কাশফুলের ভালোবাসা পর্ব -১৪+১৫+১৬

#কাশফুলের_ভালোবাসা
#পর্বঃ১৪
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি

” শেষ হলো তাহলে তোদের প্রেম।”

” আরে তুই,আমি তো আরো ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।তুই কোথায় চলে গিয়েছিলি?যদি কেউ দেখে ফেলতো তো?”

” তো কি করবো?দেড় ঘন্টা ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে বিরক্ত হয়ে গিয়েছিলাম।আর তার উপর বারবার কেউ না কেউ আসছিল।তোদের জন্য তো দুবার মিথ্যা কথা বলতে হচ্ছে।”

” কে এসেছিল?”

” তোর গুণধর দুই ভাই।”

” কি বলিস?ভাইয়ারা কি জানতে পেরে গিয়েছিল যে আমি আর ইভান ছাদে আছি?”

” আরে না আমি ম্যানেজ করে নিয়েছি।”

” থ্যাঙ্ক ইউ রে বান্ধবী।তুই কতো ভালো।”

” হয়েছে হয়েছে আর এতো থ্যাঙ্ক ইউ বলতে হবেনা।”

” বান্ধবী তুই তো সিঙ্গেল না?”

” হুম তো?”

” একটা প্রেম কর না।আর কতকাল সিঙ্গেল থাকবি?”

‘প্রেম’ শব্দটা শুনে মেহেকের মন খারাপ হয়ে যায়।

” আচ্ছা আমার কিছু কাজ আছে।আমি যায় হ্যাঁ।”

রিফাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায় মেহেক।

এদিকে,

ল্যাপটপে ভার্সিটির প্রজেক্ট তৈরি করছে স্পর্শ।হঠাৎ তার ফোন বেজে উঠে।ল্যাপটপটা সাইডে রেখে ফোন হাতে নেয় স্পর্শ।স্ক্রিনে ভেজে ওটা নামটা দেখে মুচকি হাসে স্পর্শ।

” এতোদিনে মনে পড়লো আমার কথা।” কিছুটা অভিমান নিয়ে বললো স্পর্শ।

“………” অপরপাশে কি বললো তা শোনা গেলোনা।

” হুম দেখছি কেমন মনে পড়েছে।১ সপ্তাহ পর ফোন দিয়েছো।”

“………”

” তুমি বলেছিলে তুমি ফ্রী হলে দেবে।তাই দিয়নি।”

“…….”

” আচ্ছা ঠিক আছে।এবার বলো কেমন আছো?”

“…….. ”

” আমিও ভালো আছি।তবে তোমাকে ছাড়া ভালো লাগছেনা।কবে আসবে তুমি?”

“……..”

” অপেক্ষায় রইলাম।”

“………”

” আচ্ছা সাবধানে থেকো।”

স্পর্শ ফোন কেটে দেয়।তারপর গ্যালারিতে গিয়ে কারো ছবি দেখতে থাকে।
___________________________________________

ক্লাসে বসে আছে মেহেক,রিফা আর অথৈ।এখন তাদের কোন ক্লাস নেই।

” এই রিফু,এই মেহু কিছু কর না।বোরিং লাগে তো।”

” কি করবো?সার্কাস করার ব্যবস্হা করবো?” বিরক্ত নিয়ে বলে রিফা।

” সত্যি নাকি দোস্ত।তাহলে ব্যবস্হা কর।খুব মজা হবে।”

” ধুর বেডি চুপ থাকতো।”

” আচ্ছা চল বাইরে যায়।” মেহেক বলে।

” হ্যাঁ হ্যাঁ চল ক্যান্টিনে যায়।প্রচুর খিদা লাগছে।”রিফা বলে।

” একটু কম খা নয়তো মুটকি হয়ে যাবি।” হাসতে হাসতে বলে অথৈ।

” চুপ থাক বেডি শয়তানি।শোন আজ আমার তরফ থেকে তোদের থ্রিট।”

” কিরে মেহু আজ কি সূর্য উল্টা দিকে উদয় হলো নাকি?”

” কেন কি হয়েছে?” মেহেক বলে।

” না মানে রিফা বলছে থ্রিট দিবে।লাইক সিরিয়াসলি।মেহু আমার মনে হচ্ছে নিশ্চয়ই ডাল মে কুচ কালা হে।”

” কেন আমি কি থ্রিট দিতে পারিনা নাকি?”

” না না সেটা কখন বললাম।আচ্ছা চল আজ তোরে আমি ফকিন্নি বানাই ছাড়বো।”

” দেখা যাবে।”

মেহেক,রিফা আর অথৈ ক্যান্টিনে আসে।রিফা এদিক ওদিক তাকিয়ে কাউকে খুঁজতে থাকে।

” কিরে কাকে খুঁজছিস?” অথৈ বলে।

” আরে দাঁড়া।”

কিছুক্ষণ খুঁজাখুঁজির পর রিফা তার কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তিতে পেয়ে যায়।

” এই তোরা দুজন আমার পেছন পেছন আয়।”

রিফা এগিয়ে গিয়ে কোণার টেবিলটার সামনে দাঁড়ায়।যেখানে বসে আছে স্পর্শ আর তার বন্ধুরা।

” দাভাই কোথায়?”

” সৌন্দর্য একটা কাজে বাইরে গিয়েছে।” লিজা বলে।

” আচ্ছা ভাইয়া আমাকে টাকা দাওতো।”

” টাকা কেন দেবো?টাকা দিয়ে কি করবি?” ভ্রু-কুচকে প্রশ্ন করে স্পর্শ।

” মেহু আর অথুরে ট্রিট দিবো।এখন তাড়াতাড়ি টাকা দাও।”

শান্ত এতক্ষণে খেয়াল করে যে অথৈও আছে এখানে।অথৈকে দেখে শান্তের মুখে হাসি ফুটে উঠে।সে একদৃষ্টিতে অথৈয়ের দিকে তাকিয়ে থাকে।এই দৃষ্টিতে না আছে কোন খারাপ কিছু আর না লালোসার ছোঁয়া,আছে শুধু মুগ্ধতা।

” তুই তোর বন্ধুদের ট্রিট দিবি তো আমি কেন টাকা দেবো?আমি পারবোনা টাকা দিতে।”

” তুমি দেবে নাতো?”

” না দেবোনা।”

” ঠিক আছে দিতে হবেনা।আমি বাসায় গিয়ে বাবাকে বলবো যে বাবা তোমার ছোট ছেলে না প্রেম করে।”

” ওই মিথ্যা কথা বলছিস কেন?”

” আমি আর তুমি জানি এটা মিথ্যা কথা কিন্তু বাবাতো আর জানে না।আর তুমি জানো বাবা আমার কথা কিন্তু বিশ্বাস করে।তো এবার ভেবে দেখো কি করবো।”

” আচ্ছা ঠিক আছে দিচ্ছি টাকা।এই নে।”

” ও ভাইয়া…..ইউ আর সো সুইট।”

” হ্যাঁ…. টাকা পেয়েছিস এখন তো সুইটই বলবি।”

এদিকে এতোক্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে রিফার কান্ড দেখছিল মেহেক আর অথৈ।

” দেখেছিস মেহু আমি বলেছিলাম না ডাল মে কুচ কালা হে।দেখেছিস,আমি জানতাম এই রিফু নিশ্চয়ই কোন গন্ডগোল করবে।কারণ ও যে কিপ্টা,ও নিজের টাকায় ট্রিট তো দূর একটা চকলেটও খাওয়াবেনা।”

” আ….এভাবে বলছিস কেন।বাদ দে।”

টাকা পেয়ে রিফা নাচতে নাচতে মেহেক আর অথৈ এর কাছে চলে আসে।

” চল এবার।”

” এই তোর ট্রিট না।” অথৈ বলে।

” কেন কি হলো?”

” আমি কই ভাবলাম আজ তুই তোর নিজের টাকা দিয়ে ট্রিট দিবি।কিন্তু আমার ভাবনার সেগুড়ে বালি তুই তো আমার জানের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ট্রিট দিচ্ছোস।”

” ওই বেশি জান জান করিস না।বেশি জান জান করলেনা তোর জানরে আমি বলে দেবো।আর ভাইয়ার টাকা মানে আমার টাকা।আমরা কি আলাদা নাকি?এবার বেশি বক বক না করে খেতে চল প্রচুর খিদা লেগেছে।”

মেহেক,রিফা আর অথৈ স্পর্শদের থেকে দূরে একটা টেবিলে বসে।এদিকে শান্ত এখনো অথৈ একদিকে তাকিয়ে আছে।আদিবের ধাক্কায় শান্তের ধ্যান ভাঙে।

” কি মামা কোথায় হারিয়ে গেলে?এতো মনোযোগ দিয়ে কি দেখো শুনি?”

” কিছুনা।”

” সত্যি কিছু না নাকি হুম…হুম….”

” আরে ধুর কিছুনা।”
__________________________________________

ভার্সিটির পড়া তৈরি করছে মেহেক।তখন কেউ তার দরজায় নক করে।মেহেক দরজা খুলে দেখে সৌন্দর্য এসেছে।

” আরে মিস্টার সৌন্দর্য।আপনি হঠাৎ?”

” কেন আসতে পারিনা নাকি?”

” না না তা কখন বললাম।এটা তো আপনাদেরই বাড়ি তো আসতেই পারেন।কিন্তু হঠাৎ এলেন তাই আরকি।”

” আমি ভেতরে আসতে পারি?”

” ভেতরে….আচ্ছা আসুন।” কিছুটা সংশয় নিয়ে বললো মেহেক।

ভিতরে এসে সৌন্দর্য একবার ঘরে চোখ বুলিয়ে নেয়।

” বসুন।”

” হুম।কি করছিলে?”

” ও কিছুনা পড়ছিলাম আরকি।আপনি কি জরুরি কিছু বলতে এসেছেন?”

” হুম।তো যেটা বলতে এসেছিলাম।তুমি টিউশন এর কথা বলেছিলেনা?”

” হুম।”

” আমি তোমার জন্য দুটো টিউশন ম্যানেজ করেছি।দুজনই মেয়ে আর ক্লাস ৯ এ পড়ে।তোমার কোন অসুবিধা হবে?”

” না না কোন অসুবিধা হবেনা।”

” তাহলে কাল থেকে পড়াশোনা শুরু করো।”

” আচ্ছা।ধন্যবাদ মিস্টার সৌন্দর্য,আমাকে সাহায্য করার জন্য।”

” এতো ধন্যবাদ দেওয়ার কিছু নেই।তোমাকে সাহায্য করতে পেরে আমার ভালোই লেগেছে।”

মেহেক কিছু না বলে একটা কৃতজ্ঞতার হাসি উপহার দেয়।

” আচ্ছা তুমি পড়ো আমি আসছি।”

মেহেকও মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দেয়।সৌন্দর্য চলে গেলে মেহেক আবারো পড়তে বসে।পড়া শেষ হলে মেহেক নিচে চলে আসে খাবার খেতে।

শোয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে মেহেক,তখন তার রুমে আসে তার বোন সৃষ্টি।

” আসতে পারি?”

” আরে আপুনি তুই।জিজ্ঞেস করার কি আসে।আয় আয় ভিতরে আয়।”

সৃষ্টি এসে বিছানায় বসে।

” কিরে এভাবে কি দেখছিস?” চুল বাঁধতে বাঁধতে বলে মেহেক।

” আমি এটা কি শুনছি মৃদু?”

” কি শুনছি আবার?”

” তুই নাকি টিউশনি করবি।”

” হুম করবো তো।কাল থেকে শুরু করবো।”

” কিন্তু কেন?আমি আছি তোর দুলাভাই আছে।যা দরকার তুই আমাদের বলবি,আমাদের থেকে নিবি।”

” নারে আপুনি,এটা হয়না।আর এটা আমার কাছে তো নতুন কিছু নয়।আমি তো চট্টগ্রামে থাকতে টিউশন করেই নিজের খরচ চালিয়েছি তাহলে এখন কেন নয়।তুই চিন্তা করিস না আমি নিজের খেয়াল রাখতে পারবো।”

” ঠিক আছে তুই যা ভালো মনে করিস।”

সৃষ্টিতে মন খারাপ করে চলে যায়।একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে মেহেকও শুয়ে পড়ে।
#কাশফুলের_ভালোবাসা
#পর্বঃ১৫
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি

” আমি তোমাকে ভালোবাসি না মেহেক।আমি রিয়াকে ভালোবাসি।আমি তো তোমাকে সহ্যই করতে পারিনা।”

” দেখেছিস মুগ্ধ তোকে না আমাকে ভালোবাসে।আরে তোর মতো কানিরে কেই বা ভালোবাসবে?তুই তোর মতো চারচোখ ওয়ালা কাউকে খুঁজে নে।মুগ্ধ বেবি চলো আমরা আমাদের সংসার সাজাই।”

” মুগ্ধ যেওনা প্লিজ,যেওনা।আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবোনা মুগ্ধ।প্লিজ একটাবার বলো এসব মিথ্যা।তুমি আমার কাছে ফিরে এসো মুগ্ধ।প্লিজ ফিরে এসো।”

মেহেক অঝোড়ে কাঁদছে।কিন্তু মুগ্ধ একবারের জন্যও ফিরে তাকাচ্ছেনা।সে রিয়ার সাথে পাড়ি দিচ্ছে নিজের সুখের সংসারে।

” মুগ্ধ ফিরে এসো,ফিরে এসো মুগ্ধ।মুগ্ধ……. ”

মেহেক ধরফরিয়ে ঘুম থেকে উঠে যায়,হাঁপাতে থাকে সে।ঘেমে পুরোই ভিজে গেছে মেহেক।মেহেক আশেপাশে তাকিয়ে দেখে সকাল হয়ে গিয়েছে।এটা যে একটা স্বপ্ন এটা জেনে মেহেক স্বস্তির নিশ্বাস নেয়।মেহেক তার সামনের চুলগুলো শক্ত ধরে পেছিয়ে ধরে।

” কেন আমি এই স্বপ্ন দেখলাম কেন?কেন আমি মুগ্ধ নাম প্রতারকরের কথা ভুলতে পারছিনা?কেন বারবার আমার তার কথা মনে পড়ছে?আমি তো ওর কথা ভুলার জন্যই ওই শহর ছেড়ে চলে এসেছিলাম তাহলে কেন ভুল পারছিনা?কেন প্রতিনিয়ত আমার ক্ষতটা তাজা হয়ে উঠছে।আমি ভুলতে চাই ওকে,ভুলতে চাই আমি।”

কথাগুলো বলতে বলতে কান্না করে দেয় মেহেক।হঠাৎ মেহেক নিজেই নিজেকে বলে,

” ভালো যখন বেসেছিস তার কষ্টটাও তোকেই পেতে হবে মেহেক।কেউ তোর কষ্টের ভাগিদার হবেনা।তোর ওই প্রতারকের কথা মনে পড়বে কিন্তু তোকে শক্ত থাকতে হবে,হাজার মনে পড়লেও তোকে শক্ত থাকতে হবে।”

চোখের পানি মুছে নিজেকে শক্ত করে নেয় মেহেক।

” হ্যাঁ আমাকে শক্ত হতে হবে,ভেঙে পড়লে চলবেনা।আমি আর দ্বিতীয় বার এই ভুল করবোনা।আর আমি কাউকে নিজেকে নিয়ে খেলতে দেবোনা।কাউকে না।”

মেহেক বিছানা থেকে নেমে ওয়াশরুমে চলে যায়।ফ্রেশ হয়ে এসে মেহেক আয়নার সামনে দাঁড়ায়।সে দেখে তার চোখ অনেকটা লাল হয়ে গিয়েছে আর কিছুটা ফুলে গিয়েছে।চোখে গাড়ো করে কাগল দিয়ে চশমাটা পড়ে নিচে চলে আসে মেহেক।

মেহেককে চুপচাপ দেখে তার বোন আন্দাজ করতে পারে তার কিছু নিয়ে মন খারাপ।তাই খাওয়া শেষ হলে সবার আড়ালে নিয়ে সে প্রশ্ন করে মেহেককে।

” কিরে কি হয়েছে তোর?”

” কি হবে?”

” এভাবে চুপচাপ কেন?মন খারাপ নাকি?”

” না মন কেন খারাপ হবে?আমি ঠিক আছি।তুই চিন্তা করিসনা।আমি যাই ভার্সিটিতে,দেরি হয়ে যাবে না হয়।”

মেহেক সৃষ্টিকে আর কোন কথা বলতে না দিয়ে ব্যাগ নিয়ে চলে আসে।

ভার্সিটিতে একটা বড় গাছের নিচে বসে আছে মেহেক,রিফা আর অথৈ।মেহেক আর রিফা তো কথা বলছে তবে মেহেক এখনো মন খারাপ করে বসে আসে।

” কিরে মেহু মন খারাপ নাকি?” রিফার মেহেককে হালকা ধাক্কা দিয়ে প্রশ্ন করে।

” কিরে মেহু,জামাই ছেঁকাটেকা দিছে নাকি?” হাসতে হাসতে বলে অথৈ।

কিন্তু মেহেক এসব কিছুই শুনছেনা।সে তো তার খেয়ালে মত্ত।

” এই অথু সব জায়গায় মজা করিসনা।আমার তো মনে হচ্ছে কোন সিরিয়াস কারণে মেহুর মন খারাপ।”

” এই মেহু।বান্ধবী বল আমাদের কি হয়েছে।”

” মেহু?এই মেহু?” মেহেককে জোরে ধাক্কা দিয়ে বলে রিফা।

মেহেক তার খেয়াল থেকে বেরিয়ে আসে তবে কিছু বলেনা।

” কি হয়েছে?” রিফা প্রশ্ন করে।

” না কিছু না।চল ক্লাসে চল।”

মেহেক ব্যাগ উঠিয়ে ক্লাসের দিকে চলে যায়।রিফার আর অথৈ এখনো অবাক হয়ে মেহেকের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।
__________________________________________

ক্লাস শেষে গেটের কাছে দাঁড়িয়ে আছে রিফা আর অথৈ।মেহেক গিয়ে টিউশনে।অথৈ দাঁড়িয়ে আছে রিকশার জন্য আর রিফা দাঁড়িয়ে আছে অথৈর জন্য।

” ধুর ছাতার মাথা,আজ একটা রিকশাও পাচ্ছিনা।এমনিতেই দেরি হয়ে গিয়েছে।না জানি আজ বাসায় গেলে মা আমার কি করে।”

” আজ তোর কপাল খারাপ তা আমি খুব ভালো করেই বুঝতে পারছি।আজকে নির্ঘাত আন্টি তোকে ঘর মোছার কাপড় দিয়ে পরিষ্কার করবে।” হাসতে হাসতে বলে রিফা।

” চুপ বজ্জাত মাইয়া।তোর মতো বান্ধবী থাকলে আর শক্রুর প্রয়োজন নাই।তুই একাই যথেষ্ট।”

রিফার আর অথৈ কথা বলছে।হঠাৎ তাদের সামনে এসে একটা বাইক দাঁড়া।আচমকা বাইক থামাতে রিফা আর অথৈ ঘাবড়ে গিয়ে হালকা পিছিয়ে যায়।
বাইকের মধ্যে কে বসে আছে তা হেলমেট পড়ার কারণে বোঝা যাচ্ছে না।বাইকে বসে থাকা লোকটা হেলমেট খুলে পেছন ফিরে তাকাই।

” হায় আমাদের অথুকি হিরো এসে পড়েছে।হাউ লোমেন্টিক।” মনে মনে বলে রিফা কারণ বাইকে বসে আছে শান্ত।

তাকে দেখে যে অথৈ মোটেও খুশি হয়নি তা তার মুখ দেখেই বুঝতে পেরেছে যায় শান্ত আর এটা বুঝতে পেরে নিচের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে শান্ত।

” কিরে রিফু এখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?”

” আসলে শান্ত ভাইয়া ওই অথু এর জন্য দাঁড়িয়ে আছি।আসলে বেচারি না রিকশা পাচ্ছেনা।”

” কারো যদি প্রবলেম না থাকে তো আমি তাকে ড্রপ করে দিতে পারি।”

অথৈ বুঝতে পারে শান্ত তাকেই কথাটা বলছে।তাই সেও ইনডিরেকলি বলে,

” রিফু আমার কারো সাহায্যের প্রয়োজন নেই আমি নিজের কাজ নিজে করতে পারি।”

” হায়রে গাধি মাইয়া।” মনে মনে বলে রিফা।

” ওকে তাহলে রিফু আমি যাই হ্যাঁ।”

” আরে শান্ত ভাইয়া দাঁড়াও দাঁড়া।”

রিফা অথৈকে টেনে একটু দূরে নিয়ে আসে।

” কিরে এখানে নিয়ে এলি কেন?”

” তুই কি করছিস হ্যাঁ?এতো ভালো সুযোগটা মিস করিস।”

” এতো ভালো সুযোগ মানে?”

” (এইরে কি বলে ফেলাম।–মনে মনে) মানে দেখ তুই কোন রিকশা পাচ্ছিস না আর মনে হয়না পাবি।তাই বলছি তুই শান্ত ভাইয়ার সাথে চলে যা।”

” আমি যাবোনা ওনার সাথে।”

” কেন?উনি কি বাঘ না ভাল্লুক?তোকে কি খেয়ে ফেলবে?”

” না তাও আমি যাবোনা।”

” তুই আমার উপর বিশ্বাস করিস তো?”

” হুম।”

” তাহলে বিশ্বাস রাখ আমার উপর।শান্ত ভাইয়া তোর কোন ক্ষতি করবেনা।উল্টো উনি নিজের জীবন দিয়ে হলেও তোকে প্রটেক্ট করবে।”

” আচ্ছা তোর উপর বিশ্বাস আছে আর আমি তোকে কষ্ট দিতে চাইনা।তাই যাচ্ছি।”

রিফার খুশি মনে শান্তের কাছে আসে।

” শান্ত ভাইয়া আমি কিন্তু তোমার লাইন সেট করে দিলাম।পরে কিন্তু ট্রিট নেবো।”

” ওকো মেরি লিটেল বেহেনা আর থ্যাঙ্ক ইউ আমার এই অবুঝ পরিটারে রাজি করানোর জন্য।” মুচকি হেসে বলে শান্ত।

” হুম হুম বুঝতে পেরেছি।এবার যাও না হলে পরে আমার অথু বেঁকে বসবে।আচ্ছা অথু তাহলে তোরা যা।আমি আসছি আর অথু খেয়াল রেখো শান্ত ভাইয়া।অথুনি তুইও শান্ত ভাইয়ার একটু খেয়াল রাখিস।” শেষের কথাটা অথৈর কানে কানে বলে রিফা।

অথৈ কিছু বলবে তার আগেই রিফা চলে যায়।

” বসুন মেডাম।”

অথৈ বাইকে উঠে বসে কিন্তু যথাসম্ভব দূরত্ব রেখে বসে।অথৈকে এভাবে বসতে দেখে মুচকি হাসে শান্ত।

” এতো দূরে বসোনা,পড়ে যাবে তো।”

” পড়বো আমি চালান।”

” দাঁড়াও দূরে বসাছি তোমাকে।” মনে মনে কথাটা ভেবে ডেভিল স্মাইল দেয় শান্ত।

হুট করে বাইক স্টার্ট করে দেয় শান্ত আর কিছুটা গিয়ে হুট করেই বন্ধ করে দেয়।যার ফলে অথৈ এসে পড়ে শান্তের উপর।এখন অথৈ আর শান্তের মাঝে একবিন্দুও ফাঁকা জায়গা নেই।তাড়াতাড়ি সোজা হয়ে বসে।সাইড মিরারে অথৈয়ের কান্ড দেখে হাসে শান্ত।

” ধরে বসো,নয়তো এবার বাইক থেকেই পড়ে যাবে।”

পড়ে যাওয়া ভয়ে অথৈ কাঁপা কাঁপা হাতে শান্তের কাঁধে হাত রাখে।অথৈয়ের ছোঁয়া পেয়ে শান্ত মন ভরে একটা শান্তির নিশ্বাস নেয়।সে সাইড মিরারে অথৈর এর প্রতিচ্ছবির দিকে একটা প্রশান্তির হাসি দিয়ে বাইক স্টার্ট দেয়।

বাড়ির কাছাকাছি চলে এসে অথৈ বাইক থামাতে বলে।

” এখানে থামাতে বললে কেন?তোমার বাসাতো…..”

” আমি চাইনা কেউ আমাকে আপনার সাথে দেখুক।ধন্যবাদ আমাকে ড্রপ করে দেওয়ার জন্য।”

” যেতো পারবে তো?”

” হুম।”

” সাবধানে যেও।”

” আপনিও সাবধানে যাবে।” অনেকটা হেজিটেশর নিয়ে বলে অথৈ।

কথাটা বলার পর অথৈ আর দাঁড়িয়ে না থেকে সে স্হান ত্যাগ করে।তবে অথৈ কিছুটা দূরে গেলেই শান্ত বাইক দাঁড় করিয়ে অথৈয়ের পেছন পেছন আসতে থাকে এবং যতক্ষণ না অথৈ তার বাড়ির ভেতরে ঢুকচ্ছে ততক্ষণ শান্ত তার পেছন পেছন তাকে অনুসরণ করে।
#কাশফুলের_ভালোবাসা
#পর্বঃ১৬
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি

” কিরে অথু বাড়ি পৌঁছে গিয়েছিস?”

” হ্যাঁ কিছুক্ষণ আগেই এলাম।”

” আন্টির হাতের ঘর মোছার কাপড় দিয়ে মার খেয়েছিস?” হাসতে হাসতে বলে রিফা।

” ধুর বেডি আর আম্মুর কথা বলিস না,কি বকাটাই ন দিলো।”

” আচ্ছা ছাড় ওসব।শান্ত ভাইয়া কিছু বলেছে?”

” না কি বলবে?”

” কিছুই বলেনি?” অবাক হয়ে প্রশ্ন করে রিফা।

” নাতো শুধু শেষবার বলেছে সাবধানে যেও।”

” তুই কি বলেছি তারপর?”

” আমিও বলেছি সাবধানে যাবেন।”

” ও আই সি….(বাহ্ কি প্রেম।একজনে প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে আর অন্যজনে তার কিছুই জানেনা।)”

” কিরে কোথায় হারিয়ে গেলি?”

” কোথাও না।আচ্ছা আমি রাখি।সাবধানের থাকিস তুই।কাল ভার্সিটিতে দেখা হবে।”

” হুম তুইও সাবধানে থাকিস।”
__________________________________________

টিউশন থেকে ফিরে মেহেক ধপ করে সোফায় বসে পড়ে।তার প্রচুর ক্লান্ত লাগছে।

” মেহু এসেছিস তুই।”

” হুম আপুনি।”

” কি হয়েছে তোর?শরীর খারাপ লাগছে নাকি?”

” আরে না তেমন কিছু না।এতোদিন পর টিউশন করাতে গিয়েছি তো তাই একটু ক্লান্ত লাগছে।”

” তোকে বলেছিলাম এতো কষ্ট করিসনা।নিজের পড়ায় মন দে,তোর খরচের চিন্তা করতে হবেনা।কিন্তু তুই তো আমার কোন কথাই শুনিস না।”

” আহ…..আপুনি বাদ দেতো ওসব।আমি রুমে যাচ্ছি,ফ্রেশ হয়ে এসে তোর কাজে সাহায্য করে দেবো।”

” তার দরকার নেই,তোর কোন সাহায্য করতে হবেনা।চুপচাপ রুমে যাবি।ফ্রেশ হয়ে কিছুক্ষণ রেস্ট নিয়ে পড়তে বসবি।রাতের খাবার সময় নিচে নামবি এর আগে নামবিনা।”

মেহেকও বোনের কথাতে সায় দিয়ে উপরে চলে যায়।ফ্রেশ হয়ে এসে মেহেক কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেই তারপর পড়তে বসে।কিন্তু অনেক্ষণ ধরে মেহেক একটা টপিক বোঝার চেষ্টা করছে কিন্তু কিছুতেই তা তার মাথায় ঢুকছেনা।

” ধুর পড়াশোনা এতো কঠিন কেন?হায়….কখন যে এই পড়াশোনা আমার শেষ হবে।এখন আমি কি করি?এটা তো কিছুই বুঝতে পারছিনা।”

অনেকভেবে মেহেক বইটা নিয়ে রিফার কাছে চলে আসে।মেহেক এসে দেখে রিফা তখন টিভি দেখছে।

” আহ…..কে দেখো এই মেয়ে কি শান্তিতে টিভি দেখেছে।এদিকে আমার অবস্থা তো নাজেহাল।” মনে মনে কথাটা ভাবে মেহেক।

মেহেক এসে ধপ করে রিফার পচশে বসে পড়ে।

” আরে মেহু তুই।হঠাৎ আমার রুমে এলি কেন?”

” আগে টিভি অফ কর।”

রিফা টিভি অফ করে মেহেকের দিকে মুখ করে বসে।

” বল এবার কি বলবি।”

” শোন না আমি না এটা বুঝতে পারছিনা।একটু বুঝিয়ে দেতো।”

” দে দেখি কি বুঝতে পারছিস না।”

রিফা বইটা নিয়ে বিজ্ঞদের মতো বইয়ের দিয়ে তাকিয়ে তাকে।মাথা নেড়ে নিজে নিজে কিছু বলে।এটা দেখে মেহেক নিজেই নিজেকে তিরস্কার করতে থাকে।

” দেখ মেহু দেখ।রিফা তোর থেকে পড়াশোনায় কত ভালো।ও নিশ্চিত চ্যাপ্টারটা শেষ করে ফেলেছে কিন্তু তুই তো এখনো পড়াই শুরু করলিনা।ছিঃ মেহু ছিঃ এই তোর পড়ার অবস্থা।”

কিন্তু মেহেক রিফা বুঝতে পেরেছে মনে করলেও তার ভাবনায় পানি দিয়ে রিফা বলে উঠে—-

” ধুর ওইসব কি?কোন সাবজেক্টর বই এটা?”

রিফার কথা শুনে মেহেক তো অবাক।

” কি তুই এটাই জানিস না যে এটা কোন সাবজেক্টর বই!তাহলে এতোক্ষণ মাথা নেড়ে নেড়ে কি করছিলি?”

” আসলে আমি না কিছু বুঝতে পারিনি।” বোকাদের মতো হেসে কথাটা বলে রিফা।

” এবার তাহলে কি হবে?আমি পড়াটা বুঝবো কিভাবে?”

” আরে তুই ইউটিউব থেকে দেখেনে।”

” ধুর ওইসব ইউটিউব টিউটিউব আমার মাথায় ঢুকেনা।”

” হুম…….তাহলে তুই ভাইয়ার কাছে যা।ভাইয়া তোকে সুন্দর করে বুঝিয়ে দেবে।”

” (কি!আমি যাবো তাও ওই গোমড়া মুখো স্পর্শের কাছে?না না তার থেকে বরং মিস্টার সৌন্দর্যের কাছে যায়— মনে মনে) মিস্টার সৌন্দর্য বুঝিয়ে দিতে পারবেন না?”

” হ্যাঁ দাভাইও পড়বে।”

” আচ্ছা তাহলে আমি আসছি।”

” আচ্ছা যা আমি টিভি দেখি।তোর জন্য আমার মু্ভির সিন মিস হয়ে গেলো।”

” এতো মুভি না দেখে পড়ালেখা কর।নয়তো পরীক্ষার খাতায় কিছু লিখতে পারবিনা।”

” ধুর এখন পড়ে কি হবে?পরীক্ষার আগের দিন পড়বো।”

” যা তোর যা ইচ্ছা তাই কর।”

মেহেক বইটা নিয়ে সৌন্দর্যের দরজার সামনে এসে দাঁড়ায়।প্রথমে মেহেক আস্তে আস্তে করে দরজা নক করে কিন্তু অনেক্ষণ হয়ে যাওয়ার পরেও কেউ দরজা যখন খুলেনা তখন মেহেক জোরে দরজা নক করে।কিন্তু ফলাফল একই,তাই মেহেক হালকা করে দরজাটা ধাক্কা দেয় আর ধাক্কা দেওয়া ফলে দরজা একটু করে খুলে যায়।মেহেক দরজাটা ঠেলে ভিতরে উঁকি মেরে দেখে,না কেউ নেই ভেতরে।মেহেক নিঃশব্দে ভিতরে ঢুকে পড়ে।এদিক-ওদিক তাকিয়ে সৌন্দর্যের ঘরটা দেখে মেহেক।হঠাৎ তার চোখ পড়ে বেডের পাশে থাকা ছোট টেবিলটাতে যেটাতে ছোট একটা ফ্রেমে সৌন্দর্যের ছবি লাগানো আছে।মেহেক ছবিটার দিক থেকে চোখ সরিয়ে সৌন্দর্যের পড়ার টেবিলের দিকে তাকাই।মেহেক আস্তে আস্তে পড়ার টেবিলের সামনে এসে দাঁড়ায়।মেহেক নিজের বইটা সাইডে রেখে একটা একটা করে সৌন্দর্যের বইগুলো দেখতে থাকে।বইগুলো আলাদা হলেও সব বইয়ের মধ্যে একটা জিনিস মেহেক কমন দেখেছে আর সেটা হচ্ছে কাশফুলের ছবি।বইয়ের প্রায় প্রত্যেকটা পাতায় কাশফুল আঁকা নয়তো কাশফুল শব্দটা লেখা।

” তুমি আমার রুমে কি করছো?”

হঠাৎ কারো আওয়াজে মেহেক ভয় পেয়ে তার হাতের বইটা তাড়াতাড়ি টেবিলে রেখে দেয়।মেহেক পেছন ফিরে দেখে পকেটে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সৌন্দর্য।

” কি হলো মেহেক তুমি আমার রুমে কি করছো?”

” ওই আসলে…..”

” হ্যাঁ আসলে কি?”

” আসলে আমি কিছু পড়া বুঝতে পারছিলাম তাই এসেছিলাম।”

” কিন্তু আমার কাছেই কেন?’ ভ্রু-কুচকে প্রশ্ন করে সৌন্দর্য।

” ওই রিফা বলেছিল।আর কাছেও গিয়েছিলাম কিন্তু ও নিজেও নাকি কিছু বুঝতে পারছিলনা।তাই বলেছে আপনার কাছে আসতে।”

” আচ্ছা বইটা নিয়ে এদিকে এসো।”

সৌন্দর্য গিয়ে তার পড়ার টেবিলটাতে বসে।মেহেককেও একটা চেয়ারে বসতে বলে।তারপর সৌন্দর্য মেহেককে আস্তে আস্তে পুরো টপিকটা বুঝিয়ে দেয় আর মেহেকও ভালো মেয়ের মতো পুরো পড়াটা বুঝে নেয়।

” ব্যস শেষ।বুঝতে পেরেছে?”

” হুম বুঝতে পেরেছি।ধন্যবাদ বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য আর বিরক্ত করার জন্যও ধন্যবাদ।”

” আমি মোটেও বিরক্ত হয়নি।তুমি আমার কাছে পড়া বুঝতে এসেছো এতে আমার ভালো লেগেছে।”

” আচ্ছা আমি আসি তাহলে।”

মেহেক চলে যেতে নিলে সৌন্দর্য তাকে দাঁড় করিয়ে বলে—

” দিন কেমন কাটলো তোমার?”

” ভালো।”

” টিউশনে গিয়েছিলে?”

” হুম।”

” সবঠিক আছে তো?নাকি কোন সমস্যা হচ্ছে?”

” না না সব ঠিক আছে।”

” কোন সমস্যা হলে বলো কিন্তু।”

মেহেক মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিয় আর চলে যায়।মেহেক চলে যেতে সৌন্দর্য আবারো তার পড়ার টেবিলে ফিরে আসে আর বই খুলে তার আঁকা কাশফুলের ছবিটা দেখতে থাকে।

সৌন্দর্যের রুম থেকে বেরিয়ে পড়াগুলো মনে করতে করতে নিজের রুমের দিকে যাচ্ছে মেহেক।তবে হুট করে কারো সাথে ধাক্কা খেতে গেলেও মেহেক নিজেকে সামলে নেয়।মেহেক সামনে তাকিয়ে দেখে স্পর্শ বিরক্তিকর মুখ করে তার দিকে তাকিয়ে আছে।মেহেক সরি বলতেই যাবে তার আগেই স্পর্শ যেখান থেকে চলে যায়।তবে এবার মেহেক স্পর্শের ব্যবহারে অবাক হয়না।

” এই লোক কি জন্ম থেকেই এরকম?নাকি শুধু আমার সাথেই এরকম ব্যবহার করে?আমি ওনার কোন পাঁকা ধানে মই যে দিয়েছি কে জানে।”

রাতে খাওয়ার পর শুয়েছে মেহেক কিন্তু সারাদিন পরিশ্রম করার পরও এখন তার মোটেও ঘুম আসছেনা।মেহেক অনেকক্ষণ এদিক-ওদিক করেও ঘুম আনতে পারে।বিরক্ত হয়ে মেহেক উঠে বসে।

” ধুর ঘুম আসেনা কেন?সারাদিন এতো কাজ করলাম কই বিছানায় শোয়ার সাথে সাথে ঘুম আসবে কিন্তু তা না উল্টো ঘুম বাবাজি তো উধাও।যাই একবার ছাদ থেকে ঘুরে আসি।তাহলে বোধহয় ঘুম আসবে।যাবো?এতো রাতে যাওয়া কি ঠিক হবে?ধুর কি হবে যাই বরং।”

মেহেক নিজের মোবাইলটা নিয়ে ছাদে চলে আসে।কিন্তু ছাদে এসে মেহেক দেখে কেউ আগে থেকেই ছাদে বসে আসে,তা দেখেই মেহেক চলে যেতে নিলে ছাদে বসে থাকা কেউটা বলে উঠে—-

” চলে যাচ্ছো কেন?এসো।”

গলা শুনে মেহেক বুঝতে পারে এটা সৌন্দর্য।মেহেক আস্তে করে গিয়ে সৌন্দর্যের পাশে দাঁড়ায় তবে অনেকটা দূরত্ব রেখেই দাঁড়ায় সে।

” এতো রাতে ছাদে কেন তুমি?”

” ঘুম আসছিলনা তাই এসে ছিলাম।আপনি কি করছেন?”

” রুমে ভালোলাগছিল না তাই ভাবলাম একটু ছাদ থেকে হেঁটে আসি।হয়তো মনটা ভালোও হয়ে যেতে পারে।”

মেহেক আর সৌন্দর্য আর কিছু বলেনা।দুজনেই চুপচাপ দূর আকাশে তাঁরা দেখতে থাকে।হঠাৎ মেহেক সৌন্দর্যকে বলে—

” আচ্ছা আপনার কি কাশফুল পছন্দ?”

মুচকি হেসে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দেয় সৌন্দর্য।

” তবে সেটা তুমি কি করে জানলে?”

” আপনার বইয়ে দেখেছিলাম আপনি প্রতিটা পাতায় কাশফুলের ছবি আর নাম লিখে রেখেছিলেন।তাই আন্দাজ করলাম।”

সৌন্দর্য কিছুনা বলে মুচকি হাসে শুধু।

চলবে……
চলবে……

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here