গ্যাংস্টার লাভ -২ পর্ব -০৩

#গ্যাংস্টার_লাভ (সিজন2)
#নুসরাত_জাহান_অংকুর
||পার্ট_৩||

রিহা ঘুমের মধ্যে শীত অনুভব করছে।ঘুমটা এতো গভির যে চোখ খুলার শক্তি পাচ্ছে না।চোখ বন্ধ করে ডান হাত দিয়ে কম্বল খুজার ব্যার্থ চেষ্টা করছে।হাত বাড়িয়ে হটাৎ বুঝতে পারলো ও খাটে নেই।লাফ মেরে উঠে চারিদিক তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করে কোথায় আছে।সামনে রেহান ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে ।

রিহা হটাৎ রেহানের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে

_”আমি কোথায় ? আপনি কে? আমার আব্বু কোথায়? আমাকে আব্বুর কাছে দিয়ে আসেন

রেহান বুঝলো রিহা ঘুমের জন্য আবোল তাবোল বলছে।রেহান রিহার পাশে বসে মাথায় হাত দিয়ে বলে

_”তুমি তোমার বাড়িতে আছো আর তোমার আব্বু তার বাড়িতে।

রিহা চারিদিক ভালো করে তাকিয়ে বলে

_”এটা তো আমার বাড়ি না ।আচ্ছা ঠিক আছে আমি এখন ঘুমাবো কাল দেখবো কি করা যায়।আপনি আমাকে কম্বল এনে দেন তো

রেহানের দিকে আকুতি মিশ্রিত কণ্ঠে বলে শুয়ে পড়ে।রেহান এক হাত টান দিয়ে বসিয়ে বলে

_”নো ম্যাডাম!এখন ঘুমানো চলবে না।সেই কখন খেয়েছেন।খাওয়া শেষ হলে ঘুমাবেন।না খেয়ে আমায় বড়লোক করার কোনো দরকার নেই

রিহা রেহানের হাত থেকে নিজের হাত ছাড়াতে ছাড়াতে বলে

_”প্লীজ আমার খুব ঘুম পাচ্ছে।একটু ঘুমায় ? শুধু একটু

রেহানের খুব হাসি পাচ্ছে।রিহা কিভাবে আঙ্গুল দিয়ে বাচ্চাদের মত করে একটু বুঝাচ্ছে।রেহান নিজের হাসি দমিয়ে রেখে বলে

_”না খেয়ে যত খুশি ঘুমিও।কেউ বিরক্ত করবে না

রেহান রিহার দিকে ভালো করে তাকিয়ে দেখে রিহা মাথা নিচু করে আছে।সামনের চুলগুলো সামনে এসে মুখ ঢেকে গিয়েছে।রেহান রিহার চুলগুলো সরিয়ে দেখে রিহা ঘুমিয়ে গেছে।

রেহান এখন মাথায় হাত দিয়ে বসলো।

কিছুক্ষণ আগে রেহান ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে রিহার দিকে তাকিয়ে আছে রিহা কম্বলের ভিতরে বসে বলে।

_”আপনি তো খুব চালাক।এত নিখুত প্ল্যান কেউ করতে পারে আমি আগে জানতাম না।শুধু ফিল্মে দেখেছি আপনি তো ফিল্ম কে হার মানিয়ে দিয়েছেন

রেহান ভ্রু কুচকে তাকায় রিহা রেহানের তাকানো দেখে বুঝতে পেরে বলে

_”ওভাবে তাকিয়ে লাভ নেই আমি তো ঠিক বলছি।সব আপনার আগে থেকে প্ল্যান।আমাকে কিডন্যাপ করা ,বিয়ে,আব্বু কে দিয়ে রাজি করানো সব কিছু

রেহান তুয়ালে রাখতে রাখতে বলে

_”তো তোমার এটা মনে হবার কারণ কি জানতে পারি ?

রিহা চোখ ছোটছোট করে তাকিয়ে আঙ্গুল তুলে বলে

_”অনেক কারণ আছে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ হলো এই ড্রেসগুলো।যেখানে আপনি জানতেন বিয়ে হবে আর সেইজন্য ড্রেস কিনে আনছেন।এমন কি ড্রেসের সাথে আমাউন্ট কাটতে ভুলে গিয়েছেন।

রেহান কোনো উত্তর না দিয়ে নিজের মত চুল আচড়িয়ে ফোন হাতে নিয়ে বেরিয়ে যায়।রিহার খুব রাগ হয় ওর কথার কোনো উত্তর দিলো না ।

রিহা একটু উকি মেরে বিছানায় গা এলিয়ে দেয়।সারাদিন ক্লান্ত থাকায় কিছুক্ষণের মধ্যে ঘুম।

রেহান এসে দেখে রিহা ঘুম ।অনেকবার ডাকে কিন্তু রিহার উঠার কোনো নাম নেই।শেষে না পেরে কোলে তুলে নিয়ে আসে সোফায় শুইয়ে দেয়।তবুও রিহার কোনো হেলদোল নেই।

রেহান ঐভাবে দাড়িয়ে রিহা কে পর্যবেক্ষণ করছে।

রেহান রিহার দুই কাধে হাত দিয়ে জোড়ে ঝাকি দেয়।রিহা হটাৎ এমন করায় কিছুটা কেপে উঠে ।রেহানের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে কেঁদে দেয়।

রেহান হতভম্ভ হয়ে যায় ।রিহা কাদতে কাদতে বলে

_”আপনি খুব খারাপ।আমাকে বিয়ে করে আনছেন আমার জীবনটা নষ্ট করার জন্য।আমার জীবনে কি আছে বলুন তো শুধু এই ঘুম ছাড়া।আপনার থেকে আফরান অনেক ভালো আমাকে অনেক ভালোবাসে ।

রেহান দাতে দাত চেপে বলে

_”আফরান আমার থেকে অনেক ভালো তাই না ?

রিহা মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বুঝায়।রেহান জোড়ে জোড়ে নিশ্বাস নিয়ে নিজেকে ঠান্ডা করছে নাহলে এমন অনেক কিছু হয়ে যাবে যেটা রেহান চায় না।

রিহার কান্না বন্ধ হয়ে গেছে এখন মুচকি মুচকি হাসছে ।রেহানের গাল টেনে বলে

_”আপনার চোখ লাল হয়ে গিয়েছে কেনো? রাগ হচ্ছে ? কিন্তু আমি এই লাল চোখ দেখে ভয় পাচ্ছি না উল্টো হাসি পাচ্ছে

(এখন আবার কেউ এটা বলেন না রাগলে কেমনে লাল হয় ।বিশ্বাস না হলে আমার বাড়িতে আসতে পারেন আমার আব্বুর হয় আবার আমার একটা ফ্রেন্ডের হয়)

রেহান কোনো কথা না বলে উঠে ভাত এনে রিহার সামনে ধরে।রিহা বসে বসে ঝিমুচ্ছে।রেহান ভাত মেখে মুখের কাছে ধরতে রিহা হা করে।

রেহানের রাগ উড়ে গিয়েছে রিহার এমন বাচ্চামো স্বভাবে।রিহা সবটুকু ভাত খেলে রেহান পানি খাইয়ে আবার কোলে করে বিছানায় শুয়ে দেয়।

রেহান রিহাকে জড়িয়ে ধরতে গেলেই রিহা ঘুমের মধ্যেই ঘুষি মেরে দেয়।

রেহান কিছুটা অবাক হয়ে হাত দিয়ে দেখছে ঘুমিয়েছে কি না ।

_”আল্লাহ এ কি মেয়ে পাঠালে?ঘুমের মধ্যেও বক্সিং করে । বক্সার বানালে ভালো হতো।

রেহান এবার শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়ে।

একটা লোক রকিং চেয়ারে বসে ছুরি দিয়ে একটা ছবিতে আঘাত করছে ।মুখে বাকা হাসি।

_”রেহান চৌধুরী।ভেবেছো তুমি জিতে গিয়েছ।তোমার বাবা ও এই ভুল করছিলো।বাচ্চা ভেবে ছেড়ে দিয়েছিলাম কিন্তু এখন আর না খুব শীঘ্রই দেখা হবে মিস্টার রেহান।

লোকটা ছুরিটা ছবির বুকের মেরে অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে।

সকালে মুখে পানির ছিটা পড়তে লাফিয়ে উঠে রিহা।

_”আব্বু আব্বু আমাদের বাসার ছাদ ফুটো হয়ে গেছে তাড়াতাড়ি আসো।

_”এই যে মিসেস কোনো ছাদ ফুটো হয়নি এটা তোমার বাবার বাড়ি না স্বামীর বাড়ি।

রিহা ভালো করে তাকিয়ে দেখে রেহান।ওর আর বুঝতে বাকি নেই কি হইছে ওর সাথে।

রিহা বিছানা থেকে উঠে রেহানের পাশে গিয়ে বলে

_”এই আপনার সমস্যা কি বলেন তো ?আপনার কি আমাকে শান্তিতে দেখলে এলার্জি হয় ।এত হিংসা আপনার? একটু শান্তিতে ঘুমিয়েছি আর আপনি পানি দিলেন জানেন না এটা শীতকাল।এই সময় পানি কত ঠান্ডা আর আপনি

রেহান ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে

_” ওকে কাল থেকে গরম পানি দেবো।এখন উঠে ওযু করে নাও সব জায়গায় আযান দিয়ে দিয়েছে

রিহার খুব রাগ লাগছে কিন্তু নামাজের পড়ার কথা বলায় রাগ না হয়ে উল্টো অবাক হয়ে বলে

_”গ্যাংস্টার আবার নামাজ ও পড়ে।ব্যাপার না ইবলিশ তো প্রথমে আল্লাহর অনুকরণ করতো পরে ইগো দেখিয়ে আদম (আঃ)কে সিজদাহ করতে মানা করে

রিহা বলতে বলতে ওযু করতে যায় এসে দেখে রেহান নামাজ শুরু করে দিয়েছে।রিহা পাশে বসে নামাজ আদায় করে নেয়।

রিহার এখনো ঘুম আসছে কিন্তু রেহান কে শায়েস্তা করবে বলে না ঘুমিয়ে ভাবছে কি করবে ।

রিহা কে বসে থাকতে দেখে রেহান বলে

_”এভাবে বসে কি খিচুড়ি পাকাচ্ছো?

রিহার মুখে হাসি ফুটে উঠে ।রিহার হাসি দেখে রেহান বুঝতে পারে কিছু একটা করবে ।

রিহা হটাৎ বাইরে চলে যায় ।রেহান ওর আম্মু কে ফোন করে।

কিছুক্ষণ কথা বলে রিহাকে আসতে দেখে ফোন রেখে দেয়। রিহা বিছনায় বসে কপির কাপে চুমুক দেবে তার আগে রেহান বলে

_”বাড়িতে যে আরেকজন আছে সেটা কি কারোর চোখে পড়ছে না ?

রিহা মিষ্টি করে হেসে বলে

_”কফি খাবেন ?

রেহান রিহার এমন ভাবে বলাতে সন্দেহ হলো তারপরও মুখে হাসি নিয়ে বলে

_”অবশ্যই

রিহা আরেক কাপ এগিয়ে দিতেই রেহান রিহার হাতের টা নিয়ে নেয়।রিহা ও কিছু বললো না ।

রিহা আরামে কফি খাচ্ছে রেহান চুমুক দিতেই বমি করার মতো অবস্থা।

মুখ খিচে বন্ধ করে বলে

_”এইসব কি ?

রিহা এক গাল হেসে বলে

_”বেশি কিছু না জাস্ট কফি পাউডারের বদলে হলুদের গুরু আর চিনির বদলে বেকিং সোডা

রেহানের গা গুলিয়ে আসছে ।তাড়াতাড়ি ওয়াশরুমে চলে যায়।গলগল করে বমি করে দিচ্ছে পেটের ভিতর থেকে মনে হয় বেরিয়ে আসবে।রিহার হাসির শব্দ রেহান পাচ্ছে ।

রেহান বেরিয়ে দেখে রিহা এখনো হাসছে।রিহা হাসতে হাসতে বলে

_”কিহলো মিস্টার এটাই যথেষ্ট নাকি আরো লাগবে ?এটা আপনার সকালে পানি দেওয়ার শাস্তি এখনো আর বাকি আছে

রিহা ঘর থেকে বের হতে গেলে রেহান হাত ধরে টান দিয়ে নিজের কাছে নিয়ে আসে ।

_”আমার শাস্তি তো দিলে এখন তোমার শাস্তির পালা

রিহা জোড়ে ধাক্কা দিতে গেলে রেহান আর জোড়ে চেপে ধরে।বাম হাত বাড়িয়ে কলির কাপটা নিয়ে রিহার মুখের কাছে ধরে ।রিহার ছুটাছুটি করছে।

রেহান গাল টিপে জোর করে মুখে দিতে রিহা রেহানের শার্টে ফেলে দেয়।

কফি বেশি গরম না হওয়ায় রেহান বেচে গিয়েছে।

রেহান রেগে চিল্লিয়ে বলে

_”ইউ স্টুপিড!কি করলে এটা?

রিহা পানি খেয়ে বলে

_”আপনি করলে দোষ না আমি করলে দোষ।এই আমাকে কি আপনার নিজের সম্পত্তি মনে হয় যে যখন যা ইচ্ছা করবেন।লিসেন আপনার সাথে থাকার আমার কোনো ইচ্ছা নেই ওকে।আপনি যেমন মানুষ আমার একদিন অসহ্য ধরে যাচ্ছে আই থিঙ্ক আপনার ও রাগ হচ্ছে তাই ডিভোর্স দিয়ে দেন আমিও বেচে যাই ।

রেহান এবার আরো জোড়ে চিল্লিয়ে বলে

_” রিহহহহহহহহহহহহা

রিহাও চিৎকার করে বলে

_”একদম চিল্লাবেন না ।আপনার চিল্লানো তে যে কেউ ভয় পেলেও আমি পাই না।আচ্ছা একটা কথা বলুন ত আপনার বাড়ির লোক এই সব জানে ?

রেহান শান্ত কণ্ঠে বলে

_”আমাকে যা খুশি বলো কিন্তু আমার পরিবার কে টানবে না

_”কেনো টানবো না সেটা বলুন।আপনার বাড়ির লোক কি কিছু শিখায় নি ।তারা বেছে আছে তো ? মনে হয় তো না নাহলে কি এমন কাজ করতেন।এই আপনি আমার আব্বুকে কি বুঝিয়েছেন বলুন তো।আমার আব্বু কখনো আমার মতের বিরুদ্ধে করেনি সেই আব্বু কি করে

রেহান রিহাকে দেয়ালে চেপে ধরে বলে

_”তোমার আব্বুকে আমি কি বুঝাবো? তুমি নিজের আব্বুকে চিনতে পারলে না সেখানে আমাকে। তোমার কাছ থেকে কিছু আশা করা বেকার ।

_”তো কে বলছে আশা করতে আমি কি বলছি ।আর একদম আমার আব্বুকে টানবেন না

রেহান আরো জোড়ে চেপে বলে

_”কেনো ? তুমি আমার পরিবারকে টানতে পারো তাহলে আমি কেনো পারবো না?

_”ছাড়ুন আমার লাগছে

রেহান হাত মুচড়িয়ে পিছন দিকে ঘুরিয়ে বলে

_”খুব লাগছে ? এত দুর্বল তুমি? সামান্য ধরাতে লাগছে।এই নাকি তুমি গ্যাংস্টারের বউ

কথাটা বলে রেহান জোড়ে জোড়ে হেসে দেয়।রিহার গা জ্বলে যাচ্ছে।সহ্য করতে না পেরে রেহান কে কিছু বলতে যাবে তার আগে রেহান বলে

_”সকাল সকাল ড্রেস আর মুড দুইটাই নষ্ট করলে।অসহ্য একটা

কথাটা বলে বেরিয়ে যায়।আর রিহা ও চিল্লিয়ে বলে

_”হা আমি তো অসহ্য।আপনি তো খুব সহ্য।আজরাইল একটা।আজরাইল তো জান কবজ করে আর আপনি আমার স্বপ্ন কবজ করলেন।কখনো ভালো হবে না আমি তো হতে দেবো না।এটা একটা অসহায়,অবলা নারির প্রমিজ।

রিহা রাগে টেবিলের জোড়ে লাথি মারে কিন্তু টেবিলের কিছু হোক বা না হোক।রিহার লাগে ব্যাথা লাগে।পা ধরে বসে দেখছে কতটুকু লাগছে

কিছুক্ষণ পর রেহান এসে রিহার সামনে একটা কাগজ ধরে।রিহা ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে হটাৎ কি মনে করে খুশি হয়ে বলে

_”কি এটা ? ডিভোর্স পেপার?

চলবে

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here