কাঞ্জি পর্ব -২৬

#কাঞ্জি
#পর্ব-২৬
#সাদিয়া_খান(সুবাসিনী)

আবৃতিকে দেখে শাহরিয়ারের চোখে যে হাসি ফুটে উঠেছিল সেই হাসিটা আর কেউ দেখতে না পেলেও তার দাদী ঠিক দেখতে পেয়েছিল।নাতীকে আর লজ্জায় না ফেলে সে বাকিদের তাগিদে দিয়ে বলল,

“এই তোরা এবার চল দেখি।আজ পুরোদিন যে ধকল গেল সবার উপর দিয়ে।ঘুমাবি চল।”

কিন্তু রিমঝিম কিছুটা গো ধরে বলল,

“কেন? আজ আমরা সবাই গল্প করেও তো কাটাতে পারি?”

“না পারিস না।দেখছিস আবৃতিকে? ও দাঁড়িয়েই ঘুমিয়ে যাচ্ছে।”

সিজাদের কথায় সবাই পিছন ফিরে তাকালো। আবৃতি মোটেও ঘুমিয়ে পড়েনি। কেবল তার দুই চোখ ফুলে গেছে অতিরিক্ত ঘুমানোর কারণে। তাকে রুমের ভিতরে প্রবেশ করিয়ে দিয়ে তারা চলে গেল।

আবৃতি এই রুমে ছোটো বেলা থেকে অসংখ্যবার এসেছে এমন নয়।কালেভদ্রে আসা হতো এখানে৷ খুব প্রয়োজন না পড়লে শাহরিয়ারের রুমে অন্য কোনো মেয়ের উপস্থিতি বরাবর অপছন্দ ছিল তার মায়ের। এদিকে শাহরিয়ার পিছন থেকে আবৃতিকে দেখছে। আজ থেকে সত্যি তারা এক সাথে থাকবে? ক্লাস শেষে ক্লান্ত শরীরে ঘরে ফিরে এই মুখখানা দেখবে। ওয়ারড্রবে তার কাপড়ের পাশে এই মেয়েটার কাপড় থাকবে, ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে চুল আঁচড়াবে।এসব কত কিছু মনে হলো সে সবের কোনো হিসেব নেই তার কাছে। কিন্তু হুট করেই মনে পড়লো তার ঘরে তো ড্রেসিং টেবিল নেই।বড় একটা আয়না লাগানো।আবৃতি তার প্রসাধনী রাখবে কই?তার কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ল। পিছন ফিরে শাহরিয়ারকে ওভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আবৃতি জিজ্ঞেস করলো,

“আপনি কি আমি আসার কারণে বিরক্ত হচ্ছেন?”

“হুট করে এমন কেন মনে হলো?”

“এভাবে দাঁড়িয়ে আছেন যে?”

“ভাবছি।”

“কি?”

“তুমি সত্যি আমার হয়ে গেলে পাখি।এই খাঁচায় তোমাকে সারা জীবন বন্দী থাকতে হবে।”

“এক্ষুণি বেরিয়ে যাবো।”

” পা ভেঙ্গে ফেলবো।”

“পুলিশে জানাবো।”

” জানাও। ফোন দিবো?তোমার ফোন তো নিয়ে আসোনি।”

“আপনি কি আমাকে একটুও ভয় পাচ্ছেন না?”

“আশ্চর্য আবৃতি! আমি তোমাকে ভয় কেন পাবো?”

“যদি সত্যি পুলিশে নালিশ করি?নারী নির্যাতনের মামলা হয়ে যাবে কিন্তু।”

“তারপর লোকে তোমাকে দেখে বলবে৷ দেখ এই মেয়ের স্বামী জেল ফেরত আসামী।তোমার শুনতে ভালো লাগবে?”

রুমের দরজা লক করে শাহরিয়ার জানালার পর্দা টেনে দিয়ে বলল,

“বাকী ঝগড়া আগামীকাল করবো কেমন?আজ আমার ভীষণ ঘুম পাচ্ছে।”

আবৃতির জবাবের অপেক্ষা না করে সে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ে। কিছু সময় পর তার পাশে আবৃতি ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলো।আজ আর তার ঘুম হবে না।সন্ধ্যে থেকে ইচ্ছে মতোন ঘুমিয়ে চোখ ফুলিয়ে ফেলেছে সে। তার চেয়ে বরঙ শুয়ে শুয়ে চিন্তা করা যাক।কি করে সে শাহরিয়ারের মায়ের সাথে সম্পর্ক ভালো করা যায় কিংবা পরীক্ষার পর কি করা যায়।এসব নানান প্রকার চিন্তা করার সময়েও তার ঘুম আসছিল না। বিছানায় কেবল এপাশ ওপাশ করছিল। অপর পাশে শাহরিয়ার দিব্যি ঘুম। এবার আবৃতি সোজা হয়ে শুয়ে কপালে হাত রাখতেই অনুভব করলো শাহরিয়ার মাথা রেখেছে তার কাধে, হাত দিয়ে তাকে প্যাঁচিয়ে ধরলো। আবৃতি বুঝতে পারলো সে ঘুমায়নি।তার চুলে হাত বুলিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করলো,

“মন খারাপ আপনার?”

“ভয় হচ্ছে।মাকে নিয়ে। তুমি মানিয়ে নিতে পারবে তো?”

“এমনো তো হতে পারতো আপনি আমাকে ছেড়ে মায়ের কথা মতো সব করতে পারতেন।”

“তোমাকে ছাড়া দম বন্ধ হয়ে মরে যেতাম আমি।এই যে এখন, এই সময়টা তুমি আমার কাছে আছো,সেটা অন্য কারোর সাথে থাকতে এটা কল্পনা করাও যে ভীষণ যন্ত্রণার।”

“এতো ভয় কেন আপনার?আমি কোথাও যাচ্ছি না।”

সেই সময় অনেক কথা হলো দুজনের। অনেক না বলা কথাগুলো শাহরিয়ার দিব্যি বলে দিলো আবৃতির লাব ডাব শব্দ শুনতে শুনতে। অপর দিকে আবৃতি ভেবেছিল আজ বুঝি তার ঘুম আসবে না।অথচ সবচেয়ে শান্তির ঘুম নেমে এলো তার দুই চোখে। সকাল বেলা আবৃতির ঘুম ভেঙেছে সবার আগে৷ সে হাত দিয়ে শাহরিয়ার কে সরিয়ে নিচে নামবে এমন সময় পিছন থেকে শাহরিয়ার বলল,

“শোনো, তুমি একটু স্বাভাবিক হবে?”

“অস্বাভাবিক কি হলো?”

“ভয়ে আছো। মা তেমন কিছুই করবে না।”

“আমি ভয় পাচ্ছি না। কিন্তু মানিয়ে নিতে হবে।”

“ঘুম থেকে আগে উঠেছো তো আশা করতে পারি এক কাপ চা?”

আবৃতি স্মিত হাসে। সে বেশ বুঝতে পারে শাহরিয়ার নিজেও চিন্তায় পড়েছে।সকালের চা বানিয়ে নাস্তার জন্য হাত বাড়ায় আবৃতি। কি বানাবে চিন্তা করছিল এমন সময় শাহরিয়ারের বাবার রান্নাঘরে উঁকি দিয়ে বলল,

“কি করছিস?”

“চা বানাচ্ছি।”

“এর মানে প্রতিদিন সকালে চা পাবো।”

“হ্যাঁ, আপত্তি নেই।”

“বুঝিস কিন্তু? তোর চাচী সকালের নাস্তা খুব কম বানায়। আমরা বাইরেই বেশি খাই। নিশ্চয়তা দিচ্ছিস আজ থেকে সকালে নিজের চা আর নিজের বানাতে হবে না?”

আবৃতি কিছুটা অবাক হলো। চাচার কথায় বুঝতে পারছে সকাল বেলার চা কখনো তার স্ত্রী বানিয়ে দেয় না।সে একটা কাপে চা ঢেলে তার হাতে দিয়ে বলল,

“নাস্তায় কি খাবেন বাবা? পরোটা আলুভাজি?না কি অন্য কিছু?”

“ফ্রিজে দুধ থাকলে একটু সেমাই রেঁধে ফেল তো মা।সাথে গরম পরোটা।”

সম্মতি জানিয়ে আবৃতি কাজ শুরু করলো।প্রায় পৌনে এক ঘন্টা পর সব খাবার এনে নাস্তার টেবিলে রাখতেই শাহরিয়ারের বাবা এবং শাহরিয়ার এলো।খাবার মুখে তুলে তৃপ্তিতে চোখ বন্ধ করে বলল,

“ভাগ্যিস তুই ব্যাটা আমার শ্বশুর বাড়ি পা পিছলে পড়িস নি।না হলে এই খাবার আমাদের কপালে জুটতো না।”

শাহরিয়ার বলল,

“তাহলে বলো জিতেছি আমি?তোমার থেকে অন্তত জিতেছি।”

“দেখতে হবে তো, মেয়ে কোন বাড়ির।”

স্বস্তির শ্বাস ফেলল শাহরিয়ার। অন্তত বাবার একটা টান তৈরী হয়ে যাবে। একটা সময় মা নিজেও ঠিক মেনে নিবে এমন আশা করলো সে। অথচ তারা জানতেই পারলো না নিজের জেদ বজায় রাখার জন্য শাহরিয়ারের মা আত্মঘাতী হওয়ার হতেও দুই বার চিন্তা করেনি।

চলবে(এডিট ছাড়া। যারা গল্প পড়েন তারা রেসপন্স করবেন। সবাই যেন জানতে পারে গল্পটা দিচ্ছি।)

#

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here