কৃষ্ণচূড়া পর্ব ৯

গল্পের নামঃ- #কৃষ্ণচূড়া😍😍

লেখিকাঃ- #konika_islam

part:09

কলেজে এসে ইচ্ছে মতো শিশির আড্ডা দিচ্ছে তার বেস্ট ফ্রেন্ড মিমি আর সাথে আছে অদ্রিজা। মিমি বলে

—- তা তুই যে জিজুকে ব্লক করলি তোকে কিছু বলবে না? শিশির চিপস খেতে খেতে বলে

—- তাতে আমার কি আর আমার থাকা না থাকাতে ঐ হিটলারের কিছু যায় আসে না। শুধু আছে পড়া নিয়ে। আচ্ছা তোরাই বল বিয়ে হয়েছে কোথায় আমাকে এইদিক সেইদিক যাবে, হাতে হাত রেখে ঘুরবে। তা না সে আছে পড়া নিয়ে। সারাদিন একটা কল অব্দি দেয় না। সে আমার হাসবেন্ড না টিচার ।

অদ্রিজা বলে

—– চুপ কর। শিশির বলে

—- কেন? কেন? আমি তাকে ভয় পাই??আর আমি যাবো না তোর ভাইয়ার সাথে, থাকবোও না।

অদ্রিজা মাথায় হাত দেয়। আর তখনই কেউ শিশিরকে কোলে তুলে নেয়। শিশির সাথে সাথে আকড়ে ধরে সেই ব্যক্তিকে । শিশির তাকিয়ে দেখে আদ্র। এর জন্যই তখন অদ্রিজা শিশিরকে চুপ করতে বলেছিল।

আদ্র কি মনে করে পিছনে তাকিয়ে অদ্রিজাকে বলে

—– কলেজ শেষে গাড়ি পাঠিয়ে দিব সোজা বাসায় চলে আসবি।

অদ্রিজা মাথা দোলায়। সবাইতো হা হয়ে তাকিয়ে আছে। আর শিশির কৈ মাছের মতো ছটফট করছে।
আদ্র বিরক্ত হয়ে বলে

—- এতো ছটফট কেন করছ? মেরে ফেলব নাকি তোমাকে?

শিশির কোনো কাথাই বলছে না। আদ্র শিশিরকে গাড়িতে বসালে সে নেমে যেতে চাইলে দেয় এক রাম ধমক।

—– এই, চুপচাপ বসে থাকো নয়তো আমার চেয়ে খারাপ কেউ হবে না। ভালোভাবে বললে তো কথা কানে যায় না। আবার হিটলার বলো।

শিশির এইবার কেঁদেই দিয়েছে। আদ্র তা দেখে দুই আঙুল দিয়ে কপাল চেপে ধরে বলে

— তোমাকে কিছু বলাই বেকার। আর কোথায় কেথায় ন্যাকা কান্না করবা না। শিশির বলে

—- আপনি ভালে ছিলেনই কোন দিন? আর My চোখ Is my চোখ, My কান্না Is my কান্না, যা খুশি করব। আপনার কি? আপনিতো পারেন এই বকা দিতে। আর হিটলার গিরি করতে।

আদ্র হাসছে শিশিরের কাহিনি দেখে। মনে হচ্ছে একটা ছোট বাচ্চা চকলেটের জন্যে কান্না করছে আর খেলনার জন নালিশ করছে। আদ্র গাড়ির ডোর লক করে ড্রাইভিং সিটে বসে আর শিশিরের সিট বেল্ট বেঁধে দিয়ে বলে

—- কান্না বন্ধ কর। শিশির কিছু বলে না চুপচাপ। কিছু সময় যেতেই আদ্র বলে

—- কালকে রাতে বল্ক কেন করছ? শিশির কিছু বলে না চুপচাপ বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে। আদ্র তা দেখে বলে

—- কি গো কথা বলবা না? শিশির তাও চুপ। আদ্র মনে মনে বলছে

—- এই পিচ্চি মেয়ের জন্য আদ্র তুই কি থেকে কি হয়ে গিয়েছিস। এখন এই পিচ্চির রাগ কিভাবে ভাঙাতে হবে সেটা ভাব৷ যেই প্লানিং করছিস সেটা কাজে লাগলেই হয়।

____________

অনেক সময় পর একটা পার্কের পাশে গাড়ি থামে। শিশির চার দিকে চোখ বুলাচ্ছে। আদ্র শিশিরকে গাড়িতে থেকে নামতে বলে। শিশির ভেংচি কেটে গাড়ি থেকে নেমে যায়। আদ্র শিশিরের হাত ধরতে আসলে শিশির হাত মুট করে ফেলে। তখনই একটা পান্ডার গেটাপে একটা মেয়ে আসে। আর একটা নীল চিরকুট আর গোলাপ দিয়ে যায় শিশিরের হাতে। সেখানে খুব সুন্দর করে লেখা সরি।

মুহুর্তেই ঠোঁটের কোনে হাসি চলে আসে। পিছনে তাকিয়ে দেখে আদ্র নেই কোথায় গেলো?? আবার সামনে তাকাতেই হঠাৎ করে কেউ শিশিরের চোখ বেধেঁ দেয়। কিন্তু শিশির আদ্রের গায়ের পারফিউম এর ঘ্রাণেই বুঝে যায় এটা আদ্র। সব কেমন চুপচাপ। আর আশেপাশে কাউকে ফিলও করছে না শিশির।

এইরে আমাকে ফেলে আবার চলে যায়নি তো? তাই নিজের চোখের বাঁধন খুলে সামনে তাকিয়ে অবাক। কি দেখছি আমি স্বপ্ন?? আদ্র কিছু ছোট বাচ্চারদের মতো ঘাসে হাটু গেড়ে বসে আছে কানে ধরে। আর সাথে রেয়েছে এক এক এনিমেশনের কস্টিউম পরা অনেক লোক। শিশির এবার ফিক করে হেসে দেয়। আদ্র বুকের বা পাশে হাত দিয়ে বলে

—- হায়।।।। শিশির অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে নেয়। আদ্র উঠে দাড়ায় আর শিশিরের সামনে এসে হাতটা ধরে প্রপোজ স্টাইলে বসে। শিশির শুধু আদ্রকে দেখছে। আদ্র শিশিরের হাতে চুমু খেয়ে বলে

—- জানো তো শিশ কালকের ঐ ঘটনার পর নিজেকে অনেক অপরাধী মনে হচ্ছে। আমার এই ছোট বউটাকে বকে দিয়েছি। তার জন্য সরি গো। আর একটা জিনিস। বলেই নিজের পকেট থেকে একটা ডায়মন্ডের রিং বের করে আর শিশিরের হাতে পরিয়ে দিয়ে বলে

—- আমি কখনো মুখে বলবো না ভালেবাসি। সেটা তোমাকে বুঝে নিতে হবে আমি তোমাকে ভালেবাসি।

শিশির অবাক চোখে তাকিয়ে আছে এটা কি আদেও আদ্র?? আমি চোখ বন্ধ করে ফেললাম। সারা শরীর মৃদু কম্পিত হচ্ছে আমার। ওনারা প্রতিটা কথা আমার মনের ঠিক কতটা গভীরে গিয়ে লেগেছে তা ভাষায় বলা মুসকিল । নিজের চোখ কান অনুভূতি কোনো কিছুকেই বিশ্বাস করতে পারছিনা, আচ্ছা এটা কি কোনো স্বপ্ন? ঘুম ভাঙলেই কি সব শেষ? যদি এমনটা হয় আমি চাই না কখনো এই ঘুম ভাঙুক। নিজের হাজবেন্টের কাছ থেকে এরকম লাভ কনফেশন পাওয়া যেকোন মেয়ের কাছেই আকাশের সেই থালার মতো চাঁদ টা হাতে পাওয়ার মতো। ওনার প্রতিটা শব্দের মধ্যে হারিয়ে যাচ্ছিলাম আমি। আমার এরকম মনে হচ্ছে আমি কোনো স্বপ্নের রাজ্যে আছি।উনি দাড়িয়ে আমার চুলগুলো কানের পিঠে গুজে দিয়ে বললেন,

— ” কী হলো? কিছু বলছো না যে?”

আমি স্হির দৃষ্টিতে তাকালাম ওনার দিকে। আমি কী বলবো? আমার সব কথা গলাতেই ইলিশ মাছের কাটার মতো আটকে গেছে। আমি ভাবতেও পারিনি আজকে এমন কিছু হবে, যদি জানতাম এমন রাগ দেখালে হিটলারটা এমন কিছু করবে তাহলে কত আগেই রাগ দেখাতাম। উনি মুচকি হেসে বললেন,

— ” আচ্ছা কিছু বলতে হবেনা। জাস্ট ওয়েট আ মিনিট।”

কিন্তু এতো সুখ আর সাইলো কই। হঠাৎ করে ধামকা আওয়াজে সব কিছু নিস্তব্ধ হয়ে গেলো!! হাতটা আপনা আপনি পেটে চলে যায় প্রচুর চিন চিন করে ব্যথা করছে। সবাই এইদিক সেইদিক ছুটাছুটি করতে লাগে। আমার হাত দিতেই তরল জাতীয় কিছু অনুভব হয় চোখের সামনে আনতেই দেখি রক্ত। সাদা জামাটা মুহূর্তে ধারণ করছে #কৃষ্ণচূড়া ফুলের সাদা লালা ফুলের পাপড়ি টার মতো। আদ্রের দিকে তাকিয়ে দেখি তার চোখ বেয়ে পানি পরছে নিজেকে সামলাতে না পেরে মাটিতে পরারা আগেই আদ্র আমাকে ধরে ফেলে,, ধীরে ধীরে তার গালে আমার হাতের স্পর্শ করার পর চারদিক কেমন অন্ধকার হয়ে যায় । আচ্ছা এটাইকি ছিল আমাদের শেষ দেখা?

______________

সবই তো ঠিক ছিল । কিন্তু এখন নিজেকে কেমন পাগল পাগল লাগছে আদ্রের। হুশ আসতেই শিশিরকে কোলে তুলে গাড়ির দিকে পা বাড়ায়। আর শিশিরকে ডাকতে লাগে

—- এই শিশ চোখ খুলো। শিশ দেখ এই যে আমি। শিশ?

হসপিটালে সবাই উপস্থিত থাকলেও আদ্রের কোনো আতাপাতা নেই। সবাই শিশিরের জন্য দোয়া করছে। কিন্তু ডক্টর বলেছে শিশিরের অবস্থা অনেক খারাপ। নীল বার বার আদ্রকে কল৷ দিচ্ছে।

__________

অপর দিকে ইচ্ছে মতো করে মারছে আদ্র সেই ব্যক্তিকে। যে গুলিটা করেছিল। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে ৪ ঘন্টার মাঝেই সেই স্নাইপার কে খুজে বের করে ফেলে আদ্র। চোখ মুখে ফুটে উঠেছে ভয়ংকর এক রাগ এক অফিসারের থেকে বন্ধুক নিয়ে সোজা গুলি করে মাথায়,, মুহূর্তেই সেই ব্যক্তি নিজের শেষ নিঃশ্বাস ফেলে । পাশে থাকা ছুড়িটা নিয়ে একটান দিয়ে সেই ব্যক্তির গলা কেটে দেয় আদ্র। এতেও যেন তার শান্তি হলো না। ছুড়িটা সোজা হৃদয় বরাবর ঢুকিয়ে দেয়। অফিসারা শুধু নিরব দর্শক হিসাবে দেখছে। আদ্র বলে

—– সহেল তোর এইসব কাজ করার আগে ভাবা উচিত ছিল। এখন তুই যেই প্রান্তেই থাকিস তোকে জানে না মারা পর্যন্ত আমার শান্তি হবে না।

আর সোজা সেখান থেকে বেড়িয়ে যায় আদ্র।

এতটা হিংস্রতা তার মাঝে শিশিরের সাথে দেখা হওয়ার পর আর দেখা যায়নি ।আজ আবার সেই হিংস্রতায় মত্ত হয়েছে আদ্র। থেমে গেছে সময়। একরম নিভে গেছে নিজের বেঁচে থাকার আলো আদ্রের। সবার সাথে সাথে পেরে উঠলেও কখনোই শিশিরের সাথে হয়ে উঠা হবে না। তবে একদিন শিশিরের মায়া মাখানো রোদের ঝিলিকে ঝলকে উঠবে “কৃষ্ণচূড়া” ।

উঠবে আবার সেই আদ্রের অন্ধকারাচ্ছন্ন চোখে আলোর আশা, আবার হয়তো না । শিশিরের ভালোবাসাময় এক মুঠো রোদের আলো ছড়িয়ে পড়বে আকাশের প্রতিটি কোণায়। দীর্ঘ রজনীর ঘন অন্ধকার কাটিয়ে আলো ফুটবে । ভোর হবে। জন্ম নিবে নতুন এক ভালোসার গল্পের। ভালোবাসায় সেই কৃষ্ণচূড়া ফুলের রঙে রাঙা হবে নতুন রংমহল। সেই দিনটি কি আদেও আসবে?? নাকি অসমাপ্ত গল্প কথায় লেখা হবে আদ্র আর শিশিরের গল্পকথা??

আদ্রের কি পারবে আবার তার ভোরের শিশিরের সাথে ভালেবাসায় মত্ত হতে? হয়তো হ্যা আবার হয়তো না। তা না হয় সময়ই বলে দিবে

চলবে

ভুলত্রুটি ক্ষমার চোখে । আল্লাহ হাফেজ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here