কাঞ্চাসোনা ২ পর্ব -০৫

#কাঞ্চাসোনা_২
#পর্ব_০৫
#জাকিয়া_সুলতানা_ঝুমুর

আজকের দিনটা সকালের কাছে স্বপ্নের মতো ছিলো।ধ্রুবর কাছে ছিলো বলেই কিনা বুকে হাজারো প্রজাপতির উড়াউড়ির মেলা টের পেয়েছে।রাতে ঘুমাতে গিয়েও শান্তি নেই তার ছোট মনে বিকট পরিবর্তন ঘটেছে।দুষ্টু মন সারাক্ষণ ধ্রুব ধ্রুব জপে হয়রান।মিতু সকালের এই ছটফটানি লক্ষ করে বললো,
“কি হয়েছে সকাল?কোনো সমস্যা?”

সকাল মুচকি হেসে মুখটা কম্বলের নিচে লুকিয়ে ফেলে।মিতু ভ্রু কুচকে কিছু ভাবে তারপর হাত দিয়ে সকালের কম্বল টেনে ধরে বললো,
“ওহহো বালিকা!আমি যা ভাবছি তাই নাকি?”

সকাল কি বলবে বুঝতে পারছেনা।
“কি ভাবছো?”

“সত্যি বলবে তো?”

সকালের মনে হলো মিতু তার অনুভূতির কথা বুঝে গিয়েছে তাকে মিথ্যা বললেও সমস্যা।
“হ্যাঁ!তুমি কি ভাবছো?”

“ধ্রবতে পিছলে গিয়েছো সোনা?”

মিতুর কথায় সকাল লজ্জা পায় কিছু বলে না।সকালের মুখের লাজুক হাসি দেখে মিতু হাততালি দেয়।
“তা মিষ্টার ধ্রুব জানে তার প্রেমে যে একজন ডুবে ডুবে ম/রছে?”

সকাল উঠে বসে বললো,
“ছি ছি কি বলো এসব?এসব প্রেম ট্রেম কিচ্ছুনা।এমনি।”

“তাহলে কি?”

“আরে এমনি।”

মিতু সন্দিহান চোখে সকালকে পরখ করে।যেন সকালের পেট থেকে কথা বের করার প্রতিক্ষা করেছে।
“ভালো লাগে?”

“জানিনা।মনের ব্যাপারে আমি খুবই আনাড়ি তাই মনের গতিবিধি লক্ষ করতে পারছিনা।”

“জানলে আমাকে জানিও,একমাত্র ননদিনী বলে কথা বাসরের এরেঞ্জমেন্ট কিন্তু আমিই করবো।”

সকাল হতভম্ব হয়ে মিতুর দিকে তাকিয়ে থাকে।বলে কি এই মেয়ে?প্রেমই হলো না আর এই মেয়ে বাসরে চলে গেছে!সকাল যেনো লজ্জাই পায় বসা থেকে আবার শুয়ে মাথা অবদি কম্বল দিয়ে ঢেকে দেয়।এই মেয়ে তো তার ভাইয়ের মতোই খালি লজ্জা দেয়।ছোট সকাল লজ্জায় লাল হয়ে যায়।

শাহীন রা/গে হাত কচলাতে থাকে।তাকে না করে ধ্রুবর সাথে ঠিক ঘুরতে চলে গেলো।আজকে বাস স্টেশনে দুজনকে হাত ধরাধরি অবস্থায় দেখেই মাথা খারাপ হয়ে গেছে।সকালকে দেখে শাহীন সামনে এসে দাঁড়ায়।সকাল ভ/য় পেয়ে যায় চোখ বড়ো বড়ো করে শাহীনের হাবভাব বুঝার চেষ্টা করে শাহীনের রা/গী চেহারা দেখে ঘাবড়ে যায়।শাহীন দাতে দাত চেপে বললো,
“আমার সাথে গেলে না ধ্রুবর সাথে তো ঠিকি গেলে।কি সমস্যা?”

শাহীন হঠাৎ সামনে এসে দাঁড়াতে সকাল খুব অসস্থি অনুভব করে।সে কেনো এসব জিজ্ঞেস করছে?সকাল কি বলবে এখন?সকাল কোনো রকমে বললো,
“মিতু আপুর সাথে গিয়েছি।ধ্রুব ভাইয়ের সাথে না।”

শাহীন বললো,
“আমি দেখেছি।আর হাত ধরেছিলে কেনো?”

সকাল ঘাবড়ে যায়।
“রাস্তা পারাপার হতে।”

শাহীন সকালের ঘাবড়ানো চেহারা লক্ষ করে বললো,
“ওর থেকে দূরে থাকবে।ঠিক আছে?”

সকাল অবাক হয়ে শাহীনের দিকে তাকিয়ে থাকে।এতো অধিকার নিয়ে কথা বলার সাহস কি করে হয়?সকাল কিছু না বলে দ্রুত পা ফেলে সেখান থেকে চলে যায়।
সকালের চলে যাওয়াতে শাহীন আরো অস্থির হয়ে উঠে।যেকোনো মূল্যেই হোক এই ধ্রুবর থেকে সকালকে দূরে রাখতে হবে।কিন্তু সকাল যে ধ্রুবর খালাতো বোন তারই তো অধিকার বেশি এই অধিকারের তেজ দেখিয়ে যদি সকালকে নিজের করে নেয়?না এটা করতে দেয়া যাবেনা ধ্রুব কিছু করার আগে তাকেই কিছু করতে হবে।
তাছলিমা ছেলের অস্থিরতা টের পায়।কাছে গিয়ে বলে,
“কি হয়েছে আব্বা?”

শাহীন মায়ের দিকে তাকায় সে সকালকে পছন্দ করে ফেলেছে এটা তার মাকে বলা ঠিক হবে কিনা ভাবছে।
“আম্মা।”

তাছলিমা পূর্ণ মনোযোগে ছেলের দিকে তাকায়।শাহীন বলে,
“সকালকে আমার ভালো লাগে।”

তাছলিমা ভ্রু কুচকে তাকায়।এতো ছোট একটা মেয়েকে ভালো লাগে?তার ছেলে আরো ভালো মেয়ে পাবে এতো নিতান্তই বাচ্চা।দেখতে সুন্দরী ঠিক আছে কিন্তু এতো ছোট মেয়েকে বিয়ে করানোর কোনো ইচ্ছা তাছলিমার নেই।ছেলেকে সরাসরি না করলেন না।মুচকি হেসে বললো,
“সকাল ছোট না?”

শাহীন বুঝানোর চেষ্টা করে বললো,
“বয়সে কি আসে যায় আম্মা।আমার পছন্দ কি আসল কথা না?”

তাছলিমার মুখ অন্ধকার হয়ে আসে।কতো আশা ছিলো কোনো বড়োলোক বাপের মেয়ে বিয়ে করিয়ে ফ্লাট গাড়ির মালিক হবেন কিন্তু এই ছেলে কিনা নিজের পছন্দের কথা বলছে।সকালকে সাইজ করার জন্য তাছলিমা একাই যথেষ্ট।শাহীনকে আসস্থ করে বললো,
“হ্যাঁ।আমি তোমার দাদীর সাথে কথা বলে জানাবো।উনি যা বলবে তাই হবে।”

শাহীন খুশী হয় সে জানে নুরজাহান বেগম তার সব আবদার পূরণ করে।সকালের কথা শুনলেও নিশ্চয়ই না করবেন না।

তিনদিন পরের কথা কনকনে শীতে ধ্রুব ছাদে বসে আছে।রাত আনুমানিক সাড়ে এগারোটা।এতো রাতে ছাদে আসার কোনো ইচ্ছাই ছিলো না কিন্তু মিতুর আবদার সে চন্দ্রগ্রহণ দেখবে।ধ্রুবর কথা হলো “চাঁদ তো আমি না তাহলে তুই চন্দ্রগ্রহণ দেখলে আমাকে টানিস কেনো?”

মিতু বললো,
“একা যেতে ভ/য় লাগে তাইতো তোমাকে বলছি।”

“সকালকে নিয়ে যা।”

মিতু বললো,
“ও আরো ভিতু।বলে কিনা তার লম্বা বেনুনীতে ভুতে ধরবে।”

ধ্রুব হেসে উঠে বললো,
“কি চিন্তা!”

“চল না ভাইয়া।”

“যাবো এক শর্তে।”

“কি?”

ধ্রুব হাত দিয়ে ঘাড় ধরে বললো,
“বেনীকন্যাকে নিয়ে যেতে হবে পারবি?”

মিতু হেসে বললো,
“পারবো।”

“তাহলে নিয়ে আয় আমি ছাদে যাচ্ছি।”

ধ্রুব ছাদে চলে গেলে মিতু সকালকে নিয়ে ছাদে যায়।সকাল প্রথমে না করলেও ধ্রুব গিয়েছে শুনে বিড়ালের মতো মেউ মেউ করতে করতে চলে এসেছে।ধ্রুব ছাদের কিনারে দাঁড়িয়ে আছে।মিতু আর সকাল যাওয়ার পরে ধ্রুব নড়েচড়ে দাঁড়ায় চোখের দৃষ্টি সকালের উপরে স্থির।মিতু চঞ্চল পায়ে ধ্রুবর কাছে গিয়ে দাঁড়ায়।ধ্রুব মিতুর দিকে তাকিয়ে বললো,
“এখনো চন্দ্রগ্রহণ শুরু হয়নি?”

“না।”

“তাহলে ঝটফট চা বানিয়ে নিয়ে আয়।যা ঠান্ডা লাগছে।”

মিতু তো আর অবুজ না।তার ভাই যে সকালকে একান্ত পেতে চাইছে এটা বুঝেই মুচকি হাসে।মিতুর সাথে সকালও যেতে চাইলে মিতু না করে বলে চা বানাতে মাত্র দুই মিনিট লাগবে।সকাল মাথা নেড়ে ধ্রুবর দিকে তাকায়।ধ্রুব তার দিকেই তাকিয়ে আছে।সকাল মুচকি হাসে কিছু না বলে ছাদের কিনার ঘেষে দাঁড়ায়।ধ্রুব কাছে আসে,পাশে দাঁড়িয়ে বললো,
“আমার সাথে রাগ করেছো?”

সকালের বুকটা কাঁপে।ধ্রুব কাছে আসলেই নিজের মাঝে অস্বাভাবিক কাঁপন টের পায়।ধ্রুবর দিকে তাকাতেও কেমন লাগে।আচ্ছা এটা কি কোনো অসুখ?সকাল কি এই অসুখে ঘোরতর আ/ক্রান্ত হয়ে যাচ্ছে?মাথা নেড়ে বললো,
“রা/গ করবো কেনো?”

ধ্রুব সকালের লাজুক মুখের দিকে তাকিয়ে হাসে।
“তাহলে সামনে আসোনা কেনো?”

“আসি আপনি দেখেন না।”

ধ্রুব আরো কাছে এসে দাঁড়ায়।
“দেখা দাও না দেখবো কি করে।”

সকাল ধ্রুবর চোখের দিকে তাকিয়ে বললো,
“আমাকে দেখতে হবে কেনো?”

ধ্রুব নজর সরায় না।একনজরে সকালের চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে।এই মেয়টা নিশ্চয়ই যা/দু জানে এই যে কয়দিনে তার মাঝে নিজের যায়গা খুঁজে নিচ্ছে।আচ্ছা সকাল কি তাকে চোখের মায়ায় ডুবাতে চায়?যদি চায় ধ্রুব ডুবতে রাজি।সকালের কথার কি উত্তর দিবে ভাবে,
“পিচ্ছি বলেই দেখতে হবে।”

সকাল গাল ফুলিয়ে বললো,
“আমি পিচ্ছি না।”

“তাহলে কি বড়ো?”

“অবশ্যই।”

ধ্রুব সকালের লম্বা বেনুনী তার হাতে পেচিয়ে বললো,
“কতো বড়ো?”

বিনুনীর সাথে সাথে সকাল ধ্রুবর কাছাকাছি যায়।আস্তে করে বললো,
“যথেষ্ট বড়ো।”

“বিয়ে করার মতো বড়ো?”

সকাল ধ্রুবর চোখে চোখ রাখে।ধ্রুবর গভীর চোখ অজানা ইশারা দিচ্ছে।সকালের গা শিরশির করে উঠে।আস্তে করে বললো,
“কেনো বিয়ে করার মতো বড়ো হলে কি বিয়ে করবেন নাকি?”

ধ্রুব মুচকি হাসে।পালটা সকালকে প্রশ্ন করে।
“তুমি করবে?”

“কি?”

“বিয়ে?”

“কাকে?”

“যাকেই হোক।”

সকাল এই উত্তরে সন্তুষ্ট হয় না।সে ধ্রুবর থেকে অন্য উত্তর আশা করেছিলো।মন খারাপ করে বললো,
“না।”

ধ্রুব সকালের মন খারাপ বুঝতে পারে।মাথা নিচু করে বললো,
“তুমি তো বাচ্চা বিয়ে টিয়ের চিন্তা বাদ দাও।বাচ্চারা এসব ভাবে না।”

সকাল ধ্রুবর দুষ্টমি বুঝতে পেরে বললো,
“আপনি খুব খারাপ?”

ধ্রুব সকালের মুখের দিকে তাকায়।মেয়েটাকে তার এতো আদুরে লাগে।বিড়ালের মতো ঝুলুঝুলু চোখে কেমন তাকিয়ে থাকে।দেখলেই বুকটা কাঁপে।ধ্রুব বললো,
“তুমি খুব বাচ্চা।দেখলে আদর করতে ইচ্ছা করে।”

সকাল লাজুক হাসে।বাচ্চা হয়ে যদি আদর পাওয়া যায় তাহলেই বাচ্চা থাকাই ভালো।
ধ্রুব সকালের বেনুনিতে হালকা টান মেরে বললো,
“সকাল চলো একটা গেম খেলি।”

“কি গেম?”

“দুজন দুজনের চোখের দিকে তাকিয়ে থাকবো যে আগে পলক ফেলবে সে হারবে।যে জিতে যাবে সে যা বলবে তাই করতে হবে।”

ধ্রুবর সঙ্গ সকালের ভালো লাগে।ইচ্ছা করে সারাদিনই ধ্রুবর সামনে ঘুরতে।সে ধ্রুবর কথায় রাজি হয়।তারপর দুজন দুজনের চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে।ধ্রুব গভীর চোখে সকালকে দেখছে আর সকাল সিগ্ধ চোখে ধ্রুবকে দেখছে।সকালের মনে হচ্ছে ধ্রুব তার চোখ দিয়ে কথা বলছে।তাকে কোথাও হারিয়ে যেতে উৎসাহ দিচ্ছে সকাল আর তাকিয়ে থাকতে পারে না এই চোখে বেশীক্ষণ তাকানো যায় না।গভীর চোখের দৃষ্টি বুকে লাগে।সকালই আগে পলক ফেলে।ধ্রুব হেসে বললো,
“হেরে গেলেন ম্যাডাম।”

সকাল আস্তে করে বললো,
“হ্যাঁ।”

“এখন আমি যা বলবো তাই হবে।”

“আচ্ছা।”

ধ্রুব সকালের গুলুমুলু গাল টেনে দিলো।মুখে বললো,
“বাচ্চা পাখি।”

ধ্রুব আর সকাল তখনো কাছাকাছি দাঁড়িয়ে আছে।তখনি বজ্রকন্ঠে এক পুরুষ বলে উঠলো,
“এতো রাতে তোরা দুজন ছাদে কি করিস?”

চলবে….
সবার রেসপন্স এতো কম!!যাইহোক আলহামদুলিল্লাহ।আপনারা সকালকে কার সাথে চান শাহীন নাকি ধ্রুব।শাহীনও কিন্তু ভালো ছেলে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here