গ্যাংস্টার লাভ -২ পর্ব -১৬+১৭

#গ্যাংস্টার_লাভ (সিজন 2)
#নুসরাত_জাহান_অংকুর
||পার্ট_১৬||

পিটপিট করে চোখ খুলতেই রেহানের ক্লান্তি মাখা মুখ সামনে পড়লো।রিহাকে চোখ খুলতে দেখেই রেহান অস্থির হয়ে বলে

_” ঠিক আছো ?ব্যাথা করছে ?

রিহার কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে।তবুও মুখ নাড়াতেই রেহান বুঝে যায়। রেহান উঠে পানি এনে খাইয়ে দেয়।

রিহা কিছু বলতে পারছে না শুধু রেহানের দিকে তাকিয়ে আছে ।মাইশা চৌধুরী নামাজ পড়ে এসে রিহার মাথায় দোয়া পড়ে ফুঁ দেয়।

_” কেমন লাগছে এখন ? কষ্ট হচ্ছে ?

রিহা মাথা নাড়িয়ে না বোঝায় ।রিহা মন খারাপ করে আছে দেখে রেহান বলে

_” তুমি এত দুর্বল সেটা আগে জানতাম না । খাও না নাকি? সামান্য গুলি করাতে কেউ একদিন পর সেন্স ফিরে ।লাইক সিরিয়াসলি ! গ্যাংস্টারের বউ এত দুর্বল।ব্যাপারটা হাস্যকর না ।

রিহা কিছু বলে না তবে চোখের কর্নিশ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে।রেহান হাত দিয়ে মুছে দেয়।

মাইশা চৌধুরী চলে যায়। রেহান রিহাকে উঠিয়ে কাছে টেনে বলে

_” কি হয়েছে ? ভয় পেয়েছিলে? আমি থাকতে তোমাকে কেউ কিছু করতে পারবে না । বলেছিলাম তো গাড়ি থেকে বের না হতে তবুও কেনো শুনলে না ? এখন কষ্ট কার হচ্ছে আমার না তোমার ?

রিহা হাত দিয়ে রেহানের দিকে ইশারা করে ।রেহান হেসে দেয়।হটাৎ রিহা মৃদু চিৎকার করে উঠে ।

রেহান অস্থির হয়ে জিজ্ঞেস করে

_” কি হইছে ? হাতে ব্যাথা করছে ? দেখি কোথায় ব্যাথা করছে ?

রিহা চোখ দিয়ে ইশারা করতেই রেহান রিহার হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলে

_” কিছু হবে না। সেলাইন প্রায় শেষের দিকে।এখন একটু জ্বলবে ।আর একটু সহ্য করো ।just 5 মিনিট।

বেশকিছুক্ষণ পর রিহার সেলাইন খুলে দিলে রিহা রেহানের দিকে দৃষ্টি স্থাপন করে বলে

_” আমাদের

কথাটা সম্পূর্ণ করার আগেই মাইশা চৌধুরী খাবার এনে দাড়ায়। রেহান খাইয়ে দিতে গেলে মাইশা চৌধুরী নিজে হাতে খাইয়ে দেয়

_” জানিস খুব ইচ্ছা ছিল তোকে এই বাড়িতে আয়োজন করে নিয়ে আসবো কিন্তু আমার ইচ্ছা পূরণ হলো না ।যাক সমস্যা নেই তুই সুস্থ্য এটাই ভালো কথা ।

রিহা চুপ করে খেয়ে যাচ্ছে ।মাইশা চৌধুরী রিহার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ।রিহা রেহানের দিকে তাকিয়ে বলে

_” কি দেখছো মামনি ?

মাইশা চৌধুরী রিহার মুখে হাত বুলিয়ে বলে

_” তুই একদম তোর আম্মুর মত দেখতে ।সেই চোখ সেই ঠোঁট ।

রিহা অস্পষ্ট সুরে বলে

_” কিন্তু আব্বু যে বলে আমি উনার মত দেখতে ।

রিহার কথায় মাইশা চৌধুরী হেসে দেয়।

_” সব আব্বু তার সন্তান কে নিজের মতো মনে করে ।তুই তোর আম্মু কে দেখেছিস ?

রিহা মাথা নাড়িয়ে না বোঝায়।মাইশা চৌধুরী মাথায় হাত বুলিয়ে বলে

_” অন্য একদিন দেখাবো কেমন ? এখন রেস্ট নে

মাইশা চৌধুরী ভাতের প্লেট নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায় ।রেহান রিহার এক হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে ঠোঁট ছুঁইয়ে দেয়।

_” কতোটা ভয় পাইয়ে দিয়েছিলে জানো ?তোমার সেন্স ফিরছিল না দেখে মনে হচ্ছিল জানটা বেরিয়ে যাবে ।

রিহা কে গুলি করছিলো সেটা জিজ্ঞেস করতেই রেহান এড়িয়ে যায়।

এক সপ্তাহ পর।আজ রিহা অনেকটা সুস্থ্য।এখনো ক্ষত আছে কিন্তু আগের মত বেশি দুর্বল লাগছে না । এইকয়দিনে রেহানকে যতবার জিজ্ঞেস করছে রেহান এড়িয়ে গিয়েছে ।

রিহা এইসব ভাবতে ভাবতে মাইশা চৌধুরির রুমে যায় । রেহান বাইরে গিয়েছে ।রুমের বাইরে পা দিতে নিষেধ করেছে কিন্তু রিহা কি শুনবে ।মাইশা চৌধুরির দরজার বাইরে নক করতেই ।মাইশা চৌধুরি ভিতরে আসতে বলে।

_” মামনি সেদিন তুমি আম্মুর ছবি দেখাবে বলেছিলে না ।তাহলে তুমি আম্মুকে চিনো তাই না ?

মাইশা চৌধুরী আলমারি থেকে একটা এলবাম বের করে বলে

_” তোর আম্মুকে আমার থেকে ভালো কেউ চিনে না । তুই এখন আমার ছেলের বউ।তোর সব জানা উচিত ।তোর হয়তো মনে নেই ।এই দেখ এটা রেহান

রিহা ভালো করে দেখে রেহান এক চোখ মেরে ছবি তুলছে ।ছবিটা দেখে রিহা জোড়ে হেসে উঠে।

_” মামনি তোমার ছেলে কি বাচ্চাকাল থেকে পাকনা ?

মাইশা চৌধুরী ও হেসে দেয়।এমন করে রেহানের আরো কিছু ছবি দেখা গেলো । পরে রেহানের আব্বু ।রেহানের পুরো পরিবারের ছবি দেখায়।মাইশা চৌধুরি তিনজনের একটা ছবি রিহার দিকে দেখিয়ে বলে

_” বল তো এটা কে ?

রিহা ভালো করে দেখে তবুও চিনতে পারে না ।মাইশা চৌধুরির দিকে তাকাতেই তিনি হেসে ।মহিলার দিকে ইশারা করে বলে

_” এটা তোর মা। আর কোলে বাচ্চাটা তুই ।

রিহা ছবিটা হাতে নিয়ে বলে

_” আব্বুকে কতবার বলেছি আম্মুর ছবি দেখাতে কিন্তু আব্বুর কষ্ট হতো বলে আর জোড় করতাম না। আমার আম্মু কত সুন্দর দেখতে ।

মাইশা চৌধুরি রিহার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে

_” দেখ তো তুই তোর আব্বুর মত নাকি আম্মুর মত।

রিহা ছবিটা নিয়ে আয়নার সামনে গিয়ে নিজের সাথে মিলাচ্ছে ।

_” সত্যি তো আমি একদম আমার আম্মুর মত।

রিহা আবার মাইশা চৌধুরীর পাশে বসে পরের ছবিগুলো দেখতে থাকে ।

এই প্রথম নিজের আম্মুকে দেখে রিহার অনেক ভালো লাগছে ।চোখের কোণে পানি জমে আসছে ।

_” আচ্ছা মামনি আম্মুর সাথে এই লোকটা কে ? অনেকগুলো ছবিতে দেখলাম আমার আর আম্মুর সাথে

মাইশা চৌধুরি অবাক হয়ে রিহার দিকে তাকায় ।তারপর কি ভেবে বলে

_” তুই তোর আব্বুকে চিনতে পারছিস না ।এত বছরে কি ভাইজানের চেহারা বদলে গিয়েছে ?

মাইশা চৌধুরীর কথায় রিহা হেসে বলে

_” এটা আমার আব্বু না ।তোমার কোথাও ভুল হচ্ছে

মাইশা চৌধুরী ছবিটা ভালো করে দেখে বলে

_” না দেখ তোর আব্বু আর তুই ।যখন তোর আম্মু মারা যায় তার কয়েক বছর পর আমাদের বাসায় আসিস তখনকার ছবি ।

রিহা নিজের ফোন থেকে ওর আব্বুর ছবি বের করে বলে

_” এই দেখো এটা আমার আব্বু ।

মাইশা ফোন হাতে নিয়ে বলে

_” এটা তো রিমার খালাতো ভাই । হ্যাঁ আমার ঠিক মনে আছে ।

রিহা মাথায় হাত দিয়ে চেপে ধরে ।

_” তুমি আমার আব্বু আম্মুকে চিনলে কি করে ?

মাইশা চৌধুরি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে

_” তোর আম্মু ( রিমা) আর আমি এক এলাকার মেয়ে। ছোট থেকে আমাদের মধ্যে খুব ভালো সম্পর্ক ছিল। তোর আম্মু খুব ভালো স্টুডেন্ট ছিল কিন্তু তোর নানা আগেকার মানুষ ।মেয়েদের লেখাপড়া করানো পছন্দ করত না ।তবুও তোর মা তোর বাবার কাছ থেকে টাকা নিয়ে পড়ত। তোর বাবা আর তোর মা একে অপরকে ভালোবাসতো।একদিন তোর আব্বু আর তোর আম্মু কথা বলছিল আমি একটু দূরে দাঁড়িয়ে ছিলাম ।তখন তোর নানা দেখে ফেলে আর পরের দিন তোর নানার পছন্দ করা ছেলের সাথে বিয়ে ঠিক করে কারণ তোর আব্বু ছিল অনাথ।তোর আব্বুর মা_বাবা ছিল না।দাদীর কাছে বড়ো হয়।তোর নানা তোর আব্বু কে পছন্দ করত না।তোর আম্মু অনেক কান্না করছিলো তবুও তোর নানা শুনেনি।মানসম্মানের ভয়ে বিয়েটা চুপি চুপি করতে চেয়েছিল। বিয়ের দিন সকালে তোর আব্বু আর তোর আম্মু পালিয়ে যায় ।আমি ওদের বাসে তুলে দিয়েছিলাম ।আমি কখনো চাইনি রিমার ওই খারাপ লোকের সাথে বিয়ে হোক।তোর মার যার সাথে বিয়ে হবার কথা ছিলো সে তোর আম্মুর খালাতো ভাই।এক নাম্বারের মেয়েবাজ। তোর আব্বু আম্মু চলে যাবার পর ।গ্রামে অনেক ঝামেলা হয় । তোর আম্মুরা ছিল ২বোন এক ভাই ।তোর ছোট খালা আম্মুর সাথে বিয়ে দিয়ে দেয়।তার কয়েক বছর পর আমার বিয়ে হয়ে যায়।একদিন হঠাৎ তোর নানা আর তোর আম্মুর যার সাথে বিয়ে হবার কথা ছিলো লিয়ন নাম ।ওরা দুইজন জানতে পারে যে আমি তোর মা আর আব্বুকে পালিয়ে যেতে সাহায্য করি । পরে ওরা ঝামেলা করে দেখে আমার স্বামী আমাকে শহরে নিয়ে এসেছিল ।ভালো চলছিল রেহান যখন আমার পেটে তখন তোর আম্মুর সাথে একদিন দেখা হয়।অনে খারাপ অবস্থা ছিল তোদের ।তুই তখনো পৃথিবীতে আসিস নি ।তোর আব্বুর চাকরি চলে যায় ।রেহানের আব্বু তোর আব্বুকে ব্যাবসা করতে বলে।তোর আব্বু গ্রামের সব কিছু বেচে ব্যাবসা শুরু করে ।ভাইজান ভালো দক্ষ ছিল আর রেহানের আব্বুর সহায়তায় কয়েক বছরের মধ্যে ভালোই লাভ করে ।তোরা আমাদের সাথে থাকতী ।এটা কি করে লিয়ন জেনে যায় সে এখানে চলে আসে তোর আম্মুকে নিয়ে যাবে ।তোর আব্বু তখন ভালোই বড়লোক।এখানে পাট শেষ করে ঢাকায় চলে যায় ।তারপর আর যোগাযোগ হয়ে উঠেনি ।একদিন আমি ভাইজানের নাম্বারে ফোন দিয়ে জানতে পারি তোর আম্মু মারা গিয়েছে ।তারপর ভাইজান এখানের সব গুছিয়ে বিদেশে চলে যায়।দেশে ফিরে তুই আমাদের বাসায় আসিস তখন তোর বয়স ৪কি ৫ ।রেহান বিদেশে যাবার পর তোর ও মন খারাপ থাকতো।তাই তোর আব্বু তোকে ঢাকা নিয়ে যায় ।তারপর আর যোগাযোগ হয়ে উঠেনি ।রেহান ওর আব্বু মৃত্যুতে দেশে চলে আসে ।তোর খোজ করে কিন্তু আমরা কেউ তোর আর তোর আব্বুর খোজ পায়নি ।রেহান ঢাকা চলে যায় আমি এখানেই থাকতাম।একদিন রেহান ফোন করে বলে তোকে বিয়ে করে আনছে ।শুনে আমি অবাক হলেও খুশি হই। তোর আম্মুর খুব ইচ্ছা ছিল ।

সবটা শুনে রিহা স্তব্ধ হয়ে বসে আছে ।কি বলবে বা কি বলার উচিৎ কিছুই বুঝতে পারছে না ।

_” মামনি তাহলে আমার আব্বু কে ?

মাইশা চৌধুরী চিন্তিত হয়ে বলে

_” তুই যাকে দেখালি সে ভাইজান না । কিন্তু ওইলোক তোর আব্বু পরিচয় কেনো দিচ্ছে এটা তো সেই বলতে পারবে ।

রিহা মাইশা চৌধুরী কে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে দেয় ।

_” মামনি ওই লোকটা আমার আব্বু না হলে আমার আব্বু কোথায় ? আমি কি করে আমার আব্বুর খোজ পাবো?

_” আমি এনে দেবো খোজ ।

মাইশা চৌধুরি আর রিহা দরজার দিকে তাকাতেই দেখে রেহান দাড়িয়ে আছে ।রিহা ছুটে রেহানের কাছে গিয়ে বলে

_” রেহান ওই লোকটা আমার আব্বু না ।তুমি জানো ওই লোকটা আমাকে মিথ্যা বলছে ।তুমি আমার আব্বুকে খোঁজে দেবে বলো না ।

রেহান কোনো কথা না বলে কিছু কাগজ রিহার দিকে এগিয়ে দেয় ।রিহা কাপাকাপা হাতে কাগজ গুলো নিয়ে চোখ বুলাতেই মাথা ঘুরতে শুরু করে ।রিহার চোখ আস্তে আস্তে বন্ধ হয়ে যায় ।

রেহানের বুকে ঢলে পড়ে।
#গ্যাংস্টার_লাভ(সিজন ২)
#নুসরাত_জাহান_অংকুর
||পার্ট_১||

_”এই আপনাকে দেখতে তো হিরোদের মত কিন্ত কাজ ভিলেনের মত কেনো হুম? ছোট থেকে কি ভিলেন হওয়ার ইচ্ছা ছিল আর সেই ইচ্ছা মনে হয় আমাকে দিয়ে পূরণ করলেন। যাই হোক আমাকে যখন কিডন্যাপ করে এনেছেন এখন আমাকে খেতে দেন আমি কিন্ত চিকেন বিরিয়ানি খাবো।আপনি ঐভাবে তাকিয়ে কি দেখছেন?আপনার লোকেরা আমাকে জোর করে তুলতে গিয়ে আমার পছন্দের ফোনটা ভেঙ্গে ফেলেছে।আরে বাবা আমাকে যদি বলতো কিডন্যাপ করা হবে তাহলে আমিই টাকা দিয়ে দিতাম এভাবে কষ্ট করে তুলে আনার মানে হয় বলুন তো?

একনাগাড়ে কথাগুলো বলে দম ছাড়লো রিহা।নিজেকে এখন যেনো হালকা লাগছে।এতক্ষণ মুখে টেপ থাকার জন্য মনে হইছিলো এক্ষুনি মারা যাবে।বড়ো বড়ো নিশ্বাস নিয়ে সামনে দৃষ্টি রাখতেই দেখে সামনে ব্যাক্তিটি তাকিয়ে আছে যেনো সে কত বছর পর নিজের চোখের তৃষ্ণা মেটাচ্ছে ।রেহানকে হা করে তাকিয়ে থাকতে দেখে রিহা ভ্রু কুচকে হাত নাড়াতে যাবে তখন বুঝলো ওর হাত বাঁধা।সামনে থাকা ব্যাক্তির দিকে হালকা হেসে রিহা বলে

_”একটু হাত খুলে দেবেন?অনেক ব্যাথা করছে দেন না প্লীজ! পরে আপনাকে কিছু বোনাস দিয়ে দেবো। সত্যি বলছি !

সামনে থাকা ব্যাক্তির কোনো রেসপন্স না পেয়ে রিহা আড় চোখে তাকায়।

_”লোকটা কি কানে শুনতে পায় না?দেখে তো মনে হয় না।ওহ বুঝছি কানের অপারেশন করাবে বলে আমাকে তুলে আনছে ।আগে বললে বলো আমি তখনই টাকা দিয়ে দিতাম আহারে বেচারা।দেখতে কত সুন্দর।কিডন্যাপ না করলে প্রেম করা যেতো।বেচারার কপালে আমি নেই কারণ i hate #গ্যাংস্টার । বেড লাক মিস্টার হ্যান্ডসাম (বিড়বিড় করে)

রিহা বিড়বিড় করে কথা গুলো বলে তাকাতেই দেখে সামনে থাকা ব্যাক্তিটি রিহার হাতের বাঁধন খুলে দিচ্ছে ।বাঁধন খুলতেই রিহা নিজের হাত দেখে কাদো কাদো মুখ করে বলে

_”আমার হাত কি করে দিছে!সালা হনুমান তোদের ভালো হবে না আস্তে বাঁধলে কি হতো আমি কি পালিয়ে যাচ্ছি নাকি? উফফ হাতটা লাল হয়ে গেছে

রিহা আনমনে বলতে বলতে রেহান রিহার হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে ভালো করে দেখতে থাকে।রিহা ভ্রু কুচকে বুঝার চেষ্টা করছে কি হচ্ছে

_”প্রথম দেখলাম কিডন্যাপার এত যত্ন নেয়(মনে মনে)

রেহান চিল্লিয়ে কাউকে ডাকতেই দুটো লোক চলে আসে ।রেহান দুইজনকে মলম আনতে বলে।মলম নিয়ে রিহার হাতে লাগিয়ে যেই নিজের ঠোঁট ছোঁয়াতে যাবে রিহা তাড়াতাড়ি হাত সরিয়ে নেয়

_”এই আপনি কি পাগল হলেন? কি করছেন কি?

রেহান রিহা কে কিছু বলতে না দিয়ে হাত ধরে টেনে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।রিহার দম বন্ধ হয়ে আসছে মনে হচ্ছে রিহাকে নিজের ভিতরে ঢুকিয়ে নেবে।রিহা নড়াচড়া করার শক্তি পাচ্ছে না।

_”তুমি এত বক বক করো কি করে?এতক্ষণ বকবক করে কষ্ট হয়নি?এই কে আছিস পানি দিয়ে যা তো।আমার পিচ্চিটার কথা বলতে বলতে কষ্ট হয়ে গেছে!

রিহার রাগ সপ্তম আসমানে উঠে গেছে।রিহা নিজেকে ছাড়াতে চেষ্টা করে কিন্তু লাভ হয় শেষে উপায় না পেয়ে রেহানের বুকে কামড় দিয়ে দেয়।

কিন্তু অবাক করার বিষয় রেহান চিৎকার না করে উল্টো হাসছে।রিহা মনে করে ব্যাথা লাগেনি তাই আবার কামড় দিতেই রেহান প্রথমের তুলনায় এবার বেশি হাসছে ।রিহা মুখ ফুলিয়ে রেহান এর দিকে তাকায়।

মনেমনে নিজেকে শখানেক গালি দেয়। রেহান নিজের হাসি থামিয়ে পুনরায় রিহার দিকে দৃষ্টি স্থাপন করে।

রিহা কে ছেড়ে দিয়ে কিছুটা দূরে বুকে হাত গুজে দাড়িয়ে থাকে।রিহা ভ্রু কুচকে বুঝতে চেষ্টা করছে কি হচ্ছে

_”কিডন্যাপ করছে ভালো কথা তাই বলে জড়িয়ে ধরবে লজ্জা বলতে কি কিছু নেই।ওহ হো আমি ভুলেই গিয়েছিলাম কিডন্যাপের যদি লজ্জা থাকে তাহলে তারা কিডন্যাপার হলো কি করে?কিডন্যাপ হবার পর কি তোর বুদ্ধি ঘুরতে গেছে

রেহান বাকা হেসে বলে

_”নিজের সাথে কথা বলে কি লাভ ?তোমার মনে যতো প্রশ্ন আছে আমাকে করতে পারো উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো ।নিজের সাথে বকবক করলে লোকে তোমায় পাগল বলবে আর আমার জানকে কেউ পাগল বলে এটা আমি কি করে মেনে নি ?

রিহা অবাক হয়ে প্রশ্ন করে

_”তার মানে আপনি শুনতে পান।তাহলে আমার কিডন্যাপ করলেন কেনো?

রেহান রিহার কাছে এসে চুলগুলো কানের পিছনে দিতে গেলেই রিহা পিছিয়ে যায়।রাগী কণ্ঠে বলে

_”দেখুন আমাকে কিসের জন্য আনছেন সেটা বলুন।এভাবে এখানে রাখার কোনো মানে হয় না

রেহান কিছুটা নড়েচড়ে দাড়ালো।মাথা চুলকিয়ে বললো

_”ওকে ফাইন বলবো কিন্তু আগে কিছু খেয়ে নাও।খালি পেটে কথা গুলো হজম নাও হতে পারে

রিহা চেয়ারে বসে পড়ে

_”লোকটা ঠিক বলছে খুব খুদা লাগছে আর আমি তো জানিনা এরা কখন আমাকে ছাড়বে আর আব্বু কখন আসবে নিতে। তার থেকে ভালো খেয়ে নি(মনেমনে)

রিহা মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিতেই রেহান কাউকে ডাক দেয়। একটুপর একটা লোক এসে টেবিলের উপর খাবার রাখে ।রিহা তাকিয়ে দেখে বিরিয়ানি।

রেহান পানি এগিয়ে দিতেই রিহা হাত ধুয়ে খাওয়া শুরু করে আর রেহান পলকহীন চোখে তাকিয়ে দেখছে ।

রিহা না তাকিয়ে বললো

_” নজর দিয়ে লাভ নেই থুথু দিয়ে রাখছি।আপনার খুদা লাগলে ওদের বলেন আনতে।আমার কোনো কিছুর ভাগ আমি কাউকে দেবো না

রেহান জোড়ে হেসে দেয়।রিহা আড় চোখে একবার তাকিয়ে খাওয়া শুরু করে।খাওয়া শেষ হতেই রিহা পানি খেতে খেতে রেহান এর দিকে তাকায়।রেহান এর তাকানো দেখে রিহার পানি নাকে মুখে উঠে যায়।

রেহান ব্যাস্ত হয়ে পিঠে হাত বুলাতে থাকে।রিহা কিছুটা শান্ত হলে রেহান পাশের চেয়ারে বসে রিহাকে বলে

_”আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই আর তোমাকেও বিয়ে করতে হবে।সেটা আজই

রিহা আশেপাশে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলে

_”প্রাঙ্ক চলছে ?ক্যামেরা কই?আচ্ছা চ্যানেলের নাম কি ?

রেহান রিহার চেয়ার নিজের দিকে টেনে রিহার চোখে চোখ রেখে বলে

_”এটা কোনো প্রাঙ্ক না ।আমি সত্যি তোমাকে বিয়ে করতে চাই আর সেটা এক্ষুনি।আমি জানি গোলাপ এনে প্রপোজ করা উচিত ছিল কিন্তু এখন ওইসবের টাইম নেই বিয়ে শেষ হলে না হয় কর

রেহান কে আর বলতে না দিয়ে রিহা দাড়িয়ে যায় আর চিল্লিয়ে বলে

_”পাগল নাকি আমার বিয়ে হয়ে গেছে তাহলে আমি কেনো আপনাকে বিয়ে করবো? নিজেকে কি মনে করেন এই লোকগুলো আপনার কথা মত চলছে বলে আমিও আপনার কথা মত চলবো কখনোই না।আমি যাচ্ছি এখান থেকে

রিহা যেতে গেলে রেহান রিহার হাত ধরে টেনে নিজের কাছে আনে ।রিহা ছটপট করেই যাচ্ছে

_”আমি না চাইলে তুমি এখান থেকে যেতে পারবে না আর তোমার বিয়ে হয়নি সেটা আমি জানি। দেখো রিহা টাইম নষ্ট না করে বিয়ের জন্য রাজি হয়ে যাও নাহলে তোমার জন্য খারাপ

রিহা রেহানকে লাথি মারে রেহান কিছুটা দূরে সরে যায় ।

রিহা বাকা হেসে বলে

_” খারাপ তো তোর হবে জানিস না কাকে তুলে আনছিস।তোকে তোর জায়গা দেখিয়ে দিতে আমার দুই মিনিট লাগবে

কথাটা বলে রিহা নিচে থেকে ধুলো তুলে রেহান এর চোখে মেরে দেয়।রেহান চিল্লিয়ে উঠতেই রিহা দরজা খুলে বাইরে চলে যায় ।

খুশি মনে বের হতেই রিহার চোখ কপালে।

_”ওহ গড রিহা তুই তো গেছিস।এত মানুষ তো কোনো এমপি,মিনিস্টারের সাথে থাকে।একটা গুন্ডার সাথে থাকে সেটা শুধু ফিল্মে দেখেছি (মনেমনে)

গার্ডগুলো রিহার দিকে তাকিয়ে আছে রিহা নিজেকে সাভাবিক করে বলে

_”আরে আপনারা এখানে কি করছেন আপনাদের sir অসুস্থ্য হয়ে গেছে যান গিয়ে দেখেন

রিহার কথা শুনে লোকগুলো তাড়াতাড়ি ভিতরে যায় রিহা সেই সুযোগে গোডাউন থেকে বের হতেই রেহান চিল্লিয়ে বলে

_”রিহা স্টপ

রিহা একবার পিছনে তাকিয়ে দৌড়।রেহান ওর গার্ডের পাঠিয়ে দেয় ।

ধুলো লাগার ফলে রেহান এর চোখ জ্বলছে ড্রপ দিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে ।

একটুপর গার্ডগুলো রিহা কে বেধে নিয়ে আসে ।

_”স্যার ম্যাডাম কে নিয়ে এসেছি

কারোর ডাকে রেহান চোখ খুলে দেখে রিহার হাত পা বেঁধে দুইজন ধরে রাখছে ।লোকগুলোর মধ্যে একজনের মাথা দিয়ে রক্ত পড়ছে

রেহান অবাক হয়ে বলে

_”ওকে এভাবে বেধে আনছ কেনো ? আর তোমার মাথা দিয়ে রক্ত পড়ছে কেনো ?

একজন গার্ড কিছুটা ভয় পেয়ে বলে

_”সরি স্যার কিন্তু ম্যাডাম খুব দুষ্ট ।আমাদের ৪জনকে মেরে তক্তা বানিয়ে দিচ্ছিল।মোহনকে তো মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে তাই বেধে আনতে হইছে

রেহান ইশারা করতেই লোকগুলো পাশে রাখা খাটে রিহা কে রেখে চলে যায় ।রিহা হাত,পা ছুড়াছুড়ি করছে।

রেহান একটা ধমক দিতেই রিহা চুপ হয়ে যায় কিন্তু মুখের বাঁধন খুলার চেষ্টা করে ।

রেহান বুঝতে পেরে বলে

_”দেখো রিহা আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই আর এটাই ফাইনাল।কেনো চাই?এত তাড়াতাড়ি কেনো সব বিয়ের পর বলবো এখন তুমি রাজি হয়ে যাও নাহলে তোমার সহ তোমার পরিবারের বিপদ

রিহা চোখ দিয়ে ইশারা করে মুখের বাধন খুলতে বলে।রেহান খুলে দিতেই রিহা চিল্লিয়ে বলে

_”আপনি কি পাগল আমার বিয়ে ঠিক হয়ে আছে আর আমি তাকে ভালোবাসি ।আমি আপনাকে বিয়ে করতে পারবো না মানে পারবো না। যা করার করুন।হ্ন আইছে আমাকে ভয় দেখাবে আর আমি ভয় পেয়ে যাবো ।জানে তো না ওদের মত গুন্ডা কে আমি আমার জিন্সের পকেটে রাখি(ভাব নিয়ে)

রেহান দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ফোন বের করে কাউকে আসতে বলে।ফোন রেখে রিহার দিকে বাকা হেসে তাকায়

_”এই লোক এমন করে হাসছে কেনো? কাকে আসতে বললো ? আমাকে মেরে ফেলার প্ল্যান করছে না তো ? (মনে মনে)

রিহার ভাবনার মাঝে দুইটা লোক ভিতরে ঢুকে।রিহা দুইজন কে দেখে আরো বেশি ছটফট করতে থাকে।

বারান্দায় দাড়িয়ে ব্যাস্ত শহরটাকে দেখছে রিহা।অনেক কিছুর হিসাব তার মিলছে না।একটা দিনের মধ্যে নিজের জীবনের এমন পরিবর্তন মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে।চেনা মানুষদের খুব অচেনা লাগছে আর অচেনা মানুষকে চেনা।মাত্র কয়েক ঘন্টার মধ্যে আপন হয়ে গেলো পর আর পর হয়ে গেলো আপন।

ব্যাস্ত শহরের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।পাশে কারোর উপস্থিতি টের পেয়ে সেদিকে না তাকিয়ে চোখ বন্ধ করে বলে

_”খুব কি দরকার ছিল আমার জীবনের এই পরিবর্তনের নাকি সবটা আগে থেকে প্ল্যান ছিল

রিহার কথায় রেহান কোনো উত্তর দেয় না মুচকি হেসে সেও ব্যাস্ত শহর দেখতে ব্যাস্ত।রেহানের কোনো রেসপন্স না পেয়ে রিহা চোখ খুলে বলে

_”আমি কিছু বলছি !

রেহান রিহার চোখের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলে

_”উত্তর তো তোমার কাছে আর মানুষের জীবনের কখন কিভাবে পরিবর্তন হবে সেটা শুধু আল্লাহ জানেন।জন্ম,মৃত্যু,বিয়ে সব আল্লাহর ঠিক করে রাখে।এখন এটা বলো না তোমাকে জোর করে বিয়ে করেছি ।

রিহা আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে

_”সেটা আমি কখনোই বলবো না সেটা আপনি জানেন।তবে আমার কাছ থেকে ভালোবাসা অ্যাকসেপ্ট করেন না আমি অন্য কাউকে ভালোবাসি ।

রেহান রিহার দিকে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ তারপর বলে

_”যার সাথে তুমি এত বছর থাকলে তাকেই তুমি চিনতে পারলে সেখানে তোমার মনের মানুষ চিনবে সেটা ভাবা নেহাত বোকামি।

রেহান পিছন ফিরে হাটা শুরু করে আর রিহা রেহানের কথা গুলো ভাবছে ।

_”খুব কি ক্ষতি হতো বিশ্বাসটা না ভাঙলে ।কিন্তু আমার কেনো কষ্ট হচ্ছে না কেনো রাগ হচ্ছে না

রিহা চোখ বন্ধ করে দুই ঘণ্টা আগের কথা ভাবতে থাকে

চলবে

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here