাবা, ও এসে গেছে।
— কোথায়?
— ওইতো মহারানি। (আখি ঘরে প্রবেশ করতেই তার দিকে তাকিয়ে কথাটা বলে উঠে আকাশ)
— কিরে মা এতো দেরি হলো যে?
— পাস থেকে আকাশ বলে উঠে, ও এতোক্ষন আমার সাথেই ছিলো বাবা, আসার পথে একটা সমস্যা হয়েছিলো তাই।
— সমস্যা? কি সমস্যা?
— না বাবা, মাঝ পথে কিছু ছিনতাই কারির কবলে পরেছিলাম।
— ছিনতাই কারি? তোদের কিছু হয়নিতো? তোরা ঠিক আছিসতো?
— হ্যা বাবা, ফোনটা আর কিছু টাকা নিয়ে গেছে এই আরকি। পাতি বেসি বড় ছিনতাইকারি নয়।
— তোদের কিছু হয়নি এটাই অনেক। যা তোরা ফ্রেস হয়ে আয় সবাই মিলে একসাথে খেতে বসি।
,
,
,
রাতের খাবার শেষে ঘুমুনোর প্রস্তুতি নিচ্ছে আখি। দুই পা ফ্লোড়ে ছারিয়ে সোফায় বসে আছে আকাশ। আখি একটু একটু আড় চোখে তাকাচ্ছে আকাশের দিকে।
আকাশ আখিকে ডেকে নিজের পাসে এসে বসায়। আখিও আজ কোনো জেদ না করেই আকাশের পাসে এসে বসে।
— আখি একটা কথা বলোতো, আমাকে কি তোমার বিশ্বাস হয়? মানপ হলো, তুমি কি আমাকে বিশ্বাস করতে পারো?
— মাথাটা নারিয়ে হ্যা সুচক জবাব দিলো আখি।
— আমি তোমাকে কথা দিয়েছি সব কিছু তোমার ইচ্ছেতেই হবে। হ্যা তোমার ইচ্ছাই হচ্ছে সবকিছু। আজ যা হয়েছে সব কিছুই হয়েছে তোমার ইচ্ছার কারনেই। তোমাকে আমি কতো বুঝানোর চেষ্টা করেছি যে রাফিন ভালো ছেলে না। কিন্তু তুমি?
— আফসোস, মুখ দেখে ভালোমন্দ বিচার করা যায়না। যদি যানতাম রাফিনের চরিত্র এতোটা নোংড়া তাহলে কখনোই,,,,,( এটা বলেই কেদে উঠে আখি) রাফিন আমায় ঠকিয়েছে। ও একটা খারাপ লোক, পতারক, সুজুগবাজ।
— এই একধম কাদবেনা বলে দিচ্ছি আমার দিকে তাকাও।
আখি মুখ তুলে তাকায় আকাশের দিকে।
— চোখের পানি মুছে নাও।
আকাশ এমন ভাবে বলছে যেনো সে কোনো বাচ্চার কান্না থামাচ্ছে।
— আমাকে তুমি স্বামী ভাবোনা এটা কোনো ব্যাপারনা। আমিও তোমাকে স্ত্রী ভাবিনা। কিন্তু আমরা চাইলে বন্ধু হতে পারি। খুব ভালো বন্ধু, নিজের বন্ধু ভাবতে পারো আমাকে। নিস্বার্থ বন্ধু। যে কোনো স্বার্থ ছারাই তোমার পাসে থাকবে। বিপদে নিজের জান দিয়প হলেও তোমায় বাচিয়ে নিবে। হবে আমার বন্ধু?
আখি এবার চোখের পানি মুছে মা নারিয়ে হ্যা সুচক জবাব দেয়।
আকাশ একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলে,
— যাও ঘুমিয়ে পর বন্ধু।
______________________________
সকালে কিচেনে নাস্তা তৈরি করছে আখি। তাকে সব শিখিয়ে দিচ্ছে আকাশ। আকাশের কাছে রান্না শিখতে ভালোই লাগছে আখির।
দুপুরের সময়ও রান্না করছে আখি আর তাকে শিখিয়ে দিচ্ছে আকাশ।
হটাৎই আও করে একটা শব্দ করে উঠে আখি। হাত কেটে ফেলেছে সে। আকাশ আঙুলটা মুখে নিয়ে রক্ত বন্ধ করার চেষ্টা করছে।
— দেখে শুনে কাজ করবেনা একটু। প্রথম দিনই এই অবস্থা? চলো রুমে চলো আর রান্না করতে হবেনা তোমাকে।
_________________________________
অনেক দিন কেটে গেলো আকাশের বাড়িতে। রুমে বসে আছে আখি। এমন সময় ফোনটা বেজে উঠে তার।
হাতে নিয়ে দেখে ফোনের স্কিনে ভেসে উঠলো মায়ের নামটা।
মায়ের সাথে কিছুক্ষন কথা বললো আখি। অনেকদিন হলো মাকে দেখেনি সে। মা বললো দু,দিনের জন্য ঘুরে আসতে সেখান থেকে।
রাখের বেলায় খাবার টেবিলে বসে খাবার খাচ্ছে সকলে।
আকাশ বাবাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে,
— বাবা, একটা কথা বলবো?
— বল।
— আখিতো অনেকদিন ধরে অভিমান করে মায়ের বাসায় যায়নি। মাকেও অনেকদিন দেখেনি সে। এখন মা নিজেই বলছে দু,দিন ঘুরে আসতে তার বাড়ি থেকে।
— ভালোই তো, কাল যা তাহলে।
— আমি যাবোনা বাবা শুধু আখিই যাবে।
— তুই যাবিনা কেনো?
— আমি গিয়ে তাকে দিয়ে আসবো।
________________________________
পরদিন বিকেলে আখি রওনা দিলো আকাশের সাথে। গাড়ি ব্রেক কষলো আখির বাড়ির সামনে এসেই। গাড়িতেকে নেমে আখি পা বাড়ালো বাড়ির দিকে। পেছন ফিরে হাত নারিয়ে একটা মুচকি হাসি দিলো আকাশের দিকে চেয়ে। গাড়ি নিয়ে সেখান থেকে চলে গেলো আকাশ। ব্যাপারটা উপর থেকে লক্ষ করছে আখির মা।
ভেতরে গিয়ে মাকে দেখেই জড়িয়ে ধরে আখি। অনিচ্ছার শর্তেও অনেক দিন মাকে ছেরে থাকতে হয়েছে তাকে।
মায়ের কাছে দুদিন খুব হাসিখুশি ভাবেই থাকে সে। সোফায় বসে কফির মগ হাতে নিয়ে গল্প করছে মা মেয়ে দুজন।
— আখি সত্যি করে একটা কথা বলবি?
— হ্যা মা বলো।
— তুই কি আকাশের কোনো দুর্বলতা অনুভব করছিস?
— না মা, এই ব্যাপারে কোনো নিশ্চয়তা দিতে পারবোনা।
— যাই হোক, যেই ছেলে আমাকে বন্ধি করে তোকে জোর করে বিয়ে করতে পারে। তাকে আমি কিছুতেই আমার মেয়ের স্বামী বলে স্বীকৃতি দিতে পারবোনা। তোদের ডিবোর্সটা হয়ে গেলে, আমি আমার পছন্দ মতো ছেলপর সাথে তোর বিয়ে দিবো। এটা মনে রাখিস আকাশের প্রতি যেনো তোর কোনো দুর্বলতা না আসে।
মাথা নিচু করে হ্যা সূচক জবাব দিলো আখি।
মায়ের বাসায় কয়েকদিন থেকে সেখান আবার ফিরে যাচ্ছে আখি। আকাশ গাড়ি নিয়ে ওয়েট করছে গেটের বাইরে।
গাড়ি চলছে আপন গতিতে, আখি ভাবনার সগরে ডুবে আছে। মা বলেছে আকাশকে সে মেনে নিতে পারবেনা। আর মাত্র অল্পকিছুদন হয়তো আকাশের বাড়িতে আমার ঠাই। এরপর বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবো দুজন। ভাবতে ভাবতে কখন বাড়ি পৌছে গেছে বুঝতেও পারেনি আখি।
বাড়িতে প্রবেশ করতেই আসিফ সাহেবের মুখে স্পস্ট হাসি দেখতে পায় আখি। এটাও যেনো একটা মায়া লাগানোর মতো হাসি। কিন্তু এই মায়াতে নিজেকে না আটকানোটাই ভালো। পরে ছেরে যেতে আবার কষ্ট হবে।
To be continue…………