গ্যাংস্টার লাভ -২ পর্ব -০৫

#গ্যাংস্টার_লাভ (সিজন 2)
#নুসরাত_জাহান_অংকুর
||পার্ট_৫||

রিহা প্যাকেট হাতে নিয়ে বলে

_”এইগুলো?

রিহা কে সম্পূর্ণ বলতে না দিয়ে রেহান বলে

_”হ্যাঁ!তোমার জন্য।আমি জানি এখানে তোমার অনেকটা অসুবিধা হচ্ছে আর আমার হাতে বেশি সময় নেই তাই সব অর্ডার করে দিলাম।তোমাকে কষ্ট করে আর শপিং করতে হবে না

_”আমার বড়ো অসুবিধা তো আপনি।(বিড়বিড় করে)

রিহা আস্তে বললেও রেহান ভালোই শুনতে পেয়েছে।রেহান চুলগুলো স্টাইল দিয়ে বলে

_”এই অসুবিধা তোমাকে সারাজীবন সহ্য করতে হবে।জানো কত মেয়েদের ক্রাশ আমি(ভাব নিয়ে)

রিহা ভেংচি কেটে দেখতে থাকে।মেয়েদের প্রয়োজনীয় সকল জিনিস পার্সেলে।রিহা এক এক করে সব দেখছে।যেই সব কসমেটিক ব্যাবহার করে সেই সব আছে।একদম শেষের দিকে চকোলেটের বক্স।

রিহা সার্ভমেন্টদের দিয়ে উপরে পাঠিয়ে ভার্সিটির জন্য রওনা দেয়।

গাড়িতে রেহান বসে আছে আর রিহা পিছনের সিটে বসছে।রেহান পিছনে ফিরে বলে

_”আমাকে কি ড্রাইভার হিসেবে রাখছো?

রিহা ভেংচি কেটে বলে

_”আপনার মত ড্রাইভার আমার লাগবে না।আমি নিজের গাড়ি নিজেই চালাতে পারি ।

_”তো আমাকে কি ড্রাইভার পাইছো? পিছনে গিয়ে বসছো কেনো?

রিহা কোনো কিছু না বলে।এতে রেহানের খুব রাগ হয়।নিজেকে শান্ত করে বলে

_”রিহা আমার কিন্তু মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে ।

রিহা কিছু না বলে ব্যাগ থেকে পানির বোতল বের করে যেই রেহানের মাথায় ঢেলতে যাবে তার আগেই রেহান হাত ধরে ধমক দিয়ে বলে

_”কি হচ্ছে কি? পাগল হলে নাকি ?

রিহা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে

_”কেনো আপনার তো মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে তাই ঠান্ডা করছিলাম।

রেহান নিজের চুল টেনে ধরে রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছে।রিহা পানি দেওয়ার জন্য সামনের দিকে কিছুটা ঝুঁকে আসে। সেইসুযোগে রেহান কোমর জড়িয়ে ধরে নিজের কাছে নিয়ে আসে।

হটাৎ এমন কাজে রিহা স্তব্ধ হয়ে যায়।রেহান রিহাকে আরো কাছে নিয়ে চুলগুলো সরিয়ে দিয়ে বলে

_”আমার মাথা ঠাণ্ডা করার উপায় জানো দেখছি।তাহলে মিসেস তোমাকে ঠান্ডা করার উপায় ও তো আমার জানা থাকা দরকার।কি বলো?

রিহা দুইহাত দিয়ে রেহানের চুল টেনে ধরে বলে

_”লুচ্চা ছাড়।নিজের তো মানসম্মান নেই তাই বলে কি আমার সম্মান ও নষ্ট করবি।নারী নির্যাতনের কেস ঠুকে দেবো ।

রেহান রিহার হাত থেকে নিজের চুল ছাড়াতে ব্যাস্ত।শেষে না পেরে রিহাকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে নিজের উপর ফেলে।

রিহা আস্তে আস্তে চুল থেকে হাত সরিয়ে বলে

_”সবাই দেখছে ছাড়ুন।

রেহান ছাড়ার বদলে উল্টো আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে

_”বিয়ে করেছি।কোথায় বউয়ের সাথে রোমান্স করবো। তা না করে সারাদিন শুধু ঝগড়া করতে হয়।ভাবছি এবার বেবি প্ল্যান করবো।বয়স তো কম হলো না

রিহার খুব রাগ হচ্ছে।নিজের রাগটা কে দমিয়ে না রেখে রেহানের গলায় কামড় বসিয়ে দেয়।

রেহান জোরেজোরে হেসে দেয়।রিহা রেহানকে ছেড়ে পাশে সিটে গাল ফুলিয়ে বসে থাকে।রেহান নিজের হাসি থামিয়ে বলে

_” তুমি জানো এইসব আমার উপর কোনো ইফেক্ট করবে না।তোমার মত একটা পিচ্চির কামড়ে আমার কিছু হবে।

_” বেশি বকবক না করে ভার্সিটিতে নিয়ে যাবেন?প্রথম দিন লেট হতে চাই না

রেহান কিছু বলতে গিয়েও থেমে যায়।গাড়ি স্টার্ট দেয়।রিহা জানালার দিকে তাকিয়ে আছে।রেহান একটু পর পর রিহার দিকে তাকাচ্ছে।

রেহান রিহার মুখ নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলে

_”তোমার জামাই এই দিকে তুমি বাইরে কাকে দেখো? এত সুন্দর জামাই বাদ দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকা মানায়।

রিহা ভেংচি কেটে বলে

_”দেখছিলাম রাস্তায় কোনো ভিকারি পাওয়া যায় কি না।যদি পাই তাহলে আপনাকে দিয়ে দেবো।আমি খুব দয়াবান

রিহার কথায় রেহান জোড়ে ব্রেক করে।রিহা সিট বেল্ট না লাগানোর জন্য সামনে ঝুঁকে পড়ে।

_”এই আপনি কি পাগল?আরেকটু হলে মাথা ফেটে যেতো। এই ভাবে কেউ ব্রেক করে

রেহান সেই সব না দেখে রিহাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলে

_”আমায় দিয়ে দিলে তোমার কষ্ট হবে না ?এত সুন্দর জামাই কি পাবে ?

রিহা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে

_”দান করলে কমে যায় না বেড়ে যায়।কে বলতে পারে হয়তো আরো সুন্দর জামাই পেলাম।ইসস কত ভালো হবে ।উফফ আমি কত দয়াবান

রিহার বলতে দেরি রেহানের গাল চেপে ধরতে দেরি না।

_”আমাকে অন্য কারোর কাছে দিয়ে ভালো জামাই পাবে তাই না?মরে গেলেও না তুমি এই রেহানের ছিলে,আছো আর সারাজীবন থাকবে।আমার মৃত্যুর পরও তোমার আমার থেকে মুক্তি নেই। বুঝছো?না বুঝলেও বুঝে নিতে হবে

রিহা কে আর কিছু বলতে না দিয়ে রেহান গাড়ি চালায়।রিহা বকবক করেই যাচ্ছে কিন্তু রেহান কোনো উত্তর দিচ্ছে না।

কিছুক্ষণ পর দুইজন ভার্সিটিতে পৌঁছে যায়।রিহা নামতে গেলে রেহান ওর হাত ধরে ভার্সিটিতে যায়।

রিহার খুব অসস্তি হচ্ছে। সবাই তাকিয়ে আছে কিন্তু রেহানের সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই।রিহার হাত ধরে প্রিন্সিপালের রুমে যায়।

কিছুক্ষণ পর রিহা কে ক্লাস রুম দেখিয়ে দিয়ে এটা সেটা বুঝাচ্ছে আর রিহা রাগে ফুঁসছে।

_”শুনেন আমি বাচ্চা না।আমি জানি কোনটায় আমার ভালো আর কোনটায় আমার খারাপ

রেহান রিহার নাক টেনে বলে

_”আমার কাছে তুমি বাচ্চা।যাকে হাতে কলমে সব শিখিয়ে দিতে হয়। যাই হোক ক্লাস মন দিয়ে করবে।কোনো ছেলে বিরক্ত করলে আমাকে বলবে।ছেলেদের থেকে দূরে দূরে থাকবে।

_”এই আপনি আমার গার্জিয়ান না ওকে। আশে পাশে সবাই তাকিয়ে আছে ।

হটাৎ পিছন থেকে কেউ বলে উঠে

_”রিহা কবে থেকে মানুষের কথায় কান দেওয়া শুরু করলো?

রেহান রিহা পিছনে তাকিয়ে দেখে একটা মেয়ে মুখে হাসি নিয়ে দাড়িয়ে আছে।

রিহা কিছুটা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।মেয়েটা রিহার দিকে তাকিয়ে বলে

_”কি ব্যাপার ভুলে গেলেন?

মেয়েটার বলতে দেরি রিহার জড়িয়ে ধরতে দেরি না।

_”কোথায় ছিলি তুই?জানিস তোকে কত মিস করেছি? কতো দিন পর তোর সাথে দেখা ভাবতেই খুশি লাগছে

লামিয়া রিহাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে

_”আমিও তোকে অনেক মিস করেছি।

হটাৎ রিহা লামিয়া কে ছেড়ে দিয়ে বলে

_”তুই তো

রিহার কথা লামিয়া বুঝতে পেরে বলে

_”পরে বলছি আগে জিজুর সাথে পরিচয় করিয়ে দে।

রিহার এতক্ষণে খেয়াল হলো রেহান আছে।রিহা রেহানের সামনে গিয়ে বলে

_”আপনি এখনো যাননি ?অফিসের দেরি হচ্ছে নিশ্চয় তাড়াতাড়ি যান।

লামিয়া রেহান ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে।রিহা দুইজনের তাকানো দেখে বলে

_”এমন ভাবে তাকানোর মানে কি ?

লামিয়া রিহাকে চুপ করতে বলে রেহানের সাথে কথা বলে আর রিহা পাশে দাড়িয়ে চুপ করে শুনছে।

বেশ কিছুক্ষণ কথা বলে রেহান চলে যায়।ক্লাসে রিহা লামিয়া কে জড়িয়ে ধরে আছে

_”লামী রে তোকে কত মিস করছি।কিন্তু তুই তো

লামিয়া দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে

_” তুই তো জানিস আমি একটা ছেলেকে ভালবাসতাম।আর আমার পরিবার কেমন সেটা ও তো জানিস।বাবা জোর করে একটা কসাই এর সাথে আমাকে বিয়ে দিতে চেয়েছিল তাই তো বাড়ি থেকে পালিয়ে আসি।বাঁধনের সাথে বিয়ে করে ওর বাসায় থাকি। ও আর ভাইয়া মিলে আমাকে ভার্সিটিতে ভর্তি করে।

রিহা কৌতূহল নিয়ে প্রশ্ন কর

_”ভাইয়া কে?

লামিয়া কিছু বলার আগেই স্যার চলে আসে।ক্লাস শেষে রিহা লামিয়া কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে বাসায় চলে আসে।

রিহার আজকে মনটা অনেকটা ফ্রেশ ফ্রেশ লাগছে।ওর স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে + হারিয়ে যাওয়া ফ্রেন্ডকে ফিরে পেয়েছে।

লামিয়া আর রিহা মাধ্যমিক স্তর থেকে এক সাথে।লামিয়া ঢাকায় ওর ফুফুর বাসায় থেকে পড়াশুনা করতো।স্কুল শেষের পর কলেজ।ইন্টার এক্সাম দিয়ে লামিয়ার সাথে আর যোগাযোগ হয়ে উঠেনি কিন্তু মনের টান বলতে তো কিছু একটা আছে।তাই আবার দুইজন একসাথে।

রিহা অনেকক্ষণ ধরে দাড়িয়ে আছে রেহান বলছিলো হয় নিতে আসবে নাহলে গাড়ি পাঠিয়ে দিবে।রিহা কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে হটাৎ ওর সামনে একটা গাড়ি এসে দাঁড়ায়।

গাড়ি থেকে একটা লোক বেরিয়ে বলে

_”রিহা ম্যাডাম।স্যার পাঠিয়েছে

রিহা গাড়িতে উঠে বসে।আজকে ওর খুব ভালো লাগছে কিন্তু একটা বিষয় খারাপ লাগছে ।আজ দুইদিন হলো ওর আব্বু একবার ও ওর খোজ নিলো।

রিহার বুক ফেটে কান্না আসছে।গাড়ির সিটে মাথা দিয়ে চোখ বন্ধ করে রাখে ।

কিছুক্ষণের মধ্যে বাসায় এসে পৌছে।রিহা গাড়ি থেকে নেমে বাড়ির ভিতর ঢুকতে গেলে দেখে অনেক মানুষ।এক দুইদিন এত মানুষদের দেখেনি।

বাড়িটা ঘিরে কয়েকজন দাড়িয়ে আছে ।রিহা আস্তে আস্তে ভিতরে যায় ।রফিক চাচা কে ডাক দেয়।

কোনো সাড়া না পেয়ে নিজের রুমে যেতেই অবাক।

রেহান বিছানায় শুয়ে আছে মাথায় হাতে ব্যান্ডেজ করা।বিছানার পাশে দুইজন লোক দাড়ানো।

একজন রিহা কে দেখে বলে

_”আরে রিহা ভিতরে আসো।

রিহা রেহানের কাছে এসে দাঁড়ায়।রিহা কি বলবে বা কি করবে বুঝতে পারছে না।

রেহান চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে।পাশ থেকে একটা ছেলে বলে

_”রেহানের অ্যাকসিডেন্ট হয়েছে।অফিসে যাওয়ার সময় হয়।

রিহার খুব খারাপ লাগছে।সকালে যে মানুষটা এত ঝগড়া করলো এখন সে নিস্তেজ হয়ে শুয়ে আছে।রিহা কাপাকাপা হাতে রেহানের মাথায় হাত দেয়।

রেহান চোখ খুলে রিহার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলে

_”ক্লাস কেমন হলো?কোনো সমস্যা হয়নি তো ?

রিহার খুব রাগ লাগছে নিজের এই অবস্থায় সে অন্যের চিন্তা করছে ।রিহা উঠে একটা ছেলের কাছে বলে

_”ভাইয়া ডক্টর কি বললো ?

বাঁধন কিছু বলতে যাবে তার আগে রেহান বলে

_”মরবো না এত তাড়াতাড়ি।এখনো অনেক কিছু বাকি।অনেক পথচলা বাকি।

রিহা তাকিয়ে দেখে রেহান এক দৃষ্টিতে রিহার দিকে তাকিয়ে আছে মুখের তার ভুবন ভুলানো হাসি।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here