ইট পাটকেল পর্ব -১১+১২

#ইট_পাটকেল
#সানজিদা_বিনতে_সফি
#পর্ব_১১

আশমিন নূরের কেবিনে আয়েশ করে পায়ের উপর পা তুলে বসে আছে। শুভ্র পাঞ্জাবি পাজামায় অসাধারণ লাগছে তাকে।চোখে মুখে একটা নেতা নেতা ভাব আছে।নূর তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আশমিনের দিকে। আশমিন কফি খাচ্ছে আর একটু পর পর নূরের দিকে তাকিয়ে শয়তানি হাসি দিচ্ছে। নূর বিরক্তি তে মুখ কুচকে ফেললো।

— কোন ইমপোর্টেন্ট কথা না থাকলে আপনি আসতে পারেন। আমি এখন বিজি আছি।

— আমিও বিজি।

আশমিনের গম্ভীর গলায় ফালতু কথা শুনে কপালের ভাজ ভারী হলো নূরের।মনে মনে পেপার ওয়েট ছুড়ে মাথা ফাটাতে ইচ্ছে হলেও মুখে কিছু বললো না। আশমিন কে সম্পুর্ন উপেক্ষা করে নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে গেলো।

এদিকে সানভি কেবিনের বাইরে পায়চারি করে যাচ্ছে অনবরত। আগামি বিশ মিনিট পর মন্ত্রীসভায় গুরুত্বপূর্ণ মিটিং আছে। এখন বের হলেও আধঘন্টা লেটে পৌছাবে তারা।কিন্তু আশমিনের কোন হেলদোল নেই।সে বউয়ের কেবিনে ঢুকে ঘাপটি মেরে বসে আছে। সানভি কিছুক্ষণ নিজের চুল টানাটানি করে নূরের কেবিনে নক করলো,

— মে আই কামিং ম্যাম?

— ইউ আর নট।

আশমিনের কাটকাট উত্তরে সানভির চিন্তায় জর্জরিত মুখটা ভোতা হয়ে গেলো। মুখ কালো করে দরজায় ইদুরের মতো মাথা ঢুকিয়ে মিনমিন করে বললো,

— আপনার মিটিং আছে স্যার। আমরা অলরেডি লেট হয়ে গেছি।

নূর সেদিকে পাত্তা দিয়ে একমনে ল্যাপটপে কাজ করে যাচ্ছে।যেন কেবিনে সে ছাড়া আর কেউ নেই। আশমিন সেদিকে তাকিয়ে বাকা হাসলো। সানভির গুরুত্বপূর্ণ কথা হাওয়ায় উড়িয়ে দিয়ে গম্ভীর গলায় বলল,

–বুঝলে সান! কোম্পানি তে আমার আর কোন কাজ নেই।তাই ওসব মিটিং ফিটিং বাদ দাও। পাচ বছর হচ্ছে বিয়ে করছি।এখনো বাসর করতে পারলাম না।জনগণ এটা মেনে নিবে না।বলবে,যে মন্ত্রী পাচ বছরে বউয়ের সাথে বাসর করতে পারলো না সে আর আমাদের কি উন্নয়ন করবে?আমি এটা কিছুতেই মেনে নিবো না। আজকেই বাসরের ব্যবস্থা করো।আমি বাসর না করে আর কোন কাজ করবো না। বেলি ফুল দিয়ে আমার রুমটা সাজিয়ে ফেলো

নূর আর সানভি হা করে তাকিয়ে আছে আশমিনের দিকে। সানভি অর্ধেক মাথা আর বাইরে নেয়া হলো না। ভয়ার্ত চোখে নূরের দিকে তাকালো। নূর নিজের হতভম্ভতা কাটিয়ে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসলো। একটা লোক কতটা নির্লজ্জ হতে পারে তা আশমিন কে না দেখলে সে বুঝতেই পারতো না। নেতারা যে নির্লজ্জ হয় তার,জলন্ত প্রমাণ আশমিন নিজেই।

আশমিন শয়তানি চোখে তাকিয়ে আছে নূরের দিকে।এখন আশমিনের একমাত্র কাজ হচ্ছে নূর কে ভরকে দেয়া।যা এই মুহুর্তে খুব বেশি জরুরি। আশমিনের চিন্তা কে এক সাগর পানিতে ছুড়ে ফেলে নির্লিপ্ত গলায় বলল,

— দাঁড়িয়ে কি দেখছো সানভি। তোমার স্যারের আদেশ পালন করো।

সানভির চোখ রসগোল্লার আকার ধারণ করলো। আশমিন নিজেও কিছুটা চমকে গেলেও তা প্রকাশ করলো না।সানভি কে ইশারা করতেই সানভি যন্ত্রের মতো মাথা নাড়িয়ে চলে গেলো। নূর এখনো হেলান দিয়ে আশমিনের দিকে তাকিয়ে।

— এতো দিনের অপেক্ষা তাহলে শেষ হবে?

— আপনার কি তাই মনে হয়?(ভ্রু উঁচু করে)

আশমিন বাকা হেসে টেবিলে দু হাত রেখে নূরের দিকে হালকা ঝুকে বললো,

— স্বপ্ন বাস্তব করা আশমিন জায়িন চৌধুরীর এক প্রকার নেশা।আর তা যদি হয় নিজের বউ কে ভালবাসার তাহলে তো কথাই নেই।

— তো বাসর করা আপনার নেশা?

— উহু।এক সাথে দুই বাচ্চার বাবা হওয়ার নেশা চেপেছে।বউ পালিয়ে না গেলে এতো দিনে তো দুই বাচ্চার বাপ হয়ে যেতাম।তাই চিন্তা করেছি আল্লাহ চাইলে একসাথে দুই বাচ্চার বাবা হয়ে যাবো।

নূর ক্রুর হাসলো। ব্যঙ্গাত্মক গলায় বলল,

— বউ কে নিজের কাছে রাখতে পারেন না কেমন বর আপনি? যে নিজের বউয়ের সম্মান রক্ষা করতে পারে না সে দেশের জনগণ কে কিভাবে রক্ষা করবে বলুন তো মন্ত্রী সাহেব! আর কার সাথে বাসর,বাচ্চা জন্ম দেয়ার চিন্তা করছেন বলুন তো!যে কিনা নিজের ক্যারিয়ারের জন্য বাবার মৃ*ত্যু কেও পরোয়া করে নি তার সাথে?হাসালেন মন্ত্রী সাহেব। আপনার তো ভয় পাওয়ার কথা। দেখা গেলো নিজের ক্যারিয়ারের জন্য আপনি আর আপনার বাচ্চা ফেলেই চলে গেলো। তখন কি হবে!

নূরের তীক্ষ্ণ খোচা টা একেবারে ঠিক জায়গায় গিয়ে লেগেছে।চোখ মুখ শক্ত করে ফেলেছে আশমিন। রক্তিম চোখে নূরের দিকে তাকিয়ে দাতে দাত চেপে বললো,

— সব সময় তাকে যে ছাড় দেয়া হবে তা ভাবার কারন কি মিসেস আশমিন?

আশমিনের মুখে মিসেস আশমিন শুনে চমকে উঠলো নূর। আশমিনের চোখের দিকে তাকিয়ে হালকা ভরকে গেলেও নিজেকে সামলে নিলো সে। আশমিন চোখ বন্ধ করে নিজের রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করলো। জোরে জোরে নিশ্বাস ফেলে নূরের দিকে শান্ত চোখে তাকালো। অনেকটা উদাস গলায় বলল,

— আমি যা জানি তুমি তা জানো না নূর।যাই করো না কেন ভেবে চিনতে করবে।আমি চাই না তুমি কখনো আমার সামনে দাড়িয়ে লজ্জিত বোধ করো।

নূর অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো আশমিনের দিকে। আশমিনের গলাটা খুব অন্যরকম শোনালো। কি এমন কথা আছে যে সে জানে না?চিন্তায় কপালে ভাজ পড়লো নূরের।আশমিন নিজের চেয়ার থেকে উঠে এসে নূরের সামনে দাড়ালো। হালকা ঝুকে নূরের কপালে চুমু খেয়ে ফিসফিস করে বললো,

— বি রেডি ফর টু-নাইট।

কথা শেষ হতেই বাকা হেসে বেরিয়ে গেলো কেবিন থেকে।নূর দাতে দাত চাপলো। হিসহিসিয়ে বললো,

— আপনি ও রেডি থাকবেন মন্ত্রী সাহেব।

কামিনী চৌধুরী নিজের কেবিনে এদিক সেদিক পায়চারি করছে। সারে তিন’শ কোটি টাকার হিসেব গোলমাল।এই টাকা সে নিজেই সরিয়েছে। কানাডায় নিজের জন্য বাড়ি করেছে দুটো। বাকি টাকা নিজের বেপরোয়া জীবন যাপনে খরচ করেছে।তার ধারণা মতে আশমিন বা আমজাদ চৌধুরী কেউই জানে না এ সম্পর্কে। কিন্তু আশমিন আগাগোড়া সবটাই জানে।সে শুধু চুপ করে আছে নূরের জন্য। তার কথা হচ্ছে,

— যার সম্পদ সে নিজেই সব কিছু বুঝে নিবে।নিজের খাবার অন্যের পেট থেকে কিভাবে গলায় পাড়া দিয়ে বের করতে হয় তা নূর খুব ভালো করেই জানে। এখন শুধু দেখার অপেক্ষা কখন কিভাবে গলায় নিজের পা চেপে ধরে নূর।

কামিনী চৌধুরী পাগলের মতো কয়েক জায়গায় কল করলো। আশানুরূপ কোন ফল না পেয়ে ফোর ছুড়ে মারলো দেয়ালে। হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে নিজের চুল টানতে লাগলো।

ল্যাপটপের স্ক্রিনে কামিনী চৌধুরীর বেহাল দশা দেখে উচ্চস্বরে হেসে উঠলো নূর। মুখ দিয়ে চুক চুক শব্দ করে বেরিয়ে গেলো বাসার উদ্দেশ্যে। বাসায় গিয়ে আবার বউ সাজতে হবে।আশমিন জায়িন চৌধুরীর বউ!

আশমিন নূরের অফিস থেকে বেরিয়ে মন্ত্রণালয়ে চলে গিয়েছিল। মিটিং সে নিজেই দুই ঘন্টা পিছিয়ে দিয়েছিল।সারাদিন নিজের অফিসে ব্যস্ত ছিল সে।এদিকে তার কথা মতো সানভি সত্যি সত্যিই বাসর সাজিয়ে বসে থাকবে তার ধারণা তেও ছিল না তা।

রাত দশটায় নিজের বিশাল গাড়ি বহর নিয়ে নূর মঞ্জিলে প্রবেশ করলো আশমিন।দেহরক্ষীরা বের হয়ে তার গাড়ি ঘিরে দাড়াতেই বেরিয়ে এলো আশমিন। প্রচন্ড গরমে আর ক্লান্তিতে শরীর ভেঙ্গে আসতে চাইছে।এসি গাড়িতে থাকা সত্ত্বেও ঘামে সাদা পাঞ্জাবি ভিজে গায়ের সাথে লেগে আছে। বাড়িতে ঢুকতেই ভ্রু কুচকে ফেললো আশমিন।চারিদিক ফুলের গন্ধে মো মো করছে।মাথায় হালকা চাপ দিতেই মনে পরলো সকালের কথা। বিরক্তি তে মুখ থেকে ‘চ’ উচ্চারণ করে নিজের রুমের দিকে এগিয়ে গেলো আশমিন। নূর নিশ্চয়ই এসব নিয়ে কোন মাথা ঘামায় নি।

রুমে ঢুকে আরেকদফা চমকে গেলো আশমিন। নূর বউ সেজে দাড়িয়ে আছে। তার দিকে তাকিয়েই বাকা হাসছে।সারা রুম যেন ফুল দিয়ে ঢেকে ফেলেছে।এতো বেলি ফুল কোথা থেকে জোগাড় করলো তা ও চিন্তার বিষয়!

— ফ্রেশ হয়ে আসুন মন্ত্রী সাহেব।

নূরের কথায় ঘোর ভাঙ্গলো আশমিনের। কথা না বাড়িয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো ফ্রেশ হতে।এদিকে ঘাট বরাবর রাখা ইজি চেয়ারে বসে পরলো নূর।মুখে বাকা হাসি বিদ্যমান।

দশ মিনিটের মাথায় শাওয়ার নিয়ে বেরিয়ে এলো আশমিন। নূর কিছু একটা নাড়াচাড়া করছে নিজের হাতে।আশমিন টাউজার আর সাদা শার্ট পরেছে।বুকের কাছের কয়েকটা বোতাম খোলা। অসম্ভব সুন্দর লাগছে তাকে।এদিকে নূর কে দেখে বারবার ঢোক গিলছে আশমিন। আজকে সে বাসর করতে চায় না।এমন জ্বালাময়ী রুপের সাথে বাসর করা মোটেও ভাল সিদ্ধান্ত নয়।আশমিন কিছু একটা ভেবে নূরের দিকে এগিয়ে যেতেই নূর নিজের হাতের লাইটার টা বিছানায় ছুড়ে মারলো। সাথে সাথে দাউ দাউ করে আ*গুন জ্বলে উঠলো ফুল সজ্জিত খাট টিতে।আশমিন পকেটে হাত গুজে দাঁড়িয়ে এক ধ্যানে তাকিয়ে রইলো সেই আগু*নের দিকে।

নূর বাকা হেসে ব্যঙ্গাত্মক গলায় বলল,

— আপনার বাসর এই আগু*নের মতো উজ্জ্বল হোক মন্ত্রী সাহেব।

আশমিন দু কদম এগিয়ে একটা সুইচ টিপতেই উপর থেকে পানি পরতে লাগলো। আশমিন আর নূর মুহুর্তেই কাক ভেজা হয়ে গেলো। নূর কটমট চোখে তাকিয়ে আছে আশমিনের দিকে। আশমিন মাথার চুল গুলো উল্টে নূরের কাছে গিয়ে কোমড় আকরে ধরে দাড়ালো। ঠোঁট জোড়া নূরের কাধে চেপে গুন গুন করে গাইতে লাগলো,,

— আগুনের দেখেছো কি, আগুন হয়ে জ্বলছি আমি।
তুমি যাকে আগুন বলো আমি তাকে বলি পানি।

চলবে,,

(দেড়ি হওয়ার জন্য দুঃখিত। ১০২°জ্বর এখনো। কাল থেকে নিয়মিত পাবেন ইনশাআল্লাহ ।ভালোবাসা সবাইকে।)#ইট_পাটকেল
#সানজিদা_বিনতে_সফি
#পর্ব_১২

অন্ধকার কোন ঘর থেকে কারো বিভৎস চিৎকার ভেসে আসছে। মস্তবড় এক গুদাম ঘরের বিলাসবহুল এক রুমে বসে আছে আশমিন। তার পাশের ই কোন রুম থেকে কারোর আর্তনাদ ভেসে আসছে। সোফায় বসে হাটুতে দুই হাত ভর দিয়ে পা নাচিয়ে যাচ্ছে আশমিন। সানভি ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে আছে আশমিনের দিকে। লোকটার আর্তনাদ শুনে তার নিজের ই বুক কাপছে।অথচ আশমিন গুন গুন করে গান গেয়ে যাচ্ছে।
হঠাৎ করেই সোজা হয়ে বসলো আশমিন। পাঞ্জাবির পকেট থেকে ফোন বের করে কিছু দেখায় ব্যস্ত হয়ে গেলো। সানভি বার কয়েক ঢোক গিলে শুকনো গলা ভিজিয়ে নিলো।আশমিনের দিকে তাকিয়ে মিনমিনে গলায় বলল,

— আর কিছুক্ষণ এভাবে চললে লোকটা ম*রে যাবে স্যার।

— তাহলে তোমার কপালে দুঃখ আছে সান।ম*রতে পারবে না ও। মা*রতে থাকো। অবস্থা খারাপ হলে ডাক্তার দেখাও।সুস্থ করে আবার মা*রো। যতক্ষণ মুখ না খুলছে এভাবে চলতে থাকবে।

সানভি হন্তদন্ত পায়ে চলে গেলো ডাক্তার ডাকতে। মিনিট দশেক পর ডাক্তার নিয়ে একটা অন্ধকার নোংরা রুমে প্রবেশ করলো সানভি।একটা মাঝবয়েসী লোককে উল্টো ঝু*লিয়ে রাখা হয়েছে। নাক মুখ দেখে চেনার উপায় নেই। আশমিনের নির্দয় লোক গুলো সারা মুখ থেত*লে দিয়েছে। দাত পরে গেছে কয়েকটা। ডাক্তার নিজেও শিউরে উঠল।এভাবে কেউ কাউকে মা*রে!কিন্তু মুখে কিছু বলার সাহস পেলো না।

— এভাবেঝুলিয়ে রাখলে ট্রিটমেন্ট করবো কিভাবে?নামিয়ে শুয়িয়ে দিন প্লিজ।

সানভির কপালে চিকন ঘামের দেখা দিলো।কাপা কাপা চোখে রুমে সেট করা সিসিটিভি ক্যামেরার দিকে তাকালো। শুকনো ঢোক গিলে কাপা কাপা গলায় বলল,

— যা করার এভাবেই করুন।নিচে নামানো যাবে না।

ডাক্তার আর কিছু না বলেই নিজের কাজ করতে লাগলো। সে জানে যে বলেও কোন কাজ হবে না। র*ক্ত পরিস্কার করে ব্যন্ডেজ করে দিলো সে।ব্যথা নাশক ইঞ্জেকশন দিয়ে বেরিয়ে গেল রুম থেকে।লোকটার কোন হুশ নেই।আশমিন তীক্ষ্ণ চোখে সবকিছু দেখে চলেছে। শত রেগে গেলে ও আশমিন নিজের চেহারায় তা কখনোই প্রকাশ করে না।নিজেকে সবসময় রাখে শান্ত। কিন্তু ইদানীং তার মেজাজ ঠিক রাখা মুশকিল হয়ে যাচ্ছে। নূর তো উঠে পরে লেগেছে তাকে ধ্বংস করতে। এই যে এখন ধৈর্য ধরে দু ঘন্টা যাবত তার রুম তল্লাশি করে চলেছে।ঠিক কি খুজছে তা আশমিন জানে। হাজার খুজলেও নূর কিছুই পাবে না আশমিন তা জানে।তবুও সে এক ধ্যানে নূরকেই দেখে যাচ্ছে। কাঙ্ক্ষিত জিনিস না পেয়ে নূর এখন রীতিমতো রাগে ফুসছে।আর নূরের রাগী ফেস দেখে মুচকি হাসছে আশমিন।সেই মুহুর্তে আবার সানভির আগমন।

— জ্ঞান ফিরেছে স্যার।

— যাও।আমি আসছি।

আশমিন নিজের শুভ্র পাঞ্জাবি বদলে একটা ক্যাজুয়াল শার্ট পরে সেই অন্ধকার রুমে ঢুকলো। লোকটা তাকে দেখে থরথর করে কাপছে। আশমিন ইশারা করতেই গার্ড গুলোর মধ্যে কয়েকজন এসে লোকটাকে নামিয়ে দিলো।আশমিনের সামনে রাখা একটা চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে আবার নিজেদের জায়গায় গিয়ে দাড়িয়ে গেলো।

আশিমিন লোকটার মুখোমুখি বসে শান্ত গলায় বললো,

— কেমন আছেন ড্রাইভার আংকেল?

আশমিনের ‘কেমন আছেন’শুনে ড্রাইভার মতিন মিয়া থরথর করে কাপতে লাগলো। মুখে কিছু না বলতে পারায় বার বার হাত জোর করে মাফ চাইতে লাগলো। আশমিন ঠোঁট বাকিয়ে হাসলো। চেয়ারের পিছনে মাথা এলিয়ে দিয়ে শান্ত গলায় বললো,

— দীর্ঘ বিশ বছর যাদের নুন খেয়েছেন তাদের সাথেই বেঈমানী করলেন আংকেল! ব্যাপার টা আমার একদম ই ভালো লাগে নি।

আশমিনের গলায় দুঃখী দুঃখী ভাব।সানভি পকেট থেকে টিস্যু বের করে কপালের ঘাম মুছে ফেললো। আশমিনের দুঃখী গলা শুনে ভীতু চোখে তাকালো আশমিনের দিকে।
আশমিন আফসোসের স্বরে বললো,

— আমার আপনাকে মা*রতে ইচ্ছে করছে না আংকেল। আর কয় বছর ই বা বাচবেন বলুন?এখন আর আপনাকে মে*রে লাভ কি!আমি বরং আপনারা দুই ছেলে কে মে*রে ফেলি।

লোকটা ভয়ার্ত চোখে তাকালো আশমিনের দিকে। অস্পষ্ট গলায় গুঙ্গিয়ে কিছু বলার চেষ্টা করলো বার বার। কিন্তু আশমিন সেই আকুতি শুনলো না।সে পায়ের উপর পা তুলে পা নাচিয়ে গার্ড কে ইশারা করলো। সাথে সাথে সেখানে বাইশ বছরের এক যুবক কে নিয়ে হাজির হলো গার্ড।ছেলেটার হাত পা বাধা।দেখেই বোঝা যাচ্ছে তাকে খুব টর্চার করা হয়েছে।মতিন মিয়া ছেলের এমন দুর্দশা দেখে ডুকরে কেঁদে উঠলো। এই ছেলেদের জন্য ই তো রাফসান শিকদারের মতো মানুষের সাথে বেঈমানী করেছে।তার পাপ আজ তাকে এনে এখানে দাড় করিয়েছে।

আশমিন রি*ভালভার হাতে নিয়ে ঘার কাত করে মতিন মিয়ার দিকে তাকালো। মতিন মিয়ার বড় ছেলে মারুফ ঘৃণা নিয়ে তাকিয়ে আছে নিজের বাবার দিকে।ছেলের দিকে চোখ তুলে তাকানোর সাহস নেই তার।

— আমার জন্য ঠান্ডা পানি নিয়ে এসো সান।গরমে গলা শুকিয়ে গেছে একেবারে।

শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে বললো আশমিন। দুটো বোতাম খুলে দিয়ে শার্ট কিছুটা এলিয়ে দিলো ঘাড়ের দিকে।সানভি ইশারা করতেই একজন এক বোতল ঠান্ডা মিনারেল ওয়াটার এনে দিলো আশমিনের হাতে।আশমিন দুই চুমুক দিয়ে মতিন মিয়ার কে শান্ত গলায় বললো,

— সে এখন কোথায় আছে আংকেল?

মতিন মিয়া অস্পষ্ট গলায় বলল,

— আমি সত্যিই জানি না সে এখন কোথায়।বিশ্বাস করুন বাবা।তবে সে দেশে নেই।

— কোন দেশে আছে।

— জানি না। তবে কিছু দিনের মধ্যেই সে দেশে ফিরবে।

— তার সাথে আর কে কে জড়িত?

আশমিন ঠান্ডা চোখে তাকিয়ে প্রশ্ন করতেই কেপে উঠলো মতিন মিয়া। চোরা চোখে এদিক ওদিক তাকিয়ে নিজের নজর লুকালো।আশমিন শক্ত গলায় বলল,

— এটাই আপনার শেষ সুযোগ।

মতিন মিয়া মাথা নিচু করে ফেললো। কাপা কাপা গলায় বলল,

— আপনি বিশ্বাস করবেন না।

— আপনি বলুন।

— আপ আপনার মা কামিনী চৌধুরী আর লারার বাবা।

চোখ বন্ধ করে ফেললো আশমিন। ব*ন্দুকের নল দিয়ে কপাল ঘষে চোখ বন্ধ করেই পর পর পাচ টা শু*ট করে দিলো মতিন মিয়ার বুকে।মারুফ ডুকরে কেদে উঠলো। ছোটার জন্য ছটফট করতে লাগলো বারবার। শত হোক,নিজের বাবা তো।তার এমন করুন মৃ*ত্যু কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না সে।আশমিন মারুফের সামনে গিয়ে হাটু মুরে বসলো।মারুফের মাথায় হাত বুলিয়ে শান্ত গলায় বললো,

— তোমার বাবা বিশ্বাসঘাতকতা করেছে মারুফ। তার জন্য ও কেউ তার বাবা কে হারিয়েছে। আমি বিশ্বাসঘাতক দের বাচিয়ে রাখি না মারুফ। তোমার পরিবার কে দূরে পাঠিয়ে দেয়া হবে। তোমরা এখানে নিরাপদ নও।আমি চাইলে তোমাদের সবাইকে মে*রে ফেলতে পারতাম।কারণ তোমার গায়ে ও বিশ্বাসঘাতকের রক্ত বইছে।কিন্তু আমি তা করবো না। সব মানুষ এক হয় না। যেমন বিশ্বাসঘাতকের সন্তান হয়েও আমি বিশ্বাস ঘাতক নই।কখনো আমাকে ভুল প্রমাণ করো না।

মারুফ অশ্রুসিক্ত চোখে তাকালো আশমিনের দিকে। ধরা গলায় বলল,

— আমি আপনাকে প্রমাণ করে দিবো আমি বাবার ছেলে হলেও বিশ্বাস ঘাতক নই।

আশমিন মলিন হাসলো। ধীর পায়ে বেরিয়ে এলো রুম থেকে। সানভি আশমিনের পিছু পিছু আসলো। আশমিনের মনের ভিতর যে তুফান চলছে তা সানভি কিছুটা হলেও বুঝতে পারছে।কিন্তু আশমিন ঠিক আগের মতোই শান্ত,গম্ভীর।

— এদিকটা সামলে নিয় সান।আমি বের হচ্ছি।

— আমি ও আসছি আপনার সাথে।

সানভির দ্রুত জবাব। আশমিন গাড়ির দরজা খুলে গম্ভীর গলায় বলল,

— দরকার নেই।আমি একা যেতে পারবো।

আশমিনের গাড়ি চলে যেতেই সানভি আরো চারটি গাড়ি আশমিনের পিছনে পাঠিয়ে দিলো। এভাবে সিকিউরিটি ছাড়া তাকে কিছুতেই ছাড়া যাবে না ।

চলবে,,
)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here