“ঝরা পাতার দিনগুলি পর্ব : ০১&০২

0
1022

গল্প :: ঝরা পাতার দিনগুলি
।।
পর্ব : ০১&০২
লেখক :: হাবিব
।।
বাসর ঘরটা খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। যেমনটা একটা মেয়ের সপ্ন থাকে। আমার সপ্নটা আবার একটু আলাদা ছিল। আমি সবসময় চাইতাম আমার বাসরঘরটা যেনো বেলি ফুল দিয়ে সাজানো হয় । ঠিক তেমনিই সাজানো হয়েছে।
-কিরে মন খারাপ করে বসে আছিস কেন?
-না ফুপি কিছু না।
-আবার ফুপি ডাকিস? কতবার বলবো এখন থেকে আম্মু ডাকবি।
-মুচকি হেসে বললাম আচ্ছা ঠিক আছে।
-তুই হাসতেছিস কেন! তুই তো লজ্জা পেয়ে বলবি।গাধি একটা।
– কি করবো বলো আমার লজ্জা শরম তো একটু কম
– বেহায়া মেয়ে একটা
বউ শাশুড়ী মিলে তো খুব গল্প হচ্ছে। তাকিয়ে দেখি রিতু আপু।
কি যে বলনা আপু।দেখোনা আপু ফুপি আসছে আমাকে আম্মু ডাক শিখাইতে। এতো দিনের অভ্যাস কি একদিনে যাবে বলো তুমি। আমি কি বলছিলাম যে সাব্বির ভাইয়ার সাথে আমাকে বিয়ে দাও?
এখন খামাখা সবাইকে অন্য কিছু ডাকতে হবে। গাল ফুলিয়ে বললাম আমি।
ফুপি আর রিতু আপু জোড়ে জোড়ে হাসতে লাগলো।
-এই যাওতো তোমরা। সাব্বির ভাই থুক্কু আমার জামাইকে পাঠাও আর ভাল্লাগতেছে না।
– এই তোর তো লজ্জা শরম আসোলেই অনেক কম! ফুপি হা হয়ে আমাকে বলল আমাকে। আর রিতু আপু হাসির জন্যে কথাই বলতে পারছে না।
এর মধ্যেই জারা এসে বলল মাম্মাম, নানুভাই তোমরা হাসছো কেন?
-দেখো না মামনি আমার শাশুড়ী আর ননাস আমার জামাইকে দিচ্ছে না।তুমি একটু আমার জামাইকে নিয়ে আসবে প্লিজ! আমি জারার গাল ধরে বললাম।
এই নানুভাই, রিতু চলতো যাই আমরা। এই মেয়ের মাথা আবার গেছে।
আমি তাদের গমন পথের দিকে তাকিয়ে রইলাম। চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে আসছে। আচ্ছা ফয়সাল এখন কি করছে। ও কি আমার কথা ভাবছে এখন। আচ্ছা এখন আমার কি নিয়ে চিন্তা করা উচিত। ৫ বছরের সম্পর্ক টা কেনো ভেঙে গেলো সেটা নাকি এর ৩ দিনের মাথায় নিজের আপন ফুফাতো ভায়ের সাথে বিয়ে, নাকি ১ সপ্তাহ আগে বাবা মারা গিয়েছে সেটার শোক পালন করবো। কিছুই বুঝতে পারছি না।
উফফ!! অসহ্য মাথা ব্যাথা আবার শুরু হয়েছে। বাথরুমে ঢুকে শাড়ি চেঞ্জ করে মাথায় পানি দিলাম কিছুক্ষন। ফ্রেশ হয়ে টাওয়াল পরে বাইরে বের হলাম। কি পরবো কিছুই খুজে পাচ্ছি না। দরজা চাপিয়ে চুপচাপ খাটে পা দুলিয়ে বসে আছি।
দরজার বাইরে পায়ের আওয়াজ শুনতে পেলাম। সাব্বির ভাই থুক্কু আমার হাসবেন্ড আসছে।
দরজা খোলার শব্দে উপরের দিকে তাকালাম। মেরুন কালারের শেরয়ানি তে সেই লাগছে দেখতে !! কিছু সময়ের জন্য আশেপাশের সব ভুলে গেলাম। সেই ১২ বছর আগের অনুভূতি গুলো বুকের ভেতর কেমন যেন চিনচিনিয়ে উঠলো।
ইশ্ কি হত যদি ঐ ঝামেলাটা না হতো। দুচোখ আবার পানিতে ভরে গেল। কিন্তু পানি আর গরিয়ে পরে না কেন জানি। চোখের পানি চোখেই শুকিয়ে যায়।
-আমার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলল, এই শরীর আর কয়জনকে দেখিয়েছিস? এইভাবে শরীর দেখিয়েই বুঝি বয়ফ্রেন্ড জোগাড় করতি? কি ভাবছিস আমিও তোর ঐসব বয়ফ্রেন্ডদের মতো তোর কাছে আসবো লুতুপুতু প্রেম করতে? কুত্তার বাচ্চা!!
নিজের কান আর চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না যে সাব্বির এর মুখ থেকে এই ধরনের কথা বের হতে পারে! এই সাব্বিরকে তো কেউ কোনদিন দেখেছে বলে মনে হয় না!
আমি হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলাম!! আমার এখন কি করা উচিত। কিছু না বলে চুপচাপ খাটের এক কোনায় গিয়ে কাথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে পরলাম। একটু পর মাথা বের করে জিজ্ঞেস করলাম ভাইয়া একটা সিগারেট হবে?
উত্তরে রক্ত লাল চোখ দেখে আচ্ছা লাগবে না বলেই কাথা মুড়িয়ে আবার শুয়ে পরলাম।
মাঝরাতে ঘুম ভেঙে গেল হঠাৎ তীব্র ধোয়ার গন্ধে। কাথা সরিয়ে দেখি সাব্বির সোফায় বসে সিগারেট খাচ্ছে!
হচ্ছেটা কি আজকে! যে ছেলে জীবনে কোনদিন সিগারেট খাইনি সেই ছেলে একটার পর একটা সিগারেট খাচ্ছে।
শোয়া থেকে উঠে দেখি খাটের উপর একসেট সালয়ার কামিজ রাখা। উঠে বাথরুম থেকে ড্রেস পরে বের হলাম। রুমে সিগারেটের ধোয়ায় থাকা যাচ্ছে না। বেলকনির দিকের দরজা আর রুমের জানালা খুলে দিয়ে আবার শুয়ে পরলাম।
কিছুক্ষন পর হেচকা টান দিয়ে কেউ আমাকে বিছানা থেকে ফেলে দিল। পরমুহূর্তেই গালের উপর ঠাস্ করে কারো পাঁচ আঙুল পরল!
পিটপিট করে গালে হাত দিয়ে চোখ খুললাম।
-তোর মতো মেয়েদের জায়গা এইটা না। ভুল করেও যেন বিছানায় না দেখি তোকে।
কিছু না বলে কাথা বালিশ নিয়ে ফ্লোরে শুয়ে পরলাম। আচ্ছা কারো বাসর রাত কি এমন হয় কখনো? ফয়সালের কথা মনে পরছে ভীষণ। ও সবসময় বলতো, মেহের দেখবে, আমার আর তোমার বাসর রাতে সারা রাত ঝগড়া করতে করতেই পার হয়ে যাবে। আমি সেইটা নিয়েই ঝগড়া শুরু করে দিতাম। আর আজ!!!
চিন্তা করার বোধশক্তি মনে হয় আমার শেষ হয়ে যাচ্ছে।
ঘুমের মধ্যেই টের পেলাম ১৫ কেজির একটা বস্তার মতো গায়ের উপর এসে পরল। চোখ খুলে দেখি বড় ভাইয়ার ছোট মেয়েটা!!
-ফুপি!!
-জি আম্মু বলেন
-উঠো
-বাকি গুলো কই
দরজার চিপা থেকে আরো ৭ টা গুরা গারা বের হয়ে বলে এইযে আমরা!!! বলেই লাফিয়ে খাটের উপর এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলো।
এই সবগুলাই আমার ভাইবোনদের বাচ্চা কাচ্চা!!
গত রাতের কথা মনে পড়তেই চারপাশে তাকিয়ে দেখি সব ফুল ছিড়ে মেঝেতে পরে আছে। কিন্তু আমি খাটের উপরে। ঘড়িতে বেলা ১১ টা বাজে। আমি এতক্ষণ ঘুমিয়েছি!!!
-ফুপি উঠো না!! সব থেকে পিচ্চিটা বলে উঠলো। আজকে তোমাকে অামরা নিয়ে যাব।
-তাই!!
উঠে ফ্রেশ হয়ে সবগুলোকে নিয়ে নিচে নেমে এলাম।
-এতো তারাহুরো করে বিয়ে করানোর কি দরকার ছিল বুঝতে পারছি না আমি। ছেলে মেয়ে দুজনেই ঘরের মানুষ। তোমাদের কাজ কাম কিছুই বুঝি না আমি।
ডাইনিং টেবিলে আসতে আসতে ছোট ফুপির বলা কথা গুলো কানে এলো।
দেখি ড্রইংরুমের সোফাতে বসে ছোট ফুপি, মা মানে মেজো ফুপি আর বড় ফুপি বসে কথা বলছে।
আম্মুকে খুব মিস করছি। ইশ আজকে আম্মু বেচে থাকলে হয়তো উনাদের সাথে গল্প করতো।
পরক্ষনেই মনে হলো, না থেকে ভালোই হয়েছে। ছোট ফুপির কথা শুনতে শুনতে অবস্থা খারাপ হয়ে যেত।
-কি মেহের ঘুম কেমন হলো রাতে!! জামাই তো দেখলাম সকাল সকাল গোসল করে বের হয়েছে!!!
তাহমিনা আপুর কথা শুনে কেমন যেন দম বন্ধ হয়ে আসছে। তাইতো!! আমি তো ফ্লোরে ছিলাম। খাটে কিভাবে আসলাম। আর গালে তো থাপ্পড়ের দাগ পরে যাওয়ার কথা।
হাত ধোয়ার বাহানায় বেসিনের আয়নায় দেখি গালে হালকা লাল হয়ে আছে।
সব কাজিনরা হাসা হাসি করছে গালে দাগ দেখে।
কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছি না।
থামবি তোরা! মেয়েটা এমনিতেই লজ্জা পাচ্ছে আর তোরা মজা করছিস। মায়ের ধমকে তাহমিনা আপু বলল ওর তো এমনিতেই লজ্জা কম। আরেক দফা হাসির ঢেউ পরে গেলো।
দরজা দিয়ে দেখলাম আমার তিন ভাই আর সাব্বির ঢুকছে। ওর হাতে একটা গিফট বক্স।
বাব্বাহ সাব্বির!! একরাতেই এতো প্রেম! যে সকাল সকাল উঠেই আগে গিফট কিনতে গিয়েছিস?!! হাসি মুখে তাহমিনা আপু বলল।
সাব্বির কোন উত্তর না দিয়ে মুচকি হেসে আমাকে উপরে আসার জন্যে বলে চলে গেলো।
আমার কেমন জানি ভয় করতে লাগলো।
রিতু আপু বলল মেহের তুমি উপরে যাও। তোমাদের খাবার রুমে পাঠিয়ে দিচ্ছি। সাব্বির ও কিছুই খায়নি সকালে।
পিচ্চি গুলোকে বুঝিয়ে শুনিয়ে নিচে রেখে উপরে আসলাম। বাথরুম থেকে পানির সাউন্ড আসছে। তার মানে ও বাথরুমে। তাহমিনা আপু আর রিতু আপু রুমে ঢুকলো।
রুমের কি অবস্থা করেছিস!!!
আমি কিছু করি নাই রিতু আপু, মুখ গোমড়া করে বললাম আমি।
রিতু আপু খাবার আর একটা শাড়ি দিয়ে বলল, রাতে আমার মনে ছিলো না। সাব্বির এসে আমার রুম থেকে নিয়ে গিয়েছে। আমার ভাইটা অনেক ভালো। কস্ট দিস না কখনো।
উত্তরে একটা দীর্ঘশ্বাস চেপে মাথা ঝাকিয়ে চেপে মুচকি হাসি দিলাম।
কি খুশি মেয়েটা!! তাহমিনা আপু বলল।
-এইরকম একটা ড্যাশিং লুকের জামাই পেলে যেকোনো মেয়েই খুশিতে চারটা লাফ দিবে আপু। আর আমিতো না চাইতেই পেয়ে গেছি। ঢিংকা চিকা বলে চেচিয়ে উঠলাম আমি!!
আপুরা হাসতে হাসতে চলে গেলো।
পিছনে ফিরলে আমার চোখের পানি দেখতে পেতো।
খাটে বসে সাইলেন্ট মুডে রাখা ফোনটা হাতে নিলাম। গত রাত রাত থেকে চেক করা হয়নি। ২৭টা ম্যাসেজ আর ৭৪টা মিসকল ফ্রম ফয়সাল!!!
তারাতাড়ি কল ব্যাক করতেই দেখি ফোন অফ বলছে।
ম্যাসেজ ওপেন করতেই দেখি প্রথমে সরি বলছে। কিন্তু লাস্ট ম্যাসেজ টা পড়তেই কলিজার পানি শুকিয়ে গেল!!

..
চলবে …………
গল্প :: ঝরা পাতার দিনগুলো
।।
পর্ব- ০২
হাবিব
।।
মাথা ঝিমঝিম করছে মেহের? প্রশ্ন শুনে সামনে তাকালাম। সাব্বির কখন বাথরুম থেকে বের হয়েছে টেরও পাইনি। আমার দিকে তাকিয়ে গা জালানো হাসি হেসে বলছে।
-সব জেনে শুনে আমাকে বিয়ে করেছ কেন তাহলে? শান্ত কন্ঠে ওকে জিজ্ঞেস করলাম।
-পাপ করেছিস শাস্তি পাবি না?
-তোমার সাথে তো কিছু করিনি।
-আমার সাথেই তো সবথেকে বড় অন্যায়টা করেছিস্। আবার বড় গলায় কথা বলছিস!! সব জেনে শুনেও তুই কিভাবে পারলি মেহের!!!
-আমি কি করেছি!!!??আজব তো!!
-কিছুই করিসনি?? তাহলে এইগুলা কি? গিফটবক্সটা দেখিয়ে চিৎকার করে উঠলো। রেগে রুম থেকে বের হয়ে বেলকনিতে চলে গেলো।
আমি চুপচাপ খাটে পা দুলিয়ে বসে আছি। আব্বুর কথা মনে পরছে অনেক। আব্বু থাকলে নিশ্চয়ই এই বিয়েটা হতো না।যতদিন আব্বু বেচে ছিলো সাব্বিরের সাথে বিয়েতে মানা করে দিয়েছে। কিন্তু আব্বু মারা যাওয়ার ১ সপ্তাহের মধ্যেই কি থেকে কি হয়ে গেলো!!।
আচ্ছা ফয়সালের সাথে তো আমার কিছু হয়নি। কি পাঠাইছে ও। গিফটবক্সটা খুলতেই খুশিতে চোখে আবার পানি চলে আসলো। আমি তো জানি যে ফয়সাল আমার ক্ষতি হোক এমন কিছু করবে না। এমনি এমনি ভয় দেখায় ছেলেটা। এতো কস্ট কেনো হয়!!
কি সুন্দর করে কিটকেট দিয়ে সাজানো বক্স টা!! তাও আবার মালয়শিয়ার কিটকেট গুলো। আর একটা কার্ড। আমাকে আর সাব্বিরকে উইশ করে লিখা।
জিনিস গুলো সাব্বিরের ড্রয়ারে রেখে বেলকনিতে গিয়ে দাড়ালাম।
-বেশি রাগ উঠলে রুম থেকে বের হয়ে যেতে হয়। সিগারেট ধরাতে হয়। আরো বেশি রাগ হলে চুপচাপ ঘুমিয়ে যাবা। দেখবা সব রাগ ফিনিস।
বিরক্ত চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বলল তারপর তুই ফয়সালের সাথে কথা বলতি তাইতো?
আমি মুচকি হেসে বললাম সেটা তো তোমার সামনেই বলতে পারি। এইটা বলে বারান্দায় দাঁড়ানোর আর সাহস করলাম না। বাথরুমে ঢুকে গেলাম।
আচ্ছা আমার মুখে হাসি কিভাবে আসছে!! ভিতরটা কেমন জানি করছে। সব ভেঙেচুরে বেরিয়ে আসতে চাইছে। কিন্তু গলার কাছে এসে সব আটকে আছে। আয়নার দিয়ে তাকিয়ে মনে হলো ফয়সাল দাড়িয়ে আছে পিছনে!!
-খুব মজা পাচ্ছো তাই না ফয়সাল?কি হতো আর ২টা দিন পরে ব্রেকআপ টা করলে? তাহলে অন্তত তোমার বাসায় থাকতাম আমি। জানো তোমার আম্মুর পায়ে পর্যন্ত ধরেছি আমি। বাবা মা মরা মেয়েকে নাকি তারা ঘরের বউ করবে না। আচ্ছা বাবা মা কি কারো চিরকাল বেচে থাকে? আচ্ছা আমাদের তো এমন আরো অনেকবার ব্রেকাপ হয়েছিল। কই দুদিন পর তো আবার সব ঠিক হয়ে যেতো। তাহলে এইবার কেনো সব এলোমেলো হয়ে গেলো।
জোড় করে কান্না করার চেষ্টা করছি। কিন্তু চোখের পানি আর গরিয়ে পরছে না। গলা পর্যন্ত এসে মাছের কাটার মতো অাটকে আছে। উল্টো চেহারাটা আরো ব্যাঙের মতো লাগছে। নিজেই জোড়ে জোড়ে হেসে দিলাম আমি।
চোখভর্তি পানি আর মুখে হাসি!! কি অদ্ভুত ব্যাপার একটা!!
বাথরুমের দরজাই জোড়ে ধাক্কার জন্যে অদ্ভুত ব্যাপার হাওয়াই মিলিয়ে গেলো!!
-কি সমস্যা তোর? বাথরুমে কার সাথে কথা বলে হাসছিস? বের হো। তুই বাথরুমে গিয়েও বয়ফ্রেন্ড বানিয়েছিস?
– হুম। দেখো বাথরুমে আমার জন্য সালমাল খান বসে আছে।আর বলতেসে আমাকে নিয়ে যাবে এইখান থেকে। বলেই আরোও জোরে জোরে হাসতে লাগলাম আমি।
সাব্বির খুব অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। এই দৃষ্টিতে ঠিক আছে আমার জন্যে বুঝতে পারলাম না। সত্যিকার অর্থে আমি এর মানের বের করার অবস্থাতেই নেই!!
মাথার ভিতরে ফয়সাল আর বাইরে সাব্বির। ছোটবেলায় খুব ইচ্ছে ছিল দুই স্বামির এক বধু হবার। ঐটা যে সত্যি হবে জানলে জীবনে কোনদিন বাংলা মুভি দেখতাম কিনা সন্দেহ!!
আমার বিয়ে হয়ে গেছে শুনলে কেউ বিশ্বাসই করবে না!!! কারণ ফয়সাল তো এখনো চাকরি পায়নি। সব ফ্রেন্ডরা ধরেই নিয়েছে আমার আর ফয়সালের বিয়েটা নেক্সট ইয়ারেই হবে। ভার্সিটিতে সবাই আমাদের সম্পর্কে জানে। আর জানবে নাইবা কেন। দুজন তো একই ভার্সিটি একই ফ্যাকালটি এমনকি মাস্টার্সও একি ডিপার্টমেন্টে!! শুধু ও আমার এক বছরের সিনিয়র। সবাইকে কি বলবো আমি!!
আর সবথেকে বড় কথা আমি ওকে ছাড়া থাকবো কিভাবে!! ফয়সালের সাথে সত্যিকারের ব্রেকাপটা তাহলে আমার হয়েই গেলো!!!
….
আমাদের বাসায় ঢুকতে ঢুকতে এশার আজান দিয়ে দিলো। রুমে ঢুকেই ফয়সালের ফোনে আবার ট্রাই করলাম। নাহ এখনো ফোন অফ বলছে। কি করা উচিত কিছুই বুঝতে পারছি না।
বেস্ট ফ্রেন্ড প্রিমাকে ফোন দিলাম। কেউতো জানেই না যে আমার বিয়ে হয়ে গিয়েছে!!
-প্রিমা আমি না বিয়ে করে ফেলছি।
– ভেরি গুড বেবি। সাক্ষী কে কে হইছে? আমি সাক্ষী হই নাই সো এই বিয়ে হবে না। তুই আবার বিয়ে করবি।
– আচ্ছা আবার বিয়ে করবো।
-ফয়সাল ভাই কই? থাকবি কই রাতে? ফয়সাল ভাইয়ের বাসায় সবাই মেনে নিসে?
– একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললাম ফয়সাল না সাব্বির।
– প্রিমা কিছু না বলেই ফোনটা কেটে দিলো
কি করবো চিন্তা করে কিছুক্ষন পর আবার ফোন দিলাম প্রিমাকে। ফোন রিসিভ হতেই অপরপাশ থেকে কান্নার শব্দ পেলাম। আশ্চর্য!! শুধু আমিই কাঁদতে পারছি না। বাসায় আসিস কালকে এটা বলেই ফোন কেটে দিলাম।
-কি মেহের কোন ডিপার্টমেন্ট?
-আমি মুচকি হেসে বললাম স্যার একুয়াকালচার। -ফয়সালও কি একুয়াকালচার এ?
আমি মাথা ঝাকালাম।
– হুম এই জন্যেই তুমি এই ডিপার্টমেন্টে।
-দাত বের করে হাসি দিয়ে বললাম জি স্যার। ওকে রেখে কই যাবো বলেন স্যার।-
– বিয়ে করছ কবে?
– স্যার লেইট করবো না। ফয়সাল একটা জব পেলেই বিয়ে করে ফেলবো।
-বাসায় জানে তোমার?
-নাহ কিন্তু ও একটা জব পেলে ম্যানেজ৷ করে ফেলবো সব ইনশআল্লাহ।
আর একমাস পরে হলো এই অবস্থা!!!
মেজো ভাইয়ার সাথে কথা বলার জন্যে ভাইয়ার রুমের কাছে আসতেই শুনতে পেলাম মেজো ভাবির গলার আওয়াজ,” আর বইলো না, এখনোতো কেউ জানে না মেয়ে যে বিয়ের দিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কই ছিলো।
না না, এখন বলবো না। সুযোগ মতো সব শোধ তুলবো। আমাকে কম অপমান করেছে এইটুকুন মেয়ে!!”
আমার জন্যে ভাবি কবে অপমানিত হয়েছে মনে করতে পারলাম না ঠিক। মাথা চুলকাতে চুলকাতে ড্রইংরুমের দিকে গেলাম। আমার তিন ভাইয়া, তিন দুলাভাই সবাই দেখি গল্প করছে। মেজো ভাইয়াকে ডাক দিলাম।
-ভাইয়া নেক্সট মাসের ৩ তারিখ থেকে মিডটার্ম শুরু। আর আমার রিসার্চও শুরু করতে হবে।
– কবে যেতে হবে চিটাগং?
– যত তারাতাড়ি যেতে পারি।
– আচ্ছা আমি দেখছি
আমার রুমে ঢুকে দেখি সব আপু আর ভাবিরা বসে আছে। আমাকে ঢুকতে দেখেই মেজো ভাবি বলে উঠলো
কিগো ননদিনি, কি করলা বাসর রাতে? বলেই সবাই হেসে উঠলো।
আমি ভেবে পেলাম না মানুষ এতো তারাতাড়ি রং কিভাবে বদলায়!!
তোমরা যদি শুনতে পারো আমি বলতে পারি, আমার কোনো সমস্যা নাই।
নাহ ভাই থাক, তোর মুখে যে কিছু আটকায় না সেইটা আমরা জানি। বলেই সবাই আবার হাসাহাসি শুরু করলো।
এতো অসহ্য লাগছে এদেরকে!! এতো হাসে কেনো এরা!!
রাতে সবাই একসাথে ড্রইং রুমে ফ্লোরে পাটি বিছিয়ে খেতে বসেছি।
“আচ্ছা মেহের গতকালকে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কোথায় ছিলি?” ছোট ফুপির এমন প্রশ্নে সবাই খাওয়ার কথা ভুলে আমার দিকে তাকিয়ে আছে!!
এই ঘটনা কিভাবে জানলো সেটা নিয়ে না হয় পরে ভাবা যাবে। কিন্তু এখন উত্তরটা দিব কি। মাথা ঘুরাচ্ছে আমার। মেজো ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে কেনো জানি মনে হলো এই মানুষটা জানে সব।
-আমার সাথে ছিলো। সাব্বিরের এমন উত্তরে সবথেকে জোড়ে স্বস্তির নিশ্বাসটা মনে হয় আমি ফেললাম!!!
-আর হ্যা কেনো আমার সাথে ছিলো আর কি করেছি আমারা সেগুলো আশা করি জানার কারো দরকার হবে না।
এইপ্রথম বার কৃতজ্ঞতার দৃষ্টিতে তাকালাম সাব্বিরের দিকে। কিন্তু তাচ্ছিল্যের হাসি আর ঘৃণার পরিবর্তে আর কিছুই পেলাম না।
কোনরকমে রাতের খাওয়া শেষ করে রুমে চলে এলাম। সবগুলো পিচ্চি খাটের উপর বসা। অন্য সময় হলে হয়তো ভুতের গল্প বলে সবগুলোকে ভয় দেখিয়ে একসাথে ঘুমাতাম। কিন্তু একমুহূর্তে সবগুলোকে দেখে বিরক্ত লাগছে।
-ফুপি তুমি আমাদের সাথে নাকি ঘুমাবে না? গাল ফুলিয়ে সবথেকে পিচ্চিটা বললো। তাই আমরা তোমার রুমে আগেই চলে আসছি।
হঠাৎ মনে হলো আরে এদের সাথে ঘুমালে তো সাব্বিরের সাথে, না না ফ্লোরে ঘুমাইতে হবে না।
-দাত কেলিয়ে হাসি দিয়ে বললাম জি আম্মু আব্বুরা আজকে তোমরা সবাই আমার সাথে ঘুমাবা। মজার মজার গল্প বলবো তোমাদের।
কি পিচ্চি পাচ্চারা ঘুমাতে যাও নি এখনো?
যাও যাও। তোমাদের ফুপির সাথে আমার একটু কাজ আছে। সাব্বির রুমে ঢুকতে ঢুকতে বললো।
-কি করবা তুমি ফুপির সাথে?
-প্রেম করবো তোমার ফুপির সাথে।।
ছয় বছর বয়সি বড় ভাইয়ার বড় মেয়েটা দোড়ে গিয়ে চিৎকার করে বলতে লাগলো “আম্মু…পাপা.. তোমরা আমাকে পাশের বাড়ির ছেলের সাথে প্রেম করতে দাও না আর এখন?
ফুপির ঘরে সাব্বির চাচ্চু ঢুকছে প্রেম করতে!!!
খালি আমার বেলায় সব দোষ!! ”
সাব্বির থম মেরে দাড়িয়ে আছে!!
বাকি সব পিচ্চি গুলো কে রুম থেকে বের করে দিলাম। বাইরে এখনো ঐটার চিৎকার শুনতে পাচ্ছি।
-শেষমেশ পিচ্চি মেয়েটাকেও তোর মতো বানাচ্ছিস তাই না?
কি উত্তর দিবো ভেবে পেলাম না। ধুরো, এতো ভেবে কি হবে। অনেক ভেবেও তো কিছুই করতে পারলাম না নিজের জীবনে !!
মুখের উপর ধাম করে বালিশ এসে পরলো। কিছু না বলে বালিশটা ফ্লোরে রেখে বারান্দায় এসে দাঁড়ালাম।
বাইরে কি সুন্দর ধবধবে সাদা চাঁদের আলো!!
মনে হচ্ছে সব জোছনা আজকেই নেমে শেষ হয়ে যাবে।এমন চাঁদের আলোয় আমি আর ফয়সাল সারারাত কথা বলতাম। আমি হলের বারান্দায় দাঁড়িয়ে আর ও আমাদের হলের পাশ দিয়ে যাওয়া রাস্তার উপর বসে কথা বলতো। মাএ কয়েক হাত দূরে দাঁড়িয়ে কথা বলতাম আমরা দুজন দুজনকে দেখে দেখে । মাঝে মধ্যে জোড়ে আই লাভ ইউ মুটকি বলে দৌড় দিতো যেনো কেউ চিনতে না পারে!!
বুকের ভেতর কেমন সব খালি খালি লাগছে। রুম থেকে এনে একটা সিগারেট ধরালাম। আগে ফয়সালকে রাগানোর জন্যে খেতাম মাঝে মধ্যে। কিন্তু আজকে রাগ করার মতো কেউ নেই।


চলবে ……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here