#জলছবি
#পার্ট_২৬
#কাজী_সানজিদা_আফরিন_মারজিয়া
.
হসপিটালের কড়িডোরে উদগ্রীব হয়ে পায়চারী করছে নিষাদ, সৃজন, শ্রেয়া আর কিছু অন্যান্য ছেলে। তারা ফয়সালের এলাকার। তারাই হসপিটাল এনেছে এবং নিষাদ, সৃজনকে খবর দিয়েছে। ঘটনা সামনে থেকে উপলব্ধি এবং ঘটনার মূল ভূমিকায় থাকার ফলে তারা আতংকিত বলেই মনে হলো। একজন আরেকজনের দিকে ভীত চোখে চাইছে বারবার। সকলের চোখমুখ ফুলে আছে। মুখমণ্ডলের বিভিন্ন স্থানে লালচে দাগ হয়ে আছে। চোখের পাশ, ঠোঁটের পাশ সহ সারা মুখজুরে মাইরের দাগ। তাদের প্রত্যেকের পরিহিত শার্টের গায়ে ছোপ ছোপ রক্তের ছাপ। ফয়সালের রক্ত বোধহয়। লাল রক্ত এখন কালচে বর্ণ ধারন করেছে।
কিছুক্ষণের মাঝেই এসে উপস্থিত হলো নোলক, নবনী। আরমান নিয়ে এসেছে ওদের। মাগরিবের নামাজ পড়েই বেড়িয়ে পড়েছে। ঐ নামাজের হিজাব পরিহিত অবস্থাতেই চলে এসেছে দুই বোন। নোলক এসে বলল,
“তোরা প্রাঙ্ক করছিস, তাই না দোস্ত? এই ফয়সালটাও না! ভালো হলো না আর। সবসময়, সবকিছু নিয়ে ফাইজলামি ওর! সবসময় কি ফাইজলামি ভালো লাগে বল? কই ফাজিলটা?”
নিষাদ কিছু বলল না। ভেজা দৃষ্টিতে আইসিইউর দিকে তাকালো।
শ্রেয়া নোলককে এসে জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো। নোলক শুধু বলল,
“ও তো বিকেলে আমায়….!”
এরপর আর কিছু বের হলো না মুখ দিয়ে। সময় এত দ্রুত বদলে যায়? লোকে বলে, খারাপ সময় শেষে, ভালো সময় আসে। কিন্তু নোলক ভাবে, ওর জীবনে কেন একের-পর-এক খারাপ-ই হয়ে চলছে? আরো কি বাকি আছে সামনে? হায় আল্লাহ্! রক্ষা কর!
শ্রেয়া ছেড়ে দাঁড়াতেই নোলক এক হাতে নবনীকে ধরে পাশের বেঞ্চটাতে বসলো। হাত-পা কাঁপছে মেয়েটার। নোলক বলে, আপু আইসিইউতে ছেলেটা!
নবনী বলে, আল্লাহ্ ভরসা।
লুবনা তখনও আসেনি। জানানো হয়েছে তাকেও।
আরমান সৃজনের আর নিষাদের কাছ থেকে আদ্যপ্রান্ত জানতে চাইলো। সৃজন ঐ ছেলেগুলোর দিকে তাকালো। তাদের ভেতর থেকেই হ্যাংলা পাতলা একজন বিস্তারিত বলল।
যার সারসংক্ষেপ, এলাকার কিছু ছেলেপেলের সঙ্গে বেশ কিছুদিন যাবত ফয়সালের গ্যাঞ্জাম চলছিলো। গ্যাঞ্জামের কারন ছেলেগুলো নিজেদের রাজনৈতিক ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে এলাকার মেয়েদের টিজ করা, চাদা তোলা থেকে শুরু করে নানান অরাজকতার সৃষ্টি করে চলছে। মূলত তারা রাজনৈতিক কোনো নেতা নয়, নেতাপেতাদের সাঙ্গপাঙ্গ।
একটু নিজের খেয়ালে চলার ফলে ফয়সালের কানে যখন এসব আসলো এবং নিজে পরখ করে দেখলো, ঘটনা সত্য, তখন সে হুমকি ধামকি দিয়ে আসলো। ফয়সালের দলও মোটামুটি ভারি হওয়ার ফলে তারা তখন কোনো প্রতিক্রিয়া করলো না। নিরবে হয়েই ছিল। কিন্তু তাদের কর্মকান্ডও থামালো না। তারা তাদের খেয়ালেই চলছিল। বরং তাদের ভেতর থেকেই বেশ কিছু চোর-ছ্যাচর এর উদয় হলো। এক পর্যায়ে ফয়সাল নেতাফেতাদের সঙ্গেও কথা বলল। তারা আশ্বস্ত করে বলেছিলো, দেখবে বিষয়টা।
তাদের ‘দেখা’ ঐ ‘দেখা’ অব্দি-ই থেকে গেল। দেখা আর হলো না। সব চলছিলো যেমন-তেমন। কিন্তু বিপত্তি ঘটলো আজ। ফয়সালের সঙ্গে থাকা ছেলেগুলোর মধ্য থেকে একজনের সঙ্গে তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে হাতাহাতি হলো, তাকে একা পেয়ে মারা হলো। তখন সেই ছেলেটাই ফয়সালকে ফোন করে সব বলে। ফয়সালের মাথায় রক্ত চেপে গেল। সে তৎক্ষণাৎ সেই স্থানে গেলো।
ফয়সাল এবং ফয়সালের সঙ্গে ছিলো তারা, যারা হসপিটাল নিয়ে এসেছে। ফয়সাল প্রথমে শান্ত ভাবেই জানতে চাইল, “কেন মেরেছে?”
তাদের একজন উগ্র স্বরে জবাব দিল,
“ইচ্ছে হয়েছে তাই মেরেছে। প্রয়োজনে আরো মারবো। আমাদের কাজে নাক গলাতে আসলে আরো বেশি মার খেতে হবে।” মা-মা-বাপ তুলে গালি দেয়া হলো। সঙ্গে সঙ্গে
ফয়সালের শান্ত মেজাজ অশান্ত হলো। শার্টের হাতা গোটাতে গোটাতে বলল,
“আরো মারবি? মার, আমার সামনে মার। দেখি তোর সাহস কত?”
“মারলে, কী করবি তুই?” ছেলেটা এমন প্রতিক্রিয়া ফয়সাল দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“দেখতে চাস কী করবো? দেখ তবে!”
বলেই সজোরে এক ঘুষি মারলো ছেলেটা মুখে। ছেলেটা পড়ে গেল। ফয়সাল কলার টেনে উঠাতে উঠাতে বলল,
“দিজ ইজ দ্যা লাস্ট ওয়ার্নিং। মনে রাখিস।” বলে ধাক্কা মেরে কলার ছাড়ে।
পাশ দাঁড়িয়ে থাকা চার-পাঁচজনের মধ্য থেকে একজন হুশিয়ার করে বলল,
“দেখ ফয়সাল? তুই কিন্তু বাড়াবাড়ি করছিস! এর ফল কিন্তু খুব খারাপ হবে, বলে দিলাম।”
ফয়সাল এবার সেই ছেলেটাকে পরপর দুই-তিনটা ঘুষি মেরে বলল,
“ফয়সালকে ভয় দেখাচ্ছিস? যাদের দাপটে এমন বলছিস, জেনে রাখ, তাদেরকে এই ফয়সাল গোনায়ও ধরে না। নিজের দাপটে পারলে কিছু কর। দেখি তোর সাহস কত?”
এরপর সেই ছেলেগুলো কিছু ককরার আগেই ফয়সালের সাথে যেই দুই তিনজন ছিলো তারা সবাই মিলে ঝাঁপিয়ে পড়লো বখাটেগুলোর উপর। এলোপাথাড়ি তাদের মারলো। পাগলের মতো মারলো। ওই দিক থেকেও পাল্টা আক্রমণ করা হলো। যে যেভাবে পারছিলো সেভাবে। ফয়সালের হাত ফেটে রক্ত বের হয়ে গেল, সে থামলো না।
দুই গ্রুপের হাতাহাতির এক পর্যায়ে বখাটেদের মধ্য থেকে কেউ একজন আকস্মিক ফয়সালের পেটে ছুড়ির আঘাত করে। ফয়সাল পেটে হাত দিয়েই উল্টো ঘোরে। যে আঘাত করলো তাকে পাল্টা একটা হিট করলো। তারপর আর পারলো না। মাটিতে লুটিয়ে পড়লো। ঝাপসা হয়ে এলো চোখের সামনের সবকিছু। তেজী ছেলেটা নিস্তেজ হয়ে যেতে লাগলো মূহুর্তেই। চোখের সামনে ভেসে উঠলো প্রিয় কিছু মুখ। আহারে! মা টার জন্য বেশি দুঃখ লাগলো। কেমনে থাকবে তার মা-টা! তার মনে হলো সে মারা যাচ্ছে।
না, মারা যায়নি তখনই।
ফয়সালের সাথের ছেলেগুলো দিশেহারা হয়ে ফয়সালের কাছে আসলো। আর ঐ ছেলেগুলো তখন পালিয়ে গেলো। ছেলেটা মরে গেলে ফেঁসে যাবে যে!
পুলিশিকে ইনফর্ম করা হয়েছে অনেক আগেই। ফয়সালের সাথের ছেলেগুলোই ইনফর্ম করেছে। পুলিশ সেই স্থানে গেলো। ছেলেগুলো তখন তড়িঘড়ি করে ফয়সালকে হসপিটাল আনলো।
পুলিশ বখাটেগুলোর নাগাল পায়নি। পায়নি নাকি পেতে চায়নি তা ঠিক বোঝা গেল না।
খানিক বাদে পুলিশ হসপিটাল এলো। ফয়সালের সাথের ছেলেগুলোকে ধরে নিয়ে গেলো। তাদের থেকে স্টেটমেন্ট নিবে এবং রোগীর জ্ঞান না ফেরা অব্দি তারা পুলিশ হেফাজতে থাকবে বলে ধরে নিয়ে যাওয়া হলো।
ঘড়ির কাটা টিকটিক করে ঘুরছে, রাত বাড়ছে, বাড়ছে ভয়।
লুবনা এসেছে অনেক পরে। এসে থেকেই কেঁদে যাচ্ছে। গুনগুন স্বরে কান্না। লুবনার বাবা-ই দিয়ে গিয়েছেন। প্রথমে অবশ্য তিনি ফয়সালেই বকাঝকা করেছে। লুবনাকেও প্রমাণ দেয়ার মতো করে বলেছে, বলেছিলাম না? মিললো আমার কথা? এমন উগ্র ছেলেপুলে হলে এমন দূর্ঘটনা তো তাদের নিত্যদিনের সঙ্গি! অযথা কেন তাকে কেউ মারতে যাবে? নিশ্চয় উগ্রতা করেছে। আমি আগেই বুঝেছিলাম!
লুবনা কোনো প্রতিত্তুর করেনি। সে তখন হতভম্ব। বিশ্বাসই করছিলো না! এখনও করছে না। এই ছেলে ছাড়া ওর চলবে কি করে? অসম্ভব।
লুবনা বাবাকে জড়িয়ে ধরে বলল,
“বাবা আমায় ওখানে নিয়ে চলো প্লিজ। প্লিজ বাবা।”
ভদ্রলোক গলে যায়। মেয়ের কান্না তাকে অবাক করে, পিড়া তৈরি করে মনে। কোনো কিছু অভাব মেয়ের দেয়নি। এমন আর্তনাদ করে কাঁদতেও দেখেনি কখনো। কাঁদবে কেন? মেয়ে তার কাঁদতে পারবে না। তিনি নিয়ে আসেন হসপিটালে।
সেই এসে থেকে গুনগুন করে কেঁদে যাচ্ছে। কারো মানা শুনছে না। নার্সদের নিষেধও মানছে না। আমিনুল হক বললেন,
“আহা! কাঁদছ কেন? কাঁদলে কি সমস্যার সমাধা হয়ে যাবে? তুমি বাসায় চলো। এখানে আর থাকতে হবে না। কেঁদে কেঁদে পাগল হয়ে যাচ্ছে। বাকি বন্ধুরাও তো এখানেই আছে। বাচ্চাদের মতো করছে কেউ? বাসায় চলো তুমি।”
এই কথাতেই লুবনা একটু চুপ হয়। আমিনুল হক বেশিক্ষণ থাকতে পারেন না। তিনি লুবনাকে রেখেই ফেরত আসেন। আসার আগে বলে আসেন কিছুক্ষণ পর এসে নিয়ে যাবেন। কান্নাকাটি যেন না করে।
মেয়ে কি আর সেই মানা শোনে?
আমিনুল হক চলে যেতেই তার কান্নার প্রখরতা আবার বেড়ে যায়। সবার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে চেয়ে বলে,”দোস্ত? ছেলেটার বেশি কিছু হয়নি তো, তাই না? ঠিক হয়ে যাবে, না? আবার আমায় বকবে, তাই না বল? সব আবার আগের মতো হয়ে যাবে, তাই না?”
সবাই চুপ হয়ে থাকে। উত্তর তো তাদেরও জানা নেই। নোলক এই এতক্ষণ পর আর সামলাতে পারে না নিজেকে। নবনীকে আঁকড়ে ধরে। টপটপ করে পানি পড়ে চোখ ভেদ করে। বন্ধুমহলের সবচাইতে দাপুটে ছেলেটাকে ছাড়া পুরো মহলটাই ঝিমিয়ে পড়ে। মন ভেঙে চুরমার হয়।
ফয়সালের মা আসে আটটা নাগাত। তাকে জানাতে ফয়সাল নিষেধ করেছিলো। যেই আদেশ অনুসারেই প্রথমে কেউ জানায়নি। কিন্তু এক কান দুই কান হতে হতে তার কানেও পৌছে যায়। এই মহীয়সী নারী হাউমাউ করে কেঁদে উঠেনি। ভেঙে পড়েনি। হেঁটে হেঁটে পাশের বাড়ি যায়। সেই বাড়ির ছেলেটাকে খুব শান্তস্বরে বলে,
“আমাকে একটু হাসপাতালে দিয়া আসবি, বাজান? আমার পোলাডারে কতক্ষণ দেখিনা। একটু দিয়া আসবি বাপ? একলা যাইতে কষ্ট হইবো। একটু দিয়া আয়।”
এমন অনুরক্তি কেউ ফেলতে পারে? ছেলেটাও পারেনি। নিয়ে আসে।
হাসপাতে এসেও খুব স্বাভাবিক। সবাই তাকে দেখে চুপ হয়ে গেলেও সে বলে,
“আমারে দেইখা থাইমা গেলা মনারা? থামন লাগবো না। দুঃখ হইলে দুঃখ করবা। দুঃখ চাইপা রাখতে হয় না। আমার পোলাডা কই? কই রাখছে তারে?”
নিষাদ আর সৃজন তাকে ধরে একটা বেঞ্চে বসায়।
তিনি তার মতো করেই আবার বলে,
“ওই ঘরটাতে রাখছে, না? পোলাডারে বাপেরেও ওই ঘরে রাখছিল। তারপর…..তারপর আর ফিরলো না। আমার কথা কেউ শোনে নাই। পোলাডার বাপেও শোনে নাই, পোলাডাও শোনে নাই। রাগ, জিদ, মেজাজ গরম কইরা শেষে গিয়া ওই ঘরে ঢোকে! ওর বাপ না জানক, ওয় তো জানত, ওয় ছাড়া আমার আর কেউ নাই! কত কইরা না করছি, মাথা গরম করিস না, সব কিছুতে মাথা ঘামাইস না। শুনলো না আমার কথা। আমার কথা কেউ ভাবে না।
পোলাডা না খাইয়াই বাইর হইয়া গেলো। বইলা গেলো আমি যদি না খাই, তাইলে সে আর আমার লগে কথা কইবো না। আমি তো খাইছি, ওয় কেন এখনও চুপ? একটু উঠতে কইবা তারে, বাজান? ওর লগে বেশিক্ষণ কথা না কইয়া থাকতে পারি না। কষ্ট লাগে।”
সবাই নিরবে দুঃখ বিসর্জন দিলেও লুবনা আর্তনাদ করে উঠলো।
একজন নার্স অপারেশন থিয়েটার থেকে ব্যাস্ত গতিতে বেড়িয়ে এলেন। দেখে মনে হলো তার খুব তাড়া। সেই তাড়ার মাঝেই নিষাদ জিজ্ঞেস করলো,
,”কেমন আছে ও?”
নার্স তাড়াহুড়ো করে বললেন,
“খুবই ক্রিটিকাল অবস্থা। যা কিছু হতে পারে। মনোবল শক্ত করুন আপনারা। আর দোয়া করুন। প্রচুর ব্লিডিং হয়েছে উনার।”
বলেই চলে গেলেন। কিছুর প্রয়োজন পড়েছে বোধহয়।
লুবনা নোলিকের হাত ধরে বলল,
“এই উনি এমন ফালতু কথা বলল কেন? মনোবল শক্ত করবো মানে? এই দোস্ত, আমার ফয়সালকেই লাগবে। ওরে আমি খুব ভালোবাসি দোস্ত। বিশ্বাস কর। এই উদ্ভট, বদমেজাজি ছেলেটাকেই আমার সুস্থ চাই। মনোবল সুস্থ ফুস্থ বুঝি না।”
বলেই মুখ ঢেকে কাঁদে।
কোহিনূর বেগম কেমন অসহায় দৃষ্টিতে এদিক ওদিক চায়। তারপর ঢলে পড়ে শ্রেয়ার কোলে।…#জলছবি
#পার্ট_২৭
#কাজী_সানজিদা_আফরিন_মারজিয়া
.
লুবনাকে হসপিটাল থেকে নিয়ে যাওয়ার পর থেকে দরজা বন্ধ করে বসে আছে মেয়েটা। প্রথমে সে আসতে চায়নি কিন্তু শেষে বাধ্য হয়েই আসতে হলো। ভাইকে সে বাবার থেকেও বেশি ভয় পায়। তাই যখন কঠিন কন্ঠে বলল,’লুবনা? বাসায় চলো। কথা বাড়াবে না।’
তখন অজ্ঞতা লুবনাকে চলে আসতেই হয়। ভাইকে কোনো প্রতিত্তুর না করে, তেজ নিয়ে চলে আসে।
গাড়িতে বসে ভাইয়ের শাসানো কথাগুলো কানে বাজে। এবং আজই জানতে পারে, তার ভাই ফয়সালের আদ্যপ্রান্ত সব জানে। সেই সঙ্গে মারাক্তক অপছন্দ করে। আদ্যপ্রান্ত জানে বলেই হয়তো অপছন্দ করে। ফয়সালের জন্য আলগা দরদ না দেখাতে কড়া নিষেধ করে।
সব মেনে নিলেও ফয়সালকে ছোট করে বলা কথাগুলো তার শরীরে কাটার মতো বিঁধে আছে।
কেন বলবে এতো ছোট করে কথা? শুধু ছেলেটার অর্থ আর প্রাচুর্য নেই বলে?
আর ‘আবেগ বেশি দেখালে, আবেগ দেখানোর মানুষ খুঁজে পাবে না’ কথাটাই বা কেন বলল?
মনে ক্ষীণ সন্দেহ জাগে, কোনো ভাবে ফয়সালের ক্ষতি তার ভাই করায়নি তো? এত প্রতিহিংসা কেন তার মাঝে? লুবনার রাগ হয় প্রচুর। জীদ মেটাতে ড্রেসিংটেবিল এর সব কিছু ফেলে দেয়। কাচের জগ, গ্লাস আছার মেরে চূর্ণচার করে ফেলে।
শব্দ পেয়ে লুবনার মা এসে দরজায় কড়া নাড়ে, দরজা খুলতে বলে। বাসায় লুবনার ভাই আর বাবা নেই। লুবনার মা বিপাকে পড়ে যান। লুবনা দরজা খোলে না। বরং আরো কিছু ভাংচুর করে বলে,
“ফয়সাল ঠিকই বলে, আম্মু! অহংকারী, নিচুমনের বড়লোকেরা সবসময় আত্মসম্মানে আঘাত করে কথা বলে মজা পায়। তোমার ছেলেকে বলে দিও আম্মু? ছেলেটার ক্ষতি যদি ওরা করে থাকে তবে আমি কিন্তু কাউওকে ছেড়ে দিবো না। আমি কিন্তু মরে যাবো, আম্মু। এই টাকা-পয়সা প্রাচুর্য কিচ্ছু চাই না আমার। তোমার অহংকারী ছেলেকে বলে দিও, সে যেন আমায় নিয়ে না ভাবে। আই এম এনাফ ম্যাচিউরড নাও। ফয়সালকে নিয়েও যেন কোনো ফালতু কথা না বলে।”
কথা শেষে আরেকবার চূড়মুর করে কাঁচ ভাঙার আওয়াজ হলো।
ফয়সাল কেমন আছে ভেবেই হাঁটু মুড়ে কান্নায় ভেঙে পড়লো মেয়েটা। বিরবির করে বলে, “আল্লাহ্ তোকে খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ করে দিক! সুস্থ হয়ে জলদি ফিরে আয় ফয়সাল! তোরে আমার কিচ্ছু ভালো লাগছে না রে ছেলে! আই মিস ইউ আ লট!”
.
রাত দুইটা বিশ মিনিট। পিনপতন নিরবতা বিষাদময় হসপিটালের কড়িডোর জুড়ে। সবাই যেমন বসে ছিল আগে, এখনও ঠিক তেমনই বসে আছে। সবার সব কিছুই যেন থমকে আছে কেমন!
শুধু কোহিনূর বেগম নেই। তার মনের দহন, মনের পোড়ন ঠাহর করার সাধ্যিও কারো নেই। পর পর দুবার সেন্সলেস হয়েছেন তিনি। মধ্যখানে জ্ঞান ফিরার পর শুধু অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে ছিলো কিছুক্ষণ। তারপর আবার নেতিয়ে পড়ে। সবাই তো কেঁদে উদ্ধার হচ্ছে, কিন্তু তার যে কান্নাটাও নেই! ছেলের আট বছর বয়সে স্বামীকে হারালেন। তারপর এই এতগুলো বছর ছেলেটাকে আঁকড়ে ধরেই তো বেঁচে ছিল। এখন এই ছেলেটার কিছু হয়ে গেলে বাঁচবে কেমন করে? উপরওয়ালা ব্যতিত তার কষ্টের মর্ম কেউ বুঝবে না, কেউ না!
অবসাদ, চিন্তা, অস্থিরতা মিলিয়ে সকলে ভীষণ ক্লান্ত। চেয়ারে বসে দেয়ালে হেলান দিয়ে কেউ কেউ নির্বিকার ভঙ্গিতে চেয়ে রইল, কেউ ঝিমুচ্ছে, হঠাৎ-ই চমকে উঠে আশপাশ তাকাচ্ছে। কত মানুষ। সবার চিন্তাই প্রিয় কাউকে ঘিরে। ‘যদি কিছু হয়ে যায়?’ ‘ঠিক হয়ে যাবে তো?’ এই ধরনের নানান চিন্তা, দুশ্চিন্তা মাথায় নিয়ে এদিক-সেদিক ছোটাছুটি করছে।
এর বেশি আর কিছুই করার নেই কারো। সময়ে পালাক্রমে কত কত ভয়ানক পরিস্থিতি মানুষের এই ক্ষুদ্র জীবনে আসতে পারে, তার কিছুটা আন্দাজ এই ‘সদ্য ফ্যান্টাসি থেকে বের হয়ে, বাস্তবতায় পা রাখা’ ছেলে-মেয়েগুলো করতে পারছে। একদিনেই যেন জীবনের অনেকখানি মানে বুঝতে শিখে গিয়েছে।
নোলকও যেন হঠাৎ করেই অনেক বড় হয়ে গেল এই ক’দিনে। জীবনে কখনো কোনো কিছু নিয়ে যার চিন্তা ভাবনা করা লাগেনি, তার মাথায় এখন কত চিন্তা, কত প্রশ্ন! চঞ্চলতা ভুলে গিয়ে কেমন নিরব হয়ে গিয়েছে।
নিষাদ সৃজন রক্তের জন্য ছোটাছুটি করেছে কয়েকবার। শেষবার গেল আরমান।
রক্ত নিয়ে ফেরত আসার পথেই তার মনে আরো একটা চিন্তা যোগ হয়েছে। চিন্তার উৎস আদ্র। ইশান ফোন করে আদ্রর কথা বলেছে। এরপর থেকে স্থির থাকতে পারছে না, না পারছে কাউকে বলতে। আদ্রকে তো কাছ থেকে দেখেছে। ছেলেটা কেমন একলা একা। আল্লাহ্ তার জগৎ আরো একাকীত্বে, অন্ধকারে ডুবিয়ে দিচ্ছে ভেবে কেমন অভিমান হলো আল্লাহর উপর।
ঐ উপরওয়ালার প্রতি-ই সকলে সকল অভিমান, অভিযোগ। অথচ সে সুনিপুণ পরিকল্পনাকারী।
এই একই হসপিটালেই আদ্র থাকার ফলে এক ফাঁকে দেখেও এসেছে আরমান। এরপর থেকে আরো বেশি খারাপ লাগছে। আরমানের অস্থিরতা নবনীর চোখ এড়ায়নি। মৃদু স্বরে জিজ্ঞেস করল,
“কোনো সমস্যা হয়েছে? হঠাৎ এমন অস্থির হয়ে উঠলেন কেন?”
আরমান এক চিন্তার মাঝে আরেক চিন্তা ঢুকাতে চায়নি বলেই হাসার চেষ্টা করল। নবনীর হাত ধরে বলল,
“ক…কই? না তো! তেমন কিছু হয়নি। তুমি চিন্তা করো না।”
নবনী আর কিছু জিজ্ঞেস করেনি। কোনো কিছু নিয়ে জোর করার স্বভাব ওর নেই।
আরমান হালকা কিছু খাবার নিয়ে এসে সবাইকে খেতে দিলেও কেউই খেল না। এত চিন্তায় খাবার গলা দিয়ে নামে কারো?
সবাই যখন ক্লান্তি আর বিষাদ নিয়ে ঝিমুচ্ছিল ঠিক তখনই ডক্টর বেড়িয়ে এলো। সে নিজেও ক্লান্ত। কত দীর্ঘ সময়ের পরিক্ষা সকলের। ডক্টর হাতের গ্লাভস খুলতে খুলতে বলল,
“পেশেইন্টের লোক কে?”
কেউ ভয়ে কিচ্ছুটি বলতে পারলো না। ধুরুধুরু করা হার্টবিট আর অসহায় দৃষ্টিতে চাইলো কেবল। জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভেজালো। যেন কত দিনের তৃষ্ণার্ত তারা! নিষাদ আর সৃজন দাঁড়ায়। ছেলে দুটোও যেন দূর্বল হয়ে পড়ছে এই দীর্ঘ সময়ের ছোটাছুটিতে। শেষে আরমান এগিয়ে গিয়ে বলে,
“আমায় বলুন, ডক্টর।”
সকলের সকল চিন্তা, ভয়, আতংকের সমাপ্তি ঘটে তখন, যখন ডাক্তার বলল, “দ্যা পেশেইন্ট ইজ ফেয়ার ফ্রি নাও। অপারেশন সাকসেসফুল, আলহামদুলিল্লাহ্। আল্লাহর অসীম রহমত বলা চলে। আঘাতটা যদি আর হালকা এদিক-সেদিক হতো তবে আমাদের আর কিছুই করার থাকতো না।
যাইহোক রোগীর জ্ঞান ফিরতে একটু সময় লাগবে। আপনারা সবাই বোধহয় রোগীর লোক। হসপিটালে ভীড় বাড়াবেন না অনুগ্রহ করে। দুই-একজন থেকে বাকিরা চলে যান। সকালে এসে দেখে যাবেন নাহয়।”
অপারেশন সাকসেস হয়েছে শুনে সবাই কেঁদে ফেললো। এই কান্না দুঃখে নয়, সুখের, সন্তুষ্টির, একরাশ আতংকের সমাপ্তিতে শান্তির কান্না। স্রষ্টার প্রতি শুকরিয়ার কান্না।
ডক্টর চলে যাওয়ার পর সবাই সবাইকে জড়িয়ে ধরে কাঁদল। নোলক বলল,
“ফাজিলটা সুস্থ হয়ে নিক, খুব মারবো দেখিস? মারামারি করার শখ হয়েছে না অনেক? দেখবো কত মার খেতে পারে! বেয়াদপ, অসভ্যটা!”
বলতে বলতেই চোখ মোছে। মেয়েটা আনন্দ চোখমুখ বেয়ে ঠিকরে পড়ে।
সবার মুখে হাসি ফুটে উঠে। নোলকের আরো দুটো মানুষের কথা মনে পড়ে। লুবনা আর কোহিনূর বেগম। লুবনা থাকলে খুব খুশি হতো। খবরটা জানাতেই লুবনাকে ফোন করে। কিন্তু ফোন বন্ধ। ফোন বন্ধ করে রেখেছে ক্যান মেয়েটা? কি আশ্চর্য! পরক্ষণেই ভাবলো সকালে জানাবে। এই ভাবনা ছাড়া আর কি-ই-বা করবে?
কোহিনূর বেগমের কথা মনে পড়তে নোলক স্থান ত্যাগ করে তাঁর কেবিনের পাশে এসে দাঁড়াল। স্যালাইন চলছে মানুষটার। নোলকের কি যে মায়া হলো! একটা দীর্ঘশ্বাঃস, একটু মায়া! এই ভেবে স্বস্তি পেল, এই মানুষটা তার সম্বল আঁকড়ে ধরে রাখতে পারলো আল্লাহর ইচ্ছায়। মায়ের দোয়াতে বোধহয় এই এত বড় বিপদ থেকে ছেলেটা উদ্ধার পেলো।
কিছুক্ষণ দাঁড়ালো। তারপর ঠোঁটের কোনে হাসি আর কিছুটা স্বস্থি নিয়ে চলে আসতে যাবে ঠিক তখনই নজর পড়লো পাশের কেবিনে শুয়ে থাকা ছেলেটার দিকে। চেনা মুখ, চেনা মানুষদের চিনতে হলে খুব নিকটে থাকতে হয়না। নোলকেরও খুব কাছে থেকে দেখে চেনার প্রয়োজন পড়লো না। মানুষটা যে তার চেনা, খুব কাছের, খুব প্রিয় একজন।
কিন্তু তার এখানে কি? হসপিটালে কেন সে? অসুস্থ সে? অনেক প্রশ্ন জাগলো মনে।
কেবিন থেকে একজন নার্স বের হওয়ার সময় তার অনুমতি নিল ভেতরে যাওয়ার। তবে জিজ্ঞেস করা হলো না, তাঁর কি হয়েছে? প্রশ্নটা জিজ্ঞেস করার কথা মাথাতেই আসেনি।
‘এই ছেলেটার কাছে আর কখনই যাব না’ বলে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ মেয়েটা বেমালুম ভুলে বসলো, তার নিজের কাছে করা সেই প্রতিশ্রুতির কথা। নার্স অনুমতি দিতেই মনের সকল বিস্ময় নিয়ে কেবিনের ভেতর গেল।
আদ্র তখন ঘুমে। নোলকের দৃষ্টি প্রথমে ঘন কালো ভ্রু জোড়ার দিকে। তারপর গেল গভীর মায়ায় জড়ানো বন্ধ চোখ জোড়ায়।
কিছু চুল এসে স্পর্শ করছে তার উজ্জ্বল কপাল খানা। চশমা ছাড়া আদ্রকে বোধহয় এই প্রথম দেখলো নোলক। ছেলেটা জেগে থাকলেও গম্ভীর, ঘুমিয়ে থাকলেও গম্ভীর। ট্রেনের সেই প্রথম দিনের মুখখানা মনে পড়ে হেসে ফেলল নোলক। ইশশ! কত অপ্রিয় ছিল সে! আর এখন?
দিন-দুনিয়ার শত শত ভাবনা ভুলে আত্মভোলা হয়ে মুগ্ধ নয়নে আপাদমস্তক দেখলো ছেলেটাকে। বেডের পাশে বসে হাত রাখলো আদ্র’র চুলে। আনমনে হাত চলে এলো কপালে, চোখে। কি স্নিগ্ধ লাগছে সমস্ত মানুষটাকে। ঠিকরে পড়া মায়া পুরো মানুষ জুড়ে। নোলক বিরবির করে বলল, এই ঘুমন্ত মানুষটা? আমার হয়ে যান প্লিজ! আমার সকল চঞ্চলতার নিরবতা হয়ে যান, প্লিজ! এই যে এই? ঘুমন্ত চোখের মায়াগুলো আমায় দিয়ে দিন প্লিজ। শুনছেন? আপনি শুধু আমার হয়ে যান!
তারপর…তারপর নোলকের ভ্রম কেটে গেলো আচানক। চমকে আশেপাশে তাকালো। সামলে নিল নিজেকে।
একটু দুঃখ এসে ভর হলো যেন মনে। এই মুখ, এই মানুষ তার দুঃখ বাড়িয়ে শতগুণ করে দিল। সঙ্গে সঙ্গে একটু আগের বলা কথাগুলোকে ‘মিথ্যে, মিথ্যে, তিন মিথ্যে’ বলে স্বীকৃতি দিয়ে দিল নোলক। অভিমানের প্রখরতার কারণেই আদ্রর হসপিটালাইজড এর কারণ না জেনেই চলে আসতে লাগলো। জানার চিন্তা মাথায়ও রইলো না। আর একটু সময়ও থাকবে না এখানে, দেখবে না তাকে!
কিন্তু হায়! কেবিন থেকে বের হতেই ইশানের মুখামুখি হয়ে গেল। ইতস্তত বোধ করলো।
একটু বাহিরে গিয়েছিল ইশান। এসে যে নোলকে দেখতে পাবে তা সেও ভাবতেই পারেনি যেন। ভীষণ অবাক হলো। মেয়েটা এই সময়ে এখানে কেন? ও কি সব জানে? নাকি জানে না? কেউ বলেছে? কে বলবে? কত প্রশ্ন তৈরি হয়ে গেলো মন জুড়ে। প্রশ্ন মনে রেখেই দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে জিজ্ঞেস করলো,
“তুমি কখন এসেছো?”
নোলক খানিক অপ্রস্তুত হলো বৈকি! বলল,
“এখন।”
“আদ্র’র কাছে এসেছো? কে বলেছে ও হসপিটালে?”
“তার কাছে আসিনি।”
ইশান কেন যেন বিশ্বাসও করে নিল। মনে মনে ভেবে নিলো অন্য কাউওকে দেখতে এসে বোধহয় আদ্রকে দেখতে পেয়েছে। জানবেই বা কি করে মেয়েটা? একবারের জন্যও মনে হলো না, আরমানও তো বলতে পারে! মানুষের চিন্তা যখন এককেন্দ্রিক হয়ে যায় তখন অন্যকিছু নিয়ে আর চিন্তা করতে পারে না। ভাবনা চিন্তার সহজ সমাধান খোঁজে। সমাধান পেয়ে গেলেই তা মেনে নেয়। ইশানেরও তাই হয়েছে। নোলক কোথায় এসেছে, কেন এসেছে সেসব নিয়ে ভাবার অবকাশই পেলো না। জিজ্ঞেস করলো,
“চলে যাচ্ছো কেন?”
“থাকার কেউ নই এখানে!”
“কে বলল?”
ইশানের পাল্টা প্রশ্নে কপাল কুঁচকে তাকালো নোলক। ইশান বলল,
“কাল একটু সময় দিতে পারবা, অগ্নিশর্মা? অনেক, অনেক কিছু বলতে চাই তোমায়। খুব অসহায় লাগছে আজকাল। প্লিজ? একটু সময়?”
নোলক এবার বিস্মিত হলো। ইশান কখনো এভাবে বলেনি। নোলক ছোট্ট করে বলল,
“কোথায়?”
“তুমি যেখানে বলবে!”
নোলক কোথায় থাকবে, তা জানিয়ে চলে আসে। তার ভীষণ কান্না পাচ্ছে। কেন কে জানে! সে অমন ন্যাকা কান্না কাঁদতে জানতো না আগে। আজকাল যেন সারাক্ষণ-ই চোখের ডগায় অশ্রুকণা টুইটুম্বুর হয়ে থাকে। কি হচ্ছে তার?
নোলকের চলে যাওয়ার দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে থাকে ইশান। ফাঁকা লাগে খুব। কেন এই শুন্যতা, কে জানে! মনকে শক্ত করে ভাবে, যা তার নয়, তা নিয়ে এই শুন্যতা বোকামি বৈ কিছু নয়।
দরজা ঠেলে ভেতরে ঢোকে। আদ্র’র পাশে এসে বসে। আদ্র’র মাথায় হাত রাখতেই আদ্র বলে,
“নোলক এখানে কেন এসেছে, দোস্ত?”
ইশান বলে,
“তোর সাথে কথা হয়নি?”
“উঁহু! দোস্ত ওরে কিছু বলিস না। ওরে এখানেও আসতেও দিস না। দম বন্ধ লাগছে। একটু আগে থেকে নাকের কাছে একটা অস্বস্তিকর গন্ধ লেগে আছে। আমার চোখে কপালেও সেই গন্ধ, ছোঁয়া। এই গন্ধটা যখন থেকে নাকে, মনে, মস্তিষ্কে লেগে গেল, তারপর থেকে বেশি কষ্ট লাগছে দোস্ত। নূপুরের ঝুমঝুম শব্দ কানে লেগে আছে। উফ, অসহ্য!”
একটু থেমে বলে,
“এক কাজ কর তো? আমায় বাসায় নিয়ে চল। আমি ভালো আছি তো। ডক্টর তো বলল, যেটুকু ড্যামেজ হওয়ার হয়ে গিয়েছে। অযথা এখানে কেন রেখে দিয়েছিস? দোস্ত নোলক এখানে কেন এসেছে বলতো?”
ইশান হাসলো। অনেক প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার হাসি। আদ্রর হাত ধরে বলে,
“বেশি ভালোবাসিস, বলিস না ক্যান? স্বীকার করিস না ক্যান?”
“বাসি না ভালো।”
“মিথ্যুক একটা।”
আদ্র আর কিছু বলে না। কপালে হাত রাখে, যেখানে নোলক রেখেছে। চোখে হাত রাখে, যেখানে নোলক রেখেছে। মনেমনে বলে,
“তোমার মতো মায়া আমার শরীর জুড়ে নেই নোলক। বাচ্চা একটা মেয়ে আমার একলা অন্ধকার জীবনের সঙ্গি হয়ে আসতে চাওয়ার মতো ভুল, কেন করো বারবার?”……..(চলবে).(চলবে)