#এক_খণ্ড_কালো_মেঘ
#পর্ব_৩৮
#নিশাত_জাহান_নিশি
“দেখি নাই? আপনি যে ভাবির চাচাতো বোনের ছবিতে সো প্রিটি বলে কমেন্ট করেছেন। তার প্রতিটা ছবিতেই আপনার কমেন্ট! শুধু আমার ছবিতেই আপনার কোনো কমেন্ট নাই। বাইরের মেয়ে মানুষই সুন্দর। নিজেরটাই কুৎসিত।”
তাজ্জব বনে গেল রাফায়াত। সচকিত দৃষ্টি ফেলল অয়ন্তীর অতি রাগে, ক্ষোভে, অভিমানে, কঠোর রুক্ষতায় নিমজ্জিত মুখমণ্ডলে। অতিরিক্ত কান্নার দরুন তার চোখ দুটোর পাশাপাশি মুখটিও কেমন ফুলেফেঁপে উঠেছে। অতিশয় যেন রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে তার শুভ্র মুখের আদলটি। অয়ন্তীর এহেন অতিরঞ্জিত সন্দেহের ধাঁচ দেখে কপাল কুঁচকালো রাফায়াত। হয়রান হয়ে গেল সে। খরতর গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,,
“ভাবির কাজিনের ছবিতে কমেন্ট করেছি বলেই কী আমি খারাপ হয়ে গেলাম হ্যাঁ? আমার নজর এখন অন্য মেয়ে মানুষের দিকে চলে গেল? এসব অফেন্সিভ জিনিস তুমি ভাবো কীভাবে? সারাদিন মাথায় ফাও চিন্তা নিয়ে ঘুরো।”
“এসব অফেন্সিভ জিনিস হ্যাঁ? অফেন্সিভ জিনিস? নজর যদি আপনার অন্যদিকে নাই যেত তাহলে নিশ্চয়-ই উনার প্রতিটা ছবিতে আপনার লাইক, কমেন্ট থাকত না? শুধু তাই নয় আপনার অধিকাংশ মেয়ে ব্যাচমেটদের ছবিতেও আপনার একের অধিক কমেন্ট থাকত না! বাহ্ বাহ্ কমেন্টের যা ছিরি! দেখেছি তো এই এক সপ্তাহে আপনি ঠিক কী কী করেছেন। সারাক্ষণ ফেসবুকে শুয়ে বসে থেকে শুধু মেয়েদের ছবিতেই একের পর এক লাভ রিয়েক্ট করে গেছেন আর প্রেম মাখানো কমেন্ট করেছেন। আমি ইনবক্সে নক করলেই শুধু আপনার ভাব বেড়ে যেত। আমার মেসেজ সিন করতে রিপ্লাই করতেও আপনার কষ্ট হত। বেডা মানুষ তো এমনই! আমারই ভুল ছিল। অতিরিক্ত বিশ্বাস করা আর এত এত এক্সপেকটেশন রাখা।”
ব্যগ্র হেসে উঠল রাফায়াত। এই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির মধ্যে থেকেও সে কদাচিৎ হাসল। দেখে মনে হলো যেন পরিস্থিতি সব শান্ত। অয়ন্তীর এহেন টইটম্বুর রাগকে কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হয় তা তার বেশ ভালো ভাবেই জানা! চালু এই বিষয়ে সে। টুপ করে অয়ন্তীর কপালে দীর্ঘ এক চু’মু এঁকে দিলো রাফায়াত! চু’মু খেতেই খেতেই সে আদুরে গলায় বলল,,
“হয়েছে হয়েছে থামো। আর কিছু বলতে হবেনা। পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরী মেয়েটাও যদি আমার সামনে দাঁড়িয়ে থাকে না? আমার নজর তখনও অয়ন্তীকে ছাড়া অন্যকারো দিকে যাবেনা! অয়ন্তী আমার জীবন, অয়ন্তী আমার মরণ। এই দুই কালের মধ্যে কোনো কালেই অন্য কোনো মেয়ে মানুষ আমার জীবনে আসার কোনো সম্ভাবনা নেই! তাই এসব ভ্রান্ত ধারণা মাথায় রেখে অযথা চাপ নিওনা। ঐদিন তুমি যে ভুল কাজটি করছিলে না? তার শাস্তি এতদিন পেয়েছ। শাস্তির পালা শেষ। এবার শুধু ভালোবাসার পালা।”
প্রশান্তিতে চোখজোড়া বুজে নিলো অয়ন্তী। ঠোঁটের কোণে কিঞ্চিৎ হাসির রেখা ফুটিয়ে তুলল সে। খুশিতে দীর্ঘ এক স্বস্তির শ্বাস ফেলল। অবিলম্বেই রাফায়াতের শার্টের কলার আঁকড়ে ধরল সে। মৃদু স্বরে বলল,,
“নিজেকে কষ্ট দেওয়ার জন্য আর কখনো সু’ই’সা’ই’ড করবার প্রয়োজন পড়বে না আমার। আপনার একটুখানি অবহেলাতেই আমি প্রতিবার ম*রে যাই রাদিফ! মৃ*ত্যুর মত যন্ত্রণা হয় তখন। এই সাতদিনে প্রতিদিন প্রতিনিয়ত মনে হয়েছে আমি বুঝি রোজ একটু একটু করে ম’রে যাচ্ছি। আপনার একরত্তি অবহেলাও আমার সহ্য হয়না রাদিফ। নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে।”
ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল অয়ন্তী। সাতদিনের শাস্তিটা একটু বেশিই হয়ে গেল মনে হচ্ছে। এতটাও কষ্ট দেওয়া উচিৎ হয়নি অয়ন্তীকে। অতি আবেগী হয়ে উঠল রাফায়াত। ইচ্ছে করেই অয়ন্তীর কষ্টের কারণ হতে হয়েছে বলে তার নিজেকে কেমন যেন নিকৃষ্ট মনে হতে লাগল ! যাকে এত বেশী ভালোবাসে তাকে ইচ্ছাপূর্বক ভাবে কষ্ট দেওয়াটা কী আদো সাজে? আবেগ আপ্লুত হয়ে রাফায়াত আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরল অয়ন্তীকে। শিথিল কণ্ঠে অয়ন্তীকে কিছু বলার পূর্বেই হঠাৎ দরজার ওপার থেকে ফারহানের গলার স্বর ভেসে এলো। উঁচু গলায় দরজায় সে কড়া নেড়ে বলল,,
“অয়ন্তী শুনছ?”
অবিলম্বেই রাফায়াতকে ছেড়ে দাঁড়ালো অয়ন্তী। বিষয়টায় বিরক্তবোধ করল রাফায়াত। ব্যক্তিগত মুহূর্তে হঠাৎ কারো আগমন যেন বিষের ন্যায়! রাফায়াতের এমন একটা ভাব যেন কতযুগ পর তার অয়ন্তীকে কাছে পাওয়া! সব ব্যথা ভুলে একটুখানি স্বস্তির সন্ধান পাওয়া। এরমধ্যেই হঠাৎ তৃতীয় ব্যক্তির আগমন। মেজাজটাই আগু’নের ন্যায় গরম। দরজার ঐ পাড়ের ব্যক্তিটির মাথা ফা’টাতে ইচ্ছে হলো তার। হম্বিতম্বি হয়ে অয়ন্তী রুমের দরজাটি খুলে দিলো। অমনি দরজার ওপারে অস্থির ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে থাকা ফারহানের দিকে সে উদগ্রীব দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। তৎপর গলায় শুধালো,,
“কী হয়েছে ফারহান ভাই?”
“তোমাকে খালামনি ডাকছেন।”
“ওহ্। আচ্ছা আপনি যান। আমি একটু পরে যাচ্ছি।”
“না না। এখনি যাও। ইট’স আর্জেন্ট।”
“খুব বেশিই আর্জেন্ট?”
“খালামনি তো আমাকে তাই বললেন। তুমি গিয়ে দেখে আসতে পারো।”
পিছু ফিরে রাফায়াতের দিকে তাকালো অয়ন্তী। অপারগ হয়ে মৃদু গলায় বলল,,
“আপনি একটু বসুন। আমি আসছি।”
রাগে মুখ ঘুরিয়ে নিলো রাফায়াত। হ্যাঁ বা না কিছুই বলল না। রাফায়াতের রাগের কারণ যদিও অয়ন্তী বুঝতে পেরেছে তবে এই মুহূর্তে তার নিচে যাওয়াটা জরুরি মনে হলো। ফারহানকে ডিঙিয়ে অয়ন্তী রুম থেকে বের হয়ে গেল। অমনি ফারহান ফট করে এসে রুমের ভেতর ঢুকে পড়ল। চ্যালচ্যালিয়ে হেঁটে এসে ক্ষিপ্ত রাফায়াতের মুখোমুখি দাঁড়ালো। ক্রুর হেসে তার ডান হাতটি রাফায়াতের দিকে এগিয়ে দিলো। বিনয়ের স্বরে বলল,,
“হায়। আমি ফারহান।”
বিব্রতবোধ করল রাফায়াত। সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে একবার ফারহানের উপর থেকে নিচ পর্যন্ত চতুর দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। হঠাৎ-ই সে ভ্রু যুগল খরতরভাবে কুঁচকে নিলো। হাত দুটি বুকের উপর গুটিয়ে দাঁড়ালো। অতিরিক্ত ভাব দেখিয়ে বলল,,
“আমি রাফায়াত।”
চরম অপমান বোধ করল ফারহান। সঙ্গে সঙ্গেই সে তার তার হাতটি গুটিয়ে নিলো। যথেষ্ট ধৈর্য্য নিয়ে চুপচাপ থাকার চেষ্টা করল। দাঁতে দাঁত চেপে সব অপমান সহ্য করল। জোর পূর্বক হেসে বলল,,
“তো বলুন? আর কী খবর আপনার? আমাকে চিনতে পেরেছেন?”
“না তো! কে আপনি?”
“অয়ন্তীর খালাতো ভাই।”
“আগে কখনো দেখিনি।”
“দুঃসম্পর্কের খালাতো ভাই।”
“ওহ্।”
“তো? অয়ন্তীকে চিনেন কতবছর ধরে?”
“আগে বলুন। অয়ন্তীকে আপনি ভালোবাসেন কতবছর ধরে?”
হকচকিয়ে উঠল ফারহান! পাঞ্জাবির কলারটা টেনে ঠিক করল সে। তোতলানো গলায় বলল,,
“মামামানে?”
উচ্চশব্দে হেসে উঠল রাফায়াত। মিনিট কয়েক বাদে সে তার তাচ্ছিল্যের হাসি থামালো। নাক টেনে ভাবশূণ্য গলায় বলল,,
“কিছুনা।”
ফারহানকে পাশ কাটিয়ে চলে গেল রাফায়াত! দাঁতে দাঁত চাপল। কঠিন গলায় ফারহানকে লক্ষ্য করে বলল,,
“উপর ওয়ালা যখন থেকেই আমার ভাগ্যে অয়ন্তীকে লিখে রেখেছে তখন থেকেই আমি অয়ন্তীকে চিনি। আমাদের মাঝখানে তৃতীয় কোনো ব্যক্তির একছটা আর্বিভাবও মানে হলো আমার কাছে যু’দ্ধ’ক্ষে’ত্র! নেক্সট টাইম থেকে যেন না দেখি আমার কাছ থেকে আমার অয়ন্তীকে আলাদা করার জন্য বাড়তি কোনো এক্সকিউজ দেখাতে। আই ডোন্ট লাইক দিস টাইপ অফ ডেম বিহেভিয়ার।”
উগ্র মেজাজে রাফায়াত সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে আসতেই হঠাৎ অয়ন্তীর মুখোমুখি পড়ে গেল। জুসের গ্লাস হাতে নিয়ে অয়ন্তী উপরেই উঠছিল। এরমধ্যেই হঠাৎ রাফায়াতের সম্মুখীন হয়ে যাওয়া। রাফায়াতকে দেখ মৃদু হাসল অয়ন্তী। হাসিখুশি গলায় বলল,,
“উপরেই যাচ্ছিলাম আমি। জুসটা আপনার জন্য।”
রাগে নাকের ডগা লাল হয়ে উঠল রাফায়াতের। ক্ষিপ্র দৃষ্টি ফেলল সে অয়ন্তীর দিকে। চোঁয়াল উঁচিয়ে শুধালো,,
“ফারহান ছেলেটি তোমাকে পছন্দ করে?”
ঘটনার আকস্মিকতায় অবাক হলো অয়ন্তী। হঠকারি দৃষ্টিতে রাফায়াতের দিকে তাকালো। উজবুক গলায় পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ল,,
“মানে?”
অয়ন্তীর মুখের সামনে আঙুল উঁচিয়ে ধরল রাফায়াত। অয়ন্তীকে শাসিয়ে ক্ষোভমাখা গলায় বলল,,
“এরপর থেকে যদি ফারহানের ধারে কাছে তোমাকে দেখিনা? এর ফল কিন্তু ভালো হবেনা। ওয়ার্ণ করলাম তোমাকে।”
“কী হয়েছে আপনার বলুন তো? আপনি এমন করছেন কেন? তাছাড়া আপনাকে কে বলল যে ফারহান ভাই আমাকে পছন্দ করে?”
“বলতে হয়না। চোখ দেখলেই বুঝা যায়। আমি এত কথা বুঝিনা। ফারহানের থেকে দূরে থাকতে বলছি তোমাকে থাকবা। আর কোনো কথা না।”
জুসটা না খেয়েই অয়ন্তীকে উপেক্ষা করে রাফায়াত বাড়ি থেকে প্রস্থান নিলো। বেকুব বনে গেল অয়ন্তী। নিশ্চল দৃষ্টিতে সে রাফায়াতের যাওয়ার পথে তাকিয়ে রইল। এরমধ্যেই হঠাৎ আবির্ভাব ঘটল ফারহানের। অয়ন্তীর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে সে রুক্ষ গলায় বলল,,
“এই রাফায়াত ছেলেটা কী পাগল অয়ন্তী? এ কাকে বিয়ে করছ তুমি? একটা পাগল ছাগল ছেলেকে? যার মধ্যে নেই কোনো নূন্যতম মেনারস! নেই কোনো ভদ্রতা, সভ্যতা। রীতিমতো বে’য়া’দব একটা ছেলে!”
চোখ লাল করে উঠল অয়ন্তী। রাফায়াতকে নিয়ে ছোটো বড়ো কোনো কথাই যেন তার হজম হয়না! মাথায় আ’গু’ন জ্বলে ওঠো। অবিলম্বেই ফারহানের দিকে তেজী দৃষ্টি নিক্ষেপ করল অয়ন্তী। শোধ বোধ হারিয়ে উঁচু গলায় বলল,,
“মাইন্ড ইউর ল্যাংগুয়েজ ফারহান ভাই। আমার রাদিফ সম্পর্কে আর একটা বাজে কথাও যদি আপনার মুখে শুনেছি তো আমার চেয়ে খারাপ আর কেউ হবেনা। আমার রাদিফ অভদ্র হোক, অসভ্য হোক কিংবা বে’য়া’দব হোক ইট’স মাই প্রবলেম। ইট’স নট ইউর প্রবলেম। তাছাড়া আপনি তো একটা মিথ্যেবাদী! আপনি না ঐসময় বলেছিলেন আম্মু আমাকে ডাকছে? মিথ্যে বলেছিলেন আপনি তখন। হয়ত আমার রাদিফ যাই সন্দেহ করছিল তাই ঠিক! আপনার থেকে দূরে থাকতে হবে আমাকে। ক্ষতিকর আপনি আমার জন্য!”
ফারহানকে কিছু এক্সপ্লেন করার সুযোগ না দিয়েই অয়ন্তী উপরে উঠে গেল। ফারহানের চাপা ক্ষোভ এবার ক্রমশ বাড়তে লাগল! ভাবতে লাগল কী উপায়ে দুজনের দম্ভ ভাঙা যায়! দুজনের ভালোবাসা একসাথে বি’না’শ করা যায়।
সন্ধ্যার পর পরই এনগেজমেন্টের অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেল। সুষ্ঠুভাবে এনগেজমেন্ট সম্পন্ন হলেও রাফায়াতের মনে সংশয় কাজ করতে লাগল! কী যেন এক অদৃশ্য দ্বিধায় সে জ্ব’লে পু’ড়ে ছাই হতে লাগল। ফারহান তার চ’ক্ষুশূল হয়ে উঠল৷ অয়ন্তীর কাছাকাছি ফারহানের অস্তিত্ব যেন রাফায়াতকে ভেতরে ভেতরে দ্বগ্ধ করতে লাগল। এনগজমেন্টের অনুষ্ঠান শেষ হতেই রাফায়াত খাওয়াদাওয়া ছাড়াই বাইক নিয়ে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে গেল! এখানে থাকলেই তার ফারহানের প্রতি খারাপ মনোভাব অনায়াসে বাড়তে থাকবে। হয়ত অয়ন্তীর সাথেও মিস বিহেভ করে ফেলতে পারে! সে নিজেই তার রাগকে ভয় পায়! এই মুহূর্তে সে চায়না তার মাত্রাতিরিক্ত রাগের জন্য অয়ন্তী আবারও কষ্ট পাক। আবারও হাসিখুশি অয়ন্তীর চোখে জল আসুক।
________________________________
সপ্তাহ খানিক পর। রাত প্রায় দুইটার কাছাকাছি তখন। গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন অয়ন্তী। হঠাৎ তার রুমের দরজায় কেউ কড়া নাড়ল। বেগতিক বাড়তে লাগল সেই কড়া নাড়ার শব্দ। দরজা ভেঙে ফেলার উপক্রম। শোয়া থেকে ধরফড়িয়ে উঠল অয়ন্তী। আবিষ্ট দৃষ্টিতে দরজার দিকে তাকালো৷ ঘুম জড়ানো গলায় উচ্চ আওয়াজে বলল,,
“কে?”
দরজার ঐপাশ থেকে নিচু গলায় উত্তর এলো,,
“দরজাটা খোলো।”
রাফায়াতের গলার স্বর চিনতে বেশী দেরি হলোনা অয়ন্তীর! লাফিয়ে উঠল সে বসা থেকে। ওড়না ছাড়াই এক প্রকার দিশেহারা হয়ে সে দরজার কাছে দৌঁড়ে গেল৷ দ্রুত হাতে দরজার খিলটা খুলে দিতেই রাফায়াতকে র’ক্তা’ক্ত অবস্থায় দেখতে পেল সে! সঙ্গে সঙ্গেই আ’ত’ঙ্কে চিৎকার করে উঠল অয়ন্তী। ভীরু গলায় বলল,,
“কী হয়েছে আপনার?”
ইতোমধ্যেই অয়ন্তীর গাঁয়ে ঢলে পড়ল রাফায়াত! শরীরের সমস্ত শক্তি খুইয়ে সে অবচেতন প্রায়। ম্লান গলায় অয়ন্তীকে বলল,,
“আই নিড টু রেস্ট অয়ন্তী। তোমার কোলে মাথা রেখে একটু ঘুমুতে দিবে? এই প্রথম কা’টা ছে’ড়া’য় আমার এতটা ভয় লাগছে। শরীরে ব্যথা লাগছে।”
ম*রা কান্না জুড়ে দিলো অয়ন্তী। র*ক্তা*ক্ত রাফায়াতকে টে*নে হেঁছ*ড়ে সে রুমের ভেতর ঢুকিয়ে নিলো। জোর করে বিছানার উপর শুইয়ে দিলো তাকে। গাঁ থেকে শার্টটা খুলতেই দেখতে পেল বুকের কয়েক জায়গায় কা’টা ছে’ড়ার দাগ! গভীর ক্ষত হয়ে আছে জায়গাগুলোতে। হাত-পা কাঁপতে লাগল অয়ন্তীর। কণ্ঠনালী যেন বসে গেল। আতঙ্ক কাটিয়ে উঠতে পারছেনা সে। রাফায়াতের বিমূর্ষ মুখমণ্ডলে সে ভয়ার্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। থরথরে গলায় বলল,,
“কেকেকে মে’রে’ছে আপনাকে?”
দুর্বল গলায় রাফায়াত প্রত্যুত্তরে বলল,,
“আজ থেকে আমি মুক্ত অয়ন্তী। রাজ’নী’তির পথ পুরোপুরি ছেড়ে দিয়ে এসেছি আমি! এই মুহূর্ত থেকে আমার নতুন জীবন শুরু। কারো সাথে আর কোনো বিবাদে জড়াব না আমি। খুব শীঘ্রই আমাদের ছোটো একটা সংসার হবে। শারীরিক এবং মানসিক ভাবে প্রস্তুত আমি।”
হেঁচকা টানে রাফায়াত অয়ন্তীকে তার বুকের মাঝে চেপে ধরল। কা*টা স্থানগুলোতে তার ব্যথার অনুভূতি হচ্ছে তবুও সে অয়ন্তীকে বুকের মাঝে সঁপে নিলো। শিথিল গলায় বলল,,
“ব্যথাগুলো সব দূরে সরে যাচ্ছে। এভাবেই কিছুক্ষণ জড়িয়ে থাকো আমাকে। ডক্টর ডাকার কোনো তাড়া নেই। এত সহজে আমার মৃ*ত্যু নেই।”
#চলবে…?