এক খণ্ড কালো মেঘ পর্ব -৪৩

#এক_খণ্ড_কালো_মেঘ
#পর্ব_৪৩
#নিশাত_জাহান_নিশি

“তুমি কেন সরি বলছ পরাণ? সরি তো আমার বলার কথা। আমার ঐসময় বুঝার উচিৎ ছিল তুমি আমাকে নিয়ে টু মাচ পসেসিভ। উটকো রাগ দেখালাম আমি। এখন এসব বাদ দাও প্লিজ। আগে বলো তোমার এত জ্বর হলো কখন?”

ঠাণ্ডায় নাক থেকে অনর্গল পানি গড়াতে লাগল অয়ন্তীর। শরীরে অতিরিক্ত গরম ভাপের কারণে সর্বাঙ্গ রীতিমত কাঁপছে তার। জ্বরে চোখ দুটি লালে রঙিন হয়ে এতটাই কাতর হয়ে উঠেছে যে টপটপ করে পানি ঝড়ছে নেত্রপল্লব থেকে। এই সর্বনাশা জ্বর যেন অয়ন্তীকে ভেতরে থেকে দু’ম’ড়ে মু’চ’ড়ে দিচ্ছে! হাতের উল্টো পিঠ দ্বারা নাকের সর্দি গুলো মুছল অয়ন্তী। দুর্বল গলায় জবাবে রাফায়াতকে বলল,,

“আপনি আসার পর থেকেই প্রচণ্ড জ্বর বেঁধেছে আমার। ঠাণ্ডা, কাশি, শ্বাস ফেলতেও কেমন যেন কষ্ট হচ্ছিল।”

“টাইম টেবিল ছাড়া ভর সন্ধ্যায় শাওয়ার নিলে তো এমনই হবে! কী দরকার ছিল বলো? অসময়ে শাওয়ার নেওয়ার? এমনিতেই এখন হালকা ঠাণ্ডা পড়ছে। মৌসুম চেঞ্জ হচ্ছে। কেন এত নির্বোধের মত কাজ করো অয়ন্তী? তুমি কী এখনও ছোটো? ভালো মন্দ বুঝার বিচার বিবেচনাবোধ নেই তোমার মধ্যে?”

“আপনার সাথে রাগ করেই তো এতকিছু হলো! কাঁদতে কাঁদতে মাথা গরম হয়ে গিয়েছিল আমার। সমস্ত শরীর জ্বালা-পোঁড়া করছিল৷ ঐ সময় শাওয়ার না নিলে দেহে মনে শান্তি পেতাম না।”

“এখন শান্তি পাচ্ছ তো? জ্বর বাঁধিয়ে রেখেছ। আ’হা’ম্মক কোথাকার। ধরে ধরে থা’পড়া’তে ইচ্ছে করছে। এখনও আমার হাতের রা’ম ধো’লা’ই খাওনি তো তাই এত অবাধ্যতা করতে পারছ। নিজের খেয়াল খুশিমত চলতে পারছ।”

গভীর ক্ষিপ্রতা প্রকাশ করে অয়ন্তীকে ছেড়ে দাঁড়ালো রাফায়াত। হন্ন হয়ে সে ওয়াড্রব থেকে একটি রুমাল খুঁজে বের করল। রুমালটি হাতে নিয়ে সোজা ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ল। পানিতে ভালোভাবে রুমালটি ভিজিয়ে পুনরায় সে রুমে প্রবেশ করল। পিটপিটে চোখে অয়ন্তী রাফায়াতের গতিবিধি লক্ষ্য করতে লাগল। রুমালটি ভালো ভাবে নিংড়িয়ে রাফায়াত দ্রুত পা ফেলে অয়ন্তীর পাশে এসে বসল। কপালে হাত রেখে দেখল হাত যেন রীতিমত পুড়ে যাচ্ছে তার! মুহূর্তেই এত জ্বর ওঠা কীভাবে সম্ভব? রুমালটা ভাঁজ করে রাফায়াত জলপট্টি দিলো অয়ন্তীর কপালে৷ ঠাণ্ডা পানির ছোঁয়া পেতেই দাঁতে দাঁত সংঘর্ষিত হলো অয়ন্তীর! শীতে ঢকঢক করে কাঁপতে লাগল সে। নাক-মুখ খিঁচে ধরে কপাল থেকে জলপট্টিটি সরানোর চেষ্টা করল। তৎক্ষনাৎ রেগে গেল রাফায়াত। রুমালটি শক্তভাবে অয়ন্তীর কপালে চেপে ধরে ধমকের স্বরে বলল,,

“স্টপ ইট। বেশী বাড়াবাড়ি করবেনা। জ্বর বাঁধিয়ে রেখেছ এখন আবার কষ্ট ভোগ করতেও নারাজ? আমি তো এখন তোমাকে ঠাণ্ডা পানিতে চু’বা’ব! চে’পে ধরে রাখব ঠাণ্ডা পানিতে। এত তেজ কেন হ্যাঁ? কী দরকার ছিল আমার সাথে রাগ দেখিয়ে নিজের ক্ষতি করার? প্রয়োজনে আমার ক্ষতি করে দিতে। ঠাটিয়ে দুটো চ’ড় মে’রে দিতে গালে! তবুও নিজের ক্ষতি না করতে।”

ফ্যাঁস ফ্যাঁস করে কেঁদে দিলো অয়ন্তী। মায়া কান্নায় রাফায়াতকে ভুলাতে চাইল সে। কথার জালে রাফায়াতকে পুরোপুরি ফাসাতে চাইল। নাজুক স্বরে বলল,,

“একটুও ভালোবাসেন না আমাকে! এই প্রচণ্ড শরীর খারাপের মধ্যেও আপনি আমার সাথে বাজে ব্যবহার করছেন। হু’ম’কি ধ’ম’কি দিচ্ছেন। আমি এক্ষণি বাড়ি ফিরে যাব। আপনার কাছে আসাটাই আমার ভুল হয়েছে।”

রাফায়াতের সহানুভূতি অর্জন করার জন্য অয়ন্তী এই নিঁখুত নাটকীয়তার আশ্রয় নিলো! ঘোর জ্বরে আক্রান্ত শরীর নিয়ে সে শোয়া থেকে উঠার পূর্বেই বিছানার মধ্যে রাফায়াত অয়ন্তীকে দু’পাশ থেকে চেপে ধরল। রুক্ষতা ভুলে নরম স্বরে বলল,,

“আচ্ছা আর ব’ক’ব না। কোথাও যাবা না তুমি। মাথায় পানি ঢালতে হবে তোমার। হালকা কিছু খেয়ে একটা নাপা এক্সট্রা খেলেই তোমার জ্বর সেরে যাবে।”

শান্ত হয়ে এলো অয়ন্তী। নাটকীয়তা ছেড়ে আবার ও জ্বরের ঘোরে কাতরাতে লাগল। শরীরের দুর্বলতার কারণে চোখ মেলে তাকাতে না পারলেও সে এদিক ওদিক মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ সূচক সম্মতি জানালো। রাগ ভুলে অয়ন্তীর কপালে ভালোবাসার পরশ ছুঁইয়ে দিলো রাফায়াত! অসুস্থ অবস্থাতেও মিটিমিটি হেসে উঠল অয়ন্তী। একটুখানি প্রশান্তির দেখা মিলল যেন। তৎক্ষনাৎ অয়ন্তীকে ছেড়ে দাঁড়ালো রাফায়াত। ওয়াশরুম থেকে বালতি ভর্তি পানি এনে অসুস্থ অয়ন্তীর মাথায় অনবরত পানি ঢালতে লাগল। ঠাণ্ডায় বারংবার কেঁপে কেঁপে উঠছিল অয়ন্তী। বার কয়েক শোয়া থেকে ওঠে যাওয়ারও চেষ্টা করেছিল। প্রতি বারই জোর করে রাফায়াত তাকে চে’পে ধরেছিল৷ অঝরে কাঁদতে লাগল অয়ন্তী। তবুও মন গললনা রাফায়াতের। সে তার কাজ অবিচল রইল। এভাবে প্রায় ঘণ্টাখানিক অয়ন্তীর মাথায় পানি ঢালা হলো রাফায়াতের। জ্বর স্বাভাবিকভাবেই নেমে আসছিল অয়ন্তীর। শরীরের তাপমাত্রাও হ্রাস পেল। মাথাটা ভালোভাবে মুছে অয়ন্তীকে শোয়া থেকে টেনেটুনে বসালো রাফায়াত। রান্নাঘর থেকে কিছু খাবার এনে জোর করে খাইয়ে দিলো অয়ন্তীকে। প্রাথমিকভাবে একটা নাপা এক্সট্রা খাইয়ে অয়ন্তীকে সে তার ভাবির রুমে রেখে এলো! বিয়ের আগে এক রুমে থাকা বিষয়টা আসলেই দৃষ্টিকটু। তাছাড়া ভুলভাল কিছু ঘটে যাওয়ারও সম্ভাবনা থাকতে পারে। তাই সব দিক ভেবেচিন্তেই রাফায়াতের এই সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া।

সারারাত ছটফট করল রাফায়াত। ঘণ্টায় চারবার করে ফোন করে বিরক্ত করল তার ভাবিকে! অয়ন্তী ঘুমুচ্ছে কী-না, জ্বর নেমেছে কী-না, বমি টমি হচ্ছে কী-না এসব জানতে চাইল। এইদিকে বেঘোরে ঘুমুচ্ছে অয়ন্তী! পারিপার্শ্বিক কোনো দিকেই খেয়াল নেই তার। রাফায়াতের একনিষ্ঠ সেবা তাকে মোটামুটি সুস্থ করে তুলছে। দুঃশ্চিন্তা করতে করতে ভোরের দিকে কোনোমতে চোখ লেগে এলো রাফায়াতের৷ সেই ঘুম ভাঙল তার সকাল এগারোটায়! তাও আবার তার মায়ের চ্যাঁ’চামে’চিতে। রাতেও না খেয়ে-ই ঘুমিয়েছে সে। বেলাও গড়িয়ে যাচ্ছে খাবারদাবারের সাথে কোনো খবর নেই তার। খাবার নিয়ে এত অনিয়ম করলে সস্পূর্ণ সুস্থ হবে সে কীভাবে?

ফ্রেশ হয়েই রাফায়াত প্রথমে তার ভাবির রুমে গেল। বিছানা গুছোচ্ছে তার ভাবি। রাফায়াতকে উদ্ভ্রান্ত অবস্থায় দেখে তিনি উদগ্রীব গলায় প্রশ্ন ছুড়লেন,,

“কী হয়েছে রাফায়াত? কিছু বলবে?”

সমস্ত রুমে অস্থির চোখ বুলালো রাফায়াত। কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তিটির দেখা মিললনা কোথাও। ঘাবড়ে উঠল সে। শুষ্ক গলায় তার ভাবিকে বলল,,

“অয়ন্তী কোথায় ভাবি?”

“অয়ন্তী তো সেই ভোরেই বাড়ি ফিরে গেছে রাফায়াত। আজ নাকি তার ভার্সিটিতে ইম্পর্টেন্ট ক্লাস আছে তাই।”

“সে বলল আর তুমিও তাকে যেতে দিলে? দেখোনি কাল রাতে কতটা অসুস্থ ছিল সে?”

“আমি অনেকবার নিষেধ করেছিলাম রাফায়াত। অয়ন্তী শুনেনি আমার বারণ। বলল যেতেই হবে। কয়েকদিন বাদেই না-কী তার ইনকোর্স এক্সাম।”

“ধ্যাত! তোমার উপর ভরসা করাটাই আমার ভুল হয়েছে!”

রাগে গজগজ করে রুম থেকে বের হয়ে গেল রাফায়াত। মুখ ফুলিয়ে নিলো রাফায়াতের ভাবি! তার দোষটা কোথায় ছিল? একটা মানুষ থাকতে না চাইলে তাকে আটকে রাখবে কীভাবে? অযথাই রাফায়াত তার সাথে রাগারাগি করল! মনটাই তার খারাপ করে দিলো। আবারও যেন বদরাগী হয়ে উঠছে রাফায়াত। কারো কথা বুঝতেই চায়না।

সকালের নাশতাটাও পেটে পড়ল না রাফায়াতের। অগোছালোভাবেই সে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেল। উদ্দেশ্য অয়ন্তীর ভার্সিটি। আরিফকেও সাথে নিয়ে নিলো সে। যেহেতু ভার্সিটিতে তার তেমন জানা শোনা নেই তাই সহচর হিসেবে আরিফের বাইকে করেই তার ভার্সিটিতে যাওয়া। আরিফের সাহায্যে অয়ন্তীর ক্লাসরুম খুঁজে বের করল রাফায়াত। ক্লাস চলাকালীন অবস্থাতেই ক্লাসের মধ্যে ঢুকে পড়ল সে! ব্যবস্থাপনা ক্লাস চলছিল অয়ন্তীর। ক্লাসটা মৃণালিনী ম্যাম নিচ্ছিলেন। হঠাৎ রাফায়াতকে ক্লাসে ঢুকতে দেখে তিনি আকস্মিকতায় কপাল কুঁচকালেন। চশমার উপর থেকে রাফায়াতের দিকে উদ্ভট দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন। হঠকারি গলায় শুধালেন,,

“কী ব্যাপার? পারমিশন ছাড়া ক্লাসের মাঝখানে ইন করলে কেন হুম? কোন ডিপার্টমেন্টের তুমি?”

মাথা চুলকালো রাফায়াত। হেয়ালি ভাব নিলো সে। ভরা ক্লাসের সবাই রাফায়াতের দিকে উজবুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। অয়ন্তী যেন টুপ করে আকাশ থেকে মাটিতে ছিটকে পড়ল। অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে সে রাফায়াতের দিকে কেবল তাকিয়ে-ই রইল। মুখ পুরোপুরি হা তার। অনুভূতিশূণ্য সে। নির্বাক মূর্তিপ্রায়। এভাবে কীভাবে রাফায়াত ছুটে আসতে পারে তার ভার্সিটিতে? তাও আবার তার ক্লাসের ভেতরে? আলিজা পাশ থেকে অয়ন্তীকে কনুই দ্বারা খোঁচাতে লাগল। ফিসফিস করে বলল,,

“তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছিসটা কী হুম? ম্যাম রেগে যাওয়ার আগে-ই জায়গা থেকে ওঠে দাঁড়া। আর রাফায়াতকে ভাইকে নিয়ে ক্লাস থেকে বের হ।”

ম্যামের কথায় তেমন গ্রাহ্য করলনা রাফায়াত। ভরা ক্লাসরুমে সে কেবল সূক্ষ্ম দৃষ্টি ফেলে অয়ন্তীকে অবিশ্রান্ত ভাবে খুঁজতে লাগল। ডান পাশের সারির ঠিক মাঝখানের সিটটিতে হঠাৎ অয়ন্তীর দেখা মিলল তার! সঙ্গে সঙ্গেই স্মিত হেসে রাফায়াত ম্যামের দিকে তাকালো। উচ্ছ্বাসিত গলায় বলল,,

“সরি টু সে ম্যাম। অয়ন্তীকে একটু বাইরে বের হওয়ার পারমিশন দিবেন প্লিজ? জাস্ট টেন মিনিটসের জন্য?”

“হোয়াট? তোমার পরিচয় দাও আগে কে তুমি? আমাদের কলেজের স্টুডেন্ট-ই তো না-কী?”

“না ম্যাম। একচুয়েলি আমি অয়ন্তীর উডবি হই! জরুরি দরকারে-ই হঠাৎ তার সাথে দেখা করতে আসা। প্লিজ পারমিশন দিবেন? জাস্ট টেন মিনিটসের জন্য? আবারও সরি বলছি। আপনাকে বিরক্ত করার জন্য।”

ম্যাম হয়রান হয়ে গেলেন রাফায়াতের ব্যবহারে। ক্লাসের মাঝখানে এসে এমন অভদ্রতামো কেউ করে? অয়ন্তীর দিকে তিনি তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন। অমনি অয়ন্তী ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে তড়তড়িয়ে বসা থেকে ওঠে দাঁড়ালো। ব্যাগপত্র গুছিয়ে সে দ্রুত গলায় ম্যামকে বলল,,

“ইট’স আর্জেন্ট ম্যাম। প্লিজ আমি আসছি।”

ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলেন ম্যাম। হাতে থাকা বইটি তিনি টেবিলের উপর সশব্দে রাখলেন। হাত নাড়িয়ে উগ্র গলায় অয়ন্তীকে বললেন,,

“গেট আউট ফ্রম মাই ক্লাসরুম!”

এক ন্যানো সেকেন্ডও দাঁড়ালো না অয়ন্তী! চ্যালচ্যালিয়ে হেঁটে সে রাফায়াতের হাত টেনে ধরে হুড়মুড়িয়ে ক্লাসরুম থেকে বের হয়ে গেল। টানতে টানতে তাকে নিয়ে করিডরে চলে এলো। গরম দৃষ্টি নিক্ষেপ করল সে নিশ্চল রাফায়াতের দিকে। উঁচু গলায় আওয়াজ তুলে বলল,,

“দিলেন তো আমার প্রেস্টিজের বারোটা বাজিয়ে? কী দরকার ছিল বলুন? ক্লাসের মাঝখানে এভাবে অভদ্রের মত ঢুকে পড়ার? অন্তত পারমিশন তো নিতে পারতেন? ম্যামের কাছেও ছোটো করলেন আমার ফ্রেন্ডসদের কাছেও!”

রাফায়াতও শার্টের হাতা গুটিয়ে রাগী ভাব নিলো! ঝাঁজিয়ে উঠল যেন। দাঁতে দাঁত চেপে খরতর গলায় বলল,,

“না বলে ভার্সিটিতে আসলে কেন হুম? টেনশন হচ্ছিল না আমার? জ্বর কমল কী-না নাকি অসুস্থ শরীর নিয়েই চলে এলে! কাল রাত থেকে দুর্বল ছিলে তো নাকি? যদি মাথা টাথা ঘুরিয়ে পড়ে যেতে? কী হত তখন? রিস্ক নিত কে? এসব চিন্তা করেই মাথা ঠিক ছিলনা আমার। ব্রেকফাস্ট না করেই পাগলের মত ছুটে এসেছি।”

কিছু মুহূর্তের যেন অয়ন্তী থমকে দাঁড়ালেও রুক্ষতা ভুলে বেশ শিথিল গলায় বলল,,

“ঠিক আছে। বাট চাইলে ফোন করেও খবর নিতে পারতেন! ফোন তো আমার সাথেই ছিল।”

“ফোনে কথা বলা আর সামনাসামনি দেখা করা কী এক? ফোনে তো তোমাকে ছুঁয়ে দেখতে পারতাম না, জ্বর নামল কী-না। সুস্থ আছো কী-না!”

উদ্বিগ্ন হয়ে অয়ন্তীর কপালে হাত রাখল রাফায়াত। চেক করে দেখল জ্বর আসলেই অনেকখানি নেমে গেছে। শরীরের টেম্পারেচারও এখন ঠিকঠাক আছে। দুঃশ্চিন্তার আর কোনো কারণ নেই। হাঁফ ছেড়ে যেন বাঁচল রাফায়াতম স্বস্তির শ্বাস ফেলল সে। স্থবির গলায় বলল,,

“থ্যাংকস গড। নাও ইউ আর টোটালি ফিট এন্ড ফাইন। এত আর্লি জ্বর নেমে যাবে ভাবতেও পারিনি। বাই দ্যা ওয়ে, যাও এবার ক্লাসে যাও। ক্লাস শেষে দেখা হচ্ছে।”

অয়ন্তীকে ডিঙিয়ে রাফায়াত হম্বিতম্বি হয়ে প্রস্থান নিলো জায়গা থেকে। অমনি অয়ন্তী দৌঁড়ে এসে রাফায়াতের মুখোমুখি দাঁড়ালো। চলতি পথে রাফায়াতকে থামিয়ে দিলো। হাঁপিয়ে ওঠা গলায় বলল,,

“যাচ্ছেনটা কোথায়?”

“ক্যাম্পাসের বাইরেই আছি। তুমি ক্লাস শেষ করে এসো ওকে?”

“না৷ ক্যান্টিনে চলুন।”

“মানে? ক্লাস করবা না তুমি?”

“আপনার কী মনে হয়? ম্যাম আমাকে আর ক্লাসে ঢুকতে দিবে?”

“সরি। বিরক্ত করলাম তোমাকে!”

“এসব পরে হবে। আগে বলুন না খেয়ে এসেছেন কেন? রাতেও তো বোধ হয় খাননি।”

“তুমি না বলে চলে এসেছিলে তাই আমিও না খেয়ে চলে এসেছি। ইকুয়েল ইকুয়েল।”

বলেই হেঁতো হাসল রাফায়াত। অয়ন্তীও হু হু করে হেসে উঠল। পাশে যে ক্লাস চলছে রীতিমত ভুলেই বসল তারা। জানালার কাঁচ দ্বারা অয়ন্তীর ক্লাসের সব ফ্রেন্ডসরা রাফায়াত এবং অয়ন্তীকে হা করে দেখতে লাগল। তাদের দুজনের এত মাখোঁ মাখোঁ ভালোবাসা দেখে তারা রীতিমত শকড! কী সুন্দর বন্ডিং তাদের। এই স্বার্থপর যুগে এমন সহজ, সরল এবং নিঃস্বার্থ ভালোবাসা তেমন একটা দেখতে পাওয়া যায়না। বিশেষ করে রাফায়াতের উপর ফিদা সবাই! অয়ন্তীর প্রতি কী পরিমান সিনসিয়ার সে। মন থেকে হান্ড্রেড পার্সেন্ট কেয়ারিং একজন মানুষ বলেই মনে হচ্ছে। যার কাছে প্রতিকূল সব পরিস্থিতিই তুচ্ছ। কেবল ভালোবাসার মানুষটিই মুখ্য! মনোযোগ যেন সবার রাফায়াতের দিকে। ক্লাসরুম থেকে মৃণালিনী ম্যাম বিষয়টি খেয়াল করছিলেন। পূর্বের তুলনায় তিনি আরও অধিক রেগে গেলেন। ধপাধপ পা ফেলে ক্লাসরুম থেকে বের হয়ে এলেন। হাত নাড়িয়ে অয়ন্তীকে পুনরায় শাসিয়ে বললেন,,

“কী ব্যাপার? তোমরা এখনো এখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন? যাও বলছি এখান থেকে! তোমাদের জন্য ক্লাসের বাকীদের ডিস্টার্ব হচ্ছে।”

মুখ চেপে হাসি থামালো অয়ন্তী। রাফায়াতকে জোর করে টেনে ধরে সে করিডর থেকেও বিদায় নিলো। ছুটতে ছুটতে সোজা ক্যান্টিনে চলে এলো। দুজনের জন্য বার্গার এবং স্যান্ডুইচ অর্ডার করল। অয়ন্তী হঠাৎ রাফায়াতের দিকে ঈষৎ ঝুঁকে এসে অধীর গলায় শুধালো,,

“একটা জিনিস নোটিশ করেছেন আপনি?”

“কী?”

“আমার উপরের ঠোঁটটা ফুলে আছে!”

“বেশী ঘাড়ত্যাড়ামো করলে তো এমনই হবে পরাণ!”

“মানে?”

ঠোঁট কামড়ে ধরল রাফায়াত! দুষ্টু ভাব নিলো সে। ঝুঁকে এসে অয়ন্তীর দিকে নেশাভরা দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। রসালো গলায় বলল,,

“উফফফ! রাতে যা হয়েছে না!”

“মামামানে? কীকীকী হয়েছে?”

“আমি কিন্তু ফার্স্টে কিছুই করতে চাইনি পরাণ। তুমিই বাধ্য করেছিলে!”

#চলবে…?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here