এই অবেলায় তুমি পর্ব -০২+৩

#এই_অবেলায়_তুমি
#পর্ব_২+৩
লেখিকা #sabihatul_sabha

“আমার ভালো লাগছে না আমি খাবো না আম্মু।”
আনিতা বেগমঃ খাবি না মানে কি?অল্প করে হলেও খেয়ে যা।
নূরঃ উঁহু খাবো না পেট ভরা।
মাহিঃ নূর এভাবে রাতে না খেয়ে ঘুমাতে নেই।চুপচাপ খেয়ে নে।
নূরঃ বললাম তো খাবো না।
ভাবি এসে বললো,” চলো নূর আজ আমি তোমাকে খাইয়ে দেই।চোখ মুখ কেমন দিন দিন শুকিয়ে যাচ্ছে। “(জিসান ভাইয়ার বউ। বাড়ির বড় বউ। তবে ভাবি খুব ভালো আর মিশুক ও।)

আরে আমি বুঝতে পারছি না। ও যেহেতো খেতে চাচ্ছে না। তাহলে এতো জোরাজুরি করার কি আছে।আর ছোট মা তোমার মেয়েকে দেখে মনে হচ্ছে বেচারিকে তার প্রেমিক ছেড়ে চলে গেছে।বলেই হাসা শুরু করলো আদি ভাই।
সবাই অবাক হয়ে নূরের দিকে তাকালো। নূরের আম্মু আনিতা বেগম তো নূরকে বললো,’ কি রে মা সত্যি কি এমন কিছু হয়েছে।?
নূর ছলছল চোখে ওর আম্মুর দিকে তাকালো।
মাহি রেগে বলে উঠলো, ” মানুষের লজ্জা বলতে কিছু একটা থাকে। কিন্তু আদি ভাই তোমার দেখি লজ্জা শরমের ছিটে ফোঁটা ও নেই।

নূর ঘৃণার চোখে আদির দিকে তাকালো। আগে যেই চোখে এক সমুদ্র ভালোবাসা নিয়ে লোকটার দিকে তাকাতো। আজ সেই মানুষটার দিকেই এক আকাশ সমান ঘৃণা নিয়ে তাকালো।কত টা নিচে নামতে পারে মানুষ এই মানুষটাকে না দেখলে বুঝতেই পারতো না নূর। ছলনার আরেক নাম হলো পুরুষ তা নূর তার আদি ভাইকে দেখেই বুঝলো। আর কোনো দিন সে কাউকে ভালোবাসবে না, বিশ্বাস করবে না।এক বার বিশ্বাস করে ঠকেছে সে খুব বাজে ভাবে ঠকেছে।

নূর উঠে চলে গেলো।অনেক বার পিছু ডাকলো আনিতা বেগম কিন্তু নূর একটা বার ফিরেও তাকালো না।
মাহিও হাতের প্লেট টা আওয়াজ করে টেবিলে রেখে নূরের পিছু পিছু চলে গেলো।
আনিতা বেগম খুব চিন্তিত তার দুই মেয়েকে নিয়ে। এতো হাসি খুশি মেয়েগুলো হঠাৎ কেনো এতো নিশ্চুপ হয়ে গেলো। এসব ভাবতে ভাবতে উনি রান্না ঘরে চলে গেলেন।

আদি একটা শয়তানি হাসি দিয়ে নিজের রুমে চলে গেলো।

——

গিটার হাতে মাঝ রাতে ছাঁদের কিনার ঘেঁষে বসে আছে একটি এলোকেশী মেয়ে। আকাশের দিকে তাকিয়ে গিটারে টুংটাং আওয়াজ তুলে গেয়ে উঠলো,

থাকনা কিছু কথা…
পুরনো ডাইরীর ওই ধুলো মাখা পৃষ্ঠাটায়….
খুঁজবে না কেউ সেই পৃষ্ঠার
মুছে যাওয়া শব্দটা…
ভালো না মন্দ সমৃদ্ধ মনের..
সেই নদীর ভাঁটা..
দড়ি হীন শুন্য ভ্যালায়..
তবুও কেনো বার বার ভেঙে পরে মন…
কখন যে আশে সেই অন্তিম ক্ষন..(সাবহা)

গান থামিয়ে ডুপ দিলো সে তার অতীতের স্মৃতিতে…

তখন নূর ক্লাস নাইনের ছাত্রী। প্রতি দিন আদি ওকে বাইকে করে স্কুলে দিয়ে আসতো আবার নিয়ে আসতো।আদি নিজে ওকে পড়াতো।
নূরের প্রতি আদি খুব সিরিয়াস ছিলো। প্রতি সপ্তাহে একবার করে ফুচকা খাওয়াতে নিয়ে যেতো।আসতে আসতে নূরের ছোট্ট মনে আদি জায়গা করে নিলো।

ক্লাস টেনে উঠার পর আদি আর নূরের মধ্যে সম্পর্ক শুরু হয়। নূরের বেস্ট ফ্রেন্ড হলো রুহি। রুহি আদি আর নূরের সব কিছুই জানতো। আসতে আসতে নূর আর আদির ভালোবাসা আরো গভীর হতে লাগলো। স্কুল শেষে কত জায়গায় ঘুরতে যেতো।দিনগুলো কতই না সুন্দর ছিলো।

নূর কলেজে উঠলো। একদিন আদি তার জন্মদিনে উপহার হিসেবে নূরের কাছে একটা রাত চাইলো।
নূর তাতে না বলে দিয়েছিলো। আদি অনেক রকম ভাবে নূরকে বুঝানোর পরেও যখন নূর রাজি হলো না। তখন রেগে ব্রেকআপ করে দিয়েছিলো। নূর সেই দিন বাসায় এসে প্রচুর কান্না করেছে। তারপর ছাঁদে এসে গিটার বাজাতে শুরু করলো। নূরের একটা বাজে সভাব, যখন মন খারাপ থাকে তখনি গিটার বাজায়।
নূর গাইতে শুরু করলো,

দেহের জন্য ভালোবাসা…
মনের জন্য না…
এমন পিরিত করবি বন্ধু..
জানা ছিলো না..

এভাবে অনেক দিন পেরিয়ে যায়। নূর আর আদির সম্পর্ক আবার ঠিক হয়ে যায়।

একদিন নূর সন্ধায় ছাঁদে যায়।ছাঁদে গিয়ে নিশ্চুপ হয়ে তাকিয়ে থাকে সামনে দোলনায় বসে থাকা নরনারীর দিকে।

নূরের চোখের সামনে তার ভালোবাসার মানুষটি দোলনায় বসে আছে, কোলে গলা জরিয়ে ধরে বসে আছে তারি বেস্ট ফ্রেন্ড। নূরের চোখ দিয়ে সাথে সাথেই কয়েক ফোঁটা পানি গাল বেয়ে গড়িয়ে পরলো নিচে।

আদিঃ তো কেমন লাগলো আমাদের এক সাথে।ওফ্ফ আমি তো ভাবলাম আর কয়েক দিন পুতুল পুতুল খেলবো তা আর হলো না,দেখে ফেললি আমাদের। আমাদের নিশ্চয়ই খুব মানিয়েছে তাই না।

শুন তকে এই দুই বছরে অনেক বার বিছানায় নিতে চেয়েছিলাম কিন্তু তুই তো শুধু বিয়ে বিয়ে। বিয়ের আগে কিছুই না। কখনো জরিয়ে ও ধরতে দেসনি।তুই এই দুই বছরে যা দিতে না পেরেছিস রুহি আমাকে এই কয়েক দিনে দিয়েছে। আমার ভাবনার থেকেও বেশি দিয়েছে।

নূরঃ ছি ভাইয়া তুমি আমার চাচাতো ভাই সেটা ভাবতেই আমার ঘৃণা হচ্ছে। আমি তোমাকে ভালোবাসতাম, তোমার মতো এতোটা নিকৃষ্ট মানুষকে আমি কিভাবে ভালোবাসলাম। নিজের প্রতি নিজের ঘৃণা হচ্ছে ।
এতোটা নিচে নামতে পারলে তোমরা। আর রুহি তুই তো আমার বেস্ট ফ্রেন্ড ছিলি। সব থেকে বড় কথা তুই আমার ফুপিমণির মেয়ে। আমার বোনের মতো।

রুহিঃ হে বোনের মতো কিন্তু বোন তো নই। তাই না।আর সারপ্রাইজ কেমন লাগলো?বলেই দু’জনে হাসতে লাগলো।

আদিঃ আচছা তোর কি মনে হয় তোর মতো গাধা, বোকা, আনস্মার্ট, আন্টি মার্কা মেয়েকে আমি বিয়ে করবো। আমার জন্য রুহির মতো স্মার্ট, মডার্ন,মেধাবী মেয়ে ডিজার্ভ করে।তোর মতো মেয়ের সাথে শুধু প্রেম প্রেম পুতুল খেলা যায়।

অপমানে নূরের চোখ দিয়ে অনর্গল পানি পরছে। আর কিছু না বলেই নূর যখন চলে যাওয়ার জন্য পিছন ফিরলো ছাঁদের দরজা থেকে একটা ছায়া সরে আড়ালে চলে গেলো।

রুহি দৌড়ে নূরের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। একি নূর এটা কিন্তু একদম ঠিক না। তুই কিছু না বলেই চলে যাচ্ছিস। আচ্ছা শুন কাল না তোর জন্য অনেক বড় একটা সারপ্রাইজ আছে।

নূর রুহিকে ধাক্কা দিয়ে সামনে থেকে সরিয়ে দৌড়ে ছাঁদ থেকে নেমে নিজের রুমে চলে গেলো।
অতিরিক্ত কান্না করার ফলে নূরের মাথা বেথা শুরু হয়। সারা রাত মাথার বেথায় ছটফট করে।শেষ রাতের দিকে মাহি ওকে মেডিসিন খাইয়ে ঘুম পারিয়ে দিয়ে যায়।

সকালে উঠে বাসায় চেচামেচির আওয়াজ শুনে নিচে গিয়ে শুনে আদি আর রুহির বিয়ে ঠিক হয়েছে।
এটা শুনার পর নূর নিজের রুমে আশার সময় রুহির সাথে দেখা হয়।
রুহি একটা গা জ্বালানো হাসি দিয়ে বলে,” কেমন দিলাম সারপ্রাইজটা। নিশ্চয়ই খুব সুন্দর। আমাদের খুব মানাবে তাই না।তুই আমার একমাত্র কলিজার টুকরো বেস্ট ফ্রেন্ড। আমার বিয়েতে কিন্তু সব কিছু তুই করতে হবে।

নূর একটা সুন্দর মুচকি হাসি দিয়ে বলে। হা ঠিক বলেছিস বেস্ট ফ্রেন্ড। শুন তুই আমার বেস্ট ফ্রেন্ড বলেই বলছি,যেই মানুষ এতো দিন একজনের সাথে সম্পর্কে থেকে দুই দিনের সুখের জন্য ছেড়ে দিতে পারে। সেই মানুষটা যে আরেক জনের জন্য তোকে ছেড়ে যাবে না তার কি গ্রান্টি আছে বল।তাই বলি ভেবে চিন্তে করিও কাজ, করিয়া ভাবিয় না।বলেই নূর নিজের রুমে চলে গেলো।
নূরের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রুহি রাগে গজগজ করতে করতে বললো,’ ভাঙবে তাও মচকাবে না।তেজ দেখে মনে হয় প্রিন্সেস ডায়না।’

তারপর আদি আর রুহির বিয়ে হয়ে যায়। নূর ও রুহির কথা রাখে।রুহির বিয়ের কেনাকাটা হতে শুরু করে বিয়ের দিনও নূর খুব সুন্দর করে সব কিছুতেই সবার সামনে থাকে।

বর্তমানে,

নূর এসব ভাবছে আর নিশ্বব্দে চোখের জল ফেলছে।মুখ দিয়ে যেনো শব্দ বের না হয় তাই ঠোঁট কামড়ে আছে..
চোখের পানি মুছে নিলো তারপর হাতটা শক্ত করে মুঠ করে বললো,’মিস্টার আদি চৌধুরী আপনি একটা চিটার,একটা ঠকবাজ,একটা প্রতারক,একটা মিথ্যাবাদী,আমার কি দোষ ছিলো? কেনো আমার মনটা নিয়ে এভাবে খেললেন কেনো?কেনো আমার বিশ্বাস নিয়ে দিনের পর দিন খেললেন?আমি আপনাকে কোনো দিন ও ক্ষমা করবো না। কোনো দিন না…আজ আমি যেই আগুনে জ্বলছি একদিন আপনিও জ্বলবেন খুব বাজে ভাবে জ্বলবেন।

——
সকালে নূর বাদে সবাই বসে আছে ড্রয়িং রুমে। তখনি কলিং বেল বেজে উঠলো।

মাহির বড় আম্মু বললো,’ যা তো মাহি দেখ এখন আবার কে আসলো!!
আচ্ছা বলে মাহি গেলো দরজা খুলতে। দরজা খুলে স্ট্যাচু হয়ে গেলো মাহি,
প্রায় ছ’ফিট লম্বা, একটা সুদর্শন যুবক দাড়িয়ে আছে। তার পরনে সাদা শার্ট, কালো প্যান্ট।ব্রান্ডেড ঘড়ি,ব্লেজারটা ভাজ করে হাতের উপর রাখা।চুলগুলো এলোমেলো হয়ে আছে।

চলবে…..

ভুলত্রুটি মার্জনীয়।

#এই_অবেলায়_তুমি
#পর্ব_৩

লেখিকা #Sabihatul_Sabha

যুবকটি মাহির দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকালো।তারপর চুলগুলোকে হাত দিয়ে ঠেলে পিছনে দিয়ে বললো,’ দরজা থেকে সরে দাঁড়াও!’
মাহির মনে হলো যুবকটির চুল পিছনে ঠেলে দেওয়ার মধ্যেও একটা রিদম আছে।কি সুন্দর করে চুল গুলো পিছনে ঠেলে দিলো।মাহি হাঁ করে তাকিয়ে আছে। ছয়টি বছর পর মানুষটাকে সে দেখতে পেলে।সব কিছু আগের মতোই আছে। তবে এখন আগের চেয়ে আরো অনেক বেশি হ্যান্ডসাম হয়েছে।

মাহি এভাবে হা়ঁ করে তাকিয়ে থাকতে দেখে বোঝানোর যাচ্ছে যুবকটি বিরক্ত হচ্ছে। অস্বস্থি লাগছে।

আবারো মাহিকে ইশারা করলো সরে দাঁড়ানোর জন্য। কিন্তু সে দিকে মাহির কোনো ভ্রুক্ষেপ নাই।ও হাঁ করে তাকিয়ে আছে তো আছেই,যেনো সে স্বপ্ন দেখছে।
কন্ঠস্বরে একরাশ বিরক্তি নিয়ে যুবকটি মাহিকে বললো,’কি হলো ভেতরে যাওয়ার জায়গা দাও।নাকি এখানেই দার করিয়ে রাখার প্লেন করেছো না-কি!!

মাহি নড়ছে না।অবচেতন ভাবে মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।
যুবকটি এবার খানিকটা কড়া মেজাজে বললো,’আশ্চর্য!! এভাবে হাঁ করে তাকিয়ে আছো কেনো? ভেতরে ঢুকতে দাও! সরে দাঁড়াও!
ধমক খেয়ে মাহি সাথে সাথে সরে দাঁড়ালো! মুখ কালো করে ফেললো।
মাহি সরে যেতেই যুবকটি দুহাতে লাগেজ নিয়ে গটগট করে ভেতরে ঢুকে গেলো।
মাহি নিজেই নিজের কাজে লজ্জা পেয়ে গেলো।ছি কেমন নির্লজ্জের মতো হা়ঁ করে তাকিয়ে ছিলো।ইসস উনি নিশ্চয়ই আমাকে নির্লজ্জ মেয়ে ভাবছে।

বাসার সবাই ভূত দেখার মতো চমকে উঠলো।
রোজিনা বেগম (নূরের বড় আম্মু)উনার ছেলেকে জরিয়ে ধরে সে কি কান্না। এতো বছর পর ছেলে দেশে এসেছে।এটা যে খুশির কান্না।
যুবকটি বলে উঠলো, ” আম্মু প্লিজ কান্না থামাও তুমি কি খুশি না আমি যে তোমার কাছে এসেছি। খুশি না হলে বলে দাও আমি এখনি চলে যাচ্ছি। তাও কান্না থামাও।
রোজিনা বেগম বলে উঠলো, ” থুর পাঁজি ছেলে এটা তো খুশির কান্না। আলহামদুলিল্লাহ! যাক অবশেষে তোর সুমতি হলো।এতো বলি দেশে আয় দেশে আয়।
যুবকটি তার মাকে জরিয়ে ধরে বলে উঠলো, ” এই যে চলে আসলাম”।
আচ্ছা অনেকক্ষন ধরে যুবকটি যুবকটি বলছি। এবার তার পরিচয়টা দেই( রুদ্র চৌধুরী। মেডিক্যাল পড়াশোনা শেষ করার জন্য লন্ডন গিয়ে ছিলো। ছয় বছর পর আজ দেশে ফিরলো।হার্টের ডক্টর রুদ্র চৌধুরী।)
রুদ্র সবার সাথে কথা বললো।
রুদ্রের মেজো আম্মুর বলে উঠলো, ” রুদ্র একবার বলে আসলে এমন কি হতো। একবার জানিয়ে তো আসতে পারতি।”
রুদ্রঃ আচ্ছা মেজো আম্মু তুমিই বলো যদি জানিয়ে আসতাম। তাহলে কি তোমাদের এভাবে চমকে দিতে পারতাম। আর আদি ভাইয়া বিয়ে করেছে আমি আসবো না। তা কি করে হয়। তাই সবাইকে সারপ্রাইজ দিতে চলে আসলাম৷
এরি মধ্যে রুদ্রের কাজিন বিচ্ছুগুলা এসে রুদ্রকে ঘিরে ধরলো।
আর দূর থেকে মাহি তাকিয়ে আছে রুদ্রের দিকে। এটা যে তার স্বপ্নের পুরুষ। কতো স্বপ্ন বুনে রেখেছে এই যুবকটিকে নিয়ে। আজ জেনো হাজার বছরের তৃষ্ণা মেটাচ্ছে মাহি রুদ্রকে দেখে।

রুদ্র সবার সাথে কথা বলে সামনে তাকিয়ে দেখলো ওর দিকে হাঁ করে একটি মেয়ে তাকিয়ে আছে। রুদ্র আদির সাথে ছবিতে দেখে ছিলো হাঁ এটাই তো রুহি।
রুদ্র রুহির সামনে গিয়ে বললো,” কেমন আছেন ভাবি?”
রুহিঃ সে কি রুদ্র ভাইয়া তুমি আমাকে ভাবি ডাকছো কেনো। আমি তো তোমার ছোটো।
রুদ্র কিছু বলার আগেই মাহি বলে উঠলো, ” আরে রুহি তুমি তো এখন সম্পর্কে আমাদের সবার বড় ভাইয়ের বউ। তাই সবাই তোমাকে ভাবি ডাকবে এটা কি সাভাবিক নয়!
মাহি রুহির আরো কাছে গিয়ে বললো,” মাথায় তো সারা দিন ঘুরে অন্যের জিনিস কিভাবে কেরে নিবে।এইগুলো মাথায় থাকবে কিভাবে!
রুহি কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেলো।রুহি যথেষ্ট ভয় পায় মাহি কে। আর বাসার সবাই যদি একবার রুহির কর্মকাণ্ড জানতে পারে তাহলে রুহি আর এই বাসায় থাকতে পারবে না। তাই চুপ থাকাই শ্রেয় মনে করলো।

——
নূর ঘুম থেকে আজকেও উঠলো দুপুর বারোটার পর।সারা রাত ছাঁদে থেকে শেষ রাতের দিকে রুমে এসে ঘুমিয়েছে।
নূর ফ্রেশ হয়ে নিচে যাওয়ার সময় মনে হলো। সাড়া বাড়ি জুড়ে হাশি খুশির আমেজ ছড়িয়ে পরছে।নূর নিচে যাওয়ার সময় আবার মনে হলো ওর পাশের রুমের দরজাটা হালকা খোলা।থমকে গেলো নূর। এই দরজায় আজ ছয়টা বছর ধরে তালা ঝুলানো। কেউ এই দরজা খুলতে পারেনি কারণ, এই রুমের চাবি রুমের মালিকের কাছে।আজ খুললো কিভাবে৷ চুর আসেনি তো আবার!!

নূর পা টিপে টিপে দরজার সামনে গেলো।দরজাটা আরো একটু ফাঁক করলো। মাথাটা দরজার ফাঁক দিয়ে ঢুকিয়ে রুমে উকি মারলো। না কেউ তো নেই।আসতে করে রুমে ঢুকে পরলো।অন্ধকার তাই লাইট জ্বালিয়ে নিলো। ইসস এই রুমটা তো খুব সুন্দর। বলা যায় পুরো বাড়ির সব গুলো রুমের থেকে এই রুমটা বেশি সুন্দর।নূর আর এই রুম থেকে আজ যাবে না। নূরের এই রুম চাই মানে চাই আজকের জন্য !!
হঠাৎ কিছু পড়ার শব্দে নূর পিছনে ফিরেই দিলো এক চিৎকার,” আম্মুওওওওওওওওওওওওও!!
নূর আরেক বার চিৎকার করবে তার আগেই রুদ্র এসে ওর মুখ চেপে ধরলো। ( রুদ্র বেলকনিতে ওর বেস্ট ফ্রেন্ড শান্তর সাথে কতা বলে রুমে এসে দেখে একটা মেয়ে দাড়িয়ে আছে।)
রুদ্রঃ এই মেয়ে চুপ একদম চুপ!! চিৎকার করছো কেনো?
নূরঃ……..
রুদ্রঃ কি হলো কথা বলছো না কেনো? তখনি রুদ্রের মনে হলো ও তে নূরের মুখ চেপে ধরে আছে।আমি হাত সরাচ্ছি যদি চিৎকার চেচামেচি করো তাহলে এই যে খোলা বেলকনি দেখছো, এটা দিয়ে একদম টুকুস করে নিচে ফেলে দিবো।
নূর ভয়ে আবার চিৎকার দিলো,” আম্মুওওওওওওওওওও চুর!!
রুদ্র আবার রেগে বললো, “একদম চুপ কথায় কথায় চিৎকার মারো কেনো? আরেক বার চিৎকার দিলে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিবো।আর আমাকে কোন দিক দিয়ে চুর মনে হয়?
নূর এবার ভালো করে তাকালো সামনের যুবকটির দিকে তাকিয়ে ভাবলো” না এই সুদর্শন যুবককে তো চুর বলা যায় না,তাহলে কি ভূত!!
নূর বিরবির করে বলা শুরু করলো, ” ভূত! ভূত! ভূত আঙ্কেল তুক্কো ভূত ভাইয়া আমাকে ছেড়ে দিন।আমি একটা বাচ্চা মেয়ে আপনার কোনো ক্ষক্ষতি করবো না।এখনো আমার অনেক কাজ বাকি, বিয়ে করা বাকি,নাতি-নাতনীদের মুখ দেখা বাকি।

এই মেয়ে বিরবির করে কি বলছো! তোমার কি মাথায় সমস্যা আছে? কখনো চুর আবার কখনো ভূত বানিয়ে দিচ্ছ। আমাকে দেখে কি তোমার চুর- ভূত মনে হয়!!?

(আসলে নূরের ঠিক রুদ্রের কথা মনে নেই। নূর যখন ক্লাস 6এ পড়ে তখন রুদ্র পারি জমায় লন্ডনে। তাই নূরের রুদ্রকে চিনতে পারছে না।আর এই রুম বাদে অন্য কোথাও রুদ্রের ছবিও নেই। আর এই রুম তো আজ ছয় বছর তালা বদ্ধ হয়ে আছে।)
নূর বলে উঠলো, ” তাহলে আপনি কে? এই বাসায় তো আগে কখনো দেখিনি? এই রুমে কি করছেন?

রুদ্র কিছু বলবে তার আগেই একটি মেয়ে দৌড়ে এসে রুদ্রকে জরিয়ে ধরলো।
রুদ্রের বুঝতে কয়েক সেকেন্ড লাগলো মেয়েটি কে! যখন বুঝলো রুদ্র ও জরিয়ে ধরে বললো, ” মিষ্টি কখন আসলি স্কুল থেকে?
মিমঃ এই তো এই মাত্র আসলাম। এসেই শুনি তুমি এসেছো।আমি তোমার উপর রাগ করে আছি।বলে গাল ফুলিয়ে রুদ্রকে ছেড়ে দিতে চাইলে রুদ্র আরো শক্ত করে আগলে নেয় তার মিষ্টি ছোট্ট পরীটাকে।তারপর লেগে যায় রাগ ভাঙ্গানোর মিশনে।

নূর এতোক্ষনে বুঝে গেছে ছেলেটি কে। চুপচাপ এতোক্ষন ভাই-বোনের রাগ অভিমান করা দেখ ছিলো। হটাৎ নূরের বুকে চিনচিন ব্যথা শুরু হলো।মনে হতে লাগলো আমার ভাই নেই কেনো?আমার ভাই থাকলেও নিশ্চয়ই এভাবে আগলে নিতো সব বিপদ থেকে।

নূর এক ছুটে রুদ্রের রুম থেকে বেরিয়ে গেলো
।নূরের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে অনেক বার পিছু ডাকলো মিম। কিন্তু নূর একবারো ফিরে তাকালো না।

নূর গিয়ে দাঁড়ালো নূরের আম্মুর সামনে।
আনিতা বেগম নূরকে এভাবে ছুটে আসতে দেখে জিজ্ঞেস করলো” কি হয়েছে নূর?”
নূর বলে উঠলো, ” আম্মু আমার ভাই নেই কেনো?সবার ভাই আছে আমার নেই কেনো?
নূরের আম্মু নূরের কথা শুনে স্তব্ধ হয়ে গেছেন। কিছু বলতে যাবেন ঠিক সেই সময় নূরের মেজো আম্মু বলে উঠলো, ” কেনো নূর জিসান,আবির,আদি,রুদ্র, নীল ওরা কি তোর ভাই না!?

নূর মুখে কিছু বললো না। কিন্তু মনে মনে বললো,” পর কোনো দিন আপন হয় না। পর পরি হয়”

নূর কিছু না বলে রান্না ঘর থেকে চলে আসার সময় কিসে যেনো লেগে পরে যেতে নেয় মাহি ওকে দুহাতে আগলে ধরে।
মাহিঃ সাবধানে চলাফেরা করতে পারিস না নূর। এখন তো পরে যেতিস।
নূর মাহির সাথেও কিচ্ছুটি বললো না, এখন নূরের মন ভালো না তাই কারো সাথে কথা বলবে না। চুপচাপ উপরে চলে গেলো।
নূরের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মাহি বলে উঠলো, ” যাঁরা তোর মুখের হাসি কেরে নিয়েছে। আমি তাদের ছাড়বো না। তুই ছেড়ে দিলেও আমি তাদেরকে তাদের পাপের শাস্তি অবশ্যই দিবো।এমন ভাবে দিবো না পারবে কাউকে বলতে আর না পারবে সয্য করতে। ছাড়বো না দুটোর একটা কেও!

নূর নিজের রুমে ঢুকবে এমন সময় রুহি গুনগুন করে গান গেতে গেতে নূরের পাশ দিয়ে গেলো,” বন্ধু যখন বউ লইয়া, আমার চোখের সামনে দিয়া রং ডং কইরা হাঁইটা যায়।আহা তখন বুকটা ফাইট্টা যায়”

চলবে…..

ভুলত্রুটি মার্জনীয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here