#জোয়ার_ভাটা
#সুরাইয়া_সাত্তার_ঊর্মি
#২৯
মানুষ যেন পাখির ন্যায়… এক মুহুর্তে এই প্রান্তে তো অন্য মুহুর্তে অন্য প্রান্তে। পৃথিবীর মানুষ গুলো নিজ গন্তব্য পৌঁছানোর জন্য তরজোর করেই বেশি। বাংলাদেশের মাটি ছেড়ে আমেরিকার মাটিতে পা রাখলো শীপ্রা, মৃণাল আর মার্জান। দেশের মাটির গন্ধ বিদেশের মাটিতে নেই। বাংলাদেশের সতেজতা এই দেশে খুঁজে পাওয়া যেন দুষ্কর। শীপ্রা নিজেকে আজাত পাখির মতো হাত মেলে দিলো। বিদেশের বাতাবরণ শ্বাস টেনে ভরে নিতে চাইলো নিজের দেহে। বাতাসের সাথে ভেসে আসা অপরিচিত ফুলের সুবাস মাতাল করছে ওঁকে। মার্জান শীপ্রার বাচ্চামো দেখে হাসলো। মেয়েটিকে আজ অনেক দিন পর হাসতে দেখছে।তায়ানশাহ্ যেন ওঁর সরলতা কেড়েই নিয়েছিলো।হয়তো এবার মেয়েটি জীবনের গতি অন্য রূপ নিবে। মার্জান চোখের সানগ্লাস খুলে বলে উঠলো,
“আমাদের গন্তব্য যাওয়া যাক। ”
শীপ্রা মাথা হ্যাঁ বোধক নাড়ালো। মৃণালের হাত টেনে টেনে বাহিরের দিকে যেতে যেতে গাইলো,
একদিন ছুটি হবে অনেক দূরে যাবো
নীল আকাশে সবুজ ঘাসে খুশিতে হারাবো।।
যেখানে থাকবে না কোন বাধন
থাকবে না নিয়মের কোন শাসন।
পাখি হয়ে উড়বো ফুল হয়ে ফুটবো।
পাতায় পাতায় শিশির হয়ে হাসি ছাড়াবো।।
শ্রীপার খুশির গান মুহুর্তেই ফুড়ুৎ, থেমে গেলো শীপ্রার পা। ওঁ কি ভুল দেখছে? নাহ্ এটি তো সত্যি তায়ানশাহ্। ওঁর কাফেলার সাথে হেঁটে হেঁটে এদিকেই আসছে। শীপ্রা থমকে দাঁড়িয়ে পড়লো। উপর ওয়ালা কি ওঁর কঁপালে সুখ দেয় নি? নাকি সব থেকে নিকৃ*ষ্ট মার্জান উপর ওয়ালার কাছে। মনের কোনে অজানা ভ*য় কাজ করলেই পরক্ষণেই তায়ানশাহ্ ওঁর কাছ গেষে ইগনোর করে চলে যেতে দেখেই মুখটা এতত বড় হা হয়ে গেলো।ওঁর এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না…মার্জান শীপ্রার মুখ বন্ধ করে ইশারা করলো,
” ম*শা ঢু*কবে, চল এবার যাই।”
শীপ্রা মাথা চুলকাতে চুলকাতে বললো,
” এটা কি হলোরে? তায়নাশাহ্ দ্যা ডে*বিল আমাকে ইগনোর করলো?বুঝতে পারছিস বেপারটা? নি*র্ঘাত আমাকে চিনেনি।”
বলেই খুশিতে গদগদ হয়ে গেলো। বরাবরই লটকে থাকা মাথার উপর তায়ানশাহ্ এর তরও*য়ালটা বুঝি গায়েব হয়ে গেছে? মার্জান শীপ্রার মাথায় চা*টি মে*রে বলে উঠলো,
” ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখা বন্ধ কর।ওটা তায়ানশাহ্। ”
শীপ্রার মুখ ছোট হয়ে গেলো। তখনি মনের কনে ঘন্টি বেজে উঠলো,
” হোয়াই এই তায়ানশাহ্ ইজ হ্যায়ার? ইজ সি ফোলো*য়িং মি?”
শীপ্রার ভাবনার মাঝেই মৃণাল প্রশ্ন করলো,
” আন্টি ওই হ্যান্ডহাম আঙ্কেলকে কি তুই পছন্দ করো?”
শীপ্রা আবারো ভাবনায় পরে গেলো।সে কি তায়ানশাহ্ কে পছন্দ করে??
—————-
আজ সাত দিন চলে গেছে। টগর এখন সুস্থ, নাতিকে নিয়ে ওঁর খেলা-মেলা। মার্জানের দিন কাঁটছে এখানে হেলে দুলে। রাফিদের এখানে ছোট একটি কটেজ রয়েছে। সেখানে থাকছে ওঁরা। সারা দিন দু-বান্ধবী মিলে টই টই করে ঘুরছে। শীপ্রা আজ মৃণালকে নিয়ে রাফির চেম্বারে গিয়েছে। মার্জান চুপ করে বসে বই পড়ছে। ঠিক তখনি টগর টিভি ছাড়লো। বাংলাদেশের একটি নিউজ শো করছে টিভিতে।
” ইরফানুর মাসাবীহ গ্রীষ্ম। সবাই বলে, বিজনেস ওয়ার্ড এর মিস্টি ম্যান, যার নাম শুধু বাংলাদেশ নয় বিশ্বের টপ ট্যান বিজনেস ম্যানদের নামের সাথে জড়িত। এই ব্যক্তিটির আজ পর্যন্ত আইডেন্টিটি রিবেল হয়নি। একমাত্র ওনার নাম আর বিজনেস সম্পর্কে সবাই অবগত। আজ উনার দাদিজান সকলের সামনে মি: গ্রীষ্মের সম্পর্কে জানান,রাজকীয় নবাব বংশের ছোট নাতি হচ্ছেন মি: গ্রীষ্ম। খুব শীঘ্রই ওঁদের বংশের মেয়ে তুলতুলের সাথে বিয়ের পীড়িতে বসতে যাচ্ছেন। আরো বলেছেন, এই মুহুর্তে কিছু ঝামেলার জন্য ঘরোয়া ভাবেই কাজ সারছেন। বছর শেষ হতেই বড় করে আয়োজন করবেন বলে জানিয়েছেন। বিয়ের তারিখ তারা জানিয়েছেন ঠিক সাতদিন পর জুম্মার দিন আয়োজন করবেন তারা।”
মার্জানের হাত থেকে বই পড়ে গেলো। মনের অজান্তেই ভিজিয়ে দিতে লাগলো চোখের অবাধ্য জল বইয়ের পাতা গুলো। টগর মার্জানের দিকে প্রশ্ন*বিদ্ধ চোখে তাকালো। প্রশ্ন করলো,
” জান.. মৃণালের বাবা কি গ্রীষ্ম?”
মার্জান উত্তর দিলো না। নোনাজল যেন সব প্রশ্নের উত্তর দিয়ে দিচ্ছে। মার্জান দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। বুকের ভিতর এত যন্ত্র*না কেন হচ্ছে, কে চাইছে ওঁ এক্ষুনি ফিরে যাক গ্রীষ্মের কাছে।মার্জানের খুব বেশি যন্ত্রনা হচ্ছে। তাহলে কি সত্যি মানুষটা অন্য কারো হয়ে যাবে? মার্জান এবার মনে মনে ঠিক করেই ফেললো। এইবার আর সে দেশে ফিরবে না। একদম না। মার্জান উঠে চলে গেলো সেখান থেকে।
——————
” মৃণালের জন্য নতুন করে ডোনার খুঁজে পাওয়া গেছে মার্জান।”
মার্জান ফোনের ওপাশে থাকা রাফির কন্ঠ শুনে খুশি হয়ে গেলো। রাফানের শরীরে সা*পে কা*টার ফলে রাফানের ব্রোন ম্যারো দিতে পারেনি। মৃণালের ছোট শরীরে এফেক্ট করতে পারে খুব। তাই আবার বিদেশের মাটিতে পা রাখতে হয়েছে। মার্জান ঠিক করেই নিয়েছে, এবার ট্রিটমেন্টের পর এখানেই স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিবে মৃণালকে। পাশে পাশে ওঁ এখানেই ছোট খাট কাজ জোগাড় করে নিবে। বাকিটা জীবন শুধু নিজের ছেলেকে নিয়েই বাঁচা যাক। এখানে আসার পর গ্রীষ্ম অনেক ফোন করেছে মার্জানকে। কিন্তু মার্জান ফোন উঠায়নি। বরং ফোন বন্ধ করে দিয়েছে। ওঁ চায় না.. গ্রীষ্মের নতুন জীবনের পথে বাঁধা হতে। মার্জান বলল,
” অপারেশন কবে করাতে পারবো আমরা?”
“কাল।”
মার্জান খুশিতে শুকরিয়া করলো আল্লাহর কাছে। পরেদিন মৃণালের অপারেশন সময় চলে আসে। রাফির বলা মতো সব ঠিক ঠাক। কিন্তু ডোনার ওঁর নাম মার্জানকে বলতে নিষেধ করে বলে যে,
” অপারেশনের পরেই না হয় জানবে।”
মার্জান তাই আর কথা বাড়ায় না। নিজের ছেলের জীবনটাই তো আগে। মার্জান, শীপ্রা, আর টগর বাহিরে বসে অপেক্ষা করতে থাকে। দীর্ঘ সময় পর রাফি ওটি থেকে বের হয় ঠোঁটের কোনে হাসি ঝুলিয়ে। মার্জান স্বস্তির শ্বাস ফেলে। শেষ পর্যন্ত নিজের ছেলেকে আবারো সুস্থ সবল দেখবে মার্জান। শীপ্রা রাফির কাছে গেলো,
” ভাই মৃণালের সাথে দেখা করবো কখন?”
রাফি বোনের মাথায় হাত রেখে বলে উঠলো,
” কিছুক্ষণ পর ওঁকে কেবিনে দেয়া হবে। ”
তখনি মার্জান পিছন থেকে জিজ্ঞেস করলো,
” ডোনের সাথে কি এখন দেখা করা যেতে পারবে?”
রাফি মাথা হ্যাঁ বোধক নাড়ায়,
” মৃণালের কেবিনেই শিফট করাচ্ছি তাকে। ”
মার্জান ‘ওকে ‘ বলল।
কিছুক্ষণ পর মৃণালের বেডের পাশে বসলো মার্জান। মৃণাল এখন ঘুমে। ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে নিজের কষ্ট ভুলে গেলো সব। আজ থেকে ওঁর ছেলে আগের মতো হবে। হাসবে খেলবে। মার্জানের ভাবান্তরে ভাঙ্গন পড়লো একটি কন্ঠে। মার্জান পিছনে থাকাতেই পাশের বেডের মানুষটিকে দেখে ভ্রু-কুচকালো।
” তুমি কিন্তু আমার কাছে ঋণি।”
মার্জান বুঝতে পাড়লো না। বিরক্তি ফুটিয়ে কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
” আপনি আবার এখানে কি করছেন?”
মৃণ্ময় হেসে ফেললো। যেনো মার্জান কোনো জোকস্ বলছে। কাঁধ ঝাকিয়ে বলে উঠলো,
” মিস: মার্জান বুঝি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ এভাবেই করে?”
মার্জানের চোখ বুঝে ঠোঁট কামড়ে বলল,
” দ্যাট’স মিন… ”
মৃন্ময় মিষ্টি হাসে,
” ইয়েস.. অ্যাম দ্যা ডোনার।”
মার্জান কিছু বলতে পারলো। ওঁর তো মাথায় ঢুকছে যে ব্যক্তি দেশে থাকতে ওঁর সাথে দেখা করেই কিস করার নাটক করে বসে, হুট করেই সে আবার ভিন দেশে এসে ওঁর ছেলের ডোনার হয়ে যায়? ইহা কি আদো সত্যি? মার্জান হতাশার শ্বাস ছাড়লো। এটাকি আসলোই কাকতালীয়? নাকি কোনো ফাঁদ?
—————
গ্রীষ্মের বিয়ের তোড়জোড় চলছে। তুলতুল মহা খুশি। শেষ পর্যন্ত ওঁ বিয়ের পিড়িতে বসতে চলছে। তুলতুল ওঁর মাকে ফোন করলো,
” মা তুমি কবে আসবে? তোমার মেয়ের বিয়ে বলে কথা।”
তুলতুলের মা কাঠ কাঠ গলায় উত্তর দিলো,
” আমি চাই না তুমি এই বিয়ে করো। গ্রীষ্মের একটি ছেলে আছে, কেন ওঁদের সংসার ভাঙ্গতে চাইছো তুমি?”
তুলতুল কাঁদো কাঁদো মুখ করে বলে উঠলো,
” মা আমি গ্রীষ্মকে ভালোবাসি। আমি ওঁর ছেলেকে নিজের ছেলের মতো পালবো। দরকার হলে নিজের কখনো বাচ্চা নিবো না..।”
” সৎ মা কখনো আপন হয় না.. যেখানে মৃণালের মা জীবিত। ভুলে যেও না মার্জানকে ভালোবাসে গ্রীষ্ম।”
” আমার ভালোবাসার কি মা”
ফুপিয়ে উঠলো তুলতুল। ফোনের ওঁ পাশ থেকে এবার বিষন্ন কন্ঠ ভেসে এলো,
” কারো ঘর ভেঙে কেউ সুখে থাকেনা তুলতুল। আমি-ও পারিনি.. তুমিও পারবে না। আর ভুলে যেও না.. যার সব কিছু নষ্ট করতে যাচ্ছো, সে আর কেউ না তোমার আপন বোন।”
তুলতুল থমকে গেলো। ওঁর হাত থেকে ফোনটা পড়ে গেলো। এই সত্যি সে কোনো ভাবেই মেনে নিতে চায় না। একদম না। ওঁ তো ভালোবাসে গ্রীষ্মকে। খুব বেশি ভালোবাসে। তাহলে? তাহলে কিভাবে ওঁ যেতে দিবে গ্রীষ্মকে। তুলতুল চোখের জল মুছে নিলো। গ্রীষ্মের জন্য এক গ্লাস জুস নিয়ে ওঁ-তে ড্র*গ মিশিয়ে নিলো। এবং মুখের কোনে মিথ্যা হাসি ফুটিয়ে ছুটলো গ্রীষ্মের ঘরের দিকে।
গ্রীষ্মের দাদিজান রুমে পায়চারি করছে গ্রীষ্মের। মাথায় উনার বিন্দু বিন্দু ঘাম। গ্রীষ্মের ঘরের দরজা খুলতেই উনি উৎকন্ঠিত গলায় বলে উঠলো,
” গ্রীষ্ম এই বিয়ে বন্ধ করতে হবে। মার্জান যে আমার হারিয়ে যাওয়া নাতনি। ওঁর সংসার আমি কি করে ভাঙ্গিব নিজ হাতে।”
ঠিক তখনি ধাম করে দরজা খুলে গেলো। তুলতুলের হাত থেকে গ্রীষ্মের জন্য আনা জুস টুকু টুপ করে মাটিতে পড়ে গেলো।দাদিজান ঘাবড়ে গেলেন।এই মুহূর্তে তুলতুলকে উনি ফেইস করতে চান না। কিন্তু চোখ ভর্তি জল নিয়ে বলে উঠলো
তুলতুল,
” কেনো দাদিজান, কেনো? আমার সাথে কেনো এমন করতে চাইছো? আমি গ্রীষ্মকে ভালোবাসি। কেন দূরে সরাতে চাইছো ওঁর থেকে?”
দাদিজান উত্তর দিলো ঠান্ডা গলায় বললো,
” তুলতুল বাচ্চামো করো না। এই বিয়ে হবে না.. ব্যস।”
তুলতুল চোখ মুছে নিলো। মুখের কোনে অদ্ভুত হাসি ফুঁটিয়ে বলে উঠলো,” এ’ বিয়ে হবে দাদিজান। ”
দাদিজান চোখ রাঙ্গালেন, ” তুমি কি আমার কথার খেলাপ করবে? আমি বেঁচে থাকতে তা হবে না। আগের কথা ভিন্ন ছিলো, এখন আমি জানি আমার নাতনি বেঁচে আছে।”
ইমোশনাল হয়ে যায় দাদিজান। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে তুলতুল ওঁর দাদিজানকে বেহুশ করিয়ে দেয়। পাগলের মতো বলতে থাকে,
” গ্রীষ্ম আমার.. ও-কে আমাকেই বিয়ে করতে হবে। আমি হবো ওঁর বউ। আর কেউ না। কেউ না। আমি… আমি ওঁকে ভালোবাসি দাদিজান.. কেন বুঝো না? ”
বলেই তুলতুল দাদিজানকে টেনে নিয়ে সবার আড়ালে বেড়িয়ে গেলো বাড়ি থেকে। গাড়িতে তুলে বেহুঁশ দাদিজাকে দেখে তুলতুল কাঁদো কাঁদো মুখ করে বলে উঠলো,
” ইউ নো.. দাদিজান আই লাভ ইউ… বাট আই অলসো লাভ গ্রীষ্ম। একবার আষাঢ়ের জন্য ওঁকে পাই নি। কিন্তু এই সুযোগ হাত ছাড়া করবো না। আমি তোমার-ও ক্ষতি করবো না দাদিজান। তবে তুমি হবে আমার গ্রীষ্মের কাছে পৌঁছাবার চাবি।”
বলেই জোড় করে হাসবার চেষ্টা করলো। কিন্তু এখনো মনের কোথাও চলছে, ‘এসব ঠিক না তুলতুল। তুমি তো এমন ছিলে না।”
গ্রীষ্ম অফিস বসে ছিলো। শূণ্য দৃষ্টি ওঁর বাহিরে। টেবিলের উপর মার্জান আর ওঁর সাথে থাকা মৃন্ময়ের ছবি। দু’জন মিলে দামি কোনো রেস্টুরেন্টে বসে খাচ্ছে। গ্রীষ্ম এসব দেখেই রাগে ফুঁসছে। কত সাহস হয় এ-মেয়েটির… গ্রীষ্মকে ছেড়ে অন্য কারো সাথে ড্যাটিং এ যাওয়ার? গ্রীষ্ম ঠিক করে ফেললো,
এই বিয়ে নামক নাটক এবার ওঁর থামাতেই হবে। দাদিজানকে ওঁর কথা বলেই দিবে পরিস্কার করো। তা ভেবেই ফোন তুললো গ্রীষ্ম। দাদিজানকে ফোন দিতেই ও’পাশ থেকে রিসিভ করে তুলতুল। গ্রীষ্ম ওঁর থমথমে কন্ঠে বলে উঠে,
” তুলতুল দাদিজানের ফোন তোমার কাছে কেন? দাদিজানকে ফোন দাও।”
তুলতুল রহস্যময় কন্ঠে বলল,
” নাহ্… দাদিজান ঘুমুচ্ছে.. উনি ফোন ধরবে না। তুমি আমাকে বলো।”
গ্রীষ্মের রাগ উঠে গেলো। কিন্তু এই মেয়েটির উপর রাগ সে কিভাবে ঝাড়বে। গ্রীষ্মের মতে ওঁ তো ভিক্টিম। তাই নিজের রাগকে দমিয়ে বলে উঠলো,
” দাদিজান উঠলে আমাকে ফোন করতে বলো।”
বলেই গ্রীষ্ম ফোন কাটতে নিলো। তখনি ওপাশ থেকে পাগলের মতো হাসির শব্দ ভেসে এলো,
” দাদিজান আমাদের বিয়ে হলে একবারে উঠবে গ্রীষ্ম”
গ্রীষ্মের ভ্রু কুচকে গেলো। মেয়েটি আবোলতাবোল কি বলছে? সে ধমকে উঠলো,
” কি বাজে কথা বলছো তুমি?”
ভাবলেশহীন ভাবে বলল তুলতুল,
” অ্যাই কিডন্যাপড দাদিজান।”
———————————
মৃণাল আজ জেদ ধরেছে টগরের কাছে..
” নানু মা আমি পাস্তা খাবো।”
টগর নাতির মাথায় হাত বুলিয়ে বলে উঠলো,
“তুমি মাত্র সুস্থ হয়েছো মৃণাল।”
” নানুমা। ইউ ডোন্ট লাভ মি।”
মুখ গোমড়া করে বলল। টগরের মন গলে গেলো, মৃণালের ছোট্ট মুখখানি দেখে। মার্জানকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো,
” তোর ছেলের সব্বাইকে ইমোশনাল করে নিজের কথা মানিয়ে নিবার আধ্যাত্মিক ক্ষমতা আছে যেন। যাতো পাশের সুপার সপ থেকে সব কিছু নিয়ে আয়।”
মার্জানের হাতে লিষ্ট ধরিয়ে দিলো টগর। মার্জার মাথা নাড়িয়ে বেড়িয়ে গেলো। এবং হাটতে হাটতে ওঁ সপে গেলো। কিন্তু সেখানে চিজ পেলো না। তাই কিছুট দূরে যেতে হলো তাকে। ওখানে গিয়ে মার্জান আরো কিছু শপিং করতে লাগলো। ঠিক তখনি, কিছু কালো পোশাকে হুড়মুড় করে ঢুকলো বডি বিল্ডার বিদেশি। এসেই ইংরেজি ঝেড়ে বলল,
” ডোন্ট মুভ… আমরা কাউকে খুঁজতে এসেছি। সবাই বসে পড়ুন… ”
এঁদের ভয়ে যে যেখানে ছিলো ওখানে বসে পড়লো। সপের এক লোক পুলিশকে ফোন করতে চাইলে, ওঁর দিকে পর ধেয়ে গেলো গুলির বর্ষণ। লোকের মাঝে এবার চেচামেচি শুরু হয়ে গেলো। মার্জান নিজেও খানিক ভয় পেয়ে এক টেবিলের পিছনে লুকাতেই চক্ষু ওঁর চড়াক গাছ। ফিসফিস করে বলে উঠলো,
” আপনি এখানে এভাবে কি করছেন?”
তায়ানশাহ্ প্রত্যুত্তর হাসলো,
” এই যে বরাত এসেছে দেখছো আমাকে কুঁজতে এসেছে। মারতে চাইছে আমাকে। ”
মার্জান শীপ্রার জন্য তায়ানশাহ্ কে ঘৃণা করে। ওঁ বলেই ফেললো,
” ইউ নো হোয়াট? তোমার মরে যাওয়াই উচিত।”
তায়ানশাহ্ দাম্ভিক পূর্ণ হাসি দিয়ে বলে উঠলো,
” আই নো… তবে ভুলে যেও না.. আমি তোমাকে হেল্প করেছি একবার। নাও ইউর ট্রাণ।”
মার্জান কিড়মিড় করে বলে উঠলো,
” গো টু হ্যাল।”
ঠিক তখনি মার্জানের কাছে ওই লোকের একজন এসে বলে উঠলো,
” হেই ইয়াং লেডি.. তুমি কোনো বেঙ্গলী ছেলেকে দেখেছো? যার হাতে গুলি লেগেছে?”
মার্জান কনফিডেন্সের সাথে উত্তর দিলো,
” ইয়েস।”
তায়ানশাহ্র মুখ শক্ত হয়ে গেলো! মেয়েটি তাকে এভাবে ঠকালো? কিন্তু পরক্ষণেই ওঁর ভাবনা ভুল প্রাণ করে বলে উঠলো মার্জান,
” হ্যাঁ আমি তাকে পিছনের দরজা দিয়ে বাহিরে যেতে দেখেছি।”
লোক গুলো এলার্ট হয়ে গেলো তখন। দৌঁড়ে সেদিকে যেতেই মার্জান তায়ানশাহ্ কে নিয়ে বেড়িয়ে পড়লো সেখান থেকে। কিন্তু শেষ রক্ষে হলো না। লোক গুলো ওঁদের ধরে ফেললো। হাসতে হাসতে বলল,
” ইউ প্রিটি উইম্যান. আমাদের গাধা ভেবেছো? না হয় এবার তোমাকেও আমাদের রাতের খাবার বানানো যাক?”
তায়নাশাহ্ তখনি সামনে এসে ওঁদের হুম*কির সাথে বলে উঠলো,
” ইউ ব্লা*ডি ব্ল্যাক ডগ… মেয়ের সাথে নয় পুরুষত্ব থাকলে আমার সাথে লড়াই করো।”
তায়ানশাহ্ এই মুহুর্তে অনেক দূর্বল। হাতে গু*লি লাগায় রক্ত গড়িয়েছে অনেক। যার ফলে ধীরে ধীরে চোখ বুঝে আসছে। যে কোনো মুহূর্তে লুটিয়ে পড়বে মাটিতে। কিন্তু তবুও নিজের দম থাকা পর্যন্ত রক্ষা করবে মার্জানকে। যাই হোক মেয়েটি শীপ্রার ভালো বন্ধু। তারউপর জান বাঁচিয়েছে ওঁ। তায়ানশাহ্-র কথা শুনে হাসলো সবাই। তায়ানশাহ্ কাছাকাছি এসেই ধুম করে এক ঘু*ষি বসিয়ে দিতেই তায়ানশাহ্ লুটিয়ে পড়লো মাটিতে। লোক গুলোর হাসির রেশ বৃদ্ধি পেলো আরো। মার্জানের কাছে এক দু’পা এগিয়ে যেতেই ওঁরা থেমে গেলো। মার্জানের পিছনে ব্ল্যাক হুডিতে একটা অভয়ব দেখে এক প্রকার পালিয়ে গেলো ওঁরা। তা দেখেই মার্জান চট করে তাকালো পিছনে…. ভয়, আত*ঙ্ক, ও অবিশ্বাস্য চোখে তাকিয়ে হয়রান, পেরেশান কন্ঠে বলে উঠলো তোতলানো সুরে,
” আ… প… নি?”
চলবে,
বিঃদ্রঃ আমার সমস্যার কথা আগেই জানিয়েছি আপনাদের… তবে এখন আর লেইট হবে না আশা করছি… বাকিটা আপনারা আমাকে যেভাবে দেখেন। সব শেষে দোয়া করবেন❤️