এক চিলতে রোদ ২ পর্ব -১১+১২

#এক_চিলতে_রোদ-২
#Writer_Nondini_Nila

১১.

আজকে ইহানকে বাসায় যাওয়ার অফার করলাম কিন্তু কিছু বললো না।‌ যে রিকশায় এসেছি সেটায়‌ই চলে গেলো। আমি তাকিয়ে ছিলাম রিকশা যতক্ষণ ছিলো ততক্ষণ। চোখের আড়াল হতেই ভেতরে চলে গেলাম। আম্মু আজ আমাকে বকলো আমি চুপ করে বকা হজম করে নিলাম দোষ আমার তাই হজম তো করতেই হবে। ইহানের সাথে এক রিকশায় আসতে খুব অস্বস্তি লেগেছে। ইহান হয়তো তা বুঝতে পেরেছিলো তাই বলেছিলো,

‘ আমার সাথে এক রিকশায় যেতে তোমার প্রবলেম হলে ও যেতে হবে। কারণ এখন আমি আরেকটা রিকশা খুঁজতে পারবো না।’

আমি খুব অপ্রস্তুত হয়ে পড়ি ইহানের কথায় আর উনি আমার দিকে বিরক্তিকর চোখে তাকিয়ে থাকে। আমি আমতা আমতা করে বলি,

‘ সমস্যা নাই। চলুন।’

বলেই আমি একদম কোনা ঘেঁষে বসে ছিলাম‌। রিকশা ছারতেই আমি কিনারায় বসার জন্য পড়ে যেতে নেয় তা দেখে ইহান আমার ডান বাহু চেপে ধরে টেনে নেয় নিজের দিকে আর বলে,

‘ প্রবলেম কি তোমার? রিকশার নিচে পরে মরতে চাও নাকি? একদিন ট্রাকের নিচে একদিন রিক্সায় নিচে যতসব ফালতু!’

আমি চমকে উঠে বললাম, ‘ আমি মরতে চাইনি সেদিন কতো বার বলবো!’

‘ ভালো। তো এখন এমন করছো কেন? আমার সাথে গা ঘেঁষলে কি তোমার গায়ে ফোসকা পরবে নাকি?’

‘ না মানে আসলে…

আমি চুপ করে যাই। কি বলবো? উনার কাছে থাকলে যে আমার বুক ধুকপুক করে, হাত পা কাঁপে, অস্থির লাগে তা উনাকে কি করে বুঝাবো। ইহান আমাকে আর কিছু বললো না। আমাকে নামিয়ে দিয়ে চলে গেলো।আমি কথা বললেও তিনি কিছু না বলে চলে গেলো।
স্কুল থেকে ও আমি আরো দুইবার গেছি হাসপাতালে। কিন্তু পরিবারের কারো সাথে তেমন দেখা হয়নি। ইহানের সাথেও না। একদিন ইমা আপুর বাবা ছিলো। তার সাথে হালকা কথা বলেছি। কথা বলার থেকে আমি তার দিকে হা করে তাকিয়ে ছিলাম বেশি।কারণ তিনি দেখতে একদম আমার আব্বুর মতো। আমি চমকে গেছিলাম। সেদিন বাসায় এসে রাতে আব্বুকে বললাম,

‘ জানো আব্বু আজ একদম তোমার মতো দেখতে একটা আঙ্কেল দেখেছি।’

আমার কথা শুনে আব্বু ও অবাক চোখে তাকালো। আমি বললাম,

‘ ওই সেদিন একটা আপুকে রক্ত দিয়েছিলে না। তার আব্বু তোমার মতো দেখতে অনেকটা।’

‘ ও আচ্ছা। এক রকম দেখতে অনেক মানুষ আছে এই পৃথিবীতে।’

‘ আমি ভেবেছিলাম যেন আমার কাকা ওটা। আচ্ছা আব্বু আমার কোন কাকা, দাদা দাদী নাই?’

‘ আছে থাকবে না কেন?’

‘ সত্যি তাহলে আমি তাদের চিনি না কেন?’

‘ একটা ঝামেলায় তাদের সাথে আমাদের যোগাযোগ নাই মা!’

‘ কি ঝামেলা আব্বু?’

‘ অন্য একদিন বলবো এখন যাও ঘুমাও।’

‘ আচ্ছা।’

এসব বিষয়ে যতবার জিজ্ঞেস করেছি এক কথায় বলেছে আব্বু। কিন্তু পরে আর কিছু জানায় নি।
ফেসবুক লগইন করে ফ্রেন্ডদের সাথে কথা বললাম কিছুক্ষণ তারপর কি মনে করে যেন ইহানের নাম করে সার্চ করলাম আর পেয়েও গেলাম তার আইডি। আইডি চেক করলাম। প্রোফাইলে পিক নীল শার্ট পরে স্টাইল করে দাঁড়িয়ে আছে। চোখে সানগ্লাস। হাতে ঘড়ি, ব্রাউন রঙের প্যান্ট। আমি এক দৃষ্টিতে কিছু ক্ষণ তাকিয়ে থেকে অফ লাইন হয়ে গেলাম।

কয়েকদিন পর

রিমঝিম আপুর বিয়ে। রিমঝিম হচ্ছে আমাদের ফ্রেন্ড রিমার বড় বোন‌। বিয়েতে দাওয়াত করলো আমাদের ফ্রেন্ড সবাইকে গায়ে হলুদ থেকে। আমি রাজি আছি শুধু সমস্যা বাবা মা কে নিয়ে তারা থাকতে দিবে ত? রিমা কে বললাম তুই আম্মুকে রাজি করা প্লিজ। আমরা বিয়ে অনুষ্ঠানে খুব পছন্দ তাই যাওয়ার আগ্রহ অনেক।তুলি তো যাবেই আমিও রাজি বাকিরা সিউর নাই। রিমা আমার সাথে বাসা গিয়ে আম্মু কে কার্ড দিলো আর অনেক অনুরোধ করলো রাজি হতে। আম্মু রাজি হলো না। আমি মন খারাপ করে র‌ইলাম। তিন দিন পর গায়ে হলুদ। আমার যাওয়া হবে না। আম্মু বলেছে বিয়ের দিন সকাল গিয়ে বিকেলে আসবো। আমার ভালো লাগছে না।
রুমে এসে মন খারাপ করে র‌ইলাম। রাতে আমি মুখ গোমড়া করে র‌ইলাম। পরদিন ও আব্বু তা দেখে জিজ্ঞেস করলো আমার মন খারাপ কেন? আমি বলে দিলাম আর এবার আম্মুর জায়গায় আব্বু রাজি হলো আমাকে অবাক করে দিয়ে।আমি আব্বুকে জরিয়ে ধরে ধন্যবাদ দিলাম। একটা সুন্দর
গিফট কিনলাম।‌‌এদিকে রিমা ওর আব্বুকে দিয়ে আমার আব্বুর সাথে কথা বলিয়ে ছে। একদিন আগেই রিমা এসেই আমাকে নিয়ে গেলো। তুলি কাল আসবে ও ফুপির বাসায় গেছে নাকি।
রিমঝিম আপু ও বাসার সবার সাথে পরিচয় হলাম। সবাই খুব মিশুক আর ভালো। কিছুক্ষণের মধ্যেই আমার সাথে মিশে গেলো যেন আমি তাদের বাড়ির মেয়ে আমিও তেমন করেই চলছি।
বাসায় অনেক আত্মীয় স্বজন আছে। অনেকে ভালো আবার অনেক ঝামেলা জনক। একজন আছে সারা ক্ষণ চিৎকার করতে থাকে সব কিছু নিয়ে। রিমঝিম আপু এই চেঁচামেচি তে তার হবু বর সাইদ ভাই এর সাথে কথা বলতে পারছে না তাই আমাকে টেনে ছাদে নিয়ে এলো। আপুদের বাসার সাথে একটা খেলার মাঠ আছে সেখানেই বিয়ের আয়োজন হবে। আমি সেই মাঠের দিকে তাকিয়ে আছি। মনে হচ্ছে পরিচিত কাউকে দেখছি। কিন্তু কে আমি এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে চেনার চেষ্টা করছি পারছি না। আপু কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে কথা বলেই যাচ্ছে।আমি তার দিকে তাকিয়ে দেখলাম আবার মাঠের দিকে তাকিয়ে দেখি নাই। কোথায় গেলো? খয়রে কালারের টি-শার্ট ছিলো। আমি উঁকি ঝুঁকি মেরে খুঁজছি তখন একটা পরিচিত কন্ঠস্বর ভেসে আসে কানে। আমি চমকে পেছনে তাকায়। আমার সামনে দাড়িয়ে আছে ইহান। আমি ভয় পেয়ে বুকে ফূ দিয়ে তার দিকে তাকিয়ে বলি,

‘ আপনি এখানে কি করছেন?’

‘ আমার ও তো এক‌ই প্রশ্ন তুমি এখানেই কি করছো? ‘

‘ রিমার আমার ফ্রেন্ড। সেই সুবাদে!’

‘ ওহ আচ্ছা। তা আমার দিকে ওমন হা করে তাকিয়ে ছিলে কেন?’ ভ্রু কুঁচকে বললো।

আমি অবাক গলায় বললাম, ‘ কি বলছেন? আমি আপনার দিকে তাকিয়ে থাকলাম কখন?’

‘ এই মাত্র ওই মাঠে আমার দিকে হা করে তাকিয়ে ছিলে না তুমি?’

‘ আপনি ওইখানে ছিলেন?

বলেই ইহানকে ভালো করে দেখলো। খয়ের টি শার্ট ওনার গায়ে তার মানে উনি‌ই ওখানে ছিলো। আর আমার কাছে চেনা চেনা লাগছে। আমি তো বুঝতেই পারিনি।

রিমঝিম আপু এগিয়ে এসে বলল, ‘ ভাইয়া তুমি এখানে কি করছো?’

‘ কিছু না। আর তুই এতো রাতে এখানে কি করছিস যা রুমে যা। দুইদিন তর সইছে না!’

রিমঝিম আপু লজ্জা লাল হয়ে গেলো আর আমাকে টেনে নিচে চলে এলো।আমি জিজ্ঞেস করলাম ইহান উনার কি হয় বললো খালাতো ভাই।আমি ওহ আচ্ছা বলে বিছানায় পা গুটিয়ে বসলাম।
রিমা কি জানি কাজ করছে একটু পর এসে আমাকে নিয়ে খেতে গেলো। ইহান একপাশে বসে গপাগপ খাচ্ছে আমাকে তার সামনাসামনি বসতে হলো পাশে রিমা। আমি তার সামনে খেতে লজ্জা পাচ্ছি তাই খেতে পারছি না। একটু পর পর ইহানের দিকে তাকাচ্ছি কিন্তু ইহান একমনে খেয়ে যাচ্ছে। একবারও আমার দিকে বা আশেপাশে কোন দিকে তাকাচ্ছে না। আমি ভাতের মধ্যে শুধু আঙ্গুল চালাচ্ছি খেতে পারছি না তাই রিমা বলে উঠলো,

‘এই ঊষা খাচ্ছিস না কেন তাড়াতাড়ি খা। ঘুমাবো বারোটা বাজতে চলল প্রায়।’

ইহানসহ টেবিলের সবাই আমার দিকে তাকালো আমি ঢোক গিলে শুকনা ভাতে মুখে পুরে নিলাম। তা দেখে ইহান বললো,

‘বান্ধবীকে শুকনো ভাত দিয়ে রেখেছিস শুধু তরকারি দে ইডিয়েট।’

রিমা আমাকে গোস্ত মাছ সবকিছু দিয়ে দেখিয়ে বলেছে নিয়ে খেতে কিন্তু আমি নিজেই নিয়ে নি। এবার ইহানের কথা শুনে আমার প্লেটের দিকে তাকিয়ে বলল ,

‘তোকে না ইচ্ছামতো নিয়ে খেতে বললাম কিছুই নিস নি কেন?’

বলেই চিংড়ি মাছ দিতে এলে আমি তাড়াতাড়ি প্লেট সরিয়ে বললাম, ‘চিংড়ি দিস না।’

‘কেন চিংড়িতে কি হইছে খুব টেস্টি হয়েছে খেয়ে দেখ!’

‘আমি চিংড়ি খাইনা! আমাকে অন্য কিছু দে!’

‘কি এত মজা চিংড়ি তুই খাস না! মিস করলি।’

বলেই গরুর দোস্ত দিলো। ইহান আমার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে ছিলো।
আমি গোস্ত দিয়ে গেয়ে নিলাম চলে এলাম রুমে আর ধপাস করে বিছানায় শুয়ে পরলাম।
#এক_চিলতে_রোদ-২
#Write_Nondini_Nila

১২.

পরদিন তুলি চলে আসে সকাল সকাল। তুলি এসেই ইহানকে দেখে চমকে যায়। আর ইহানের কাছে গিয়ে কি যেন কথা বলে, আমি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছি। ও এসে আমার বাহু খামচে ধরে রুমে আসে। আর এসেই কিভাবে গায়ে হলুদ এ শাড়ি পরবে তা নিয়ে আলোচনা করতে লাগলো। রিমা এসে আমাদের নিয়ে মাঠে এলো। এখানে গায়ে হলুদ এর আয়োজন করা হচ্ছে। স্টেজ সাজানো হচ্ছে। আর পাশে দাঁড়িয়ে ইহান তাদেরকে দেখিয়ে দিচ্ছে কিভাবে কি করতে হবে। আমরা চারপাশে ঘুরে দেখছি।

‘আমার না পা ব্যাথা করছে রে।’ তুলি বলেই পা উঁচু করে দেখালো কাটা জায়গা।

‘ কাটলো কি করে?’ রিমা বললো।

‘ আর বলিস না। আমার শয়তান মামাতো ভাই এর জন্য। একটু বসার কিছু দে না মনে হচ্ছে পায়ে ময়লা গেছে।’

রিমা বললো , দাঁড়া দিচ্ছি।’

রিমা চেয়ার খুঁজবে এমন সময় বাসা থেকে ওর ডাক পরলো আঙ্কেল ডাকছে কোন দরকারে মনে হয়।

‘ এই আব্বু ডাকছে। আমি শুনে এসে তোকে চেয়ার দেবো একটু দাঁড়া।’

বলেই রিমা দৌড়ে বাসায় চলে গেলো।
এবার তুলি আমাকে চেয়ারে ব্যবস্থা করতে বললো।ওর নাকি পা চুলকাচ্ছে। না দিলে বসেই পরবে।

আমি বললাম, তাহলে চল বাসায় গিয়ে দেখি।

‘ যেতে পারলে তো।’

আমি বললাম, ‘ কি দিবো। এখানে কি আছে বসার? যে কয়টা চেয়ার সব তো দখল করা।’

‘ ওই যে ইহান ভাইয়ের পেছনে ওইটা দে না। ভাই তো না বসে ফোনে কথা বলছে তার ওইটা দরকার নাই। আমি একটু বসে দেখি ময়লা ঢুকে গেলো নাকি!’

বাধ্য হয়ে এগিয়ে গেলাম ইহানের দিকে তিনি অনেকক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে আছে বসছে না ওইটাই আনি। ইহান বাম হাত পকেটে রেখে ফোন কথা বলছে আমি পেছনে থেকে চেয়ার টেনে একটু সরাতেই ধপাস করে শব্দ চমকে পেছনে তাকিয়ে থমকে গেলাম। আমি চেয়ার টেনে ঘুরে গেছিলাম আর এদিকে ইহান আমি চেয়ার নিতেই চেয়ার বসতে গেছিলো আর ঘটলো অঘটন।চেয়ার না থাকায় তিনি ঘাসের উপর পড়ে গেছে। আমি মৃদু চিৎকার করে উঠলাম। ভয়ে আমি মুখে দুই হাত চেপে তাকিয়ে আছি। আমার জন্য ই তো পরে গেলো এখন আমি না জানি কতো বকা খাই। ঢোক গিলে দাড়িয়ে আছি। আসে পাশের সবাই হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে। তারপর হো হো করে হেসে উঠলো। ইহান রাগে গজগজ করছে। চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে। বসা থেকেই পেছনে ঘুরে আমাকে দেখে আরো রেগে গেলো। অগ্নি দৃষ্টি আমার দিকে নিক্ষেপ করলো। চোখ দিয়ে গিলে খাবে এমন তার চাহনী। আমি তোতলানো কন্ঠে বললাম,

‘ আমি ইচ্ছে করে এটা করি নি বিশ্বাস করুন। আমি তো ভাবছি আপনি হয়তো বসতে চান না তাই এটা নিতে এসেছিলাম।’

ইহান বসা থেকে দাঁড়িয়ে যায় আর কারো দিকে না তাকিয়ে সোজা চলে গেলো। আমি হাঁ করে উনার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে র‌ইলাম। এটা কি হয়ে গেলো। আর উনি আমাকে কিছু বললো না কেন? পড়ে নিশ্চয়‌ই এর জন্য আমাকে ভুগতে হবে সব ওই তুলির জন্য। উনি ব্যাথা ভালোই পেয়েছে। মুখটা ব্যথিত ছিলো। পেছনে থেকে তুলি ডাকছে আমি রেগে ওর কাছে গেলাম চেয়ার ছাড়া। ওর সাথে এক দফা ঝগড়া করে বাসার ভেতরে ঢুকে গেলাম।
রিমা কে দেখলাম সিঁড়ি বেয়ে নামছে আমাদের কাছে যাওয়ার জন্য। আমার সামনে পরলো রিমার ফুফাতো ভাই বোনেরা তারা কেবল এসেছে বোধ হয় সাজ পোশাক দেখে মনে হল।তারা বোধহয় বাইরে যাচ্ছিল কি যেন বলে হাসছিল। আমি তখন ভেতরে আসছিলাম তাই গেটের কাছে দেখা হয়ে গেল।

তাদের পাশ কাটিয়ে ভেতরে গিয়ে দেখলাম ইহান সোফায় বসে আছে। আমি ঢোক গিললাম আবার। রিমা এসে বললো,

‘কিরে চলে আসলি কেনো? আমি তো তাদের কাছে যাচ্ছিলাম তুলি কোথায়!’

‘ জানিনা। ‘

বলেই রুমে চলে এলাম। রিমা হা করে আমার রাগ দেখলো। ও গিয়ে তুলির কাছে সব শুনে হাসতে হাসতে শেষ রিমা। আমি রুমে এসে রিমঝিম আপুর কাছে বসলাম।
বারোটার আগেই রিমঝিম আপু আমাকে আর তুলি কে নিয়ে পালারে চলে এলো।রিমাকে আনতে চেয়েছিল কিন্তু রিমার অনেক কাজ। মেয়েটা বোনের বিয়েতে একটু আনন্দ করতে পারছে না। এ ডাক দিয়ে একটা কাজ দিচ্ছে তো আরেকজন ডাক দেয়ার আরেকটা কাজ হাতে ধরিয়ে দিচ্ছে।
তাই ও আসে নি রাগ করে রয়ে গেছে। আর কেউ বউয়ের সাথে পার্লারে আসার সময় নেই। সবাই যার যার সাজ পোশাক নিয়ে চিন্তিত। কিন্তু আমি আর তুলি আনন্দের সাথেই আপুর সাথে চলে এসেছি। বসে আছি দুই ঘন্টা ধরে। এখনো সাজ কমপ্লিট হয়নি। আরো অনেক সময় লাগবে এদিকে যাওয়ার সময় ঘনিয়ে আসছে। তুলি রাগ করে নিজে নিজেই কাপড় পরতে লাগলো পার্লারের একজন তা দেখে সাহায্য করে। গায়ে হলুদে এত সময় বিয়ের দিন যে কত সময় লাগবে আল্লাহ। আমি গালে হাত দিয়ে বসে আছি।আমার অবশ্য সাজগোজ দেখতে ভালোই লাগছে কিন্তু মনে মনে ভাবছি। আমি যদি এখন রিমঝিম আপুর জায়গা থাকলাম পাগল হয়ে যেতাম এত সাজগোজ নিয়ে আমি উঠে দাড়াতে পারতাম না। পুতুল হয়ে বসে আছে রিমঝিম আপু আর পালারে মহিলা গুলো ইচ্ছে মতো নাচাচ্ছে।

সাজ কমপ্লিট হয়েছে যাওয়ার ও সময় হয়েছে।কিন্তু রিমঝিম আপু বসে আছে বলেছে আমাকে সাজানো দেন না হ‌ওয়া পর্যন্ত যাবে না যতই সময় যাক না কেন! আমি বলছি,

‘আপু আমি এমনিতেও সাজগোজ পছন্দ করিনা। আর শাড়ি পরে নিজেকে সামলাতে পারি না। আমাকে নিয়ে ভাবতে হবে না আমি হলুদ গাউন এনেছি বাসায় গিয়ে পড়ে নিবো। এখন চলো প্লিজ বাসায় থেকে কত বার ফোন এসেছে তোমার ফোনে জানো তুমি! অনেক বকবে আর লেট করলে।’

আমি বললো, ‘সেসব তোমার ভাবতে হবে না তাড়াতাড়ি তুমি বসে পড়ো। তোমার জন্য এখন কিন্তু লেট হচ্ছে ঊষা।’

বাঙালি স্টাইলে কাপড় পরিয়ে দিল আমাকে। হাতে চুড়ি ও মুখে হালকা করে সাজিয়ে দিতে বললাম। চুলগুলো বাধতে সময় লাগবে তাই খোলা রাখলাম। কপালে ছোট টিপ, ঠোটে হালকা লিপস্টিক, কানে ঝুমকা, চোখে মোটা করে কাজল।
আমার ফোনটা বেজে উঠলো গাড়িতে উঠতে ই।
সবাই ফোনের যন্ত্রণায় ফোন অফ করে রেখেছে শুধু আমার ফোনটা অন ছিলো আর আমার ফোনে কোনো কল আসছিল না। এখন থেকে আমার ফোনে বাজতে শুরু করলো পার্স থেকে ফোন বের করে দেখি ইহান কল করেছে‌। তার নাম্বারটা আমি ইমা আপু্য সাথে যোগাযোগ করার পরেই সেভ করে রেখেছি।‌

‘ হ্যালো! ‘

‘তোমরা কোথায় আছো?’

‘আমরা এইতো গাড়িতে কেন?’

‘এত সময় কারো লাগে! আর রিমঝিম কোথায়! ওর ফোন অফ কেন! ফোন রিসিভ করছো না কেন’

‘আপুতো আমার সাথে আছে আপুর ফোনে না চার্জ নাই তাই অফ হয়ে গেছে!’
ডাহা মিথ্যে কথা বললাম আসলে রিমঝিম আমার কানের সাথে কান লাগিয়ে কথাগুলো শুনে এই মিথ্যে কথাটা বলতে বলল।

‘রিমজিমে কাছে ফোনটা একটু দাও তো!’

‘আচ্ছা দিচ্ছি!’

আপু ফোন কানে ধরার পর দুই তিনটা ঝাড়ি খেলো।
গাড়িতে থেকে নেমে হেঁটে আপুকে নিয়ে স্টেজে বসে দিয়ে এলাম।দেখি রিমা শাড়ি পড়ে সাজগোজ করে দাঁড়িয়ে আছে। খুব সুন্দর লাগছে। এরা তো দেখি বাসায় ভালো সাজতে পারে। রিমা ফুফাতো ভাই-বোনরা ও সবাই খুব সুন্দর করে শাড়ি পরে সেজেগুজে বসে আছে। এজন্য এরা কেউ যায়নি
তারা জানত ওখানে গেলে বউ ছাড়া আর কেউ সাজার টাইম পাবে না। আমি রিমার ফুফাতো ভাই-বোনদের দিকে তাকাতে তাকাতে হাঁটছি তখন কারো বুকের সাথে ধাক্কা খেলাম। কপালে হাত দিয়ে সামনে তাকিয়ে দেখি ‌ ইহান রেগে তাকিয়ে আছে। খুব হ্যান্ডসাম লাগছে ইহানকে। ইহান হলুদ পাঞ্জাবি পড়েছে।

‘ এ মেয়ে চোখে দেখো না? তোমার সব সময় সমস্ত ধাক্কা আমার সাথে খেতে হয় নাকি। ইচ্ছে করে ধাক্কা খাও তাইনা। হ্যান্ডসাম ছেলে দেখলেই ধাক্কা খেতে ইচ্ছে করে তাই না। আমার থেকে দূরে থাকবে সবসময় ইডিয়েট গার্ল!’

বলেই ইহান গটগট করে চলেই এলো। আমি হাঁ করে তাকিয়ে র‌ইলাম‌। নিজেকে নিজেই হ্যান্ডসাম বলল। কি ভাব আমার বয়েই গেছে ওনার সাথে ধাক্কা খেতে। ঊষা ভেংচি কাটলো।
সামনে ইমা আপু কে দেখে তারাতাড়ি গেলাম আর তাকে জড়িয়ে ধরলাম। আপু হয়তো আমাকে দেখে অবাক হয়েছে।

‘ ঊষা তুই এইখানে?’ আপু আমাকে এখন তুই করেই বলে।

‘হ্যাঁ এটাতো আমার ফ্রেন্ডের বাড়ি!’

‘ও আচ্ছা! ভালোই হয়েছে আবার আমাদের দেখা হয়ে গেল।’

‘ হুম তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে আপু।’

‘তাই তো কেউ খুব সুন্দর লাগছে।’

বাকিটা সময় আমি আপুর সাথে থাকলাম ওই বাসায় যাওয়ার সময় আপুর সাথে বসলাম আর অনেক কথা বললাম। অনেক আড্ডা দিলাম।

#চলবে…….

( ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)
#চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here