#এই_অবেলায়_তুমি
#পর্ব_১৭
লেখিকা #Sabihatul_Sabha
ডাস্টবিনের মধ্যে বসে আছে শুভ। ডাস্টবিনের যত ময়লা-আবর্জনা আছে সব ওর শরীরে লেগে আছে। কেউ তো আর ইচ্ছে করে ডাস্টবিনের মতো এতো সুন্দর জায়গায় বসে না।
[শুভ ভাই যখন নূরের মাথায় পিস্তল ধরে। নূর মনে মনে ভয় পেলেও সেটা শুভ ভাইকে বুঝতে দিলো না।
শুভঃ আরেক বার যদি” মামা ” ডাকটা শুনি। আমি সত্যি একদম মাথা উড়িয়ে দিবো!!
নূর ভয় পাওয়ার মতো মুখ করে বললো, ” আপনার পিছনে কে এটা!!”
নূরের মুখের দিকে তাকিয়ে আবার পিছনে ফিরলো শুভ।সাথে সাথে নূর ওদের পাশেই ডাস্টবিন ছিলো।সেই ডাস্টবিনের দিকে শুভকে ধাক্কা দিলো। বেচারা তাল সামলাতে না পেরে গিয়ে পরলো ডাস্টবিনে। সাথে সাথে সারা শরীর ময়লায় মাখামাখি। শুভর এই অবস্থা দেখে নূর অবাক হওয়ার মতো মুখ করে বললো,” আহারে মামা!! পরে গেলেন কিভাবে।ইসস কি একটা অবস্থা। সারা শরীর কাদার ময়লায় মাখামাখি।
শুভ থতমত খেয়ে তাকিয়ে আছে নিজের শরীরের দিকে। এবার নূরের দিকে তাকালো। ওকি সত্যি নূরকে কিছু করতো নাকি। শুধু একটু ভয় দেখাতে চেয়েছে।আর এই মেয়ে ডাইরেক্ট ওকে ডাস্টবিনে ফেলে দিলো।]
নূরঃ আপনাকে দেখতে না একদম গুন্ডা টাইপের লোক মনে হয় না!! গুন্ডা থাকবে কালো কচকচে, চুল গুলো বড় বড়,চোখ গুলো লাল লাল,দাঁত গুলো হলুদ, বিশাল দেহ,কন্ঠ থাকবে ভূতুড়ে। যাকে দেখলেই ভয়ে দু একবার হার্ট অ্যাটাক এমনিতেই হয়ে যাবে।কিন্তু আপনাকে দেখলে তো ভয় পাবে দূরের কথা। ছেলে মানুষ ও ক্রাশ খাবে।
শুভ হা করে নূরের কথা বলার ভঙ্গিমা, হাসি মুগ্ধ হয়ে দেখছিলো।
আজ হয়তো নূরের জায়গায় অন্য কেউ হলে। এতক্ষনে শুভ কি করতো নিজেও জানেনা। অবশ্য এতক্ষনে হসপিটাল ভর্তি থাকতো। কিন্তু ওর এখন হাজার চেষ্টা করেও নূরের উপর রাগ আসছে না।
শুভঃ সবাই তো ক্রাশ খাবে। সেটা আমিও জানি। তা তুমি খেয়েছো?
নূরঃ আমি জার তার উপর ক্রাশ খাই না। বলে বাসার উদ্দেশ্যে হাঁটা শুরু করলো।
পিছন থেকে শুভ চেয়ে আছে নূরের যাওয়ার দিকে।
——
মাহি আর আদিবা ভার্সিটি থেকে বের হয়ে রিক্সার জন্য রাস্তার পাশে দাঁড়ালো।
মাহিঃ ভালো করে আরেক বার ভেবে দেখলে হয় না!!
আদিবাঃ ভেবে দেখার কি আছে। আমি কারো দয়া নিয়ে সারাটি জীবন পার করে দিতে চাই না। আর আমি চাই না আমার কারোনে জীবনের কোনো একটা মুহূর্তে গিয়ে তোর ভাই আপসোস করুক।
মাহিঃ তুই ভুল ভাবছিস আবির ভাই তোর উপর দয়া করছেন না। আর রইলো আপসোস ভাইয়া টাইম পায় কই বেড়াতে যাওয়ার। ভাইয়ার মনে এক মুখে আরেক বলার সভাব নেই।আর আমি বুঝলাম না তুই তো ভাইয়া কে ভালোবাসিস তাহলে কেনো না করবি বিয়েতে।
আদিবাঃ আমি একদম তোর ওই গাধা ভাইকে ভালোবাসি না।আর আমি বাসা ঠিক করেছি৷ আজ বিকেলে চলে যাবো।
আদিবার কথা শুনে মাহি রেগে গেলো,” আরেক বার যাওয়ার কথা বললে। ধাক্কা দিয়ে একদম গাড়ির নিচে ফেলে দিবো।”
আদিবা কিছু বলবে তখনি একটা ছেলে এসে হাসি-হাসি মুখ করে ওদের সামনে দাঁড়ালো। পিছে আরো ৩-৪টা ছেলে।
ছেলেটা ব’লে উঠলো, ” আরে তুমি মাহি না?.. আমাকে চিনতে পেরেছো। আমি মিহান ওই যে হসপিটাল দেখা হলো। মনে পড়েছে?
মাহিঃ জ্বি ভাইয়া। কেমন আছেন?
মাহিন ওফ্ফ ভাইয়া ডেকে দিলে তো মুডটাই নষ্ট করে।
মাহি মিহানের মুখের দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে দিলো। এই ছেলের কথা বলার ভঙ্গিমা দেখলে যে কেউ, যে কোনো পরিস্থিতিতে হাসতে বাধ্য।
মিহানঃ তা কেমন আছো? ওই দিন পর তো আর তোমাকে খুঁজেই পেলাম না!!
মাহিঃ আলহামদুলিল্লাহ ভালো ভাইয়া। আপনি?
মিহানঃ আমি সব সময় ভালো থাকি। বলেই মাহির পাশে আদিবার দিকে তাকালো। চোখ বড় বড় করে বলে উঠলো, ” আরে তুমি সেই মেয়েটা না!!”??
আদিবা চোখ ছোটো ছোটো করে মিহানের দিকে তাকালো, ছেলেটা কে আগে কখনো দেখেছে বলে আদিবার মনে পড়লো না। মাহি জিজ্ঞাসার দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আদিবার দিকে। ওকি মাহিন কে চিনে?
আদিবা বললো,” বুঝতে পারলাম না ভাইয়া। আপনি কি আমাকে চিনেন।? আমার তো আগে কখনো আপনাকে দেখেছি বলে মনে পড়ছে না।
মাহির পকেট থেকে মোবাইল বের করে একটা ছবি ওদের সামনে ধরলো। ছবির দিকে তাকিয়ে মাহি চোখ বড় বড় করে আদিবার দিকে তাকালো। বেচারি আদিবা পারে না লজ্জায় মাটির সাথে মিশে যায়।
মাহিনঃ এই মেয়েটা তুমি না?
আদিবা চোখ মুখ লাল করে বললো,” এই ছবি কোথায় পেয়েছেন?”
মাহিনঃ তার মানে সত্যি আমি তোমাকে ধরতে পেরেছি!!
মাহিঃ বিয়ে করবো না! বিয়ে করবো না!! আর দেখো পাবলিক রাস্তায় সবার সামনে ভাইকে কিস করে দিলি। আর কিস করা ছবি সবাই পকেটে নিয়ে ঘুরছে!!
_______
নূর বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে নিচে যাওয়ার সময়। মনে হলো রুদ্র ভাইয়ার রুমের দরজা খোলা। রুদ্র ভাই তো হসপিটালে আজ মনে হয় ভুলে দরজা খোলা রেখে চলে গেছে। খুশিতে নূরের চোখ মুখ চকচক করে উঠলো।ওই দিন পড়ার সময় রুদ্রের রুমে একটা শো পিস দেখে ছিলো৷ অনেক সুন্দর কিন্তু ধরার সাহস হয় নি। আজ ওইটার কয়েকটা ছবি তুলে সেও এমন একটা শো পিস কিনবে।
রুদ্র যেহেতু বাসায় নেই। রুমে ঢুকতে কোনো ভয় নেই। এক দৌড়ে নিজের রুম থেকে মোবাইলটা নিয়ে রুদ্রের রুমে গেলো।কেউ যেনো না দেখে দরজাটা ভেতর দিয়ে লাগাতে গিয়ে বাঁধলো আরেক জামেলা। দরজা তো লাগাতে পারছে না।যাক অবশেষে দরজা লাগাতে পারলো।
শো পিসটা হাতে নিয়ে কয়েক ছবি তুলে নিলো।খুবই সুন্দর এটা। কাল কে পুরো মার্কেট এটা খুঁজবে। না পেলে রুদ্রকে বলবে এটা ওকে দিয়ে দিতে ও টাকা দিয়ে দিবে। শো পিস রাখতে গিয়ে মনে হলো ওয়াশরুমের দরজা কেউ খট করে খুললো। ভয়ে নূরের হাত পা একদম জমে গেছে। সে কোনো কিছু ভয় না পেলেও ভূত খুব ভয় পায়। যদিও ভূত বলতে কিছু আছে বলে ও বিশ্বাস করে না। তবুও বান্ধবীদের মুখে ভূত সম্পর্কে অনেক কিছু শুনেছে। টিভিতে অনেক বার ভূত দেখেছে।
ওর ভাবনার মাঝেই কেউ বলে উঠলো, ” এই তুমি এই রুমে কি করছো?”
নূরের হঠাৎ রুদ্রের কন্ঠ শুনে ভয়ে হাত থেকে পড়ে শো পিসটা ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেছে।নিমিষেই ভূতের ভয় উবে গেলো। শো পিস এর দিকে তাকিয়ে মনে হলো,রুদ্র ও ওকে ঠিক এই শো পিস টার মতো করে বেলকনি থেকে টুপ করে নিচে ফেলে দেবে।ভয়ে গলা শুকিয়ে এলো। ভয়ে ভয়ে পিছনো ফিরে চিৎকার দেওয়ার আগেই নিজের মুখ নিজেই চেপে ধরলো। সাথে সাথে অন্য দিকে ফিরে গেলো।
এই সাদা হনুমান তো হসপিটাল থাকার কথা। এখানে কি করছে। আর ছি! এই সব কি পড়ে বের হয়েছে।
রুদ্র খালি গায়ে পরনে সাদা টাওয়াল,চুল থেকে টপটপ করে পানি পরছে। নিশ্চয়ই এখন গোসল করে বের হয়েছে।
রুদ্র এতোক্ষন নূরের দিকে চুপচাপ তাকিয়ে ছিলো।
রুদ্রঃ তুমি এই রুমে কি করছো?
………
রুদ্রঃ কি হলো কথা বলছো না কেনো?
নূর মিনমিন সুরে বললো, ” ভাইয়া আপনি তো হসপিটাল থাকার কথা। বাসায় কি করছেন? ”
রুদ্রঃ কেনো!! আমার কি এই সময় বাসায় আসা নিষেধ!!?
নূর কি বলবে বুঝতে পারছে না। উনার এতো সুন্দর শো পিস ভেঙে ফেললো এখনো এত শান্ত ভাবে কথা বলছে কিভাবে?? উনার তো রেগে যাওয়ার কথা।
রুদ্রঃ ওই দিকে ফিরে চোখ বন্ধ করে আছো কেনো?
[তো কি করবো!! তোর মতো সাদা হনুমানের দিকে হা করে তাকিয়ে থাকবো নাকি! ছি!? ]
নূরঃ ভাইয়া আপনার লজ্জা না থাকতে পারে। আমি তো আর আপনার মতো লজ্জাহীন নই!!..
নূরের কথা শুনে রুদ্র শব্দ করে হেসে উঠলো।
রুদ্রঃ আচ্ছা তাই নাকি!! তোমার এতো লজ্জা। তোমার লজ্জা দেখে তো আমারো লজ্জা লাগছে। ইসস এত লজ্জা যে একটা প্রাপ্ত বয়স্ক ছেলের রুমে নক না করে ঢুকে পরেছো। আবার দরজাও ভেতর দিয়ে আটকে দিয়ে রেখেছো!!
নূরঃ আমি কি জানতাম নাকি.. আপনি রুমে আছেন। প্রতি দিন তো এই সময় হসপিটালে থাকেন। তাই আজও ভেবেছেন হসপিটালে আছেন।
রুদ্রঃ তাই সুযোগ বুঝে আমার রুমে চলে আসছো চুড়ি করতে!!৷
নূর রেগে বললো,” আমি একদমি চুড়ি করতে আসিনি।আমি তো শুধু শো…..আর কিছু না বলে চুপ হয়ে গেলো।
রুদ্র এবার নূরকে বললো,” এদিকে আমার দিকে ফিরো!”
নূরঃ না!না!না আ..আপনি আগে কাপড় চেঞ্জ করে আসেন!..
রুদ্রঃ আমার হাতের মার না খেতে চাইলে এদিকে ফিরো। আর ছোট থাকতে তো একটা হাফ পেন্ট পরে, খালি গায়ে আমার আশপাশে ঘুর ঘুর করতে।
নূরের মনে হচ্ছে কান দিয়ে লজ্জায় গরম ধোঁয়া বের হচ্ছে।
নূর রুদ্রের দিকে তাকিয়ে দেখে কালো শার্ট আর পেন্ট পরে নিয়েছে রুদ্র। কোন সময় চেঞ্জ করলো!!?
রুদ্র নূরের সামনে দাড়িয়ে গম্ভীর কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো, ” এই রুমে কেনো এসেছো? এসেছো ভালো কথা দরজা কেনো বন্ধ করেছো?আর তুমি সব সময় আমার শো পিস এর দিকে কেনো নজর দাও!!?ওই দিন ও আমার পছন্দের শো পিসটা তুমি ভেঙে ফেললে। আজ কে ও আমার পছন্দের শো পিসটা ভেঙে ফেললে!! ”
নূর মনে সাহস জুগিয়ে বলে উঠলো, ” ওই দিন তো আমি না। আপনি ভেঙে ছেন৷ জেদ না করে ওইটা আমাকে দিয়ে দিলেই তো ভাঙতো না।”
রুদ্রঃ আচ্ছা মানলাম ওইটা আমার জন্য ভেঙেছে। তবে আজকেরটা কেনো ভাঙলে!!?
নূর আমতা আমতা করে বললো,” এটা আমার খুব পছন্দ হয়েছে। তাই আপনি বাসায় নেই। দরজাও খোলা ভাবলাম কয়েকটা ছবি তুলে নিয়ে যাই।মার্কেট থেকে এটার মতো আরেকটা কিনে আনবো। কিন্তু আপনি তো সব শেষ করে দিলেন!”
রুদ্র অবাক হয়ে বললো,” আমি শেষ করেছি মানে?”
নূরঃ আপনি পিছন থেকে আওয়াজ না করলে তো আর আমি ভয় পেতাম না আর এটাও হাত থেকে পড়ে যেতো না।”
রুদ্রঃ যত যাই বলো। আমি তোমাকে শাস্তি না দিয়ে সারছি না!!
নূর ভয়ে এদিক ওদিকে তাকাচ্ছে যদি দৌড়ে চলে যাওয়ার একটা রাস্তা পায়।এই রুম থেকে বের হতে পারলে। রুদ্র আর ওর কিছুই করতে পারবে না।কিন্তু বের হওয়ার রাস্তা যে ও নিজেই বন্ধ করে এসেছে। কি দরকার ছিলো দরজাটা বন্ধ করার।রুদ্র বুঝি এখন ওকে খোলা বেলকনি থেকে টুপ করে ফেলে দিবে!!!?
——
ইরিনঃ ভাইয়া আপনি এই পিক কোথায় পেয়েছেন!!?
মাহিন হাসতে হাসতে বললো,” এখন বাসায় যাও। অন্য কোনো একদিন দেখা হলে বলবো। কাউকে কিছু আর না বলতে দিয়ে মাহিন আর তার বন্ধুরা চলে গেলো।
মাহি আর ইরিন বাসায় ঢুকে সামনে তাকিয়ে স্তব্ধ হয়ে গেলো। সামনের মানুষগুলো কে দেখে!!।
ইরিনের মুখ দিয়ে আপনা আপনি বেরিয়ে আসলো “মামী!!!”…..
চলবে….
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।#এই_অবেলায়_তুমি
#পর্ব_১৮
লেখিকা #Sabihatul_Sabha
আদিবার সামনে ওর মামা-মামী দাঁড়িয়ে আছে। আদিবা ভয়ে মাহির হাতটা শক্ত করে চেপে ধরলো। মাহি চমকে নিজের হাতের দিকে তাকালো।
আদিবার মামী দৌড়ে গিয়ে আদিবা কে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলো।
~মা কেমন আছিস? মামার সাথে রাগ করে কেউ বাসা ছেড়ে চলে আসে বুঝি।মামীর কথা একবার ও মনে পরলো না। আমি তকে কোথায় কোথায় না খুঁজেছি।এই কয়টা দিন ঠিক মতো খাবার খেতে পারিনি, ঘুমাকে পারিনি তোর টেনশনে। এত অভিমান তোর।
মাহি রাগে হাতটা মুঠ করে তাকিয়ে আছে। কতটা অভিনয় করতে পারে এই মহিলা। ঠাটিয়ে দুইটা থাপ্পড় মারতে পারলে ও শান্তি পেতো। কিন্তু উনি গুরুজন তাই চাইলেই কিছু করতে পারবে না।
আদিবার অবাক হয়ে ওর মামীর কথাগুলো শুনছে।
ওর মামী আবার ফিসফিস করে বললো, ” চুপচাপ আমার সাথে বাড়ি চল।কোনো তাল বাহানা শুনবো না আমি। ”
আদিবাকে ছেড়ে দাঁড়িয়ে বললো, ” মা চল আমাদের সাথে। তুই বাড়িতে নেই বাড়িটা কেমন নিশ্চুপ হয়ে গেছে।”
আদিবা চোখ তুলে আবিরের আম্মুর দিকে তাকালো। উনি চুপচাপ দাড়িয়ে আছেন। আনিতা বেগম এগিয়ে আসলেন কিছু বলতে। তখনি দরজা থেকে শুনা গেলো,” আরে এতো তারা কিসের!! এই প্রথম ভাগ্নির শশুর বাড়িতে এসেছেন!! খাওয়া দাওয়া করেন। তারপর না হয় যাওয়ার কথা ভাববেন!!
——
“দেখুন ভাইয়া,আমি আপনাকে এর থেকেও বেশি সুন্দর একটা শো পিস কিনে দেবো। তাও আমাকে বেলকনি থেকে নিচে ফেলবেন না!!….
রুদ্রঃ আজব তো আমি কখন বললাম যে তোমাকে বেলকনি থেকে নিচে ফেলবো।আমি অফিস থেকে এসেছি খুব ক্লান্ত। একটা কাজ করে দিলে কিছু করবো না।
নূরঃ কি কাজ!..?
রুদ্রঃ আমার এখন পায়েস খেতে ইচ্ছে করছে। আমার জন্য পায়েস করে নিয়ে আসো। টাইম দশ মিনিট।
নূরঃ কিইই!! আমি পারবো না। আর মাত্র দশ মিনিটে কিভাবে!? আর আমি তো পায়েস রান্না করতেও পারি না।
রুদ্রঃ দেখো তুমি আমার এতো সুন্দর,গিফট এর শো পিসটা ভেঙে ফেলেছো।আবার আমাকে না বলে আমার রুমে এসেছো।এখন যদি আমার কথা না শুনো তাহলে,…
নূরঃ হি হি হি ভাইয়া আমি তো মজা করে ছিলাম। এখনি যাচ্ছি। দরজাটা খোলে দেন,…
——
সবাই দরজার দিকে তাকিয়ে দেখলো। আবির দাঁড়িয়ে আছে। আবিরকে দেখে আবিরের আম্মু মুচকি হাসলেন।[উনি যখন শুনলেন বাসায় আসা পুরুষ আর মহিলাটি আদিবাকে নিতে এসেছে। সাথে সাথে আবিরকে ফোন দিয়ে সব বললেন। আবির বললো ও আসছে ]
আদিবার মামী বললো,” না আজ আর বসা যাবে না। আজ খুব জরুরি একটা কাজ আছে। অন্য কোনো দিন আসলে না হয় বসবো। আপনাদের কে অসংখ্য ধন্যবাদ আমাদের মেয়েকে দেখে রাখার জন্য। চল আদিবা বলে আদিবার হাতটা শক্ত করে ধরলেন।
আদিবার মন চাচ্ছে ওর মামীকে কয়েকটা করা কথা শুনাতে। কিন্তু সে চায় না মানুষের সামনে ওর মামী অপমানিত হোক।
আবির আদিবার সামনে এসে। আসতে করে ওর মামীর হাত থেকে হাতটা ছাড়িয়ে নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে নিলো।
আদিবার মামী কটমট করে আদিবার দিকে তাকালো। তারপর আবার নিজেকে নিজেই বুঝালো এখানে রেগে গেলে চলবে না। শান্ত থেকে আদিবা কে নিয়ে যেতে হবে। বাড়িতে নিয়ে এমন হাল করবে আর কোনো দিন বাসা থেকে বের হওয়ার কথাও মুখ দিয়ে বলবে না। শুধু একবার বাসায় নিয়ে যেতে পারলেই হলো।
শালেহা বেগম এসে বললেন,”আপনারা দাঁড়িয়ে আছেন কেনো বসুন.. আর ছোটো যা গিয়ে উনাদের জন্য খাবার রেডি কর।”
~না! আমরা এখানে খেতে আসিনি। ঘরের মেয়ে ঘরে ফিরিয়ে নিতে এসেছি।চল আদিবা গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো আদিবার মামা।
আবিরের আম্মুঃ কিন্তু সে তো এখন আর আপনাদের ঘরের মেয়ে নেই। আদিবা এখন আমাদের বাড়ির বউ!!..
আদিবা চমকে উঠলো “বউ”
আবিদার মামী এতক্ষন চুপ থাকলেও এবার রেগে বলে উঠলো, ” ফাজলামো করছেন আমাদের সাথে। আমাদের মেয়ে আমরা ফিরিয়ে নিতে এসেছি। আপনাদের এতো সমস্যা কিসের!!?
শায়েলা বেগমঃ আপনি হয়তো ভালো করে শুনেন নি!! মেঝো কি বলেছে? আদিবা এই বাড়ির বউ। ওকে আপনারে চাইলেই নিয়ে যেতে পারেন না!!
~ বউ মানে!!? আমাদের কে কি আপনাদের বোকা মনে হয়। যা বলবেন বিশ্বাস করে নিবো। তা জামাই কই!!?
আবিরের দিকে ইশারা করে। আবিরের আম্মু বললেন। আমার ছেলে আবির, ইন্সপেক্টর আবির চৌধুরী।
আবির গিয়ে আদিবার মামা কে জড়িয়ে ধরলেন। কানের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বললো,” যদি নিজের ভালো চান!! বেশি কথা না বলে চলে যান। আর যদি বেশি বারাবাড়ি করেন আমি কিন্তু অতীত নাড়া দিতে দু বার ভাববো না!!
ভয়ে আদিবার মামার কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম ঝরছে।
আদিবার মামী কিছু বলতে যাবে এমন সময় উনার স্বামী অনাকে বললেন,” শুনছোই তো বিয়ে হয়ে গেছে ঝামেলা করে লাভ কি।ছেলে ভালো আর কি চাই। আমার একটা দরকারি কাজ আছে। অন্য একদিন এসে আবার দেখে যাবো। বলে উনার হাত ধরে বেরিয়ে গেলেন।
উনার হঠাৎ এই আচরনে আদিবা অবাক হয়ে গেলেন। ও অর মামাকে খুব ভালো করে চিনে। ওকে না নিয়ে যাওয়ার মতো লোক না ওর মামা। তাহলে আজ হটাৎ কি হলো।
উনাদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আবির একটা শয়তানি হাসি দিলো।
আদিবার মামা গেইট থেকে বের হচ্ছে আর মনে মনে ভাবছে,” ঠিক দশ বছর আগে যেটা করে ছিলো। এখন আবার সেটা করবে। রাস্তায় কাটা রাখতে নেই সরিয়ে ফেলতে হয়।”
আবির আদিবার দিকে তাকিয়ে রেগে গেলো। ওই দিন রাতে তো পটাপট ওকে অনেক কিছু বলে দিলো। আর আজকে মামা মামী কে দেখে কিছু বললো না। অন্ততপক্ষে একটা থাপ্পড় তো মারতে পারতো। মামীর গালে।
আবিরঃ আম্মু!! রাতে আব্বু আসলে সবাইকে বলে দিও। আমি কালকেই বিয়ে করতে চাই। বেশি কোনো মানুষ হবে না। পারিবারিক ভাবেই এখন বিয়ে করে রাখবো। পরে তোমার মন চাইলে অনুষ্ঠান করা হবে।
আদিবা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। ওর কথার কোনো দাম নেই। ও তো বললো বিয়ে করবে না। তাও এই লোক বিয়ের কথা বলে দিলো তাও কালকেই!!!
——
পায়েস প্রায় রান্না হয়ে গেছে। সামনে মোবাইল ইউটিউব থেকে দেখে দেখে রান্না করছে।
আবির নিজের রুমে যাওয়ার সময় রান্না ঘরের দিকে তাকিয়ে দেখলো নূর কি যেনো করছে। কৌতুহলের বসে রান্নাঘরে গেলো। গিয়ে দেখে নূর খুব মনযোগ দিয়ে রান্না করছে। সামনে মোবাইল ইউটিউবে ভিডিও চলছে কিভাবে পায়েস রান্না করবে।
আবিরঃ কি করতেছিস পেত্নী!!
নূরের আর বুঝতে বাকি নেই রান্না ঘরের দরজায় কে। আজকে আর নূর রেগে গেলো না। খুশি হয়ে বললো,” দেখো ভাইয়া আমি পায়েস রান্না করছি। ”
আবির অবাক হয়ে বললো,”বাব্বাহ্ তুই পায়েস রান্না করছিস। সবার আগে আমাকে দিবি কিন্তু!!
নূর খুশি হয়ে বললো, ” এই নও ভাইয়া। ”
আবির নূরের হাত থেকে মুচকি একটা হাসি দিয়ে বাটিটা নিলো।এক চামচ মুখে দিয়ে চোখ মুখ খিঁচে নূরের দিকে তাকিয়ে আছে।
নূরঃ কি হয়েছে ভাইয়া!! ভালো হয়নি?
আবিরঃ তোকে কে বলেছে পায়েস বানাতে?
নূরঃ রুদ্র ভাইয়া।
আবির এবার একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে বললো, ” বাহ্ খুব মজা হয়েছে নূর। আজ তো রুদ্র তোর হাত শুদ্ধ খেয়ে ফেলতে চাইবে। এতো মজা করে কিভাবে রান্না করলি বইন!!?
নূরঃ ধন্যবাদ ভাইয়া.. বলে খুশিতে রুদ্রের জন্য নিয়ে উপরে গেলো।
নূরঃ রুদ্র ভাইয়া আসবো!
রুদ্রঃ হুম আসো..
নূরঃ এই নেন ভাইয়া..
রুদ্র ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললো একদম ঠিক টাইমে এসেছো, বলে এক চামচ মুখে দিয়ে নূরের দিকে তাকিয়ে বললো এটা কি তুমি বানিয়েছো!!?
নূরঃ জ্বি ভাইয়া! কেমন হয়েছে?
রুদ্রঃ হুম ভালো। খুব ভালো হয়েছে। কে দেখিয়ে দিয়েছে?
নূরঃ ইউটিউব থেকে দেখে দেখে রান্না করছি ভাইয়া..
রুদ্র আর কিছু না বলে চুপচাপ খেয়ে বাটিটা নূরের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো, ” কাল কেই যেনো আমি আরেকটা সুন্দর শো পিস আমার রুমে দেখি!!”…
——
মাহি রুহির রুমের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় রুমে উঁকি দিয়ে দেখলো রুহি খুব সুন্দর করে সাজগোজ করছে। হয়তো এখন বাহিরে যাবে।মাহির মাথায় দুষ্ট বুদ্ধি খেলে গেলো। নিজের কাজ শেষ করে শান্তির একটা হাসি দিয়ে নিজের রুমে চলে গেলো।
ঘর থেকে বের হতে গিয়ে আচমকাই সাবান পানিতে পিছলে পড়লো।রুহির মনে হলো এই বুঝি ওর কোমর একবারে গেলো। তিন তিন বার একি জায়গায় ব্যথা পেলো।রুহি ব্যথায় ছটফট করতে লাগলো।সে বুঝতে পারছে না একটু আগেও তো দরজায় পানি ছিলো না। এখন কে সাবান পানি রাখলো।উঠতে চেষ্টা করেও পারছে না। তখনি মনে হলো এটা নূরের কাজ নয়তো। ও আর আদি ঘুরতে যাবে তাই নূর আবার ওর সাথে এমন করলো। রাগা চোক মুখ লাল হয়ে উঠলো। ছাড়বে না ও নূরকে!!..
———
সন্ধ্যা থেকে বসে বসে পড়েই যাচ্ছে নূর।আজ ভয়েও রুদ্রের রুমের সামনে যায় নি। বেচারা পায়েস খেতে চেয়েছে নূর ওকে স্পেশাল পায়েস খাইয়েছে। চিনির জায়গায় লবন দিয়ে পায়েস বানিয়েছে। ও বুঝে পাচ্ছে না রুদ্র এই পায়েস কিভাবে খেলো। যেখানে ও মুখেও নিতে পারেনি!! নিশ্চয়ই সাদা হনুমানের মাথায় সমস্যা আছে না না মাথায় না!! মুখে সমস্যা আছে! না হলে এতো লবন দেওয়া পায়েস কিভাবে খেলো আর আবির ভাই ও ওকে একবার বললো না! মন খারাপ করে আবার পড়ায় মন দিলো।কিন্তু না পড়তে আর ভালো লাগছে না। বাসার সবাই আদিবা আপুর বিয়ে নিয়ে আলোচনা করছে। এদিকে ও নিজে রুমে বসে পড়ছে। বাহিরে যাওয়ার সাহস হচ্ছে না। যদি রুদ্র ভাই সামনে পরে সেই ভয়ে।এরি মধ্যে মাহি আসলো নূরের রুমে।
মাহিঃ সবাই ছাঁদে তুই রুমে বসে বসে পড়তেছোস। এত পড়লে শহিদ হয়ে যাবি।
নূরঃ আপু একটু এইটা বুঝাই দাও না..
মাহি অনেক সুন্দর করে নূরকে বুঝালো তারপর বললো, এটা লিখে দেখা।
নূর অঙ্কটা করে মাহিকে দিলো। মাহি অবাক হয়ে খাতার দিকে একবার আরেক বার নূরের দিকে তাকিয়ে ঠাস ঠাস খাতা দিয়ে ওর মাথায় তবলা বাজিয়ে রেগে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।
———
আদিবা এশার নামাজ পড়ে মোনাজাতে আল্লাহর কাছে বলছে,”আল্লাহ মানুষটা একদম আমার অভ্যাসে পরিণত হচ্ছে দিনদিন।আমি একদম ডুবে যাচ্ছি তার মায়ায়।যতই মুখ দিয়ে বলি আপনাকে বিয়ে করবো না। কিন্তু যখন প্রথম শুনে ছিলাম আমার প্রিয় মানুষটির সাথেই আমার বিয়ের কথা চলছে।কি যে খুশি হয়ে ছিলাম। যখন মনে হলো ওরা আমাকে দয়া করছে। আমার পরিবার নেই , এই নিয়ে কখনো আবির আপসোস করবে। তখনি সিদ্ধান্ত নেই আমি ওর আপসোস এর কারন হবো না। আর আমি আমার মামা কেউ খুব ভালো করে চিনি।উনি নিজের স্বার্থের জন্য সব কিছুই করতে পারে!!। আল্লাহ আমার আর আবিরের মাঝে যেনো কেউ না আসতে পারে।তুমি তো জানো আমি ঠিক কতটা উনাকে ভালোবাসি।আদিবা কথাগুলো বলছে আর চোখ থেকে টপরপ করে পানি পরছে।
——
মাহি আর আদিবা ছাঁদে বসে আছে।
মাহি বলে উঠলো, ” আজকের রাতের আকাশটা খুব সুন্দর তাই না?
আদিবাঃ হুম.. তার চেয়ে বেশি আমার এই জান্সটার মন সুন্দর। আচ্ছা মাহি একটা কথা বলি!?
মাহিঃ একটা কেনো দশটা বল।
আদিবাঃ তুই কি রুদ্র ভাইয়াকে ভালোবাসিস!!?
চলবে…..
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।