#কৃষ্ণবেণী
#পর্ব_১৮
#নন্দিনী_নীলা
বকুল এবারেও কিছুই বলতে পারল না তৃষ্ণাকে যেই মুহূর্তে বকুল বলতে যাবে সবকিছু সাহস করে। তখনি জায়ান আসে আর দুই বোনের সামনে দাঁড়িয়ে আদেশ করে দুজনকেই রেডি হয়ে নিতে কোথাও নিয়ে যাবে বেড়াতে।
তৃষ্ণা তো অবাক সুরে জায়ানকে প্রশ্ন করে,”রেডি হবো কেন কোথায় যাব?”
“বললেই কি তুমি চিনবে? তোমাদের একটা জায়গায় বেড়াতে নিয়ে যাব। আমার একমাত্র শালিকা বলে কথা। সে চলে যাবে কাল দিন পরেই। আসার পরে রুমে চার দেয়ালেই তো বন্দী হয়ে রইল। এজন্যই তোমাদের দুজনকে ঘুরতে নিয়ে যাব এবার রেডি হও।”
বকুল খুশিতে লাফিয়ে উঠল। খুশির খবরে পেয়ে। তৃষ্ণাকে জানানোর কথা বেমালুম ভুলে গেল। তৃষ্ণা নিজেও এসব একপাশে ফেলে বোন কে রেডি হতে বলে নিজেও শাড়ি বের করতে আলমারির কাছে গেল। খুব খুশি লাগছে ওর। প্রথম জায়ানের সাথে ঘুরতে বের হবে। খুশিতে মনটা বাকবাকুম করছে। তৃষ্ণা কোন শাড়ি পরে যাবে সেসব পছন্দ করছে।
জায়ান আবার ফিরে এলো হাতে দুইটা শপিং ব্যাগ নিয়ে।
“তৃষ্ণা এখানে বকুলের জন্য ড্রেস আছে। আর এইটায় তোমার জন্য শাড়ি আছে। এটাই পরিও।”
তৃষ্ণা জায়ান কে দেখে আলমারির সামনে থেকে সরে জায়ানের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। বিছানার উপর জায়ান ব্যাগ দুটো রেখেছে তৃষ্ণা শপিং ব্যাগ খুলে ড্রেস বের করল।
বকুলের জন্য দুইটা কামিজ আনছে। বকুল উঁকি মেরে দূর থেকে দেখছে। খুশিতে ওর চোখ বড়ো বড়ো হয়ে আছে। জড়িয়ে ধরার কান্ডের পর থেকে বকুল জায়ানের সাথে কথা বলতেও লজ্জা পেতো কিন্তু আজ তো বুঝতে পেরেছি দুলাভাই ছিল না লোকটা তাই ও জায়ানের উপর থেকে সমস্ত লজ্জা চলে গেছে। ও খুশি হয়ে এগিয়ে একটা কামিজ সেট হাতে নিয়ে বলল,” দুলাভাই কি সুন্দর জামা আনছেন। আপনেরে অনেক ধন্যবাদ।”
তৃষ্ণা জায়ানের আনা কালো শাড়িটার দিকে অবাক হয়ে চেয়ে আছে খুব সুন্দর শাড়ি। ঝিকিমিকি করছে। তৃষ্ণা কাঁধে ধরে জায়ানকে বলল,,”এটা নতুন কিনেছেন?”
“হ্যাঁ বকুলের জন্য কেনাকাটা করতে গিয়েছিলাম তখন শাড়িটা একপলক দেখেই মনে হয়েছে এটা আমার বউকে পরলে খুবই সুন্দর লাগবে।”
তৃষ্ণা লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে ফেলল।
” শাড়িটা ঝটপট পরে ফেলো। আর চুলটা অবশ্যই বাঁধবে। খোলা রাখবে না। আমি চাইনা আমার বউয়ের চুল অন্য মানুষ দেখুক। এই চুল দেখার এবং ছোঁয়ার অধিকার শুধু আমার।”
জায়ান একটু থেমে আবার বলল,,” তোমরা রেডি হও দ্রুত। আমি বাইরে অপেক্ষা করছি।”
বকুলের জন্য একটা সবুজ কামিজ ও একটা গোলাপি কামিজ আনা হয়েছে। বকুল গোলাপি কামিজ পরে এলো। তৃষ্ণার সামনে এসে বলল,” বুবু দেখ তো আমারে কেমন লাগতেছে!”
” খুব সুন্দর লাগছে। আয় তো আমার কুচি ধর।”
বকুল বোনের সামনে বসে পরল কুচি ধরার জন্য। ” “বুবু কালো শাড়িতে তোমারে পরীর মতো দেখা যাইতাছে।”
তৃষ্ণা মিষ্টি করে হাসলো।
কসমেটিকস এর অভাব নাই তৃষ্ণার সামনে কিন্তু ও এতো সাজতে পারে নাকি? জীবনে এতো মেকাপ দেখেছে নাকি। ও কিছুই বুঝতে না পেরে লিয়াকে ডেকে আনল। লিয়া এসে তৃষ্ণাকে বলল,” ম্যাম আপনাকে অনেক কিউট লাগছে। কালো শাড়িতে অপূর্ব লাগছে। আসেন আমি সাজিয়ে দেই আপনাকে।”
” আচ্ছা।”
লিয়া খুব যত্ন করে সাজিয়ে দিলো তৃষ্ণা কে। তৃষ্ণা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বলল,” আমি তো নিজেরে চিনতেই পারছি না। বকুল রেও একটু সাজাই দেন!”
” আচ্ছা দেব আপনি একটু কাছে আসেন ম্যাচিং করে নেকলেস পরিয়ে দেই।”
তৃষ্ণা হাতে কালো চুড়ি পরেছিল শুধু এবার লিয়া গলায় কালো পাথরের নেকলেস পরিয়ে দিল।
চুল বেণী করে নিচে থেকে পেঁচিয়ে পিঠ পর্যন্ত এনে রাবার দিলো। এখন চুল ছোট লাগছে।
দুই বোন একই স্টাইলে চুল বেঁধেছে। লিয়া বলল চুল খোলা রাখলে তৃষ্ণা কে অনেক সুন্দর লাগত। কিন্তু তৃষ্ণা জায়ানের বারণ শুনে আর রাজি হয়নি।
মাঝখানে তৃষ্ণা বসেছে। এক পাশে জায়ান এক পাশে বকুল। দুই বোন বড়ো বড়ো চোখ করে বাইরে তাকিয়ে আছে। জানালা খোলা এজন্য হুড়মুড় করে বাতাস ঢুকছে। আর দুই বোন শহরের বড়ো বড়ো দালান কোঠা শহরের মানুষ জনের চলাচল দেখছে ঢাকা শহরের বিখ্যাত জ্যাম এ বসে। জায়ান চোখে কালো সানগ্লাস পরা। গায়ে কালো সুট বুড পরে সাহেবি স্টাইলে একপাশে বসে আছে নিরব হয়ে।
“বুবু সব গাড়ি একলগে থাইমা আছে কেমন করে?”
তৃষ্ণা নিজেও বোকার মতো গাড়ির দিকে তাকিয়ে আছে ভিন্ন ধরনের গাড়ির মেলা বসেছে যেন। সব গাড়ি সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। হঠাৎ করেই গাড়ি একই সঙ্গে ছুট লাগালো চলতে শুরু করলো দুই বোন চোখ ভরা বিষ্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছে।
তৃষ্ণা জায়ানের দিকে ঘুরে বলল,”এটা কি হলো? সব গাড়ি একসঙ্গে থেমে রইল আবার একসাথে চলতে শুরু করল ক্যান?”
“এটা হচ্ছে ট্র্যাফিক জ্যাম। শহরে নিত্যদিনের সঙ্গী।”
” আমি কিছু বুঝি নাই।”
মুখটা ভোঁতা করে বলল তৃষ্ণা। জায়ান তৃষ্ণার নাক টেনে দিয়ে বলল,”ওরে আমার অবুঝ বউরে।”
ঢাকায় সবচেয়ে জনপ্রিয় পার্কে নিয়ে এসেছে জায়ান তৃষ্ণা আর বকুলকে। দুইবোন প্রথম ঢাকা শহরের কোথাও বেড়াতে এসেছে খুশিতে দুই বোনই আত্মহারা। গাড়ি থেকে নেমে পার্কের ভেতরে ঢুকলো তিনজন। তিনজন ঢুকে চারজন হয়ে গেল কারণ পার্কের ভেতরেই ছিল জোভান। জায়ান জোভানকে বলল বকুল কে নিয়ে পার্কটা ঘুরতে।
“ওকে ভাই। নো টেনশন বকুলের সাথে আমি আছি। তুমি ভাবির সাথে সময় কাটাও।”
দুজনের কথোপকথন শুনে বকুল বুঝে গেছে ওকে এখন বাকি সময়টা এই জোভানের সাথে কাটাতে হবে। রাগে ও জোভানের দিকে একবার তাকিয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইল।
জায়ান তৃষ্ণার হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে এগিয়ে গেল।
” বকুল আমাদের সাথে আসতো।”
“আমার ভাই ওকে দেখেই রাখবে। প্রথমবার বউকে নিয়ে ঘুরতে আসলাম সেখানে শালি থেকে নষ্ট করবে সেটা তো হতে পারে না। আমি একটু আমার বউয়ের সাথে একা টাইম পাস করতে চাই।”
তৃষ্ণা ঘাড় ঘুরিয়ে পিছনে তাকিয়ে দেখল বকুল সেখানেই দাঁড়িয়ে আছে। জোভান সামনে দাঁড়িয়ে কিছু বলছে।
“তোমার যদি বোনকে ছাড়া শুধু আমার সাথে যেতে খারাপ লাগে যাও নিয়ে আসো বোনকে।”
জায়ান তৃষ্ণার হাত ছেড়ে দিল। তৃষ্ণা হতভম্ব হয়ে জায়ানের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। কালো সানগ্লাসের আড়ালে ঢাকা পরে আছে জায়ানের চোখ। তৃষ্ণা ঢোক গিলে নিজেই জায়ানের হাত ধরে বলল,” আমার আপনার সাথেই খুব ভালো লাগছে। চলুন।”
জায়ানের ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটলো।
“মন রাখতে ভালোই কথা বলতে পারো।”
জায়ান জোভান কে কল করে ওদের সাথেই আসতে বলল।
বকুল জোভানের সাথে কোথাও যাবে না তাই শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। আর জোভান বকুলের রাগ কমানোর জন্য অনেক কথাই বলছিল আর সাথে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করছিল। তখনই জায়ান কল করে তাদের সাথে যেতে বলে এটা শুনে বকুল আগে আগেই সেদিকে হাঁটতে লাগে।
জোভান একটা ফুল বিক্রেতা কে দেখে তার কাছ থেকে একটা গোলাপ কিনে বকুলের পেছনে দৌড় লাগাল। জায়ান আর তৃষ্ণা এগিয়ে আছে। জোভান বকুলের সামনে গিয়ে ফুলটা ওকে দিল। বকুল ফুল নিয়ে ফেলে দিল।
জোভান অবাক হয়ে ফুলের দিকে তাকিয়ে বলল,” এটা কি করলে বকুল? এতো সুন্দর ফুলটা ফেলে দিলে?”
” একটুও সুন্দর না। গোলাপ ফুল আমার অপছন্দ।”
” এ্যা বলো কি? এতো সুন্দর ফুল তোমার পছন্দ নয়। সবার তো গোলাপ ফুল পছন্দ তুমি দেখি উল্টো।”
” হ আমি উল্টো। এবার আমারে জ্বালানো বাদ দেন।”
” আমি তোমাকে জ্বালাচ্ছি কোথায়?”
” আপনে আমারে জ্বালাচ্ছেন না?”
” না তো।”
বকুল চোখ ছোটো ছোটো করে বলল,” আপনে দেহি ভারি মিছা কথা কন।”
” বকুল আই এ্যাম রিয়েলি ভেরি সরি।”
” বুবু রা কই?”
” আগে আমাকে ক্ষমা করো তারপর নিয়ে যাব।”
” আপনে সুযোগ নিতাছেন আবার!”
জোভান আর কিছু বলল না। বকুল কে নিয়ে তৃষ্ণা দের কাছে নিয়ে এলো।
তৃষ্ণা আর জায়ান দাঁড়িয়ে আছে। বকুল তৃষ্ণার পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। তৃষ্ণার হাতে লাল গোলাপের একটা তোড়া। তৃষ্ণা বকুল কে উজ্জ্বল মুখ করে বলল,” বকুল দেখ কত সুন্দর গোলাপের তোড়া তোর দুলাভাই আমাকে দিছে। তোর তো প্রিয় ফুল গোলাপ ধর এটা তুই নে।”
বলেই ফুলের তোড়া বকুলের হাতে দিয়ে দিল। বকুল হাসি মুখে তা হাতে নিল। জোভান বিষ্ময় ধরে রাখতে পারছে না। কত মিথ্যে বলল বকুল ওকে।
মেয়েটা কত ফাজিল। জোভান কটমট চোখে তাকিয়ে আছে বকুলের দিকে বকুল জ্বালা ময়ি হাসি দিয়ে দেখাচ্ছে ওকে।
#চলবে….#কৃষ্ণবেণী
#পর্ব_১৯
#নন্দিনী_নীলা
আজকে বকুলের চলে যাওয়ার দিন। মন মরা হয়ে বকুল সবকিছু গুছিয়ে নিচ্ছে। আসার দিন কত হাসি খুশি মুখে এসেছিল। বাড়িতে ওর যেতে ইচ্ছে করছে না। এতো আরাম পেয়ে কারো কি গ্রামে যেতে মন চায়। গতকাল ঘুরতে গিয়ে কিছু কসমেটিক ও কিনে দিয়েছে দুলাভাই। সবকিছু ব্যাগে ভরে নিচ্ছে। তৃষ্ণা ও মন খারাপ করে বসে আছে। বকুল ছিল বিধায় এতদিন ও একজন সঙ্গী পেয়েছিল দুই বোন ইচ্ছামত থাকতো আবার সেই একাকীত্ব চলে আসবে।
” বুবু তুমি ও আমার লগে চলো যাই।”
” আমার তো যাওয়া যাইবো না রে। আজকে আমার শ্বশুর মানে তোর দুলাভাইয়ের বাবাকে হসপিটাল থেকে বাসায় নিয়ে আসবে। তিনি গুরুতর আহত না হলেও মোটামুটি আঘাত পেয়েছে এখন আমি যাওয়ার কথাও বলতে পারব না।”
বকুল এগিয়ে এসে বোনকে জড়িয়ে ধরে বসে রইল।
সকাল সকাল বকুলকে পাঠিয়ে দেওয়া হবে কারণ যেতে তো কিছুটা টাইম লাগে, যাতে দিনের মাঝেই ওকে পৌঁছে দিয়ে আসা যায়।
বাসায় কেউ নাই কারো কাছে বিদায় নিতে পারল না বকুল। লিয়াও মন খারাপ করেছিল বকুলের জন্য লিয়াও তৃষ্ণার সাথে বকুলকে এগিয়ে দিতে গাড়ি পর্যন্ত এলো। জায়ান গাড়িতেই ছিল শালিকাকে নিজ দায়িত্বে বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসবে বলে। বকুল গাড়ি উঠবে তখন জোভান আর উর্মি আসে আরেকটা গাড়ি করে বাসায়। ওদের গাড়ি দেখে বকুল থেমে যায়।
উর্মি গাড়ি থেকে নেমে ওদের দিকে এগিয়ে আসে পেছনের জোভানও আসে।
” তোমার সাথে দেখা করার জন্য খুব তাড়াহুড়া করে এলাম। আর একটু লেট হলেই তো গাড়ি মিস করে ফেলতাম।”
” আফা আপনে আমাগো বাড়ি যাইয়েন।”
“তোমার বিয়ের সময় যাব। আচ্ছা যাও সাবধানে যেও। জায়ান ভাইয়া তুমি কি বকুল কে বাড়ি অবধি দিয়ে আসবে?”
“হুম। ”
” বাবা তো বাড়ি আসছে আসতে আর দশ মিনিট লাগবে। তোমাকে বাসায় থাকতে বলেছিলো।”
“জরুরী কোন দরকার?”
“মনে হয়। আমাকে বলেছে তোমাকে যেন বাসায়ই থাকতে বলি কোথাও যেন না যাও।”
“বকুলকে একা কীভাবে ড্রাইভারের সাথে ছাড়বো?”
“ওর সাথে জোভান কে পাঠিয়ে দাও। ভাবি বকুলের সাথে জোভান গেলে কি তোমার কোন সমস্যা আছে?”
তৃষ্ণা কি বললে বুঝতে পারছে না তাও মাথা নাড়িয়ে না বোঝালো। জায়ান গাড়ি থেকে নেমে এলো আর এদিকে জোভান মনে মনে ইয়েস বলে গাড়িতে উঠে বসলো। বকুল হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
তৃষ্ণা বকুল কে গাড়িতে বসিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো গাড়ি চোখের সামনে থেকে উধাও হতেই বাসার ভেতরে ফিরে এলো। রুমে এসে মনমরা হয়ে বসে রইল।
জায়ান তৃষ্ণার মনে অবস্থা বুঝতে পেরে বলল,” তোমার বোনকেও আমাদের বাসায় পার্মানেন্টলি নিয়ে চলে আসি? এখানেই থাকবে তোমার সাথে।”
তৃষ্ণা বোকা চোখে তাকাল জায়ানের দিকে।
“বোন চলে গেছে। মুখটা এমন করে রেখেছো যেন বাসায় কেউ মারা গেছে।”
“কি সব বলছেন?”
“ফেস ঠিক করো?”
“আপনাদের বাসার কারো সাথে মিশতে পারছি না। সবাই আমাকে কেমন করে যেন দেখে। মনে হয় কেউ আমাকে পছন্দ করে না। বকুল ছিল দুজন ছিলাম এখন ও চলে গেল এজন্য একা একা লাগছে। আর তাছাড়া বকুল গতকাল আমাকে একটা জরুরী কথা বলতে চাইছিল ঘুরতে যাওয়ার চক্করে সেসব মাথা থেকে বেরিয়ে গেছিল।”
” আমার তো আমার বউ মাশাআল্লাহ অনেক পছন্দ আর কার পছন্দের হওয়ার দরকার নাই বুঝেছ। এজন্য তোমার এতো মন খারাপ? আর বকুল হয়তো এমনি কিছু একটা বলতে চাইছিল। ওতো গুরুত্বপূর্ণ হলে বলেই যেতো। আমার সামনে মুখ মলিন করে থাকবে না। তোমার মলিন মুখ আমার পছন্দ নয়।”
জায়ান এখন বসে আছে ওর বাবার রুমে। জায়ানের বাবা সাদিকুর রহমান। তিনি দিব্যি আয়েশি ভঙ্গিতে বিছানার উপর বসে আছেন।
জায়ান তার সামনে মুখোমুখি বসে আছে।
সাদিকুর রহমান চিন্তিত মুখে জায়ানের দিকে তাকিয়ে বলে,” আমার ঐ ফাইল কে নিয়েছে আমি জানি জায়ান এটাকে উদ্ধার তোমাকেই করতে হবে।”
“আপনার হাতের কাছ থেকে ফাইলটা নিয়ে চলে গেল। আপনি কিছুই করতে পারলেন না উল্টো হসপিটালে ভর্তি হয়ে তিনদিন থেকে আসলেন।”
“তোমার ওপরের রাগ সে আমার কাজের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়েছে। তুমি তাকে হ্যান্ডেল কর জায়ান না হলে এবারের ইলেকশনে আমি নিশ্চিত ফেইল করব।”
“ফাইলে কি ছিল? আমাকে এই ফাইলের বিষয়ে কিছু জানাননি কেন?”
সাদিকুর রহমান এবার ঘামতে লাগলো। বাবা এমন ভীত চোখ মুখ দেখে জায়ানের সন্দেহ আরো বাড়লো।
“উত্তর দিন বাবা। আপনি না বলে এভাবে ঘামতে থাকলে কিন্তু ফাইলটা পাবেন না আর আমাকে ও আপনার পাশ থেকে হারাবেন।”
“তুমি আমাকে ভুল বুঝছো। ওই ফাইলের বিষয়ে তোমাকে সবই জানাতাম কিন্তু জানানোর আগেই তো মিসিং। সুযোগ পাইনি। তুমি আগে এনে দাও। তারপর সব খোলে বলব।”
” সরি বাবা আগে আপনাকে সব বলতে হবে।”
“আমার উপর হুকুম করছো আমি তোমার বাবা ভুলে যেও না।”
“আমিও তোমার ছেলে সেটা ভুলে যেও না। সব না বললে আমার থেকে কোন সাহায্যের আশা ভুলে যাও।”
“তুমি চাও না এবার ইলেকশনে আমি জিতি?”
“অবশ্যই চাই তুমি জিতো কিন্তু…
সাদিকুর রহমান বুঝলো জায়ান কে সব না বললে সত্যি সে ওনার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে। সাদিকুর রহমান টিস্যু নিয়ে কপালের ঘাম মুছে আমতা আমতা করে সব বলতে লাগলো। সব শুনে জায়ানের ফর্সা মুখটা লাল টকটকে হয়ে গেল। পাশের থাকা কাচের গ্লাস ভর্তি পানি হাতে নিয়ে ফ্লোরে ছুড়ে মারল।
“আপনি এতো বড় একটা ঘটনা ঘটিয়েছেন আমাকে ব্যবহার করে ছিহ। এতো কিছু করার পর এখনো আশা করছেন আমি আপনাকে সাহায্য করব।”
” তোমাকে ব্যবহার করে করলেও কিন্তু শেষে তোমাকে বাঁচাতেই আমি ফাইলটা হাতিয়ে নিয়েছিলাম। ওই ফাইলটা না আনলে আমার কি আর ক্ষতি হতো। তোমার বেশি ক্ষতি হবে। তোমার জন্য কিন্তু আমি এতোটা সহ্য করেছি হসপিটালে পরেছিলাম। ”
“এতোটা অন্যায় করে। এখন এইটুকু পূর্ণ দিয়ে আপনি সেটাকে ঢাকতে পারবেন না। কাজটা আপনি একদম ঠিক করেননি একদমই না। এর জন্য যদি আমাকে সাফার করতে হয় ভুলে যাব আপনি আমার বাবা। মাইন্ড ইট।”
জায়ান রাগে গজ গজ করতে করতে রুম ছেড়ে বেরিয়ে গেল।
জেসমিন বেগম জায়ানকে রাগান্বিত অবস্থায় বেরিয়ে যেতে দেখে রুমে এসে স্বামীকে জিজ্ঞেস করল,”কি হয়েছে?”
সাদিকুর রহমান গম্ভীর মুখে বলল,,” কিছু না।”
ফ্লোরে ভাঙ্গা কাচ দেখে বলল,,” এসব কি?”
“যাও তো এখান থেকে।”
জেসমিন বেগম ধমক খেয়ে সত্যি বেরিয়ে গেল রুম থেকে।
দীর্ঘ কয়েক ঘন্টা পর বকুলদের বাড়ির কাছাকাছি চলে এলো গাড়ি। গাড়ি থেকে নেমে বকুল ড্রাইভার কে বাড়ি যাওয়ার জন্য তোষামোদ করতে লাগলো কিন্তু একবারও জোভানকে যেতে বলল না।এ দিকে জোভান বকুলের বলার অপেক্ষায় রইলো না গাড়ি থেকে নেমে বকুলের আগে বাড়ি চলে গেছে।
ড্রাইভার গেল না গাড়ি রেখে বকুল বাড়ি পথে হাঁটতে লাগলো এ পাড়া ও পাড়ার অনেক ছেলেমেয়েরা ওকে দেখে দৌড়ে এলো। আর এলাকার অনেকের সাথে রাস্তায় দেখা হলো সেই বকুলকে বলল,”হ্যা রে বকুল শহরে গিয়া তো তোর বেশই পরিবর্তন হইয়া গেছে। ফর্সা মোটা তাজা হইয়া গেছিস শহরের আলো বাতাস খাইয়া।”
বকুল খুব ভাব নিয়ে বাড়ি চলে গেল।
বাড়ি এসে বকুল দেখল জোভান উঠানে কাঠের চেয়ারে পায়ের উপর পা তুলে বসে আছে দাঁত কেলিয়ে। বকুলকে দেখে বলল,”তোমার বাড়ি তুমি আসতেই পারলা না। আমি দেখো কত আগে এসে বসে আছি। এক গ্লাস পানি খাওয়াও তো বকুল।”
জোভানকে এতক্ষণ তৃষ্ণার মা জিজ্ঞেস করেছে কি খাবে জোভান না করেছে এদিকে তৃষ্ণার মা কিছু বানিয়ে আনার জন্য আগুন ধরাচ্ছে। তৃষ্ণার ভাবি বাসায় নাই সে গেছে বাপের বাড়ি। জোভানের দিকে তাকিয়ে ভেংচি কেটে পানি না দিয়ে বকুল রুমে চলে যাচ্ছিল। রান্নাঘর থেকে তৃষ্ণার মা চিৎকার করে বকুলকে বলে জোভান কে পানি দেওয়ার জন্য। বকুল রাগে গজগজ করে টিউবয়েল থেকে গ্লাস ভর্তি পানি এনে জোভান কে দেয়।
“এই বকুল ফুল তোমার রাগ কি কমে নি?”
” আপনে এইহানে বইয়া রইছেন ক্যান? পানি খাইয়া বিদায় হন।”
” বকুল রাগ কমাও তুমি কিন্তু আমারে বিয়ে করলে যমজ সন্তানের মা হতে পারবে।”
” এ্যা কি কন এইসব?”
” আমার অবশ্য এখনি বিয়ের বয়স হয়নি। তবুও তুমি রাজি থাকলে আমি ও রাজি।”
” ওইডা কি কথা কইলেন আপনে?”
” ঠিক কথাই বলছি। আমার ফ্যামিলিতে কিন্তু সব যমজ সন্তান হয়। দেখনা আমরা ভাই-বোন সবাই যমজ। আবার আমার এক পিসির দুই ছেলে মেয়ে ওরাও যমজ। আমাদের গুষ্টিতে নাকি যত সন্তানই হয় তারাই যমজ হয়।”
” এ্যা”বকুল মুখটা হা করে আবার বলল,”আপনি ও কি যমজ? আপনের আবার যমজ কে?”
” উর্মি কে দেখো না। আমরা তো যমজ ভাই বোন।”
বকুল মাথায় হাত দিয়ে তাকিয়ে আছে জোভানের দিকে।
“আপনে মিছা কথা কইতাছেন? উর্মি আপু আপনের ছোট আর আপনেরা দুইজন তো একরকম দেখতে না দুলাভাই আর তার ভাইয়ের মতো।”
“যমজ হলে কি তারা শুধু একরকম দেখতে হয় নাকি? গাধি! আমি আর উর্মি হচ্ছে অমিল যমজ।”
” আপনের কথা আমার বিশ্বাস হয়না।”
” উর্মি কে জিজ্ঞেস করো ও বললে তো বিশ্বাস হবে?”
” তারে আমি কই পামু?”
” কল দেব।”
” আমার বুবুর ও তাইলে যমজ বাচ্চা হইবো।”
” আমারে বিয়ে করলে তোমার ও হবে।”
” আপনে মানুষ সুবিধার না আপনেরে আমি বিয়া করতাম না। যান দূর হন আমাগো বাড়ি থিকা।”
বকুলের মা চেঁচিয়ে ডেকে উঠল বকুল ভেতরে গিয়ে থালা হাতে এলো।
জোভান বলল,” বলো রাগ কমেছে তাহলেই খাবো নচেৎ উঠে চলে যাব আর কিন্তু রাগ ভাঙ্গানোর জন্য আমাকে খুঁজে পাবে না।”
“এমন কইরা বলছেন যেন আপনি চইলা গেলে আমি কান্দুম।”
জোভান সত্যি কিছু না খেয়ে চলে গেল বকুল থালা চেয়ারের উপর রেখে পেছন পেছন এগিয়ে এলো।
” যান মাফ কইরা দিলাম কিন্তু সত্যি আপনেরে আমি খারাপ পোলাই কমু। রাগ কমলেও আপনি ভালো পোলা হইতে পারবেন না।”
জোভান ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটিয়ে ঘাড় বাঁকিয়ে তাকালো বকুলের দিকে। বকুল বাড়ির ভেতরে চলে এলো।
#চলবে?
আসসালামু আলাইকুম কেমন আছেন সবাই? জানুয়ারির ২ তারিখ থেকে আমার ইয়ার চেঞ্জ পরীক্ষা। এজন্য গল্প অনিয়মিত দেব সবাই ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করবেন। আমাকে ভুল বুঝবেন না দয়া করে। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন।