#কাশফুলের_ভালোবাসা
#পর্বঃ২৬
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি
” হয়েছে বোন আর কান্না করিসনা।এতো কান্না করলে তো তোর চোখের জলে এখানে বড় একটা সুইমিংপুল তৈরি হয়ে যাবে।” স্পর্শ বলে।
স্পর্শের কথা শুনে মেহেক কান্না করতে করতেই হেসে দেয়।
” এই মেহু তুই আমার ভাইয়ের আদরে ভাগ বাসাচ্ছিস কেন?” কোমড়ে হাত দিয়ে বলে রিফা।
” এটা এখন আমারো ভাই।” স্পর্শের একটা হাত ধরে বলে মেহেক।
” যা নিয়ে যা,লাগবে না।” ছোট বাচ্চাদের মতো মুখ ফুলিয়ে বলে রিফা।রিফার বাচ্চাপনা দেখে সবাই হেসে দেয়।হঠাৎই স্পর্শের চোখ পড়ে নাইরার উপর,নাইরাকে দেখে তার মুখের হাসি উবে যায়।সবাই কথা বলতে ব্যস্ত হয়ে পড়লে স্পর্শ সবার আড়ালে নাইরার কাছে এসে দাঁড়ায়।তার গম্ভীর গলায় বসে—
” আমাদের সম্পর্ক আজ এখানেই শেষ।আমি কোন খুনির মেয়ের সাথে সম্পর্ক রাখতে চাইনা।”
স্পর্শের কথা শুনে নাইরার চোখে পানি জমে যায়।স্পর্শ একপলক নাইরার দিকে অনুষ্ঠান থেকে বেরিয়ে যায়।নাইরা একদৃষ্টিতে স্পর্শের যাওয়া দিকে তাকিয়ে থাকে তবে স্পর্শ একবারের জন্যও পেছন ফিরে তাকাই না।আসলে স্পর্শ আর নাইরার ৩ বছরের রিলেশন ছিল।তাদের একটা অনুষ্টানে দেখা হয়েছিল।এরপর মেসেঞ্জারে কথা হয় আর একজন আরেকজনকে ভালোবেসে ফেলে।তবে ১ বছর আগে স্কলারশিপ পেয়ে নাইরা সিওল চলে যায়।তবে তাদের সম্পর্ক ঠিকই ছিল।কিন্তু নাইরার বাবার সত্যিটা জানার পর স্পর্শ তা মেনে নিতে পারেনি।
” আমাকে ক্ষমা করে দিস মেহু।বাবার লালসার জন্য তুই তোর বাবা-মাকে হারালি।” মাথা নিচু করে নক্ষত্র বলে।
” তুমি কেন ক্ষমা চাইছো ভাইয়া।যা হয়েছে তা হয়ে গিয়েছে।এখন আর কিছু পালটানো যাবেনা।”
নক্ষত্র আর কিছুনা বলে তার পরিবারের সবাইকে নিয়ে চলে যায়।একে একে সবাই অনুষ্ঠান ছেড়ে চলে যায়।মেহেক একবার তার বোনের দিকে তাকাই।মেহেকের তাকানো দেখে সৃষ্টি চোখ নামিয়ে নেয়।মেহেক কিছু না বলে নিজের রুমে চলে আসে।এতোক্ষণ দূর থেকে মেহেককে দেখছিল সৌন্দর্য।মেহেক চলে গেলে সেও তার পেছন পেছন নিজের রুমে চলে যায়।
শাড়িটাড়ি খুলে ফ্রেশ হয়ে পড়তে বসে মেহেক।সে এমন একটা ভাব করছে যেন কিছু হয়নি,সব নরমাল আছে।আসলে মেহেক কিছুক্ষণ আগে যা হয়েছে তা ভুলে নরমাল থাকার চেষ্টা করছে।
পড়তে পড়তে হঠাৎ মেহেকেন মনে হয় কেউ তার পেছনে দাঁড়িয়ে আছে।মেহেক তাড়াতাড়ি পেছন ফিরে তাকাই।মেহেকের পেছনে তার বোন সৃষ্টি দাঁড়িয়ে আছে।সৃষ্টিকে দেখে মেহেক মুচকি হেসে উঠে দাঁড়ায়।
” আপুনি,তুই এসময় এতো কষ্ট করে আসতে গেলি কেন?আমাকেই ডেকে পাঠাতে পারতি।”
” এতো কিছু হওয়ার পরেও তুই বই পড়ছিস।” অবাক হয়ে প্রশ্ন করে সৃষ্টি।
” আপুনি তুই তো জানিসই বই পড়লে আমার স্ট্রেজ কমে।দাঁড়িয়ে আছিস কেন?বস।”
” আমি জানিনা আমি তোকে কি বলবো,তবে আমাকে ক্ষমা করেছ দিস।তোর উপর যদি আমি বিয়ের জন্য প্রেশার না দিতাম তাহলে এতোসব কিছু হতোনা।আজ যদি আদু সত্যিটা না জানাতো তাহলে হয়তো আমি তোকেও হারিয়ে ফেলতাম।” মেহেকের হাত ধরে বলে সৃষ্টি।
” চুপ কর আপুনি।যা হয়েছে তা হয়েছে।ভুলে যা ওসব।তুই এখন শুধু তোর বেবিকে নিয়ে ভাব।বুঝতে পেরেছিস।”
” হুম।চল খেতে যাবি।”
” আমার এখন ক্ষিদে নেই।তোরা খেয়ে নে।”
” বেশি কথা বলছিস।চল,আজ তোকে আমি নিজের হাতে খাইয়ে দেবো।”
মেহেককে সৃষ্টি নিয়ে যায়।খাবার টেবিলে কেউ কোন কথা বলেনা।সবাই চুপচাপ নিজের খাবার খেয়ে চলে যায়।
খাবার খেয়ে নিজের রুমে আসার মন মেহেক গিটারে টুংটাং শব্দ শুনতে পাই।মেহেক ভালো করে কান পেতে দেখে শব্দটা সৌন্দর্যের রুম থেকে আসছে।মেহেক দরজায় কান দিয়ে শব্দ হওয়ার চেষ্টা করে।হঠাৎ সে গানের শব্দ শুনতে পাই।
কেন মেঘ আসে হৃদয়-আকাশে,
” কেন মেঘ আসে হৃদয়-আকাশে,
তোমারে দেখিতে দেয় না।
মোহ-মেঘে তোমারে দেখিতে দেয় না,
মোহ-মেঘে তোমারে অন্ধ করে রাখে
তোমারে দেখিতে দেয় না,
মাঝে মাঝে তব দেখা পাই
চিরদিন কেন পাই না,
মাঝে মাঝে তব।”
মেহেক আর শোনেনা,দরজা থেকে কান সরিয়ে নিয়ে সে নিজের রুমে চলে আসে।রুমে এসে মেহেক আবারো বই খুলে বসে।হঠাৎ বইয়ের পাতায় একফোঁটা পানি পড়ে।মেহেক তাড়াতাড়ি পানির ফোঁটাটা মুছে নেয় আর নিজের চোখ মুছে একটা বড় নিশ্বাস নেয়।আসলে সৌন্দর্যের গান শুনে তার আবারো মুগ্ধের কথা মনে পড়ে গেলো।মুগ্ধও প্রায় সময় তাকে এই গানটাই শোনাতে।মেহেক দরজা বন্ধ করে এসে কাঁথা গায়ে জরিয়ে শুয়ে পড়ে।
পরেরদিন সকালে,
রেডি হয়ে ভার্সিটির ব্যাগ নিয়ে নিচে নেমে আসে মেহেক।মেহেককে তৈরি দেখে সৃষ্টি প্রশ্ন করে—
” আরে কোথায় যাচ্ছিস?”
” ভার্সিটিতে।” খাবার খেতে খেতে উওর দেয় মেহেক।
” আজ না গেলে হয়না।আরো কিছুদিন পর…..”
” কেন?ভার্সিটি গ্যাপ দেবো কেন?আমার কি হাত-পা ভেঙে গিয়েছে নাকি?শুধু শুধু বাড়িতে বসে থাকতে আমার ভালো লাগবেনা।আর আপুনি তুই চিন্তা করিসনা যা হয়েছে আমি সব ভুলে গিয়েছি,তুইও ভুলে যায়।”
” এই না হলে আমার বোনু।” উপর থেকে নামতে নামতে বলে স্পর্শ। ” সবসময় এরকমই স্ট্রং থাকবি বোনু,কোন কিছুতেই ভেঙে পড়বিনা।” মেহেকের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে স্পর্শ।
” হুম।আচ্ছা তোমরা বসো আমি একটা জিনিস রুমে রেখে এসেছি ওটা নিয়ে আসছি।”
মেহেক তাড়াতাড়ি চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ায়।সিঁড়ি দিয়ে খুব তাড়াতাড়ি মেহেক উপর উঠতে থাকে।সৌন্দর্য নিচে নামার সময় এই দৃশ্য দেখে।
” আস্তে,পড়ে যাবে তো।”
কিন্তু মেহেক কোন কথা না শুনে তাড়াতাড়ি নিজের রুমে চলে আসে আর দরজা বন্ধ করে দেয়।মেহেক তাড়াতাড়ি ওয়াশরুমে গিয়ে মুখে পানি দিতে থাকে।অনেক্ষণ মুখে পানি দেওয়ার পর মেহেক আয়নায় থাকায়।মেহেকের পুরো মুখে পানি লেপ্টে আছে,তবে তার চোখগুলো লালবর্ণ ধারণ করেছে।ঠিক মেহেক নিজের কান্না আটকানোর জন্য মুখে পানি দিচ্ছিলো।আসলে মেহেক সবার সামনে যতটা স্বাভাবিকই দেখানোর চেষ্টা করুক না কেন আসলে কাল ঘটনায় সে অনেকটা ভেঙে পড়েছে।আয়নার নিজের প্রতিবিম্বের দিকে অজোরে কান্না করতে থাকে মেহেক।
ভার্সিটির ক্যান্টিনে বসে আছে মেহেক,রিফা,অথৈ,সৌন্দর্য,স্পর্শ আর বাকি সবাই।সবাই কথা বলছে আর হাসিমজা করছে।মেহেকেও তাদের সাথে হালকা-পাতলা কথা বলছে।হঠাৎ লিজা বলে উঠে,
” মেহেক তোমার সাথে যা হয়েছে তা আমরা সবাই জানতে পেরেছি।আমার জেনে খুব খারাপ লেগেছে।এরকম কিছু হবে হয়তো তোমরা কখনো আশা করেনি।”
লিজার কথা শুনে সবাই কথা বন্ধ হয়ে যায় আর মেহেকের মুখ কালো মেঘে ঢেকে যায়।মেহেক মাথা নিচু করে ফেলে আর বাকি সবাই রেগে লিজার দিকে তাকাই।বিশেষ করে সৌন্দর্য।
” এভাবে সবাই তাকিয়ে আছিস কেন?খেয়ে ফেলবি নাকি।”
লিজার কথা শুনে সবার বিরক্ততে কপাল ভাজ করে।
” এই মেয়েটা কি জানেনা কখন কোথায় কি বলতে হয়।পালতু মেয়ে।কোথায় আমরা সবাই চেষ্টা করছি মেহুর মন ভালো করার কিন্তু এই মেয়েতো সব বন্ড করে দিলো।” বিরক্ত নিয়ে বলে অথৈ।
” কি করছিস অথু!আস্তে কথা বল।ওরা শুনলে খারাপভাবে।”
রিফার কথা শুনে অথৈয়ের বিরক্তবোধ আরো বেড়ে যায় আর সে অন্যদিকে তাকিয়ে থাকে।এদিকে অথৈয়ের চেহারা দেখে শান্তও বুঝে যায় অথৈ প্রচুর বিরক্ত লিজার কাজে।তবে সে কিছু বলেনা।
” লিজা তোমার কি কখনো জ্ঞান শক্তি হবেনা যে কখন কি বলতে হয়।” লিজার কানে কানে বলে আদিব।
আদিবের কথা শুনে লিজা বুঝতে পারে আদিবার তা উপর রেগে আছে বা সে বিরক্ত কারণ রাগলে বা বিরক্ত হলেই সে লিজাকে “তুমি” করে বলে।
” তুমি আমাকে এভাবে বলছো কেন?আমি কি ভুল কিছু বলেছি?যা সত্যি তাই তো বলেছি।এতে এতো রেগে যাওয়ার কি আছে?”
” আসলেই তোমার কোনদিন বোঝার শক্তি হবেনা।” বলে বিরক্ত নিয়ে মুখটা ঘুরিয়ে নেয় আদিব আর শান্তের সাথে কথা বলতে থাকে।আদিবের এই আচরণে লিজা প্রচুর ক্ষেপে যায়।সে উঠে চলে যেতে নিলে কেউ তার হাত ধরে তাকে আটকিয়ে নেয়।লিজা দেখে আদিবই তার হাত ধরেছে।কথার বলতে বলতেই আদিব চোখের ইশারায় লিজাকে বসতে বলে।লিজা বুঝতে পারে আদিব তার উপর প্রুচর রেগে আছে।তাই সেও আর কোন কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ বসে পড়ে।সৌন্দর্য,স্পর্শ,রিফা আর অথৈ মেহেকের মন ভালো করার জন্য তাকে বিভিন্ন কথা বলতে থাকে।এদিকে সব চুপচাপ দেখছে মহুয়া।সে কঠিন মুখ করে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে,বিশেষ করে মেহেকের দিকে।তার মুখ দেখে বোঝার উপায় নেই সে কি ভাবছে।
#কাশফুলের_ভালোবাসা
#পর্বঃ২৭
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি
অথৈ আর রিফা মেহেকের মুড ঠিক করার জন্য ভার্সিটি শেষে তাকে একটা ফুসকার স্টলে।অথৈ এসেছে তাই তার পেছন পেছন শান্তও চলে আসে।লিজা জেদ ধরেছে সেও ফুচকা খাবে তাই আদিব আর মহুয়া তার পেছন পেছন চলে আসে।সবাই যখন চলেই এলো তাই বেচারা সৌন্দর্য আর স্পর্শ তাদের পেছন পেছন ফুসকার স্টলে চলে এলো।
সবাই সবার ইচ্ছে মতো ফুসকা অর্ডার দেয়।মেহেক খেতে না চাইলেও রিফার তার মুখে জোর করে একটা ফুসকা ঢুকিয়ে দেয়।মেহেকও আর কোন কথা না বলে ফুসকা চিবুতে থাকে।প্রথমটা শেষ হলে অনেকটা সময় পর মেহেক আরেকটা ফুসকা মুখে পুড়ে।তবে দ্বিতীয়টা খাবার পর মেহেকের অবস্থা খুবই খারাপ কারণ ফুসকাগুলো মাত্রাধিক ঝাল দেওয়া।মেহেক তার ব্যাগ থেকে পানির বোতলটা বের করে ঢকঢক করে সবটুকু পানি খেয়ে ফেলে তবে তাও তার ঝাল কমেনা।
” রিফু,পানি আছে?”
” হুম আছে তো কিন্তু কেন?”
” পানির বোতল দে তাড়াতাড়ি।”
রিফা তার ব্যাগ থেকে পানি দেয়।মেহেক রিফার সব পানিও খেয়ে ফেলে কিন্তু তাও তার ঝাল কমার নামই নিচ্ছেনা।
” কিরে কি হয়েছে?এভাবে পানি খাচ্ছিস কেন?”
” রিফু ঝাল লাগছে।প্লিজ কিছু কর।”
” আচ্ছা দাঁড়া দেখছি কি করা যায়।তুই একটু দাঁড়া।”
রিফা দৌড়ে সাইডে চলে যায় যেখানে ছেলেরা দাঁড়িয়ে ছিল।রিফা গিয়ে তাদের কিছু বলে।রিফার কথা শুনে সৌন্দর্য তাড়াতাড়ি কোথাও চলে যায় আর কিছুক্ষণ পর ফিরে এসে রিফার হাতে কিছু দেয়।রিফাও সৌন্দর্যের দেওয়া জিনিসটা নিয়ে মেহেকের কাছে নিয়ে আসে।
” মেহু এইনে আইসক্রিমটা তাড়াতাড়ি খেয়ে নেয়।”
মেহেক কোনকিছু না ভেবে প্যাকেট খুলে আইসক্রিম খেতে থাকে।আইসক্রিম খাওয়া কয়েক সেকেন্ড পর মেহেক ঝাল কমে যায়।ঝাল কমায় মেহেক স্বস্তির নিশ্বাস নেয়।হঠাৎ মেহেকের খেয়াল হয় সে তাড়াহুড়োতে আইসক্রিম খেয়ে ফেলেছে।
” রিফু তুই এটা কি করলি?”
” কেন?আমি আবার কি করলাম?”
” তুই আমাকে আইসক্রিম দিলি!এবার যদি ঠান্ডা লেগে যায় তো?”
” ও আচ্ছা এই ব্যপার,আমি তো ভাবলাম কিনা কি।শোন একদিন আইসক্রিম খেলে কিছু হবেনা।আর বেশি সমস্যা মনে হলে বাসায় গিয়ে আগেভাগে ওষুধ খেয়ে নিস।তাহলে আর কিছু হবেনা।”
” হুম সেটা ঠিক বলেছিস।আচ্ছা তোকে আইসক্রিম কে দিয়ে?”
” দাভাই দিয়েছে।”
” ওনাকে আবার বলতে গেলি কেন?”
” তো কি হয়েছে?খা এবার,প্লাস্টিক মেয়ে একটা।একটুও ঝাল খেতে পারেনা।আমি তো আরো মামা বলতে যাচ্ছিলাম আরো ঝাল বাড়িয়ে দিতে।”
” হ্যাঁ আমি প্লাস্টিক আর তুই ওয়ানডার ওমেন।খা ঝাল,ঝালের সাগরে ডুবকি মার।”
” ওই তোরা না খেয়ে কি এতো ফুসুরফুসুর করছিস?” অথৈ বলে।
” কিছুনা।খাওয়াতে মন দে।”
এদিকে মহুয়া কঠিন মুখ করে আবারো মেহেকের দিকে তাকিয়ে আছে।মেহেকের প্রতি সৌন্দর্যের এতো কেয়ার মহুয়ার পছন্দ হচ্ছে না।মহুয়া “আমার হয়ে গিয়েছে” বলে সেখান থেকে চলে যেতে নেয়।মহুয়ার যাওয়া দেখে লিজাও সবার থেকে বিদায় নিয়ে তাড়াতাড়ি মহুয়ার পেছন পেছন যেতে থাকে।
” কিরে এভাবে চলে এলি যে?ফুসকাও তো খেলিনা।”
” কিছুনা।”
” সৌন্দর্যের কাজটা তোর ভালো লাগেনি তাইনা?”
লিজার প্রশ্ন শুনে মহুয়া তার দিকে তাকাই তবে কিছু বলেনা।
” তুই সৌন্দর্যকে বলে দিচ্ছিনা কেন বলতো?বলে দেনা।আর কত নিজে নিজে কষ্ট পাবি?কিরে শুনতে পাচ্ছিস আমি কি বলছি?এই মহুয়া?”
লিজা মহুয়াকে ডেকেই চলেছে কিন্তু মহুয়া লিজাকে ইগনোর করে সেখান থেকে চলে যায়।
_________________________________________
নিজের ক্লাসের দিকে যাচ্ছে অথৈ তবে কারো আওয়াজ শুনে সে থেমে যায়।অথৈ পেছনে ফিরে দেখে রুদ্র তাকে ডেকেছে।রুদ্রকে দেখে অথৈয়ের কপাল কুচকে যায় বিরক্ততে।রুদ্র দৌড়ে এসে অথৈয়ের সামনে দাঁড়ায়।
” হেই ব্ল্যাকপিংক।”
” আমার নাম ব্ল্যাকপিংক না।” বিরক্ত নিয়ে বলে অথৈ।
” তো কি তোমার নাম?”
” আমার নাম অথৈ ইসলাম।সো নেক্সট টাইম নাম ধরে ডাকবেন।”
” ওকে বাট নট ইন্টারেস্ট।আমি তো ব্ল্যাকপিংকই বলবো।”
রুদ্রের উওর শুনে অথৈয়ের বিরক্তিবোধ আরো বেড়ে যায়।
” তো ব্ল্যাকপিংক কেমন আছো?”
” দেখতেই তো পাচ্ছেন কেমন আছি।”
” হুম দেখেছি।” অথৈকে একবার উপর থেকে নিচে পড়ক করে নেয় রুদ্র।রুদ্রের চাহনি অথৈয়ের মোটেও ভালো লাগেনি।
” কোথায় যাচ্ছো এখন ব্ল্যাকপিংক?”
” ভার্সিটিতে যখন এসেছি তখন নিশ্চয়ই ক্লাসেই যাবো।ক্লাস ফাঁকি দিয়ে তো আর ক্যাম্পাসে ঘুরবোনা।” রুদ্র বুঝতে পারে অথৈ কথাটা তাকেই ইঙ্গিত করে বলেছে তবে সে এটাকে তেমন একটা পাত্তা দেয়না।
” আই লাইক ইউ এটিটিউট এন্ড ইউ আর সো হট।” বাঁকা হেসে বলে রুদ্র।
রুদ্রের মুখে এসব বাজে শব্দ শুনে অথৈয়ের ইচ্ছে করছে তাকে দুটো থাপ্পড় দিতে।তবে অথৈ কোন সিংরেট করতে চাইনা বলে সে নিজেকের সংযত করে।
” তুমি এখানে কি করছো?”
কারো শব্দ শুনে রুদ্র আর অথৈ পেছন ফিরে তাকাই।তাদের পেছনে পকেটে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে শান্ত।শান্ত দেখে অথৈ মোটামুটি খুশি হলেও রুদ্র মোটেও খুশি হয়নি।
” তোমার কি ক্লাস নেই এখন?” গম্ভীরভাবে অথৈকে জিজ্ঞেস করে শান্ত।
অথৈ মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ সম্মতি দেয়।
” তো ক্লাসে না গিয়ে এখানে কি করছো?যাও ক্লাসে যাও।” কিছুটা চিৎকার করে বলে শান্ত।
শান্তের বিহেভিয়ারে অথৈ ভয় তো পায়নি বরং তার বিরক্তবোধ আরো কয়েকগুণ বের গিয়েছে।অথৈ বিরবির করে শান্ত আর রুদ্রকে বকা দিতে দিতে সেই স্থান ত্যাগ করে।অথৈ চলে যেতেই শান্ত রাগী রাগী ফেইস করে রুদ্রের দিকে তাকাই তবে রুদ্র সেটাকে পাত্তাই দেয়না।শান্ত রুদ্রের কাছে এসে বলে—
” ও আমার।সো ওর থেকে কোন এক্সপেক্টটেশন না রাখাই ভালো।”
” আমিও দেখবো ও কার হয়।” ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে কথাটা বলে চলে যায় রুদ্র।রুদ্রের কথা শুনে শান্তের রাগ আরো বেরে যায়।সে পাশে থাকা একটা গাছে পাঞ্চ মারে।
___________________________________________
পার্কে বসে রিফার জন্য অপেক্ষা করছে ইভান।
” কেন দেখা করতে ডেকেছো?” তাড়াহুড়ো করে বলে রিফা।রিফাকে দেখে ইভার মুচকি হাসে।
” এসেছো তুমি!বসো।”
” আমি বসবোনা।বাসায় কাউকে বলে আসিনি।কেউ জানতে পারলে অনেক সমস্যা হয়ে যাবে।”
” সমস্যা যেন না হয় সেটারই সমাধান নিয়ে এসেছি।”
” মানে?”
” বসো আগে তুমি।” জোর করে রিফাকে বেঞ্জে বসিয়ে দেয় ইভান।তারপর তার হাত ধরে প্রশ্ন করে “তুমি আমাকে সত্যিকারের ভালোবাসো তো শ্যামলীনি?”
” এটা কোন ধরনের প্রশ্ন ইভান?” নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলে রিফা।
” আমি যা জিজ্ঞেস করছি তার উওর দাও শ্যামলীনি।”
” অবশ্যই ভালোবাসি।কিন্তু হঠাৎ এ প্রশ্ন করছো কেন?”
” আমি জানতাম তুমি উওরে এটাই বলবে।আই আম সো হ্যাপি।”
” তুমি আমাকে এটা জিজ্ঞেস করা জন্য ডেকেছো?” কিছু বিরক্ত নিয়ে বলে রিফা।
” আরে না না এর থেকেও বড় কিছু বলবো তোমাকে।আমার কথা শুনে তুমি খুশিতে পাগল হয়ে যাবে।”
” কি বলবে শুনি?”
” চলো শ্যামবতী আমরা বিয়ে করে ফেলি।”
” কি?” হুট করে দাঁড়িয়ে পড়ে রিফা।
” আরে দাঁড়িয়ে পড়লে কেন?বসো বসো।”
” আরে রাখোতো তোমার বসা।এই তুমি আবার বলোতো তুমি কি বলেছো?”
” বলেছি চলো বাড়িতে আমাদের সবার কথা বলে দিয় আর বিয়ে করে ফেলি।”
” ইভান তোমার কি মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে?কিসব বলছো?তুমি এখনো ডাক্তারি পড়ছো আর আমিও পড়াশোনা করছি।আমার কথা না হয় বাদ দিলাম কিন্তু তুমি এখনো সেটেল না,তুমি এখনো তোমার বাবা-মার উপর নির্ভরশীল।এখন যদি বাড়ির লোকেরা আমাদের সম্পর্কের ব্যাপারে জানতে পারে তো লাভের লাভতো কিছুই হবেনা বরং উল্টো সবাই আমাদের ধরে বেঁধে অন্যকারোর সাথে বিয়ে দিয়ে দেবে।”
” আরে এরকম কিছু হবেনা।আর তোমার আব্বু আর আমার আব্বু তো ফ্রেন্ড।তারা এতো আমারো খুশি হবে।”
” না না আমি তোমার সিদ্ধান্তে মোটেও সহমত নয়।”
” আরে আমি ছেলে হয়ে বলছি চলো বিয়ে করে ফেলি কোথাই তুমি তা শুনে খুশি হবে কিন্তু তুমি তো উল্টোটা করছো।”
” যায় বলোনা কেন আমি কোন রিক্স নিতে চাইনা।প্লিজ তুমি আর আমাকে জোর করোনা।বাই।”
রিফা রেগে পার্ক থেকে বেরিয়ে যায়।ইভান তাকে পেছন থেকে ডাকেই চলেছে তবে রিফা একবারের জন্যও পেছন ফিরে তাকাইনা।
#কাশফুলের_ভালোবাসা
#পর্বঃ২৮
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি
কিছুদিন পর,
” আপু তুই এসব কি শুরু করেছিস?আবার কেন?” বিরক্ত নিয়ে বলে মেহেক।
” চুপ কর।যা করছি তোর ভালোর জন্যই করছি।এবার ছেলেদের সব জেনেশুনেই নিয়েছি।ছেলে তোর জিজুর পরিচিত।দেখি এদিকে তাকা তো লিপস্টিকটা দিয়ে দিয়।” সৃষ্টি মেহেককে নিজের দিকে ঘুরিয়ে লিপস্টিক দিতে থাকে আর মেহেক বিরক্ত নিয়ে সৃষ্টির কাজ দেখছে।আসলে আজ আবারো মেহেককে ছেলেপক্ষ দেখতে আসছে।আসছে বললে ভুল হবে বরং এসে গিয়েছে।মেহেক ভার্সিটি থেকে এসে দেখে কয়েকজন অপরিচিত মানুষ ড্রয়ং রুমে বসে আছে।মেহেক সেদিকে অতোটা মনোযোগ না দিয়ে তাদের সালাম দিয়ে চলে আসে।মেহেকের পেছন পেছন সৃষ্টিও আসে আর তাকে তৈরি করতে থাকে।প্রথমে সৃষ্টি কিছু বলতে চাইনি তবে মেহেকের জোর করার পর সে বলে যে তাকে দেখতে এসে তারা।
রেডি হওয়া শেষ হলে মেহেককে সৃষ্টি নিচে নিয়ে আসে।মেহেক নিচে গিয়ে আবারো সবাইকে সালাম দেয়।
” আসো মা এদিকে আমার পাশে বসো।” মধ্যবয়স্ক একজন মহিলা বলেন।মেহেক একবার সৃষ্টির দিকে তাকাই,সৃষ্টি চোখের ইশারায় তাকে বসতে বলে।মেহেকও একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বসে পড়ে।
” এই হচ্ছে আমার ছেলে ধ্রুব।” মহিলাটা বলে।
মেহেক চোখ তুলে তার সামনে বসে থাকা ছেলেটা দিকে তাকাই।ছেলেটাকে দেখে মেহেকের তো চোখ কোটর থেকে বেরিয়ে আসার উপক্রম।মাথা ঝপঝপে তেল দেওয়া,চোখে মোটা ফ্রেশের চশমা,ফুল হাত শার্ট ইন করা।ছেলেটা মেহেকের দিকে তাকিয়ে একটা বোকা বোকা হাসি দিয়ে মাথাটা নিচু করে ফেলে।ছেলের কান্ড দেখে মেহেক চোখ বড় বড় করে তার দিকে তাকিয়ে থাকে।
” এসব কি?” চোখের ইশারায় সৃষ্টিকে বলে মেহেক।
সৃষ্টি চোখের পলক ফেলে মেহেককে চুপ করে বসতে বলে।সবাই নিজেদের মধ্যে কথা বলতে থাকে আর মেহেক মনে মনে ছেলেটার চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধার করছে।
” দেখি তো মেয়ে চুলগুলো একটু দেখাও তো।” আরেকটা মহিলা বলে।
হঠাৎ এরকম কিছুতে মেহেক অবাক হয়ে যায়।
” জ্বি?”
” আসলে ও আমার ননদ।ওকে একটু চুলটা দেখাও।”
মেহেক দাঁতে দাঁত চেপে মাথা থেকে ঘোমটাটা সরিয়ে ফেলে।মহিলা এসে মেহেকের চুলগুলো নেড়েচেড়ে দেখতে থাকে।
” হুম চলনসই আসে।তবে বেশি পাতলাম,আরেকটু ঘন হলে ভালো হতো।”
মহিলার কথা শুনে মেহেক আবার সৃষ্টির দিকে তাকাই।মহিলা আবার নিজের জায়গায় এসে বলে।
” দেখি এবার চশমাটা একটা খুলোতো।”
মেহেকের ইচ্ছে করছে দেয়ালে মাথা ঠুকতে।এবারো একবস্তা বিরক্তি নিয়ে মেহেক চশমাটা খুলে।
” মেয়ে তো চশমা ছাড়ায় বেশি ভালো লাগছে।তবে আমাদের চশমা ছাড়া বউই বেশি পছন্দ।”
একথা শুনে সৃষ্টি আর তার পরিবারের বাকি সবার মন খারাপ হয়ে যায় তবে মেহেকের তো খুশির শেষ নেয়।
” এ্যাঁ…..উনাদের নাকি চশমা ছাড়া বউ লাগবে কিন্তু নিজেদের ছেলে যে কানা চারচোখ তার কোন খবর নেই।নিজের বেলায় ঠিক আর অন্যদের বেলায় না,হু…।” মনে মনে বলে সবার অগোচরে ভেংচি কাটে মেহেক।
সবাই আবারো নিজেদের মধ্যে কথা বলে আর ঠিক করে ছেলে-মেয়ে দুজন একান্তে কথা বলবে।এটা শুনে মেহেক চট করে দাঁড়িয়ে পড়ে কারণ সে এখান থেকে বের হওয়ারই অপেক্ষা করছিল।সে সোফার পেছন দিক দিয়ে ঘুরে বেরিয়ে আসে কিন্তু ছেলেটা এখনো মাথা নিচু করে বসে রয়েছে।
” কি হলো ধ্রুব যা।” ছেলেটার ফুপি বলে।
” মা যাবো?” ছেলেটা বাচ্চা বাচ্চা ভাবে তার মাকে প্রশ্ন করে।ছেলেটার কথা শুনে মেহেক আর বাকি সবাই চোখ বড় বড় করে তার দিকে তাকিয়ে রয়।
” আসলে ছেলে আমার বড় ভালো,আমাকে খুব মানে।হ্যাঁ বাবা যাও তুমি।” জোরপূর্বক হেসে বলেন উনি।মহিলা পারমিশন দেওয়ার পর ছেলেটা গুটিগুটি পায়ে বেরিয়ে আসে।মেহেক বিরক্ত নিয়ে তাড়াতাড়ি নিজের রুমের দিকে যেতে থাকে আর ছেলেটাও গুটিগুটি পায়ে তার পেছন পেছন আসতে থাকে।
দীর্ঘ পনেরো মিনিট হয়ে গেলো মেহেক আর ছেলেটা রুমে এসেছে তবে তাদের মধ্যে এখনো পর্যন্ত কোন কথা হয়নি।সময় যত যাচ্ছে মেহেকের বিরক্তির সীমা ততো বৃদ্ধি পাচ্ছে।মেহেক আর চুপ করে থাকতে পারছেনা তাই সে বলেই দেয়,
” আপনি কি কিছু বলবেন?”
” কি বলবো?” লজ্জা লজ্জাভাব নিয়ে বলে ছেলেটা।ছেলেটা লজ্জা পাওয়া দেখে মেহেকের বিরক্তিতে কপাল কুচকে যায়।
” হু….কি বলবো।কেন?আমার মাথা বলবি।দেখো দেখো কিভাবে লজ্জা পাচ্ছেন উনি।মনে হচ্ছে উনি মেয়ে আর আমি ওখানে দেখতে এসেছি।হু…..” বিরবির করে বলে মেহেক।
” একটা কথা বলবো?” একদম নিচু স্বরে কথাটা বলে ছেলেটা।
” জ্বি বলুন।আমি শুনে ধন্য হয়।”
” আপনাকে না অনেক সুন্দর লাগছে।” আবারো লজ্জা লজ্জাভাব নিয়ে বলে।
” ও… আমি তো জানতামই না।বাট নট থ্যাংক্স ফর ইউর কমপ্লিমেন্ট।”
” শুনেন আমি যে আপনাকে এটা বলেছি আমার মাকে বলবেন না।ঠিক আছে?”
” কেন বললে কি হয়েছে?”
” আমি যদি জানে আমি এসব বলেছি তাহলে আমাকে খুব বকা দেবে।” বাচ্চা বাচ্চা গলায় বলে ছেলেটা।
” ঢং….মাম্মাস বয়।হু….” বিরবির করে বলে মেহেক।মেহেকের কেন যেন মনে হচ্ছে আসলে ছেলেটা এরকম না।এতো বড় ধামরা ছেলে মোটেও এতো সহজ সরল হওয়ার নয়,তারউপর যে যদি জব করে।মেহেক আর একমুহূর্তও ছেলেটাকে সহ্য করতে পারছেনা।
” আচ্ছা চলুন এবার নিচে যায়।”
মেহেক ছেলেটাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে দরজা খুলে নিচে চলে যায়।মেহেক চলে যেতে ছেলেটা একবার মেহেকের ঘরে চোখ বুলিয়ে নিয়ে সেও নিচে চলে আসে।
খাওয়া-দাওয়া পর্ব শেষ হলে পাত্রপক্ষের সবাই চলে যেতে নেয়।তারা বলে তারা এদের বিয়ের ব্যাপারে ভেবে দেখবে।
” এক্সকিউজ মি।”
সবাই পেছনে ফিরে তাকাই।সবাই এভাবে একসাথে তাকানো দেখে স্পর্শ ঘাবড়ে যায়।সে বোকা বোকা একটা হাসি দিয়ে তাকিয়ে থাকে।সবার অগোচরে সৌন্দর্য স্পর্শকে কনুই দিয়ে ঘুতো দেয়।
” কি হলো আদু কিছু বলবে?”
” আসলে ভাবী আমরা কি একবার ওর মানে ধ্রুব সাথে কথা বলতে পারি?”
” কেন?আমার ভাইপোর সাথে তোমাদের কি কথা?”
” হ্যাঁ আদু কি কথা বলবে তোমরা?”
” আসলে কিছু জরুরি কথা ছিল।” সৌন্দর্য বলে।
” আচ্ছা যাও কথা বলে এসো তোমরা,আমরা অপেক্ষা করছি।” ছেলেটার মা বলে।স্পর্শ আর সৌন্দর্য এটা শোনারই অপেক্ষায় ছিল।তারা দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে একটা ডেভিল হাসি দিয়।তারপর দুজন ধ্রুবকে দু’দিক দিয়ে ধরে ছাদে নিয়ে আসে আর ভেতরে ডুকে দরজা বন্ধ করে দেয়।
” তা বাবাজি তোমার নাম কি?” স্পর্শ প্রশ্ন করে।
” ধ্রু…ব….।”
” ও….আচ্ছা।তা বাচ্চা তুমি কি জানো ধ্রুব নামের অর্থ কি?”
” হুম জানি।”
” তা কি বলোতো?”
” অপ..রিবর্ত…নশী..ল..।”
” বাহ্ ভেরি গুড বয়।তোমাকে এর অর্থ কে বলেছে বাবু?”
” আমার মা বলেছে।”
” ও আচ্ছা তাহলে মাম্মাস বয়।”
” এই শোন তুই বাড়ি গিয়ে বলবি তুই এই বিয়ে করবিনা।বলবি তো মেয়ে পছন্দ হয়নি।” সৌন্দর্য বলে।
” কিন্তু আমার তো পছন্দ হয়েছে।কি সুন্দর উনি।”
অন্য ছেলের মুখে মেহেকের প্রশংসার শুনে সৌন্দর্য তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে।
” স্পর্শ ওকে তুই বোঝা।আমার মাথা কিন্তু গরম হয়ে যাচ্ছে।” দাঁতে দাঁত চেপে বলে সৌন্দর্য।
” শোন ভাই তোর যদি তোর প্রাণটা প্রিয় হয় তাহলে এই বিয়ে করিস না।যদি করিস তাহলে তোর কপালে অনেক দুঃখ আছে।”
” যদি বেশি চালাকি করিস না তাহলে ছাদ থেকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেবো।বুঝেছিস?”
” হুম।” মাথা নাড়িয়ে বলে ধ্রুব।
স্পর্শ আর সৌন্দর্য ধ্রুবকে নিয়ে নিচে নেমে আসে।সৌন্দর্য আর স্পর্শের কথা শুনে বিশেষ করে সৌন্দর্যের রাগী রাগী কথা শুনে ধ্রুব ততক্ষণাত তার মায়ের কানে কানে বলে দেয় সে এই বিয়ে করবেনা কিন্তু না বলার কারণটা বলেনি।তবে মহিলা এখনই সরাসরি কিছু বলেনা,উনি পরে জানাবেন বলে চলে যায়।
রাতে,
স্পর্শ ল্যাপটাপে কিছু করছে এদিকে তার ফোন বারবার বেজেই চলেছে কিন্তু স্পর্শ তা রিসিভ করছেনা।অবশেষে বিরক্ত হয়ে স্পর্শ ফোনটাই অফ করে দেয়।আসলে নাইরা স্পর্শকে ফোন করেছিল কিন্তু স্পর্শের কোন ইচ্ছেই নেই তার সাথে কথা বলার।
কিছুদিন পর,
এরমধ্যেই ধ্রুবের মা ফোন করে বলে দিয়েছেন যে ওনাদের ছেলের নাকি মেয়ে পছন্দ হয়নি,তাই বিয়ে হচ্ছেনা।এই কথা শুনে সৃষ্টি আর তার বর স্বচ্ছর মন খারাপ হয়ে গেলেও মেহেক,সৌন্দর্য আর স্পর্শ ভিষণ খুশি হয় তবে তাদের খুশি হওয়ার কারণ আলাদা আলাদা।
নিজের রুমে বসে টিভি দেখছে মেহেক।হঠাৎ কোথা থেকে রিফা দৌড়ে দৌড়ে মেহেক রুমে আসে।
” বইন আমাকে বাঁচা,না হলে আমি মরে যাবো।”
চলবে……..
চলবে…..