#এক_খণ্ড_কালো_মেঘ
#পর্ব_১১
#নিশাত_জাহান_নিশি
“আরে ভাই জিজ্ঞেসটা করছিস কী? শিওর না হয়েই আমরা নিশ্চয় এই ছেলেটাকে ধরিনি! তোর গার্লফ্রেন্ডকে ডিস্টার্ব করেছে সে। এবার এর পরিণাম তাকে বুঝিয়ে দে।”
মুখে হাত দিয়ে স্তব্ধ হয়ে বসে রইল আলিজা এবং অয়ন্তী। ঘোর যেন তাদের কিছুতেই কাটছে না। দিনের বেলাতেও ভূত দেখার মত অদ্ভুত পরিণতি তাদের। পরিস্থিতি সামলে ওঠে অয়ন্তী মাথা ঝাঁকালো। রসগোল্লার মত দৃষ্টি তার আলিজার নিশ্চল দৃষ্টিতে নিক্ষেপ করল। মনে মনে আওড়ালো,,
“লা’ফা’ঙার আরিফের সাথে সাথে কী ঐ মা’স্তা’ন রাফায়াতটারও মাথা টাথা খারাপ হয়ে গেছে? কোনোভাবে এই রাফায়াত আবার আরিফকে ফুসলাচ্ছে না তো?”
বেশিক্ষণ একই জায়গায় বসে থাকতে পারলনা আলিজা। কারণ ক্যান্টিনে এতক্ষণে ছেলে- মেয়েদের ভীড় জমে গেছে। কেউ বিষয়টাকে নিয়ে হাসাহাসি করছে তো কেউ নানান রকম গসিপ তৈরী করছে। কম্পিত শরীর নিয়ে আলিজা বসা থেকে ওঠে দাঁড়ালো। বিক্ষুব্ধ আরিফের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে বলল,,
“কী হইছে আরিফ? ক্যান্টিনে এসে এভাবে সিনক্রিয়েট করছ কেন? আর কত ক্ষতি করবা তুমি আমার হ্যাঁ? আর কত?”
আলিজার রাগে রাঙা মুখমণ্ডল দেখে রাফায়াত ইশারায় আরিফকে বলল ছেলেটিকে ছেড়ে দিতে! আলিজা যেহেতু এসব পছন্দ করছেনা তাই এই মুহূর্তে তার পছন্দকে প্রাধান্য দেওয়া উচিৎ। পরে না হয় সুযোগ বুঝে ছেলেটিকে সাইজ করা যাবে! রাফায়াতের ইশারা বুঝে মুহূর্তের মধ্যেই আরিফ ছেলেটির শার্টের কলার ছেড়ে দিলো। ভয়ে কাঁপতে থাকা ছেলেটির দিকে তেজী দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। দাঁতে দাঁত চেপে ছেলেটির কার বরাবর ফিসফিসিয়ে বলল,,
“তোকে আমি পরে দেখে নিব! এখান থেকে যা এখন।”
ছাড়া পেয়ে ছেলেটি জান নিয়ে দৌঁড়ে পালালো ক্যান্টিন থেকে। প্রতিবাদ করার একরত্তি সাহসও দেখালো না। মূলত ছেলেটি এখানে হোস্টেলে থেকে লেখাপড়া করে। তাই তার দাপটও আরিফের তুলনায় কম। আশেপাশে চোখ তুলে তাকালো রাফায়াত। তার গরম চোখের অগ্নিঝরা চাহনি দেখে ক্যান্টিনের সম্পূর্ণ ফাঁকা হয়ে গেল! একটা অচেনা অজানা ছেলেকে এত ভয় পাওয়ার কী হলো? জায়গা থেকে ওঠে এলো অয়ন্তী। দু’কদম বাড়িয়ে এসে রাফায়াতের মুখোমুখি দাঁড়ালো। আঙুল উঁচিয়ে প্রশ্ন তুলল,,
“আপনি আমাদের ভার্সিটিতে কী করছেন হ্যাঁ? এখানেও চলে এসেছেন গু’ন্ডা’মি করতে। নিজে তো এক মহাগু’ন্ডা সাথে আরেক চ্যালা নিয়ে এসেছেন?”
চ্যালা শব্দটা শুনতে আরিফের মাথাটা ফট করে গরম হয়ে গেল। মাথা চুলকে সে অয়ন্তীকে কিছু না বলে বেশ ভাবশূণ্য হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা রাফায়াতকে উগ্র গলায় বলল,,
“ভাই? ভাবিকে কিছু বলুন প্লিজ! আমাকে আপনার চ্যালা বলছে!”
আরিফের বোকামো দেখে অবিলম্বেই রাফায়াতের মাথায় হাত চলে গেল। ভয়ঙ্কর রাগী দৃষ্টিতে সে আরিফের দিকে তাকালো। ভয়ে আরিফ চুপসে গেল। মুখে হাত রেখে স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল। অয়ন্তী পূর্বের তুলনায় আরও অধিক ক্ষিপ্ত হয়ে উঠল। আরিফের দিকে তেড়ে এসে বলল,,
“এই কী বললা তুমি হ্যাঁ? কী বললা? ভাবি মানে? আমি তোমার কোনো ভাইয়ের ভাবি লাগি?”
আরিফকে সামনে থেকে সরিয়ে রাফায়াত ক্ষিপ্র অয়ন্তীর মুখোমুখি দাঁড়ালো। মুখ থেকে মাক্সটা সরিয়ে গরম শ্বাস ছাড়ল। রাফায়াতের সম্পূর্ণ মুখটা অয়ন্তীর দৃষ্টির সীমানায় স্পষ্ট হতেই অয়ন্তী সমস্ত রাগ ভুলে শান্ত হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল! মাক্স পড়ে থাকার দরুন রাফায়াতের শুভ্র মুখের আদলটি লাল রঙ ধারণ করেছে। দেখতে অদ্ভুত লক সুন্দর দেখাচ্ছে। মুখের মাক্সটি রাফায়াত মুখে পড়ে নিলো। ট্যাড়া চাহনিতে অয়ন্তীর দিকে তাকালো। হেয়ালি স্বরে বলল,,
“আরে বুঝলা না? আরিফ কোন ভাইয়ের কথা বলেছে? অভেয়সলি অনিকের কথা বলেছে! তাইনা আরিফ?”
আরিফের দিকে আগ্রাসিত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে রাফায়াত দাঁতে দাঁত চেপে তাকে সায় জানাতে বলল। সামনের চুলগুলো টেনে ধরে আরিফ অপরাধী দৃষ্টিতে অয়ন্তীর দিকে তাকালো। শুকনো ঢোঁক গিলে বলল,,
“হ্যাঁ ভাবি। আমি অনিক ভাইয়ার কথা বলছিলাম।”
যদিও আরিফের মুখের কথা বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিল অয়ন্তীর তবে এই মুহূর্তে আরিফের মুখের কথা বিশ্বাস করতে বাধ্য হলো সে। অয়ন্তীর আশ্বস্ত ভাব দেখে রাফায়াত শার্টের কলারটা জাঁকালো। আরিফের কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলল,,
“যা ক্যালো করার করেছিস। এখন আলিজাকে নিয়ে ফুট এখান থেকে।”
রাফায়াতের মুখের কথা শেষ হতে না হতেই আরিফ আলিজার হাত ধরে হেঁচকা টান দিলো! বাকরুদ্ধ আলিজাকে নিয়ে দ্রুত পায়ে হেঁটে জায়গা পরিত্যাগ করল। আলিজা পিছু ঘুরে অয়ন্তীর দিকে তাকালো। শুকনো গলায় বলল,,
“এসব কী হচ্ছে কী অয়ন্তী। প্লিজ আরিফকে থামতে বল।”
হন্ন হয়ে অয়ন্তী আলিজার পিছু নিতেই রাফায়াত পেছন থেকে অয়ন্তীর ডান হাতটি টেনে ধরল। বাঁকা চাহনিতে অয়ন্তীর দিকে তাকালো। রসিক গলায় বলল,,
“হেই সুইটি! কাবাব মে হাড্ডি হতে যাচ্ছে নাকি?”
রাগে ফোঁস করে পিছু ফিরে তাকালো অয়ন্তী। এক ঝটকায় রাফায়াতের হাতটি তার হাত থেকে ছাড়িয়ে নিলো। চোয়াল উঁচিয়ে বলল,,
“ইউ জাস্ট শাট আপ। একটা মা’স্তা’ন ছেলের সাথে আমি আমার বেস্টফ্রেন্ডকে একা ছাড়তে পারিনা।”
আলিজার পিছু নিলো অয়ন্তী। রাফায়াতও অয়ন্তীর পিছু পিছু ছুটল। পেছন থেকে চ্যাচিয়ে বলল,,
“আরেহ্ অয়ন্তী দাঁড়াও। আরিফ সত্যিই এখন ভালো হয়ে গেছে। তাছাড়া আলিজা আমার বোন। ভাই হয়ে আমি নিশ্চয়ই আলিজাকে কোনো ক্ষতির দিতে ঠেলে দিতে পারিনা।”
রাফায়াতের কোনো কথাই কানে তুললনা অয়ন্তী। ছুটে চলল ভার্সিটির পেছনের দিকের ফাঁকা এরিয়াটিতে। বাউন্ডারির পেছনের দিকটায় দৌঁড়ে যেতেই অয়ন্তী মুখে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল! লজ্জায় মাথা নিচু হয়ে এলো তার। আলিজা স্ব-ইচ্ছায় আরিফকে জড়িয়ে ধরে সবেমাত্রই কাঁদতে কাঁদতে আরিফের বুকে মাথা রাখল। তাদের এই অন্তরঙ্গ মুহূর্তে অয়ন্তী তার উপস্থিতিতে বড্ড লজ্জা পেয়ে গেল। ঝট করে পেছনের দিকে মোড় নিতেই সে রাফায়াতের বলিষ্ঠ বুকে লেপ্টে গেল! ব্যগ্র হাসল রাফায়াত। দুষ্টু চাহনিতে অয়ন্তীর দিকে তাকালো। নাক টেনে বলল,,
“কী মিস সুইটি? করলেন তো তাদের প্রাইভেট টাইমে ডিস্টার্ব?”
বেশ জোর খাঁটিয়ে অয়ন্তী রাফায়াতের বুকের পাঁজর থেকে নিজেকে ছাড়াতে নিলেই ঘটনার আকস্মিকতায় রাফায়াতের হাত থেকে তার সেলফোনটি পড়ে গেল। হকচকিয়ে উঠল অয়ন্তী। জিভ কেটে উবু হয়ে বসে পড়ল নিচে। রাফায়াতের সেল ফোনটি হাতে তুলতেই ফোনের স্ক্রীণ জ্বলে উঠল। তৎক্ষনাৎ মেসেজের একটি নোটিফিকেশন তার চোখে পড়ল। মেসেজটিতে লিখাঃ
“এই কী খবর তোর? অয়ন্তীকে ভাগে আনতে পারলি? আর অনিক? অনিক তো তোকে হায়েনাদের মত খুঁজছে!”
মেসেজটি এক নজর দেখামাত্রই অয়ন্তীর চক্ষু জোড়া বিস্ফোরিত হয়ে উঠল। ফোনটি হাতে নিয়ে সে চোখ উঠিয়ে পকেটে হাত গুজে দাঁড়িয়ে থাকা রাফায়াতের দিকে তাকালো। রাফায়াত এখনও কিছু টের পায়নি! তাই তার ঠোঁটে এখনও লেগে আছে ব্যগ্র হাসির রেখা। টালমাটাল শরীর নিয়ে ফোনটি হাতে নিয়ে অয়ন্তী বসা থেকে ওঠে দাঁড়ালো। চোখের কোণে তার জল চিকচিক করে উঠল। ফোনটি রাফায়াতের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,,
“আপনি আমার ক্ষতি করতে এসেছেন তাইনা?”
ক্ষণিকের মধ্যেই কপাল কুঁচকে নিলো রাফায়াত। মুখশ্রীতে তাজ্জব ভাব ফুটে উঠল। তাড়াহুড়ো করে অয়ন্তীর হাত থেকে ফোনটি কেড়ে নিলো। ফোনের স্ক্রীনে চোখ বুলিয়ে দেখল চঞ্চলের নাম্বার থেকে এসএমএস এসেছে! বুঝতে বেশি বেগ পেতে হলোনা অয়ন্তী সেই মেসেজ পড়ে নিয়েছে! আতঙ্কে বুকটা কেঁপে উঠল রাফায়াতের। শুষ্ক গলায় অয়ন্তীকে কিছু বলার পূর্বেই অয়ন্তী কাঁদতে কাঁদতে জায়গা পরিত্যাগ করল। ক্ষোভে চেঁচিয়ে বলল,,
“আমি প্রথম থেকেই বুঝতে পেরেছিলাম আপনি আমার ক্ষতি করতে এসেছেন। আমি এক্ষণি অনিককে সব বলব। অনিক জানত আপনি আমার ক্ষতি করবেন। তাই সে আপনাকে খুঁজছে। আমি এক্ষণি অনিককে সব ইনফর্ম করছি!”
মাথায় হাত চলে গেল রাফায়াতের। পুনরায় অয়ন্তীর পেছনে ছুটল সে। পেছন থেকে অয়ন্তীকে ডেকে বলল,,
“অয়ন্তী প্লিজ থামো। আমার কথা শোনো। পুরোপুরি ঘটনাটা না জেনে তুমি আমাকে ভুল বুঝতে পারো না।”
#চলবে…?
(বিয়ে বাড়িতে এসেছি। চারিদিকে এত কোলাহল যে নিরিবিলি বসে গল্প লিখার সময় খুঁজে পাচ্ছিনা। দুইদিন পর গল্প দিয়েছি, তাও আবার এত ছোটো পর্ব। রি-চেক করার সময়টাও পাইনি। ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।)