#চাঁদোয়া_মহল
পর্বঃ২৩
#অত্রি_আকাঙ্ক্ষা
সূর্যের মিষ্টি আলোয় সকালটা ঝলমল করছে।ফার্ম হাউজের গেইটের ডানপাশে বিশাল বড় একটি আম গাছ।গাছের মাঝ- উর্ধাংশের মরা ডালে মনোরম একটি হলুদিয়া পাখি বসে আছে।বিগত কয়েক মিনিট যাবত একইভাবে বসে আছে।কোনোরকম কোনো নড়চড় নেই!সুধা মির্জা মনে হলো পাখিটি তার সমস্ত কার্যকালাপের ওপর নজর রাখছে।পরখ করছে গভীর দৃষ্টিতে!আবার ক্ষণিক বাদেই মনে হলো সবই তার ভ্রম!সুধা মির্জা নিজেকে শুধালেন।সত্যি কি হ্যালুসিনেশন নাকি বিহঙ্গটি আসন্ন কোনো ঝড়ের ইঙ্গিত দিচ্ছে!তার অবচেতন মস্তিষ্কে কোনো সংকেত প্রেরণ করছে কি!কিন্তু কিসের সংকেত?বিপদ সংকেত!বিপদ এলেই কি?তার তো হারানোর মতো কিছুই নেই।এখন চন্দ্ররেখার চিন্তা তিনি করেন না,তাকে দেখের রাখার জন্য শারাফ আছে!আচমকা পাখিটি নীল গগনের দিকে উড়ে গেল।এলোমেলো ভাবে উড়ন্ত পাখপাখালির মাঝে হারিয়ে গেল।
-মা!
সুধা মির্জার ঘোর কাটলো।পিছনে ফিরে চাইলেন।বেলকনির দরজার কাছে চন্দ্ররেখা দাঁড়িয়ে আছে।সুধা মির্জা এগিয়ে গেলেন।মেয়ের মুখে দিকে তাকিয়ে রইলেন।চেহারা জুড়ে কি মায়াময় স্নিগ্ধতা!সবাই বলে চন্দ্ররেখা নাকি তার মতো দেখতে হয়েছে,সবাই আসলে ভুল বলে।চন্দ্ররেখার বদনে যে কোমলতার রয়েছে এটা সম্পূর্ণটাই তার বাবার কাছ থেকে প্রাপ্ত।সুধা মির্জার বুকটা শান্ত হয়ে গেল।মৃদু হেঁসে জিজ্ঞেস করলেন,
-“কখন এসেছ তোমারা?”
-“এইতো,মিনিট ত্রিশ হবে!লুবনা আপা বলল, আমাকে নাকি খুঁজেছিলে?”
-“বিগত সপ্তাহে তোমাকে একদন্ড কাছেও পেলাম না।মায়ের ওপর রেগে আছো?কোনো কারণে কি এড়িয়ে যেতে চাইছো?”
চন্দ্ররেখা মৌন রইলো।হুট করেই জড়িয়ে ধরলো।সুধা মির্জা কিছুটা অবাক হলেন।
-“সন্তান মায়ের সাথে রাগ করা মানে,নিজের ক্ষতি ডেকে আনা।চন্দ্ররেখা জেনেশুনে নিজের ক্ষতি করবে নাকি?”
চন্দ্ররেখা কথা বলার আদুরে আদুরে ভঙ্গিমা দেখে,সুধা মির্জা শব্দবিহীন হাসলেন।মেয়েটি যেন বাচ্চা হয়ে গেছে।অবশ্য সন্তান কবেই বা মায়ের কাছে বড় হয়!সব সময় ছোটই থাকে,চিরকাল আগলে রাখতে ইচ্ছে করে।দু’বছর মেয়েটিকে কাছ থেকে দেখেন নি।খোঁজ খবর নিতে পারেন নি।পরিস্থিতির জন্য নিজের পেটে ধরা সন্তানকে অবহেলায় রেখে বড় করেছেন।এর একজন মায়ের জন্য জন্য কষ্টের আর কি হতে পারে!সুধা মির্জা চন্দ্ররেখার চুলে হাত বুলিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
-“শারাফকে মন থেকে মেনে নিয়েছ তো?তুমি লক্ষ্য করেছ কি না জানি না।কিন্তু তোমার বাবা যেভাবে তোমার খেয়াল রাখতো,সে কিন্তু ঠিক সেভাবে তোমাকে যত্ন করে।”
বাবার কথা মনে পড়তে চন্দ্ররেখার মনটা ভার হয়ে গেল। চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়লো।বাবাকে দেখে না আজ কতোদিন হয়ে গেল।দৈনিক ডক্টর, নার্স থেকে খবর নেওয়া হয় ঠিকি কিন্তু তারপরও ভীষণ খালি খালি লাগে।রেখা ভারাক্রান্ত হৃদয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় বলল,
-“ঠিক বলেছ,মা!মানুষটা একেবারে বাবার মতো।কিছুটা জেদি,একগুঁয়ে কিন্তু ভালোবাসার কাছে শান্ত।ভালোবাসা বলতে আদোও তে কিছু আছে কি না আমি জানি না!কিন্তু আমি মানুষটার চলনবলন,কথাবার্তা,আচার-আচরণেে পুরোপুরি আসক্ত হয়ে পড়েছি।তাকে ছাড়া নিজেকে আমার ভীষণ অসহায় লাগে।আমার কপালে যেদিন স্টিচ পড়লো,সেদিন থেকে থেকে পুরো এক সপ্তাহ আমার সুস্থতার জন্য কতো কি না করলো!তার সেই অস্থিরতা কারণ একমাত্র আমি।এ কথাটি যখন মনে হয় নিজেকে ভীষণ সুখী সুখী লাগে।”
-“ওকে কিন্তু কখন কষ্ট দিও না।ছোট থেকে ছেলেটা একগুঁয়ে,সেই সাথে সল্পভাষী।কোনোকিছুর চাইলে তা কৌশলে আদায় করে নেন।কিন্তু সে অনেকটাই ইন্ট্রোভার্ট;মনের কষ্ট কখনো বাহিরে প্রকাশ করতে পারে না।শুধুমাত্র শারাফের জন্য আজ আমি তোমাকে এতো কাছে পেয়েছি।বিগত বছর দূর হতে তোমার জন্য দু’আ করে গেছি।”
-“আচ্ছা মা,আমি তো বাবার কাছেই ছিলাম।তুুমি চাইলে তো নতুনভাবে আলাদা একটা জীবন শুরু করতে পারতে।কেন করলে না!কেবল আমার চিন্তা করেই কি…..।”
-“তুমি যার অংশ তাকে কি তোমার একবারও দেখতে ইচ্ছে করে না?”
রেখার কথার মাঝে সুধা মির্জা প্রসঙ্গ বদলালেন।সত্যিটা জানলে রেখা তাকে ভুল বুঝতে পারে।সুধা মির্জার প্রশ্নের প্রেক্ষিতে চন্দ্ররেখা অকপটে জবাব দিলো,
-“না,ইচ্ছে করে না।”
-“কিন্তু আমি চাই তুমি তাকে দেখ।”
সুধা মির্জা কাবার্ড থেকে সেই বক্স এবং এর সাথে একটি অ্যালবাম বের করে চন্দ্ররেখার হাতে ধরিয়ে দিলেন।চন্দ্ররেখা ভ্রুক্ষেপহীন।সুধা মির্জা নিজ থেকেই অ্যালবাম খুলে চন্দ্ররেখার সামনে একটি ছবি তুুলে ধরলেন।ছবিতে নজর পড়তে রেখা থমকালো।এই রকম চেহারার দুটো মেয়ে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে!পরনের সেলোয়ার-কামিজও একইরকম। পার্থক্য একজন হাস্যজ্জ্বল,অপরজন খানিকটা গম্ভীর,মুখে হাসির লেশমাত্র চিহ্নটুকু নেই।রেখা বুঝতে পারলো এই হাস্যজ্জ্বল রমণীটির জন্য তার এই পৃথিবীতে আসা।ইনিই নিধি মির্জা!ছবিতে তাদের দুজনের পেছনে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী,বলবান একজন ব্যক্তি দাঁড়িয়ে আছে।রেখা বুঝতে পারলো,তার নানা চাহান মির্জা।বেশ সুদর্শন।শারাফের সাথে অনেকটাই মিলে যাচ্ছে।চন্দ্ররেখা আরো খেয়াল করলো হাসি হাসি চেহারার অধিকারী রমণীর কপালের একপাশে একটা হালকা গর্ত সমেত দাগ আছে,কিন্তু অপরজনের কপাল একদম দাগ বিহীন।রেখা চট করে সুধা মির্জার কপালের দিকে তাকালো।না….একদম ফ্রেশ,কোনো দাগের ছিটেফোঁটাও নেই।সুধা মির্জা কিছু একটা বুঝতে পারলেন।স্বাভাবিকভাবে বললেন,
-“নিধির কপালের এই দাগটা জন্মগত।আমরা একরকম কাপড় পড়লে সবাই বিভ্রান্ত হয়ে যেত!কে নিধি আর কে সুধা!কাছের মানুষেরা এই দাগ দেখেই চিহ্নিত করতো।”
চন্দ্ররেখা অ্যালবাম সুধা মির্জার হাতে দিয়ে দিলো।হাউমাউ করে কেঁদে দিলো।কান্নারত কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
-“কেন এমন করলেন,উনি?বাবাকে ভালোবেসেই তো তার হাত ধরে পালিয়েছিলেন তাহলে মাঝ পথে এসে ছেড়ে দিয়েছিলেন কেন?আমাকে এই দুনিয়াতে আনার জন্য তোমাকে কেন বাধ্য করলো?কেন এতোবছর পর অন্যজনের হাত ধরে হারিয়েও গেল?”
সুধা মির্জা চন্দ্ররেখার চোখের পানি মুছে দিলেন।কপালে দীর্ঘ চুমু খেয়ে স্নেহের স্বরে বললেন,
-“মনের সব কষ্ট ঝেঁড়ে ফেল।আজ থেকে একদমই অহেতুক কাঁদবে না!বিনা দ্বিধায় যেকোনো সিচুয়েশনের নিষ্পত্তির করবে।কান্না কোনো জিনিসের সমাধান হতে পারে না বরং এই কান্না মানুষকে দুর্বল করে দেয়।তোমাকে অতীত ভুলে অনেক সামনে এগোতে হবে।যা হয়েছে বা হবে! মনে করবে উপরওয়ালা তোমার,আমার,সকলের পরীক্ষা নেওয়ার জন্য এমন করেছেন।কান্নার করার অপর নাম হচ্ছে ভেঙে যাওয়া।নিজেকে অন্যের সামনে কখনো ভেঙে যেতে দিবে না….ওকে?”
চন্দ্ররেখার মাথা নাড়ালো।সুধা মির্জা যত্নসহকারে রেখার এলোমেলো চুলগুলো ঠিক করে দিলেন।
-“আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি।শুনেছি শারাফ তোমাকে কলেজে ভর্তি করিয়ে দিয়েছে।আমি চাই তুমি পড়াশোনার পাশাপাশি মির্জা ইন্ডাস্ট্রি ও ঝিল্লিপুর মহিলা পরিষদের কিছু কিছু দায়িত্ব পালন করো।”
চন্দ্ররেখা বিস্মিত হলো।ঝটপট করে বলল,
-“কিন্তু আমি কি করে?আমার এসবে ধারণা…। ”
-“আমি আছি তো!তোমার মা তোমার সাথে। ভয়ের কিছুই নেই।আস্তে আস্তে সব বুঝে যাবে।আমি শিখিয়ে দিবো।আমার অবর্তমানে একসময় সবকিছুর দায়িত্বে তো তুমিই থাকবে।এখন থেকে না হয়….।
চন্দ্ররেখা সুধা মির্জার হাত চেপে ধরলো।কম্পনরত গলায় বলল,
-“কোথায় যাবে তুমি?আমি তোমাকে কোথায় যেতে দিবো না।আমার মা,আমার সাথে থাকবে।”
রেখা যতোবার মা ডেকে উঠে,সুধা মির্জার অন্তঃকরণে ততোবারই তৃপ্তির ছন্দ বেজে উঠে।সুধা মির্জা মলিন হেসে বললেন,
-“মানুষ কি চিরকাল বেঁচে থাকে?আমার জীবনের অর্ধেকের বেশি সময় অতিবাহিত হয়ে গেছে।বাকি যতোদিন বেঁচে আছি,এরই মাঝে সব ঠিক করে ফেলব।আমি মরে গেলে অত্যন্ত,তোমার ভবিষ্যতে কোনো সমস্যাই হবে না।”
মায়ের মুখে মৃত্যুর কথা শুনে রেখার চোখ ছলছল করে উঠলো।সুধা মির্জা ইশারায় কাঁদতে বারণ করলেন।চন্দ্ররেখা দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে কান্না আটকানোর চেষ্টা করলো।ব্যর্থ হলো।সুধা অপলক দৃষ্টিতে কান্নারত চন্দ্ররেখার দিকে তাকিয়ে রইলেন।তারপর নিজের ডান হাত তুলে চন্দ্ররেখার মাথায় রাখতেই রেখা ধীরে ধীরে শান্ত হয়ে গেল।
———
যে যার যার মতো ডাইনিং টেবিলের চেয়ার দখল করে বসে আছে।বরাবরের মতো লাইলি আর লুবনা খাবার সার্ভ করছে।রিসোর্ট থেকে সকাল সকাল ফিরে এসেই ঘুমিয়ে পড়েছিলো শারাফ।বেলা করে ঘুম থেকে উঠায় তার মুখ-চোখ ফুলে আছে।একটু পর পর আড়চোখে কিচেনের দিকে তাকাচ্ছে সে।চুলার তাপে রেখার গাল জোড়া লাল হয়ে গেছে।তার ঘর্মাক্ত মুখশ্রী কাছ থেকে দেখার লোভ হচ্ছে ।কয়েকদিন হলো চন্দ্ররেখা শাড়ির বদলে সেলোয়ার-কামিজ পরছে।সেলোয়ার-কামিজেে বয়স যেন কিছুটা কমে এসেছে।বাচ্চা বাচ্চা একটা ভাব ফুটে উঠেছে।পরনে ওড়না দিয়ে মাথায় ঘোমটা দেওয়া।বাচ্চা বউ!শারাফের চোখে চোখ পড়তেই রেখা ভীষণ লজ্জা পেল।তাৎক্ষণাত দৃষ্টি সরিয়ে নিলো।মেয়েটা কি নিষ্ঠুর?তার দিকে একবার তাকাচ্ছেও না।এদিকে সে ভিতরে ভিতরে মরে যাচ্ছে।চন্দ্রপ্সরা কি তার সাথে লুকোচুরি খেলতে চাইছে!শারাফের মনে বেশ অভিমান জমলো।দৃষ্টি ঘুরিয়ে তার বিপরীত পাশে বসা মানুষদের ওপরে চোখ বুলিয়ে নিলো।মোরশেদ খন্দকারের পাশে বসা জাহিদকে দেখে শারাফের ভ্রু যুগল আপনাআপনি কুঁচকে এলো।ছেলেটার দৃষ্টি মোটেও সুবিধার না।দৃঢ় শান্ত চোখে কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে রইল।জাহিদ এতো সময় রান্না ঘরের দিকে তাকিয়ে ছিলো।শারাফের শান্ত চাহনিতে ঘাবড়ে গেল।তড়িঘড়ি করে মাথা নিচু করে ফেলল।ঢোক গিলে গলা ভেজালো।নিস্তব্ধতার মাঝে মাসুুক আচমকা রসিকতা স্বরে বলল,
-“কি ভাই কাল রাতে ঘুম হয় নি?ঘুরতে যাওয়া নামে সারারাত ভাবীকে নিয়ে রিসোর্টেই কাটিয়ে দিলে দেখি?তা কেমন লাগলো শুনি?”
কথা শেষ করে মাসুক চোখ মারল।তার সাথে সিমি জিমিও তাল মিলিয়ে ঢ়ং করে বললো,
-“আমাদেরও তোমার এক্সপেরিয়েন্স জানতে ভীষণ ইচ্ছে করছে।বলো না…..ভাইয়া।”
শারাফও কম যায় না,মৃদু হেসে জবাব দিলো,
-“কয়দিন পরই তো তোদের দুজনের বিয়ে!আমি ডিসাইড করেছি বিয়ের রাতে তোদের জন্য রিসোর্টে দুটো লাক্সারি রুম বুক করে দিবো।তখন না হয়,লাইভ এক্সপেরিয়েন্স করে নিস।””
শারাফের কথা শুনে মাসুক আর আরিফ উচ্চস্বরে হেঁসে উঠলো।
-“আমার জন্য বেশ ভালোই হয় ভাই।”
মাসুকের উত্তরে সিমি ভীষণ লজ্জা পেল। দু’দিন আগে সে তার আর মাসুকের বিয়ের খবর পেয়েছে।হামিদ মির্জা নিজে তার কাছে এসে বিয়ের ব্যাপারে মতামত জানতে চাইলে,তখন সে না করে নি।কেবল বলেছে,
-“তোমার যা ভালো মন হয়,তাই করো বাবা।আমার আপত্তি নেই।”
পনের দিন পরেই তাদের বিয়ে।বিয়ের আয়োজন ঘরোয়া ভাবেই করা হবে বিয়ের পর পর সিমি কানাডা চলে যাবে। এতে অবশ্য কারো কোনো অবজেকশন নেই।
—-“মামা আমার কিছু বলার আছে।”
সবার দৃষ্টি যেয়ে পড়লো চন্দ্ররেখার ওপরে।সে হামিদ মির্জা চেয়ারের পাশে দাঁড়িয়ে আছে।হামিদ মির্জা হাল্কা হেঁসে বললেন,
-“পারমিশন নেওয়ার কি আছে!বলে ফেল।আমার মায়ের সব হুকুম শিরোধার্য।”
চন্দ্ররেখার খানিক ইতস্তত করলো।হামিদ মির্জা খাওয়া থামিয়ে পরবর্তী কথা শোনার আশায় তার দিকে তাকিয়ে আছেন।সুধা মির্জা প্লেটের দিকে তাকিয়ে থেকে,চন্দ্ররেখার কথার দিকে মনোযোগ দিলেন।
-“শামীম আঙ্কেলের সাথে আমার কথা হয়েছিলো।আট মাস হয়ে গেছে বাবার অবস্থার তেমন কোনো উন্নতি নেই।তিনি বলেছেন বাবাকে এখন হসপিটালের লাইফ সাপোর্টে রাখার চেয়ে,বাসায় এনে রাখলে বেশি ভালো হয়।”
চন্দ্ররেখা থেমে গেল। বাকি কথাটুকু তার গলায় কেমন কাঁটার মতো আঁটকে আছে।হামিদ মির্জা চেয়ার ঠেলে উঠে দাঁড়ালেন।চন্দ্ররেখার মাথায় হাত রেখে বললেন,
-“মারে,আমি তোমার আর তোমার বাবার কাছে অপরাধী। মামা হিসেবে আমার তোদের খোঁজ নেওয়া উচিত ছিল।আমি আমার সেই অপরাধের প্রায়শ্চিত্ত করতে চাই।তুমি অনায়াসে তাজওয়ারকে এখানে নিয়ে আসো।সে হয়ত শুনতে পাবে না তাও আমি ক্ষমা চেয়ে নিবো।চাঁদোয়া মহলেই তার সমস্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা করবো।”
চন্দ্ররেখা হাফ ছাড়লো।শারাফের দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসি দিলো।ভাগ্যিস মানুষটি গতকাল নিজ থেকেই তার বাবার কথা বলেছিলো!সব শুনে সুধা মির্জা মূর্তির ন্যায় বসে আছেন।সব যন্ত্রণা সবসময় তাকে কেন পোহাতে হয়!কাছ থেকে আপন মানুষের শারীরিক কষ্ট পাওয়া, দিনের পর দিন কি করে সহ্য করবেন!দোয়া মির্জার মুখটা থমথমে হয়ে গেল।তিনি খাওয়া শেষ না করেই উঠে গেলেন।বিষয়টিতে কেউ তেমন তোয়াক্কা না করলেও চন্দ্ররেখার মন খারাপ হয়ে গেল।সে বুঝতে পারলো কোনো কারণে তার বাবার ওপরে তিনি অসন্তুষ্ট।
চলবে
গঠনমূলক মন্তব্যে করবেন। ভুল-ত্রুটিগুলো তুলে ধরবেন।