#এক_মুঠো_রঙ
#ফারজানা_আফরোজ
#ষষ্ঠ_পর্ব
বিয়ের দিন রাতে বাবা মায়ের ঠিক করা ছেলেকে বিয়ে করবে না বলে পালিয়ে গিয়েছিল সেতু। তিন দিন সে অনেক বুঝিয়েছে কিন্তু কেউ তার কথা শুনেনি। অতঃপর এক প্রকার বাধ্য হয়েই তাকে ত্যাগ করতে হলো পরিবার। আজ দশটি বছর পর সেতুকে দেখে সিমরানের চোখে পানি। সিমরানের খেলার সাথী, ভালোবাসা প্রকাশ করার একজন মাত্র ব্যাক্তি ছিলেন সেতু। সেতু সম্পর্কে সিমরানের ফুফু হয়। নিজের নামের সাথে মিল রেখে নাম রেখেছিলেন ভাতিজির। আজ দশটি বছর পর ফুফুকে দেখে ঠিকই চিনে ফেলল সিমরান। পা দুটো বার বার বলছে…..
—” এই সিমরান দাঁড়িয়ে আছিস কেন? দেখ কে তোর সামনে দাঁড়িয়ে আছে। চিনতে পারছিস না আরেহ উনি তো তোর ফুফি। যার কাছেই তোর ছোট বেলার দিন গুলো অর্ধেক কেটে যেতো। যা তাড়াতাড়ি যা উনার কাছে, জড়িয়ে ধর উনাকে।”
পার্কের কোণে গাছের নিচে দাঁড়িয়ে আছেন মিসেস সেতু রহমান এবং তার স্বামী জনাব শরীফ আহমেদ। বয়স বাড়লেও ভালোবাসা কিংবা আনন্দ কিছুই কমেনি তাদের। মুখ জোরে রয়েছে আনন্দের হাসি। সিমরান সেদিকে পা বাড়ালো কিন্তু মাঝ পথে কিছুটা অভিমান, কষ্ট, রাগ গেঁথে বসলো তার মনে। এক আকাশ অভিমান নিয়ে মনে মনে বলল…..
—” ভালোই তো আছো তুমি তাহলে কেন যাবো তোমার কাছে। তোমার কাছে তো এখন আমার কোনো মূল্য নেই। যদি থাকতো তাহলে কি এই ছোট্ট সিমরানকে রেখে চলে যেতে পারতে? যাবার আগে আমার কথা কি তোমার মনে আসেনি। আসবেই বা কেন তুমি যাকে চেয়েছো তাকেই তো পেয়েছ আমার কথা কেন ভাববে। যাবো না তোমার কাছে, সম্পর্ক নেই আমাদের।”
মনের ভিতরের অভিমান হলো চোখ বেয়ে পানি হিসেবে গড়িয়ে পড়তে লাগলো। হঠাৎ নওশীনের কথা শোনে হুস ফিরলে চোখ পরিষ্কার করে রাগী কণ্ঠে বলল….
—” এতক্ষণ ধরে ওয়েট করছি কিন্তু মেডামের তো কোনো খবরই দেখছি না। বলি এত দেরি কিসের?”
—” সাঁজতে দেরি হলো কিন্তু তুই কান্না কেন করছিলি? ওই সাদাত ফাদাত কে কি মনে পড়লো নাকি তোর?”
—” সাদাত আবার ফাদাত কেমনে হয়? বাই দা ওয়ে ওই ফাজিলের কথা কেন মনে করবো। শোন, আমার চোখের পানি এত তুচ্ছ নয় যে খারাপ লোকের কথা ভেবে কান্না করব। আমি তো এত এত কাপল দেখে কান্না করছি। আজ সবাই কাপল হয়ে এসেছে আর আমরা দুজন কিনা সিঙ্গেল হয়েই এসেছি। জানিস নওশীন, আমাদের কপালে প্রেম, ভালোবাসা এবং বিয়ে তিনটার থেকে যেকোনো একটাও লেখা নাই। তাই তো একুশ বছর ধরে নামের আগে সিঙ্গেল উপাধি নিয়ে ঘুরছি।”
হেসে দিল নওশীন। এই ফাঁকে সিমরান এড়িয়ে গেলো তার কান্নার রহস্য। দুই বান্ধবী পা মিলিয়ে কলেজের ভিতর চলে গেলো।
অন্যদিকে, নিবিড় আইস্ক্রিম খাবার বায়না করে টেনে হিচড়ে নীরকে নিয়ে চলে গেলো। বেচারা নীরের আর প্রেম করা হলো না। মনে মনে নিবিড়ের গুষ্টি উদ্ধার করে পরে নিজেকেই বকতে লাগলো। কেননা, নিবিড়ের গুষ্টি মানে সেখানে সে স্বয়ং আছে। ছোট ভাইকে বকতে গিয়ে নিজেকেও দিয়ে দিলো অবশেষে।
__________________
কলেজ মাঠের এক কোণায় বিভিন্ন ধরনের রঙ নিয়ে বসে আছে একদল তরুণ। সিমরান অবাক হয়ে নওশীনকে বলল…..
—” বসন্ত বরণে রঙ খেলা হয় নাকি?”
—” হ্যাঁ। এইবার তো কলেজে বসন্ত উৎসবে রঙ খেলা হবে কেন জানিস না তুই?”
মাথা এদিক ওদিক ঘুরিয়ে ‘না’ অর্থ বুঝালো সিমরান। নওশীন তখন নিজের মাথায় নিজেই চাপড় মেরে বলল…..
—” মাইয়া তুমি কোনোদিন ঠিক হইবা না। কলেজের সবাই এই কথা জানি আর তুমি কিনা ঢং দেখানোর জন্য কলেজ ভর্তি হইছো মাইয়া।”
নওশীনের রাগ উঠলে সে তখন মাইয়া মাইয়া বলে সম্মেধন করে। ওর রাগ দেখে মনে হচ্ছে সিমরান ভুল কিছু করে ফেলেছে। রঙ খেলা বিষয়ক সে কিছু জানে না তারমানে সে কঠিনতম অপরাধ করে ফেলেছে। এই অপরাধের জন্য তাকে অবশ্যই মৃত্যু দণ্ড দেওয়া উচিৎ।
*** বসন্ত বাতাসে সইগো
বসন্ত বাতাসে
বসন্ত বাতাসে সইগো
বসন্ত বাতাসে
বন্ধুর বাড়ির ফুলের গন্ধ
বন্ধুর বাড়ির ফুলের গন্ধ
আমার বাড়ি আসে
সইগো বসন্ত বাতাসে*******
নাচ শুরু হয়ে গেলো। ছেলে মেয়েদের নাচে মেতে উঠলো পুরো কলেজ। কলেজও মনে হচ্ছে নাচছে তরুণ তরুণীদের সাথে। কিন্তু নওশীন ও সিমরান ব্যস্ত রঙ খেলা নিয়ে। হঠাৎ কেউ একজন এক মুঠো রঙ সিমরানের গায়ে ছুঁয়ে দিয়ে উধাও হয়ে গেলো। চোখের ভিতর রঙ যাওয়াতে ভালো করে দেখতে পেলো না ছেলেটি কে। তবে ঝাপ্সা চোখে শার্টের কিছুটা অংশ দেখতে পেয়ে বুঝে গেলো ছেলেটি কে। ছেলেটি হলো নীর। সিমরান হেসে আবারও নওশীনকে রঙ লাগাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল।
এইবার চোখ জ্বলছে সিমরানের। নওশীনকে বলে ওয়াশ রুমের দিকে হাঁটা দিল সে। চোখ মুখ পরিষ্কার করে ওয়াশ রুম থেকে বের হতেই কেউ একজন হেচকা টান দিয়ে ক্লাস রুমের ভিতরে নিয়ে গেলো। সিমরান লোকটির বুকে মাথা রেখে দাঁড়িয়ে আছে। লোকটি তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে রেখেছে। চোখ মেলে সেই চিনা শার্টটি দেখে রেগে বলল…..
—” হঠাৎ কি হলো আপনার? আপনার ব্যাবহার কিন্তু মোটেও ঠিক লাগছে না।”
হাসলো নীর। সিমরানের নাকের ডগায় তিলটায় হাত বুলিয়ে বলল….
—” আমাকে চিনতে পারছো না তুমি? কি এমন দেখলে যে অচেনা লাগছে। তাছাড়া আপনি করে কেন বলছো? তোমার কথাতেই তো এসেছি আমি।”
সিমরান ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো। নীর কি পাগল তাগল হয়ে গেলো নাকি ভাবাচ্ছে তাকে। তবুও শক্ত হয়ে বলল….
—” মজা কেন করছেন? আজব!”
—” তোমার কণ্ঠ হঠাৎ চেঞ্জ কেন হলো? ঠাণ্ডা কিছু খেয়েছো তাই না? সাজি।”
—” হোয়াট? কে সাজি? ভাই আমি সাজি পাজি না আমি সিমরান।”
অবাক হওয়ার ভান ধরে ছেড়ে দিল সিমরানকে। অনেক বড় ভুল করেছে এমন একটি ভাব নিয়ে বলল…..
—” এই ছিঃ ছিঃ আপনি এইখানে কেন? এইখানে তো আমার গার্লফ্রেন্ড সাজিয়া থাকার কথা ছিল। সরি মিস।”
সিমরান কিছু না বলে চলে যায়। সিমরান যাবার পরেই হাসতে থাকে নীর। ইচ্ছা করেই সিমরানকে রাগিয়েছে সে। সিমরানকে রঙ লাগানোর পর এক চিলতে হাসি দেখেছিল দূর থেকে। হাসির কারণ সিমরান যে একটু একটু করে পছন্দ করতে শুরু করেছে। নীর সে তো একটু একটু পছন্দ চায় না সে চায় অনেক অনেক ভালোবাসা, তাইতো রাগিয়ে দিয়ে মনের ভিতরের অনুভুতি প্রকাশ করার ইচ্ছা জাগালো।
__________________
পরের দিন…….
স্কুলে গালে হাত দিয়ে বসে আছে নিবিড়। মনটা আজ তার ভীষণ খারাপ কেননা মিশু আজ স্কুলে আসেনি। চুপটি মেরে বসে বসে ক্লাস করছে সে। স্যার তখন তাকে প্রশ্ন করল…….
—” বলো তো নিবিড় কোন প্রাণী দাঁড়িয়ে ঘুমায়?”
—” স্যার, আমি তো মাঝে মাঝেই দাঁড়িয়ে ঘুমাই। তাহলে উত্তর হবে নিবিড়।”
স্যার বোকা বনে গেলো। এই ছেলেটিকে তিনি আজও মানুষ করতে পারলেন না। ক্লাসে সব সময় অমনোযোগী থাকলেও পরীক্ষার রেজাল্ট যখন আসে তখন দেখা যায় ওই প্রথম স্থান অর্জন করেছে। তাই কোনো স্যার ম্যাম আর তাকে ক্লাস থেকে বের করে দেয় না। স্যার তখন আরেকটি প্রশ্ন করলো…..
—” সত্যিই তুমি আজব প্রাণী। তো এখন বলো তো? কোন প্রাণী মুখ দিয়ে মলত্যাগ করে?”
প্রশ্ন শোনে নিবিড় তার ছোট্ট মুখটাকে টেনে টেনে বলল….
—-” ইয়াক থু থু ওয়াক কি বলছেন স্যার? ছিঃ এই রকম খচ্চর প্রাণী পৃথিবীতে আছে? ইশ কেন যে আমি আগে জানলাম না তাহলে তো রুম থেকেই বের হতাম না ওয়াক।”
নাক ধরে কথাগুলো বলতে লাগলো। স্যার আর কোনো প্রশ্ন না করে উনার কাজ করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল।
#এক_মুঠো_রঙ
#ফারজানা_আফরোজ
#পর্ব_৭
একাকী নীরবে অনেকক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে আছে নীর। এক নজর সিমরানকে দেখার তৃষ্ণা তৈরি হয়েছে তার মনে। হঠাৎ মন কেন এত উঠলে উঠলো বুঝতে পারছে না সে। নাহ কিছুতেই সে একা থাকতে পারবে না তাই চট করে সিমরানের নাম্বারে ডায়াল করলো। দু-বার রিং পড়তে আবার কেটে দিল। ফোন রিসিভ করার পর কি বলবে সে? সিমরান তো ছেড়ে দেওয়ার পাত্রী নয়। নাহ তাহলে তো আজ তার ফোন দেওয়াই হবে না। উপর আল্লাহ মনে হচ্ছে এখন নীরের সাথে আছেন। কেননা হঠাৎ তার সামনে নিবিড় দাঁড়িয়ে আছে। ছোট্ট মুখে চিন্তার ভাঁজ, গালে হাত দিয়ে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নীরের মুখে দিকে।
নীর তার ভ্রু জোড়া নাচিয়ে বলল….
—” কোনো দরকার?”
বেচারা নিবিড় হঠাৎ করেই কেঁদে উঠল। নীর হকচকিয়ে উঠলো। ভয়ার্ত কন্ঠে বলল……
— ভয় পেয়েছিস নাকি? আয় আমার কাছে আয়।”
নিবিড় তার হাফ প্যান্টের দিকে ইশারা করলো। নীর নিবিড়ের ইশারা অনুযায়ী নিচে তাকাতেই নিজের মাথায় নিজেই চড় মেরে বলল…..
—” আবার হিসু করে দিয়েছিস? এত বড় ছেলে হয়ে রাতে বিছানায় হিসু করতে লজ্জা করে না , ফাজিল।”
—” আমি কি করে জানবো যে আমি হিসু করে দিবো?”
—” তাহলে হিসু করার পর কিভাবে বুঝলি?”
—” ওইটা তো প্যান্ট আর বিছানা ভিজা দেখে বুঝতে পেরেছি। আমি তো স্বপ্নে দেখছিলাম আমি একা একা বাথরুম যাচ্ছি, বাথরুমের দরজা খুলে ভিতরে চলে গিয়েছি, প্যান্টের চেইন খুলে হিসু করার পর বুঝতে পারলাম আমি শুয়ে শুয়ে জমিদারের মতো বিছানায় হিসু করছি।”
কথাগুলো বলে আবারও কাঁদতে লাগলো নিবিড়। নীর কান্না থামানোর জন্য বলল….
—” ওকে সমস্যা নাই তুই প্যান্ট চেঞ্জ করে আমার রুমে শুয়ে পড়।”
—” আম্মু তো সকালে ঘুম থেকে উঠে যদি দেখে বিছানা ভিজা আমাকে তো একবার বল, আরেকবার ফুটবল আবার দেখা যাবে জামা কাপড়ের মত ধোলাই করছে।”
—” তো এখন কি করতে হবে আমার?”
চোখ গুলো বাঁকা করে বলল নীর। নিবিড় তখন হাসি মুখে বলল…..
—” তুমি আজ আমার রুমে শুয়ে পড়ো আর আমি তোমার রুমে। সকালে যখন সবাই দেখবে যে আমরা রুম অদল বদল করেছি আর আমার রুমের বিছানা ভিজা তখন বুঝবে রাতে তুমিই হিসু করে দিয়েছো। তুমি তো বাচ্চা ছেলে কেউ কিছু বলবে না আর তোমার সম্মানও নষ্ট হবে না। তাছাড়া তোমার তো আর সম্মান তম্মান নেই যে যাবে।”
নীর বুঝতে পারছে না তার এখন কি করা উচিৎ। সে কি কান্না করবে নাকি হাসবে। নিবিড়ের কান্ড গুলো এমনেই যে না হেসে পারা যায় না তবে এই নীরকে বাঁশ দেওয়ার জন্য ওর কান্ড গুলো একদম উত্তম।
কোনো উপায় না পেয়ে নিবিড়ের প্যান্ট বদলিয়ে দুই ভাই বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই নীর বলল….
—” জানিস ভাই সিমরানের কথা খুব মনে পড়ছে। ওর সাথে কথা বলতে বড্ড ইচ্ছা করছে।”
—” তাহলে ফোন দিয়ে কথা বলো। আমি কি এখন মোবাইল হয়ে তোমাদের দুজনের মধ্যে ঘুরাঘুরি করব।”
—” কথা বলার জন্য তো কোনো বিশেষ কারণ দরকার। আমার কাছে তো কোনো কারণ নেই।”
নিবিড় বিছানা থেকে লাফিয়ে উঠলো। কোমড় ধরে নেচে নেচে বলল…..
—” তোমার সমস্যার সমাধান পেয়ে গেছি, ব্রো।”
এক হাত কোমড়ে রেখে অন্য হাত মাথায় দিয়ে কোমড় হেলিয়ে হেলিয়ে সে নাচতে লাগলো। নীর সন্দিহান নজরে বার বার নিবিড়কে দেখছে। এই ছেলে কি আদো বাচ্চা ছেলে নাকি একশো সন্তানের পিতা বুঝতে পারছে না নীর। ওর মতো বয়সে তো নীর বুদ্ধি কি তাই বুঝত না আর এই ছেলে কিনা অতি সহজে সমস্যার সমাধান করে ফেলে, স্ট্রেঞ্জ…….
—” ব্রো ফোন দেও ভাবীর কাছে।”
—” ফোন দিয়ে কি বলব?”
—” বলো, নিবিড় নাকি আপনার ব্যাগে চকোলেট রেখে এসেছে সে এখন চকোলেটের জন্য কান্না করছে।”
নীর এইবার চোখ পাকিয়ে বলল….
—” এইটা তোর বিশেষ কারণ? রাতে বিছানায় হিসু করার ফলে তোর মাথা খারাপ হয়ে গেলো নাকি?”
—” ধুর ছাই, কিছুই তো বুঝ না। বলবা, আমি নিবিড়কে বুঝাচ্ছি তাকে দোকান থেকে অনেক চকোলেট কিনে দিবো কিন্তু ও মানছে না ওর নাকি আপনার ব্যাগের চকোলেট চাই চাই। তাই আর কি আপনার সাথে দেখা করার জন্য আমরা দুই ভাই আসছি। ”
—” ভাই তোর পা দে তো একটু ধুলো নেই।”
নিবিড় তার পা দুটো এগিয়ে দিয়ে বলল…..
—” সরি বৎস পায়ে কোনো ধুলো নেই। তুমি বরং সকালের জন্য অপেক্ষা করো ধুলো তুমি পেয়ে যাবে।”
নীর জোড়ে জোড়ে হাসতে লাগলো। সিমরানের নাম্বারে পাঁচ বার ফোন দেওয়ার পরেও রিসিভ হচ্ছে না। আশা ছেড়ে দিয়ে শেষ বারের মত ফোন দিতেই ওপাশ থেকে ঘুম ঘুম কণ্ঠে সিমরান বলে উঠলো….
—” কে বলছেন?”
—” আমি।”
—” আমি তো বুঝলাম বাট এই আমি মানুষটা কে?”
—” নীর আহমেদ।”
—” কোন নীর?”
—” তোমার ফিউচার সন্তানের বাবা।”
সিমরান এইবার চমকে উঠলো। তড়িঘড়ি করে উঠে বলল…..
—” আপনি? আপনি আমার ফোন নাম্বার কিভাবে পেয়েছেন?”
—” ফোন নম্বর পাওয়া এখন কঠিন কোনো কাজ নয় মিস।”
—” ফোন কেন দিয়েছেন? নাকি ওই সাজিয়া ভেবে ফোন দিয়েছেন?”
মুচকি হাসলো নীর। এখনও রেগে আছে সিমরান।
—” আপনার ব্যাগে আমার ছোট ভাই নিবিড়ের চকোলেট। এখন সেই চকোলেটের জন্য রাত জেগে কান্না করছে।”
—” আপনাদের এলাকায় কি দোকান নেই বা চকোলেট কিনার টাকা নেই?”
রেগে গিয়ে বলল সিমরান। মাঝ রাতে চকোলেটের জন্য ফোন দিয়ে ঘুম ভাঙ্গল তার। মেজাজ এখন তার এক হাজার ভোল্ট। ইচ্ছা করছে তার এখন নীরকে মারতে কিন্তু পারছে না। নীর বুঝতে পারলো সিমরান রেগে আছে তাই আর কিছু না বলে ফোন কেটে দিলো। নিবিড়ের ঘুম যেন এখন ধরা ছোঁয়ার বাইরে চলে গিয়েছে। সে যেন বড় ভাইয়ের প্রেম সম্পর্কে জানার জন্য ভীষণ আগ্রহী। নীর ছোট ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বলল…..
—” বিড়ালের মত ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছিস কেন যা ঘুমা। আরেকবার যদি দেখেছি আমাকে আজে বাজে বুদ্ধি দিয়েছিস তখন তোকে ভুতের কাছে রেখে আসবো।”
শুয়ে পড়লো নীর। নিবিড় রাগ করে উল্টো ঘুরে শুয়ে পড়লো। নীর তখন পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলল….
—” মজা করছি বস। আপনার বুদ্ধি কাজে দিয়েছে। কিন্তু এত রাতে তোর ভাবীর বাসার সামনে দাঁড়ালে খারাপ ভাববে মানুষ তাই আর কি যাবো না। উম্মাহ আমার লিটল ডল।”
বড় ভাইকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়লো নিবিড়। শান্তির ঘুম ঘুমাচ্ছে দুই ভাই। তাদের দেখে মনে হচ্ছে খুবই সুখে আছে তারা।
অন্যদিকে সিমরান ভীষণ অবাক হলো নীরের ফোন কেটে দেওয়া দেখে। মনে মনে ভাবছে ভুল কিছু বলে ফেলেনি তো যার জন্য রেগে গিয়ে ফোন কেটে দিয়েছে। ফোন দিতে গিয়েও দিলো না যদি খারাপ কিছু ভাবে। মনে মনে ভাবলো আবার দেখা হলে সরি বলে ফেলবে।
__________________
আইরিনের মন খুব খারাপ। শশুর বাড়ি মোটেও ভালো লাগছে না তার। দম প্রায় বন্ধ হয়ে আসছে তার। সারাদিন কাজ করা সত্ত্বেও যখন ক্লান্ত শরীর বিছানায় এলিয়ে দিয়ে বিশ্রাম নিতে চায় তখনি শুনতে পায় শাশুড়ির চিৎকার। সারাদিন শুয়ে বসে থেকে মোটা হয়ে যাচ্ছে, কাজ কর্ম কিছুই করে না, জানলে এই বউ জীবনেও বিয়ে করাতো না। বউ খুবই অলস। আইরিনের চোখের পানি এখন সাগরে পরিণীত হচ্ছে, না পারছে সইতে, না পারছে কিছু করতে। এইটুকু বয়সে এতগুলো কাজ করা সত্ত্বেও শশুর বাড়ির মন সে পাচ্ছে না। রাতে স্বামীর কাছে নালিশ করলে ফয়সাল বলে…..
—” বিয়ের আগে তোমাকে সব কিছুই বলেছি। আমার পরিবার বউ নয় বুয়া চাচ্ছে তাহলে কেন তোমার পরিবার কিংবা তুমি রাজি হলে? আমার টাকা দেখে রাজি হয়েছ এখন টাকা দেখেই থাকো।”
অবশেষে স্বামীর কাছেও শান্তি না পেয়ে মুখ চেপে কাঁদতে থাকে আইরিন। এখন বুঝলো সে, টাকাই সব কিছু না ভালোবাসাই সব।
চলবে…..
বানান ভুল ক্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। নাইস নেক্সট না লিখে ভালো কিছু কমেন্ট করুন তাহলে গল্প লিখতে খুব ভালো লাগে। ভুল বানান গুলো প্লিজ সবাই ধরিয়ে দিবেন তাহলে পরবর্তীতে এই ভুল সংশোধন করতে পারবো।
চলবে…..
বানান ভুল হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।