গোধূলির নিমন্ত্রণ পর্ব -০৪

“গোধূলির নিমন্ত্রণ”
নূরজাহান আক্তার আলো
[০৪]

-“তুমি কি আজীবন স্বার্থপরই থেকে যাবে আদিত্য?”

অনেকদিন পর “তুমি” ডাক শুনে আদিত্য থমকে গেল। পিছু ফিরে নিরুত্তর হয়ে চেয়ে রইল অশ্রুসিদ্ধ নেত্রে তাকিয়ে থাকা এক অভিমানিনীকে। যার কথার ভাঁজে ভাঁজে নীরব অভিমান ঝরে পড়ছে। যার চোখে স্পষ্টভাবে ভেসে উঠেছে
এক আকাশ সমান অভিযোগ। যার ঠোঁটের কোণে তাচ্ছিল্য পূর্ণ হাসি। সেই অভিমানিনীকে জবাবের আশায় তাকিয়ে থাকতে দেখে আদিত্য চমৎকার হেসে বলল,
– ” নিজের জিনিস আদায়ের ব্যাপারে আমি বরাবরই স্বার্থপর ছিলাম, আছি, আর তাই থাকব।”
-”আমি আদৌও তোমার ছিলাম?
-”ছিলে না?”
-‘তোমার মনকে জিজ্ঞাসা করো।”
-”মন যতটুকু জানার ততটুকুই জানে তাই প্রয়োজন নেই।”
– ”তবে শুধু শুধু আমার সুখ নিয়ে টানাটানি করছো কেন? আমি ভালো আছি দেখে সহ্য হচ্ছে না? নাকি আমি না মরা অবধি শান্তি দিবে না? অধিকার ছেড়ে স্বেচ্ছায় সরে গেছি এবার অন্তত স্বস্তির শ্বাস নিতে দাও! প্রাণ খুলে বাঁচো!”
-”তুমি খুব স্বার্থপর একটা মেয়ে তা কী জানো? জানো না তাই না? তবে এখন জেনে নাও, তুমি খুব, খুব, স্বার্থপর। যে সর্বদা নিজের কথা ছাড়া অন্যের কথা ভাবতেও পারে না।”

একথা শুনে মেধার ঠোঁটে তাচ্ছিল্যের হাসি ফুটে উঠল। নেত্র জোড়া ছলছল করে উঠল অশ্রুজলে। তা দেখে আদিত্য ভ্রু কুঁচকে কিছু বলতে গেলে মেধা উল্টো পথ ধরে হাঁটা আরম্ভ করল। আদিত্যও ডাকল না সেও চলে গেল বাসার পথ ধরে।
রাগে তার শরীর জ্বলছে। মেয়েটাকে দু’থাপ্পড় দিতে পারলে রাগটা বোধহয় কমতো। দিন দিন বড্ড জেদি হয়ে যাচ্ছে। না তাকে কিছু বলতে দিচ্ছে আর না নিজেদের দুরত্ব কমাচ্ছে।
এভাবে চলতে থাকলে কীভাবে হবে? শুধু তার অহেতুক রাগ আর জেদের কারণেই কত্তগুলো মানুষ শুধু শুধু কষ্ট পাচ্ছে। এসব ছেলেমানুষীর মানে হয়?ওদিকে মেধা সিঁড়ি বেয়ে
তরতর করে উপরে উঠছে।তার চোখের পানি ঝরছে অঝর ধারায়। তখন তার ফোনে মেসেজ টোন বেজে উঠল। পরপর চারটা মেসেজ আসায় কৌতুহলবশত মেসেজ ওপেন করে
দেখল। আননোন নাম্বার। তবে মেসেজে লেখা, ‘ সময় শেষ।’
পরের মেসেজটা দেখার আগে তার বান্ধবী নাতাশাকে দৌড়ে নিচে নামতে দেখা গেল। নাতাশা ওকে দেখে কাঁদতে কাঁদতে
জানাল মেধাকে এক্ষুণি হল ছাড়তে হবে। হল কতৃপক্ষের আদেশ এসেছে। হঠাৎ এমন আদেশ আসায় নাতাশা অবাক হলেও মেধা স্থির, স্বাভাবিক। মুখে রা শব্দটুকুও নেই। ঠোঁটে তাচ্ছিল্যের হাসি বিদ্যামান। তাদের কথা শেষ হতে না হতেই একজন সিনিয়র সহকারী এসে মেধাকে সব গুছিয়ে নিতে বলল। মেধা দীর্ঘশ্বাস ফেলে রুমে গিয়ে ব্যাগ প্যাক গুছিয়ে
নিয়ে বেরিয়ে এলো। ভর সন্ধ্যাবেলায় তাকে বের হতে দেখে নাতাশা পিছু পিছু আসতে গেলে বারণ করে দিলো। তারপর রিকশা নিয়ে চলে গেল বাস স্ট্যার্ডে। সেখানে পৌঁছে টিকিট কেটে উঠে বসল নির্ধারিত বাসে। খানিকক্ষণ পরে বাঁ হাতে হেঁচকা টান লাগায় চমকে উঠল পাশ ফিরে তাকাল। পাশেই
আদিত্য দাঁড়িয়ে আছে রাগান্বিত চেহারায়। যেন তাকে গিলে খাবে। তখন আদিত্যের ফোনে কল আসায় সে রিসিভ করে বলল, ” পেয়েছি, সঠিক সময়ের জানানোর জন্য থ্যাংকস্।’
তারপর কথা শেষ করে মেধাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বাস থেকে হিরহির করে টেনে বের করল। মেধা হাত ছুটাতে গেলে আদিত্য হাতের বাঁধন আরো শক্ত করে ধরল। এভাবে
পাবলিক প্লেসে মেয়েটাকে টানহেঁচড়া করতে দেখে তিনজন ভদ্রলোক বাঁধা দিতে গেলে আদিত্য বলল,
-“সামান্য ব্যাপারে বউ রাগ করে চলে যাচ্ছে। বর হিসেবে তাকে আঁটকানো আমার গুরু দায়িত্ব। আপনারা কেউ ভুল বুঝে অহেতুক সময় নষ্ট করবেন না, প্লিজ।”
আদিত্যের কথা শুনে লোকগুলো সরলো না বরং তাদেরকে ঘিরে ধরল। একটা ছেলে বাহাদুরি করে আদিত্যের শার্টের কলার ধরার আগেই মেধা তার হাত ধরে ফেললো। ছেলেটা ভ্রু কুঁচকালেও কিছু বলতে পারল না। কারণ মেধা হাত ধরে যা বোঝানোর বুঝিয়ে দিয়েছে। তারপর আদিত্য মেধাকে নিয়ে অন্য বাসে উঠে বসল কারণ সেও যাচ্ছে চট্টগ্রাম। গল্প যেখানে শুরু সেখানেই সমাপ্তি টানা উত্তম। মেধা মাথা নিচু তার হাতের দিকে তাকিয়ে আছে। আদিত্য এখনো ওর হাত ধরে সিটে হেলান দিয়ে মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। হয়তো কিছু বলতে চাচ্ছে, বোঝাতে চাচ্ছে। মেধা আদিত্যের সঙ্গে কথা বলা তো দূর তাকালোও না। সে স্মৃতিচারণে ডুবে গেল। ফিরে গেল চার মাসে আগের সোনালী দিনগুলোর পাতায়। আদিত্যের বর্তমান বাসা চার তলা বিশিষ্ট। আদিত্যরা পুরো পরিবার থাকে তিন তলায় বাদ বাকি সব ভাড়া। তাদের বাসা থেকে এক বাসা পরেই মেধাদের নতুন বাসার কাজ চলছে। সেটার কাজ তখন চলমান। এজন্য মেধারা আদিত্যদের দুই তলার ফ্ল্যাটটা ভাড়া নিয়েছিল। সেখানেই বাবা মায়ের সঙ্গে
দিনকাল ভালোই কাটতো। একদিন সিঁড়ি বেয়ে উঠার সময়
অসর্তকতার ফলে ধাক্কা লেগেছিল আদিত্যের আম্মুর সঙ্গে।
আদিত্যের আম্মু চোখ মুখ কুঁচকে বিরক্ত হলেও কিছু বলতে পেরেছিলেন না। কারণ তার সঙ্গে তার বাবা ছিল। ভদ্রতার খাতিরে সে সরি’ও বলেছিল। কিন্তু কেন জানি সেদিনের পর থেকে উনার সঙ্গে দেখা হলেই মুখটা থমথম করে ফেলতেন।
সালাম দিলে বিরক্তির সঙ্গে জবাব দিতেন। কখনো কখনো
না শোনার ভান ধরে সালামের উত্তরও নিতেন না। তারপর থেকে সেও ওই মহিলাকে এড়িয়ে যেতো। হঠাৎ’ই একদিন তিনতলা থেকে উচ্চশব্দে পুরুষালি কন্ঠের সঙ্গে কাঁচ ভাঙার শব্দ ভেসে আসে। বাসা ওয়ালার ফ্ল্যাট এজন্য কেউ সাহস করে যায় না। সিঁড়ি অবধি গিয়ে ফিরে আসে কারণ অভদ্র মহিলার নাকি দুটো ছেলে আছে। বড় টা নাকি আরো বেশি অভদ্র, বেয়াদব। এমন তেমন হলে অপমান করতেও ছাড়ে না। এসব শুনে মেধারা কিছু না বললেও পরেরদিন সকালে
ওই দাপুটে মহিলা মেধাদের বাসায় তেঁড়ে আসে। চিৎকার চেঁচামেচি করে জানিয়ে যায় একের পর অভিযোগ। উনার
প্রথম অভিযোগ মেধা উনার ছেলে আদিত্যকে চিঠি দেয়।
দ্বিতীয় অভিযোগ মেসেঞ্জারে মেসেজ দিতেই থাকে, কলের পর পর করে সময়ে অসময়ে। কখনো কখনো রাস্তায় নাকি একে ওকে ধরে বলে আদিত্য নাকি তার বয়ফ্রেন্ড। এছাড়াও
একদিন আদিত্যের বন্ধুর রেস্টুরেন্টে আদিত্যের নামে টাকা বাকি রেখে পালিয়ে এসেছে। এসব শুনে মেধা মাথায় হাত
দিয়ে বসে আছে। উনার প্রতিটা কথা তার মাথায় উপর দিয়ে যাচ্ছে। পুরো বিল্ডিংয়ের মানুষ তখন তাদের ফ্ল্যাটের সামনে
উপস্থিত হয়েছে। আম্মুর চেঁচামেচি শুনে আদিত্যেও সিঁড়ি বেয়ে নেমে এসেছে। সে দাঁড়িয়ে থেকে আগে শুনলো তার আম্মুর চিৎকারের কারণ। যখন দেখল যা ঘটছে ভুল হচ্ছে তখন তড়িঘড়ি এগিয়ে এসে তার আম্মুকে থামাল। তারপর জানাল, সে যার কথা বলেছে সে এই মেধা নয়। তার ছোট ভাই আমানের বন্ধুর বোনের নামও মেধা। সেই মেধা তাকে বিরক্ত করে। আদিত্যের কথা শুনে আদিত্যের মায়ের মুখ টা চুপসে গেল। তবে ভদ্রমহিলা ‘সরি’ তো বললোই না গটগট করে হেঁটে চলে গেল। আদিত্য মেধার বাবা মাকে সরি বলে কিছু মনে না করার অনুরোধ করল। তারপর থেকে মেধা ওই
মহিলার পুরো পরিবারকে এড়িয়ে চলতো। তবে মাঝে মাঝে আদিত্যের সঙ্গে দেখা হতো, চোখাচোখি হতো। একদিন ঝড় বৃষ্টির দিনে রিকশা পাচ্ছিল দেখে দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে
ছিল। ভিজে জবজবে হয়ে বেহাল অবস্থা তার। তখন বাইক থামিয়ে আদিত্যও তড়িঘড়ি আশ্রয় নিয়েছিল সেই দোকানে।
চেনাজানা হয়েও অচেনার মতো পাশের মানুষটাকে এড়িয়ে যাচ্ছিল নিঁখুতভাবে। তখন আদিত্যই বলল,
-‘কোন কলেজে পড়ো?”
মেধা জবাব না দিয়ে বৃষ্টির মধ্যেই হাঁটতে শুরু করে। অভদ্র মহিলাটা এমনিতে সেদিন যা ইচ্ছে বলে গেছে। কোনোভাবে যদি জানতে পারে রাস্তায় উনার ছেলের সঙ্গে কথা বলেছে তবে আর রক্ষা নেই। কিন্তু তাকে অবাক করে দিয়ে আদিত্য তার পিছু পিছু হাঁটতে লাগল। মাথার ভেজা চুলগুলো ঝাড়া
দিয়ে বলল,
-‘ভালো লেগেছে তোমায়, ঘরণী হবে আমার?”
-‘কিহ্!’
-‘কি আশ্চর্য চেঁচাচ্ছ কেন?’
-‘পৃথিবীতে যদি একটা ছেলে অবিবাহিত থাকে বিয়ে করার জন্য তবুও আপনাকে বিয়ে করব না আমি। আর আপনার দাপুটে আম্মুর জন্য আপনার বউ টিকবে না দেখে নিয়েন?’
-‘বাড়তি কথা না বলে আমার কথার জবাব দাও।’
-‘মাথা মোটা নাকি বাংলা বুঝেন না। আপনার সঙ্গে প্রেম কিংবা বিয়ে কোনোটাই করবো না। সোজাসাপ্টা বলেছি এবার বুঝলেন নাকি পুনরায় রিপিট করবো?’

প্রেম কিংবা বিয়ে কোনোটাই করবে না বললেও নিয়তিতে ছিল অন্যকিছু। ওই বদমেজাজী ছেলেটার প্রেমে পড়েছিল সে। ভালোবেসেছিল মনের অন্তঃস্থল থেকে। স্বপ্নে বুনেছিল নানান জল্পনা কল্পনার তুলি টেনে। এড়িয়ে এড়িয়ে চলতে চলতে মন হারিয়ে ফেলেছিল ওই গোমরামুখো প্রতি। তখন একবারো ভয় হয় নি উনার আম্মুর।উনি যখন জানবে তখন
কী হবে? কীভাবে নিবে ব্যাপারখানা?পরোয়া করে নি বাবা মায়ের সন্মানের! চুপিচুপি দেখা করা, ঘুরতে যাওয়া, রাতে ছাদে দেখা করা, রাত জেগে ফোনে গল্প করা, ইত্যাদি। এসব
মিলিয়ে ভালোই চলছিল দিনকাল। কিন্তু একদিন মাঝরাতে মেধা আবদার করে সেই মুহূর্তেই সে দেখা করবে। আদিত্য প্রথমে নাকচ করলেও পরে রাজি হয়ে ছাদে যায়। ততক্ষণে মেধা ছাদে পৌঁছে যায়। সেই মুহূর্তে চারতলার এক ভদ্রলোক
ডিডটিতে যাওয়ার জন্য পায়ে বুট পরছিলেন। পেশায় উনি পুলিশ সদস্য। উনাদের ফ্ল্যাটের দরজা সিঁড়ির কাছাকাছিই সিঁড়ি। এজন্য কে যাচ্ছে না যাচ্ছে সব দেখা যায়। এতরাতে প্রথমে মেধা তারপর আদিত্যকে এদিক ওদিকে ঘাড় ঘুরিয়ে যেতে দেখে উনি আড়ালে চলে যান। তারপর উনার স্ত্রীকে ডেকে একথা জানান। সত্য মিথ্যা যাচাই করতে স্ত্রীকে সঙ্গে করে ছাদে উঁকি মেরে আসেন দু’বার। উনাদের সন্দেহ ঠিক হওয়াতে দু’জনে সলাপরামর্শ করে আদিত্য এবং মেধার পরিবারকে ডেকে জাগিয়ে তোলে। একে একে জানান পুরো ঘটনা। অতঃপর দুই পরিবারের সদস্য ছাদে গিয়ে দেখে ওরা দু’জন বসে আছে ছাদের ধার ঘেষে।হঠাৎ উনাদের আগমনে
মেধা ভয় পেয়ে খামচে ধরে আদিত্যের বাঁ হাত। হইহট্টগোল শুরু পুরো বিল্ডিং জুড়ে। একেক জন একেক রকম অভিমত ছুঁড়তে থাকে তাদের মতে। উনাদের অভিমত শুনে মেধা মুখ লুকিয়ে কাঁদতে থাকে। তখন আদিত্যের মা মেধাকে হেঁচকা টানে সামনে এনে স্বজোরে এক থাপ্পড় বসিয়ে দেন। আদিত্য মেধাকে নিজের কাছে টানতে গেলে বাঁধ সাজে মেধার মা।
এভাবে তর্ক বির্তক চলতে থাকে অনেক সময়। একটা সময়
একজন বলেন, এরা যখন রাত বিরেতে এভাবে দেখা করে, না জানি তাদের সম্পর্কটা কত গভীর। তাছাড়া জানাজানি হয়ে গেছে যখন তখন এদের বিয়ে দেওয়া শ্রেয়। নয়তো এরা কখন কী ঘটিয়ে ফেলে। একথা শুনে তাদের পরিবার দ্বিমত পোষণ করলেও কাজ হয় না। একপর্যায়ে আদিত্য মা বি/শ্রী
ভাষায় গালাগালি দিতে থাকে মেধাকে।আদিত্য কোনোভাবে
তার মাকে থামাতে পারছিল না। তাকে কিছু বলতে দেওয়াও হচ্ছিল না। রাত তখন তিনটা। মাঝরাতে চিৎকার চেঁচামেচি
না করে সকালে বিচার হবে ঠিক করে সকলে প্রস্থান করেন।
তবে আদিত্যের মা আদিত্যের দিকে তাকিয়ে বলে যান,
-‘তোমার রুচি এত নিম্নমানের কল্পনাও করে নি। যোগ্যতা বলেও কিছু আছে।’
একথা শুনে মেধা মাথা নিচু করে কাঁদতে থাকে। মেধার মা বাবা অপমানে নীরবে অশ্রু ঝরিয়ে স্থান ত্যাগ করে। পরদিন সকালে আদিত্যের চোট পাটে বিচার বসানোর সাহসও করে না কেউ। তবে মেধারা তার পরদিনই বাসা ছেড়ে চলে যায়।
একথা আদিত্য ক্ষুণাক্ষরেও টের পায় না। সেদিনের পর সে মেধার সঙ্গে যোগাযোগ করতেও পারে না। এভাবে কিছুদিন পর জানতে পারে মেধা ঢাকায় চলে গেছে। আর তার বাবা মা চট্টগ্রামেই অবস্থানরত। ঢাকায় নতুন করে কলেজে ভর্তি হয়ে পড়াশোনা মন দেয় সে। তবে আদিত্যের সব খবরই তার কানে আসে। এবং হঠাৎ একদিন আদিত্যের আগমন ঘটে তার কলেজে। যদিও পরে জেনেছে আদিত্যের আপন মামা
এই কলেজের কলেজের অধ্যাপক।সেই সঙ্গে আদিত্য নাকি
জরুরি ভিত্তিতে মাত্র তিন মাসের জন্য শিক্ষকতা করবে। এ ছাড়া সে একজন সফল ব্যবসায়ী। নিজের প্রচেষ্টায় বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ারে একটা ব্যবসা শুরু করেছিল। প্রথম ধাপে লস প্রজেক্ট হলেও বাবার সাহায্য পেয়ে ধীরে ধীরে পৌঁছে গেছে অনেকদূর। পড়াশোনা শেষ করে পরিশ্রমের মাধ্যমে নিজস্ব অফিস তৈরি করেছে। ধীরে ধীরে তার বয়সের কোঠা এখন
আটাশের ঘরে। আর এ সাতাশটা বসন্ত পার করে মেধা তার
মন গহীনে প্রণয়ের কলি ফুটিয়েছে, প্রেম নামক জীবাণুতে
হৃদয় আক্রান্ত করেছে। আজ হোক অথবা কাল জানাজানি তো হতেই। ভালোবেসেছে অন্যায় তো করে নি, তবে? মূখ্য কথা, মনে এত ভয় থাকলে ভালোবাসতে কে বলেছে?মেধা আদিত্যের সঙ্গে যোগাযোগ করে না কেন? কী দোষ তার? সে তো মেধাকে প্রত্যাখান করে নি কারো ভয়ে পিছিয়ে যায় নি। আর একারণেই আদিত্যের এত রাগ মেধার প্রতি। তবে আদিত্য মনের ভুলেও ভাবে না মেধাকে ভুলে যাওয়ার কথা, হারিয়ে ফেলার কথা। সে এটাও মানে, মেধার অল্প বয়স ও আবেগী মন। স্বেচ্ছা নতুবা অনিস্বেচ্ছায় ভুল করেছে অথবা কোনো কারণে এমন পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়েছে।কৌফিয়ত
নিবে তবে সময়ের অপেক্ষা। মোদ্দা ব্যাপার হচ্ছে, আদিত্য
মনে রাগ পুষে রাখে নি। তবে এমন ভান করে যেন মেধাকে
সহ্য করতেই পারে না। তাকে কিছুদিন কষ্ট দেওয়া ফল এটা।
তারপরের কাহিনি তো সবার জানা। এতক্ষণ অতীত ভাবতে গিয়ে মেধা ঘুমে তলিয়ে গেছে। মাথা হেলে আছে আদিত্যের কাঁধে। নিশুতি রাতে ওদের বাস চলছে আপন গতিতে। তবে আদিত্য ভ্রুঁ কুঁচকে ফোনে টাইপ করতে ব্যস্ত। ফোনের মধ্যে চলছে এক অঘোষিত যুদ্ধ তাও তার মায়ের সঙ্গে।

চলবে…..!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here