কৃষ্ণচূড়া পর্ব ৫

গল্পের নামঃ- #কৃষ্ণচূড়া😍😍

লেখিকাঃ- #konika_islam

part:05

ঘুম ভাঙতেই নিজেকে আদ্রের বাহুডোর অবদ্ধ অবস্থায় পাই। আমি স্বপ্ন দেখছি নাকি সত্যি??এটা সত্যি ? অহ মাই আল্লাহ। আলহামদুলিল্লাহ তোমার দরবারে লক্ষ কোটি শুকরিয়া। আজ আমার স্বপ্ন সত্যি হয়েছে। এই সব কিছু হয়েছে কালকের ঐ বৃষ্টির জন্য। আজকে মাঝে কোনো শতিন ছিল না…

(কালকের রাতের কথা)

বাসায় ফিরে ছিলাম অনেক আগে শরীরের লোম গুলো বার বার দাড়িয়ে যাচ্ছে। জ্বর আসবে নিশ্চিত। পড়ার টেবিলে বসে আছি পড়তেও আছি। কিন্তু আজ আদ্রকে অন্য রকম লাগছে। চোখ লাল হয়ে আছে। হয়তো বৃষ্টিতে ভিজার কারণে৷ রাত ১২টার দিকে,,, আদ্র আমার দিকে প্রতিদিনের মতো দুধের গ্লাসটা এগিয়ে দেয়। ঠান্ডায় হাত কাপছে। গ্লাসটা নেওয়ার সময় তার হাতের সাথে আমার হাত লাগতেই। সে তাড়াতাড়ি গ্লাসটা টেবিলে রেখে আমার মাথায় হাত দেয়। এতটা সময় জ্বর চলেও এসেছে। আদ্র রেগে বলে

—- আগেই বলেছিলাম বৃষ্টিতে ভিজো না। সব পড়া ফাঁকি দেওয়ার ধান্দা।

মনতো চাচ্ছে ফাজিলটার মাথা ফাটিয়ে দেই। হুট করে আমাকে অবাক করে দিয়ে কোলে তুলে নেয় আদ্র। আমি স্বপ্ন দেখছি নাকি বাস্তব?? একটা চিমটি কাটিতো। কি ভাবছো তোমরা নিজেকে কাটবো?? নো নাক্কো,, নেভার আমার মাহন পাতি দেব কোন কাজে আসবে? দিলাম হাতে চিমটি কেটে আদ্র আমার দিকে তাকাতেই গলা পেচিয়ে অযথা গালে একটা কিস করে বসেছিলাম। ইশশশশশশ।

কথাটা মনে পরতেই লজ্জায় নিজের হাত দিয়ে নিজের মুখ ঢাকে শিশির। কিন্তু পরক্ষণেই মনে পরে কালকে রাতের সেই ভয়ংকর কথা। আর তাড়াতাড়ি করে উঠে বসে। মাথাটা ভাড়ি ভাড়ি লাগছে। শিশিরের এইভাবে উঠাতে আদ্রও জেগে যায়।

★★★★★

ঘামের উপর ঘাম দিচ্ছে। সেটা কি স্বপ্ন ছিল নাকি বাস্তব। আদ্র কে শিশির বলে

—– আপনি,, আপনি এই লোক গুলোকে!!! আদ্র রেগে দুই ভ্রু-কুচকে বলে

—- আমি কি?!! পাগল হয়েগেছে??? জ্বর এখনো কমেনি???? বলেই শিশিরের মাথায় হাত দেয়। এখনো জ্বর আছে হালকা হালকা। শিশির জ্বি দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বলে

—– আমার মনে আছে শেষ রাতের দিকে আমার ঘুম ভেঙে যায় ,, পানি তেষ্টায়,,পানি না থাকায় আমি নিচে ড্রয়িং রুমে যাচ্ছিলাম। তখনো বাইরে বৃষ্টি,,আর।

আদ্র তখন আমার দিকে পানি এগিয়ে দেয় আর বলে

—– নাও এটা খাও। কালকে রাতে তাহলে এই দেখে ভয় পেয়ে আমার সাথে চেপে শুয়ে ছিলে?? আমি কালকে কোথাও যায়নি। জ্বরের মাঝে কতো কিছু বলপছ ধারণা নেই। শিশির পানির গ্লাসটা হাতে নিয়ে বলে

—- তার মানে ঐটা আমার স্বপ্ন ছিল?! আদ্র বলে

—- দেখ আমার ভালো লাগছে না রাতে এভাবেই ঘুমাতে পারিনি জ্বালিয়ে দিয়েছ। শিশির ভ্রু উচু করে বলে

—- আমি আবার কি করলাম!! আদ্র বলতে লাগে

—- তোমাকে বিছানায় শুয়িয়ে দিতেই তুমি আমার হাত আকরে ধর। কি সব বলছিলে,, আমি ফাজিল!! হিটলার!! হাসবেন্ড নামক টিচার। আর যখন হাতে ঔষধ ধরিয়ে দিলাম। কি বলেছ জানো?? না বাবু আমি এগুলো খাবো না। তুমি একটা কিস দাও কিস খাবো। তুমি সারাদিন এইসব বলে বেড়াও। মানে বলি কি মাথায় এইসবই ঘুরে। আর হ্যা তুমি আমার কাছে একটা জিনিস পাও না। বলেই শিশিরের হাতে চিমটি কাটে ।।।। শিশির

—– আহহহ আম্মুই। আদ্র হাই তুলতে তুলতে বললো

—- আমি ঘুমাবো তুমিও ঘুমাও। আজকে ছুটি। বলেই শিশিরকে শুয়ি দিয়ে নিজে শিশিরকে জড়িয়ে ধর শুয়ে পরে৷ শিশিরতো অবাক!! আদ্রের মথায় আসতেই যে সে কি করেছে। তাড়াতাড়ি শিশিরকে তার বালিসে শুয়িয়ে দেয় আর অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে নেয়। শিশির নাক ফুলিয়ে তাকিয়ে আছে আদ্রের দিকে। হঠাৎ করেই আবার কোলবালিশটা মাঝে রেখে দেয়।

________°_°

মানে কি?? মনতো চাচ্ছে এই কোলবালিশ সহ এই আদ্র নাম অভদ্র ফাজিল বাদর টাকে লাথি মারে বিছানা থেকে ফেলে দেই। আমিও অন্য দিকে ফিরে কিছু সময় শুয়ে ছিলাম। ঘুম আসছিল না তাই ফ্রশ হয়ে বারান্দায় চলে যাই। নিচে তাকাতেই দেখি নীল আর অদ্রিজা কিছু নিয়ে ঝগড়া করছে। আমিও নিচে গেলাম। নীল বলছে

—- তুই অদ্রিজা না ফাটা কলিজা। শুধু পারিস টিং টিং করতে। অদ্রিজা শিশিরকে দেখে বলে

—- শিশির তুই কিছু বল নীলকে। আমি অদ্রিজার সাইড নিয়ে বলি

—- নীল বীল তুমি একটা আহাম্মক চিল,,,। নীল ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে

—- কি বললা শুনতে পায়নি। অদ্রিজা বলে

—- চিলের কান আছে যে শুনবে। এর মানে প্রমাণিত তুমি চিল। নীল বলে

— তবে রে। তখনই অদ্রিজা দৌড়।

আমি একা একা কি করব? তাই আমি বাসার ভিতরে চলে আসি তখনই সামনে তাকাতেই থমকে যাই। ছোট একটা কাচের টুকরো তাতে রক্ত লাগা। তখনই একটা সার্ভেন্ট আসে হাতে বেন্ডেজ আমাকে বলে

—- সরি ম্যাম একটু আগেই সুপিছ ভেঙে গিয়েছে। আমিও কথা বারালাম না রুমে চলে আসি।

———

আজ নাহয় আমার কলেজ যায়নি উনি কি ল্যাবে যাবে না। দাঁড়াও দেখাচ্ছি মজা। এসিটা বন্ধ করে
ব্ল্যাঙ্কেটা দিয়ে তাকে ঢেকে দিলাম। বেশি না দুই মিনিট যেতেই তার মুচড়ামুচড়ি শুরু। গায়ের ব্ল্যাঙ্কেটা ছুড়ে মারলে আমি খুব সাবধানে যত্নে সেটা তার গায়ে দিয়ে দেই। কিন্তু এবার সে আমার হাত ধরে ফেলে। এইরে হিটলারটা জেগে গিয়েছে,,, এখন আমাকে হিট দিয়ে মুরগির মতো গ্রিল চিকেন বানিয়ে খাবে । তার দিকে তাকাতেই চোখ ছোট ছোট করে বলে।

—- একটু সুস্থ কি হয়েছ,,, দুষ্টামি শুরু। তখনই আমি বলি

—– অদ্রিজা তুই!! আর আদ্র সাথে সাথে আমার হাত ছেড়ে দেয়। আমাকে আর পায় কে দিলাম এক দৌড়। আদ্র আমাকে বলে

—- একবার হাতে পাই,,, আপেল জুস বানিয়ে খাবো Without সুগার।

আমি যেতে যেতে বললাম

—- আপনি যেমন সবুজ তিতা করল্লা ঠিক তিতা আপনাকে ঐ তিতা করল্লার জুস খাওয়াবো With সুগার। কারণ সব ভালো জিনিস সবাই হজম করতে পারে না।

__________..

নিচে গিয়ে সোজা ড্রয়িং রুমে বসে পরলাম অদ্রিজার সাথে বাইরে প্রবল ঝড়। এর জন্য আজ কলেজ যাওয়া হবে না। টিভিতে নিউজ দেখছে। আমি পাশে থাকা ম্যাগাজিন টা নিয়ে পড়ছি। আদ্রের আর নীলের বাবা নেই শুনেছি বছর খানিক আগেই নাকি তারা মারা গিয়েছেন একটা কার এক্সিডেন্ট,, ব্যবসার সুবাদে হিমছড়ি থেকে ঢাকা ফিরছিল তারা। কিন্তু মাঝেই এমন অঘটন৷ আদ্র নিচে নামছে৷ একটা ডার্ক গ্রিন শার্ট,, হুয়াইট পেন্ট। ঘাড় মুভ করতে করতে নিচে নামছে তা দেখে নীল বলে

—– কিরে কি হয়েছে তোর? আদ্র শিশিরের দিকে তাকিয়ে বলে

—- আর বলিস না রাতে একটা পেত্নী ঘাড়মটকাতে এসেছিল,,, যা ভয়ানক দেখতে। শিশির ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে অদ্রিজা বলে

—- কেমন দেখতে ভাইয়া বলনা বলনা৷ আদ্র শিশিরের পাশে সিঙ্গেল সোফাটায় বসতে বসতে বলে

—– লম্বা কালো চুল ইয়া বড় বড় দাঁত,,,, চোখ গুলো ঐ ডাইনোসর এর মতো বড়। শিশির ম্যাগাজিনটা রেখে বলে।।

—- ও আপনাকে দেখে ক্রাশ খেয়েছে। কারণ কোনো ভালো সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ বা কোনো মানুষই আপনাকে লাইক করলে,,, ২ দিনে তার অবস্থা খারাপ। অদ্রিজা আর নীল হাসছে। আদ্র নিজের ফোনটা বের করতে করতে বলে

—- এর মানে তুমি মানুষ না,, তুমি ও পত্নী নয়তো শাঁকচুন্নি?? কারণ তুমিই বললা আমাকে কোনো সুস্থ মানুষ লাইক করবে না এর মানে তুমি অসুস্থ, ভূত নয়তো ভিনগ্রহের প্রাণী। কারণ তুমি আমাকে বিয়ে করেছ৷

শিশির শুধু তাকিয়ে আছে আদ্রের মুখের দিকে মানুষটা কিভাবে তাকে তার নিজের কথার জালে আটকে দিল৷ সত্যি একটা মাস্টার মাইন্ড। মাইন্ডে কি চলে তা বলার বাইরে।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here