এক প্রহর ভালোবাসার পর্ব -২০ ও শেষ

#এক_প্রহর_ভালোবাসার
#নুসাইবা_রেহমান_আদর
#পর্ব_বিংশ
#শেষ_পর্ব

সেই দিনের ঘটনা গেছে আজ এক মাস। এই একমাসে অনেক কিছুই ঘটে গেছে।রাফিয়া সাইফ এবং রেহানা আর কুদ্দুসের বিয়ে ঠিক হয়েছে। আগামী ৭ তারিখের তাদের বিয়ে। বিয়ে এক জায়গায় হবে সাইফদের সাথে ।

সাফোয়ানের কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে সানা।

সানা: আপনি আপনার আব্বু আম্মুর সাথে কি করেছেন তা আজও বললেন না।

সাফোয়ান: তা তোমার মত পিচ্চি কে শুনতে হবে না। আরেকটা জিনিস তুমি ভুল বলেছ তার আমার মা বাবা না তারা আমার কেউ হয় না। সব জিনিসে কৌতুহল একদম ভালো না। টুকু তোমাদের জানার প্রয়োজন সেটুকু তোমাদের জানানো হয়েছে বাকিগুলো আমি বুঝে নিব। রাফিয়া কে আর রেহানা কে তৈরি করো তাদের হলুদ সন্ধ্যা আজ,আর আগামীকাল বিয়ে।

সানা: জানে সাফোয়ানের কাছ থেকে আর কোন উত্তর পাবে না। তাই সেও চুপচাপ বেরিয়ে যায় রুম থেকে।

সাফোয়ান‌ তার কাজের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পরে। অনেকগুলো দিন তাদের দুনিয়ার আলো দেখিয়েছে আর না। সাফোয়ান‌ ঠিকানায় পৌঁছাতেই দেখে যে চেয়ারের সাথে মিসেস লিমা আর মিস্টার শিহাবকে বেঁধে রাখা হয়েছে । এই একমাস তাদের দু একদিন পরপর খাবার আর পানির উপর রাখা হয়েছে। অনেকটা শুকিয়ে গেছে তাদের চেহারা মলিন হয়ে আছে।। যা দেখে সাফোয়ান অনেক শান্তি পেল।

মিসেস লিমা: হয়তো আমাদের বাঁচিয়ে রাখো, না হলে আমাদের মেরে ফেলো এভাবে আর কষ্ট সহ্য করতে পারছিনা.

সাফোয়ান: এর থেকেও বেশি কষ্ট দিয়ে তুমি আমার বাবাকে আমার সন্তানকে আমার শশুর শাশুড়িকে মেরেছো। তখন ভাবো নাই তারা কি পরিমাণ কষ্ট পেয়েছে?

মিসেস লিমা: আমাদের ভুল হয়ে গেছে আমাদের মাফ করে দাও। আমি তোমাকে লালন পালন করে বড় করেছি। যে ছেলের মত স্নেহ করেছি সব কি তুমি কি ভুলে গেছো?

সাফোয়ান:‌ না আমি কিছু বলি নাই। যখন ভাবতাম আপনি আমার মা আমাকে মায়ের মত স্নেহ তখন আমি আপনাকে খুব ভালবাসতাম। আপনাকে আমি সব থেকে বেশি বিশ্বাস করতাম। আপনি কি করেন আমার সমস্ত বিশ্বাস ভেঙ্গে দিলেন। আর যাই হোক আপনাদের কখনো ক্ষমা করা যাবে না। করিম এই দুইজনকে ঠিক সেই ভাবে মা‌ র বে যেভাবে আমি ইনস্ট্রাকশন দিয়েছি। আজ আবার হলুদের অনুষ্ঠান আছে তাই নিজের হাতে কোন কিছু করতে চাচ্ছি না।

করিম: জি আচ্ছা ভাই যা আপনার হুকুম।

সাফোয়ান: পরশুদিনের হেডলাইনে এরা দুজন থাকে এর আগে যেন খবর পাবলিশ না হয় সে দায়িত্ব তোমার।

করিম তাই বসের আদেশ যথাযথ ভাবে পালন করে। বাসায় ফিরতেই তার রুমে গিয়ে একটি মেয়েকে দেখে চোখ ফেরাতে পারছে না। পিছন থেকে মেয়েটিকে জড়িয়ে ধরে সাফোয়ান। সানা বিরক্তি নিয়ে সাফোয়ানকে বলে ওঠে।

সানা: এভাবে যখন তখন আমাকে জড়িয়ে ধরার অভ্যাসটা পাল্টান মিস্টার মন্ত্রী সাহেব! কোন কথা তো আমাকে বলতে চান না তাহলে এভাবে যখন তখন আমাকে জড়িয়ে ধরবেন না।

সানার কথায় স্পষ্ট ভাবে অভিমান প্রকাশ পাচ্ছে। সাফোয়ান তাকে সব কথা স্পষ্ট ভাবে বলে না তাই।

সাফোয়ান: আজ আমার বউটাকে লাল শাড়িতে যে কি সুন্দর লাগছে তা আমি বলে বুঝাতে পারব না। একদম নতুন বউ নতুন বউ ফিল আসছে। এক কাজ করি চলো ওদের সাথে আমরা বিয়েটা সেরে ফলি।

সানা: একদম ঠিক কথা বলছেন আপনি আমার বিয়ের কথা তো আমর এখনই মনে নেই। শুনেন কাল আমার জন্য গোলাপি রঙের লেহেঙ্গা আনবেন। এই কথাগুলা কাউকে জানাবেন না সবাইকে আমরা সারপ্রাইজ দিবো ঠিক আছে।

কথা শুনে মুচকি হাসি দিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে সাফোয়ান।

সাফোয়ান: ঠিক আছে আমার পিচ্চি বউটা যেভাবে বকবে সব সেভাবেই হবে।

সানা: তাহলে এবার আমাকে একটু সরুন জন্য বই দেখি কেহলদের সময় হয়ে গেছে চলুন সেখানে যাওয়া যাক।

সাফওয়ান সানাকে নিয়ে ছাদে চলে গেল সেখানে রাফিয়া সাইফ রেহানা কুদ্দুস সবাই উপস্থিত ছিলো‌।

সাইফ একটি সবুজ রঙের পাঞ্জাবি পরে ছিল আর হেনা সবুজ কালারের লেহেঙ্গা। ওদের দুজনের জুটিটা অনেক সুন্দর ভাবে ফুটে আছে সবার মাঝখানে। রেহানাকে নীল রঙের লেহেঙ্গা পড়ানো হয়েছে সাথে ম্যাচিং করে কুদ্দুস কেও।

সানা আর সাফোয়ান কে দেখে রেহানার কুদ্দুস তাদের দিকে কৃতজ্ঞতামূলক হাসি দিলো। আজ সাফোয়ান ছিল বলেই তাদের বিয়েটা তো ধুমধাম করে হচ্ছে। আজ সাফোয়ানের জন্যই কুদ্দুস প্রাণে বেঁচে ফিরলো আর রেহানা তাকে ফিরে পেলো।

সাইফ বারবার রাফিয়ার দিকে তাকাচ্ছে আর মুচকি মুচকি হাসছে। রাফিয়া সাইফের‌ এই তাকানোর জন্যে‌ বিরক্ত হচ্ছে আর লজ্জা পাচ্ছে।

রেহানা: আমার দিকে বারবার এভাবে তাকাচ্ছেন কেন? আমার বুঝি লজ্জা লাগেনা।

সাইফ: লজ্জার কারনে তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে প্রিয়তমা।

রাফিয়া: যা দুষ্টু।

রেহানা: জানেন কুদ্দুস ভাই আমি আপনাকে অনেক মিস করছি এতোদিন।

কুদ্দুস : আমাদের বিয়ে হয়ে যাচ্ছে রেহানা এবার অন্তত ভাই ডাকা বন্ধ কর প্লিজ।

রেহানা: অভ্যাস জয়ে গেছে আমার।

সব কাপলদের দুষ্টুমি দেখে সাফোয়ানের মন খারাপ হয়ে যায়।

সানা: মুখটা এভাবে প্যাঁচার মতো করে দাঁড়িয়ে আছেন কেনো?

সাফোয়ান: তো কি করবো? বাকিরা প্রেম করছে আরো তাদের প্রেম করে দেখছে আমার বউ। আমার দিকে খেয়ালই নেই তার।

সানা: মেয়েদের মতো কথায় কথায় গাল ফুলাচ্ছেন কেন? আমরা বড় না?

সাফোয়ান: তা তুমি ঠিক বলছো।

সবার হাসিখুশি দুষ্টুমিতে গায়ে হলুদ কেটে গেলো।

সানা আর সাফোয়ানের ও বিয়েটা হয়ে গেলো। যখন সবাই জানলো তাদের সাথে সাথে সানা আর সাফোয়ানের ও বিয়ে তা শুনে কুদ্দুস আর সাইফের কি নাচ। সিনথীয়া বেচারি এখোনো আদিলকে তার মনের কথা বলতে পারলো না। আদিলের ও সেম অবস্থা। ওরা ফান্দে পরেছে,দুইজন ই সাফোয়ান আর সাইফকে ভয় পাচ্ছে। বিয়ের ঝামালা শেষে সবাইকে তাদের বাসর ঘরে পাঠিয়ে দেওয়া হলো ।

সানা ঘোমটা দিয়ে বসে আছে। এই দিনটায় নতুন করে আবার সাফোয়ান কে নিজের করে পেলো। সাফোয়ানের পায়ের আওয়াজ পেতেই কেপে উঠলো সানা। আজ তার মধ্যেও নতুন বউয়ের মতো লাগছে,প্রথমদিনের মতো ভয় নয় সাফোয়ানের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ পাচ্ছে।

সাফোয়ান: জানো বউ আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি।

সানা: আমিও আপনাকে অনেক ভালোবাসি। আমাকে কখোনো একা রেখে যাবেন না। যেখাবে যাবেন সাথে নিয়ে যাবেন প্রমিজ করেন? আপনাকে ছাড়া থাকা আমার পক্ষে সম্ভব না।

সাফোয়ান: কথা দিলাম আমি কখোনো তোমাকে একা রাখবো না। আজ এই চাঁদনী রাতকে শাক্ষি করে আমি আমার বউ কে নিজের করতে চাই। আমার যে আমার সেই হারানো বাবা টাকে ফিরত চাই সানা।

সাফোয়ানের কথায় লজ্জায় ঘীরে ধরে সানাকে। সানা লজ্জা পেয়ে সাফোয়ানের বুকে মাথা রাখলো। সানাকে নিজের বাহুডোরে আগলে নো সাফয়ান।

অন্যদিকে সাইফ বসে বসে অপেক্ষা করছে কখন রাফিয়া ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে আসবে। সেই যে ফ্রেশ হতে গেছে এখন আসেন নাই ম্যাডাম।রাফিয়াকে আসতে দেখে সাইফ মুখ বাকিয়ে বললো।

সাইফ: আগের দিনে বউরা জামাইর জন্য অপেক্ষা করতো। আর এখন জামাই বউয়ের অপেক্ষায় কুপোকাত হয়ে গেলো।

রাফিয়া: জামাই সাহেব হয়তো ভুলে গেছে যে তার বউ সবার থেকে আলাদা।।

রাফিয়ার কথা শুনে সাইফ মুচকি হেসে রাফিয়াকে জড়িয়ে ধরলো।।

সাইফ: তা বউজান সব ভুলে কি জামাই সাহেবের সাথে নতুন অধ্যায় শুরু করবেন? পারি দিবেন আমার সাথে যেখানে শুধ আপনার জন্য জমানো আছে আমার ভালোবাসা।

রাফিয়া সম্মতি জানাতেই সাইফ রাফিয়াকে নিয়ে পারি জমালো ভালোবাসার রাজ্যে।

কুদ্দুস আর রেহানা বসে বসে তাদের এতোদিনের জমানো সব কথা বলছে। রেহানা কেদে ফেললো।

কুদ্দুস: কাদেনা পাগলি আমি তো ফিরে আসছি তাইনা?

রেহানা: আর কখোনো আমাকে একা কইরা ছাইরা জাইয়েন না। আমি বাচমু না তাইলে।

কুদ্দুস রেহানার মুখ চেপে আটকে রাখে। এই কথা যেনো আর না শুনে। তারা ক্লান্ত থাকায় একে অপরকে জরিয়ে ঘুমিয়ে যায়।

পরেরদিন সকালে সবাই বসে খবরে লিমা বেগম আর মিস্টার শিহাবের লা শ দেখাচ্ছে । উত্তরার এক বিলাসবহুল ফ্লাটে জামাই, বউ সু ই সা ই ড করেন।

সবাই সাফোয়ানের দিকে তাকায়। আর সাফোয়াব সবার দিকে তাকিয়ে রহস্যময়ী হাসি দেয়।

সমাপ্ত।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here