ও চোখে বৃষ্টি এলে পর্ব -০৫

#গল্পঃ_ও_চোখে_বৃষ্টি_এলে
#পর্ব:পঞ্চম
Tuhina Pakira
৫.
-” তুমি পিয়ালকে বিয়ে করতে পারবে না সাম্য। তোমাকে আমার দিব্যি।”

-” তুমি এইসব কি বলছো মা ! তোমার শরীর খারাপ চলো ডক্টরের কাছে যাবো।”

সাম্য ওর মা কে বিছানা থেকে ওঠাতে গেলে ওর মা প্যানিক করতে করতে বলল,

– ” না তুই বল তুই পিয়ালকে বিয়ে করবিনা আগে! ”

সাম্যের মা সাম্যের দিকে কিছু শোনার আশায় তাকালো, কিন্তু সাম্য চুপ করে ওর মায়ের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। ছেলেকে চুপ দেখে তিনি আবারও বলে উঠলো,

-” দেখ বাবা তুই আমার কথা শোন। তোর বাবা যেমন তোদের মেনে নেবে না তেমনি পিয়ালের বাবাও ঠিক তাই। তোর টেনশনে তোর বাবার অবস্থাটা একবার দেখেছিস! বাবা – মা ছেলেমেয়ের সবসময় ভালো চায়, তারা চাইবে না ছেলে কখনো খারাপ থাকুক। আর তাছাড়া না আমরা মেনে নেবো ওকে, আর না ওর ফ্যামিলি। দুই পরিবারেরই ঘোর আপত্তি। কেউই খুশি হবি না। আমার কথা শোন। ”

বহু কষ্টে তিনি কথা গুলো বললেন। তার প্রেসার হাই হয়ে গেছে। কয়েকদিন টেনশনে ঠিক মত ঔষুধ খায়নি। তার উপর হার্টের পেশেন্ট।

আরও নানা রকমের ঝামেলার বশবর্তী, মায়ের প্রতিজ্ঞা সব মিলিয়ে সাম্য নিজেকে পিয়ালের থেকে দূরে করে নেয়। অপরদিকে মৈত্রী হুট করেই সাম্যের পিছনে পড়ে ছিল। পিয়ালকেও বারবার বলতো সাম্য কে ছেরে দিতে। কিন্তু পিয়াল সবসময় মৈত্রী কে এড়িয়ে চলেছে। কিন্তু মৈত্রী যখন দেখলো সাম্য পিয়ালের থেকে দূরে চলে গেছে, সেই সুযোগে মৈত্রী ওর বাবাকে দিয়ে বিয়ের প্রস্তাব পাঠালে সাম্যের বাবা রাজি হয়ে যায়। মাকে দেওয়া কথা রাখতে সাম্যকে বিয়ে করতে যেতেও হয়। হয়তো বিয়েটাও ওকে করতে হতো, যদিনা ওর মা ওর কষ্টটা বুঝতো। কিন্তু ভাগ্য ওর সহায় ছিল, তাই না এই বিয়েটা সাম্য কে করতে হলো না। কিন্তু পিয়ালের এই অবস্থা সাম্য মেনে নিতে পারছে না। পিয়ালের এখনও জ্ঞান ফেরেনি। ডক্টর বলেছে, এখনও কিছু বলা যাচ্ছে না। মাথার চোটটা ভালোই লেগেছে। তবে সুস্থ্য হওয়ার চান্সটাই বেশি।

এখন ভোর পাঁচটা বাজে। পিয়ালের মা আর অভি
চেয়ারে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। পিয়ালের বাবার শরীরটা রাতের দিকে খারাপ হাওয়ায় সাম্য ওর বন্ধুদের সঙ্গে তাকে পাঠিয়ে দিয়েছে। সামনেই ওর এক ফ্রেন্ডের বাড়ি, তার বাড়িতেই রয়েছে। যদিও বা তিনি যেতে চাইনি, তাও আবার সাম্যের ফ্রেন্ড। সাম্য এমনিতেই নিজের মধ্যে নেই, একপ্রকার ধমক দিয়েই তাকে পাঠিয়েছে।

পিয়ালের মা এর ঘুম ভাঙতেই তিনি দেখলেন, সাম্য এখনও জেগে রয়েছে। পুরো হল জুড়ে পাইচারি করছে, মাঝে মাঝে পিয়ালের কেবিনের দরজায় কাঁচের ফাঁক দিয়ে মাঝে মাঝে পিয়ালকে দেখছে। সাম্য কে দেখেই তিনি বুঝেছে সারা রাত ছেলেটা চোখের পাতাও বন্ধ করেনি। কাল সারারাত ভিজে জামাকাপড়ে ছিল সাম্য। জোর করে অভি হাতে খালি ড্রেসিং করতে পেরেছিল। তিনি যত দেখছেন তাতো অবাক হচ্ছেন। যে ছেলে তার মেয়ের জন্যে এতো কিছু করে, সে কি তাকে না ভালোবেসে থাকতে পারে। সাম্য যে পিয়ালকে কতোটা ভালোবাসে এটাই তার প্রমাণ। কিন্তু তারা হাতের সামনে এতো ভালো ছেলে ছেড়ে দিয়ে, একটা বলদ এর সঙ্গে পিয়ালের বিয়ে ঠিক করতে উদ্যত হয়েছিল।

-” সাম্য!”

কারোর ডাকে সাম্য চমকে পিছনে তাকালো। তখন ও পিয়ালকে দেখছিল।

-” কিছু বলবেন?”

পিয়ালের মা সাম্যের কাছে এগিয়ে গিয়ে ইশারায় পাশের চেয়ারে বসতে বললো।

-” এখানে চুপ করে বসো, একটু রেস্ট নাও। আমি তোমার জন্যে কফি আনছি।”

-” না না আমার কিছু লাগবে না।”

-” মার খাবে কিন্তু, কাল রাত থেকে তুমি এইভাবে আছো। এক ফোঁটা জল পর্যন্ত খাওনি। শরীর খারাপ করবে আমি আসছি। অভি তো এখন উঠবে বলে মনে হচ্ছে না। ”

সাম্য অবাক চোখে পিয়ালের মায়ের যাবার দিকে তাকিয়ে রইল। ঠিক শুনলো তো!

সাম্য দেওয়ালে মাথা দিয়ে চুপ করে বসে রইল। যত সময় যাচ্ছে তত ভয় বাড়ছে ওর। এখনও যে কেনো জ্ঞান ফিরছে না, কে জানে!

সাম্যের ভাবনার মাঝেই কেউ ওর কপালের চুলগুলো হাত দিয়ে সরিয়ে দিল। সামনে তাকাতেই সাম্যের রাগ উঠে গেল। কারণ ওর সামনে মৈত্রী দাঁড়িয়ে রয়েছে। এখনও সে বিয়ের পোশাকেই রয়েছে। সাম্য ঝটকা মেরে মৈত্রীর হাতটা সরিয়ে দিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,

-” তুমি এখানে কেনো এসেছো? যাও এখান থেকে।”

-” না যাবো না, আমি তোমার সঙ্গেই থাকবো।”

-” মাথায় রাগ উঠে গেলে কিন্ত তোমাকে আমি ছাড়বো না। শুধু মাত্র তোমার জন্য পিয়ালের এই অবস্থা। আমার চোখের সামনে একদম আসবে না।”

হঠাৎই ভিতর থেকে হন্তদন্ত হয়ে নার্স বেরিয়ে এলো,

-” কী হয়েছে সিস্টার?”

-” পেশেন্টের জ্ঞান ফিরেছে। এখানে সাম্য নামে কেউ আছেন? পেশেন্ট তাকে খুঁজছে। ”

পিয়ালের জ্ঞান ফিরেছে শুনে সাম্যের মুখে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠলো। অস্থির হয়ে গেল পিয়ালকে দেখতে।

-” আমিই সাম্য।”

কথাটা বলেই আর দাঁড়ালো না, এক ছুটে কেবিনের ভিতরে ঢুকে গেল।

¶¶¶¶¶¶

প্রচণ্ড ব্যথায় পিয়াল চোখ বন্ধ করে শুয়ে রয়েছে। মাথায় ব্যান্ডেজ, ডান হাতের কব্জির কাছে ব্যান্ডেজ করা, পায়েও ব্যান্ডেজ। ভাগ্য ভালো হাড় ভেঙে যায়নি। তবে বাম পায়ে মোচ লেগেছে। হঠাৎই দরজা খোলার শব্দে পিয়াল আবছা চোখে সামনে তাকালো। দরজা দিয়ে সাম্য কে আসতে দেখে প্রচণ্ড মাথা ব্যথার মাঝেও হেসে উঠলো। ও তো ভাবেই নি চোখ খুলে ওর সাম্যকে
আবারও দেখবে। সত্যিই কি ওটা সাম্য, নাকি অন্য কেউ!

সাম্য যখন এক পা এক পা পিয়ালের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল, তখনই পিছন থেকে মৈত্রী এসে সাম্যের হাত ধরে বললো, ” কেমন আছো পিয়াল?”

পিয়াল চমকে উঠলো যেনো, সামনে দাঁড়িয়ে থাকা বিয়ের কনে কে? মৈত্রী না! হ্যাঁ ওটা মৈত্রী। কিন্তু ও এখানে! আস্তে আস্তে পুরোটাই মাথার মধ্যে খেলে গেল। ওদের যে বিয়ে হয়ে গেছে। সিঁথি ভর্তি সিঁদুর নিয়ে মৈত্রী দাঁড়িয়ে রয়েছে, সাম্যের হাত ধরে। ওর ভালোবাসার মানুষটা আর ওর নেই, ওরা একে, অপরের কেউ না। আস্তে আস্তে মাথার মধ্যে যেনো শিরাগুলো তালগোল পাকিয়ে চলেছে। চোখ দিয়ে টপটপ করে জল গড়িয়ে পড়ছে। এতো কষ্ট, যন্ত্রণা কিসের? কেনো এতো কষ্ট হচ্ছে? আস্তে আস্তে নিশ্বাস যেনো বন্ধ হয়ে আসতে চাইছে তার। হঠাৎই পিয়ালের শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ে গেল। বারবার মাথায় ঘুরছে ওদের বিয়ের দিনটাও ও মাটি করে দিল।

পিয়ালের এই অবস্থা দেখে সাম্য ভয় পেয়ে গেল। এক ছুটে পিয়ালের কাছে চলে গেল।

-” কী হয়েছে পিয়াল? বলো না, কষ্ট হচ্ছে? আমি ডক্টর কে ডাকছি।”

সাম্য ছুটে বাইরে বেরিয়ে ডক্টর বলে চিৎকার করতে লাগলো।

অপরদিকে মৈত্রী একবার পিয়ালকে দেখে বিড়বিড় করে বলে উঠলো, ” নাটক যতসব।”

সাম্যের ডাকে ডক্টর এসে পিয়ালকে দেখতে লাগলো।

¶¶¶¶

-” মৈত্রী তুমি কি ভুলে গেছো, তুমি আমার স্ত্রী।”

-” আমি তোমাকে কতবার বলবো, আমি এই বিয়ে মানিনা।”

-” মানিনা বললে চলবে না, বিয়ে যখন হয়েছে, তোমাকে আমার কথা শুনতেই হবে, চলো।”

একপ্রকার জোর করেই শায়ন মৈত্রী কে হসপিটাল থেকে নিয়ে গেলো।

শায়ন মৈত্রীর বয়ফ্রেন্ড ছিল। মৈত্রী যখন দেখলো শায়নের চেয়ে সাম্য অনেক ড্যাশিং একটা ছেলে, তার উপর বেশ বড়োলোক ও বলা চলে। সাম্য নিজে একটা জব করছে, তখন ও শায়নকে ছেড়ে দেয়। কিন্তু সাম্যের বোন আর বন্ধুরা মিলে কাল শায়নকে মৈত্রীর বাড়িতে নিয়ে যায়। মৈত্রীর বাবাও সম্মানহানির ভয়ে মৈত্রীর সঙ্গে শায়নের বিয়ে দিয়ে দেয়। কিন্তু আজ সকালে মৈত্রী কাউকে কিছু না বলেই হসপিটালে চলে আসে।

-” ডক্টর, পিয়াল !”

-” উনি এখন ঠিক আছে। তবে দেখবেন কোনো মতেই পেশেন্ট যেনো প্যানিক না হয়ে পড়ে। কয়েকদিন একটু সাবধানে থাকতে হবে। ”

( চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here