কৃষ্ণচূড়া পর্ব ৬

গল্পের নামঃ- #কৃষ্ণচূড়া😍😍

লেখিকাঃ- #konika_islam

part:06

শিশির শুধু তাকিয়ে আছে আদ্রের মুখের দিকে মানুষটা কিভাবে তাকে তার নিজের কথার জালে আটকে দিল৷ সত্যি একটা মাস্টার মাইন্ড। মাইন্ডে কি চলে তা বলার বাইরে। তখনই নিউজ চ্যানেলে আসে,,, পর পর তিনটা খুনের খবর ডেড-বডি গুলোকে এতো গুলো পার্ট করা হয়েছে যা গনার বাইরে।

শিশিরতো শুনেই ভয়ে শেষ। খবরের তথ্য অনুসারে খুনটা করেছে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কিছু লোকে-রা।

অদ্রিজা চ্যানেল পাল্টাতে চাইলে আদ্র হাতের ইশারায় বারণ করে। খুব মনযোগ সহ খবরটা শুনে উঠে দাড়ায় আর বলে

—– আমি ল্যাবে যাচ্ছি কাজ আছে। আসতে বিকেল কি দুপুর হবে মাকে বলিস।

শিশির শুধু তাকিয়ে দেখছে আদ্রকে মানুষটার মাঝে রহস্য দিয়ে ভরা শুধু আদ্র না এই বাড়ির প্রতিটা দেওয়ালই এক-একটা রহস্যর ইট দিয়ে তৈরি।

_____________

বিকেলে শাওয়ার নিয়ে বের হতেই দেখি আদ্র,,,বিছানয় বসে আছে। আমাকে দেখে বলে

—– ২ঘন্টা হবে,,, এতই যদি লেট হয় তাহলে কালকে থেকে ওয়াশরুমে ঢুকার সময় বই, খাতা,কলম, খাবার ফোন বালিশ সব নিয়ে যাবে।

পাগল নাকি?? ওয়াশরুমে কেউ এইসব নিয়ে যায় । ইচ্ছে করে ভিজা তোয়ালেটা ছুড়ে মারলাম আদ্রের দিকে। কিন্তু সে সেটা ধরে ফেলে। উনি তোয়ালেটা হাতে নিয়ে বলে

—- এইযে যে বেয়াদবি গুলো করো। এই এপ টা তোমার মাঝে ইন্সটল কে করেছে?? শিশির লম্বা একটা হাসি দিয়ে বলে

—- এই এপ টা আপনাকে দেখলেই ইন্সটল + আপডেট সব একসাথে হয়। কারণ আপনাকে দেখলেই। আদ্র বলে

—- আমাকে দেখলে কি?? আমিও ফাজিল কম ধীর পায়ে আদ্রের দিকে এগিয়ে যাই। আমাকে আগাতে দেখে আদ্র একটু নড়েচড়ে বসে। হাসি পাচ্ছে কিন্তু এখন দরকার একটা কিলার হাসি। ব্যাঙের মতো হাসলে চলবে না। আমি আদ্রের সামনে গিয়ে তার শার্টের কর্লার ধরে নিজের কাছে নিয়ে আসি আর বলি

—– আপনাকে দেখলে। আদ্র আমার দিকে তাকিয়ে আছে। কর্লারটা ছেড়ে গলাটা হালকা চেপে ধরে বলি

—- খুন করে ফেলতে ইচ্ছে করে খুন। দুনিয়া থেকে স্যার নামক একটা হাসবেন্ড বিদায় হবে। হঠাৎ করে সে আমার হাত ধরে ভিজা চুল গুলো কানের পিঠে গুজে দেয়। আল্লাহ 😱😱 কি রোমান্টিক ব্যাপার। সে বলে

—- তোমাকে দেখলে আমার। আমি মাথা নিচু করে বলি

—- কি? আদ্র বলে

—- শুধু পড়াতে ইচ্ছে করে।

কেমনডা লাগে। মনতো চাচ্ছে সত্যি এখন গলাটিপে মেরে বালি চাপা দিয়ে দেই। আদ্রের চুলগুলো টেনে দিলাম ইচ্ছামতো। বাদরটা বলে

—– আহহহ শান্তি লাগছে। মাথাটা ধরেছিল খুব।

ধ্যাত,, কিছু না বলেই উঠে নিচে চলে গেলাম। এই মানুষটার সাথে থাকলে একদিন আমিও এমন বাদর হয়ে যাবো। ইমশোন ছাড়া মানুষ।

_________

নিচে নামতেই গিয়ে বসে পরলাম ডাইনিং টেবিলে। খুদা লাগছে ভাই আমার। নতুন বউ আমি। আমাকে খেতে দিবে,, জিজ্ঞেস করবে মা আরেকটু দিব?? এটা খাও ঐটা খাও। তা না সবাই যে যার মতো ব্যস্ত। এইসব ভাছিল তখনই অদ্রিজা আসে আইসক্রিমের বক্স নিয়ে। শিশির সেটা দেখে বক্সটা নিজের কাছে নিয়ে নেয় আর সামনে থেকে একটা চামচ নিয়ে খেতে লাগে। অদ্রিজা অবাক আর এইসব উপর থেকে দেখে হাসছে আদ্র। মেয়েটা সত্যি একটা বাচ্চা।

অদ্রিজা বলে

—- এটা কিন্তু ঠিকনা শিশির আমাকেও দে। শিশির অদ্রিজার দিকে তাকিয়ে আইসক্রিমের বক্সটা নিয়ে চেয়ার ঘুরিয়ে বসে। তখনই আদ্র নিচে নামে। আদ্রকে দেখে অদ্রিজা বলে

—- ভাইয়া তোর বউ কিন্তু কাজটা ঠিক করছে না আমাকে একটু আইসক্রিম দিচ্ছে না। আদ্র শিশিরের হাত থেকে বক্সটা নিয়ে বলে

—– কাল রাতে জ্বরে নিজেতো কষ্ট করেছ আমাকেও করতে হয়েছে। আর এখন আইসক্রিম খাওয়ার সময়?? একটু পর লান্ঞ্চ করবে। আর অদ্রি (অদ্রিজা) নীল এখনো ফিরেনি?

অদ্রিজা বলে

— নাহ,,,, আদ্র আর কথা বারায় না।

_____________

বিকেলের সময় অদ্রিরজা আর শিশির ছাঁদে এসেছে।
শিশির বলে

— অদ্রি,, আমকে তোর ভাই মানে আদ্রের ব্যাপারে কিছু বল। অদ্রিজা সোজা গিয়ে দোলনায় বসে পরে আর বলে

—– ভাইয়া কখনোই এমন গম্ভীর ছিলনা। খুবই হাসি খুশি থাকতো,,, কিন্তু যখন ভাইয়া ২০ বছরে পা রাখবে তখন কার এক্সিডেন্ট বাবা মারা যায়। আমার এখনো মনে আছে ঐদিনের পর ভাইয়া একদম মৃত ফুলের মতো মুড়িয়ে যায়। জানিসতো
ভাইয়ার যখন ২৩ বছর বয়স সে প্রথম কোনো এক মেয়ের প্রেমে পরে। কিন্তু মেয়েটা ছিল খুবই ছোট মানে আমার বয়সী। ১৩/১৪ বছর। ভাইয়া মেয়েটাকে দেখেছিল আমার জেএসসি পরীক্ষার সময়। সেদিন ছিল লাস্ট পরীক্ষা। সেদিনই ভাইয়া মেয়েটাকে দেখে। তার আম্মুকে নাকি খুব বড় বড় কথা বলছিল সে গোল্ডেন পাবে এইটা ঐটা। আমিও না এই কথা জানতাম না। একদিন হঠাৎ করে ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করি। আর তুইতো জানিসই ভাইয়া আমার থেকে কিছু লুকায় না।

শিশির বলে

—– এখন জানিস কি ইচ্ছে করছে? অদ্রিজা বলে

—-কি?? শিশির লম্বা হাসি দিয়ে বলে

—- আনারস আর দুধ দিয়ে তোর জন্য আনারসের লাচ্ছি বানাই,, নয়তো এই ছাঁদ থেকে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দেই। তোকে এগুলো বলতে বলেছি?? আমি বলতে বলেছি তার কি ভালো লাগে না লাগে সেগুলো বলতে।

অদ্রিজা ঢুক গিলে বলে

—- এত রাগছিস কেন? তোকে বলে দিলাম ভালো হলো না?? ভাইয়া পছন্দের রঙ,, সাদা,, পছন্দের খাবার বিরিয়ানি, আর সবচেয়ে পছন্দের যদি কিছু বলিস সেটা হচ্ছে তার ল্যাব। বাবা মারা যাবার পর,,,, ল্যাব কেই ভাইয়া নিজের বাসা বানিয়ে নিয়েছিল।

শিশির হালকা ভেবে বলে

—–অহহহহ,, কিন্তু তোদের মানে আমদের বিজনেসের কি হলো? অদ্রিজা বলে

—- সেটা নীল সামলাচ্ছে। ভাইয়ার এইসবে ইন্টারেস্ট নেই। সে ব্যস্ত তার ল্যাব নিয়ে। জানিসতো ভাইয়া একটু গম্ভীর কিন্তু তোকে খুব পছন্দ করে।

শিশির বলে

—– ঘোড়ার ডিম দেখেছিস কখনো? অদ্রিজা ভ্রু কুচকে বলে

—- মানে/? পাগল নাকি,,, এটাও আছে? শিশির বলে

—- ঠিক তেমনই,,, তোর ভাই আমাকে লাইক করে না শুধু নিজের দায়িত্ব পালন করছে। তার দুইটা বউ আছে অলরেডি

অদ্রিজা বলে

—- ধূর বাজে বকিস না। বউ কোথায় থেকে আসবে?? শিশির বাচ্চাদের মতো ফেস করে বলে

—– জানবি কি করে?? তোর বড় ভাবি হচ্ছে তার লেপটপ। আর মেজু কোলবালিশ আর তিন নম্বরটা আমি। মাঝে মাঝে মনে হয় আমি উড়ে এসে জুড়ে বসেছি। তাদের সুখের সংসারে আগুন লাগিয়েছি।

অদ্রিজা হাহাহহাহ করে হাসছে। শিশির বলে

—- হাসবি না নয়তো কাচা মরিচ খায়িয়ে মরুভূমির মাঝে রেখে আসবো। একটু পরেই সন্ধ্যা হবে। তখন বসো বই নিয়ে। এই সব সহ্য হয় বল??

পিছন থেকে আদ্র বলে

—– তা কি সহ্য হয় শুনি?? আর পাঁচটা মেয়ের মতো বরের গোলামী? শাশুড়ী কথা? ননদের সাথে ঝগড়া??

অদ্রিজা বলে

—- আহহ ভাইয়া শিশির সেটা বলতে চায়নি। আদ্র বলে

—- আমি শিশের সাথে কথা বলছি তোর সাথে না। আর শিশ শুনো তোমাকে ফুল ফ্রিডম দেওয়া হচ্ছে। তুমি তোমার স্বপ্ন পূরন করার সুযোগ পাচ্ছো… আর কয়টা মেয়ে পায় এইসব?? নিজেকে কি মনে কর? অনেক বড় হয়েগিয়েছ?? তোমার বয়সই বা কত যে তুমি সংসার করতে চাও।
যেহেতু তুমি আমাদের পরিবারের বউ তো তোমাকে এই কলেজ অব্দি পড়লে হবে না৷ তোমার গ্রাজুয়েশন শেষ করতে হবে। তারপর যা ইচ্ছে করতে পারো৷

বলেই নিচে চলে যায় আদ্র কথা গুলো রুড হয়েই বলেছে। যার কারণে শিশির না পেরে কেঁদে দেয়। অদ্রিজা কি বলবে। সে শিশিরকে কিছু বলতে চাইলে শিশির বলে

—– তুই যা আমাকে একা থাকতে দে।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here