#জানি_তুমি_ফিরবে
[৫ম পর্ব]
লেখক – শহীদ উল্লাহ সবুজ
খাবার টেবিলের সামনে গিয়ে অবাক হয়ে গেলো ধ্রুব। কারণ সেখানে বসে আছে ধ্রুবর মা-বাবা। তারা যে এখানে আসবে ধ্রুবকে বলে নাই।
ধ্রুব টেবিলের সামনে গিয়ে বলল — তোমরা কখন আসলে? আর আমাকে না বলেই চলে আসলে যে?
মিজান সাহেব বলল — তোকে সারপ্রাইজ দেবো বলে না বলেই চলে আসছি। খাওয়া দাওয়া শেষ করে আমরা সবাই আমাদের বাসায় চলে যাবো। তোদের ছাড়া বাড়িটা পাকা পাকা লাগে খুব।
— ঠিক আছে।
তারপর সবাই খাওয়া দাওয়া শেষ করে রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়ে। কিছুক্ষণের মধ্যেই বাসায় চলে যায় সবাই। ধ্রুব নিজের রুমে গিয়ে তার জামাকাপড় চেঞ্জ করে ফোন নিয়ে বসে পড়ে। তিশা ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নেয়।
তিশা ধ্রুবর কাছে এসে বলল — ধন্যবাদ।
— ধন্যবাদ কেন?
— আমার কথা রাখার জন্য।
— এখানে ধন্যবাদ দেওয়ার মতো কিছুই হয়নি। আর হে এখানে আমারও সার্থ ছিলো। আমিও চাইনা আমার বা আপনার পরিবারের কেউ না জানুক আমাদের এই সম্পর্কের কথা।
— যেদিন সবাই জেনে যাবে আমাদের সম্পর্ক টা বাকি আট-দশটা স্বামী স্ত্রীর মতো না। তখন কি হবে?
— তখন কারটা না হয় তখন দেখা যাবে। আর সবাই জানার আগেই আমি আপনাকে ডিভোর্স দিয়ে দেবো। সো তখন সবাই জানলেও আমার কোনো সমস্যা নেই।
ধ্রুবর মুখে ডিভোর্স এর কথা শুনে নিশ্চুপ হয়ে গেলো তিশা। তিশা কি বলবে বুঝতে পারছেনা।
ধ্রুব আবার বলল — আমি কখনো একটা বিধবা মেয়ের সাথে সারাজীবন থাকতে পারবোনা। আমি উকিলের সাথে কথা বলছি আমাদের ৬ মাস এক সাথে থাকতে হবে। তারপর ডিভোর্স দিয়ে দেবো আমি আপনাকে।
তিশা এখনো নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ধ্রুব আর কোনো কথা না বলে রুম থেকে বেরিয়ে চলে গেলো। ধ্রুব যাওয়ার পরে তিশার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়তে থাকে। আর সে নিজে নিজে বলতে থাকে– আমি বিধবা সেটা আমাকে বার বার উনি মনে করিয়ে দিকে কি মজা পায়? কেন উনি আমাকে আমার ফেলে আশা স্মৃতি বার বার মনে করিয়ে দেয়? আমি তো সুন্দর ভাবে নতুন করে আমার জীবন তৈরি করতে চাই। কিন্তু উনি বার বার আমার অতীত মনে করিয়ে দেয়। আমি বিধবা সেটা কি আমার অপরাধ? আমার ভাগ্য খারাপ তাই আমার সাথে এমন হইছে। সেখানে আমার কি দোষ?
এসব বলতে বলতে তিশা কান্না করতে থাকে। তার চোখ থেকে অঝোরে পানি পড়তে থাকে। এমন সময় ধ্রুবর আম্মু রুমে এসে দেখে তিশা শুয়ে শুয়ে কান্না করছে।
ধ্রুবর আম্মু বলল — বউমা কি হয়েছে তোমার?
তিশা তার শ্বাশুড়ির শব্দ শুনে তাড়াতাড়ি করে চোখের পানি মুছে দাঁড়িয়ে মাথায় কাপড় টেনে বলল — কই মা কিছু হয়নি তো।
— কিছু না হলে তুমি কান্না করছিলে কেন? নাকি মা-বাবার কথা মনে পড়ছে?
তিশা কোনো কিছুই বলল না। তারপর ধ্রুবর আম্মু বলল — মন খারাপ করোনা বউমা। কিছুদিন পরে আবার গিয়ে বেড়িয়ে আসতে পারবে। আমার সাথে রান্না করতে আসো মন ভালো হয়ে যাবে।
তারপর তিশা তার শ্বাশুড়ির সাথে চলে গেলো রান্না করতে। বউ শ্বাশুড়ি রান্না শেষ করে নিজেদের রুমে চলে গেলো। দেখতে দেখতে দুপুর হয়ে গেলো। কিছুক্ষণের মধ্যে ধ্রুব বাসায় ফিরে আসে। তারপর দুপুরের খাবার শেষ করে ধ্রুব নিজের রুমে এসে দেখে তিশা মন খারাপ করে বসে আছে। ধ্রুব সেদিকে নজর না দিয়েই ফ্রেশ হতে চলে গেলো ওয়াশরুমের ভিতর। কিছুক্ষণ পরে ধ্রুব ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে আসলো।
অন্যদিকে তিশা রুম থেকে বেরিয়ে গিয়ে খাবার রেডি করছে ধ্রুবর জন্য। দুপুরে খাবার শেষ করে ধ্রুব বাসা থেকে বের হয়ে তার বন্ধুদের কাছে গিয়ে আড্ডা দিতে থাকে। কখন যে রাত হয়ে গেলো বুঝতেই পারেনি ধ্রুব। ধ্রুব আজকে ড্রিংকস বেশিই করে ফেলছে।
ধ্রুবর বন্ধু বলল — কিরে ধ্রুব বাসায় যাবি না? রাত তো অনেক হয়েছে।
— হুম এক্ষনি চলে যাবো।
— চল তোকে আমরা বাসায় দিয়ে আশি। তোর তো অবস্থা ভালোনা। তোকে এতো ড্রিংকস করতে না করি তাও তুই আমাদের কোনো কথাই শুনিস না।
— কাওকে যেতে হবে না আমি একাই যেতে পারবো।
এই কথা বলে ধ্রুব একাই বের হয়ে চলে গেলো। কিছুক্ষণের মধ্যে মাতাল অবস্থায় ধ্রুব বাসায় গিয়ে পৌছে গেলো। বাসার সামনে গিয়ে দরজার কলিং বেলে চাপ দেওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে তিশা এসে দরজা খুলতেই ধ্রুব পড়ে যেতে লাগলো আর তিশা ধ্রুবকে ধরে ফেললো।
তারপর ধ্রুব তিশার কাধের উপরে ভোর দিয়ে নিজের রুমে চলে যায়। তিশা খাটের উপরে ধ্রুবকে শুয়ে দিবে এমন সময় তিশা নিজের টাল সামলাতে না পেরে ধ্রুবর বুকের উপরে এসে পড়ে। তারপর দুজন দুজনের চোখের দিকে অনেক্ষন তাকিয়ে থাকে। হারিয়ে দুজন দুজনের চোখের অন্তরালে। অপুরুপ ভাবে তাকিয়ে থাকে দু’জন দুজনের চোখের দিকে। তারা মুহুর্তের মধ্যেই হারিয়ে যায় অজানা কোনো এক শহরে। একটু পরেই তিশার হুস ফিরে আসে। ধ্রুব মদের নেশায় আছে। তার নিজের উপরে কোনো কন্ট্রোল নেই। তিশা ধ্রুব উপর থেকে উঠে দাঁড়িয়ে যাবে এমন সময় ধ্রুব তিশার শাড়ির আঁচল টেনে ধরে। তারপর তিশা ধ্রুবর হাত থেকে শাড়ির আঁচল খুলতে যাবে এমন সময় ধ্রুব তিশার হাত ধরে একটা টান মেরে তিশাকে আবার তার বুকের উপরে নিয়ে আসে। ধ্রুব তিশার দিকে অপলক ভাবে তাকিয়ে থাকে। ধ্রুবর তাকানো দেখে তিশা অনেক লজ্জা পেয়ে গেলো। তখন ধ্রুব তিশার মুখের সামনে চলে আশা চুল গুলো সরিয়ে দিয়ে তিশা ঠোঁট তার ঠোঁটের খুব কাছে নিয়ে আসে। তিশার নিশ্বাস ধিরে ধিরে বেড়ে যেতে থাকে। এবার ধ্রুব তিশার ঠোঁট নিজের দখলে নিয়ে নেয়। এই ভাবে দুজন কতক্ষণ ছিলো খেয়াল করতে পারেনি তারা। এই প্রথম তিশা ধ্রুবর এতো কাছে চলে গেলো। এবার ধ্রুব আর তিশা নিজেদের কন্ট্রোল হারিয়ে ফেললো। দু’জনেই ডুবে গেলো ভালোবাসার অতল সাগরে। ধ্রুব আজ বেশি ড্রিংকস করার কারনে তার নিজের উপরে কোনো কন্ট্রোল নেই। কিচ্ছুক্ষণ পরে তিশা ধ্রুবর বুকের উপরেই ঘুমিয়ে পড়ে। আর ধ্রুব তিশাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে যায়। খুব সকালে ধ্রুব নিজের বুকের উপরে বারি কিছু অনুভব করতে পেরে ঘুম থেকে উঠে যায়। চোখ খুলে দেখে তিশা ধ্রুবর বুকের উপরে ঘুমিয়ে আছে। তিশার চুল গুলো এলোমেলো অবস্থায় আছে। তিশার শাড়ি ঠিক ভাবে তার শরীরে নেই। তিশার ঠোঁটের লিপস্টিক তার ঠোঁটে আশেপাশে লেগে আছে। আর ধ্রুবর জামায় ও লিপস্টিক এর দাগ লেগে আছে। ধ্রুবর আর বুঝতে বাকি রইলোনা যে সে মাতাল অবস্থায় তিশার সাথে শারিরীক সম্পর্ক করে ফেলছে। ধ্রুব এসব ভাবতেই রাগে তার পুরো শরীরে আগুন ধরে গেলো। তিশাকে এক ধাক্কা দিয়ে বুকের উপর থেকে সরিয়ে দিলো ধ্রুব।
তিশা চমকে ঘুম থেকে উঠে নিজের শারি ঠিক করে নিলো।
এবার ধ্রুব রাগি কণ্ঠে বলল — আপনি এখানে কেন? আর আপনি কেন আমার বুকের উপরে শুয়ে ছিলেন?
তিশা নিশ্চুপ,,,,
ধ্রুব আবার বলল — কাল রাতে যা হয়েছে ভুলে যান। আমি আপনার সাথে যা করছি তা আমি মাতাল অবস্থায় করে ফেলছি।
এই কথা বলে ধ্রুব ফ্রেশ হতে চলে গেলো। ধ্রুব যাওয়ায় পরে তিশা মিষ্টি একটা মুচকি হাসি দিলো। হঠাৎ করে ধ্রুবর ফোন বেজে উঠলো। তিশা ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখে নাম্বার টা কেমন চেনাছেনা লাগছে। এই নাম্বার থেকে এর আগেও অনেক বার কল এসেছে। আর এই নাম্বার থেকে কল আসলেই ধ্রুব রুম থেকে বেরিয়ে যায়। এসব ভাবতে ভাবতে কল কেটে গেলো। আবার সেই নাম্বার থেকে কল আসলো। এবার তিশা ধ্রুবর ফোনের দিকে এগিয়ে গেলো।
চলবে??