#ঝরা_পাতা🍂🍂
#Nishi_khatun
#পর্ব_২৭
অনুষ্ঠান শেষে সবাই সবার বাড়িতে ফিরে যাচ্ছে। দাদীমা আয়াজ সুমাইয়া সহ সবাই আয়াশদের ঢাকার বাড়িতে ফিরে যাচ্ছে।
অর্ণার মনের মাঝে দ্বিধা দ্বন্দ্ব কাজ করছে!সত্যি কি তার ঐ বাড়িতে ফিরে যাওয়া উচিৎ হবে?আয়াশ তো মোটেই তার কোনো কথা শুনতে রাজী নয়।অযথা তার সামনে গিয়ে সমস্যা সৃষ্টি করার কোনো মানে হয় না।এভাবে নিজের আত্মসম্মান বির্সজন দেওয়ার কোনো মানে হয় না।
অর্ণা সবার সাথে বাড়ি থেকে ঠিকি বাহিরে আসে তবে এবাড়ির কোনো গাড়িতে সে ওঠে না।সে তার লাগেজ নিয়ে একমনে হেঁটে বাড়ির বাহিরে চলে আসে।
কোথায় যাবে? কার কাছে যাবে?কোনো গন্তব্য সে খুঁজে পাচ্ছে না।আমি যে বড় একা মা মরে যাবার পর থেকে তো ঝরা পাতার মতো সবার অনাদরে বড় হয়েছি।
এখন আর কারো অবহেলা সহ্য করতে পারবো না।
নাহ জীবনের গল্পটা যে নতুন করে সাজানো হলো না!এই অর্ণা ছোটবেলা থেকে ঝরা পাতার মতো হয়ে রয়ে গেলো।
এসব ভাবতে ভাবতে অর্ণা যে কখন রাস্তায় মাঝ খানে চলে আসে তা নিজেও জানে না।হঠাৎ করে একটা গাড়ির সাথে ধাক্কা খেয়ে দূরে গিয়ে সিটকে পড়ে।
এদিকে রোহান আর আয়াজ হঠাৎ করে অর্ণার খোঁজ শুরু করে।বাড়ির কোনো গাড়িতে তার দেখা না পেয়ে দু জনে বাহিরে বেড়িয়ে পড়ে।সামনে কিছুদূর যাবার পর তারা দেখে রাস্তার একপাশে প্রচুর মানুষের ভিড়। তারা দু জন দ্রুত পা চালিয়ে সেখানে ভিড় ঠেলে সামনে গিয়ে দেখে অর্ণা রক্তাত্ত অবস্থা পড়ে আছে।
তাড়াতাড়ি করে দু জনে মিলে অর্ণাকে ধরাধরি করে হাসপাতালে নিয়ে আসে।ডাক্তার অর্ণার ক্ষত স্থানে ড্রেসিং করে ব্যান্ডস করে দেয়।অর্ণার শরীর থেকে প্রচুর রক্ত বয়ে গেছে তাই ওর রক্তের প্রয়োজন।রক্ত দিতে হবে তাহলে তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাবে।কিছুসময় পর একজন বাহিরের মানুষ এসে আড়ালে থেকে অর্ণা কে রক্ত দিয়ে চলে যায়।
আয়াজ আর রোহান রক্তের ব্যবস্থা করতে ছোটাছুটি শুরু করে দেয়।তখন একজন এসে বলে আপনাদের রোগির শরীরে রক্তের ব্যবস্থা হয়ে গেছে।
এমন সময় মমতা খান সেখানে এসে বলে,”এমন মেয়ের জন্য এতো ছোটাছুটি করার কি আছে।এই আপদ মরে গেলে আমার ছেলের জীবনটা বেঁচে যায়।”
রোহান বলে,”আম্মা আপনার ও আল্লাহ একটা মেয়ে দিয়েছে! আল্লাহ না কুরুক আপনার মেয়ের সাথে যদি এমন কিছু হতো তখন পারতেন এভাবে খারাপ দোয়া করতে?”
মরিয়ম খান বলে,”থাক নাতিজামাই তোমার বেশি কথা বলার দরকার নেই।জামাই বাড়ির জামাই এর মতো থাকলেই চলবে!”
সুমাইয়া এসে বলে,”দেখছেন দাদীমা কেমন ডেঞ্জারাস মেয়ে!আয়াশ ভাইয়ের good book এ থাকার জন্য কেমন এক্সিডেন্ট এর নাটক করছে।এ মেয়ে নিজের স্বার্থসাধনের জন্য নিজের কোনো ক্ষতি করতেও পিছপা হবে না।”
আয়াজ এসে সুমু কে বলে,”আর যদি একটাও উল্টাপাল্টা কথা বলছো তো তুমি সারাজীবনের জন্য আমাকে হারাবে কিন্তু। ”
সুমু আয়াজের কথায় একটু ভয় পেয়ে চুপচাপ পাথরের মতো দাঁড়িয়ে থাকো।
আয়াজ আর রোহান ছাড়া বাকি সবাই বাড়িতে ফিরে যায়।পরেরদিন রোহান ডাক্তারের সাথে কথা বলে জানতে পারে তেমন কোনে সমস্যা হয়নি একটু মাথায় আঘাত লেগেছে।কিছু মেডিসিন লিখে দিয়েছি নিয়মিত খাওয়ালে সুস্থ হয়ে যাবো।তারা তাদের রোগীকে বাসায় নিয়ে যেতে পারবে সমস্যা নেই।
আয়াজ আর রোহান অর্ণার কাছে গেলে অর্ণা চুপচাপ থাকে।আসলে অর্ণার কিছুই বলার নেই এখন এমন অসুস্থ অবস্থায় তার পক্ষে যে কোনো স্থানে যাওয়া সম্ভব না।তাই অর্ণা চুপচাপ নিরবতা পালন করছে।
আয়াজ বলে,”ভাবী হয়ে ঐ বাড়িতে যেতে সমস্যা হতে পারে কিন্তু আমার বোন হয়ে ভাইয়ের সাথে যেতে তো সমস্যা নেই?”
অর্ণা সেখানে হাউমাউ করে কান্না করে দেয়।
একটুপর তারা তিনজন বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।
‘
‘
খান বাড়ির দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে অর্ণা তবে আজ সে আর তারিফা নয়!অর্ণা নামে এবাড়িতে প্রবেশ করছে।
বাড়ির ভেতরে আসার পর কেউ অর্ণার সাথে কথা বলে না।সবাই অর্ণাকে দেখে মুখ ফিরিয়ে অন্যদিকে মুখ করে বসে থাকে।অর্ণা জানে কেউ তাকে দয়া দেখাতে আসবে না।তাই অযথা অন্যের সহানুভূতির আশায় বসে থাকার কোনো মানে হয় না।যার মনুষ্যত্ববোধ কাজ করবে সেই আসবে আমার সাথে দেখা করতে।
অর্ণা সোজা উপরে নিজের রুমে গিয়ে দরজা আশায় রেখে বাথরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে বিছানার উপর শুয়ে পড়ে।মনে মনে চিন্তা করতে থাকে।নিজের বিয়ে করা বর যখন অসুস্থ বউয়ের খবর রাখে না তখন তার বাড়ির আর অন্য সদস্যদের থেকে কি বা আশা করা যায়।এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে চোখ লেগে আসে সে নিজেও জানে না।
সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখে ওর বেডের পাশের টেবিলের উপর নানারকম ফলমূলাদি, দুধের গ্লাস, সকালের নাস্তা। এসব দেখে ভাবে এতো সকালে এতোকিছু কে রেখে গেছে?আয়াজ না রোহান? না রোহান তো কালকেই বাড়িতে ফিরে গেছে।আর আয়াজ বিনা অনুমিত তে আমার রুমে আসবে না
তাহলে কি আয়াশ এসেছিল?অর্ণা নিজেকে বলে,”তুই পাগল হয়ে গেছিস রে অর্ণা যে বর বউ অসুস্থ থাকলে খবর নেই না সে রেখে যাবে এসব তাই না?তুই এসব আকাশ কুসুম চিন্তা ভাবনা বাদ দে।”
অর্ণা এসব ভেবেই নিজে হাসতে থাকে।তারপর ফ্রেশ হয়ে এসে খাবার খেতে থাকে।এসব খাবার যার ইচ্ছা হয়ছে রেখে গেছে।এখন এসব খাবার খেয়ে সুস্থ হলেই হলো।এতো গোয়েন্দাগিরি করার দরকার নাই আমার।
সকালে নাস্তা করার পর আর রুমের বাহিরে যায় না অর্ণা। আসলে সবার সামনে যেতে ইচ্ছা করছে না।
এতো অবহেলা অপমান আর নিতে পারছিল না।সারাদিন রুমেই ছিলো।দুপুরবেলা বাড়ির কাজের মেয়ে এসে অর্ণার রুমে খাবার রেখে যায়।অর্ণা কিছু জিজ্ঞাস করার আগেই সে বাতাসে গতিতে চলে যায়।
অর্ণা বলে, “বাব্বাহ! রুমে বসে বসে ফ্রি তে খবারের ব্যবস্থা করে দিচ্ছে কে জানতে হচ্ছে তো?কার এতো দরদ হলো আমার প্রতি যে আমার খাবার সময় মতো রুমে দিয়ে যাচ্ছে! ”
রাতের বেলা অর্ণা চুপচাপ ছাদের এর কোণায় গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।তখন পেছনে অপজিট সাইডে থেকে আয়াশ বলে ওঠে,”তা আপনার শরীরে অবস্থা কেমন?”
অর্ণা আয়াশের কন্ঠ শুনে পিছরে ফিরে দেখে আয়াশ অন্ধকার আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।ছাদে লাইটিং করা তাই সেই আলোতে খুব স্পষ্ট আয়াশের বিষন্ন চেহারা দেখা যাচ্ছে।
অর্ণা মনে মনে কি মনে করে খুশি হয়ে মুচকি হেসে উওর দেয় আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো।
আয়াশ বলে,”কারো পুরো দুনিয়া অন্ধকার করে তুমি কি করে ভালো আছো?আচ্ছা ঘুরেফিরে তুমি আমার জীবনটা নষ্ট করতে এসেছো কেনো?কারো উপকার করা কি খুব খারাপ? আমি তোমার সাথে কোনো খারাপ কিছু করি নাই তারপর ও তুমি আমার সব কিছু উল্টাপাল্টা করে দিচ্ছ কেনো বলতে পারো?
অর্ণা বলে,”আমি আপনার জীবনটা নষ্ট করি নাই।দোষ তো আমার ভাগ্যের! যে বার বার আপনার সামনে এসেই সমাপ্তি হয়।এখানে আমার দোষ কোথায়? ”
আয়াশ বলে,”দোষ তোমার না! দোষ আমার।আমি বার বার নিজের জিদের বসে বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।এবারো জিদের বসে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।তবে আমাকে বিয়ের জন্য বাধ্য তুমি করেছিলে মিস অর্ণা ওহ সরি তারিফা।”
অর্ণা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে তা দেখে আয়াশ আবারো বলে,”একটা কাজ করো!আমাকে প্লিজ তোমার থেকে মুক্তি দাও।আর যাই হোক তোমার মতো মেয়ের সাথে সম্পর্ক রাখা সম্ভব না বলে আয়াশ চলে যায়।”
অর্ণা চুপচাপ দাঁড়িয়ে মুচকি হেসে বলে,”বিয়ের সম্পর্কটা পবিত্র সম্পর্ক! আমি চাইলেও তোমাকে মুক্তি দিতে পারবো না।আমি তোমার সব অভিমান ভেঙ্গে দিবো দেখে নিও।আমি চাই না অবেলায় গাছের পাতার মতো ঝরে যেতে।আমি আমার সম্পর্ক ঠিক করার সর্বচ্চো চেষ্টা করবো বাকিটা আল্লাহ ভরসা।”
(আমি এতোদিন ব্যস্ত ছিলাম,, আলহামদুলিল্লাহ্ এখন ফ্রি নিয়মিত গল্পটা দিতে চেষ্টা করবো)
‘
‘
‘#ঝরা_পাতা🍂🍂
#Nishi_khatun
#পর্ব_২৮
অর্ণা আজ নিজেকে সুন্দর মতো গুছিয়ে নিয়েছে।বেশকিছু দিন সে অসুস্থ থাকার জন্য রুমের বাহিরে আসে নাই।তবে আজ সে একদম সুস্থ তাই নিজের সব সম্পর্ক গুলো গুছিয়ে নিতে চেষ্টা করছে। কথায় আছে না আল্লাহ যদি সাহায্য করে সেখানে শয়তানের স্থান নেই।
রোহানের বাড়ি থেকে প্রস্তাব এসেছে।অরিন কে তারা তাদের বাড়িতে নিয়ে যাবে তবে এর মাঝ একটু ছোটখাটো অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
ননদের বিয়ের আয়োজন তো বাড়ির বউকে করতে হয়।
সব কিছু হঠাৎ করে হয়েছে জন্য বাড়ির মানুষেরা পিপারেশন নিতেও সময় পাচ্ছে না।সব আত্মীয় স্বজন এবাড়িতে চলে এসেছে।
আয়াশ আর অর্ণা দু জন দুইটা আলাদা রুমে থাকতো।এদিকে সুমু এখন এবাড়িতে থাকে।দাদীর আলাদা রুম।মেহমান দের জন্য এখন অর্ণা কে নিজের রুম ছাড়তে হচ্ছে।
অর্ণা মেহমান দের কোনো কিছু বুঝতে না দিয়ে চুপচাপ সব জিনিশ পএ নিয়ে আয়াশের রুমে এসে হাজির হয়।
হঠাৎ করে এমন সব জিনিশ পএ নিয়ে নিজের ঘরে অর্ণাকে প্রবেশ করতে দেখে একটু অবাক হয় আয়াশ।
আয়াশ অর্ণা দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাচিয়ে বলে,”বেপার কি?আমার রুমে কি মতলবে এসেছো? ”
আয়াশের কথা শুনে অর্ণা একগাল হেসে উওর দেয়,আসলে বিজ্ঞ ব্যক্তিরা বলেছে যে বরের থেকে বেশি দূরে থাকতে নাই।তাহলে বর অন্যের হয়ে যেতে পারে।”
আয়াশ বলে,”এমন কথা কোনো মানুষকে বলতে শুনেছি বলে তো মন হয় না।”
অর্ণা বলে,”ধুর আমিও না!ছাগলের কাছে আসছি ঘাস বরগা দিতে।”
আয়াশ বলে,”আজারে পেচাল বাদ দিয়ে আসল কথায় আসো ফাজিল মেয়ে।”
অর্ণা সব কিছু এক সাইডে রেখে আয়াশের সামনে এসে বলে,”আমরা বিবাহিত বর বউ!আমরা যদি দু জন আলাদা রুমে থাকি তাহলে মানুষেরা কি বলবে?
মান-সম্মান ত্যানাত্যানা হয়ে যাবে।!তাই নিজেদের বাড়ির সম্মান রক্ষা করতে আমি আপনার ঘাড়ে এসে পড়েছি!উপস্ সরি ঘরে এসেছি।”
আয়াশ বলে,”তোমার সাথে এক রুমে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব নয়!”
অর্ণা আয়াশ একদম কাছে গিয়ে বলে,”গ্রামের বাড়িতে এক রুমে এক বিছানাতে যখন ঘুমিয়ে ছিলেন তখন তো সমস্যা হয় নি?তাহলে আজ হঠাৎ এতো সমস্যা কেনো হচ্ছে আপনার ? ”
আয়াশ বলে,”সেদিন তো জানতাম না ঐ নামের মেয়েটা এতো বড় ধোঁকাবাজ। ”
অর্ণা বলে,”কোথায় কখন আমি আপনাকে ধোঁকা দিয়েছি? ”
আয়াশ বলে,”তুমি সুইসাইড কেনো করেছিলে?আর সুইসাইড যখন করলে ভালো কথা আমাকে কেনো দোষারোপ করলে?আমি কি তোমার সাথে কখনো খারাপ ব্যবহার করেছি?”
অর্ণা বলে,”আমি তো একবার ও বলি নাই আমার মৃত্যুর রহস্যের পিছনে আপনার হাত আছে।আর অযথা আমি আপনাকে দোষের ভাগীদার কেনো করতে যাবো?”
আয়াশ এবার অতীতের সেই বিয়ের দিনের কথা মনে করে,,,,,,,,
হুট করে তো রাগের মাথায় বিয়েটা করে ফেলেছি!
এখন বাড়ির মানুষের সামনে বউ নিয়ে কি করে যাবো।অরিন তো এভাবে হুট করে তার ভাইয়ের বউকে মেনে নিতে পারবে না।তার থেকে বড় কথা হলো আমার পরিবার এভাবে জোড় করে বিয়েটা মেনে নিবে না।কিন্তু কি করবো আমি।মেয়েটা কে তো আর এভাবে মাঝ রাস্তায় ফেলে রেখে চোরের মতো পালাতে পারি না।আমার মেয়েটার সাথে কথা বলা দরকার।আমার সব কিছু গুছিয়ে নেওয়ার জন্য সময়ের প্রয়োজন।
এমন সময় অর্ণা গাড়ি থেকে নেমে আয়াশের সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলে,”আপনি কি কোনো কিছু নিয়ে খুব টেনশনে আছেন?সমস্যা থাকলে বলতে পারেন।আমার হৃদয় অনেক শক্ত মাটির তৈরি কোনো কিছুতে কষ্ট পাবো না।”
আয়াশ বলে,”আমি তোমাকে বিয়ে করেছি!এ বিয়েটা আমি অস্বীকার করবো না!তবে তোমাকে আমার পরিবারের কাছে এভাবে হুট করে নিয়ে যেতে পারবো না।আমি চাই না আমার বউ আমার পরিবারের কাছে অপমানিত হোক।আমি তোমাকে সম্মানের সাথে বাড়িতে নিয়ে যেতে চাইছি।”
অর্ণা আয়াশের কথায় মুগ্ধ হয়ে যায়!হুট করে বিয়ে করলেও কি হবে!সে তার বিয়ে করা বউ কে এতোটা সম্মান করে ভাবতেই মনে তৃপ্তিদায়ক লাগে।তাহলে তাকে সাহায্য করা আমার কর্তব্য।
অর্ণা আয়াশ কে উদ্দেশ্য করে বলে,”আপনি আমার স্বামী! আমার উচিৎ আপনার আপদে বিপদে পাশে থাকা।”.
আয়াশ বলে,” আসলে তোমাকে কিছুদিন এই শহরে থাকতে হবে!আমি সময় সুযোগ করে পরিবারের সবার সাথে কথা বলে তোমাকে নিতে আসবো।ততোদিন তুমি আমার অপেক্ষায় থাকতে পারবে?”
অর্ণা হাসি মুখে উওর দেয় আমার সমস্যা নেই,আমার জন্য ভালো হবে!আমার অনার্সের ফাইনাল পরিক্ষা কমপ্লিট হয়ে যাবে।তা ছাড়া আমি আমার নিজের লেখাপড়ার পাশাপাশি ছোটখাটো জব করি!
তা দিয়ে নিজের খরচ করতে পারবো।
আপনার আমাকে নিয়ে টেনশন করতে হবে না।
আপনি চিন্তা মুক্ত হয়ে বাড়িতে ফিরে যান!
আমি আপনার জন্য অপেক্ষা করবো।
আয়াশ অর্ণার হাত ধরে বলে,”আমাকে এতোটা বোঝার জন্য তোমাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।”
অর্ণা বলে,”এভাবে ধন্যবাদ দিয়ে আমাকে লজ্জিত করবেন না প্লিজ। ”
আয়াশ বলে,”তাহলে চলো তোমাকে তোমার মামার বাড়িতে রেখে আসি।”
অর্ণা বলে,”নাহ আমি আর ঐ বাড়িতে ফিরে যাবো না।এখন নিজের যোগ্যতাতে থাকতে চাইছি।এতে আপনার সম্মানের উপর আঁচ আসবে না!”
আয়াশের এইটুকু সময়ে অর্ণার প্রতি কেমন যেনো একটা ভালোলাগা কাজ করতে শুরু করে দেয়।
আয়াশ এখনো অর্ণার চেহারা দেখে নাই!তবে অর্ণা চেহারা দেখাতে চাইলে আয়াশ বলে,”থাক না তোমার সৌন্দর্য আড়ালে যেদিন তোমাকে আপন করে নিতে পারবো সেদিন তোমার সৌন্দর্যের মাঝে ডুব দিবো।”
অর্ণা আয়াশের কথা শুনে লজ্জায় লাল হয়ে যায়।
এরপর আয়াশের সাথে অর্ণা তার কলেজে যায়।
আয়াশ অর্ণার কলেজে এসে কলেজ হোস্টেলে থাকার সব ব্যবসা করে দেয়। এরপর সে অর্ণা কাছে থেকে বিদায় নিয়ে নিজের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।
আয়াশ বাড়িতে ফিরে এসে সবাইকে সব কথা আর বলার সাহস করতে পারে না।এভাবে কয়েকদিন কেটে যায়।এরপর আয়াশ ভাবে বিয়ে যখন করছি তখন সবাইকে বলতে হবে। কিন্তু সে সময় হঠাৎ করে আয়াশের বিজনেস এর কাজে দেশের বাহিরে যেতে হয়।আয়াশ আর অর্ণার সাথে যোগাযোগ করতে পারে না।
এভাবে বেশ কয়েক মাস কেটে যায়।আয়াশ দেশে ফিরে সোজা অর্ণার খোঁজ করতে চলে যায়।সেখানে যাবার পর জানতে পারে অর্ণা সুইসাইড করে মারা গেছে। কেনো মারা গেছে তার কারণ স্বরুপ সবাই বলে,”ওর স্বামীর ধোঁকা দিছে তাই মরে গেছে।এটাই কারণ বেডা বিয়ে করে বউটাকে এভাবে হেলায় ফেলায় রেখে দিছে মরার জন্য!”
ওখানে এমন কথা শুনে আয়াশের চোখ দিয়ে এমনি এমনি পানি ঝরে পড়ে।এতোদিনে মেয়েটার সাথে যোগাযোগ না থাকলেও সে খুব বেশি মেয়েটা কে ভালোবেসে ফেলছে।কেনো বিনা দোষে অর্ণা তাকে দোষের ভাগীদার করে অপারে চরে গেছে।
সেদিন একবুক কষ্ট নিয়ে ফিরে আসে বাড়িতে।
অতীত থেকে বাহিরে এসে বলে,”তুমি তো বেঁচে আছো তাহলে আমাকে দোষী কেনো বানালে বলতে পারবে?”
অর্ণা খুশিতে চোখ দুটো পানিতে ভিজে গেছে এটা ভেবে যে আয়াশ তাকে ভালোবাসে।কিন্তু ছোট কিছু ভুলের জন্য আজ আয়াশ এতো কষ্ট পেয়েছে ভাবতেই খারাপ লাগছে তার।তবে অর্ণা মনে মনে বলে,”এতো সমস্যা যার জন্য এবার শাস্তি তাকে পেতে হবে।আমার জীবনের গল্পটা আমি নতুন করে সাজাবো এবার।”
আয়াশ আর কিছু না বলে সোজা রুমের বাহিরে চলে যায়।তার বুকের মাঝে ঝড় ওঠে!সে যে অর্ণার সামনে বেশি সময় দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না।বুকের বাম পাশে চিনচিন করে ওঠে।
অর্ণা আয়াশের মনে আবারো নিজের স্থান করার জন্য চেষ্টা শুরু করে দেয়।
(আজকে আয়াশের দিক দিয়ে সবটা ক্লিয়ার করে দিয়েছি।সে দায়ী না অর্ণা কষ্টের জন্য।এবার আপনাদের কেমন লাগছে সেই মন্তব্য প্রকাশ করেন।)
‘
‘
‘
চলবে……
চলবে……