গল্পের নামঃ- #কৃষ্ণচূড়া😍😍
লেখিকাঃ- #konika_islam
part:04
শিশির দৌড় দিতেই আদ্রও শিশিরের পিছু পিছু দৌড়। রুমে যেতেই শিশির দৌড়ে বেডের অন্য পাশে চলে যায়। আদ্র দরজাটা লাগিয়ে দেয় আর বলে
—- কি যেন বলছিলে?? শিশির ঢুক গিলে বলে
—- কই কিছু বলছি?? আদ্র বিছানায় উঠে দাড়ায় আর শিশির দৌড়ে দরজার দিকে যাবে ওমনি আদ্র শিশিরের ওড়না ধরে ফেলে,,, শিশির হাত দিয়ে মুখ ঢেকে বলে
—- Chor do achal jamana kya kahega?? আদ্র ভ্যবাচেকা খেয়ে ওড়না ছেড়ে দিয়ে বলে
—- যাও পড়তে বসো। শিশির বলে
—- আপনি কি আমাকে পড়ানোর জন্য বিয়ে করছেন?
আদ্র বলে
—- বেশি কথা বলবানা,, পড়তে বসো। বসলাম পড়তে দুপুরের একটু আগে পড়া শেষ করে উঠি। পিঠটা ধরে গিয়েছে। বিছানায় হেলান দিয়ে আছি মাথাটা ধরেছে। তখনই উনি বলে
—- ভালো ভাবে শুয়ে পরো আমি মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি,, ঘুম থেকে উঠে খেয়ে নিয়। বিকিলে বের হবো।
আহহহহ,,,, এখন শান্তি লাগছে,, এটাকে না হাসবেন্ড বলে,, এই মুডে থাকতে পারে না সবসময়?? হিটলার একটা। কিন্তু এখন ঘুমাই,, চুপচাপ ঘুমিয়ে পরলাম।
____________
দুপুরে উঠে হাই তুলছি তখনই ওয়াশরুমে থেকে বেড়িয়ে আসে আদ্র,,, গোসল করা,,, চুলে বিন্দু বিন্দু পানি জমে আছে। শার্টটা লেপ্টে আছে ভিজা শরীরের সাথে। হাতা গুলো এখনো কনুই অব্দি উঠায়নি। আহহ ঘায়েল করে ফেলছে। ইশশশ কি কিউট। উনি আমাকে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলে
—- এমন শকুনের মতো তাকিয়ে থাকো কেন?? ব্যাটা খবিশ।কেমন করে,,, বুঝিনা,, এই ভিজা চুলগুলো আমার,, এই ইঁদুরের মতো চোখ গুলোও আমার,, এই অভদ্র বাদার টাও তো আমারও তাও কেন এমন করে?? অদ্রিজা দরজায় নক করে বলে
—- ভাইয়া, ভাবি খেতে আয়। সবারতো খাওয়া হয়ে গেলো। আদ্র বলে
—- তুই যা আমরা আসছি।
খাওয়াদাওয়া শেষ করে রুমে আসতেই দেখি বাইরে ঝুম বৃষ্টি। আহহ আমাকে আর পায়কে,, দৌড়ে ছাঁদে যাচ্ছি। আমাকে এভাবে দৌড়াতে দেখে আদ্র অবাক ছিল কিন্তু কি মনে করে সেও আমার সাথে দৌড়। যদি একবার আমার উদ্দেশ্য বুঝে যায় তাহলে আমার বৃষ্টিতে ভিজা আর হয়েছে। উনি আমাকে বলছে
—- শিশ বৃষ্টিতে ভিজার মতলব থাকলে,,, বাদঁ দাও। জ্বর হবে কালকে কলেজ আছে।
বললেই হলো। আম্মু ভিজতে দিত না এখন সে আসছে। ছাঁদে এসেই হাত প্রসারিত করে বৃষ্টি উপো ভোগ করতে লাগি সে চিলে কোঠা থেকে বলে
—- শিশ অনেক হয়েছে ভিতরে আসো। আমি তার কথায় কান দিলাম না। বাধ্য হয়ে সেই আসে আমার হাত ধরে নিয়ে যেতে চাইলে বলি
—- একটু থাকি না,,, আপনিও থাকেন ভালো লাগবে। কি মনে করে আমার হাত ধরেই আকাশের দিকে তাকিয়ে রইল। মুহূর্তটা আমার জন্য বেস্ট ছিল,,, যদি এখানেই সময়টা থেমে যেত। সময়টা স্মৃতির পাতায় লেখা থাকবে। খুব সুন্দর করে। হঠাৎ করে বিদ্যুৎ চমকায় আর আমি আরো শক্ত করে আকরে ধরি তার হাত। প্রবলবেগ বাতাস বইছে। আমার দিকে তাকিয়ে আদ্র বলে
—- ঝড় শুরু হবে চলো রুমে যাই। আমি তার কথায় পাত্তা না দিয়ে ছাদের দেওয়াল ঘেঁষে বসে পড়ি। সেও আমার সাথে বসে পরে। আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে বলি
—- নতুন ভাবে নতুন আপনাকে চিনছি আমি,,বুঝার চেষ্টায় আছি কিন্তু আপনি তো । আদ্র অন্য কোন দিকে মুখ ফিরিয়ে বলে
—- যেদিন বুঝবে সেদিন কিছু আমাকে বলতে হবে না। হয়তো বুজবে আবার হয়তো না । দেখ শিশ তুমি এখনো বাচ্চা ১৮ বছরও হয়নি। তোমার মনে এখন আবেগের ঝড় বইছে। কিন্তু এখন তোমাকে তোমার ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবতে হবে। বয়সটা তোমার পড়ালেখা করার সংসার করার নয়।আমি রুমে যাচ্ছি তুমিও আসো।
আদ্র চলে গিয়েছে অনেক সময় আগে কিন্তু আমার যেতে ইচ্ছে করছে না ,,, মাঝে মাঝে কেঁপে উঠছি চারপাশের গাছগুলোর সাথে তাল মিলিয়ে ঠান্ডা লাগছে,, তাই বাধ্য হয়ে নিচে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। এতটুকু সময়ে আমি আর আদ্র কেউ কারো সাথে কথা বলিনি,, বিকেল ৪ টা নাগাত বৃষ্টি শেষ। আদ্র আমার দিকে তাকিয়ে বলে
—- বাইরে যাবে না?? আমি চুপচাপ কাবার্ড থেকে কালে রঙের একটা ড্রেস নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যাই। আদ্র এত বেপরোয়া কেন? আমাকে নিয়ে কি সে ভাবে না??? নাকি ভাবতে চায় না!! আমি কি শুধুই তার দায়িত্ব??
আমি বেরহতেই দেখি আদ্র তৈরি। আমাকে রেখেই সে রুম থেকে বেড়িয়ে যায়। ফাজিল,,, সত্যি ফাজিল। আমিও পিছু পিছু গিয়ে গাড়িতে বসি। গাড়ি গিয়ে থামে একটা পার্কে। বৃষ্টি হওয়াতে বেন্ঞ্চ গুলো পানিতে ভিজে একাকার। মানুষও নেই। দুই একজন আছে। আদ্র হাটছে আমিও দুজনেই চুপ। বিরক্ত লাগছে। ভেবেছিলাম হয়তো আমি উনাকে বুঝতে শুরু করেছি। কিন্তু না উনি হচ্ছেন সরল অঙ্কের মতো গরল একটা মানুষ৷ সে শুধু পারেই এই পড়ার টেবিলে বসিয়ে রাখতে। গল্পে কত পরতাম নায়ক নাইকাদের রাত ১২টা বাজে ঘুম থেকে তুলে বসিয়ে রাখে দেখার জন্য আর উনি, উনি তো পারে আমাকে পড়ার জন্য বসিয়ে রাখতে। আচ্ছা উনি আর আমি কি হাসবেন্ড ওয়াইফ নাকি। টিচার আর ছাত্রী? । এবার বিরক্ত হয়ে বলি
—- আমি বাসায় যাবো। আদ্র বলে
—- কেন ভালোইতো লাগছে। আমি রেগে বললাম
—-আমার লাগছে না। আপনি থাকুন আমি যাই।
কি ঘাড়ত্যাড়া কই এসে আমাকে আটকাবে বা আমার পিছু পিছু আসবে তা না সে বসে আছে। মাগরিবের আযান হবে হবে ভাব তাই মাথায় ঘুমটা তুলে নিলাম। একবার পিছনে তাকিয়ে দেখি সে এখনো সেখানেই দাড়িয়ে আছে। থাক তুই তোর বউকে অন্য একজন নিয়ে যাবে যখন ভালে হবে। গাড়ির কাছে যেতেই দেখি কতগুলো ছেলে বসে আছে গাড়ির উপরে আর সিগারেট টানছে। দেখেই মনে হচ্ছে ফালতুর শীর্ষ নেতৃত্বে এরা আছে। আমি ভদ্রতার সাথেই বলি
—– ভাইয়া গাড়ি থেকে নামুন। একটা ছেলে বাঁকা হাসি দিয়ে বলে
—- কেন আপু? বাসায় যাবে? আসো আমরা হেল্প করি কি বলিস তোরা। আমি কিছু বলতে যাবো তখনই আদ্রের কন্ঠ কানে আসে। পিছনে তাকিয়ে দেখি হাতের ঘড়িটা খুলতে খুলতে বলে
—- আমি সহায্য করি তোদের হসপিটালে যেতে?? আমি আদ্রের দিকে এগিয়ে গিয়ে বলি
—- বাদ দিন পিছু সরে আসুন। ঝগড়া করার চেয়ে শান্তিতে চুক্তি করা অনেক ভালো। আদ্র শিশিরের দিকে তাকিয়ে সোজা ছেলে গুলোর কাছে গিয়ে কিছু বলে। ছেলেগুলো চুপচাপ চলে যায়। শিশির অবাক। শিশির ভাবেনি এতো জলদি সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে। শিশির ভাব নিয়ে বলে
—- দেখছেন আমার জন্য এত বড় ঝামেলা টা একমিনিটেই শেষ। তা কি বললেন?? আদ্র গাড়ির দরজা খুলে বলে
—- বলেছি আমি সিআইডি ,,, পালা নয়তো জানে মেরে ইনকাউন্টার করে দিব।
শিশির আদ্রের কথা শুনতেই হাহাহ করে হেসে দেয়। শিশির বলে
—- বাহ বাহ। আপনিতো খুব চাপা মারতে পারেন। আপনার মতো কিউট একটা ছেলে চাপা মারতে পারে বিশ্বাস হয়না। আদ্র আমার কাথা শুনে বলে
—- মানুষকে এতোটাও বিশ্বাস করোনা,, যে সে তোমার বিশ্বাস ভেঙে দিলে তুমি ভেঙে পরবে। আবার বিশ্বাসটা এমনও করোনা যে একজন এসে একটা বললো আর সেটা মেনে নিবে।
এই মানুষটা বরই অদ্ভুত!!! কি বলে কিছুই বুঝি না। আজব পাব্লিক।
……….চলবে…………
কপি করা নিষেধ ❌❌