#গোধূলী_বেলার_স্মৃতি (Unexpected Story)
#পর্ব- ৬
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
মিঃ রাফসিন শেখ রুদ্রিক নিজের অনুভুতি কবে বুঝবেন আপনি?বড্ড অবুঝ আপনি।কথাটা আপনমনে বলে, জানালার পাশে দাঁড়িয়ে চোখ বন্ধ করে নিলাম। ছোট সাহেবকে নিয়ে ভাবতে বেশ ভালো-ই ‘ লাগে। আচ্ছা আমি তো নিজেই নিজের অনুভুতিটা বুঝতে পারছিনা। আসলে আমি ঠিক কী চাই। জানিনা উত্তরগুলো শুন্য হয়ে যাচ্ছে আমার। খাটে চট করে বসে পড়লাম।
রুদ্রিক ওয়াইনের গ্লাসে চুমুক দেয়। কাজল যেনো তার মস্তিষ্কে ঘুড়পাক কাচ্ছে।
রুদ্রিকের ভাবনার মাঝেই কেউ এসে বলে উঠে,
“কিরে কাজলের প্রেমে অতলভাবে ডুবে গেলি?
কারো কন্ঠস্বর শুনে রুদ্রিক তাঁকিয়ে দেখে,সাদি তার পাশে হাঁসিমুখে বসে আছে। রুদ্রিক কিছুটা তাচ্ছিল্যের সুরে বলে উঠে-
“রাফসিন শেখ রুদ্রিক শেষে কিনা ওই ড্রাইভারের মেয়ের প্রেমে অতলভাবে ডুবে যাবে?যার কিনা গার্লফ্রেন্ড এর অভাব নেই। হাঁসালি তুই। ”
কথাটা বলেই রুদ্রিক আবারো ওয়াইনের গ্লাসে চুমুক দিলো।
রুদ্রিকের কথায় সাদি সোজাসোজাি বসে বলে উঠে-
“যাক বাবা। তাহলে তো আমার জন্যে-ই ‘ ভালো। ”
রুদ্রিক ভ্রু কুচকে বলে উঠে,
“তোর জন্যে ভালো মানে? ”
সাদি মুচকি হেঁসে বলে –
“ভালো হবে নাহ? সেই দুই বছর আগের থেকে আমি কাজলকে পছন্দ করি। তোকে নিয়ে একটু টেনশনে ছিলাম,বাট আমার রাস্তা ক্লিয়ার হয়ে গেলো। ”
কথাটা শুনেই রুদ্রিক চোখ বড় বড় করে বললো,
“তার মানে আমার সংদেহ ঠিক ছিলো?তুই সত্যি সত্যি কাজলকে ভালোবাসিস?”
—-” হুম। নাহলে শুধু শুধু দুই বছর ধরে কাজলের পিছন পিছনে ঘুড় ঘুড় করতাম কেনো তুই বল? ”
এইবার রুদ্রিক উঠে দাঁড়িয়ে সাদির কলার চেপে ধরে , রাগান্বিত সুরে বলে উঠে-
“হাও ডেয়ার ইউ? তুই কী করে কাজলকে ভালোবাসতে পারলি? ”
সাদি চারপাশে চোখ বুলিয়ে বলে উঠে,
“রুদ্রিক ডোন্ট বি হাইপ্যার। সবাই দেখছে। তুই একটু বস। বসে কথা বল। ”
রুদ্রিক রাগে ফুশতে ফুশতে বসে পড়ে।
সাদি নিজের শার্টের কলার ঠিক করতে করতে বলে উঠে-
“দেখ রুদ্রিক, তুই তো কাজলকে ভালোবাসিস নাহ। তাহলে তো আমি ভালেবাসলে দোষ নেই। তাছাড়া বন্ধু হিসেবে তোর তো আমাকে সাপোর্ট করার দরকার। তা না করে তুই আমার দিকে তেড়ে আসছিস? ইটস নট গুড।”
রুদ্রিক নিজের হাত মুষ্টিবদ্ধ করে ফেলে। সাদি রুদ্রিকের অবস্হা বুঝতে পেরে কিছুটা মুচকি হেঁসে বলে,
“আশা করি কাজলকে পেতে, আমি তোকে সবসময় নিজের পাশে পাবো। আফটার অল তুই আমার বন্ধু বলে কথা। ”
রুদ্রিক জোড়ে জোড়ে নিঃশ্বাস নিয়ে নিজের রাগটুকু নিয়ন্ত্রন করার চেস্টা করতে থাকে। এই মুহুর্তে সাদিকে কাঁচা চিবিয়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু তবুও নিজেকে সামলিয়ে নেয় রুদ্রিক। সাদি
“আসি ” বলে বাঁকা হেঁসে চলে যায়। সাদি চলে যেতেই রুদ্রিক এক নিঃশ্বাসে পুরো ওয়াইনের বোতল শেষ করে দেয়। তারপর বোতল টা ছুড়ে ফেলে। তা ভেঙে চুরমার হয়ে যায়।
রুদ্রিক নিজের কাছে নিজেরেই ‘ অবাক হচ্ছে। সাদি কাজলকে ভালোবেসে, এতে সে কেনো এতো রিয়েক্ট করছে? সে তো ওই মেয়েকে ভালোবাসে নাহ তাহলে?
রাত প্রায় ১০টা , কিছু বই নিয়ে ঘাটাঘাটি করছিলাম।
তখনি আমার ফোনটা বেজে উঠলো। আননোন নাম্বার। আমি ফোনটা রিসিভ করে বলে উঠি–
—-“কে? ”
—-“আমাকে ভুলে গেলি? আমি নিতিয়া। ”
নিতিয়ার কন্ঠস্বর শুনে আমি কিছুটা উৎফুল্ল হয়ে বলে উঠলাম,
“নিতিয়া! তুই ফোন করেছিস? আমার তো বিশ্বাস-ই ‘ হচ্ছে নাহ। ”
নিতিয়া কিছুটা হতাশার সুরে বলে উঠে,
“যাক বাবা! তুই তাহলে আমাকে চিনতে পেরেছিস।আমি তো ভেবেছিস তুই আমাকে ভুলেই গিয়েছিস।
——” তুই আমার সব থেকে ভালো বন্ধু। তোকে কী করে ভুলতে পারি? দূরত্ব বেড়ে গেলে সম্পর্কে ফিকে হয়ে যায়। ধারণাটা সম্পর্ন ভুল। ‘বন্ধুত্ব হোক কিংবা ভালোবাসা’ দুরত্বের সাথে কখনো এইসব সম্পর্ক ফিকে হয়ে যায়না। বরং সম্পর্কের রং আরো গাঢ়ো হতে থাকে”
নিতিয়া হেঁসে বললো,
” বাহ ভালো-ই’ কথা বলতে শিখে গিয়েছিস।যাক আমাকে ভুলিস নি,বলছিস। ”
—-“তোকে কী করে ভুলবো? ”
নিতিয়া আমার এক কলেজ ফ্রেন্ড। সিলেটে থাকার সময়,নিতিয়া বলতে গেলে আমার বেস্টফ্রেন্ড ছিলো। আমাকে সবসময়-ই’ সাহায্য করতো সব বিষয়ে। কিন্তু ঢাকায় চলে আসায়,বছর খানিক ধরে আমাদের মধ্যে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো।
আমি এইবার নিতিয়াকে উল্টো প্রশ্ন করে বসলাম,
“আমি তো তোর নাম্বার হারিয়ে ফেলেছি,তুই আমার নাম্বার পেলি কোথা থেকে? ”
—–“সেসব কথা পরে হবে। আগে যে কথার জন্যে তোকে ইমার্জেন্সি ভাবে ফোন করেছি সেইটা শুন।
—“কোন কথা?”
নিতিয়া কিছুটা ইতস্তত হয়ে বলে উঠলো,
“আসলে কথাটা ‘তনয় ‘ ভাইকে নিয়ে নিয়ে ছিলো। ”
‘তনয় ভাই ‘ নামটি শুনে বুকের ভিতর মোচর দিয়ে উঠলো আমার। আমি কিছুক্ষন শ্বাস নিয়ে বলে প্রশ্ন করে বলে উঠলাম,
“আচ্ছা তার আগে এইটা বল। তনয় ভাইয়ের কয় বাচ্ছা? উনার নিশ্চই ভরা সংসার? ”
নিতিয়া মাথা নাড়িয়ে বলে উঠলো,
“হুম একটি ছোট্ট ফুটেফুটে ছেলে হয়েছে। একেবারে তনয় ভাইয়ের মতো দেখতে। কি যে কিউট হয়েছে। সবে মাত্র দেড় বছর হয়েছে। ”
চোখগুলো থেকে যেনো এক ফোটা জল গড়িয়ে পড়লো। যাক তনয় ভাই সুখে আছে এইটাই অনেক। কিন্তু তবুও যেনো এক চাপা কস্ট রয়ে গিয়েছে। আমি আর আর পারলাম নাহ। ফোনটা কেটে দিলাম। দিনশেষে আমারও কস্ট হয়।
“অতীতের পুরনো ক্ষত গুলো যখন হুট করে নাড়া দিয়ে উঠে তখন আপনি যত-ই ‘ চেস্টা করুন। নির্বিশেষে সেই ক্ষতগুলো আপনাকে পুনরায় ভেঙে দিতে যথেষ্ট। ”
কথাটা ভেবেই আমার চোখ থেকে আরেকফোটা জল গড়িয়ে পড়লো।
ফোনের ওইপাশ থেকে কেটে দিতেই,নিতিয়া অবাক হয়ে বললো,
“যাহ বাবা! ফোনটা কেটে দিলো। মেইন কথাটা -ই’ তো বাকি ছিলো। এখন কাজলকে কী করে বলি? তনয় ভাইয়ার কথাটা। ”
নিতিয়া আবারো ফোন করলো কিন্তু কাজলের নাম্বার বন্ধ।
তখনি কেউ বলে উঠলো,
” আমি জানি কাজলরেখা এখন খুব কাঁদছে, খুব করে। কিন্তু আমি জানি যখন ও সারপ্রাইজ টা পাবে। তখন দেখবে খুশিতে উৎফুল্ল হয়ে যাবে। আমি সিউর। ”
নিতিয়া মুচকি হাঁসে।
_________লেখিকাঃ জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি
শেখ বাড়িতে,
পায়ের উপর পা তুলে খবরের পেপারে মনোযোগ সহকারে কাগজ পড়ছেন ইশানি শেখ। আফজাল শেখ ও খবরের কাগজ পড়ছেন। তার চোখ বার বার সদর দরজার দিকে যাচ্ছে। জেসমিন শেখ ও অন্যান্য সার্ভেন্টরা ট্রে তে করে চা নিয়ে এলো। জেসমিন শেখ আফজাল শেখের দিকে চায়ের কাপ এগিয়ে বলে উঠলেন,
“সদর দরজার দিকে কি এতো দেখছেন? ”
আফজাল শেখ চায়ের কাপে হাতে নিয়ে বলে উঠেলন,
“কতদিন ধরে ছেলেকে দেখিনা। রুদ্রিক কখন আসবে সেই প্রহর-ই ‘ গুনছি আপতত। ”
ইশানি শেখ কিছুটা কটু স্বরে বলে-
“তুই তো জানিস ভাই। তুই এসেছিস কথাটা শুনে নিশ্চই আজকে রুদ্রিক বাড়িতে ফিরবে নাহ। শুধু শুধু অপেক্ষার করার কোনো মানেই হয়না। ”
ইশানি শেখের সোজাসোজি কথায় আফজাল শেখ আশাহত হয়ে বলে উঠেন,
“তাই তুই ঠিক-ই ‘ বলেছিস। রুদ্রিক তো আমাকে ঘৃণা করে তাহলে শুধু শুধু কেনো আসবে? আসলে ছেলেটাকে অনেকদিন ধরে দেখিনা। আমার-ই ‘ দোষ অহেতক আশা নিয়ে বসে ছিলাম। ”
জেসমিন শেখ বলে উঠেন –
“আপনি কস্ট পাবেন নাহ। রুদ্রিক ঠিক চলে আসবে।”
—–“জেসমিন এইসব মিথ্যে আশা অন্তত আমাকে দিও নাহ। আমার ছেলেকে আমি খুব ভালো করেই চিনি। আমি বরং উপরে যাই, ঘুমিয়ে পড়ি। কাল সকালে আবার অফিস আছে।”
কথাটি বলেই আফজাল শেখ উপরে চলে যান। জেসমিন শেখ জানেন আজকে আফজাল শেখ কিছুতেই ঘুমাবেন নাহ।
___________________
ভার্সিটির করিডোরে থম মেরে দাঁড়িয়ে আছি। সিথির মুখে ঝুলে আছে অদ্ভুদ হাঁসি। আমি কিছুটা মেকি রাগ দেখিয়ে বলে উঠলাম,
“তোর মাথা ঠিক আছে? আমি কিনা ভার্সিটির ফাংশনে অংশগ্রহন করবো?”
সিথি মুখটা কাচুমাচু করে কিছু বলতে যাবে তার আগেই, সিথি খেয়াল করে রুদ্রিক কারো সাথে কথা বলতে বলতে তাদের দিকেই আসছে।
সিথি নকটা কামড়ে আপনমনে বলে উঠে,
“এইরে ভাইয়া চলে এসেছে। কাজটা শুরু করি।”
আমি সিথির কাঁধে হাত রেখে বলে উঠলাম,
“কিরে কি ভাবছিস? ”
সিথি কিছুটা জোড়েই বলে উঠলো,
“সেসব কথা পরে বলবো। আগে তুই লাইব্রেরি তে যা। সেখানে সাদি ভাইয়া তোর জন্যে ওয়েট করছে। কি যেনো ইম্পোর্টেন্ট কথা আছে। ”
কথাটা বলেই সিথি কেটে পড়ে। আমি ভাবতে থাকি সাদি ভাইয়ার আমার সাথে আবার কিসের জরুরী কথা? থাক যেতে যখন বলেছে, একবার যাই। কথাটা ভেবে আমি পা বাড়ালে, আমার ওড়নায় টান পড়ে।
“কে? এইসব অসভ্যতার মানে কি? ”
কথাটা বলেই আমি পিছনে তাঁকিয়ে দেখি ছোট সাহেব। উনি আমার দিকে অগ্নিদৃষ্টি তাঁকিয়ে আছেন এই চোখ যেনো আমাকে জ্বলিয়ে ছাড়খাড় করে দিতে যথেষ্ট।”#গোধূলী_বেলার_স্মৃতি (Unexpected story)
#পর্ব- ৭
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
ছোট সাহেব আমার ওড়না নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে রেখেছেন। আমি চারপাশে তাঁকিয়ে কিছুটা ইতস্তত হয়ে বলে উঠি,”ছোট সাহেব এইসব কী?আমার ওড়না ছাড়ুন। সবাই দেখবে। ” আমার কথায় ছোট সাহেব আমার ওড়না টেনে ধরেন, যার ফলে আমি উনার অনেক কাছাকাছি চলে আসি। আমি ওড়নার ছাড়াতে ছাড়াতে বলে উঠি,
“অসভ্যতার কত রুপ দেখবো আপনার? যখন তখন যে কেউ চলে আসবে। ছাড়ুন আমার ওড়না। ”
আমার কথায় ছোট সাহেব নিজের বাঁকা দাঁতের হাঁসি দিয়ে বলে উঠেন-
“নো বেবস!এখানে আপতত কেউ-ই’ আসবে নাহ। সো চিল আপ। ”
আমি কিছুটা তিক্ততার সুরে বলে উঠলাম,
“এইসব কি বলছেন ছোট সাহেব? ছাড়ুন বলছি। ”
ছোট সাহেব কিছুটা ধমকেই বলে উঠে-
“কেনো এতো ছটফটানি তোর কাজল? দিব্বি তো নাঁচতে নাঁচতে একা একা সাদির সাথে দেখা করতে যাচ্ছিস। তখন কেউ দেখবে নাহ? শুধু আমার সময়-ই’ শুধু তোর পালাই পালাই কেনো করিস? ”
আমি মুখটা বেকিয়ে বলে উঠলাম,
“সাদি ভাইয়ার সাথে আপনার তুলনা কখনো-ই’ হয়না। ”
ছোট সাহেব আমার গালদুটো চেপে ধরে বলে উঠে-
“আমার মধ্যে কি এমন নেই?বলতে পারিস আমাকে? সবসময়-ই’ শুধু সাদি ভাইয়া সাদি ভাইয়া করিস। যা প্রচন্ড বিরক্ত লাগে আমার। ”
ছোট সাহেব কথায় আমি কিছুটা অবাক হয়ে’ই বলে উঠি,
“ছোট সাহেব! আমি যা ইচ্ছে করি তাতে আপনার কি? আচ্ছা এমন নয় তো? আপনি সাদি ভাইয়াকে নিয়ে জেলাস। ”
কথাটা শুনেই উনি আমার গাল ছেড়ে আমতা আমতা করে বললেন,
“সত্যি তোর কথা শুনলে আমার হাঁসি ছাড়া কিছুই পাইনা। আমি রাফসিন শেখ রুদ্রিক কিনা সাদিকে নিয়ে জেলাস তাও তোর জন্যে? ওহ হ্যালো!নিজেকে
এতো ইম্পোর্টেন্স দেওয়া বন্ধ কর। ”
আমি কিছুটা মুচকি হাঁসলাম। সত্যি লোকটা কখন কী বলে হয়তো নিজেও বুঝেন নাহ। আমি নিজের মুখে হাঁসিটা ঝুলিয়ে রেখে’ই বললাম,
আমি তো নিজেকে কখনো-ই’ ইম্পোর্টেন্স দেইনা। তাও আপনার মতো। নিজের সাথে আমাকে মিলাতে যাবেন নাহ ছোট সাহেব। ”
—-“আপনার বুকে রাগের এক অন্যরকম দহন চলছে।যে দহনে আপনার অনুভুতিগুলো প্রায় এক প্রকার শুন্য-ই’ হয়ে যাচ্ছে। ”
ছোট সাহেব মাথাটা নাড়িয়েই বললো,
“বুঝলাম! আর কিছু?”
—-“এখন আমার ওড়না ছাড়ুন। আমার দেরী হচ্ছে। যে কেউ চলে আসবে। ”
আমার স্পষ্ট উত্তর। ছোট সাহেব আমার দিকে এগিয়ে আমার গাঁয়ে ওড়নাটা ভালো করে জড়িয়ে দেন। আমি কিছুটা কেঁপে উঠলাম। উনি আমার কানে আস্তে করে বলে উঠলাম,
“সাদির আশেপাশে যেনো তোকে না দেখি। সবসময়-ই’ দূরে দূরে থাকবি। ”
আমি উনার চোখে তাঁকিয়ে বলে উঠি,
“আপনি অদ্ভুদ। ”
—“জানি আমি। ”
—-“অনেক কিছু আছে যা আপনি জানেন নাহ।”
—-“হয়তো। আসি। ”
কথাটা বলেই উনি নিজের শার্টের হাতা ফ্লোড করতে করতে চলে যেতে গিয়েও
পিছনে ঘুড়ে শুধু একটাই কথা বলেন,
“It would be Very bad If you did not listen me”
(আমার কথা না শুনলে খুব খারাপ হবে।)
–” যাক বাবা চলে গেলো।আমাকে কী মনে করেন কী উনি? কীভাবে আমাকে থ্রেট দিয়ে চলে গেলো। আমিও কাজলরেখা।উনাকে ভয় পাই নাকি? আমি যাবো সাদি ভাইয়ার কাছে। ”
কথাটি বলে আমিও লাইব্রেরির দিকে পা বাড়ালাম।
_________________
শেখ বাড়িতে,
দিয়া সেল্ফি নিতে নিতে নীচে নামছে আর চিল্লিয়ে যাচ্ছে,
“ভাবি! ও ভাবি তাড়াতাড়ি আমার ব্রেকফাস্ট টা দাও। আমার অফিস আছে। ”
ইশানি শেখ কিছু ফাইল চেক করতে করতে বলে উঠেন,
“দুপুর বাজে ১২টা আর এখন তুই যাবি অফিসে?মানে বড় ভাই-বোনের অফিস বলে নিজের ইচ্ছেমতো অফিসে যাচ্ছিস? ”
দিয়া নিজের ফোন বের করে একটা সেল্ফি তুলে বলে উঠে-
“আমি ভাই সিংগাল মানুষ। আর এমন নয় যে তোমাদের অফিস বলে তোমরা আমাকে এমনি এমনি চাকরী দিয়েছো। আমি নিজ যোগ্যতায় ফ্যাশন ডিজাইনার হয়ে চাকরী পেয়েছি। ”
ইশানি শেখ কিছু বলবে, তার আগেই জেসমিন শেখ
ব্রেকফাস্ট হাতে নিয়ে চলে আসে।
—-“অনেক কথা হয়েছে,এইবার চটপট করে খেয়ে নে। ”
জেসমিনের কথায় দিয়া উৎফুল্ল হয়ে বলে উঠে-
“ভাবি আজকে কী স্পেশাল করেছো? ”
–“তোর ফেভারিট লুচি। ”
—“ওয়াও লাভ ইউ ভাবি। আসো এই খুশিতে সেল্ফি তুলি। ”
দিয়ার কথায় জেসমিন শেখ বলে উঠে,
“আমার এখন সময় নেই। তুই খেয়ে নে। ”
ইশানি শেখ রাগান্বিত সুরে বলেন,
“এইসব কী? সকালে দিয়া এইসব তেলে ভাজা খাবার খাবে? আচ্ছা জেসমিন তোমার কী কমন্সেস নেই। জানো এতে শরীরে কত ক্ষতি হতে পারে? ”
দিয়া কিছুটা বিড়বিড় সুরে বলে উঠে-
” দিয়া তাড়াতাড়ি এখান থেকে কেটে পড়। নাহলে তোর এই ভয়ংকরী আপা লেকচার দিয়ে তোর কান ঝালাপালা করে ফেলবে। এইসব লেকচারের থেকে সেল্ফি তুলা ঢের ভালো। ”
দিয়া আপনমনে কথাটি ভেবে গপগপ করে লুচি মুখে পুরে নেয়।
——-“আমার খাওয়া হয়ে গিয়েছে। আমার অফিস আছে যেতে হবে। ”
কথাটা বলেই দিয়া তাড়াতাড়ি ব্যাগটা নিয়ে দেয় এক দৌড়।
—-“আরে আস্তে বাবা। সাবধানে যাবি। ”
কথাটা বলেই জেসমিন হেঁসে রান্নাঘরে চলে যান। ইশানি শেখ আবারো ফাইল চেক করতে থাকেন তখনি তার ফোনটি বেজে উঠে তিনি নাম্বার টা দেখে তাড়াতাড়ি কেটে দিয়ে, শুধু একটি মেসেজ করে দেন।
“আমাকে এখন ফোন দিও নাহ। আমি যত দ্রুত সম্ভব আসছি। ”
_____________________
সিথি মুখটা কাচুমাচু হয়ে বলে উঠে,
“সাদি ভাইয়া তোমার কথামতো সব তো হলো। এখন কী ভাইয়া কাজলকে লাভ ইউ বলে দিবে। ”
সাদি বইয়ের ফাঁক দিয়ে মাথাটা বের করে বলে উঠে-
“এতো সহজ? তোমার ভাই যা হিটলার। মনে তো হয়না এতো সহজে নিজের ভালোবাসাটা বুঝবে। ”
সিথি মুখ বেকিয়ে বলে উঠে-
“খুব খারাপ হচ্ছে সাদি ভাই। একদম আমার ভাইকে হিটলার বলবে নাহ। তুমি ভাইকে এইসব বানিয়ে বানিয়ে মিথ্যে কথা বলেছো যদি কাজল শুনে কত রাগ করবে। ”
সিথির কথায় সাদি বলে উঠে-
“আমি যা করেছি তা তো রুদ্রিক আর কাজলকে এক করার জন্যে। তাছাড়াও আমি তো বুঝি আমার বন্ধুটার মনে কাজলের প্রতি এক সুপ্ত ভালোবাসার অনুভুতি আছে। ”
সিথিও তাল মিলিয়ে বলে উঠে-
“কাজল যদি ভাইয়ুর জীবনে চলে আসে,তাহলে কাজল ভাইয়ুকে ঠিক পরিবর্তন করতে পারবে। কিন্তু আমার ভাইয়ু তো নিজের ফিলিংস টাই বুঝতে চাইছে নাহ। ”
তখনি আমি এসে বলে উঠি,
—“তোরা কিসের ফিলিংস এর কথা বলছিস? ”
কাজলকে দেখে সিথি গলাটা পরিষ্কার করে বলে,
“আরে আমরা তো জাস্ট ফাংশন নিয়ে কথা বলছিলাম। ”
——“কিন্তু কাজল তোমাকে তো আমি সেই কখন ডেকে পাঠিয়েছিলাম। এখন এলে যে? ”
সাদি ভাইয়ার প্রশ্নে আমি কী বলবো বুঝতে পারছি নাহ। কীভাবে বলবো তার বন্ধু তাকে নিয়েই সংদেহ করছেন।
এদিকে সাদি ও সিথি মিটিমিটি হাঁসছে। সিথি কোনোরকম হাঁসি থামিয়ে, কাজলের হাত ধরে বলে উঠে,
“ঠিক আছে চল। তোকে এখন আর বলতে হবে নাহ।”
—–“কিন্তু আমরা এখন কোথায় যাবো? ”
—-“কোথায় আবার ভার্সিটির অডিটোরিয়ামে। সেখানে ভার্সিটির প্রগোমে যারা নাম দিয়েছে তাদের সিলেক্ট করবে। ”
—“তো আমি সেখানে গিয়ে কী করবো?
আমার প্রশ্নে সিথি কিছুটা দম নেওয়া গলায় বলে উঠলো,
“আমি তোর নাম দিয়ে দিয়েছি। না মানে তুই তো ভালো গান গাইতে পারিস। তাই আর কি। ”
আমি রাগ করতে গিয়েও সাদি ভাইয়া আমাকে আমাকে থামিয়ে বলে উঠেন,
“আচ্ছা কাজল সিথি যখন নাম দিয়েই দিয়েছে তখন না হয় একবার চলো। ”
—-“কিন্তু এর আগে আমি কখনো গানে নাম দেইনি। গান সম্পর্কে আমার তেমন কোনো ধারণা নেই।
সিথি আমার কাঁধে হাত রেখে বলে উঠে-
–“একবার চল নাহ। প্লিয।”
_________________________
.ভার্সিটির অডিটোরিয়ামে কিছু কাগজ চেক করছে রুদ্রিক। প্রচুর ব্যাস্ত সে। ভার্সিটির ভিপি হওয়ার সুবিধার্থে সিলেকশন এর দায়িত্ব এসে পড়েছে রুদ্রিক ও তার বন্ধুদের উপর।
অংশগ্রহংকারী সব মেয়েদের নজর-ই’ যাচ্ছে শুধু রুদ্রিকের দিকে। রুদ্রিকের চোখ জোড়া বেশ ছোট। তার চোখের দিকে তাঁকালে যে কেউ প্রেমে পড়তে বাধ্য। তার মধ্যে রুদ্রিকের সিল্ক চুলগুলে সবসময় রুদ্রিকের ফর্মা কপালে লেপ্টে থাকে। যা আরো বেশি আকর্ষনীয়।
অন্যারা নিজেদের মধ্যে বলাবলি করছে,
—-“দেখেছিস আমাদের ভিপিটা কি কিউট? ”
—“হুম রে হাঁসলে বেশি কিউট লাগে। উনার কাছে অডিশন দিতে আমি হাজারোবার প্রস্তুত। ”
জেনি শুধু অপলকভাবে রুদ্রিককে দেখে যাচ্ছে। সে ভাবতেই পারছে নাহ। রাফসিন শেখ রুদ্রিক তার বয়ফ্রেন্ড।
—-“জেনি ডার্লিং আমাকে দেখা শেষ হলে, প্রতিযোগীদের এক এক করে ডাকা শুরু করো। ”
রুদ্রিকের কথায় জেনি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বলে–
“হ্যা হ্যা ডাকছি।”
তন্ময় কিছুটা হেঁসে বলে,
“জেনির কী দোষ বল? একটু ভালো করে তাঁকিয়ে দেখ সব মেয়ের নজর শুধুই তোর দিকে। ”
রুদ্রিক এক পলক বাঁকা হেঁসে আবারোও কাজে মন দেয়।
আমরা অডিটোরিয়াম এর ভিতরে ঢুকতেই দেখি মেয়েদের ভীর যেনো উপচে পড়ছে। সিথি কিছুটা অবাকের সুরে বলে উঠে-
“এরা সবাই অডিশন দিতে এসেছে? ”
—-“আসবে নাহ আবার। তোমার ভাই অডিশন নিচ্ছে বলে কথা।”
সাদি ভাইয়ার কথায় সিথি কিছুটা শুকনো ঢুক গিলে বলে,
“ভাই নিচ্ছে অডিশন। আমি তাহলে গেলাম। আমার দরকার নেই। ”
সিথি চলে যেতে নিলে আমি সিথির হাত খপ করে বলে উঠি-
“তোর ভাই বাঘ নাকি ভাল্লুক? আমাকে এখানে এনেছিস তুই এখন এখন তুই-ই’ চলে যাচ্ছিস। ”
সাদি নিজের চশমাটা ঠিক করে বলে উঠে-
“হুম আমার মনে হয় কাজল ঠিক-ই’ বলছে। চলো আমি বরং এগিয়ে যাই। ”
–“আমি যাচ্ছি কিন্তু আমি তোমাদের পিছনে থাকবো। ”
সাদি হেঁসে বলে, ‘ঠিক আছে। ‘
—“রুদ্রিক দেখ কে এসেছে আমাদের সাদি এসেছে কী সোভাগ্য আমাদের। ”
শোভনের কথায় রুদ্রিক সাদির দিকে তাঁকায়। সাদির পিছনে সিথি দাঁড়িয়ে আছে নিজেকে আড়াল করে।
——“তা সাদি তোর তো এখন লাইব্রেরিতে থাকার কথা। এখানে কেনো এসেছিস? ”
পলকে কথায় সাদি বলে উঠে-
“নাহ জাস্ট এমনি-ই’ দেখতে এলাম। অডিশন কেমন চলছে। তাছাড়া সিথি ও কাজলও অডিশন দিবে।”
সাদির সাথে কাজলকে দেখে রুদ্রিক দাঁত কিড়মিড় করে কাজলের দিকে তাঁকায়।
ছোট সাহেবের দৃষ্টি উপেক্ষা করে আমি অন্যদিকে তাঁকাই।
জেনি আপু এইবার হেঁসেই বলে উঠে-
“কাজল গানে নাম দিতে এসেছে? গানের গ পারে কিনা সে নিয়ে আমার যথেষ্ট সংদেহ আছে। নাহ মানে কখনো তো দেখলাম নাহ। কখনো কোনো গানে অংশগ্রহন করতে। এখানে যাকে তাকে গানে নেওয়া যায়না। ”
জেনির কথায় অডিটোরিয়ামে সবাই হেঁসে দেয়। রুদ্রিক ও হেঁসে বলে উঠে-
“ইউ আর রাইট জেনি ডার্লিং! সত্যি যে কেউ চলে আসে। যাদের গান গাওয়া নিয়ে কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা ও নেই। সাদি তুই বরং তোর কাজলকে নিয়ে গানের শব্দ গুলো ভালো করে শিখিয়ে নিয়ে আয়। তারপর গানে অংশগ্রহং করার জন্যে নিয়ে আসিস।”
রুদ্রিকের কথায় সিথি ও সাদি বাদে সবাই আরেকদফা হেঁসে উঠে।
জিনি আপু বলে উঠে,।
“কাজল তুমি আপতত যাও। নিজেকে আর হাঁসির পাত্র বানিয়োও নাহ। ”
আমি শুধু সকলের দিকে এক পলক তাঁকিয়ে মুচকি হেঁসে বলে উঠি,
“হঠাৎ হঠাৎ হাঁসাহাঁসি করা শরীরের জন্যে ভালো। ডক্টররাও আমাদের সবসময়-ই’ সাজেস্ট করে থাকেন উচ্চস্বরে হাঁসাহাঁসি করা উচিৎ। আমার মনে হয় আমার জন্যে সবাই হাঁসিহাঁসি করে যদি নিজেদের শরীর ভালো রাখতে পারে, তাহলে এর থেকে ভালো আর কী হতে পারে? আমার তো এখন নিজেকে নিয়ে প্রাউড ফিল হচ্ছে। ”
আমার কথা শুনে সবাই হাঁসাহাঁসি বন্ধ করে আমার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাঁকায়।
.
.