#জানি_তুমি_ফিরবে
[পর্ব – ১৩]
লেখক – শহীদ উল্লাহ সবুজ
তিশা দরজা খুলে দেখে তার শ্বশুর দাঁড়িয়ে আছে।
তিশা বলল — বাবা আপনি? কিছু লাগবে নাকি?
— হুম ধ্রুব আছে নাকি?
— হুম ভিতরে আছে, আসুন।
তারপর তিশা বাহিরে চলে গেলো। মিজান সাহেব গিয়ে ধ্রুবর পাশে বসলো। তারা কিছু কথা বলে বের হয়ে চলে গেলো। দেখতে দেখতে বিকাল হয়ে গেলো। ধ্রুব আর তিশা রেডি হয়ে বেরিয়ে চলে গেলো ক্লাবের উদ্দেশ্যে। ধ্রুব মনে মনে ভাবছে আজকে সবার সাথে তিশার পরিচয় করিয়ে দিবে।
তিশা ধ্রুবকে প্রশ্ন করলো — আচ্ছা আমারা ক্লাবে যাচ্ছি কেন?
— তোমাকে আমার সব বন্ধুদের সাথে আজ পরিচয় করিয়ে দেবো তাই।
কিছুক্ষণের মধ্যে তারা পৌছে গেলো ক্লাবে। ক্লাবে গিয়ে দেখে ধ্রুবর বন্ধু শুধু জয় আর সিয়াম আছে। তাছাড়া আর কেউ নাই। ধ্রুব সিয়ামের কাছে গিয়ে বলল — কিরে তোকে আমি কাল কি বলছিলাম? তোরা দুই জন কেন? বাকিরা সবাই কই?
— আরে এতো জন হলে কি মজা পাওয়া যাবে?
— মজা মানে? কিসের মজার কথা বলছিস তুই সিয়াম?
সিয়াম তিশার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে বলল — আজ তো মাস্তি হবে।
— আমি তোর কোনো কথাই বুঝতে পারছিনা। আমাকে একটু বুঝিয়ে বল কি হইছে?
সিয়াম ধ্রুবকে তিশার থেকে একটু দূরে নিয়ে গিয়ে বলল — দোস্ত তোকে এই মেয়েটাকে কেন আনতে বললাম বুঝতে পারলিনা?
— না কেন?
— আরে এই মেয়েকে নিয়ে আজ খেলবো আর পুর্তি করবো আমরা তিন জনে। সেই মজা হবে। মেয়ে টাও না সেই ফুরায় আগুন। আর খুব হট।
সিয়মের কথা শুনে ধ্রুবর মাথায় রক্ত উঠে গেলো। ধ্রুব আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারছেনা। গায়ের সব শক্তি দিয়ে ধ্রুবর গালে ঠাস করে একটা থাপ্পড় মেরে দিলো। থাপ্পড়টা এতো জোরে মারছে যে ধ্রুব থাপ্পড়ের টাল সামলাতে না পেরে মাটিতে পড়ে গেলো। ধ্রুব সিয়াম কে থাপ্পড় দিতে দেখে তিশা আর জয় অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। ধ্রুব এবার সিয়ামকে মারার জন্য গেলে জয় এসে ধ্রুবকে আঁটকে দেয়।
জয় — কি হইছে তুই ওঁকে মারছিস কেন?
— আমাকে ছেড়ে দে আজকে আমি ওঁকে খুন করে ফেলবো।
— আরে মাথা ঠান্ডা কর ভাই। আর কি হয়েছে আমাকে বল তুই।
তারপর ধ্রুব সিয়ামকে সব বলল। আবার সিয়ামের কাছে গিয়ে বলল — তোকে আমি নিজের ভাই মনে করতাম। আর তুই এমন ছি ভাবতেও আমার খারাপ লাগছে। আর শুন ওঁকে আমি এখানে নিয়ে আসছি তোদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে ও আমার স্ত্রী। ওঁকে নিয়ে এখানে আশা টাই আমার ভুল হয়েছে।
ধ্রুব মুখে স্ত্রী কথাটা শুনে সিয়াম আর জয় দুজনেই অবাক হয়ে গেলো।
তখন জয় বলল — তুই না আমাকে বললি ওটা তোদের বাসার কাজের মেয়ে? এখন ও তোর বউ হয়ে গেলো কি ভাবে?
তারপর ধ্রুব সব ঘটনা খুলে বলল প্রথম থেকে। ধ্রুবর সব কথা শুনে সিয়াম উঠে এসে ধ্রুবকে বলল — ধ্রুব আমি জানতাম না ও তোর স্ত্রী। আমাকে তুই পারলে ক্ষমা করে দিস। আমি জানলে কখনো এমন টা কল্পনাও করতাম না। প্লিজ আমাকে তুই ক্ষমা করে দিস ধ্রুব।
ধ্রুব কোনো কথা বললনা। এবার সিয়াম তিশার কাছে এসে বলল — ভাবি আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন। আমার অনেক বড় ভুল হয়ে গিয়েছে। আমি কোনো কিছু না যেনেই বলে ফেলছি।
তিশা বলল — কেউ যখন নিজের ভুল বুঝতে পারে তাকে ক্ষমা করে দেওয়া উত্তম। তবে আপনার যেটা করতে চেয়েছিলেন সেটা কিন্তু অন্যায়।
— আমার ভুল হয়ে গেছে আমি আর কোনো দিন এসব কাজে যাবো না। ক্ষমা করে দিন আমকে।
— আমি ক্ষমা করে দিয়েছি।
এবার সিয়াম আর জয় ধ্রুবর কাছে গিয়ে ক্ষমা চাইলো। ধ্রুবও এদের ক্ষমা করে দিয়ে তিশাকে নিয়ে বাসায় চলে আসলো। বাসায় এসে ধ্রুব একদম চুপচাপ হয়ে গেলো। তিশা রান্না করতে চলে গেলো। রান্না শেষ করে তিশা রুমে এসে দেখে ধ্রুব রুমে নেই। তিশা ভাবলো ধ্রুব হয়তো ওয়াশরুমে গেছে তাই তিশা,খাটের উপরে বসে রইলো। কিন্তু অনেক্ষন পার হয়ে গেলো ধ্রুব বের হয়ে আসছেনা। এবার তিশা ওয়াশরুমের দরজা খুলে দেখে ধ্রুব নাই। পুরো বাসা খুজেও ধ্রুবকে না পেয়ে তিশা ছাদের উপরে চলে গেলো। ছাদের উপরে গিয়ে দেখে ধ্রুব ছাদের এক কোণে দাঁড়িয়ে আছে। তিশা ধ্রুবর পাশে গিয়ে দাড়ালো। ধ্রুব মন খারাপ করে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। তখন তিশা বলল
— কি হয়েছে আপনার? এই ভাবে মন খারাপ করে দাঁড়িয়ে আছেন কেন?
— তিশা i am sorry .
— সরি বলছেন কেন আপনি?
— আসলে আমি ভুল হয়েছে তোমাকে ওখানে নিয়ে গিয়ে। ওদের হয়ে আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাইছি।
— আরে আমি কিছু মনে করিনি। দেখুন আপনাকে এই ভাবে মন খারাপ করে থাকতে দেখে আমার ভালো লাগছেনা।
এবার ধ্রুব তিশাকে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে নিলো।
— হইছে এবার ছাড়ুন। চলুন রুমে যাই অনেক রাত হইছে।
— আজকের আকাশটা খুব সুন্দর লাগছে। আর আজকের দুইটা চাঁদ ফুটে আছে।
ধ্রুব মুখে দুইটা চাঁদের কথা শুনে তিশা অবাক হয়ে গেলো। আর সে মনে মনে ভাবতে থাকে আকাশে দুইটা চাঁদ কই? আমি তো দেখছি একটা। পাগল হয়ে গেলো নাকি উনি?
তিশা ধ্রুবকে প্রশ্ন করলো — আকাশে চাঁদ তো একটা থাকে দুইটা আপনি কই থেকে দেখেন?
— ওই যে আকাশে একটা ফুটে আছে আর একটা আমার সামনে ফুটে আছে। আমি কোনটা রেখে কোনটা দেখবো বুঝতে পারছিনা।
ধ্রুবর কথা শুনে তিশা লজ্জা পেয়ে গেলো। লজ্জায় তার মুখ পুরো লাল হয়ে গেলো।
ধ্রুব আবার বলল — তিশা তোমার চুল গুলো ছেড়ে দাও তোমাকে আরো বেশি সুন্দর লাগবে।
তিশা ধ্রুব কথা শুনে চুল গুলো ছেড়ে দিলো। আর হালকা বাতাসে তিশার চুল উড়তে থাকে। চাঁদের আলো তিশার মুখে এসে পড়ছে। চাঁদের আলো তিশার সৌন্দর্যকে আরো দিগুণ বাড়িয়ে দিচ্ছে। অপরুপ সুন্দরী লাগছে তিশাকে। ধ্রুব তিশার দিকে তাকিয়ে রইলো। ধ্রুবর তাকিয়ে থাকা দেখে তিশার লজ্জা যেনো আরো বেড়ে যাচ্ছে।
তিশা বলল — এই ভাবে তাকিয়ে আছেন কেন? আমার লজ্জা লাগেনা বুঝি?
ধ্রুব একটা মুচকি হাসি দিয়ে তিশাকে জড়িয়ে ধরে বলল — আহারে আমার লজ্জাবতী বউ।
তারা আরো কিছুক্ষণ ছাদের উপরে থেকে নিজের রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। সকালে তিশা ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে ধ্রুবকে ঘুম থেকে তুলে। ধ্রুবও ফ্রেশ হয়ে এসে নাস্তা করতে চলে যায়। নাস্তা খেয়ে আবার রুমে চলে আসে। হঠাৎ করে ধ্রুবর আম্মু রুমে এসে তিশাকে বলল — তিশা মা তোমার সাথে একটা ছেলে দেখা করতে এসেছে। একটু নিচে আসো তাড়াতাড়ি।
একটা ছেলের কথা শুনে তিশা অবাক হয়ে গেলো। কে আবার আসলো তার সাথে দেখা করতে। তিশার তো কোনো ছেলে বন্ধুও নেই তাহলে কে আসতে পারে? এসব ভাবছে তিশা।
ধ্রুব তিশাকে বলল — চলো দেখি কে আসলো তোমার সাথে দেখা করতে।
ধ্রুব আর তিশা এক সাথে নিচে চলে গেলো। তিশা নিচে গিয়ে তার সামনে বসে থাকা ছেলেটাকে দেখে সে থ হয়ে গেলো। তার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার মতো অবস্থা হলো। সে যেনো তার নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিনা। তার চোখ গড়িয়ে পানি পড়তে শুরু করে দেলো। সে নির্বাক হয়ে তাকিয়ে রইলো ছেলেটার দিকে।
চলবে??