কেন মেঘ আসে হৃদয় আকাশে পর্ব -১১

কেন মেঘ আসে হৃদয়-আকাশে
লেখনীতে—ইলোরা জাহান ঊর্মি

১১.
বেপরোয়া সময়ের সঙ্গে আজ পর্যন্ত কেউ পেরে উঠেছে বলে শোনা যায়নি। সব রকম পরিস্থিতিকে পেছনে ফেলে সে দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলে। পেছন ফিরে তাকানোর সময়টুকুও তার নেই। দেখতে-দেখতে রৌদ্রুপের বাড়িতে নৈঋতার এক মাস কে’টে গেছে। অথচ আজও এই পরিবারের সকলের ভালোবাসা সে পেয়ে উঠতে পারেনি। তার এই একমাস কে’টেছে শুধু সংসারের কাজের মাঝেই। সে কাজ ধরার পর থেকে শাহানা খানম বা নিদ্রা নানা অজুহাতে তেমন কোনো কাজে হাত দেয় না। আর শশী তো কোনো কাজের দিকে ফিরেও তাকায় না। কাজের প্রতি অলসতা তার আগে থেকেই। সহজ ভাষায় অকর্মাও বলা চলে। তাই নৈঋতাকে একাই সব কাজ সামলাতে হয়। রৌদ্রুপ এখনো কোনো ভালো চাকরি পায়নি। আত্মনির্ভরশীল ছেলেটা আজ বাবা-ভাইয়ের ওপর নির্ভরশীল; তবু সে প্রতিটাদিন খুঁজে চলেছে ভালো একটা চাকরি। নিজের চাকরির খোঁজ করতে নেমে সে নসিবের জন্যও কাজ গোছাতে পারেনি। এজন্য অবশ্য সে দুঃখও প্রকাশ করে; তবে সে থেমে থাকে না। হতাশ হওয়া বা হাল ছেড়ে দেওয়ার পাত্র সে নয়। তার বিশ্বাস সে খুব দ্রুত নিজের জন্য এবং নসিবের জন্য কাজ ঠিক করতে পারবে। অপরদিকে নৈঋতা তার দায়িত্ব। সারাদিন মেয়েটার খাটাখাটনি সে স্বচক্ষে দেখেও কিছু বলতে বা করতে পারে না। মেয়েটার জন্য বুকের বাঁ পাশটা ব্যথায় টনটন করে উঠলেও চুপ থাকতে হয়। মুখ খুললেই তো মায়ের কটু কথা শুনতে হবে। ফলস্বরূপ হয়তো নৈঋতাকে আবার সেই গ্রামের অভাবের সংসারে রেখে আসতে হবে। একে অপরের দূরত্ব বাড়বে, যা সে বা নৈঋতা কেউই চায় না। মাঝে-মাঝে তার বড়ো ভাই তিহান নৈঋতার পক্ষ টেনে কিছু বলতে গেলে তাকেও শাহানা খানম ধমকিয়ে থামিয়ে রাখেন। এতকিছুর পরও নৈঋতা যখন তার বাবা-মায়ের সাথে ফোনে কথা বলে, তখন সে হস্যোজ্জ্বল মুখে বলে সে খুব ভালো আছে। পাশে বসে রৌদ্রুপ এ কথা শুনে করুণ চোখে তাকিয়ে থাকে মেয়েটার মুখপানে। বরাবরের মতো আজও নৈঋতা এটাই করল। রৌদ্রুপ স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল তার দিকে। নৈঋতা ফোন রাখতেই তার হাত দুটো নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে অ’পরাধীর মতো মুখ করে বলল,
“আমি দুঃখিত, নৈঋ। যেচে তোমাকে নিজের বাড়িতে নিয়ে এসেও, আমি তোমাকে ভালো রাখতে পারছি না।”
নৈঋতা মুচকি হেসে বলল,
“আপনারে কে কইল আমি ভালা নাই? ভালা না থাকলে অহন হাসতাছি ক্যামনে? আপনের মনে হয় আমি মিছামিছি হাসতাছি?”
“না, আমি জানি তোমার হাসি মিথ্যে নয়। আর এটাও জানি যে, আমি তোমার কাছে আছি বলেই তুমি হাসছো। কিন্তু সারাটা দিন তোমার এত খাটাখাটনি দেখতে আমার ভালো লাগে না। নিজের পরিবারকে কিছু বলতেও পারছি না। বললেই হয়তো তোমাকে হারাব। আমার চাকরিটা থাকলে আমি এসব সহ্য করতাম না, নৈঋ। তোমাকে স্ত্রীর মর্যাদা দিয়ে হলেও আমার কাছে রাখতাম। কিন্তু এই মুহূর্তে সেটাও সম্ভব হচ্ছে না। নিজেই তো বাপ-ভাইয়ের ঘাড়ে বসে খাচ্ছি।”
রৌদ্রুপের কন্ঠে বিষাদের সুর নৈঋতার মন খারাপ করে। হাতের বাঁধন শক্ত করে বলল,
“এমন কইরা কইতাছেন ক্যান? চাকরিডা তো আর আপনে নিজের ইচ্ছায় ছাড়েননায়। আল্লাহ্ চাইলে খুব তাড়াতাড়ি আপনে আবার চাকরি পাইয়া যাইবেন। আর আমার লাইগা এত দুঃখ কইরেন না তো। আমি ভালা আছি। কাম তো আমি নিজের বাইতও করছি। আমার কাছে এইসব অত কঠিন না। এই যে আমি নিজের হাতে রাইন্ধা-বাইড়া আপনেরে খাওয়াই, আপনে বাহির থিকা ক্লান্ত হইয়া আইলে ঠান্ডা শরবত বানাইয়া খাওয়াই, আপনের থিকা কতকিছু শিখি, আবার রাইতবেলায় আপনের হাতে হাত রাইখা কত কথা কই; এইসব আমার কত বড়ো পাওয়া, জানেন? এতকিছুর পরও আমি খারাপ থাকতে পারি? আপনে থাকতে আমি খারাপ থাকমু না কোনোদিন, তা আমি জানি।”
রৌদ্রুপের ঠোঁটের কোণে এবার স্মিত হাসির রেখা ফুটে উঠল। নৈঋতার মাথায় হাত বুলিয়ে সে বলল,
“এই পুঁচকে মেয়ে, এত ধৈর্য কোথায় পাও তুমি?”
“গরীবের ঘরে বড়ো হইছি, ধৈর্য তো থাকতেই হয়। আর অহন আপনের থিকাও তো শিখছি, কোনো পরিস্থিতিতে হতাশ হওয়া চলব না।”
রৌদ্রুপ ছোটো একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,
“নসিব বেচারা কাজের জন্য কত আশায় বসে আছে। আমি চাকরিটা পেয়ে গেলেই ওর ব্যবস্থা করে ফেলব। কলেজে ভর্তির কার্যক্রম শুরু হতে বেশি দেরী নেই। তোমার ভর্তির আগেই যেন চাকরিটা পেয়ে যাই, সেই আশায় আছি। বাকিটা আল্লাহ্ ভরসা।”
শেষের কথাটা বলতে-বলতে রৌদ্রুপ নিজের পাঞ্জাবির পকেট থেকে কয়েকটা চকোলেট বের করে নৈঋতার দিকে বাড়িয়ে ধরল। চকোলেটগুলো দেখে নৈঋতা প্রশস্ত হাসল। রৌদ্রুপের হাত থেকে চকোলেটগুলো নিয়ে বলল,
“টেকা খরচ কইরা প্রতিদিন এইসব আনেন ক্যান? না কইলেও হুনেন না আপনে।”
রৌদ্রুপ হেসে বলল,
“আমার মেঘবতী তো এই সামান্য চকোলেট পেলেই কত খুশি হয়। তার এটুকু খুশির কারণ হওয়ার লোভ সামলাই কী করে?”
নৈঋতা মন খারাপ করে বলল,
“টেকা খরচ হয় আপনের।”
“তাতে কী?”
নৈঋতা একটা দীর্ঘশ্বাস চেপে নিয়ে প্রশ্ন করল,
“তুলিরে দিছেন?”
“ওরটা তো আলাদাই থাকে। দিয়ে দিয়েছি।”
ক্ষণকাল নীরব থেকে নৈঋতা হঠাৎ অম্লান মুখে বলল,
“প্রত্যেকদিন এমন রাইত-বিরাইতে যে আমরা এত গল্প করি, কেউ জানলে পরে কী হইব?”
“তোমাকে বউ করে নিব,” দাঁত কেলিয়ে হেসে বলল রৌদ্রুপ।
“মজা কইরেন না। আমার ডর লাগে।”
“ইশ্! একমাস কে’টে গেল, এখন মহারানির ভয় লাগছে। শোনো মেয়ে, এখন যেমন দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে আমার পাশে বসে আছো, এভাবে শেষ পর্যন্ত পাশে থাকবে। আমি তোমার হাতটা মুঠোবন্দী রেখে সব ভয়কে জয় করব।”
অতঃপর নিজের বুকের বাঁ পাশটা আঙুলের ইশারায় দেখিয়ে বলল,
“এখানটায় থাকবে তুমি। আজ, কাল, পরশু, আজীবন। ব্যস, আর কিচ্ছু চাই না তোমার থেকে। তুমি এক জীবন থেকে গেলে আমার সব চাওয়া এমনিতেই পাওয়া হয়ে যাবে। আমি আমার মেঘবতীর এই মায়াবী মুখে চেয়ে কয়েক যুগ কা’টিয়ে দিবো নির্দ্বিধায়।”
নৈঋতা লজ্জাবতী লতার ন্যায় নেতিয়ে পড়ল। দারুণ লজ্জায় মাথা নত করল। লজ্জাবতীর ঠোঁটের কোণে ঠাঁই পেল এক চিলতে লাজুক হাসি। রৌদ্রুপের ভাবনায়, ওই হাসিটুকুর ভাগ্য সুপ্রসন্ন বলেই সে এই মায়াবতীর ঠোঁটের কোণে ঠাঁই পেয়েছে। ভাগ্য বিধাতা সহায় হলে হয়তো কোনোদিন তার ভাগ্যও সুপ্রসন্ন হবে। বুকের খাঁচায় বন্দী কিছু সুপ্ত স্বপ্নরা তখন প্রজাপতির মতো ডানা মেলবে মুক্ত আকাশে। সেই শুভক্ষণের জন্য প্রয়োজন শুধু সময় এবং অসীম ধৈর্যের। প্রণয়ী পুরুষ তার মেঘবতীর জন্য ধৈর্য আঁকড়ে বছরের পর বছর অপেক্ষা করতেও বদ্ধ পরিকর।

বাড়ির সবাই তৃপ্তি সহকারে দুপুরের খাবার খেতে ব্যস্ত। নৈঋতা পাশে দাঁড়িয়ে সবার প্লেটে এটা-ওটা তুলে দিচ্ছে। সবার খাওয়া শেষ হলে তবেই সে খেতে বসবে। গত এক মাস ধরে শাহানা খানমের আদেশে এটাই হয়ে আসছে। খাওয়ার ফাঁকে রৌদ্রুপ মাঝে-মাঝে নৈঋতার ক্লান্ত মুখটা পরখ করে নিচ্ছে। অতঃপর খুব গোপনে দীর্ঘশ্বাস চেপে যাচ্ছে।‌ প্রথম দিকে সে প্রতিবাদ করতে চাইত। কিন্তু শাহানা খানমের সোজাসাপ্টা কথা, এসব ভালো না লাগলে নৈঋতাকে যেন গ্রামে রেখে আসে। বারবার এই কথাতে এসেই রৌদ্রুপ আটকে যায়। নৈঋতাও তখন থেকেই তাকে বারণ করে দিয়েছে এসব নিয়ে কথা না বাড়াতে। প্লেটের অর্ধেকটা খাবার বাকি রেখেই রৌদ্রুপ পানি খেয়ে উঠে পড়ল। সঙ্গে-সঙ্গেই নিদ্রা টিটকারি করে বলল,
“রৌদ্র, নৈঋতা যতদিন ধরে এসেছে, ততদিন ধরে দেখছি তোমার খাবারের রুচি নষ্ট হয়ে গেছে? প্লেটের অর্ধেক খাবার রেখে সবসময় উঠে পড়ো। কী ব্যাপার বলো তো?”
রৌদ্রুপ বিশেষ কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাল না। বরং স্বাভাবিকভাবেই চলে যেতে-যেতে বলল,
“সবার পেটে কি আর তোমাদের মতো ক্ষুধা থাকে যে, খাওয়া শেষে হাড়ির তলায় খাবার ফেলে রাখবে?”
নিদ্রার মুখটা ফাটা বেলুনের মতো চুপসে গেল। ফুঁসে উঠে স্বামীকে উদ্দেশ্য করে বলল,
“দেখলে, তোমার ভাই ইঙ্গিতে কীভাবে আমাকে অপমান করে গেল? আমার খাওয়া নিয়ে কথা শোনানোর সাহস কে দিয়েছে ওকে?”
তিহান তেতো মুখে বলল,
“যেচে যাও কেন অপমানিত হতে?”
স্বামীর থেকেও উলটো কথা শুনে নিদ্রার মাথাটা দপ করে জ্ব’লে উঠল। রাগে ক্ষোভে সে নিজের আধ খাওয়া খাবার রেখেই উঠে গেল। কারো নিষেধ শুনল না। নৈঋতার দিকে একবার ক্রদ্ধ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে হনহন করে হেঁটে নিজের রুমে চলে গেল। ফলস্বরূপ শাহানা খানমের থেকে নৈঋতাকেই মুখ ঝামটা খেতে হলো। সবাই খাওয়া শেষ করে সরে যাওয়ার পর নৈঋতা এগিয়ে গিয়ে রৌদ্রুপ যে চেয়ারে বসেছিল, সেখানটায় বসল। অতঃপর রৌদ্রুপের রেখে যাওয়া খাবারের সাথে আজকের বেঁচে যাওয়া খাবারটুকু মিলিয়ে নিয়ে খেতে আরম্ভ করল। এ ঘটনা নতুন নয়। গত এক মাস ধরে এটাই নৈঋতার খাবারের রুটিন। সবার খাওয়ার পর বেঁচে যাওয়া খাবার তার ভাগ্যে জোটে। এই নিয়েও প্রথমদিকে রৌদ্রুপ প্রতিবাদ করেছিল, কিন্তু বিশেষ কোনো সুরাহা হয়নি। বরঞ্চ মা, ভাবির কটু’ক্তি শুনতে হয়েছিল। তারপর থেকেই রৌদ্রুপের মাথায় এই বুদ্ধি আসে। সে নিজের খাবার থেকে অর্ধেক খাবার খেয়ে বাকিটা ‘খেতে ইচ্ছে করছে না’ বলে নৈঋতার জন্য রেখে দেয়। এ বাড়িতে কেউ কারো এঁটো খাবার খায় না বলে তার অসুবিধা হয়নি। প্রথম-প্রথম নৈঋতা খুব অবাক হত, রাগ করত। অর্ধেক খাবার খেয়ে রৌদ্রুপের ক্ষুধা মেটে না ভেবে দুঃখ পেত। রৌদ্রুপ হেসে বলত,
“আমার মেঘবতীকে সুস্থ রাখতে পারলেই আমার শান্তি।”
নৈঋতা গাল ফুলিয়ে বলত,
“আর আপনের সুস্থতা? নিজের কতা ভাবা লাগে না?”
“এই তো তুমি কত ভাবছ আমাকে নিয়ে। একটা মানুষকে নিয়ে কত জনের ভাবা লাগে?”
“আপনে এমন করবেন না আর। তাইলে কিন্তু আমি সত্যি-সত্যিই বাইত যামুগা।”
অথচ পরবর্তীতে রৌদ্রুপের ভাগের খাবার খাওয়া তার অভ্যাসে পরিণত হয়। কেমন এক অদ্ভুত তৃপ্তি মেলে। মাথার মধ্যে বিভিন্ন ভাবনার তালগোল পাকিয়ে নৈঋতা খাওয়া শেষ করল। তারপর সব এঁটো বাসন ধুয়ে ফেলল। তবু তার বিশ্রাম নেওয়ার ফুরসত নেই। দুপুরের রান্নার আগে দুই বালতি কাপড় ধুয়ে ছাদে শুকাতে দিয়ে এসেছিল। এখন আবার ছাদে যেতে হবে সেগুলো আনতে। কিন্তু অলস দেহটা আজ আর চলতে চাইছে না। ভাতঘুম দেওয়ার জন্য চোখ দুটো বড়ো ব্যাকুল হয়ে আছে। কোনোরকমে একটার পর একটা সিঁড়ি ডিঙিয়ে ছাদে পা রাখতেই দেখল পাশের দেয়াল ঘেঁষে রৌদ্রুপ দাঁড়িয়ে। নৈঋতাকে দেখে রৌদ্রুপ মৃদু হাসলো। নৈঋতা এগিয়ে গিয়ে তার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করল,
“এইহানে কী করতাছেন?”
“অপেক্ষা।”
“কিসের?”
“মেঘবতীর দর্শনের।”
নৈঋতার ঠোঁটের কোণে স্মিত হাসির রেখা ফুটে উঠল। প্রেয়সীর এক টুকরো হাসি যেন প্রেমিকের বুকের তীব্র খরায় এক ফোঁটা বর্ষনের ছোঁয়া। নৈঋতা ঘুরে দাঁড়িয়ে সরে যেতে চাইতেই অকস্মাৎ রৌদ্রুপ তার এক হাত মুঠোবন্দী করে কাছে টেনে এনে দাঁড় করাল। ঘটনার আকস্মিকতায় নৈঋতা হকচকিয়ে গেল।‌ যদিও রৌদ্রুপ আর তার মধ্যখানে কিছু পরিমাণ দূরত্ব বজায় আছে; তবু সে বেশ বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ল। রৌদ্রুপকে অপলক দৃষ্টিতে তার মুখপানে তাকিয়ে থাকতে দেখে আরও লজ্জা বোধ করল। রৌদ্রুপের মুঠো থেকে নিজের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে নিচু স্বরে বলল,
“কী হইছে? ছাড়েন। কেউ দেখলে স’র্বনা’শ হইব।”
“সর্বনাশ তো আমার কবেই হয়েছে। এ আর নতুন কী?”
“আপনের আবার স’র্বনা’শ করল কে?”
“নৈঋতা নামক এক মিষ্টি স’র্বনা’শী।”
নৈঋতা মুচকি হেসে বলল,
“কেউ দেখলে কিন্তু সত্যিই খারাপ পরিস্থিতিতে পড়তে হইব।”
“হোক। আমার হবু বউয়ের হাত আমি ধরেছি, তাতে কার কী, শুনি?” দায়সারা গোছের উত্তর রৌদ্রুপের।
নৈঋতা ভ্রুকুটি করল। মিনমিনে গলায় বলল,
“শরম নাই আপনের? বিয়ার আগেই বউ, বউ করেন?”
“কিসের শরম? আজ বা কাল আমারই তো বউ হবে।”
“না-ও তো হইতে পারি। কার কপালে আল্লায় কী লেখছে, আল্লায়ই জানে।”
রৌদ্রুপের মুখের চিকচিকে হাসিটুকু হুট করে উবে গেল। সে নৈঋতার ডান হাতটা নিজের বুকের বাঁ পাশে চেপে ধরে গম্ভীর মুখে বলল,
“এইখানটা তোমার জন্য দিন-রাত কত পো’ড়ে, জানো তুমি? এই জ্বা’লাপো’ড়া কমানোর সাধ্য অন্য কারো আছে? থাকলে এই বুকটা তোমাকে আগলে রাখার জন্য অপেক্ষা করত?”
নৈঝতা স্তব্ধ চোখ তুলে তাকিয়ে আছে রৌদ্রুপের গম্ভীর মুখটার দিকে। সে বুঝে উঠতে পারেনি রৌদ্রুপ তার কথাটা এত সিরিয়াসভাবে নিবে। সে নরম কন্ঠে বলল,
“আপনে রাগেন ক্যান? আমি তো এমনেই কইলাম।”
“বলবে কেন? শোনো নৈঋ, আজ হোক বা কাল, যে মেয়েটা একদিন আমার এই বুকে মাথা রেখে নিশ্চিন্তে নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মেয়ে মনে করবে, সে শুধুই আমার মেঘবতী।”
অজান্তেই নৈঋতার চোখের কোণে কয়েক ফোঁটা অশ্রু কণা জমে গেল। আবেগী হয়ে বলল,
“এত সুখ আমার কপালে সইব?”
রৌদ্রুপ দুহাতে আলতো করে নৈঋতার ছোট্ট মুখটা তুলে ধরল। মুচকি হেসে বলল,
“একশো বার সইবে। দরকার পড়লে আমার সব সুখ তোমার নামে লিখে দিবো। তাতেও কি হবে না?”
“খুব হইব।”
“আচ্ছা, এবার একটা সুখবর শোনো। কদিন আগে আমি যে জবের জন্য ইন্টারভিউ দিয়েছিলাম, ওই জবটা আমি পেয়ে গেছি।”
নৈঋতার চোখ দুটো খুশিতে চকচক করে উঠল। উৎফুল্ল কন্ঠে বলল,
“সত্যি?”
রৌদ্রুপ ওপর-নিচে মাথা ঝাঁকাল। বলল,
“হ্যাঁ, এ সপ্তাহের মধ্যেই জয়েনিং ডেট। আগামী মাসে তোমার ভর্তি। আশা করি এবার সব গুছিয়ে নিতে পারব।”
নৈঋতা গাল থেকে রৌদ্রুপের হাত দুটো আলগোছে সরিয়ে চিন্তিত মুখে বলল,
“ভর্তির কতা হুনলে যদি খালাম্মায় রাইগা যায়?”
রৌদ্রুপ নৈঋতার মাথায় সস্নেহে হাত বুলিয়ে বলল,
“কিচ্ছু হবে না রে পা’গলি। আমি আছি তো। দেখবে, আস্তে-আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে।”
“আমি কলেজে গেলে বাড়ির কাম করব কে?”
“ওসব নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না। আমার চাকরি ছিল না বলে বাধ্য হয়ে এতদিন মুখ বুজে সহ্য করতে হয়েছে। এরপর আর করব না।”
“আমার অনেক চিন্তা‌ লাগে।”
“ভরসা করো না আমায়?”
“আপনে ছাড়া আর কোনো ভরসার জায়গা আছে আমার?”
“এ ভরসাটুকুই ধৈর্যের সাথে আঁকড়ে ধরে রাখো। যা হবার ভালোই হবে,” মুচকি হেসে বলল রৌদ্রুপ।

চলবে, ইন শা আল্লাহ্।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here