#এ_শহরে_তুমি_নেমে_এসো 💚
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব: ৩১
অপূর্ব ভাই রান্না বসিয়েছেন। ফোনটা নিয়ে গেছেন সাথে। ফোন ব্যবহার করার উপায় নেই। আমি টিভি দেখছি। রান্নার অনুষ্ঠান চলছে। আজকের রান্নার রেসিপি চিকেন বিরিয়ানি। আমি মনোযোগ সহকারে দেখছি। বর্তমানে আমি অপূর্ব ভাইয়ের সহধর্মিণী। তাকে রান্না করে খাওয়ানোর দায়িত্ব আমার হাতে। আমি রান্নার অনুষ্ঠান দেখতে ব্যস্ত। অপূর্ব ভাই রান্না শেষ করে খাবার পরিবেশন করতে ব্যস্ত হলেন। আলু ভাজি রান্না করেছেন। উঁচু গলায় আমাকে ডাকলেন, “আরু খেতে আয়, খেয়ে ওষুধ খেয়ে ঘুমা। তাড়াতাড়ি আয়।”
টিভি অন রেখেই ছুটে গেলাম অপূর্ব ভাইয়ের নিকট গেলাম। চেয়ার টেনে বসলাম। পরোটা বানিয়েছেন। দেখেই বিরক্ত লাগল। শুকনো খাবার খেলে আমার গলা শুকিয়ে যায়। কষ্ট হয়। আমি কিছুটা মন খারাপ করে বললাম, “অপূর্ব ভাই আপনি এমন খাবার কেন বানিয়েছেন? আমি এইসব খেতে পারি না।”
অপূর্ব ভাই পানি পান করতে করতে বললেন, “ঘরে কিছু নেই। তুই কোন জায়গার মহারানী যে, এতোরাতে তোর জন্য দোকান খোলা রাখবে? তোর ভাগ্য ভালো ঘরে আটা ছিল। চুপচাপ খেয়ে ওষুধ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়। পরোটা/ রুটি খেলে পানির তৃষ্ণা লাগে। অতিরিক্ত পানি পান করলে শরীরের ক্লান্তি দূর হয়ে যায়।”
নতজানু হয়ে পরোটা মুখে তুললাম। কোনোমতে একটা পরোটা শেষ করে এক গ্লাস পানি খেয়ে ঘরে গেলাম। ঘরের ভেতরে মশারা পায়চারি করছে। মশারী টাঙিয়ে নিলাম অতঃপর ফ্যান ছেড়ে শুয়ে গেলাম। গরমের মাঝেও আমার কাঁথা লাগে ঘুমাতে। আমি আশেপাশে তাকিয়ে কাঁথা না পেয়ে বিছানার চাদর তুলে গায়ে জড়িয়ে চোখ বন্ধ করলাম।
মাঝরাতে অপূর্ব ভাই ঘুম থেকে তুললেন। নিভু নিভু দৃষ্টিতে অপূর্ব ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে ঘুম জড়ানো গলায় বললাম, “গরমের ভেতরে ডাকছেন কেন আশ্চর্য! ফ্যান বন্ধ করেছেন কেন? ফ্যান ছেড়ে দিন।”
অপূর্ব ভাই চাদর টেনে সরিয়ে দিলেন। বিরক্তিকর কণ্ঠে বলেন, “ওষুধ খেয়ে আমার ঘুমিয়ে পড়। (আমার ভাবাবেগ না পেয়ে পুনরায় বলেন) কী-রে, উঠবি?”
“না, আপনি ফ্যান চালু করেন। মামি, ও মামি তোমার ছেলেকে এখান থেকে নিয়ে যাও। তিনি আমাকে ঘুমাতে দিচ্ছে না।” এবার অপূর্ব ভাই বেজায় বিরক্ত হলেন। হাত ধরে টেনে উঠিয়ে নিলেন। নিজহাতে পানি মুখে তুলে দিলেন। ওষুধ মুখে দিয়ে চেপে ধরলেন ওষ্ঠদ্বয়। আমি ঢোক গিলে অপূর্ব ভাইয়ের কাঁধে মাথা রাখলাম। ঘুম জড়ানো গলায় বললাম, “অপূর্ব ভাই আমি আপনার কথা শুনেছি, এবার আপনি আমার কথা শুনেন। প্লীজ ফ্যান ছাড়ুন। আমার পোশাক ঘামে ভিজে গেছে।”
“বিদ্যুৎ নেই, আমি হাওয়া করছি। তুই ঘুমানোর চেষ্টা কর।” বলেই পরণের ট্রাউজার খানিকটা উঁচু করতেই হকচকিয়ে উঠলাম আমি। হতবুদ্ধি হয়ে বললাম, “কী করছেন টা কী?”
নিচে নামানোর চেষ্টা করলাম। অপূর্ব ভাই শান্তনা দিয়ে বললেন, “রিলেক্স আরু। এখানে তুই আর আমি ছাড়া কেউ নেই। এই ঘরে কারো আসার সম্ভাবনা নেই। সুইচ অফ করে দিয়েছি। বিদ্যুৎ আসলে আলো জ্বলবে না। তাছাড়া আমি তোর স্বামী। স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা কর।”
অপূর্ব ভাইয়ের মুখটা অন্ধকারে দেখতে পেলাম না, তবে স্বস্তি বোধ করলাম। তিনি মিথ্যা বলেন না। বিদ্যুৎ তো নেই, দেখার উপায়ও নেই। হাত পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে অগোছালো হয়ে শুয়ে পড়লাম বিছানায়। অপূর্ব ভাই মোটা কাগজ দিয়ে হাওয়া করতে করতে নিজেও আমার পাশে শুয়ে পড়লেন।
গাছগাছালির ফাঁক দিয়ে সূর্য্যি মামা উঁকি দিয়েছেন। গরমটা কমে গেছে। মাথার উপরে ফ্যান চলছে, বুঝতে পারলাম বিদ্যুৎ এসেছে।
অপূর্ব ভাই চেম্বারে গেছেন। আমি বিছানায় শুয়ে শুয়ে এপাশ ওপাশ করছি। ঘুম ভেঙেছে আধ ঘণ্টা পূর্বে। বিছানায় শুয়ে বিদায় অনুষ্ঠান করা আমার নিত্যদিনের অভ্যাস। পুরোনো অভ্যাসটা বদলাবে না। দরজাটা খোলা, অপূর্ব ভাই যাওয়ার পূর্বে বেশ কয়েকবার বলেছেন, দরজায় লক করতে। আলসেমির কারণে উঠতে ইচ্ছা করেনি। বাজার নেই। অপূর্ব ভাই যাওয়ার পূর্বে পরোটা আর ডিম করে রেখেছেন সকালের নাস্তা হিসেবে। আমি গ্ৰামের মানুষ, মামা বাড়ি, দাদা বাড়িতে আমি পান্তা খেতাম। ভেতরটা একদম ঠান্ডা হয়ে যেতো। তাছাড়া কালকে পরোটা খেয়ে আমার অবস্থা নাজেহাল। অসম্ভব! এটা খাবো না।
বিছানা ছেড়ে উঠলাম। আগের বারের মতো অপূর্ব ভাইয়ের ব্যবহার করা ব্রাশ দিয়ে দাঁত ব্রাশ করলাম। তুলোর মতো ব্রাশ তার। অতঃপর রান্নাঘরে গেলাম। চাল ধুয়ে চুলাতে দিতাম। চালের সাথে দুটো আলু সিদ্ধ দিলাম। আগুন জ্বেলে ড্রয়িং রুমে হাত পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে টেলিভিশন দেখতে বসলাম। দীর্ঘক্ষণ পেরিয়ে গেল। আমি রান্নাঘরের দিকে গেলাম না। হঠাৎ লক্ষ্য হলো। চমকে উঠলাম। রিমোট বিছানায় রেখে ছুটে গেলাম রান্নাঘরে। ভাতের পানি পরে চুলার চারপাশে কালো হয়ে গেছে। ভাতও পড়ে আছে। নরম হয়ে গেছে। হতভম্ব হলাম। তড়িগড়ি করে মার্ক ফেলার উদ্দেশ্যে ভাতের পাতিল ধরতেই ছ্যাকা লাগল হাতে। ফুঁ দিলাম। উপায়হীন হয়ে ট্যাবের নিচে হাত রাখলাম। চোখের পানি পড়ছে অনবরত। অন্যহাত দিয়ে চুলোটা বন্ধ করে দিলাম। ছ্যাকা খাওয়া হাতে ভাত গড়া দিলাম। লবণের ছিটা দিলাম। মামিকে দিতে দেখেছি। ডান হাতে ছ্যাকা খেয়েছি। অপূর্ব ভাই এক গাদা জামা কাপড় ধুয়ে রাখতে বলেছেন। একহাত দিয়ে জামা কাপড় ধুয়ে নিলাম। বারান্দায় মেলে দিলাম জামা কাপড়। পুনরায় ঘরে এসে বসলাম। ড্রয়ার খুঁজতে ব্যস্ত হলাম। কোথাও কোনো মেডিসিন বক্স দেখতে পারছি না। অন্যদিকে না খেয়ে থাকার অভ্যাস আমার নেই। অপূর্ব ভাইয়ের বানানো পরোটা আর ডিম খেতে বসলাম।
খ্যাঁচ খ্যাঁচ শব্দ শুনতে পেলাম। এক টুকরো মুখে দিয়ে দরজার দিকে তাকালাম। অপূর্ব ভাই এসেছেন। ডানহাতটা পেছনে লুকিয়ে ফেললাম। স্মিত হেসে বললাম, “আপনি এত তাড়াতাড়ি এসেছেন? বললেন না, আসতে দেরি হবে। পাঁচটা বাজবে।”
অপূর্ব ভাই ভ্রু কুঁচকে বললেন, “এত তাড়াতাড়ি কোথায়? পাঁচটা পঞ্চাশ বাজে। (আমার হাতের দিকে তাকিয়ে বললেন) সকালের খাবার এখন খাচ্ছিস?”
আমি দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকালাম। পাঁচটা বেজে একান্ন মিনিট। কিন্তু আমি তো একটু আগে ঘুম থেকে উঠেছি। মৃদু স্বরে বললাম, “এত তাড়াতাড়ি পাঁচটা বাজল কীভাবে?”
[চলবে.. ইন শা আল্লাহ]#এ_শহরে_তুমি_নেমে_এসো 💚
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব: ৩২
অপূর্ব ভাই জবাব দিলেন না। নিষ্পলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন আমার ডান হাতের দিকে। সৌজন্য হেসে হাতটা লুকিয়ে উঠে যেতে নিলেই অপূর্ব ভাই টি শার্ট টেনে নিলেন। ইশারায় বললাম, “কী হলো?”
“হাতটা দেখি।” গম্ভীর গলায় উঁকি দিতে দিতে বলেন তিনি। হাতটা আরেকটু লুকিয়ে নিতেই অপূর্ব ভাই খপ করে হাত ধরলেন। প্রকাশ্যে এনে দেখলেন। কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষণ করে বলেন, “হাতে ছ্যাকা লেগেছে কীভাবে আরু? ইশ্! ফোসকা পড়ে গেছে।”
“ভাত রান্না করতে গিয়েছিলাম। তাড়াতাড়ি করতে গিয়ে ছ্যাকা লেগেছে।
কী এক টুকরো পরোটা আর ভাজি বানিয়েছেন। খেতে পারি আমি?” বলেই মুখ কালো করে নিলাম।
“বুঝলাম, কিন্তু চামড়া উঠেছে কীভাবে?”
“আপনার জামা কাপড় ধুয়ে দিয়েছিলাম। সকালে যাওয়ার সময় বলেছিলেন না, ধুয়ে দিতে? তাই কেচে কেচে ধুয়ে দিয়েছি। বেশি ভালো হয়নি।”
“ঘরের ভেতরে ওয়াশিং মেশিন আছে কি করতে শুনি?” বিরক্ত হয়ে বললেন অপূর্ব ভাই। ড্রেসিং টেবিলের ছোটো ড্রয়ার থেকে একটা মলম বের করে স্বযত্নে হাতে লাগিয়ে দিতে ব্যস্ত হয়ে গেলেন। মলমের ঠান্ডা স্পর্শ পেতেই কেঁপে উঠলাম আমি। তড়িগড়ি করে হাতটা সরানোর চেষ্টা করলাম। চোখ রাঙিয়ে নিষেধ করলেন তিনি। থেমে গেলাম। স্বযত্নে মলম লাগিয়ে বললেন, “তোর জন্য কাচ্চি বিরিয়ানি নিয়ে এসেছি। অনেক দিন পর চেম্বারে বসেছি। ভিড় আর ভিড়। তাছাড়া অনেক প্রেসেন্ট ফোন করে তাদের বাড়িতে যেতে বলেছে। সেখানে গিয়েছিলাম। তাই দেরি হয়েছে। বস! আমি বিরিয়ানি নিয়ে আসছি।”
বলেই অপূর্ব ভাই চলে গেলেন খাবার আনতে। দাঁতের সাহায্যে নখ কা/ট/তে ব্যস্ত হলাম। অপূর্ব ভাইয়ের ফোন রেখে গেছেন। ফোন বেজে উঠল। উল্টে রাখা। নাম্বারটা দেখা যাচ্ছে না। নাম্বার দেখার উদ্দেশ্যে ফোনটা ঠিক করে রাখলাম আমি। দৃষ্টি গেল ফোনের স্ক্রিনে। ‘তিস্তা’ নামটা চোখে পড়তেই কপাল কুঁচকে গেল আমার। তিস্তা আপুর হাসোজ্জ্বল একটা ছবি ফুটে আছে। অজান্তেই অশ্রু গড়িয়ে পড়ল। পুরোনো স্মৃতি গুলো চোখের পাতায় ভেসে উঠল। আমার জীবনটা হালবিহীন নৌকা করে দেওয়ার জন্য দায়ী একমাত্র সে। চোখজোড়া অবাধ্য, যে আ/ঘা/ত করে তার জন্য কাঁদে। পরপর কয়েকবার বাজল ফোনটা। সাত বারের সময় বাজতেই ফোনটা ছুড়ে ফেললাম। পড়ল গিয়ে অপূর্ব ভাইয়ের পায়ের উপর। একহাতে কাচ্চি, অন্যহাতে পানির গ্লাস। খাবারের থালা ও গ্লাসটা টেবিলে রেখে বলেন, “আজব তো! ফোনটা ফেললি কেন? ফোনের দাম জানিস।”
রাগে গজগজ করতে করতে বললাম, “বাহ্! বোনের সাথে দিব্যি যোগাযোগ আছে। কথা বার্তা চলছে, সবাই তাকে আপন করে নিয়েছে। অথচ আমাকে দেখো। আমে দুধে মিশে গেল, আঁটি ছিটে বাগে গেল।”
“বুঝলাম না।” সন্দিহান গলার স্বর।
“তিস্তা আপু ফোন দিয়েছে আপনার ফোনে। এবার বলুন আপনি জানতেন না। আমার মনে হয় বিয়ের কথাটা আপনিও জানতেন।” সন্দিহান দৃষ্টিতে ভ্রু কুঁচকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে অপূর্ব ভাই। পরক্ষণে ফোনটা তুলে নিলেন। তেমন কোনো ক্ষ/তি হয়নি ফোনের। শুধু একপাশে স্ক্রিন ফে/টে গেছে। ধৈর্য ধরে কল লিস্ট চেক করলেন। তিস্তা আপুর নাম্বার ব্ল/ক করে দিলেন। চামচটা আমার হাতে দিয়ে বললেন, “বাম হাতের সাহায্যে চামচ দিয়ে খাবার খেয়ে নে।”
অপূর্ব ভাই ফোন করলেন অজানা কাউকে। ওপাশে রিসিভ হতেই সালাম বিনিময় করে অপূর্ব ভাই বললেন, “তোমার দেবর জি বারবার আমাকে ফোন দিচ্ছে কেন মা?”
“তোর বাবা চাচারা সুজনদের বাড়িতে গেছে। সুজনকে পেলে তুলে নিয়ে আসবে। তিস্তা ফোন করে খালি কাঁদছে। বাধ্য হয়ে আমি বলেছি, তোর কাছে ঢাকাতে যেতে। ও ঢাকাতে পৌঁছে গেছে। তোকে ফোন দিচ্ছে। তুই একটু বাস স্টপ থেকে ওদের নিয়ে আয়।” স্পিকারে ছিল বিধায় ওপাশে বড়ো মামির কথা শুনতে পেলাম আমি। তার পাশেই আমার ময়না পাখি বসে আছে নিঃসন্দেহে। কারণ তার কণ্ঠস্বর আমি স্পষ্ট শুনতে পারছি। পূর্বের মতো সে অনবরত বলে চলেছে, “আরুপাখি, আরুপাখি আরুপাখি।”
মামির কণ্ঠ আর আমার কানে যাচ্ছে না। কনে শুধু বাজছে মামির কথা। খাবারের থালাটা সরিয়ে নেমে গেলাম বিছানা ছেড়ে। দ্রুত পায়ে হেঁটে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই অপূর্ব ভাই ধরলেন আমার হাত।
“কোথায় যাচ্ছিস?”
“আপনার বোন যেখানে থাকবে, আমি সেখানে থাকব না। আপনি আমার স্বামী, কিন্তু আপনার পরিবার আমার কেউ না, তিস্তা আপুর মতো স্বা/র্থপ/র মেয়ের যেখানে থাকবে, আমি সেখানে থাকব না। হাত ছাড়ুন।” মোচড়ামুচড়ি করতে করতে বললাম। অপূর্ব ভাই একহাতে পেরে উঠছেন না। মানুষ রেগে গেলে তার শরীরে শক্তি বেশি হয়, এটা স্বাভাবিক। ফোনের ওপাশ থেকে মামি বলছেন, “আরু আবার কোথায় যাচ্ছে?
দু’হাতে শক্ত করে ধরে বলেন, “তোমার প্রাণের দেবর জি আসবে বলে সে এখানে থাকবে না।”
“আরু, মা আমার। এমন পাগলামী করে না। তিস্তা বেশিদিন ওখানে থাকবে না। এদিকটা শান্ত হলেই চলে আসবে।”
কঠোর গলায় বললাম, “তিস্তা আপু এখানে আসবে। অবশ্যই আসবে। এটা তার ভাইয়ের বাড়ি। কিন্তু আমি তার সাথে থাকতে পারব না। যার জন্য আমি আমার মায়ের থেকে দূরে সরেছি, নামহীন সম্পর্কে জড়িয়েছি। তার সাথে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।”
বলেই হাঁটা দিলাম। অপূর্ব ভাই কল বিচ্ছিন্ন করেছেন। আমার পিছুপিছু ড্রয়িং রুম অবধি পৌঁছে গেছে। দরজা খুলে বের হওয়ার প্রস্তুতি নিলাম। দরজা খুলতেই হতভম্ব হলাম। তিস্তা আপু ও সুজন ভাই দাঁড়িয়ে আছেন দরজার ওপাশে। নিষ্পলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আমি দৃষ্টি নামিয়ে নিলাম। প্রকাশ পেয়েছে বিরক্তি। তিস্তা আপু হুট করে জড়িয়ে ধরলেন আমায়। দু’হাতে আগলে নিয়ে বললেন, “আরুপাখি কেমন আছে?”
দুই মিনিটে নিজেকে সামলে নিলাম। তিস্তা আপুকে ছাড়াতে ছাড়াতে বললাম, “আমি আরশি মৃধা। কারো আরুপাখি নই।”
অপূর্ব ভাই দাঁড়িয়ে আছে পাশে। আমাকে ছেড়ে অপূর্ব ভাইকে জড়িয়ে ধরে বলে, “ভাইজান কেমন আছেন?”
“আলহামদুলিল্লাহ ভালো। তা তোরা তো বিয়ে করার জন্য পালিয়ে গিয়েছিলি। আবার আমার কাছে চলে এলি যে।” অপূর্ব ভাইয়ের এরূপ কথাতে নতজানু হয়ে রইল তিস্তা আপু। সুজন ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে কাঁচুমাচু করছে। অপূর্ব ভাই পুনরায় বললেন, “টিউটর হিসেবে তোমাকে অনেক সম্মান করতাম, তুমি আমার সম্মানের দাম দিলে না।”
[চলবে.. ইন শা আল্লাহ]#এ_শহরে_তুমি_নেমে_এসো 💚
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব: ৩৩
অপূর্ব ভাইয়ের দৃষ্টিতে সুজন ভাইয়ের দিকে। সুজন ভাইয়ের জবাব নেই, জবাবহীন। তিস্তা আপু অপূর্ব ভাইয়ের পা জড়িয়ে ধরলেন। কাঁদতে কাঁদতে বললেন, “অপূর্ব ভাই, আমি জানি আপনি আপনার বোনের উপর রাগ করে নেই। সামান্য একটু অভিমান করে আছেন। আপনার রাগের তীব্রতা আমার জানা আছে। এই মুহূর্তে আমাদের বাড়ি থেকে বের করে দিবেন। তারপরে বড়ো চাচা আমাদের খুঁজে পেলে কী করবে, আপনি অনুমান করতে পারেন। আমার কোনো ক্ষ/তি হবে না, কিন্তু সুজনকে বাঁচতে দিবে না। আপনি নিশ্চয়ই চাইবেন না, আপনার একটি ভুলের জন্য আপনার বোন বিধবা হয়ে যাক।”
তিস্তা আপু হাউমাউ করে কেঁদে উঠল। মামা বাড়ির বোনেদের ভেতরে তিস্তা আপু সবার বড়ো। আজ পর্যন্ত আমি তাকে এতটা ভেঙে পড়তে দেখিনি। সে কেঁদেছে, কিন্তু এতটা কষ্টে নয়। আমার মন পা/ষা/ণ নয়, অতি সহজেই গলে গেল।
অপূর্ব ভাই আমার দিকে তাকালেন। তিস্তা আপুর চরণ এই বাড়িতে ক্ষণ স্থায়ী কি-না তা আমার কাছে বোঝালেন ইঙ্গিতে। অপূর্ব ভাইয়ের পা ছেড়ে দাঁড়ালেন। আমার হাতটা ধরে তিস্তা আপু বললেন, “তুই না করিস না আরু, আমার ক্ষতি নিশ্চয়ই তুই চাইবি না।”
“আমি এতো কিছু জানি না। আগেও বলেছি এখনো বলছি, ‘তোমার ভাইয়ের বাড়িতে তুমি থাকবে।’ কিন্তু আমাকে আটকাতে পারবে না।” আমার জবাবে তিস্তা আপু সৌজন্য হাসলেন। ট্রাভেলিং ব্যাগটা দরজার বাইরে রাখা। সুজন ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে চলে যাওয়ার উদ্দেশ্যে পা বাড়ালেন। অপূর্ব ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে অভিমানী গলায় বললাম, “আপনার বোন যাতে আমার সাথে কথা না বলে। আমার কথা কেউ নাইবা ভাবুক, আমি তার কথা ভাবি।”
আমার এমন জবাবে বুঝে গেলেন অন্তরের কথা। অপূর্ব ভাই অন্য ঘরটা দেখিয়ে বললেন, “ওপাশের ঘরে তোরা দুজনে থাকবি।”
“কিন্তু আরু থাকবে কোথায়? তারচেয়ে বরং আমি আর আরু একঘরে থাকি।” তিস্তা আপুর মোলায়েম কণ্ঠ।
“আরুর চিন্তা তোকে করতে হবে না, তুই তোর চিন্তা কর। (আমাকে উদ্দেশ্য করে বলেন অপূর্ব ভাই) রাগ কমলে ঘরে চলেন মহারানী। কাচ্চি বিরিয়ানি ঠান্ডা হয়ে পানি হয়ে গেছে। তোকে খাইয়ে আমি খাবো।”
“আজকাল আরুকে খাইয়ে দিচ্ছেন অপূর্ব ভাই। ভাবা যায় না।” সুজন ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বলেন তিস্তা আপু। উত্তরে অপূর্ব ভাই জানায়, “ভাত রান্না করতে গিয়ে হাত পু/ড়ে/ছে। সেই হাত দিয়ে জামা কাপড় কেচেছে। খাইয়ে দেওয়া ছাড়া উপায় আছে? ভাত নরম করে ফেলেছে। তুই তো খুব ভালো খিচুড়ি রান্না করছে পারিস। ফ্রিজে প্রয়োজনীয় সবকিছু আছে। খিচুড়ি বানিয়ে ডাক দিস। চল আরু।”
বলেই অপূর্ব ভাই ঘরে যাওয়ার জন্য অগ্রসর হলেন। ট্রাভেলিং ব্যাগ ভেতরে ঢুকিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলেন তিস্তা আপু। সুযোগ বুঝে তার ডান হাতের কনিষ্ঠ আঙুলে নিজের কনিষ্ঠ আঙুল ঘসে ঘসে বললাম, “আট্টি, বাট্টি। জীবনের কাট্টি। আমি যার সাথে আড়ি দেয়, তার সাথে এভাবে করি।”
ছুটে গেলাম অপূর্ব ভাইয়ের পেছনে পেছনে। খেয়েই ঘুম দিবো।
__
পেরিয়ে গেছে দুইদিন। তিস্তা আপুই ঘরের সব রান্না করে। আমি তাকে টুকিটাকি সাহায্য করি, দুজনের মাঝে তেমন কোনো কথা হয়নি।
রাত ঘুটঘুটে। ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি শুরু হয়েছে কিছুক্ষণ পূর্বে। বৃষ্টি থামার নাম নেই। বিছানার উপর বাটন ফোন পরে আছে। অপূর্ব ভাই সা/প গেমস খেলতে দিয়েছেন
আমিও খেলি প্রায়ই। বিদ্যুৎ নেই, বাজ পড়ে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়েছে কিছুক্ষণ পূর্বে। তিস্তা আপু ও সুজন ভাই তাদের ঘরে। আমি আমাদের ঘরে। ঘরের মাঝে হলদে মোমবাতি আলো ছড়াচ্ছে। হঠাৎ করেই ফোনটা বেজে উঠলো। অপূর্ব ভাই ফোন দিয়েছেন। রিসিভ করতেই বললেন, “দ্রুত ছাতাটা নিয়ে নিচে নাম। আমি গাড়িতে বসে আছি। আর শোন সিঁড়ি অন্ধকার, সাথে ফোনের টর্চ নিয়ে আসিস।”
“শুনেন।”
“কী, বল।”
“আমার জন্য আইসক্রিম আনতে পারবেন? অনেক খেতে ইচ্ছে।”
“এতো রাতে? বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে। ঠান্ডা লেগে যাবে। তোর ঠান্ডা লাগলে সহজে সারে না। সর্দিতে রাতে নিজেও ঘুমাবি না, আমাকেও ঘুমাতে দিবি না। অন্য কিছু খেলে বল। অবশ্য এতো বৃষ্টিতে দোকান খোলা পেলে হয়।”
“তাহলে থাক।” মন খা/রা/প করে বললাম আমি। অপূর্ব ভাই তার মনোবিজ্ঞান আমার উপর প্রয়োগ করলেন। চট করে বুঝে গেলেন আমার মন খা/রা/প। আশ্বাস দিয়ে বললেন, “দেখছি পাওয়া যায় কি-না। তুই জিরিয়ে জিরিয়ে নিচে নাম। চৌদ্দ তলা সিঁড়ি বেয়ে নামতে নামতে আইসক্রিম নিয়ে আমি হাজির হয়ে যাবো।”
ফোন রেখে দিল। দ্রুত হাতে ছাতা ও ফোনের টর্চ জ্বেলে বেরিয়ে গেলাম অপূর্ব ভাইকে নিতে। অন্ধকারে সিঁড়ি দৈর্ত্যের ভয় করছে। দেয়াল গুলো ‘ঝর্ণার গান’ কবিতার ‘পাহাড়ের মতো’ ঘাড় ঘুরিয়ে ভয় দেখাচ্ছে। সাথে যুক্ত হয়েছে আমার ছায়া। সেও ভয় দেখাতে ব্যস্ত। চৌদ্দ তলা থেকে নামতে কষ্টের থেকে ভয় বেশি পেলাম। নিচতলায় দাড়োয়ান ঘুমিয়ে আছেন। রাতে মেইন দরজায় তালা থাকে না। শুধু ছিটকিনি তোলা থাকে। দরজার ছিটকিনি তুলে ছাতা মেলে ধরলাম। কিছুদূরে গাড়ি দেখা যাচ্ছে। অপূর্ব ভাই তার ভেতরে আছেন। সচরাচর অপূর্ব ভাই হাসপাতালের প্রাইভেট ‘কার’ ব্যবহার করেন না। অতি প্রয়োজন ছাড়া। সালোয়ার উঁচু করে সেদিকে গেলাম। বলাই তো হলো না, অপূর্ব ভাই আমাকে শপিং করে এনে দিয়েছেন। সবগুলো বানানো ছিল। দর্জির কাছ থেকে বানাতে হয়নি। ছাতা ধরে বললাম, “তাড়াতাড়ি বেরিয়ে আসুন।”
কোনাকুনি বৃষ্টি পতিত হচ্ছে বলে নিম্ন অংশ ভিজে গেছে। অপূর্ব ভাই নামলেন গাড়ি থেকে। আইসক্রিমের প্যাকেটটা আমার হাতে দিয়ে ছাতাটা তিনি নিলেন। নিচু হয়ে হাঁটতে হাঁটতে বললেন, “তোর সমস্যা কোথায় আরু? মানুষ দু’জন, নিয়ে আসার সময় দুটো ছাতা নিয়ে আসবি না। ভিজে ঠান্ডা তোর লাগবে, তার উপর আইসক্রিম খেলে দহলি হয়ে যাবে।”
“প্রয়োজনে আইসক্রিম গরম করে খাবো। তবুও আমি আইসক্রিম খাবো।”
বলতে বলতে মেইন দরজা অতিক্রম করলাম। ছাতা বন্ধ করে দরজার ছিটকিনি তুলে উপরে উঠতে ব্যস্ত হলাম। লিফ্ট ব্যবহার নিষিদ্ধ। জেনারেটর ব্যবহার করা যায়, রাত্রি বেলা বিধেয় সম্ভব নয়। পাঁচ তলায় উঠতে পা ব্যথা শুরু করল। আর সম্ভব নয় উঠা। ব্যথা সহ্য করতে না পেরে ইচ্ছাকৃত ভাবে স্লীপ খেয়ে নিতে পড়ে গেলাম। চিৎকার করে বললাম, “আমার কোমর ভেঙে গেছে অপূর্ব ভাই। আমি আর দাঁড়াতে পারব না। চৌদ্দ তলা বেয়ে উঠার চেয়ে আমারে উটাই লও।” (হিরো আলমের ভঙ্গিতে)
[চলবে.. ইন শা আল্লাহ]
রেসপন্স করার অনুরোধ রইল।
ঈদ মোবারক ভালোবাসা মহল। ঈদের শুভেচ্ছা জানাতে ভুলবেন না কিন্তু 🥰🥰