#খড়কুটোর_বাসা_২
#পর্বঃ২৬(অন্তিম পর্ব)
# Jhorna_Islam
ইরহান ইশানের সব কথা শুনে যুথির দিকে তাকায় কি বলবে ভেবে পায় না। এতো সময় যুথিও পাশেই ছিলো ইরহানের। দুইজন ই মনোযোগ দিয়ে ইশানের কথা শুনেছে।
যুথির ও খুব খারাপ লাগছে ইশান যে দিনা কে খুব ভালোবাসে তার প্রমাণ আগেই সে পেয়েছে। যুথি ও মন থেকে চায় ইশান দিনা কে যেনো পায়।
ইরহান বলে দিনা দের বাড়িতে যেনো তার মা কে নিয়ে আবার প্রস্তাব নিয়ে যায়।
মা কিছুতেই মানবে না ভাই। আগেই বলে দিয়েছে। এইসব ঝামেলা নিয়ে আমাকে বাড়ি থেকে বের ও করে দিয়েছে।
কিন্তু ইশান অভিভাবক ছাড়া কি এসব কাজে এগুনো যায়?
ভাইয়া আমার অভিভাবক তো তুমি। তুমি আরেকবার একটু চেষ্টা করো। ভাবিকে বলো যেনো একটু ওদের সাথে কথা বলে।
ইরহান যুথির দিকে তাকায়। যুথি চোখের ইশারায় সম্মতি দেয়। সে কথা বলবে।
আচ্ছা ঠিক আছে তুই ওদের বাড়িতে যা। ওখানে গিয়ে কল করবি আমায়।
আচ্ছা ভাই।
দিনাদের বাড়িতে ভালোই আয়োজন চলছে।মোটামুটি সকল কাছের আত্নীয়দেরই বলেছে। ছোট খাটো করে ভালোই আয়োজন করেছে।
দিনা ভিতরে ভিতরে ছটফট করছে।মনে তার শান্তি নেই। মনে হচ্ছে এই বুঝি সব শেষ হয়ে যাবে। ভালোবাসার মানুষ টা দূরে সরে যাবে।আর কাছে পাওয়া হবে না। নিজের বলে দাবি করতে পারবে না। অদৃশ্য এক শি’কল পায়ে বাঁধা পরবে। এর মধ্যে দিনার মা এসে তাড়া দিয়ে গেছে তারাতাড়ি তৈরি হওয়ার জন্য। মেহমানরা নাকি এসে পরছে। দিনার কয়েকজন বোনেরা মিলে দিনা কে সাজাতে বসে। দিনা রোবটের মতো বসে আছে। মেকআপ করতে পারছে না। চোখের পানি তে সব ধুয়ে যাচ্ছে বারবার।
মনে মনে ঠিক করে নেয় নিজের জীবনে ইশান কে ছাড়া আর কাউকে মেনে নিবে না।দরকার পরলে সব শেষ করে দিবে।নিজেকে সে শেষ করে দিবে। ইশান কেনো এখনো আসছে না সেটাই বুঝতে পারছে না। দিনার চোখ তো ঐ লোকটা কে দেখার জন্য তৃষ্ণার্ত হয়ে আছে। মন তার কু ডাকছে। ইশান কি আসবে না?
এরমধ্যে ডাক আসে দিনা কে নিয়ে যাওয়ার জন্য। দিনা তার মামাতো বোনের হাত খা’মচে ধরে। মাথা নাড়িয়ে চোখের ইশারায় বোঝায় সে যাবে না। অনেক কষ্টে বলে একটু ফোন টা দেওয়ার জন্য যুথির সাথে সে কথা বলবে।
দিনা কে ফোন দেয়। দিনা তারাতাড়ি যুথির ফোনে কল লাগায়। অপর পাশ থেকে কল রিসিভ করতেই দিনা আপু বলে কেঁদে উঠে।
দিনা বোন আমার তুই শান্ত হো।সব ঠিক হয়ে যাবে। একটু অপেক্ষা কর।ইশান এখনই যাবে।
এরমধ্যে বাইরে থেকে তুমুল শোরগোল কানে এসে লাগে। কিছু কথাবার্তার ধরনে বুঝতে পারে ইশান এসেছে।
ইশান এসে দিনার বাবার কাছে দিনা কে আবার চায়। এই নিয়েই ঝামেলার সৃষ্টি হয়েছে। যুথির মামি ইশান কে দেখে এমনিতেই রে’গে যায়। তারউপর আবার দিনা কে বিয়ে করতে চাওয়ায় নিজেকে সামলাতে না পেরে ইশান কে চ’ড় মা’রে।
চ’ড় খেয়েও ইশান নির্বাক। হাঁটু মুড়ে দিনার মায়ের পায়ের কাছে বসে পরে। ধরা গলায় বলে,, আমি জানিনা আপনার আমাকে নিয়ে কি সমস্যা। তবে আপনার কাছে আমার অনুরোধ আমার কাছ থেকে আমার ভালোবাসা টা কে’ড়ে নিবেন না। থাকতে পারবো না তাকে ছাড়া। দিনা কে আমায় ভি’ক্ষা দিন। আমি কথা দিচ্ছি নিজের সব টা দিয়ে আগলে রাখবো। দয়া করুন। আমাকে ফিরিয়ে দিবেন না। অনেক আশা নিয়ে এসেছি।
তখন দিনা ও ছুটে এসে দাঁড়ায়। ইশানের দিকে অশ্রু সিক্ত চোখে তাকিয়ে রয়।
প্লিজ আন্টি। একটু ভরসা করে আপনার মেয়ে টা কে আমার হাতে তুলে দিন।
ইশান কে এমন করে চাইতে দেখে দিনা কি আর বসে থাকতে পারে? এই প্রথম একটা সাহসীকতার কাজ করে সে।ইশানের মতো নিজেও মায়ের পায়ের কাছে বসে পরে।
মা তুমি একটু দয়া করো।আমি উনাকে ভালোবাসি। উনার সাথে থাকতে চাই। তুমি এমন করো না। এতোকিছুর পরও তুমি যদি আমাকে অন্যর সাথে বেঁধে দিতে চাও তাহলে আমি নিজেকে শেষ করে দিবো বলে দিলাম।
উপস্থিত সকলেই অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ওদের দিকে।
তখন দিনার বাবার কল আসে।উনি কল রিসিভ করে দেখে ইরহান ফোন দিয়েছে। কানে ধরে চুপ করে থাকে। ইরহান অনেক করে বোঝায়। উনি চুপচাপ সব শুনে। এমনকি যুথিও মামা কে বোঝায়। মেয়ের সুখের জন্য সব করছে।মেয়ে যদি ইশানের সাথে সুখে থাকে তাহলে সমস্যা কোথায়।
কয়েকজন কানা ঘোসায় খারাপ বললেও কয়েকজন আবার বলছে মেনে নিতে। পাত্রের বাবা রে’গে গিয়ে অনেক কথা শোনায়। কিন্তু পাত্র দিনার মায়ের কাছে নিজে অনুরোধ করে যেনো ওদের মেনে নেয়।
দিনার বাবা এগিয়ে এসে ইশান কে আর দিনা কে তুলে। তারপর ইশানের কাঁধে হাত রেখে বলে,,আমি তোমার সাথেই আমার মেয়ে বিয়ে দিবো।
ইশান খুশিতে দিনার বাবা কে ঝাপটে ধরে। খুশিতে কয়েকবার ধন্যবাদ জানিয়ে ফেলেছে।
দিনার মা একটা কথা ও বলেনি।ঐদিন ই বিয়ে দিয়ে দেয় দুইজন কে।ইশান তার বন্ধুদের নিয়ে এসেছিলো। সাথে ভিডিও কলে যুথি আর ইরহান ও ছিলো। সকলের মুখেই তৃপ্তির হাসি।
দিনা তো ইশান কে জড়িয়ে ধরে কি কান্না। অনেক ঝড়, ঝা’পটা পেরিয়ে অবশেষে পেয়েছে সে। খুশির কান্নায় বাঁধ ভেঙেছে।
যুথি ও ইরহান কে জড়িয়ে ধরে বসে আছে অবশেষে সব সমাধান হলো।
কথা হয়েছে ইশানের বাড়ির কাজ কমপ্লিট হলে আর ইরহান যুথি দেশে আসলে দিনা কে অনুষ্ঠান করে নিজের বাড়িতে তুলবে। ইরহান ও জানায় তারা খুব দ্রুত দেশে আসার চেষ্টা করবে।
————————–
ইরহান এটা জানতেও পারে তার ভাই তার জন্য তার নামে জায়গা কিনেছে। প্রথমে একটু রাগারাগি করে কেন করতে গেলো। ইশান তখন মন খারাপ করে বলে,,আমার বড় ভাই কে ভালোবেসে কি আমি কিছু দিতে পারবো না? এর বিনিময়ে কি আর বলবে ইরহান। তাই ইশান কে বলে তার জন্য ঐ জায়গায় ছোট্ট একটা ঘর তৈরি করতে পাকাপোক্ত করে। দেশে আসলে ইরহান যুথি কে নিয়ে সেই ঘরেই থাকবে সব সময়।
ইশান ইরহানের কথা মতো পাকাপোক্ত করে নিজের ঘরের পাশেই ইরহানের জন্য খুব সুন্দর ছোট্ট একটা ঘর তৈরি করে।
—————————
অন্যদিকে তাছলিমা বানুর শরীর ভালো না। খুবই খারাপ অবস্থা। বাথরুমে পরে গিয়ে কোমরে আঘাত পেয়েছে। ইমন ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলে,ডাক্তার জানায় উনি আর হাঁটতে পারবেন না। সব শুনে লিমা আর কিছুতেই উনাকে বাড়িতে রাখতে পারবেন না। আবার উনার কথা ও বন্ধ হয়ে গেছে। কিছু বলতে পারছে না শুধু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে ছাড়া থাকা। লিমা এসব কিছু সেবা টেবা করতে পারবে না ইমন কে জানিয়ে দেয়।
ইমন ইশান কে ফোন দিয়ে বলে,,মা কে যেনো নিয়ে যায়। নয়তো বৃদ্ধাশ্রমে দিয়ে আসবে।
সব কথা শুনে ইশান খুব রে’গে যায়। এতো কিছু ঘটে গেলো আগে কেনো জানালো না তাকে। এমন দিন ও আসেনি তার মা কে বৃদ্ধাশ্রমে দিতে হবে।
ইশান এসে নিজের বাড়িতে নিয়ে যায় তাছলিমা বানু কে।
———————-
এতো অন্যায় করে ইমন লিমা ও পার পায়নি।ঘরে তাদের অশান্তি লেগেই আছে। নিজেদের সন্তানের জন্য অনেক চেষ্টা করছে ফলাফল শূন্য। অনেক পরীক্ষার পর জানতে পারে লিমা কখনো মা হতে পারবে না। এই নিয়ে তাদের মধ্যে প্রতিদিন ঝামেলা হচ্ছে।
———————–
ইরহান আর যুথি দেশে আসে। তারপর আয়োজন করে দিনা কে ইশানের ঘরে তোলা হয়। যুথি দুই দিকের দায়িত্ব এক সাথে পালন করে। এক দিকে ভাবির দায়িত্ব অন্য দিকে বোনের দায়িত্ব।
সবকিছু শেষ করে৷ দিনা কে ইশানের রুমে দিয়ে আসে। রুমে ঢুকে যুথি চারপাশে চোখ বুলিয়ে ইরহান কে খোঁজার চেষ্টা করে। তার মধ্যে হুট করে দরজা বন্ধ করার শব্দ কানে আসে। ঘার ঘুরিয়ে দেখার আগেই ইরহান পেছন থেকে যুথিকে নিজের সাথে আবদ্ধ করে নেয়।
সব দায়িত্ব পালন করতে করতে ম্যাডাম মনে হয় আমি নামক কেউ আছি সেটা ভুলে গেছে তাই না?
— যে আমার সাথে আছে। যার বসবাস আমার মন গহীনে তাকে ভোলার প্রশ্নই আসে না।
— হুু দেখলাম তো কতো মনে রেখেছো।
যুথি ঘুরে ইরহানের গলা জড়িয়ে ধরে বলে,, তো কাজ করা লাগবে না? ওদের দুইটা কে বাসর ঘরে দিয়ে আসলাম। ভাবির একটা দায়িত্ব আছে না?
হ্যা এবার বউয়ের দায়িত্ব পালন করো। আমারও আবার বাসর করতে মন চাচ্ছে। তাছাড়া এবারতো একটা নতুন অতিথি দরকার কি বলো? বলেই ব্রু নাচায় ইরহান।
হুট করে যুথি কে কোলে নিয়ে নেয়।
আরে,, করছেন কি?
খড়কুটোর বাসায় টোনাটুনির সংসারে একটা ছোট্ট জীবন্ত পুতুল আনার ব্যবস্থা করছি।
#সমাপ্ত।