#গ্যাংস্টার_লাভ (সিজন 2)
#নুসরাত_জাহান_অংকুর
||পার্ট_১০||
রেহান সোফায় এক দৃষ্টিতে রিহার দিকে তাকিয়ে আছে।রিহা সামনের সোফায় আফজাল সাহেবের সাথে বসে আছে।
রুমে পিনপিন নিরবতা।নিরবতা ভেঙ্গে রিহা বলে
_” আমি রুমে যাচ্ছি।শরীরটা ভালো লাগছে না।আব্বু আজ তুমি এখানে থেকে যাও।
কথাটা বলে রিহা কোনো দিকে না তাকিয়ে সোজা নিজের রুমে যেতে গেলে রেহানের হুংকারে কেপে উঠে ।
রেহান চিল্লিয়ে রিহার উদ্দেশে বলে
_” এটা কোনো হোটেল না।যে যখন যেভাবে খুশি থাকবে।এটা একটা বাড়ি আর বাড়ি তৈরি হয় পরিবার দিয়ে।কেউ যদি ভেবে থাকে সে হুটহাট যেখানে খুশি চলে যাবে আবার ফিরে এসে বলবে সরি! সেটা মেনে নেওয়া হবে না। গট ইট?
আফজাল সাহেব কিছু বলতে যাবে তার আগে রিহা দ্বিগুণ চেচিয়ে বলে
_”এটা বাড়ি। কোনো মাফিয়ার গুন্ডার বস্তি না ।যে যখন খুশি চিল্লিয়ে কথা বলবে। ভদ্র লোকদের বাসায় ভদ্র ভাবে চলাফেরা করা উচিত।নিজের এই অ্যাটিটিউড রাস্তায় দেখালে বেটার হয়।
রিহার কথায় লামিয়া রিহা কে ধমক দেয় কিন্তু রিহা কারোর কথা না শুনে সোজা নিজের রুমে চলে যায়।রেহান স্তব্ধ হয়ে দেখছে। রিহার এই রূপ রেহানের মেনে নিতে খুব কষ্ট হচ্ছে ।
আফজাল সাহেব রেহান কে উদ্দেশ্যে বলে
_” আমার এখন যাওয়া উচিত।রিহার কোনো দোষ নেই আমি ওকে আসতে বলছিলাম ।ওর ফোন বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে কারোর সাথে যোগাযোগ করতে পারেনি। আই হোপ ইউ আন্ডারস্ট্যান্ড !
রেহান কোনো কথা বলে ।আফজাল সাহেব রেহানের কাধে হাত রেখে চলে যায় ।
বাঁধন রেহানের দিকে এগিয়ে আসতে গেলে রেহান বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়।বাঁধন ও পিছন পিছন ছুটে যায়।
লামিয়া অনেকবার দরজা ধাক্কা দেয় কিন্তু রিহা দরজা খুলে না।
বেশকিছুক্ষণ পর রিহা বেরিয়ে বিরক্ত নিয়ে বলে
_” কি সমস্যা তোর ? এত বার নক করার কি আছে ? আমি কি মরে গিয়েছি আজব!
লামিয়া রিহার কথায় কোনো উত্তর না দিয়ে ভিতরে এসে বলে
_” তোর কি হয়েছে আমাকে একটু বলবি ? এভাবে হটাৎ ওর আব্বুর কাছে চলে গেলি আবার রেহানের সাথে খারাপ ব্যাবহার করছিস ।তুই জানিস ভাইয়া কত কষ্ট পেয়েছে।রিহা ভাইয়া তোকে অনেক ভালোবাসে
রিহা তাচ্ছিল্যের সুরে বলে
_” একতরফা ভালোবাসা অনেক ভয়ানক।এটা না দেয় কাউকে ভালো থাকতে আর না দেয় নিজেকে ভালো রাখতে।
লামিয়া রিহার কাধ ধরে বলে
_” তোর কি হইছে আমাকে একটু বলবি? এমন করছিস কেনো ?
রিহা অন্য দিকে ঘুরে বলে
_” আমার কিছু হয়নি ।আব্বুর ফোন আসছিল তাই গিয়েছিলাম দেখা করতে।খেয়াল ছিল না নাহলে বাসায় জানিয়ে দিতাম।
লামিয়া কিছু বলতে যাবে রিহা হাত বাড়িয়ে না বলে শুয়ে পড়ে।লামিয়া কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে চলে যায়।
এদিকে
রেহান শহর থেকে কিছুটা দূরে গাড়ি পার্ক করে তাকিয়ে আছে ।বাঁধন গাড়ির উপর বসে রেহানকে পর্যবেক্ষণ করছে ।বর্তমানে রেহানের মানসিক অবস্থা বাঁধন কিছুই বুঝতে পারছে না।
নিরবতা পালন করা ছাড়া বাঁধনের কোনো কাজ নেই।
বেশকিছুক্ষণ পর রেহান ভাঙ্গা গলায় বাধনকে বলে
_” জানিস রিহার আব্বু আর আমার আব্বু ক্লোজ ফ্রেন্ড ।আমার বয়স ১০তম জন্মদিনে রিহা ওর আব্বুর সাথে আমাদের বাসায় আরে।প্রথম দেখাতে রিহা কে ভালো লাগতো কিন্তু তখন তেমন বুঝতাম না।রিহার আম্মু ওকে জন্ম দিতে গিয়ে মারা যায় তাই রিহা আমার আম্মুকে মামনি বলতে ডাকতো।খুব চঞ্চল।আমার জন্মদিনে আমার আগে ও কেক কেটে তুতলিয়ে বলে আমি খাই।সেদিন ওর কথায় হেসে দি।রিহা কে রাগাতে আমার খুব ভালো লাগতো।রাগকে গাল লাল হয়ে যেত ইসস তখন মনে হতো গাল কামড়িয়ে খেয়ে ফেলি।
বাঁধন উঠে রেহানের পাশে এসে দাড়ালো।রেহান আকাশের প্রাণে নিশ্বাস ছেড়ে আবার বলে
_” রিহার আব্বু আমাদের বাসার পাশেই বাসা নেয়।রিহা আর আমি আম্মুর কাছে ঘুমাতাম।অনেক ভালোই দিন যাচ্ছিল হটাৎ একদিন আব্বু আমাকে বাইরে পাঠিয়ে দেয়।সেদিন হাসি মুখে গেলেও বুঝতে পারিনি কি ফেলে গিয়েছিলাম।ওখানে গিয়ে থাকার পর বুঝতে পারছি রিহা আমার ভালোবাসা।তারপর তো আব্বু মারা যায় আবার দেশে ফিরে আসি।সব কিছুর মাঝে রিহা কোথায় আছে সেটা জানার চেষ্টা করি কিন্তু ব্যার্থ।একদিন হটাৎ আম্মু বলে রিহা ঢাকায় আছে ততদিনে আমার পরিচিতি হয়ে গেছে ।রিহার কাছে যেতে গেলে ওর আব্বু বাধা দেয় কেনো দেয় সেটা আমার অজানা । পরে জানতে পারি ওর বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে তখন ওকে কিডন্যাপ করে ওর আব্বুকে রাজি করিয়ে বিয়ে করি।আম্মুর কাছ থেকে শুনছিলাম রিহা আর আমার বিয়ে ঠিক ছিল তাহলে কেনো ওর আব্বু এমন করলো সেটা আমার অজানা ।
রেহান দীর্ঘক্ষণ আকাশের দিকে তাকিয়ে পাশে দৃষ্টি স্থাপন করে দেখতে পায় বাঁধনের চোখ ছলছল।
রেহান কিছু বলার আগেই বাঁধন রেহানকে জড়িয়ে ধরে।
_” আমি জানি আজকে রিহার ব্যাবহারে তুই অনেক কষ্ট পেয়েছিস । রিহা কে সব বলে দিলে কি হয় ?
রেহান মৃদ হেসে বলে
_” ওর হয়তো ছোটবেলার কথা মনে নেই তাই আমি নতুন করে ওর মনে জায়গা করতে চাইছিলাম কিন্তু এখন ওকে না বললে হারিয়ে ফেলার ভয় থেকে যায়।
বাঁধন রেহানকে ছেড়ে কিছু বলতে যাবে হটাৎ রেহানের ফোন বেজে উঠে ।
রেহান গাড়ির কাছে গিয়ে ফোন হাতে নিতেই ঠোঁটের কোণে হাসির রেখা দেখা যায়।বাঁধন রেহানের হাসি দেখে বুঝে যায় কে ফোন দিয়েছে।
রেহান ফোন ধরে চুপ করে থাকে ওপাশ থেকে ও নীরব।
দুইজনের মধ্যে কিছুক্ষণ নিরবতা থাকে।নিরবতা ভেঙ্গে রেহান বলে
_” চুপ থাকবে বলে ফোন দিয়েছো? নাকি তোমার নিশ্বাসের শব্দ শুনাতে চাও?কোনটা ?
রেহান জোড়ে নিশ্বাস নিয়ে বলে
_” দুইটাই। এখন বলেন বাসায় আসবেন কখন ? আমার খুব খুদা লাগছে ।
রেহান মুচকি হেসে বলে
_” এক্ষুনি আসছি ।তুমি wait করো আমি উড়ে উড়ে আসছি ।
রেহান ফোন কেটে বাঁধনের দিকে তাকাতেই বাঁধন হেসে বলে
_” আমি তো উড়িয়ে নিয়ে যেতে পারবো না তবে তাড়াতাড়ি নিয়ে যেতে পারবো ।
রেহান একটা ঘুষি মেরে গাড়িতে বসে ।
রিহা ফোন কেটে লামিয়ার দিকে তাকিয়ে বলে
_” আসছে। এখন তো হ্যাপি ?
লামিয়া রিহা কে জড়িয়ে ধরে বলে
_” খুব ।তবে বেশি খুশি হবো সেদিন যেদিন তুই ভাইয়া কে বুঝতে পারবি ।
প্রতিউত্তরে রিহা কিছু বলে না ।লামিয়া ও আর কিছু বলে না ।
_____________________________________
বাসায় এসে রেহান রিহাকে জড়িয়ে ধরে।রিহা অবাক হয়ে আশেপাশে দেখছে ।সবাই নিজের কাজে ব্যাস্ত ।
রেহান অস্থির কণ্ঠে বলে
_” আমি খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম তাই তো রাগের মাথায় খারাপ ব্যাবহার করছিলাম।তুমি তো জানো রাগের মাথায় মানুষের হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলে আমার ক্ষেত্রে তাই হয়েছে ।সরি
রিহা মিনমিনিয়ে বলে
_” সেটা তো পরে বলা যেতো।এভাবে সবার সামনে
রেহান রিহার কথা ভালো বুঝতে না পেরে ছেড়ে দিয়ে দেখে রিহা মাথা নিচু করে মুচকি হাসছে ।
রিহার মুখের উজ্জ্বলতা দেখে রেহান বুঝতে পারে রিহা লজ্জার বশীভূত হয়েছে । রেহান কানে কানে ফিসফিসিয়ে বলে
_” এত লজ্জা পেতে নেই। ইচ্ছা করছে টুপ করে গাল দুটো খেয়ে ফেলি ।
রিহা উপরে তাকাতেই রেহান চোখ মারে।
রিহার খুব অসস্তি হচ্ছে ।রেহান মিটমিট করে হাসছে আর রিহার অবস্থা দেখছে।
রাতে রেহান এক হাত দিয়ে রিহাকে জড়িয়ে আছে ।রিহা আস্তে আস্তে চোখ খুলে রেহানের দিকে তাকায়।
রেহানের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে ফোন নিয়ে ছাদে চলে যায় । অনেকক্ষণ ধরে ফোন বাজছে ।
রিহা বিরক্ত নিয়ে ফোন ধরে কিছু কড়া কথা শুনিয়ে দেয়।ওপাশ থেকে কোনো কথা আসে না এতে রিহার মেজাজ আরো গরম হয়ে যায় ।
_” এভাবে চুপ থাকার জন্য যদি ফোন দিয়ে থাকেন তাহলে ভুল সময়ে ফোন দিয়েছেন ।রাখছি
রিহা কাটতে গেলে ওপাশ থেকে কথা বলে উঠে ।
রিহা কিছুক্ষণ কথা বলে হটাৎ কি মনে করে বলে
_” আমি তোমাকে পরে ফোন দেবো বাই আর এভাবে হুটহাট ফোন দিবে না বুঝছো।
রিহা ফোন লুকিয়ে পিছনে তাকিয়ে দেখে কোনো কিছু নেই। রিহা আশপাশ ভালো করে দেখে দোলনায় গিয়ে বসে ।
চোখ বন্ধ করে সময়টা উপভোগ করছে । আকাশে আজ কোনো চাঁদ নেই ।কালো মেঘে আচ্ছন্ন।
রিহা মিনমিন করে বলে
_” আকাশের অবস্থা একদম আমার মনের মত। জীবন কতই না খেলা খেলে ।খুব কি দরকার ছিল এই খেলাটার।
রিহা আরো কিছুক্ষন বসে নিচে চলে যায় নিজের রুমে যেতেই রেহানের ঘুমন্ত মুখটা চোখে পড়ে।
_” হায়রে কি নিষ্পাপ এই মুখটা ।কিন্তু আসলে কি নিষ্পাপ ?
রিহা আস্তে আস্তে বিছানায় গিয়ে বসে।ওর চোখে ঘুম নেই।রেহানের মাথায় হাত বুলিয়ে পাশে শুয়ে পড়ে দূরত্ব বজায় রেখে ।
রেহান ঘুমের মধ্যে রিহার গায়ে হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে ।
রিহা বিরক্ত হলেও কিছু বললো না থাক না কিছু সময়ের জন্য।হয়তো এই সময় আর আসবে না।
ফজরের আযানের আগে রিহার চোখ লেগে যায় ।আযানের শব্দে উঠে ওযু করে নেয় ।
নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে সব অভিযোগ করে।মোনাজাত শেষ করে উঠে রেহানের পাশে শুয়ে পড়ে।
_” যত দিন পারো শান্তির ঘুম ঘুমিয়ে নাও। এই ঘুম তোমার জন্য বেশি দিন না #মিস্টার_গ্যাংস্টার ।
রিহা ঘুমের দেশে তলিয়ে যায় ।
।
।
।
রিহা সোফায় মুখ ফুলিয়ে বসে আছে ।রেহান রেডী হচ্ছে একবার আড় চোখে রিহা কে দেখে নিচ্ছে ।
_” এভাবে মুখ ফুলিয়ে লাভ নেই ।তোমার শরীর ভালো না চোখ লাল হয়ে আছে। দেখে মনে হচ্ছে রাতে ঘুম হয়নি ।অন্য একদিন যেয়ো।অফিস তো পালিয়ে যাচ্ছে না
রিহা রেগে চিল্লিয়ে বলে।
_” বুঝছি অফিসে নিশ্চয় আরেকটা বউ আছে তাই আমাকে নিয়ে যেতে চাইছেন না । আপনাকে আমি জেলে দেবো হ্ন।
রেহান হাতের ঘড়ি ঠিক করতে করতে বলে
_” আগে নিজে সুস্থ হয়ে নাও তারপর না হয় যেখানে খুশি দিও ।তবে তোমাকে সাথে নিয়ে যাবো ।
রিহা রেহানের আরেকটু কাছে এসে বলে
_” আমি তো আপনার স্ত্রী।আমার কি অধিকার নেই আপনি কোথায় কাজ করেন কি করেন সেই সব জানার। আমি তো এমনি ঘুরতে যাবো।আমি কোনো ডিস্টার্ব করবো না প্রমিজ। প্লীজ
রেহান রিহার মত কিউট ফেস করে বলে
_” নো
রিহা এবার কান্না করে দেয় ।রেহান হতভম্ব রিহার কাজে ।ছোট একটা বিষয় নিয়ে এভাবে কেউ কান্না করতে পারে সেটা রেহানের জানা ছিল না ।
অনেক বুঝানোর পর রিহা কোনো কথা শুনছে না।ওর জেদ অফিসে যাবে তো যাবেই।শেষে কোনো উপায় না পেয়ে রেহান রাজি হয়ে যায়।
রিহা খুশি মনে রেডী হতে যায়।রেহান ফোন টিপছিল রিহা ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে রেহানের দিকে একটা হাসি দেয়।
এই হাসি যতেষ্ট রেহান কে মারার জন্য।
রেহান বিড়বিড় করে বলে
_” ইসস আমার বউটা কি কিউট । ছোট থাকতে আরো ছিল তবু ও এখন ইচ্ছা করছে দুই গালে কামড় বসিয়ে দি । ইচ্ছা কেনো দমিয়ে রাখবো বউ তো আমার
রেহান রিহার কাছে যায়।রিহাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে ভালো করে দেখে নেয়। রিহা কিছু বলার আগেই রেহান গালে কামড় দিয়ে দৌড় ।
রিহা হতভম্ব হয়ে যায় রেহানের কাজে।
গাড়িতে রেহান বসে আছে আর মনে মনে আল্লাহ কে ডাকছে আজ যে রিহা কি করবে আল্লাহ ভালো জানে।
একটু পর রিহা এসে পাশে বসে।মুচকি হেসে রেহানের দিকে তাকিয়ে আছে ।
_” রেহান আজ তোর জন্য শাস্তি স্বরূপ ভয়ানক কিছু অপেক্ষা করছে । গেট রেডী (মনে মনে) আসলে
রেহান মুখ খুলতেই রিহা ওর মুখে কিছু ঢুকিয়ে দেয়।রেহান প্রথমে বুঝতে না পারলেও যখন বুঝতে পারে তখন
_” আহহ পানি ! আম্মু গো !
রিহা মিটমিট করে হাসছে। রেহানের নাক মুখ দিয়ে ধোয়া বের হচ্ছে ।
চলবে