#এক_বুক_ভালোবাসা
#আইরাত_বিনতে_হিমি
#পর্বঃ১৭
সময় রহে না কারো জন্য। পানির স্রোতের মতো সময় হারিয়ে যায় চিরদিনের জন্য। দেখতে দেখতে কেটে গেছে তিনবছর। এই তিনবছর কারো কেটেছে সুখ স্বাচ্ছন্দ্যে। আবার কারো কেটেছে নির্ঘমু রাত যেভাবে কাটে সেইভাবে। এই তিনবছরের চৌধুরী বাড়ির ছবি অনেকটা বদলে গিয়েছে। বদলে গিয়েছে সবার জীবন। কিন্তু একই জায়গায় আটকে আছে রাফাত পূর্ণা। দুজনেই দুজনের অপেক্ষায় তিনটি বছর পার করেছে। অপেক্ষার প্রহর যেনো শেষই হতে যাচ্ছিলো না। তবে অবশেষে এসেছে সেই মাহান্দ্রেখণ। পূর্ণার মুক্তি পাওয়ার সময়। যেই দিনটার অপেক্ষায় রাফাত পূর্ণা বসে ছিলো। আজ পূর্ণার মুক্তি দিচ্ছে জেলকতৃপক্ষ। তার সাজা শেষ হয়েছে। বনুলতা সকাল থেকে পূর্ণার জন্য তার পছন্দের খাবার রান্নায় ব্যস্ত। রশীদ চৌধুরী বাজারে গিয়েছে পূর্ণার পছন্দের সব জিনিস কিনতে। ওহ হ্যা আগেই বলে নেয়। এই তিনবছরে অনেক সম্পর্কের উন্নতি হয়েছে। সেইদিনের ঘটনা শোনার পর বনুলতা রাফাতের সাথে রাগ করে কথা বলেনি। ছেলের এমন ব্যবহারে সে অসুন্তুস্ট ছিলো। পড়ে রাফাত মায়ের জন্য সব সম্পর্ক স্বাভাবিক করে নিয়েছে। এখন রাফাত রশীদ চৌধুরী সম্পর্ক তেতো নয় স্রুতি মধূর। হ্যা আর এক সম্পর্কের উন্নতি হয়েছে। রিয়ান, মিহু। রিয়ান আর মিহুর বিয়ে হয়েছে। সেইদিন ঐ দুঘটনার পর মিহু তার বাবাকে ছেড়ে দেয়নি। সে তার বাবা দাদীকে জেলে পাঠিয়েছে। একা মাকে নিয়ে সে এখন চৌধুরী বাড়িতেই থাকে। মিহু রিয়ানের বিয়ের তিনবছর চলে। রিয়ান আর মিহু পূর্ণা আশার সুখ সংবাদে বাড়ি সাজাতে ব্যস্ত।বাড়ির প্রতিটি কোনা সুন্দর করে সাজিয়ে তুলছে। মাঝে মাঝে খুনশুটিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ছে। মিহুর মা মাহমুদা বনুলতাকে কিচেনে সাহায্য করছে। রাফাত ঘরে বসে কখনো এই শার্ট কখনো ঐ টি-শার্ট বা পাঞ্চাবি ট্রাই করছে। কোনটা পড়লে পূর্ণার সামনে তাকে সুন্দর লাগবে। পূর্ণা ঘোর লাগানো চাহনি নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে থাকবে।সে কিছুতেই কোন জামা পড়বে তা ডিসাইট করতে পারছে না। এমন সময় ঘরে প্রবেশ করে বনুলতা। সে ছেলের এমন হাল দেখে হেসে দেয়। তারপর গলা পরিষ্কার করে বলে,
– কী হচ্ছে?
রাফাত দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে বনুলতা। সে হাফ ছেড়ে যেনো বেঁচে যায়। সে বনুলতার হাত ধরে ঘরে নিয়ে আসে। তারপর বলে,
– মম বলো না কোনটা পড়বো। কোনটা পড়লে পূর্ণা সামনে আমায় সুন্দর লাগবে।
বনুলতা হাসে। সে বলে,
– তুই যা পড়বি তোকে তাতেই মানাবে। তবে আমার মনে হয় পূর্ণার পাঞ্জাবি বেশি পছন্দ। তুই এই কালো পাঞ্জাবি টা পড়তে পারিস।
রাফাত কালো পাঞ্জাবি টা হাতে নিয়ে বনুলতার গালে চুমু খেয়ে বলে,
– থ্যাঙ্কস মম।
– আরে আরে হয়েছে হয়েছে। শোন তাড়াতাড়ি রেডি হো মিহুর হয়ে গিয়েছে। তুই রেডি হয়ে নিচে আয়। সময় হয়ে গেলো তো।
– জ্বী মম তুমি যাও আমি আসছি। জাস্ট দুই মিনিট লাগবে।
বনুলতা চলে যায়। রাফাত দ্রুত রেডি হয়ে নিচে নামে। মিহু তার জন্য অপেক্ষা করছে। মিহু আর রাফাত পূর্ণাকে আনতে যাবে। রাফাত নিচে এসে বলে,
– চলো মিহু আমি রেডি।
– জ্বি দা ভাই চলুন। মা আমরা আসছি।
বনুলতা বলে,
– এসো মা। আমার ঘরের মেয়েকে নিয়ে ঘরে ফিরো।
– ইনশাআল্লাহ মা।
রাফাত আর মিহু বেড়িয়ে পড়ে। গাড়িতে উঠে গাড়ি স্টার্ড দেয়।
_______________________________________
জেলখানা। পূর্ণা আজ অনেক খুশী। আজ তার মুক্তি। সে আজ খোলা আকাশে মুক্ত পাখির ন্যায় নিঃশ্বাস নিতে পারবে। রাফাতের বুকে ঝাপিয়ে পড়তে পারবে। উফফ অপেক্ষার প্রহর যেনো আজ শেষই হতে চাচ্ছে না। এক একটি মিনিটকে তার এক ঘন্টার সমান মনে হচ্ছে। আসলে ভালোবাসা টাই মনে হয়।অদ্ভুত রকমের নেশা কাজ করে এই ভালোবাসায়। ভালোবাসা সত্য হলে মৃত মানুষের জন্যও অপেক্ষা করাতে শান্তি মিলে। ভালোবাসার মানুষের জন্য জীবনও বাজি রাখা যায়। কঠোর মুহূর্তেও তার বুকে মাথা রেখে শান্তির ঘুম দেওয়া যায়। পূর্ণা আনমনে হাসছে। আর একটু সময়। এইতো সে আসবে। বলবে চলো পূর্ণা। সময় শেষ হয়েছে। তোমার আমার মিলন এইবার আল্লাহ্ ছাড়া কেউ আটকাতে পারবে না। পূর্ণাকে এইভাবে হাসতে দেখে একটা মেয়ে বলে,
– পূর্ণা এইভাবে হাসছো কেন? তার জন্য বুঝি।
পূর্ণা মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বলে,
– আর যে সহে না আপু। মন যে আর মানে না।
মেয়েটা পূর্ণার কথায় হো হো করে হেসে দেয়। সে বলে,
– এই তিনবছরে তোমার অনেক পাগলামি দেখেছি পূর্ণা। তোমার অনেক চোখের জল দেখেছি। যেই মানুষটার জন্য তুমি এত পাগল।সে তোমার হোক। যানো পূর্ণা জেলার সাহেব আসছিলো। তোমার জন্য শাড়ি নিয়ে আসছে। আজ রাফাত ভাইয়ের সামনে যাবে না তাই। এই অবস্থায় কী যাবে নি তার সামনে। এই জেলের প্রত্যেকটা মানুষ তোমাকে মিস করবে পূর্ণা। সবার আমি তোমাকে হারানোর কষ্ট দেখেছি।
পূর্ণা হাসে। আসলে এই তিনবছরে এই জেলের প্রত্যেকটা মানুষের সাথে পূর্ণার ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। কেউ বোন, কেউ খালা, কেউ বন্ধু হয়ে পাশে থেকেছে। সবাই তার কাছে রাফাতের গল্প শুনেছে। আর পূর্ণা এতই গল্প করেছে যে তারা এখন সবাই জানে পূর্ণার জীবনে গুরুত্বপূর্ণ পারসন একজনই সে তার রাফাত। তবে এই তিনবছরে আরও একটি ঘটনা ঘটেছে। এইখানকার জেলার। পুলিশ অফিসার শুভ।সে পূর্ণাকে দেখার পর প্রত্যেক পুরুষের মতোই তার প্রেমে পড়েছে। তার ভালোবাসায় মত্ত্ব হয়েছে। তাকে দেখে বার বার মুগ্ধ হয়েছে। প্রেমের নিবেদন নিয়েও তার কাছে এসেছিল। কারণ সে জানতো পূর্ণা ইচ্ছে করে খুন করেনি। পুরো কেসটা সে ঘেটে দেখেছে। তাই কোনো বাধ কাজ করেনি। কিন্তু সে পূর্ণার কাছে আসলে। প্রেম নিবেদন করলে। পূর্ণা সহজ স্বীকারোক্তি দেয়, সে কাউকে ভালোবাসতে পারে না। সে অলরেডি অন্যের হয়ে গিয়েছে। অন্যের প্রেমে সে মত্ব। এই মন এই প্রাণ এক জনকে ভালোবেসেই উজাড় করেছে। সে হচ্ছে রাফাত চৌধুরী। নামটা বলার পর শুভ অবাক হয়নি। কারণ রাফাতের মতো ছেলেকে যে কেউ ভালোবাসতে চায়বে। ওকে দেখে হালকা একটা বুকের মধ্যে ঝাকুনি দিবে। কিন্তু সেই ভালোবায় যে পূর্ণাও থাকবে সেটা ভাবেনি। তারপর কয়েদির কাছ থেকেই পূর্ণা রাফাতের প্রেম কাহিনি শুনতে পায়। যা শুনে শুভ আর এগোয়নি। সে যানে পূর্ণা আসবে না। একবার এই মন যার প্রেমে দিওয়ানা হয়ে যায়।দ্বিতীয় বার আর সেটা হয় না। সে হাসে। অপূর্ণ ভালোবাসার জন্য হাসে। সে মানিয়েও নেওয়ার চেষ্টা করে। পূর্ণা বন্ধু হতে চায়। এই বেপাড়টায় পূর্ণা না করতে পারেনি। বন্ধু হয়েছে শুভর। কিন্তু বন্ধু হওয়ার সময় শত স্মৃতি মাথায় ঘুরেছে। কৌশিক নামের একটা ছেলেও একদিন তার দিকে বন্ধুর হাত বাড়িয়েছিল। সব কিছুই এখন শুধু দীর্ঘশ্বাস।
পূর্ণাকে জেলখানার কয়েকটা মেয়ে মিলে শাড়ি পড়িয়ে দেয়।সময় হয়েছে রাফাত আশার। আর তো মাত্র কিছু সময়। পূর্ণা কালো রঙের শাড়ি পড়েছে। শাড়িটাতে তাকে বেশ মানিয়েছে। একদম পরী লাগছে। যেনো পৃথিবীর বুকে আসমান থেকে পরি নেমে এসেছে। পূর্ণার সাথে জেলখানার মেয়েরা মজা করছে। রাফাত আসবে। কি কি হবে। এইসব নিয়ে। হঠাৎ একজন পুলিশ এসে বলে,
– মিস পূর্ণা আপনার যাওয়ার সময় হয়েছে। আপনার বাড়ি থেকে লোক এসেছে।
কথাটা শোনা মাত্র পূর্ণার চোখ খুশিতে চিকচিক করছে। একটা মেয়ে দূর থেকে পূর্ণার কাছে আসে। তাকে জরিয়ে ধরে বলে,
– খুব মিস করবো বোন তোমায়।
অনেকেই পূর্ণাকে জরিয়ে ধরে কাঁদে। কেউ কেউ পূর্ণাকে জেতে দিবে না বলে জেদ ধরে। আসলে ফুল নর্দমায় পড়লেও ফুলই থাকে। তাই হয়তো পূর্ণা পূর্ণার জায়গাই আছে। ওর সংস্পর্শে এসে প্রত্যেকটা মানুষ ভালো হয়েছে। পূর্ণা সবাইকে বুঝিয়ে অনেক কষ্টে বের হয়। বেড়িয়ে দেখে রাফাত, মিহু দাড়িয়ে আছে। পূর্ণার চোখে জল স্পস্ট। রাফাত পূর্ণাকে দেখে তার হৃদয় থমকে গিয়েছে। সেই প্রথম দিনের মতো। চোখের তৃষ্ণা মিটেছ। অপেক্ষার অবসান ঘটেছে। পূর্ণা এক পা এক পা করে এগোচ্ছে। আর তার হৃদয়ের ধুকপুক আওয়াজ টা বারছে। মনে হচ্ছে হৃদয়ে কেউ হাতুড়ি পিটা করছে। চোখে জলের বন্যা হয়ে গিয়েছে। রাফাতেরও একি অবস্থা। সে এক পা এক পা করে এগোচ্ছে। দুজনের দৃষ্টি দুজনে তে স্থির। খুব কাছাকাছি পূর্ণা রাফাত। রাফাত পূর্ণার একটা হাত ধরে দেখতে থাকে। আসলেই কি সত্যি। নাকি আবার স্বপ্ন। সে পূর্ণার গালে হাত রাখে। পূর্ণা এখন হেচকি তুলে কাঁদছে। রাফাত বিশ্বাস করতে পারছে না পূর্ণা তার সামনে। পূর্ণা রাফাতকে জরিয়ে ধরে বলে,
– স্বপ্ন নয় সত্যি। হৃদয়ের স্পন্দন শুনে দেখো। এই নিঃশ্বাসের গতি বলে দিচ্ছে তুমি আমার কতটা আপন।
রাফাত ঘোর থেকে বের হয়। সে বুঝতে পারে সব সত্য। সে পূর্ণার দিকে তাকায়। অজস্র চুমু একে দেয় পূর্ণার মুখে। পাগলের মতো করতে থাকে। কখনো বুকে জরিয়ে নিচ্ছে তো কখনো চুমু খাচ্ছে। পূর্ণা কিচ্ছু বলছে না। সে শুধু কেঁদেই যাচ্ছে। এই কান্না দুখের না সুখের।এই কান্না ত্যাগের না প্রাপ্তি। ভালোবাসা পূর্ণতা পাওয়ার কান্না। মিহু পাশ থেকে শুধু রাফাতের পাগলামি দেখছে। একটা ছেলে একটা মেয়েকে কতটা ভালোবাসলে সবকিছু ভুলে তার মধ্যে মত্ত্ব থাকে। একেই বোধয় বলে এক নারীতে আশক্ত পুরুষ। সত্যি ভালোবাসা বিচিত্র।
পূর্ণা লক্ষ করে আশেপাশের লোক তাদের দিকে অন্যরকম দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। যেনো পৃথিবীতে বুকে এলিয়েন নেমে এসেছ। পূর্ণার অসস্তি হয়। সে মিনমিনে গলায় রাফাতকে বলে,
– সবাই দেখছে ছাড়ো।
রাফাত বুঝতে পারে পূর্ণা লজ্জা পাচ্ছে। তাই সে পূর্ণাকে ছেড়া দেয়। পূর্ণা লজ্জায় তাকাতে পারছে না। রাফাত পূর্ণার হাত ধরে গাড়িতে নিয়ে আসে। মিহুও আশে। পূর্ণা মিহুকে দেখে বলে,
– কেমন আছো আপু।
মিহু মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বলে,
– আলহামদুলিল্লাহ্ বোন। তবে এখন বোধহয় আরো ভালো থাকবো মায়ের মেয়ে ভাইয়ের ভালোবাসা যে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছি।
পূর্ণা হাসে। হাসে মিহুও। রাফাত গাড়ি স্টার্ড দেয়। পূর্ণা রাফাতের কাধে নিজের মাথা রাখে। রাফাত মুচকি হাসে। পূর্ণা রাফাতকে অভিমানি কন্ঠে বলে,
– তুমি এমন কেন?
– কেমন?
– এই যে এতদিন এতকিছু করছো?
– কি করছি?
– মেঝেতে কেন ঘুমাইছো। ডাল হাত এইসব কেন খায়ছো শুনি। রাফাত এইগুলো কেমন পাগলামি এইসব কেউ করে।
রাফাতের সোজা স্বীকারোক্তি,
– অন্য কেউ করে কিনা আমি জানি না। তবে আমি আমি করছি। আমার ভালোবাসা কষ্ট পাবে। আর আমি চুপ থাকবো। তা কি করে হয়।
পূর্ণা রাফাতের থেকে দূরে সরে এসে বলে,
– এইটা ভালোবাসা। রাফাত তুমি কেন আমার কথা শুনোনি। আমি যে মিহু আপুকে দিয়ে খবর পাঠালাম যে তুমি আর এইসব পাগলামি করবে না। তুমি কি আমার কথা শুনছো।
– দেখো পূর্ণা আমার পক্ষে এইসব শোনা সম্ভব না। তাই শুনিনি।
– তাই তুমি আমাকে অবজ্ঞা করে আমার ভালোবাসার অপমান করোনি।
রাফাত হো হো করে হাসে। তারপর বলে,
– তুমি অপমানিত হয়ছো।
পূর্ণা গাল ফুলিয়ে বলে,
– তুমি হাসছো। আমার কথাগুলো তোমার কাছে হাস্যকর লাগছে। ঠিকাছে হাসো তুমি। আমি তো হাস্যকর তাই না। আমি ছিলাম না সেটাই ভালো ছিল তাই না। আমি আবার চলে যাব। দেখি তুমি কত শান্তি পাও।
রাফাত জোরে ব্রেক কসে। সবাই সামনের দিকে ঝুকে পড়ে। সিটব্যাল্টের জন্য পূর্ণার মাথা বেঁচে যায়। রাফাত পূর্ণাকে নিজের সাথে মিশিয়ে বলে,
– ফারদার এমন কথা বলছো তো খবর আছে। কি করছি আমি যে এত রাগ করতে হবে। ফাইন আমি রাফাত কথা দিচ্ছি এরপর থেকে তোমার সব কথা শুনে চলবো। কিন্তু তুমি আমাকে ছেড়ে চলে যাওয়ার কথা বলতে পারবে না গট ইট।
– হুম।এখন ছাড়ো মিহো আপু দেখছে।
মিহু পড়ছে মহা মুশকিলে এরা দুইমিনিট দুরত্ব বজায় রাখতে পারছে না। মিহুর লজ্জা লাগছে। সে না আসলেই ভালো হতো। কিন্তু ফরমালিটির জন্য এসেছে। এইখানে অনেক কাজ ছিলো। মিহু বলে,
– দা ভাই আমি কি টেক্সি নিয়ে চলে যাবো।
রাফাত পূর্ণাকে ছেড়ে দিয়ে বলে,
– কেন? আমি কি ভালো ড্রাইভ করতে পারিনা।
– না না তেমন কিছ না। আসলে।
– আসলে কিছু না। চুপ করে বসো। বাড়ি চলে এসেছে।
– জ্বি আচ্ছা।
রাফাত গাড়ি স্টার্ড দেয়। পূর্ণা লজ্জায় নুয়ে আছে। এই বজ্জাত লোকটার জন্য সে এখন মিহু আপুর সাথে কথা বলতে ইতস্ত বোধ করছে।
ধ্যাত।
#চলবে
বিঃদ্র ভুল ত্রুটি ক্ষমাসুলভ দৃষ্টিতে দেখবেন।
নোটবার্তাঃ প্রিয় পাঠক
আজকের পর্বটা ছোট করেই দিলাম।আপনারা অনেকেই জানেন গল্প দিতে গিয়ে কতটা সমস্যায় আমি পড়েছি। তাই আজকে একটু লিখে আপনাদের মাঝে নিয়ে আসলাম। ইনশাআল্লাহ পরবর্তী পর্ব বড় হবে। আর তাড়াতাড়ি পাবেন। আর এই গল্পটা বেশি বড় করবো না। আর হয়তো দুই এক পর্ব আসবে। ধন্যবাদ।#এক_বুক_ভালোবাসা
#আইরাত_বিনতে_হিমি
#পর্বঃ১৮
চৌধুরী বাড়ি,
পূর্ণা বাড়ি এসেছে প্রায় এক ঘন্টা। পূর্ণা আশার পর বনুলতা এই যে তাকে জরিয়ে ধরে কান্না শুরু করেছে। আর ছাড়েনি। পূর্ণাও ফুপিয়ে ফুপিয়ে কেঁদেছে অনেকক্ষণ। এত কষ্টের পর বনুলতা তার মেয়েকে তার বুকে ফিরে পেয়েছে। বনুলতা একটু পর পর পূর্ণার কপালে চুমু খাচ্ছে। রিয়ান বিরক্ত হচ্ছে। সে বিরক্তি নিয়ে বলে,
– ওহ মম এই বার তো পূর্ণাকে ছাড়ো। মেয়েটা হাপিয়ে উঠছে। একটু ফ্রেশ হয়ে আসতে দাও অকে।
বনুলতা বুঝে পূর্ণার এখন রেস্টের প্রয়োজন। তাই সে পূর্ণাকে ছেড়ে দেয়। তারপর হেসে বলে,
– যাহ মা ঘরে যা। একটু ফ্রেশ হয়ে আয়। আমি তোর পছন্দের খাবার বানিয়েছি। মিহু ওকে ওর ঘরে নিয়ে যাও।
রাফাত অবাক হয়ে বলে,
– পূর্ণা ওর ঘরে যাবে মানে। পূর্ণার আমার ঘরে থাকবে মম। ওকে আমি আমার ঘরে নিয়ে যায়।
পূর্ণা লজ্জায় শেষ। এই ঠোট কাটা মানুষ টা কি শুরু করেছে। বুদ্ধি কি লোপ পেলো নাকি। বনুলতা রাফাতের কান টেনে বলে,
– এখনো বিয়ে করলি না আর এক সাথে থাকতে চাচ্ছিস। এইটা কেমন মেনারস। শোন বিকেলে তোদের হলুদ ফাংশন রেখেছি। কাল বিয়ে তারপর একসাথে থাকার কথা ভাববি বুঝলি। এখন যা।
বনুলতা কাঁন ছেড়ে দিলে রাফাত কান ডলতে ডলতে বলে,
– মম। ঠিকাছে মেনে নিলাম।
রিয়ান হাসতে হাসতে বলে,
– মম আমার মনে হয় ভাই এই চব্বিশ ঘন্টা অপেক্ষা করতে পারবে না। তুমি বরং আজই বিয়ের আয়োজন করো।
রাফাত রেগে বলে,
– তবে রে দাড়া।
রিয়ান দৌড় লাগায়। তার পেছন পেছন রাফাতও দৌড় দেয়। মিহু, পূর্ণা, বনুলতা, মাহমুদা, রশীদ চৌধুরী পারে তো হেসে মাটিতে গড়াগড়ি খায়। রশীদ চৌধুরী পূর্ণার মাথায় হাত রেখে বলে,
– কেমন আছিস মা।
পূর্ণা হেসে বলে,
– ভালো বাবা। তুমি কেমন আছো? একদম শুকিয়ে গেছো।
– আর আমার অবস্থা। তোকে ছাড়া কি আমি ভালো থাকতে পারি। তুই এসেছিস আমাদের ঘরে শান্তি ফিরে এসেছে। মা রে অনেক বড় হো তুই। আমার ছেলের পাশে থাক সারাজীবন।
– দোয়া করবেন বাবা। আমি যেনো আপনাদের খেয়াল রাখতে পারি।
– দোয়া করি না। তুই হবি চৌধুরী বাড়ির বড় বউ। যার কোমরে থাকবে এই বাড়ির চাবির গুছা। খুব সাহস নিয়ে কাজ করতে হবে তোকে। অনেক সাহসী হো।
– জ্বি বাবা।
পূর্ণা মাহমুদার দিকে এগিয়ে যায়। পায়ে হাত দিয়ে সালাম করে বলে,
– কেমন আছেন আন্টি।
– থাক মা থাক পায়ে হাত দিয়ে সালাম করতে হবে না। আছি আলহামদুলিল্লাহ্ অনেক ভালো। তুমি কেমন আছো?
– আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো আছি।
মিহু এসে পূর্ণাকে বলে,
– চলো এইবার ঘরে যায়।
– চলো।
দুজনে একসাথে উপরে চলে যায়। বনুলতা ওদের দিকে তাকিয়ে বলে,
– আল্লাহ্ আমার সংসারে কারো যেনো নজর না লাগে। কি সুন্দর লাগছে দুজনকে। মাশাল্লাহ্।
মাহমুদা হেসে বলে,
– জ্বি আপা ওরা যেনো দু জ্বা না বোন।
পূর্ণা রুমে এসে বসে পড়ে। মিহু আলমারি থেকে ওর জন্য একটা ড্রেস বের করে দিয়ে বলে,
– যাও ফ্রেশ হয়ে আসো।
– হুম যাচ্ছি।
পূর্ণা ওয়াশরুমে চলে যায়। মিহু নিচে চলে আসে। অনেকক্ষণ পর পূর্ণা ফ্রেশ হয়ে নিচে আসে। দেখে বনুলতা টেবিলে খাবার রাখছে। সবাই খাওয়ার জন্য বসে আছে। সাবা এসেছে। সাবা পূর্ণাকে দেখে দৌড়ে আসে। ওকে জরিয়ে ধরে বলে,
– হে পূর্ণা কেমন আছিস।
পূর্ণা হাসে। সে মিষ্টি করে বলে,
– আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো আছি। তোর কি খবর?
– আলহামদুলিল্লাহ্। চল খাবার খায়।
– চল।
পূর্ণা খাবার টেবিলে বসলে। বনুলতা একের পর এক ডিস ওর প্লেটে তুলে দেয়। পূর্ণা চোখ দুটো বড় বড় করে বলে,
– মেরে ফেলার প্ল্যান করছো নাকি।
– কি বলিস মারবো কেন? ( বনুলতা )
– তাহলে এত খাবার কেন দিচ্ছো। এত খাবার আমি কবে খেয়েছি শুনি।
– খাস নি। তবে এখন থেকে খাবি। না খেয়ে শরীরের কি হাল করছিস দেখছোস। আচ্ছা হা কর আমি খায়িয়ে দিচ্ছি।
বাড়ির সবাই হা হয়ে বনুলতাকে দেখছে। রাফাত একটু অভিমান করে বলে,
– আমাদের তো কখনো এত আদর করে খায়িয়ে দাও না।
রিয়ানও তাতে তাল মেলালো। বনুলতা হেসে বলে,
– ঠিকাছে আজ সবাইকে খায়িয়ে দিবো।
সবাই হৈ হৈ করে উঠে। বনুলতা বড় প্লেটে খাবার বাড়ে। তারপর সবাইকে খায়িয়ে দেয়। পূর্ণা আজ তৃপ্তি করে খাচ্ছে। কখনো খাওয়ার মাঝখানে কেঁদে দিচ্ছে। বনুলতা সেই চোখের পানি মুঝে দিয়ে বলে,
– কাঁদিশ না মা। এখন থেকে আমিই তোর মা।
– আই মিস ইউ মামনি। আমি তোমাকে খুব মিস করছি।
খাওয়া দাওয়ার পর্ব শেষ করে পূর্ণা ঘরে এসে শুয়ে পড়ে। শরীরটা অনেক ক্লান্ত লাগছে। বিছানায় শরীর এলিয়ে দিলে চোখ বুজে আসে। পারি জমায় ঘুমের রাজ্যে। রাফাত এসে দেখে পূর্ণা ঘুমিয়ে আছে। রাফাত একটা সস্তির নিঃশ্বাস নেয়। কতদিন পর মেয়েটা একটু ভালো করে ঘুমাচ্ছে। রাফাত এগিয়ে আসে। খুবই সাবধানতার সাথে পূর্ণার কপালে চুমু খায়। কপালের চুলগুলো কানের পেছনে গুজে দেয়।পূর্ণা নড়েচড়ে উঠে। রাফাত সরে আসে। কিন্তু আবারো পূর্ণা গভীর ঘুমে তলিয়ে যায়। রাফাত রুম ত্যাগ করে। নিচে গিয়ে বলে,
– কেউ যেনো পূর্ণাকে না বিরক্ত করে। ওহ ঘুমাচ্ছে।
________________________________________
দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে। পূর্ণা এখনো ঘুমাচ্ছে। বাইরে হলুদের আয়োজন খুব বড় করে করা হয়েছে। গার্ডেনের সাইট টায় লাল নীল মরিচ বাতি জ্বলছে। ফুলে ফুলে সেজে উঠেছে চৌধুরী বাড়ি। মিহু রেডি হয়ে পূর্ণার ঘরে আসে। পূর্ণা গভীর ঘুমে তলিয়ে আছে। মিহু আর সাবা গিয়ে পূর্ণাকে আলতো করে ডাকে। প্রথমে পূর্ণা সাড়া দেয় না। পড়ে অনেক ডাকার পর পূর্ণা হাই তুলে উঠে। উঠে বসে বলে,
– খুব লেট করে ফেলছি না।
মিহু হেসে বলে,
– কোনো বেপাড় না। মেহমান চলে এসেছে। তুমি তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নাও। আমি আর সাবা মিলে তোমাকে হলুদের সাজে সাজাতে এসেছি।
পূর্ণা মাথায় হাত দিয়ে বলে,
– ওহ আমি তো ভুলেই গিয়েছে। আজ যে হলুদ ফাংশন আছে। আচ্ছা আপু দুমিনিট দাও। আমি আসছি।
কথাটা বলে পূর্ণা দৌড়ে ওয়াশরুমে যায়। ফ্রেশ হয়ে বাহিরে চলে আসে। পূর্ণা বাহিরে আসলে। সাবা বলে,
– খুব সুন্দর করে সাজিয়ে দিবো। যেনো ভাই আজ বেহুশ হয়ে যায়।
পূর্ণা হাসে। হাসে মিহু। মিহু পূর্ণা বসিয়ে দেয়। তারপর হলুদ রঙের একটা লেহেঙ্গা পড়িয়ে দেয়। চুলগুলো খোপা করে ফুল গেধে দেয়। হাতে কানে গহনা পড়িয়ে দেয়।। মিহু পূর্ণার থুতনিতে হাত রেখে বলে,
– মাশাল্লাহ্ কারো নজর না লাগে।
পূর্ণা লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলে। সাবা হেসে বলে,
– ওহ হো নতুন বউ লজ্জা পেয়েছে।
রাফাত ঘরে বসে রেডি হচ্ছে। হলুদ পাঞ্জাবি পড়েছে রাফাত। সে আজ ভীষন খুশি সে। খুশিতে আত্মহারা হতে ইচ্ছে করছে তার। রাফাত ড্রয়ার খুলে একটা বক্স বের করে। বক্সের ভেতরে একটা রিং। রিং টা হাতে নিয়ে রাফাত বলে,
– এই রিং পড়িয়ে তোমাকে নিজের করে নিবো। খুব শীঘ্রই।
#চলবে
বিঃদ্র ভুল ত্রুটি ক্ষমাসুলভ দৃষ্টিতে দেখবেন।
নোটবার্তাঃ প্রিয় পাঠক
কথা দিয়েছিলাম বড় করে পর্ব দিবো। কিন্তু তার জায়গায় দিলাম ছোট পর্ব। কি করবো বলেন প্রচুর মাথা ব্যথায় ভুগছি। তার মধ্যে এত গরম। রোজা রেখে এত গরমের মধ্যে গল্প লেখার এনার্জি পায় না। তাও কষ্ট করে একটু লিখেছি। দোয়া করেন মাথা ব্যথা যেনো অতি তাড়াতাড়ি ভালো হয়ে যায়।