#ইট_পাটকেল
#সানজিদা_বিনতে_সফি
#পর্ব_৯
সকাল সকাল ফর্মাল ড্রেসে অফিসের জন্য রেডি হয়ে নিচে এসেছে নূর।অফ হোয়াইট কালার লেডিস কোটের সাথে কালো প্যান্ট। চুল গুলো পোনিটেইল করে বাধা। আশমিন সেদিকে একবার তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিলো। আমজাদ চৌধুরী নূরের দিকে তাকিয়ে হাসি মুখে বললো,
— গুড মর্নিং মা।
রাফসান শিকদারের জন্য বরাদ্দকৃত চেয়ারে বসতে বসতে নূর ও হাসিমুখে আমজাদ চৌধুরী কে গুড মর্নিং জানালো।
— অফিসের প্রথম দিনের জন্য শুভকামনা। অনেক অনেক এগিয়ে যাও মা। আমি আছি তোমার সাথে।
নূর প্লেটে পরোটা নিতে নিতে কামিনী চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বাকা হাসলো। আমজাদ চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে রসিকতার স্বরে বললো,
— ধন্যবাদ আংকেল। তবে এই মুহুর্তে দোয়া মিসেস চৌধুরীর বেশি প্রয়োজন। আপনি বরং তাকেই একটু দোয়া করে দিন। বলা তো যায় না,আর কখনো এভাবে রাজকীয় ক্ষমতা নিয়ে আপনাদের সামনে বসতে পারেন কি না।
আমজাদ চৌধুরী মলিন চোখে তাকালো নূরের দিকে। আশমিন একমনে খেয়ে যাচ্ছে। তার এদিকে কোন ধ্যান নেই। আজ তার অনেক কাজ।দলীয় কিছু কর্মসূচি আছে আজ। মন্ত্রী পরিষদে আজ সারাদিন থাকতে হবে। তার আগে বাসার গুরুত্বপূর্ণ কাজটা শেষ করতে হবে।
নূর খাওয়ার মাঝেই লারা এসে হাজির হলো নূর মঞ্জিলে। আশমিনের পাশের চেয়ারে বসে আশমিনের দিকে অসহায় চোখে তাকালো। ন্যাকা কান্না করে বললো,
— বিয়ের ডেট টা কবে ফিক্সড করবে আশমিন?হঠাৎ করে বিয়ে ভেঙে যাওয়ার আমাদের অনেক হিউমিলিটেড হতে হচ্ছে। পাপা সোসাইটি তে মুখ দেখাতে পারছে না। প্লিজ আমার সাথে এমন করো না।সবাই জানে আমি তোমার বউ হবো। এভাবে বিয়ে টা ভেঙে দিলে আমার বেচে থাকা মুশকিল হয়ে যাবে।আমি তোমাকে ভালবাসি আশমিন।
আশমিন নির্লিপ্ত চোখে লারার দিকে তাকিয়ে আবার খাওয়ায় মনোযোগ দিলো।আশমিনের এমন গা ছাড়া ভাব দেখে মনে মনে রাগে ফুসে উঠলো লারা।কিন্তু চেহারায় তা প্রকাশ করলো না। মনে মনে বললো,
— একবার শুধু বিয়ে টা হয়ে যাক। তোমাকে আর তোমার পুরো পরিবার কে আমি লারা আমার পা চাটা গোলাম যদি না করিয়ে রাখি তাহলে আমার নাম ও লারা নয়।
নূর ভ্রু কুচকে সেদিকে তাকালো। লারা নূরের দিকে তাকিয়ে আশমিনের আরেকটু কাছাকাছি গিয়ে বসলো। আশমিন লারার দিকে না তাকিয়ে গম্ভীর গলায় বললো,
— কোলে বসতে চাও?
আমজাদ চৌধুরী চোখ বড় বড় করে তাকালো আশমিনের দিকে। নূর সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে নিজের কফিতে মনোযোগ দিলো। লারা আশমিনের দিকে লাজুক চোখে তাকিয়ে মিনমিনে গলায় বলল,
— সবার সামনে?বেডরুমে গেলে ভালো হতো না?
— দরকার নেই।তুমি এখানেই উঠতে পারো।
— ওকে।
আশমিন টেবিল থেকে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে থাকা পালোয়ান সাইজের লোকটির দিকে তাকিয়ে শান্ত গলায় বললো,
— বাহাদুর, লারা কে কোলে নাও।আজ সারাদিন সে তোমার কোলেই থাকবে।আজ আর তোমার কোন কাজ নেই।
আশমিনের শান্ত গলা শুনে বাহাদুর নামের লোকটা ভয়ার্ত চোখে আশমিনের দিকে তাকালো। আশমিনের এই শান্ত গলা যে কতটা ভয়ংকর তা সে হাড়ে হাড়ে জানে।তাই কাল বিলম্ব না করে দ্রুত পায়ে এসে শক্ত হাতে লারা কে কাধে তুলে নিল। লারার মনে হচ্ছে কেউ লোহা দিয়ে তাকে চেপে ধরেছে।চোখের পলকে কি হয়ে গেলো বোঝার আগেই বাহাদুর নামের কালো পালোয়ান সাইজের লোকটা তাকে কোলে নিয়ে একটা চেয়ারে বসে পরলো। কামিনী চৌধুরী সেদিকে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিলো। আমজাদ চৌধুরী একটু শব্দ করেই হেসে ফেললো। সানভি আর অমি এতক্ষণ সব কিছু নিরব চোখে দেখলেও এবার দুজনেই মুখ টিপে হাসতে লাগলো। নূর অমির দিকে তাকিয়ে লারার বসা চেয়ারটা দেখিয়ে শক্ত গলায় বলল,
— এটা এখনি বাইরে ফেলে দেয়ার ব্যবস্থা করো।
কামিনী চৌধুরী তাচ্ছিল্যের সুরে বললো,
— চেয়ার ফেলে কি লাভ। তোমার বর কে ও অনেক বার ছুয়েছে ও।এখন তো তার সাথেই বাসর করতে চাইছো।
— আমি ফেলেছি বলেই সে ছুতে পেরেছে।নাহলে কার সাধ্যি নূরের জিনিসের দিকে হাত বাড়ানোর? নূরের টেস্ট এতটাও খারাপ না মিসেস চৌধুরী।(বাকা হেসে)
আশমিন তীক্ষ্ণ চোখে নূরের দিকে তাকিয়ে কফিতে শেষ চুমুক দিলো। নূর দাঁড়িয়েছে অফিসে যাওয়ার জন্য।
— তাড়াতাড়ি অফিসে আসবেন মিসেস চৌধুরী।আই হেইট লেইট।
আশমিন নিজের চেয়ার ছেড়ে নূরের মুখোমুখি দাড়ালো। শুভ্র পাঞ্জাবির হাতা সামান্য গুটিয়ে ঘার হালকা কাত করে নূরের দিকে বাকা হেসে তাকালো।নূরে ভ্রু কুচকে তার দিকেই তাকিয়ে। হাতা গুটানো শেষ হতেই হুট করে আশমিন নূর কে কোলে তুলে নিলো।নূর চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলো আশমিনের দিকে।আশমিন ধুপধাপ পা ফেলে সিড়ি বেয়ে চলে যাচ্ছে নিজের রুমে। আমজাদ চৌধুরী মুখ কুচকে তাকিয়ে রইলো ছেলের যাওয়ার দিকে।সানভি আর অমি সেদিকে পাত্তা না দিয়ে বসে গেলো ব্রেকফাস্ট করতে।আজ তাদের যেতে লেইট হবে তারা বুঝে গেছে।
— ওকে এভাবে কোথায় নিয়ে গেলো তোমার স্যার?
আমজাদ চৌধুরীর প্রশ্নে থতমত খেয়ে গেলো সানভি। ও কিভাবে জানবে কোথায় নিয়ে গেলো?তবুও সন্দিহান কন্ঠে বললো,
— কাল রাতের ক্লাস টা মনে হয় এখন করাবে।রাতে তো ম্যাম যায়নি স্যারের রুমে।
আমজাদ চৌধুরী কটমট গলায় বলল,
— চুপ করো বেয়াদব ছেলে। যেমন স্যার তার তেমন পি.এ।সব কয়টা অসভ্য হচ্ছো দিন দিন।
সানভি কাদো কাদো চোখে তাকিয়ে পরোটা খাওয়ায় মনোযোগ দিল।অমি মনে মনে হেসে লুটপুটি খাচ্ছে। কামিনী চৌধুরী গটগট করে বেড়িয়ে গেলো বাসা থেকে। লারার বাবার সাথে কথা বলতে হবে।এতো বছরের সাজানো প্ল্যান কিছুতেই এই দুই দিনের মেয়ের জন্য সে নষ্ট হতে দিবে না।
অমি কাউকে ম্যাসেজ করে আবার খাওয়ায় ধ্যান দিলো।
আশমিন নূর কে নিজের রুমে নামিয়ে সাথে সাথে দরজা লক করে দিলো।এখন এই দরজা আশমিনের ইচ্ছে ছাড়া আর খুলবে না।খুলতে হলে পাসওয়ার্ড লাগবে।নূর সেদিকে আগুন চোখে তাকালো। আশমিন সেদিকে পাত্তা না দিয়ে নূর কে শক্ত করে নিজের সাথে চেপে ধরলো।এক হাতে কোমড় পেচিয়ে ধরে হালকা উচু করে নিজের মুখ বরাবর করলো নূর কে। নূরের পা ফ্লোর থেকে তিন ইঞ্চি উপরে।
— ছাড়ুন।
নূরের শান্ত গলায় ছাড়ুন বলায় ঠোঁট বাকিয়ে হাসলো আশমিন। নূরের ঠোঁটের ঠিক বা পাশে গাঢ় চুমু খেয়ে ফিসফিস করে বললো,
— রাতে আসতে বকেছিলাম।আসো নি কেন?ছাত্রী হিসেবে তুমি ফাকিবাজ হতেই পারো।কিন্তু স্যার হিসেবে আমি মোটেও ফাকিবাজ নই।তুমি ফাকি দিবে, আর আমি তোমাকে যেখানে পাবো সেখানেই ক্লাস করাবো।হোক সেটা রাস্তা,ড্রয়িং রুম,অফিস বা বেডরুম। এখন তোমার ইচ্ছা তুমি কোথায় ক্লাস করতে চাও।
আশমিনের কথা শুনে ক্রুর হাসলো নূর। আশমিনের চোখের দিকে তাকিয়ে সে ও ফিসফিস করে বললো,
— অনেক বড় টিচার হয়ে গেছেন মনে হচ্ছে? তা কয়জনের সাথে ইন্টিমেন্ট হয়ে এই অভিজ্ঞতা অর্জন করলেন? প্রোটেকশন নিয়েছিলেন তো?দেখা গেলো এইচ আই ভি পজেটিভ হয়ে বসে আছেন।আমি আবার নিজেকে নিয়ে খুব প্রোটেকটিভ।আগে মেডিকেল চেকাপ করিয়ে আসুন মন্ত্রী সাহেব।ক্লাসের কথা নাহয় আমরা পরে ভাববো।
আশমিন শান্ত চোখে তাকালো নূরের দিকে। মলিন হেসে ক্লান্ত গলায় বলল,
— সেটা তো তুমি চার বছর আগেই দেখে গিয়েছো নূর।আমার চরিত্র সসম্পর্কে সার্টিফিকেট তো সেদিন ই দেয়া শেষ। তবে আজ এতো প্রশ্ন কেন?স্ত্রী হিসেবে আমার অর্ধাঙ্গিনী তুমি।আমার সবকিছু অর্ধেক তোমার।হোক সেটা এইচ আই ভি।
নূরের ঠোঁটে কয়েক মিনিটের লম্বা চুমু খেয়ে গলায় মুখ গুজে দিলো আশমিন। নূর চোখ বন্ধ করে শক্ত করে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে আছে।চোখের কোন বেয়ে কয়েক ফোটা পানি গড়িয়ে আশমিনের কপালে পরলো।আশমিন নূরের গলায় ছোট ছোট চুমু দিয়ে সেদিন নূর আশমিনের যেখানে কামড় দিয়ে ছিল ঠিক সে জায়গায় আশমিন ও দাত বসিয়ে দিল।নূর হালকা আর্তনাদ করে উঠলেও সাথে সাথে ছাড়লো না আশমিন।কয়েক সেকেন্ড দাত দিয়ে কামড়ে ধরে রেখে আস্তে করে ছেড়ে দিলো।নূর কে নিচে নামিয়ে কামড়ের স্থানে আলতো করে চুমু দিয়ে মন্থর গলায় বলল,
— উইস ইউ ভেরি গুড লাক ফর ইউর ফার্স্ট ডে ইন অফিস।
চলবে,,#ইট_পাটকেল
#সানজিদা_বিনতে_সফি
#পর্ব_১০
অফিসে নূরের ত্রিশ জনের টিম সহ নূর কে প্রবেশ করতে দেখে সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। বিশাল বিল্ডিংয়ের আট তলায় রাফসান শিকদারের অফিস। প্রতি তলায় তাদের ভিন্ন ভিন্ন কোম্পানির অফিস থাকলেও আট তলায় হেড অফিস। সব কোম্পানি এখান থেকেই পরিচালনা করা হয়।নূর সবার দিকে এক পলক তাকিয়ে কনফারেন্স রুমে চলে গেলো। অমি ও বাকি ত্রিশ জন নূরের সাথে কনফারেন্স রুমে গিয়ে নিজেদের জায়গায় বসে পরলো। নূর রাফসান শিকদারের চেহারের সামনে গিয়ে কিছুক্ষণ চুপ করে দাড়িয়ে রইলো। পাথরের চোখ ফেটে অশ্রু আজ বেরিয়ে আসতে চাইছে।চোখ বন্ধ করে নিজেকে সামলে ফেললো নূর।এখনো অনেক পথ বাকি।এভাবে ভেঙে পরলে পরের দুর্গম পথ পাড়ি দেয়া কঠিন হয়ে পরবে।
নূর নিজের বাবার চেয়ারে বসে অমি কে উদ্দেশ্য করে বললো,
— সব ফ্লোরে প্রজেক্টের সেট করে দাও অমি। কামিনী চৌধুরী কে আগামী সাত মিনিটের মধ্যে অফিসে হাযির হতে বলো।সাথে এটা ও বলে দাও,যদি সে সময় মতো এখানে উপস্থিত হতে না পারে তাহলে পরবর্তীতে আমার সিদ্ধান্তই হবে শেষ সিদ্ধান্ত। তার কোন এক্সপ্লেইনেশন গ্রহণযোগ্য হবে না।
অমি “ইয়েস ম্যাম” বলে দ্রুত নিজের কাজ কমপ্লিট করতে চলে গেলো। নূর রাফসান শিকদারের চেয়ারে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে রইলো। রাফসান শিকদার খু*ন হওয়ার পর এই চেয়ারে এখন পর্যন্ত আর কেউ বসে নি। এমন কি আশমিন ও না।নূরের মনে হচ্ছে চেয়ারে নয় বাবার কোলে চড়ে বসে আছে সে। বাবা আদুরে হাতে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। মনে হচ্ছে বাবার গায়ের গন্ধ এখনো এই চেয়ারে লেগে আছে। নূরের চোখের কোণ বেয়ে এক ফোটা জল গড়িয়ে পরলো। নূর সন্তপর্ণে তা মুছে নিলো কেউ দেখার আগে।আশমিন গাড়ি তে বসেই নূর কে পর্যবেক্ষণ করে যাচ্ছে। সে ও আজ অফিসে যাচ্ছে। মিটিংয়ে থাকতে হবে তাকে। কোন প্রস্তুতি ছাড়াই বাঘিনীর সামনে যাচ্ছে সে। দেখা যাক তার তেজীনি কিভাবে তাকে কুপকাত করে।
নূর সোজা হয়ে বসে চারিদিকে চোখ বুলিয়ে নিলো।তার টিম মেম্বার নিজেদের কাজ গুছিয়ে নিচ্ছে। এখানকার সবাই আমজাদ চৌধুরীর অনাথ আশ্রমে বড় হয়েছে।ছোট বেলা থেকেই নূরের তাদের সাথে সখ্যতা। কামিনী চৌধুরীর তিক্ত কথা থেকে বাচাতে আমজাদ চৌধুরী নূর কে প্রতিদিন বিকেলে অনাথ আশ্রমে নিয়ে যেতেন। ছোট বলে সবাই নূর কে স্নেহ করত।নূর ও খুব সহজেই মিশে গেছে তাদের সাথে। চার বছর আগে নূর দেশ ছাড়ার আগে কৌশলে এই ত্রিশ জনের টিম কে তাদের কোম্পানির বিভিন্ন ব্রাঞ্চে উচ্চ পদে জয়েন করিয়ে দিয়ে যায়।এটা অবশ্য আমজাদ চৌধুরীর বুদ্ধি ছিল।তিনিই এই টিম মেম্বারদের নূরের জন্য তৈরি করে দেন।এরা প্রত্যেকে নূরের এক কথায় নিজের জীবন দিয়ে দিবে বিনা প্রশ্নে। নূর তাদের থেকে চোখ সরিয়ে কনফারেন্স রুমের বা পাশের বিশাল থাই গ্লাসের সামনে গিয়ে দাড়ালো। পকেটে দুই হাত গুজে চোখ মুখ শক্ত করে বিরবির করে বললো,
— তোমার খু*নের বদলা আমি নিবো আব্বু।তোমার নূর কখনোই নরম মনের মেয়ে ছিল না।শুধু শান্তিতে জীবন কাটানোর জন্য সব চুপচাপ মেনে নিতাম।আমার নীরবতা আমার দুর্বলতা ছিল না।কিন্তু তারা সেটাকেই আমার অস্তিত্ব ভেবে জীবনের চরম ভুল করে বসলো। যে রাফসান শিকদারের মেয়ে তেহজিব নূর শিকদার।যার নামে পুরো শহর কাপতো তার মেয়ে এতো নরম মনের হবে এটা যারা ভাবে তারা এখনো বোকার স্বর্গে বাস করছে। প্রত্যেকটা কে গর্ত থেকে টেনে বের করে তাদের বুক থেকে কলিজা বের করে আনবো আমি। আমি মেয়ে বলে আমি দুর্বল নই আব্বু।নির্মমতা আমার রক্তে মিশে আছে। আমার ভালোবাসা থেকে আমার হিংস্রতা তীব্র। একটা কেউ বাচিয়ে রাখবো না। সব কয়টা কে পিপড়ার মতো পিষে মা*র*বো।
নূরের রক্তলাল টলটলে চোখের দিকে তাকিয়ে আশমিন ঠোঁট কামড়ে হাসলো। এদিকে নূরের এই রুপ দেখে পাশে বসে থাকা সানভির ঘাম ছুটে গেছে।কাপা কাপা হাতে টিস্যু দিয়ে ঘাম মুছে আশমিনের দিকে ভয়ার্ত চোখে তাকালো। আশমিন সানভির অবস্থা বুঝতে পেরে শব্দ করে হেসে ফেললো। সানভি চোখ বড় বড় করে তাকালো আশমিনের দিকে। চার বছরে এই প্রথমবার আশমিন কে এভাবে হাসতে দেখছে সে।যার হাসি এতো সুন্দর সেই মানুষ টা একদম ই হাসে না।আর যখন হাসে তখন তার সেই বাকা হাসিতে সামনের মানুষটার কাপড় নষ্ট হয়ে যায় ভয়ে।সানভির নিজের ও কয়েক বার হতে হতে বেচেছে।
— আমি আবার ও প্রেমে পরেছি সান।
ফোনে চোখ রেখেই মুচকি হেসে বললো আশমিন। সানভি কনফিউজড হয়ে গেলো তার কি রিয়াকশন দেয়া,উচিত এটা ভেবে।তার এখন নূরের তেজী রুপ দেখে ভয় লাগছে,আবার আশমিনের প্রানবন্ত হাসি দেখে খুশি ও লাগছে,আশমিনের প্রেমে পড়ার বিষয় টা নিয়ে চিন্তা ও হচ্ছে। নূরের যা রুপ দেখা যাচ্ছে, প্রেমে পরার কথা জানলে না জানি কোথায় কোথায় আগু*ন লাগিয়ে নিজের হাত সেকতে বসে যায়।পরে দেখা গেলো টক্কর দেয়ার আশমিন নিজেই খুজে খুঁজে তার প্রেমে পাগল কয়েকটা কে ধরে এনে আগু*নে নিক্ষেপ করলো। বিশ্বাস নেই,এখন এই কলি যুগে কাউকে বিশ্বাস করা যায় না।সানভি ডিপ্রেশনে চলে গেলো টেনশনে।
মিটিং শুরু হওয়ার দশ সেকেন্ড আগে আশমিন নিজের জন্য বরাদ্দকৃত চেয়ারে এসে বসে পরলো। কামিনী চৌধুর এসে পৌছালো ঠিক তিন মিনিট পরে।তাই তাকে আর ভিতরে ঢুকতে দেয়া হলো না।কনফারেন্স রুমের বাইরে বিশাল এলইডি স্ক্রিনে নূরের বক্তব্য শুনতে লাগলো সে।
— আমি রাফসান শিকদারের একমাত্র মেয়ে তেহজিব নূর শিকদার আজ থেকে কোম্পানি হ্যান্ড ওভার করে নিচ্ছি।আজ থেকে আশমিন জায়িন চৌধুরী বা কামিনী চৌধুরী কেউ কোম্পানির দায়িত্বে থাকবে না।সমস্ত কোম্পানি আমি পরিচালনা করবো। আপনারা যারা এখানে কর্মরত আছেন তারা আগামী এক মাসে বিগত চার বছরের সমস্ত হিসাব আমার টিম কে বুঝিয়ে দিবেন।আর অবশ্যই নিজেদের জন্য অন্য জায়গায় চাকরির ব্যবস্থা করে নিবেন। কয়েক জনের চাকরির ব্যবস্থা আমি করে দিবো। বাকি যারা বাদ পরেছেন তারা ঝামেলা করতে চাইলে সরাসরি কোর্টে দেখা হবে।আমার কাছে উপযুক্ত রিজন আছে আপনাদের চাকরি থেকে অব্যবহিত দেয়ার।আশা করি সবাই আমার কথা বুঝতে পেরেছেন।কাজে কোন রকম গাফিলতি আমি বরদাস্ত করবো না। তাই বিকেয়ারফুল।
কামিনী চৌধুরী রাগে ফুসছে।একেও এর বাবার মতোই মরতে হবে। খুব বার বেড়েছে। নূরের দিকে তাকিয়ে ফোসফাস করতে করতে মনে মনে বললো,
— আমিও শিকদার বংশের মেয়ে নূর।তোর আগে জন্ম আমার।আমিও এর শেষ দেখে ছাড়বো। তোর অবস্থা রাস্তার কুকুরের মতো না করে আমি কামিনী চৌধুরী স্বস্তির নিশ্বাস নিবো না।
আশমিন তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে আছে কামিনী চৌধুরীর দিকে। সে যে আবার কোন খিচুড়ি পাকাচ্ছ তা তার চেহারায় স্পষ্ট। আশমিন পাশের চেয়ারে বিমুর্ষ মুখে বসে থাকা আমজাদ চৌধুরীর দিকে তাকালো। সে ও কামিনী চৌধুরীর দিকেই তাকিয়ে। আশমিন তার বাবার হাতে হাত রেখে গম্ভীর গলায় বললো,
— সামনে আমাদের খুব কঠিন সময় আসছে আব্বু। শিকদার দের দুই রমনীর যু*দ্ধে কে পরাজিত হয় বলা যায় না।এক জনের বিনাশ নিশ্চিত। আমি আমার বউয়ের পাশে আছি।তাই তার কোন ভয় নেই।মিনিষ্টার আশমিন জায়িনের বউ কে সে কিভাবে প্রোটেক্ট করবে বুঝতেই তো পারছো।কিন্তু তোমার কি হবে? তোমার উচিত অন্য অপশন হাতে রাখা।আমার জানাশোনা অনেক মেয়ে আছে।দেখবো নাকি?
আমজাদ চৌধুরী বজ্রাহত চোখে তাকালো আশমিনের দিকে। সে এখন সিরিয়াস মুখে নূরের দিকে তাকিয়ে। আমজাদ চৌধুরীর বুকের ব্যথা টা আবার বাড়তে লাগলো।
চলবে,,,