#গোধূলী_বেলার_স্মৃতি (Unexpected story)
#পর্ব-৪
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
ছোট সাহেব আমার একেবারেই কাছে। আমাদের মধ্যে তেমন একটা দুরুত্ব নেই। আমি শুধু উনার চোখের দিকে তাঁকিয়ে আছি। রুদ্রিক ভালো করে কাজলকে লক্ষ করে দেখলো। কাজলের কুচকুচে কালো চোখ-জোরা শুধুমাত্র তার চোখের মধ্যে সীমাবদ্ধ। এই চোখ গুলো যেনো অনেক কিছু বলতে চায় রুদ্রিককে।
রুদ্রিকের ভাবনার মাঝেই কাজল মুখ দিয়ে উম উম করতে থাকে। রুদ্রিক কিছুটা বিরক্ত হয়ে, কাজলের মুখ চেপে ধরে বলে উঠে,
“এতো উম উম করছিস করছিস কেন? ”
সারাদিন শুধু সাদি ভাইয়া আর সাদি ভাইয়া? সাদি ছাড়া আর কারো নাম মনে থাকে না তোর তাইনা?”
আমি কোনোরকম উনার হাত নিজের মুখ থেকে ছাড়িয়ে, জোড়ে জোড়ে নিঃশ্বাস নিতে নিতে বলি,
“ভারি খারাপ লোক আপনি! এমনভাবে মুখটা চেপে ধরেছিলেন, এখুনি দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছিলো। রাক্ষস লোক একটা!
উনি আমার হাত চেপে ধরে বলে,
” তুই আমাকে রাক্ষস বললি? ”
——“বেশ করেছি। ”
——–“তুই..”
উনার কথা শেষ হওয়ার আগেই…আমি ধরা গলায় বললাম,
—-“আপনি এখানে কেনো এসেছেন? দেখতে এসেছেন একা লাইব্রেরিতে আমি কিংবা সাদি ভাইয়া কি করছিলাম? নিজের বন্ধুর প্রতি বিশ্বাস নেই কিন্তু আমার প্রতিও কী একটুও নেই। ”
আমার কথা শুনে ছোট সাহেব কিছুটা চুপ হয়ে আবারোও বলে উঠেন,
“আমি তোর প্রশ্নের উত্তর দিতে বাধ্য হয়নি। ”
——“হুম আপনি আমার প্রশ্নের উত্তর দিতে বাধ্য নন। বড়লোক বলে কথা কিন্তু আমার একটা প্রশ্নের উত্তর দিতে আপনি বাধ্য। আমার যদি সাদি ভাইয়ার সাথে কিছু থেকেও থাকে তাহলে আপনার কী? আজকে আমাকে উত্তর দিতেই হবে আপনাকে। ”
ছোট সাহেব আমার হাত আরো শক্ত করে চেপে দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠে,
“একবার বলেছিস কিন্তু পরের বার যেনো এই কথা তোর মুখে না শুনি।
” I Don’t like to hold anyone accountable
for anything…
(আমি কাউকে জবাবদিহি করতে পছন্দ করিনা।)
কথাটা বলেই উনি আমার হাত ছেড়ে উঠে দাঁড়াতে চাইলে আমি উঠে দাঁড়িয়ে উনার সোজাসোজি দাঁড়িয়ে বলে উঠি—
‘Sometimes the questions has to be answered… ‘
(কিছু কিছু সময় প্রশ্নেত উত্তর দিতে হয়)
আমজ আবারো বলে উঠলাম,
“তারাই জবাবদিহি করতে পছন্দ করেনা, যাদের কাছে প্রশ্নের উত্তর নেই এবং তারা কখনোই কোনো প্রশ্নের মুখোমুখি হতে পারে নাহ। ”
ছোট সাহেব কিছুটা দমে গেলেন আমার কথায়।
তখনি সেখানে জেনি আপু চলে এলো। জেনি আপু কিছুটা জোড় কন্ঠে বলে উঠলেন,
“রুদ্রিক তুমি এখানে? আমরা সবাই তোমার জন্যে কেন্টিনে ওয়েট করছি। ফাংশন নিয়ে কিছু কথা ছিলো।”
জেনি আপুকে দেখে আমি উনার কাছ থেকে তাড়াতাড়ি সরে আসি।
উনি জেনি আপুর দিকে তাঁকিয়ে বলে উঠেন,
— “আমার কাজ ছিলো, লাইব্রেরিতে। তুমি যাও, আমি আসছি। ”
জেনি আপু আমার দিকে এক পলক তাঁকায়। উনার চোখ -মুখ দিয়ে যেনো আমার প্রতি চাপা ক্ষোভ উপচে পড়ছে। কিন্ত তবুও তিনি বেড়িয়ে গেলেন।
উনি আমার গাল নিজের হাত দিয়ে চেপে বলে উঠেন,
“চাইলে অনেক কিছুই বলতে পারি, কিন্তু পারি নাহ।আমি যে গোলক ধাঁধায় পড়ে গিয়েছি। না পারছি বলতে আর না পারছি সহ্য করতে। ”
উনার জড়ানো কন্ঠে আমার শরীরে মৃদ্যু কেঁপে উঠলো।
আমি পিছনে ঘুড়ে যায়। উনি মৃদ্যু হেঁসে পকেটে হাত ঢুকিয়ে শিষ বাজাতে বাজাতে চলে যান।
_____________________________ লেখিকাঃ জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি…।
আমরা এই মুহুর্তে আপাতত ভার্সিটির মাঠে বসি আছি।
সাদি ভাইয়ার হাঁসতে হাঁসতে পেটে খিল ধরে যাচ্ছে।
আমি বলে উঠলাম,
“ভাইয়া একটু থামবেন? ”
—–“নাহ গো আমি থামতে পারছি।
সিথি নক কামড়ে আমার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে বলে,
“মানে সিরিয়াসলি? ভাইয়া তোকে এইসব বলেছে? ”
সাদি ভাইয়া কিছুটা হেঁসেই বললেন,
“তোমাদের ভাই-বোনের মতিগতি বাবা আমি বুঝি নাহ। শেষে কী নাহ রুদ্রিক আমাকে নিয়ে জ্বেলাস? এইটাও দেখতে হবে? ”
সিথি কিছুটা চোখ পাকিয়ে বলে,
“আমাকে একদম ভাইয়ার সাথে মিলাতে যাবেন নাহ বলে দিলাম হুহ। ”
সাদি ভাইয়া আবারোও আরেকদফা হেঁসে দিলেন। সিথি মুখ ঘুড়িয়ে ফেলে।
আমার দৃষ্টি ভার্সিটির তিনতলার করিডরে। ছোট সাহেব কারো সাথে হেঁসে হেঁসে কথা বলছেন। হয়তো উনার গার্লফ্রেন্ড এর সাথে। বাতাসে উনার ছোট ছোট চুলগুলো কপালে লেপ্টে আছে। আমার অবাধ্য চোখ যেনো বারবার উনাতে সীমাবদ্ধ। উনার বাঁকা দাঁতের হাঁসি যেনো বলে দিচ্ছে,
“এই হাঁসি সবই মিথ্যে, এই হাঁসির মাঝে লুকিয়ে বেদনাদায়ক স্মৃতি,হয়তো রয়েছে কোনো কঠিন সত্য। যা থেকে গেছে সকলের আড়ালে। ”
________________
আমি রুমে ঢুকে মায়ের কাছে গিয়ে বলি,
“মা আমি ছাঁদে যাচ্ছি। গাছগুলো দেখে আসি।
মা রান্নাঘর থেকেই বলে উঠলো,
—–” কাজল মা আগে কিছু মুখে দিয়ে নে। ”
——” বাবা আসুক,তারপর খাবো। ”
——-“আজ তোর বাবার আসতে দেরী হবে। বড় সাহেব আজ বাড়ি ফিরছেন। তাই তোর বাবা গাড়ি নিয়ে গিয়ে, এয়ারপোর্ট থেকে উনাকে আনতে গিয়েছেন।”
আমি বলে উঠলাম,
“তাহলে তো ভালো-ই ‘ বড় সাহেব ফিরছে। আচ্ছা মা আমি একটু ছাদে গিয়ে গাছগুলো দেখে আসি…।
-তাড়াতাড়ি ফিরে আসিস…।
______শেখ বাড়িতে,,…..
দিয়া আজ প্রচন্ড এক্সাইটেড তার ভাইয়ু ফিরছে বলে কথা। দিয়া একটা সেল্ফি তুলে। সিথি দিয়ার পাশে বসে বলে উঠে,
” দিয়া পিপি আজ তুমি এতো হ্যাপি যে? ”
—-“ভাইয়া আমেরিকা থেকে প্রায় দুইমাস পর বিসনেজ ট্যুার থেকে ফিরছে। আমি তো ভাইয়াকে বলেই দিয়েছি। আমার জন্যে অনেক গুলো ড্রেস এন্ড ম্যাক-আপ এনে দিতে। ”
—–“আমিও পাপাকে সব বলে দিয়েছি। বাট তুমি এতো স্লেল্ফি না চলো মা ডাকছে। “,
দিয়া এক্টা সেল্ফি তুলে বলে —
“তুই যা আমি আসছি। জাস্ট আরেকটা সেল্ফি। ”
সিথি হেঁসে চলে যায়।
দিয়ামনি শেখ আফজাল শেখের ছোট্ট আদুরের বোন। বয়স ৩০ এর কোটায় পৌছালেও এখনো সে বিয়ে করেনি। তার অবশ্য কারণ কেউ জানেনা। বাড়ির সবাইকে নিয়ে মাতিয়ে রাখতেই সে পছন্দ করে।
রুদ্রিক বাড়িতে ঢুকতেই দিয়া তড়িঘড়ি করে রুদ্রিকের কাছে গিয়ে বলে,
“রুদ্রিক আজকে ভাইয়ু আসছে।”
—–“তো আমি কী করবো?
রুদ্রিকের পালটা প্রশ্নে দিয়া বলে উঠে,
“তুই অন্তত আজকে ভাইয়ুর সাথে কথা বলিস। নাহ মানে ভাইয়ু প্রায় দুইমাস পর বাড়ি ফিরছে। ”
রুদ্রিক গম্ভীর সুরে বলে উঠে,
“ছোট পিপি তুমি জানো এইসব সম্ভব নয় তাহলে কেনো বলছো? তুমি জানো এইসব আমি করবো নাহ। আমার পক্ষে পসিবল নাহ। ”
—–“আসলে রুদ্রিক তুই একটু ভাইয়ুকে বুঝার চেস্টা করো।”
—–“ছোট পিপি তুমি প্লিয মিঃ আফজাল শেখের নামে আমার কাছে সাফাই গাইতে এসো নাহ। ”
দিয়া কিছু বলবে তার আগেই রুদ্রিক রাগে উপরে যায়।
দিয়া বলে উঠে,
“রুদ্রিক আমার কথাটা তো শুন। যাহ বাবাহ চলে গেলো।”
রুদ্রিক রুমে এসে নিজের গাঁয়ের স্লিভ কটন টি-শার্ট টা বিছানায় ছুড়ে ফেলে। প্রচন্ড পরিমান রাগ লাগছে তার। লোকটার সাথে কথা তো দূরে থাক। ওই লোকটাকে সে সবচেয়ে বেশি ঘৃণা করে। সবথেকে বেশি।
এদিকে,,
আমি ছাঁদে উঠে দেখি৷ পরিবেশটা বেশ সুন্দর। চারদিকে মৃদ্যু বাতাস বইছে। ফুলগুলোও বাতাসের সাথে সমান তালে যেনো প্রকৃতি উপভোগ করছে।
আকাশের কোণে লালচে নীল মেঘ জমেছে। আহা কী অপরুপ দৃশ্য। গোধূলীর বেলা পড়েছে।
আমার ফোন বেজে উঠলো। আমি ফোন হাতে নিয়ে দেখলাম ছোট সাহেব ফোন করেছেন। আমি ফোন রিসিভ করার সাথে সাথে এমন কিছু শুনি যা শুনে একপ্রকার আমি থম মেরে বসে পড়লাম।#গোধূলী_বেলার_স্মৃতি (Unexpected Story)
#পর্ব- ৫
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
রুদ্রিক নিজের রুমে চুল খামচে ধরে। আফজাল শেখ যে কোনো মুহুর্তে চলে আসবে। এই মুহুর্তে সে আফজাল শেখ নামক ঘৃণিত লোকটাকে ফেস করছে চাইছে নাহ। তাই রুদ্রিক তাড়াতাড়ি একটি নেবি ব্লু ফরলাম কটন শার্ট গাঁয়ে জড়িয়ে বেড়িয়ে পড়লো। রুদ্রিকের ফোন বেজে উঠতে ফোন রিসিভ করে, বিরক্তমাখা কন্ঠে বলে উঠে-
“কি হয়েছে নিয়না? এনিথিং ওকে?”
নিয়না কিছুটআ শান্ত সুরে বলে উঠে,
“বেবী প্লিয আজকে আমাকে একটু সময় দিবে? জাস্ট কিছু কথা বলার ছিলো তোমায়….”
রুদ্রিক বলে উঠে-
“নিয়না বেবস ট্রাই-টু আন্ডারস্টেন্ড….”
—“প্লিয রুদ্রিক আজকে আমার সাথে দেখা করো। আমি কিচ্ছু শুনতে চাইনা।”
রুদ্রিক এইবার ধমকের সুরেই বলে-
“নিয়না, ইউ নো। রাফসিন শেখ রুদ্রিক কারো ইচ্ছাতে দেখা করে নাহ। আমি যখন মুড হবে, তখন দেখা করবো। বাট এখন নয়। তুমি ফোনটা কাটো
রুদ্রিককে বেড়িয়ে যেতে দেখে মিসেস জেমমিন বলে উঠলো,
“রুদ্রিক তোমার বাবা আজকে ফিরছে,আজকে অন্তত চলে যেও নাহ। রুদ্রিক বাবা আমার কথাটা তো শুনো। ”
রুদ্রিক জেসমিন শেখের কথা কর্নপাত না করে বেড়িয়ে গেলো।
জেসমিন সদর দরজার কাছে আসতেই রুদ্রিকের গাড়ি চলে যায়। জেসমিন শেখ আশাহত হয়। তখনি
ইশানি শেখ কিছুটা কটাক্ষ করে বলে উঠে,
“জানো রুদ্রিক তোমার একটা কথাও শুনবে না ,তাহলে শুধু শুধু কেনো বলতে যাও কেন?”
——“ওর বাবা আসছে আজকে। ছেলেটাকে দুইমাস ধরে উনি দেখেন নি. । ছেলেটাও তো বাবার সাথে একটিবার কথা বলেনি। এখন এসে যদি ছেলেটাকে না দেখেন,তাহলে উনি বড্ড কস্ট পাবেন। ”
জেসমিনের কথায় ইশানি কিছুটা কটাক্ষ করে বলে উঠে,
“বাবা-ছেলের ব্যাপারে এতো ভাবতে যেও নাহ। তুমি নিজের টা ভাবো জেসমিন। ”
ইশানির কথায় জেসমিন বলে উঠে,
“ঠিক কোন কথা নিয়ে ভাবতে বলছো? ”
—–“অতীত ভুলা কী এতোটাই সহজ?
জেসমিন শেখ এক পলক দরজার দিকে আশাহত দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে বলেন,
—” অতীত ভুলে যাওয়া-টাই ‘ সব থেকে বড় বোকামি। আমি খুব করে চাই,অতীত টা একদিন সবার সামনে আসুক। সবাই জানুক অতীতে ঠিক কী হয়েছিলো। ”
রুদ্রিকের এখন কিছুটা মনটা রিফ্রেশ করার প্রয়োজন,তাই সে তাড়াতাড়ি কাজলের নাম্বারে ফোন করে,
গোধূলী বেলা বেশ ভালো-ই ‘ উপভোগ করছিলাম।
তখনি আমার ফোনটি বেজে উঠে। ছোট সাহেব ফোন করেছে। ছোট সাহেবের ফোন ধরতেই। ফোনের ওইপাশ থেকে ছোট সাহেব জড়ানো কন্ঠে বলে উঠে,
“কাজল আমি জানিনা। আমার কিচ্ছু ভালো লাগছে নাহ তোকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে। আমি তোর বাড়িতে আসছি। বেশিক্ষন সময় নিবো নাহ। শুধু তোকে দেখেই চলে যাবো। ”
ছোট সাহেবের এমন কথায় আমি থম মেরে বসে থাকি কিছুক্ষন। এ আমি কার কন্ঠ শুনছি? এতোটা অনুরোধমাখা জড়ানো কন্ঠে তার! ভিতর থেকে কেমন একটা গভীর কোনো একটা টান কাজ করছে আমার। আমি বলে উঠলাম,
“কোথায় আপনি? ”
—“বাড়ির নীচে।”
ছোট সাহেবের কথায় আমি অবাক হয়ে নীচে তাঁকিয়ে দেখি উনি সত্যি বাড়ির নীচে দাঁড়িয়ে আছেন। গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। দৃষ্টি আমার দিকে।
ছুটকি দৌড়ে মায়ের কাছে গিয়ে বলে,
“মা ছোট সাহেব এসেছেন।”
—-”ছোট সাহেব হঠাৎ? ”
——” তা তো জানিনা মা। ছোট সাহেব ছাঁদে চলে গেলো। মনে হয় আপুর কাছে গিয়েছে।”
—— “মনে হয় কোনো কাজে এসেছেন।যাক গে উনাদের বাড়ি আসতেই’ই পারেন। আমি তোকে নাস্তা বানিয়ে দিচ্ছে। তুই গিয়ে উপরে দিয়ে আয়। ”
__________________________________
এয়ারপোর্টে,,
মধ্যবয়স্ক একজন লোক হাতে লাগেজ নিয়ে বেড়িয়ে আসেন। হ্যা আফজাল শেখ এসেছেন। পড়নে তার ফরমাল ড্র্বেস-আপ। চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা।আফজাল শেখ বরাবর-ই ‘ ড্রেসাপ নিয়ে সচেতন।
আফজাল শেখকে দেখে সিথি ও দিয়া ছুটে গিয়ে আফজাল শেখকে জড়িয়ে ধরেন।
আজজাল শেখ ও তাদের পরম মমতায়-ই ‘ জড়িয়ে ধরেন।
সিথি বলে উঠে-
“আই মিস ইউ লট ড্যাড…। তুমি জানো তোমাকে ছাড়া পুরো বাড়িটা কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগছিলো।”
আফজাল শেখ মেয়েকে জড়িয়ে বলে উঠেন-
“আমিও আমার প্রিন্সেসকে অনেক মিস করেছি।”
—-“তোমার বোনটাকে মিস করোনি বুঝি? ”
দিয়ার কথায় আফজাল শেখ বলে উঠেন-
“আমার ছোট্ট বোন-টাকে আরো বেশি মিস করেছি। বিশেষ করে তার সেল্ফি। ”
— “হুম, তোমার সাথে কত্তগুলো সেল্ফি তুলা বাকি আছে। বাই দ্যা রাস্তা আমার ভাইয়ু দেখি আগের থেকে বেশি হ্যান্ডসাম হয়ে গিয়েছো।”
আফজাল শেখ হেঁসে মতিউর রাহমানের দিকে তাঁকিয়ে বলেন,
“মতিউর তোমার খবর কী?কেমন আছো তুমি? ”
মতিউর রাহমান (কাজলের বাবা) বলে উঠে,
” আমি তো আল্লাহর রহমতে ভালো-ই ‘ থাকি। এখন আপনি চলে এসেছেন বড় সাহেব, এখন আরো ভালো হয়ে গিয়েছি। হা হা হা। ”
—-“ভালো হলেই ভালো। কিন্থ রুদ্রিককে আসলো নাহ যে, আজ ও কী ও আমার সাথে দেখা করবে নাহ। ”
আফজাল শেখের কথায় দিয়া কিছুটা তাড়া দিয়ে বলে,
“ভাইয়ু রুদ্রিক বাড়িতে আছে তো। তুমি বাড়িতে চলো। সেখানে-ই ‘ রুদ্রিকের সাথে দেখা করে নিও। ”
মতিউর রাহমান ও বলে উঠেন,
“হ্যা বড় সাহেব। আপতত বাড়ি চলুন। বাড়িতে গিয়ে সব হবে। ”
_________________________________________
আপতত রুদ্রিক কাজলদের বাড়ি ছাদে দাঁড়িয়ে আছে। বাড়িটা ঠিক কাজলদের নয়। দুতালা বিশিষ্ট ছোট্ট বাড়িটা আফজাল শেখ-ই’ মতিউর রাহমানকে থাকার জন্যে দিয়েছেন। মতিউর রাহমান আফজাল শেখের বড্ড প্রিয়ভাজন লোক।
রুদ্রিক অনেক্ষন ধরে কাজলকে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে। কাজলের চুল বেশ বড় নাহ হলেও বেশ সফ্ট। মৃদ্যু বাতাসেও উড়ে যাচ্ছে। কাজল দেখতে কিছুটা কিউট কিউট লাগে রুদ্রিকের কাছে৷ গাল গুলো কিছুটা গোলাপি রংয়ের। আচ্ছা মেয়েটা কী প্রতিদিন গালে ম্যাকাপ করে? রুদ্রিকের যত গার্লফ্রেন্ড আছে সবাই তো এক একটা পার্লারের দোকান। রুদ্রিক ভাবলো কাজলকে একবার জিজ্ঞাসা করবে সে গালে কি মাখে? কিন্তু জিজ্ঞাসা করতে গিয়েও করলো নাহ। সে কেনো করবে? রাফসিন শেখ রুদ্রিক সে। আচ্ছা রুদ্রিক কাজলকে দেখার জন্যে তখন এতোটা ছটফট করছিলো কেনো? কি হয়েছিলো তার? কথাটা ভেবেই চুপ হয়ে গেলো।
—-“আমাকে দেখা শেষ? ”
রুদ্রিক চমকে উঠে।
কাজলের দৃষ্টি সামনের দিকে।
রুদ্রিক আমতা আমতা করে বলে,
—-“আমি তোকে কেনো দেখতে যাবো? ”
আমি ছোট সাহবের কথায় কিছুটা অদ্ভুদ ভাবে হাঁসলাম।
রুদ্রিক খেয়াল করলো মেয়েটা সত্যি অদ্ভুদ ভাবে হাঁসে। হাঁসার সময় কাজলের ডাগর ডাগর চোখের পলক বার বার পড়তে থাকে। বেশ ভালো লাগে কিন্তু।
ছোট সাহেব বলে উঠেন,
” সামনে এতো কী দেখছিস?”
—–“গোধূলী দেখছি। গোধূলীর বেলা আমার বড্ড পছন্দের। ”
ছোট সাহেব আমার দিকে তীক্ন দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে বলেন,
“গোধূলী বেলা পছন্দের এমন কী কারণ আছে? ”
——-“গোধূলী বেলা মনটাকে সতেজ করতে কিংবা মনটাকে উৎফুল্ল করতে যথেষ্ট। আমার যদি কখনো মন খারাপ হয়। আমি ছাদে এসে গোধূলী উপভোগ করি। মনটা ভালো হয়ে যায়৷ ”
—–“কীভাবে করিস? আমাকেও বলে দে আমার মনটাও আজকে বড্ড খারাপ। ”
ছোট সাহেবের কথায় আমি উনার হাত ধরে নিজের হাতের মুঠোয় নিই।
ছোট সাহেবের হাতগুলে শক্ত করে ধরে উনার বুকের মাঝে রেখে, উনার কানে কাছে গিয়ে আস্তে করে বলে উঠি,
“Close Your eys and feel this moments…
You will see That mind will be better. ”
(চোখ বন্ধ করুন এবং মুহুর্তটাকে অনুভব করুন।দেখবেন মনটা ভালো হয়ে যাবে।)
রুদ্রিক চোখ বন্ধ করে ফেলে। সত্যি কাজলের স্পর্শে রুদ্রিকের অদ্ভুদ ভালো লাগা কাজ করছে।
রুদ্রিক অপর হাত ধরে কাজলকে নিজের কাছে টেনে কাজলের হাতগুলো নিজের বুকে গভীরভাবে মিশিয়ে বলে,
” নাউ আই ফিল বেটার।কেনো এতো শান্তি লাগছে আমার? কি আছে তোর মধ্যে? তুই বড়ই অদ্ভুদ….। ”
আমি উনার কপালে লেপ্টে থাকার চুলগুলো সরিয়ে বলে উঠলাম,
” আপনার মনকে জিজ্ঞাসা করুন। ”
—“মনের কথা বুঝতে পারিনা। ”
—“বড্ড অবুঝ আপনি। ”
ছোট সাহেব কিছুটা দূরে গিয়ে ছাদের এক কোনের সাদা ব্যান্চে গিয়ে বসে বলে উঠে,
“হয়তো। কিছু চাপা অনুভুতি প্রকাশ করতে ব্যর্থ আমি। ”
আমি আবারো আকাশের দিকে তাঁকিয়ে বলে উঠলাম,
—— “ছোট সাহবে! চাপা অনুভুতি গুলো যত আপনি লুকিয়ে রাখবে তত আপনি নিজের মনের চাপা কস্টগুলো সমুদ্রের ন্যায় অতুলে ডুবে যাবেন।
নিজের অনুভুতি গুলো প্রকাশ করতে শিখুন। তাদের অস্তিত্ব বিলেন হয়ে গেলে, একদিন আপনি এমন কিছু মুল্যবান জিনিস হারিয়ে ফেলবেন যা হয়তে আর কখনো ফিরে পাবেন নাহ আপনি। ”
________
আমি জানালার ধারে বসে আপনমনে কিছু ভেবে চলেছি। আমি জানি এই মুহুর্তে আপনি ঠিক আমার কথা ভাবছেন ছোট সাহেব। যেমনভাবে এখন আমি আপনার কথা ভাবছি। কেন ভাবছি উত্তর নেই। শুধু আপনাকে. নিয়ে ভাবতে ভালো লাগে।
_____________ক্লাবে সবাই নিজেদের মতো ব্যস্ত। রুদ্রিকের সেদিকে খেয়াল নেই। রুদ্রিকের চোখে শুধু বিকালে ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলো ভাসছে। কাজলের কথাগুলো তারা মাথায় ঘুড়ছে।রুদ্রিক এতোটা কেনো গুরুত্ব দিচ্ছে কাজলকে? কাজল রুদ্রিকের এতোটা গুরুত্ব পাওয়ার যোগ্য নয়। হ্যা কিছুতেই নয়। কিন্তু কিছু তো একটা আছে ওই মেয়ের মধ্যে।রুদ্রিক ওয়াইনের গ্লাসে চুমুক দেয়। কাজল যেনো তার মস্তিষ্কে ঘুড়পাক কাচ্ছে।
রুদ্রিকের ভাবনার মাঝেই কেউ এসে বলে উঠে,
“কিরে কাজলের প্রেমে অতলভাবে ডুবে গেলি?
বাকিটা আগামী পর্বে….
চলবে কী?
(কেমন হয়েছে কমেন্ট করে জানাবেন কিন্তু)
বাকিটা আগামী পর্বে..
চলবে……..কী?
(সবাই শুধু পড়ে যাও কমেন্ত করো নাহ কেন 🥺হুহ? কিপটামি না করে কেমন হয়েছে জানাবেন কিন্তু)