একদিন কাঁদবে তুমিও পর্ব -৩৩+৩৪

#একদিন_কাঁদবে_তুমিও
#পর্ব_৩৩
#Saji_Afroz

মানতাশার ঘুম ভাঙে দরজায় কারো কড়া নাড়ার শব্দ শুনে। হাই দিয়ে উঠে বসে সে। চোখে এখনো ঘুম তার। দেয়াল ঘড়িটির দিকে তাকিয়ে দেখলো, সকাল দশটা বেজেছে।
বিরক্ত হলেও উঠে পড়ে সে। শরীরের কাপড় ঠিক করে দরজা খুলে একজন মহিলা কর্মচারীকে দেখতে পায়। সে বলল, আপনাদের নাস্তা করতে ডাকে মালিহা ম্যাডাম।
-তারা চলে এসেছেন?
-জি।
-ও আচ্ছা!

মানতাশা ফ্রেশ হয়ে আরশানকে ডাকে। আরশান ঘুমন্ত অবস্থাতেই মানতাশাকে নিজের কাছে টেনে নেয়। সে বলল, আহা ছাড়ো!
-উহু! থাকো না কাছে।
-নাস্তা করতে ডাকছে নিচে।

একথা শুনে আরশান চোখ খুলে বলল, বাজে ক’টা?
-সাড়ে দশ।
-ওহহো! এত বেলা হয়ে গেল…

এই বলে আরশানও উঠে পড়ে। সে ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নেয়। দু’জনে মিলে নিচে নেমে আসলো।
ডাইনিং রুমে এসে দেখা পায় মালিহার। সে আরশানকে দেখে বলল, শুভ সকাল।
-শুভ সকাল ভাবী।

আরশান ও মানতাশা বসতেই মালিহা বলল, আজ অফিসে যাওনি? প্রয়োজনীয় মিটিং ছিল।
-ওহহো! আমার মাথা থেকে ছুটে গেছে বিষয়টি। এত ঘুম পেয়েছিল!
-তোমার ভাই গেছে। বাট আরশান, এই বিষয়ে হেলা করাটা উচিত হয়নি তোমার।

খেতে খেতে আরশান বলল, আমি হেলা করলেও ভাই আছেনা? সে ঠিকই সামলে নেবে।
-নিয়েছেই তো। তাই কাল ঘুরতে গিয়েও দায়িত্ব মনে করে আজ তাড়াতাড়ি অফিসে চলে গেছে। আর সেটা আমি করেছি। মানে তাড়াটা আমিই দিয়েছি।

মুচকি হেসে আরশান বলল, উহু ভাবী! তোমাদের তো আর নতুন বিয়ে হয়নি।

মানতাশা তাল মিলিয়ে বলল, সেটাই। আমি বলি কী তুমি ক’টা দিন ছুটি নাও। হানিমুনে যাই আমরা? দেখবে মাইন্ড ফ্রেশ হবে। অফিসের ঝামেলা তো নিত্যদিনই থাকে।
-মন্দ বলোনি। কোথায় যাবে ঠিক করো।

মালিহা অবাক হয়ে আরশানের দিকে তাকিয়ে রইলো। এদিকে মানতাশা মুখ টিপে হেসে চলেছে। এক রাতেই ভালো কাবু করতে পারলো সে আরশানকে।
.
.
.
সাজিরের বিয়ে হয়ে গেছে, কথাটি শোনার পর থেকে আরও বেশি চুপচাপ হয়ে গেছে নাবীহা। কারো সাথে কোনো কথাই সে বলছে না। কিছুক্ষণ পর পর কেঁদে উঠে, পরে আবার নিশ্চুপ হয়ে যায়।
মেয়েকে এমন অবস্থায় দেখে অসুস্থ হয়ে পড়েন নায়লা খাতুন। এদিকে তাদের জন্যে চিন্তিত আজরা। একটু বাদেই তাকে নিতে আসবে ইনতিসার। দু’দিন তো থেকে গেছে এখানে৷ আজও কীভাবে থাকার কথা বলবে? যদি কিছু মনে করে ইনতিসার! এই ভাবনায় পড়ে গেল সে। জহির ছোটো মানুষ। নাবীহা ও নায়লা খাতুনের দেখাশোনা করা তার পক্ষে সম্ভব নয়।

খানিকবাদে ইনতিসার আসলো। আজরা চা বানিয়ে নিয়ে এলো তার জন্যে। সে বলল, এখন কী অবস্থা সবার?
-আন্টির জ্বর এসেছে। আর নাবীহা তো একেবারেই চুপচাপ।
-কী বলছ?
-হুম।
-আজও কী থাকবে তুমি?

আজরা কিছু বলার আগে দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ শুনতে পায়। দরজা খুলতেই একজন অপরিচিত লোক দেখে সে পরিচয় জানতে চাইলো। লোকটি বলল, আমি এই এলাকাতেই থাকি। নায়লা খাতুনের সঙ্গে আমার কথা ছিল।
-কিন্তু তিনি তো অসুস্থ।
-বিষয়টা জরুরি।

আজরা লোকটিয়ে ড্রয়িংরুমে বসিয়ে নায়লা খাতুনকে নিয়ে এলো৷ তিনি লোকটিকে দেখে বললেন, আকবর ভাই যে?
-আসসালামু আলাইকুম ভাবী।
-ওয়াআলাইকুম আসসালাম ভালো আছেন?
-জি। আপনি নাকি অসুস্থ?
-কিছুটা।
-আসলে জরুরী ব্যাপারে ডাকলাম।
-আমি বুঝতে পেরেছি কেন।

এই বলে কেঁদে উঠলেন তিনি। আকবার বললেন, এখন কী করবেন ভেবেছেন ভাবী? আপনার মনের অবস্থা আমি বুঝছি। তাই তো ভাই মারা যাওয়ার এতদিনেও আসিনি৷ কিন্তু কিছু তো একটা করতে হবে।
-ওত টাকা কোথা থেকে দেব ভাই? আপনিই বরং রেখে দিন বাড়িটি।
-আর আপনারা?
-আমার বাপের বাড়িতে চলে যাব। দেখি ভাই ভাবী ঠাঁই দেয় কিনা।

আঁচলে মুখ লুকিয়ে কাঁদছেন তিনি। আকবর বললেন, তবে আমি কাগজপত্র তৈরী করছি।

এই বলে তিনি চলে গেলেন। ইনতিসার বলল, উনি কিসের কথা বলছেন আন্টি?
-নাফিসার বিয়ের সময় বাড়িটি বন্ধক দিতে হয়েছিল।

নাবীহা এতক্ষণ আড়াল থেকে সব শুনছিল। তাদের কাছে এসে সে বলল, কিন্তু কেন? আমি যতদূর জানি বাবার কাছে আপুর বিয়ের জন্য টাকা জমানো ছিল। তবে বাড়ি বন্ধক কেন দিতে হলো?
-তোর বাবা ব্যবসা করতে গিয়ে লোকসানে অনেক টাকা হারিয়েছে এটা তো জানিস। যা জমা ছিল তা দিয়ে নাফিসার বিয়ের কাজ সারতে চেয়েছিল। কিন্তু বিয়ের সময় ব্যাংক থেকে টাকা তুলে বাড়ি ফেরার পথে ছিনতাইকারীর কবলে পড়ে তোর বাবা। আমি যে গয়নাগুলো রঙ করাতে দিয়েছিলাম সেসবও সাথে ছিল তার। সবই ছিনতাই করে ফেলে। তোদের কিছু জানাইনি আমরা। তোর বাবার কাছে তো এত সম্বল ছিল না! তাই বাড়ি বন্ধক দিয়ে টাকা নিতে হয়। সেই টাকা থেকে বিয়ের খরচ ও গয়নাও কিনে দেয় নাফিসাকে।
বিয়ের পর পর নাফিসার স্বামী অনেক টাকা ধারও দেয়। যেকথা নাফিসাও জানতো না। পরবর্তীতে সেসবও অস্বীকার করে। তবুও তোর বাবা তোদের কাউকে এসব জানায়নি। তিনি চেয়েছিলেন মেয়েটার ঘর না ভাঙুক।

আর কথা বলতে পারছেন না তিনি। গলা ধরে এসেছে তার। আজরা তার দিকে এক গ্লাস পানি এগিয়ে দেয়।
নাবীহা বলল, এতকিছু হয়ে গেল আর আমরা জানিই না!
-তোর বাবা চাননি তোরা জানিস।

জহির মলীন মুখে বলল, আমাদের কী রাস্তার ফকিরদের মতো রাস্তায় থাকতে হবে মা?
-আরও কিছু টাকা রয়েছে সেখানের। আমি এতদিন জানাইনি কারণ ভেবেছিলাম বাকি টাকা কোনোমতে জোগাড় করে বাড়িটা উদ্ধার করা যায় কিনা! কিন্তু এটা এখন সম্ভব না। তবে রাস্তায় থাকতে হবে না বাবা। বাপের বাড়িতে ঠাঁই পেলে সেই টাকা দিয়ে চলতে হবে।

নিশ্চুপ ভাবে সোফায় বসে পড়ে নাবীহা৷ তার দিকে তাকিয়ে ইনতিসারের বুকটা ধুক করে উঠলো। এ কী হাল করেছে সে নিজের!
ইনতিসার কোনো কিছু না ভেবেই বলল, যেতে হবে না আপনাদের কোথাও। টাকা আমি শোধ করব।

সবাই তার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো।
ইনতিসার বলল, আজরার প্রিয় মানুষ আপনারা। আপনাদের কীভাবে কষ্ট পেতে দিই?

আজরা বলল, তাইতো! আমরা থাকতে চিন্তা কিসের।

নাবীহা বলল, এটা হয় না। এত টাকা নিতে পারব না।
-বারেহ! আমি তোর কেউ না বুঝি?
-তবুও…

নাবীহাকে থামিয়ে আজরা বলল, আচ্ছা শোধ করে দিস।
-এত টাকা শোধ আমি কিভাবে করব বল?
-ইনতিসারের অফিসে জব করে!

আজরার কথাতে ইনতিসারও চমকালো। সে এমনকিছু বলবে ভাবেনি। আজরা বলল, কী খারাপ বললাম? সে এমনিতে টাকা নেবে না আমি জানি। তাই পথ খুঁজে দিলাম।

ইনতিসার বলল, আমার কোনো অসুবিধে নেই। বরং অফিসে ভালো পদ খালি রয়েছে। নাবীহার যোগ্যতা অনুযায়ী একটা ভালো পদ সে পাবে আশাকরি।

আর কোনো পথ তো খোলা নেই। তাই আজরার প্রস্তাবে রাজি হতে বাধ্য হয় নাবীহা।

এদিকে নায়লা খাতুন শান্তির একটি নি:শ্বাস ফেললেন। ইনতিসারের জন্য মন থেকে দোয়া করলেন তিনি। যেন তার সকল আশা পূরণ হয়।
কিন্তু এই দোয়ায় যে অন্যের আশা ভঙ্গ হবে কে জানতো!
.
.
.
রাতে বারান্দায় দাঁড়িয়ে রয়েছে মালিহা মুমতাজ। তার পাশে এসে দাড়ালেন আশফাকুল। মালিহা বললেন, সকালে আরশান যায়নি বলে চাপ পড়েছে কাজের?
-তা একটু পড়েছে।
-সবটাই হলো মানতাশার জন্যে। ওর জন্যেই আজ যেতে পারলো না আরশান।
-আহা মালিহা! ওদের নতুন বিয়ে হয়েছে।
-তাই বলে কাজের প্রতি অবহেলা করবে? এখন আবার হানিমুনেও যাওয়ার প্লান করছে তারা।

আশফাকুল একটু থেমে বললেন, আমি খেয়াল করছি তুমি মানতাশার প্রতি বেশিই কঠোর আচরণ করছ।

মালিহাও একটু থেমে বলল-
ঠিক খেয়াল করেছ। কারণ সে আমাদের ক্লাসের মেয়ে নয়। তার অনেক চাহিদা থাকতে পারে। ভয় হয় যে সেসব চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে না আবার উল্টো পথে হাঁটে! আমরা সুশৃঙ্খল একটি পরিবার। এমনি থাকতে চাই।
-একটু ছেড়ে দেখো না কেমন চলে? পরে নাহয় ব্যবস্থা নিও। কঠোর হতে গিয়ে না আবার আরশানের মন থেকেও উঠে যাও।

আশফাকুল রুমে চলে যান। তার কথা শুনে ভাবনায় পড়ে গেলেন মালিহা। অনেকক্ষণ ভেবে সিদ্ধান্ত নিলেন, মানতাশাকে কিছুদিন ওর মতো করেই চলতে দেওয়াই শ্রেয়।
.
চলবে#একদিন_কাঁদবে_তুমিও
#পর্ব_৩৪
#Saji_Afroz

ছয় মাস পার হয়ে যায়। এই ক’টা দিনেই ওদের জীবনযাত্রা বদলে যায়। এই তো নাবীহা! আগের চেয়ে অনেকটা ভালো আছে সে। ইনতিসারের অফিসে অ্যাকাউন্ট্যান্ট হিসেবে কাজ করে। আর হিসাবের কাজটা ভালোই সামলে নিচ্ছে সে। তার কাজে শুধু ইনতিসার নয়, বাকি কর্মচারীরাও বেশ মুগ্ধ।

অফিস শেষে বাড়িতে ফেরার জন্য বের হয়েই গাড়ি ঠিক করতে যায় নাবীহা। প্রতিবারের মতন তাকে ইনতিসার থামিয়ে বলল, উহু নাবীহা! একই কাজ প্রতিদিন কেন করো বলো তো? বলেছি আমিই ড্রপ করে দেব তোমাকে।

নাবীহা মুচকি হেসে বলল, তাই বলে প্রতিদিন?
-আন্টিকে কথা দিয়েছিলাম তোমাকে কষ্ট পেতে দেব না। গাড়ি ঠিক করাটাও একটা কষ্টের কাজ।
-আর আপনি যে প্রতিদিন আমাকে নামিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব পালন করে পেইন নিচ্ছেন?
-একই পথেই তো। কোনো কষ্ট না। আসো তো তুমি।

প্রতিবারের মতো আজও নাবীহা ইনতিসারের গাড়িতে উঠে বসলো।
তাকে নামিয়ে দিয়ে নিজের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয় ইনতিসার।
.
.
-ভালো ডাক্তার দেখিয়েছেন বুঝলাম। দেশের বাইরে গিয়েও তো চিকিৎসা করা যায়?

প্রতিবেশী আনিলা শেখের কথা শুনে ইলারা জামান বললেন-
যেসব ডাক্তার দেখাচ্ছি তারা দেশের বাইরে গিয়েও চিকিৎসা করিয়ে থাকেন। বাংলাদেশের বেস্ট ডাক্তারই দেখিয়েছি আমরা। আজরা বা ইনতিসারের কোনো সমস্যাই তারা পেল না তারা। বলল সময় নিতে। এমনটা অনেকের হয়ে থাকে। চেষ্টা চালিয়ে যেতে, এক সময় সফল হবে।
-আর যদি না হয়?

ইলারা জামান ভ্রু কুচকে তাকালেন তার দিকে। তিনি বললেন, এমনেই জিজ্ঞাসা করলাম! একমাত্র ছেলে আপনার। চিন্তা হয় না?
-আল্লাহ এর উপরে সম্পূর্ণ ভরসা আছে আমার। তিনি আমাদের নিরাশ করবেন না। ওদের বিয়ে হয়েছেই বা কতদিন হচ্ছে!

আড়াল থেকে এসব শুনে হতাশ হয় আজরা। এখন থেকেই লোকজন এসব বিষয়ে কথা বলতে শুরু করে দিয়েছে। তাদের থেকেও বাচ্চা নিয়ে যেন অন্যদের চিন্তা বেশি! ইনতিসার কেও কী এসব নিয়ে লোকে কথা শোনায়?
.
.
.
সকালে নাস্তা করতে বসেছে আরশান, মালিহা ও আশফাকুল। আরশানের পাশে মানতাশাকে না দেখে মালিহা বললেন, মানতাশা কোথায়?
-উঠেনি এখনো।

হালকা কেশে তিনি বললেন, এখনো কী সে নতুন বউ? বেলা বারোটার পর ঘুম ভাঙে তার।
-কী বলছ?
-হু। তার কী কোনো দায়িত্ব নেই? আমাকেই দেখো! তোমার ভাই অফিসে যাবে বলে প্রতিদিনই আমি তাড়াতাড়ি উঠে যাই। এবং সেটা বিয়ের প্রথম দিন থেকেই। ঘরের কাজ আমি করতে বলছি না। নিজের স্বামীর দেখভাল কী করতে হবে না?

আরশান মাথা নিচু করে রইলো।
মালিহা আরও বললেন-
ওকে আমি স্বাধীনতা দিয়েছিলাম। কিন্তু ও কী করলো? অপব্যবহার করেছে সেই স্বাধীনতার। ইচ্ছে মতো টাকা উড়িয়েছে। বাইরে ঘুরাঘুরি, শপিং, পার্টি করা, রাতে দেরী করে বাসায় ফেরা, টাকা উড়ানো ছাড়া কিইবা করলো সে?

আশফাকুল বললেন, আহ থামো মালিহা!
-থেমেই ছিলাম তোমার কথা শুনে। এতটা মাস চুপ ছিলাম। কিন্তু লাভ কী হলো? আমি যেটা ভয় পেয়েছিলাম সেটাই হলো। আর কত বেহায়াপনা সহ্য করব বলো তো?

আরশান দাঁড়িয়ে পড়লো। আশফাকুল বললেন, উঠে পড়লি কেন? নাস্তা সেরে নে।
-অফিসে করে নেব।

এই বলে আরশান নিজের রুমের দিকে এগিয়ে যায়। মালিহার উদ্দেশ্যে আশফাকুল বললেন, এসব না করলে হত না?
-তোমার কথা শুনে এতদিন চুপ ছিলাম। নাহয় আগেই সোজা করে ফেলতাম ওই মেয়েকে। অভিজ্ঞতা কম হয়নি জীবনে। মানুষ দেখলেই বুঝি কে কেমন। ওকে দেখেই মনে হয়েছিল লোভী একটা মেয়ে।

আশফাকুল দীর্ঘ একটা শ্বাস ফেলে খাওয়াতে মনোযোগ দিলেন।

এদিকে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন মানতাশা। হঠাৎ কারো হ্যাচকা টানে শোয়া থেকে উঠে বসতে হলো তাকে। চোখ খোলার আগেই ডান গালে কেউ সজোরে চড় মেরেছে। ব্যথায় শব্দ করে উঠে চোখ জোড়া খুলে আরশানকে দেখতে পায় মানতাশা। অবাক হয়ে সে আরশানের দিকে তাকিয়ে রইলো। যেন বোবা হয়ে গেছে!
আরশান বলল-
আজরার কাছ থেকে শুনে তোমার হানিমুনে মালয়েশিয়া যাওয়ার ইচ্ছে ছিল। সেই ইচ্ছেও আমি পূরণ করলাম। ইনতিসারদের সাথে মালয়েশিয়া ঘুরে আসলাম। যখন যা মনে চায় করতে দিয়েছি তোমাকে। হাত ভর্তি টাকা দিয়েছি। কোথায় কী খরচা করছ জিজ্ঞাসাও করিনি কেউ। কিন্তু তুমি কী করছ এসব?

মানতাশা বলল, কী করছি আমি?
-আমার কোনো কেয়ার তুমি নাও? এই যে সকালে উঠে অফিস যাই সেই খবর তোমার আছে?
-ঘরে কাজের মেয়ে আছে কিসের জন্যে?
-কাজের মেয়েকে দিয়ে সব হলে তো কাজের মেয়েই বিয়ে করে নিতাম।
-সেটাই তো করতে চাইছ। বিয়ে করে কাজের মেয়ে বানিয়ে নিতে চাইছ।
-আরেকটা বাজে কথা বললে..
-কী করবে তুমি? আমার গায়ে হাত তুলে কী পুরুষত্ব প্রমাণ করতে চাইছ?

মানতাশার চ্যাঁচিয়ে কথা বলা শুনে আরও খেপে যায় আরশান। সে বলল, আরও কীভাবে পুরুষত্ব প্রমাণ করা যায় দেখাব তোমাকে।
-মানে!
-দেখতে থাকো।

এই বলে হনহনিয়ে বেরিয়ে যায় আরশান। মানতাশা রাগান্বিত হয়ে চেয়ে রইলো তার পথের দিকে। আরশানের সাহস কীভাবে হয় ওর গায়ে হাত তোলার!
.
.
.
নাস্তা করতে টেবিলে আসলো নাবীহা। চেয়ার টেনে মাত্র বসলো সে। নায়লা খাতুন বললেন, হ্যাঁ রে মা? একটা কথা ছিল।
-হু বলো?
-আছিয়া আপা আবার এসেছিলেন তার ছেলের জন্য প্রস্তাব নিয়ে।

নাবীহা একটু থেমে বলল, না করোনি? না করতে বলেছিলাম তোমাকে।
-আমার তো ভালোই লাগে ওদের। ছেলে ব্যবসা করে, খারাপ কী!
-ব্যবসাটা চালের।
-খারাপ কী? তাছাড়া স্থানীয় তারা।
-এমন কাউকে বিয়ে করার কী প্রয়োজন মা? আমি তো জব করছি। ভালোই আছি আমরা। জহিরও ভালো কলেজে পড়ছে। সবই ঠিকঠাক চলছে।
-মেয়ে হয়ে জন্মেছিস বিয়ে করতে হবে না?
-করব না বলিনি। মনের মতো কাউকে পেলে ঠিকই করে নেব।

এই বলে উঠে পড়ে নাবীহা। আর কোনো কথা না বলে বেরিয়ে যায় সে। নায়লা খাতুন বিড়বিড়িয়ে বললেন, আজরা আর মানতাশার মতো তোর কপাল কী হবে? কিসের আশায় বসে রয়েছিস জানিনা।
.
.
.
অফিসের উদ্দেশ্যে বেরুচ্ছে ইনতিসার। আজরা এসে বলল, আজ একটু তাড়াতাড়ি ফিরবে?
-কেন?
-অনেকদিন কোথাও যাইনা।

একটু ভেবে ইনতিসার বলল, আচ্ছা আসব। কোথায় যাবে ঠিক করো।

আজরা তার দিকে একটি হট বাক্স এগিয়ে দিয়ে বলল, আজ আমি আপনার জন্যে স্পেশাল রান্না করেছি সেই সকালে উঠেই।
-কষ্ট করতে গেলে কেন?
-আমার রান্না আপনার ভালো লাগে তাই।
ইনতিসার হেসে বাক্স নিয়ে
অফিসের উদ্দেশ্যে বেরুলো।
এদিকে আজরা বেশ খুশি। আজকে কোথায় যাবে এই নিয়ে ভাবতে থাকে সে।
.
.
.
গত কালকের হিসাব দেখার জন্যে নাবীহাকে ডাকে ইনতিসার। তার মলীন মুখটা দেখে সে বলল, কোনো সমস্যা?
-নাহ।

সে ফাইলটি এগিয়ে দেয়। ইনতিসার তা একপাশে রেখে বলল, আচ্ছা কাজ পরে হবে। চলো লাঞ্চ সেরে আসি।

নাবীহা আমতাআমতা করে বলল, আমি করে নেব।
-আজ আমার সাথেই করো!

ইনতিসারের জোরাজোরিতে তার সঙ্গে অফিসের পাশের রেস্টুরেন্টে যায় নাবীহা। এদিকে অফিসের কর্নারে থাকা টেবিলে পড়ে আছে আজরার দেওয়া খাবার।
.
চলবে
.

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here