###__ঝরে_যাওয়া_বেলীফুল__###
পর্ব_১১
লেখিকা : আফরোজা আক্তার
গাড়ি ছুটে চলছে চেনা পরিবেশে । সারা রাস্তা বেলী অনেক চুপচাপ করে আছে । ইরফান কত কিছুই সাধলো বেলীকে । কিছুই খেলো না মেয়েটা । শুধু তার আবদার ছিল জানালার পাশের সিট টাতে বসবে । সেখানে বসে সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত বাহিরের প্রকৃতি দেখছে সে । সন্ধ্যার পর হঠাৎ করেই ঘুমিয়ে পড়ে বেলী আর সারা রাস্তা ইরফানও বোবা মূর্তির মত বসে ছিল । কতক্ষণ আর মোবাইল চালানো যায় । তাই সে কিছুক্ষন মোবাইল চালায় আবার চুপ করে বসে থাকে । তাদের পাশের দুইটা সিটে এক জোড়া বয়স্ক দম্পতী বসে আছে । তারা কিছুক্ষণ পর পর ইরফান আর বেলীর দিকে তাকিয়ে থাকে । আবার নিজেদের মাঝে কথা বলে । এই ব্যাপারটা কয়েকবার ইরফান খেয়াল করলো । তার একটু অস্বস্তি হচ্ছে তবুও চুপ করে আছে কারণ তারা বয়স্ক মানুষ ।
বার বার তাকাচ্ছে বলে এইবার ইরফান নিজেই তাদের বলে উঠে ,
– জ্বি কিছু বলবেন ,,,,,?
ইরফানের কথায় বয়স্করা অনেকটা ভীতু হয়ে যায় । ইরফান তাদের চেহারা দেখেই বুঝে যায় ব্যাপারটা । তাই নিজেকে আরও রিলেক্স করে হাসি মুখে আবারও জিজ্ঞেস করে ,
– কিছু বলবেন ?
তখনই বৃদ্ধা মহিলা জবাব দেন ,
– না ভাই , কিছু বলুম না ।
ভাই বলাতে ইরফান ভেবে নেয় তাকে নাতির মত ভেবেছে । আর তারাও অনেকটাই বয়স্ক মানুষ । দাদা/নানা , দাদি/নানির মত আর কি । তাই ইরফানও মুচকি হেসে দেয় । ইরফানের হাসি দেখে বৃদ্ধা মহিলা জিজ্ঞেস করে ,
– ওয় কি তোমার বউ ?
– জ্বি ,
তারপর বয়স্ক মহিলা বয়স্ক পুরুষকে বললেন ,
– এক্কেরে আমাগো রাইসুলে আর রাইসুলের বউয়ের মত , তাই না ?
– হ , এক্কেরে রাইসুলের মত দেহা যায় ।
ইরফান সাইড থেকে সব শুনছিলো । তখন হালকা মুচকি হাসি দিয়ে সে মোবাইল টিপছে । তখনই বয়স্ক মহিলা বলে ,
– তোমার নাম কি ভাই ?
– আমার নাম ইরফান ,
– আমাগো নাতি আছে একটা , পুতের ঘরের নাতি নাম রাইসুল এক্কেরে তোমার মত দেহা যায় তারে । তারও এমন একটা বউ আছে ।
– ওহ ,
– আমাগো রাইসুলের বউয়ের নাম মনি তোমার বউয়ের নাম কি গো ভাই ?
– ওর নাম বেলী ।
– মাশাল্লাহ , অনেক সুন্দর নাম । তোমার বউরে কও এট্টু এইমিক্কা চাইতো , এট্টু দেহি ।
– ওইদিক ফিরে ঘুমাচ্ছে তো , উঠলে বলবো , কেমন ?
– আইচ্ছা ।
– তোমরা কই যাইবা ?
– কামরাঙ্গিরচর ,
– ওহ ,
– আপনারা যাবেন কোথায় ?
– আমরা এইতো পরের স্ট্যান্ডে নাইমা যামু
– ওহ আচ্ছা ।
ইরফানের বেশ ভালো লাগছে তাদের সাথে কথা বলে । অন্যদিকে বেলী তো ঘুমে ডুবে আছে । সে বলতেই পারবে না এইসব কিছু । ইরফান ওনাদের সাথে আবার কথায় মন দেয় ।
– তা , দাদার নাম কি ?
– গফুর মিয়া ,
– আর দাদুর নাম ?
– জয়তুন্নেসা ,
– ওহ অনেক সুন্দর নাম তো । তা কপোত কপোতী একা একা কোথায় যাচ্ছেন ?
– ঢাকাতে গেছিলাম নাতির বাসাত , ওই যে কইলাম রাইসুল , তার বাসাত গেছিলাম , এহন বাইত যাইতাছি পুতের কাছে ।
– ওহ , নাতি কি করে দাদা ?
– একটা কোম্পানিতে চাকরি করে ।
– ওহ ,
– আমার নাতি বউ মনি , সেও চাকরি করে আমার নাতির লগে । তারা পেরেম কইরা বিয়া করছে । নাতি বউ অনেক ভালা । আমাগোরে অনেক আদর করে ।
– ওহ , যাক ভালো । তা দাদু কিছু খাবেন ?
– নাহ ভাই কিছু খামু না । বাইত বউয়ে ভাত রাইন্দা রাখছে , বাইত যাইয়া ভাত খামু ।
– ওহ আচ্ছা ।
– আমরা তো আরেকটু ফরে নাইমা যামু তোমার বউরে উডাও তো ভাই , এট্টু দেহি তোমার বেলীফুলরে ।
বয়স্ক মহিলার কথা শুনে ইরফানের বুকের ভেতরটা হু হু করে উঠে । তার বেলীফুল , মহিলা অল্প ভাষাতেই অনেক কিছু বুঝিয়ে দিলেন । তার বেলীফুল , যেই বেলীফুলকে রোজ রোজ সে নিজেই নিংড়েছে অনেক । তার বেলীফুল যেই বেলীফুলকে কারণ ছাড়া অনেক কিছু সহ্য করতে হয়ে এবং এখনও হচ্ছে । হ্যাঁ , তার বেলীফুল , যে কিনা নিঃশব্দে বলে যায় হাজারো না বলা কথা । যা লিখতে বসলে উপন্যাসের পাতা শেষ হয়ে যাবে তবু কথা শেষ হবে না । হ্যাঁ এ তার বেলীফুল , শুধুই তার বেলীফুল । বেলীর ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে এক মনে এইসব ভেবে যাচ্ছিলো ইরফান । হঠাৎ করেই বয়স্ক মহিলা আবারও ডাক দেয় ,
– ও দাদুভাই , বউরে কি দেখাইবা না আমাগোরে ?
ওনার কথায় ধ্যান ভেঙে যায় ইরফানের । তারপর বেলীর দিকে হালকা ঝুকে আস্তে করে ডাক দেয় সে বেলীকে ।
– বেলী,,,,,, বেলী,,,,,,?
-…………
– এই বেলী,,,,,,,,,?
তারপর ইরফান আস্তে করে হালকা করে ধাক্কা দেয় বেলীকে । চমকে গিয়ে ঘুম থেকে উঠে যায় বেলী । বেলী ভাবছে হয়তো চলে আসছে তারা ।
– চলে আসছি ?
– আরে নাহ , পাশের সিটের দাদা দাদি র মত বয়স্ক মানুষরা আছে না ?
– হু ,
– তারা তোকে দেখতে চায় , তুই ওইদিকে মুখ ফিরে ঘুমাচ্ছিস , তারা সামনেই নেমে যাবে তাই নামার আগে তোকে দেখতে চায় ।
– ওহ ,
ফিস ফিস করে ইরফান বেলীকে বলে দেয় সবটা । ইরফানের কথায় বেলী নিজে ফ্রী হয়ে তাদের দিকে তাকায় । হাসি মুখে অত্যন্ত ভদ্রতার সাথে সালাম দেয় ওনাদের ।
– আসসালামু আলাইকুম ,
– ওয়ালাইকুম আসসালাম ,
এইডা নি তোমার বেলীফুল দাদু ভাই ?
বয়স্ক মহিলার কথা শুনে স্তব্ধ হয়ে যায় বেলী । একবার ইরফানের দিকে তাকায় সে । এমতাবস্থায় ইরফান কি বলবে , ভেবে পাচ্ছে না । তবুও হু সূচক মাথা নাড়ে ।
– বাহ , বেশ বেশ । আমাগো মনির মত হের বউডা , তাই না ?
– হ ,
– কি গো দিদিভাই , এত ঘুমাও কা ?
– বাসে উঠলে আমার ঘুম আসে দাদু ,
– ওহ , তোমার জামাইডা মাশাল্লাহ এক্কেরে সাবের বাচ্চার লাহান ।
– দোয়া করিয়েন দাদু ।
– তুমিও এক্কেরে পরীর লাহান । দুজনেরে অনেক সুন্দর মানাইছে ।
– হ আমাগো রাইসুল আর মনির মতন ।
– রাইসুল,,,,,,মনি,,,,,,,?
– রাইসুল ওনাদের নাতি আর মনি নাতি বউ ।
ইরফানের কথায় তখন পুরোটা বুঝে যায় বেলী । তারপর বেশ কিছুক্ষন ওরা কথা বলে । একটা সময় স্ট্যান্ডে বয়স্ক মানুষ দুজন নেমে পড়ে । স্ট্যান্ডে ওনাদের জন্যে ওনার ছেলে অপেক্ষা করে দাঁড়িয়ে ছিলেন , বাস থেকে নামার পর তিনিই এনাদের নিয়ে যান । দুজনের চেহারা মাশা-আল্লাহ নুরানি চেহারা । একদম মায়া মায়া , যাদের দেখলে কলিজাটাও ঠান্ডা হয়ে যায় । হাসি তো একদম চাঁদের আলোর মত । বাস আবার ছেড়ে দেয় । বেলীর এখন আর ঘুম আসছে না বাহিরের প্রকৃতির ঘন অন্ধকার দেখছে সে । এই কালো অন্ধকারের মত এখন তার জীবনটা । চারপাশে শুধু কালো ছায়া ।
রাত প্রায় ৮ টা বেজে যায় বেলী আর ইরফান পৌঁছাতে পৌঁছাতে । ইরফান তার বাবার সাথে কথা বলে সোজা বেলীকে নিয়ে বেলীদের বাড়িতে চলে যায় । বেলী বাড়িতে ঢুকার সাথে সাথে বেলীর মা দৌড়ে এসে নিজের মেয়েকে জড়িয়ে ধরেন । মাকে এতদিন পর পেয়ে মেয়েও মা বলে চিৎকার দিয়ে উঠে । ইরফান যে সাথে আসে তা তারা ভুলেই গেছে । মেয়ে মাকে জড়িয়ে কেঁদে দেয় আর মাও মেয়েকে পেয়ে নিজের বুক ঠান্ডা করে ।
মা মেয়ের কান্নায় স্তব্ধ ইরফান চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে পাশে । কিছুক্ষণ পর বেলীর মা জামাই মানে ইরফানকে দেখে হাসি দিয়ে কথা বলে । ইরফানের বাবা বার বার বলেছিল বেলীর মায়ের পায়ে হাত দিতে যাতে সালাম করে সে । তাই বেলীর মায়ের পায়ে হাত দিয়ে সালাম করে ইরফান ।
– কেমন আছ বাজান ?
– ভালো , আপনি
– আর আমার থাহা , আইও ঘরে আইও , বেলীফুল জামাইরে নিয়া আয় ।
বাড়ির উঠানে এসে বেলী খানিকটা অবাক হয়ে যায় । উঠানের এক কোণায় দুইজন বাবুর্চি রান্না করার জন্যে সব ঠিকঠাক করছে । আর দুইজন মহিলা মশলা পিষে দিচ্ছে । গ্রামের আরও কয়েকজন মহিলারাও সেখানে ছিলেন । সবাই বেলীকে দেখে হাসি খুশি ভাবে কথা বলছে । বেলীর মা তখন ঘরে ছিল , বেলী ইরফানকে নিয়ে ঘরে যায় আর নিজে আগে যেই রুমে থাকতো ওই রুমে ইরফানকে নিয়ে গিয়ে বসায় । তারপর বোরখা আর হিজাব খুলে গায়ের ওড়নাটা দুই পেচ দিয়ে পরে মায়ের কাছে আসে ।
– মা , এইসব কি , এত রান্না কিসের ?
– কাইলকা তোর বাবার মিলাদ , তাই ২০ জন হুজুর আর গেরামের কয়েকজন খাওয়াইবো ।
– কে খাওয়াইবো ,
– আর কে তোর জামাই ,
– কিহ !
– হ , বেয়াই সাবে আইজ্জা বেহানে আইছিল , আইয়া কইলো শুক্কুরবারের সব খরচ জামাই দিছে , বড় কইরা মিলাদ দিতে , আমি তো ভাবছিলাম ৫ জন হুজুর খাওয়ামু , আমার যেমন ওসাড় তেমনই তো করুম । মানুষটায় তো আমারে একলা ভাসাইয়া থুইয়া গেছে গা ।
এই বলে বেলীর মা কেঁদে দেয় । আর তার সাথে বেলীও । অন্যদিকে ইরফান বেলীর রুমের মধ্যে বসে আছে । বেশ গুছানো রুমটা । বিয়ের পর এই প্রথমে এইভাবে বেলীদের ঘরে আসছে । এর আগে একদিন বিয়েতে এসেছিলো কিন্তু তখন উঠানেই বসা ছিল সে । বেলীদের টিনের চৌকাঠ করা ঘর , কিন্তু এই রুমটা বেশ গুছানো । হয়তো বেলী আসবে শুনে বেলীর মা গুছিয়ে রাখছে । ইরফান বেশ সুচিবায়ু সম্পন্ন মানুষ । ময়লা , ধুলাবালি কিছুই তার পছন্দ না । কিন্তু এইখানে একদম তার বিপরীত । একটু ময়লাও খুজে পাবে না সে এই রুমে । কিছুক্ষণ পর একটা ট্রে তে করে শরবত , আপেল মালটা নিয়ে আসে বেলী । বেলীকে দেখে ইরফান তাকিয়ে থাকে তার মুখের দিকে , চোখ মুখ আবারও ফুলে আছে তার । নিশ্চয়ই ভেতর থেকে কান্না করে আসছে । ইরফান কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে মুখের দিকে , তারপর বলে ,
– কান্না করছিস ?
– উহু ,
– চোখ মুখ এমন যে ?
– এমনিতেই , মা দিছে খেয়ে নেন ।
– তুই খাবি না ?
– নাহ ,
– ওহ তুই তো আবার হাওয়া খাস ,
– অনেক ধন্যবাদ আপনারে , আমার বাবার প্রথম মৃত্যু বার্ষিকী এইভাবে পালন করলেন , এত বড় করে মিলাদ দিলেন ।
– ইংলিশে একটা শব্দ আছে , ফর্মালিটি । জানিস ?
– হু ,
– অর্থ বুঝিস ?
– হু ,
– করতে আসিস না আমার সাথে ।
– একটা কথা বলতাম ?
– বল ,
– দুইদিন থাকবো তো , আপনি সবার সামনে আমারে তুমি বইলা কথা বইলেন ।
– দুই দিনের জন্যে বলতে চাই নাই , সারাজীবনের জন্যে চেয়েছিলাম , ঢাকায় কি বলছিলি , ভুলে গেছিস ?
– আপনি এইদিকে তুমি করে ডাকিয়েন নাইলে মা দুঃখ পাবে ।
এইবার ইরফানের মেজাজ খারাপ করে । বিছানা থেকে হুট করেই উঠে বেলীর হাতটা মুচড়ে দেয় । ব্যাথা পাওয়ার পরেও দাত মুখ খিটে আছে । ইরফান বেলীকে একদম নিজের সাথে মিশিয়ে নেয় । বেলী ব্যাথা পাওয়ার পরেও টলমলে চোখে ইরফানের দিকে চেয়ে আছে । পানিগুলো তার চোখের কোণায় চলে আসছে । হয়তো আরেকটু হলে গাল বেয়ে পড়ে যাবে । ইরফান বেলীর একদম কাছে চলে যায় ।
– যদি ডাকি , তাহলে দুই দিনের জন্যে না , যতদিন বেঁচে থাকবি বা আমি বেঁচে থাকবো ততদিন ডাকবো । এর পরে যদি শুনি একটু আওয়াজ করছিস এই ব্যাপারে তখন দেখবি আমি কতটা খারাপ হই ।
– কতটা খারাপ ? লাথি ঘুষি তো পুরাতন ওষুধ আমার জন্যে । তাহলে কি এইবার শেষ ওষুধটা রাখছেন আমার জন্যে ?
-…………
– চিন্তায় পড়ে গেছেন ? আপনার কাছে আমার জন্যে হয়তো শেষ ওষুধটা মৃত্যু । তাই না ?
আজ কেন জানি বেলী সাহস করে এইভাবে কথা গুলো বলে ফেলল । কথাটা বলে বেলীও বেক্কল হয়ে গেছে । বুঝতে পারে বেলীর গাল বেয়ে চোখের পানিগুলো ঝরে যাচ্ছে । ঠিক বাগানের গাছে ফোঁটা বেলীফুলের মত । ইরফান বেলীর এই কথাটা শুনে বেলীর হাতটা ছেড়ে দেয় । হাতটা ছাড়ার পর বেলী মনে হয় তার জানটা ফিরে পায় । বেলী চলে যেতে নিলে ইরফান আবারও বেলীর হাতটা টান দিয়ে নিজের কাছে নিয়ে আসে । তারপর কেন জানি জড়িয়ে ধরে বেলীকে । বেলী জোড়াজুড়ি করে নাই , কারণ সে জানে এখন জোড়াজুড়ি করেও লাভ নেই , জোড়াজুড়ি করলে সে আরও বেশি করে করবে । তাই চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে । একবারের জন্যে ইরফানকে ধরেও নি বেলী ।
কিছুক্ষণ পর ইরফান নিজেই ছেড়ে দেয় বেলীকে । নিজেকে ইরফানের থেকে মুক্ত পেয়ে ইরফানের দিকে চেয়ে থাকে বেলী । তারপর নিজেই বলে উঠে ,
– মায়া বাড়াইয়েন না , অনেক কষ্ট হবে আমার পরে । মায়া বাড়াইয়েন না , না হয় আমি আপনাকে ছাড়া বেঁচে থেকেও থাকবো মরা হয়ে ।
কথাটা বলে বেলী দ্রুত রুম থেকে বেরিয়ে যায় । আর ইরফান সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকে মূর্তির ন্যায়ে । বেলীর কথাটাও ন্যায় সংগত । ইরফান ক্ষনিকের মায়ায় বাধতে চায় বেলীকে , যেদিকে পরবর্তীতে কি হবে তা বেলী এবং ইরফান দুজনেরই ভালো মত জানা । তাই হয়তো না পারতে বেলী আজ মায়ার কথাটা বলে ফেললো ।
ইরফানের এইসব ভাবনার মাঝেই হঠাৎ তার মোবাইল ফোন বাজতে শুরু করে । ইরফান মোবাইলটা হাতে নেয় । আর দেখে মোবাইলের এক পাশে উঠে আছে Reject মাঝে আছে Slide up to answer আর উপর তার উপর একটা নাম ভেসে উঠেছে । নামটা হচ্ছে Rubi .
.
.
চলবে…………….
[ বিঃদ্রঃ চলার পথে হাজারো মানুষের সাথে দেখা হয় কথা হয় । কেউ কেউ আবার ক্ষনিকের দেখা হয়ে যাওয়ার মাঝেও অনেক কিছু শিখিয়ে দিয়ে যায় । তেমনি দুটি চরিত্র গফুর মিয়া আর জয়তুন্নেসা । বয়সের সন্ধিক্ষণে এসেও আজ তারা একে অপরের সাথে যুক্ত । আর তাদের নাতি সেও হয়তো ইরফানের মতই একজন তবে সম্পূর্ণ আলাদা । ‘তোমার বেলীফুল ‘ উক্তিটি দিয়ে ইরফানকে যা বুঝিয়েছেন সেটার মর্ম ইরফান কতটুকু বুঝেছে আমার জানা নেই , তবে ভালোবাসার একটা সঠিক সময় এবং সঠিক গন্ডি থাকে । দুই নৌকায় কি পা দিয়ে কখনো মানুষ সামনে এগুতে পেরেছে , পারে নি । হয়তো সাময়িকী ভাবে এগিয়েছে । কিন্তু এক সময় সঠিক গন্তব্যে পৌঁছানোর আগেই হয়তো নৌকা ডুবিতে প্রাণ হারাতে হয় । আবেগের বশে কাছে টেনে বিবেকের তাড়নায় আবার ছুড়ে ফেলে দেয়াটা হয়তো খুব সহজ কিন্তু , যাকে একবার কাছে টেনে আবার ছুড়ে ফেলা হচ্ছে সেই মানুষটা কিভাবে বেঁচে থাকতে পারে ? বেঁচে থাকা যায় কি ? আমার জানা মতে যায় না , বার বার এত কষ্ট এত অপমান এত লাঞ্চনা সহ্য করে বেঁচে থাকা হয়তো যায় কিন্তু জীবন্ত লাশ হয়ে । বরাবরের মতই প্রশ্ন হাজার কিন্তু উত্তরের খাতাটা আজও শূন্য । হাজারের মাঝে একজন বেলীর উত্তরের খাতাটা এই সেই উত্তরের খাতা যার ফলাফলটা হয় বরাবরের মতই শূন্য । আমার কথা গুলো দ্বারা কারো মনে কষ্ট আসলে আমি অত্যন্ত দুঃখিত ]