#ডাকপাড়ি
#পর্ব_৩৯
#আফনান_লারা
________
পূর্ণতা ফারাজের এক পাশে দাঁড়িয়ে বারবার নাক টানছিল।ভেতরের চাপা কষ্টটা একটু হলেও কমেছে।সেই বিকেল থেকেই তো কেঁদে আসছে সে,এবার কমার কথা।এরপর মায়ের কথা মাথায় আসলেই আবার কাঁদবে।
ফারাজ ও চুপ করে ছিল।
তারা দাদাজানদের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে পাক্কা দশ মিনিট হলো তাও ওনারা কিছুই বলছেননা।ধৈর্য্যের পরীক্ষা নেয়া দাদাজানের পুরনো অভ্যাস সেটা ফারাজ জানে কিন্তু পূর্ণতা জানেনা।তাই সে নড়চড় করছিল,বিরক্তি দেখাচ্ছিল।সেসময় দাদাজান মুখ খুললেন।হাসিমাখা মুখে বললেন অরিন্দমের এই বিয়েতে কোনো আপত্তি নাই,
এবার পূর্ণতার কিছু বলার থাকলে বলতে পারে।
পূর্ণতা আশ্চর্য হয়ে গেছে দাদাজানের কথা শুনে। আসলেই কি বাবা রাজি?নিশ্চিত হবার জন্য সে একবার বাবার মুখের দিকে তাকায়।বাবাও মুচকি হেসে চেয়ে আছেন।
পূর্ণতা বুঝে গেছে বাবাকে বাহানা বানিয়ে আর কোনো কাজ হবেনা।তাই সে নিজেকে শক্ত করে গলার স্বর উঁচু করে বলে,’বাবার মতের কথা বাদ দিলাম।পাত্রী হিসেবে আমারও তো মত লাগবে।আমার মত হলো আমি ওনাকে বিয়ে করতে চাইনা।আর আপনারা কেমন মানুষ বলতে পারেন??আজকে আমি জানতে পেরেছি আমার মা মারা গেছেন আর আজকেই আপনারা বিয়ে নিয়ে লেগে আছেন।আমি এর আগেও একা ছিলাম, নিজের খরচ নিজে চালাতে পারার ক্ষমতা আমার আছে।ফের কেউ আমাকে জোরাজুরি করলে আমি বাড়ি ছেড়ে চলে যাবো’
সবাই হা করে পূর্ণার কথা শুনেছে।ফারাজ নিজেও অবাক।দাদাজান রাগে কটমট করছিলেন,ঠিক সেসময় আজিজ খান বললেন,’মাইয়া তুমি জানো কি ঠুকড়াচ্ছো??ফারাজের মতন পোলা পাইবা তুমি জীবনে?’
আজিজ খানের কথা শুনে মানিক সাহেব বললেন,’পূর্ণতার সাথে আমি একমত।মেয়ে নিজেই যখন বিয়েতে রাজিনা তখন আমরা বড়রা কেন জোর করছি?এখন কি সেই জামানা আছে যে বাসর ঘরে গিয়ে বর বউয়ের মুখ দেখবে??এই যুগে এসে যদি আপনারা এই ধারণা পোষণ করেন আপনাদের থেকে আর কি আশা করবো’
সবাই বিয়ের বিপক্ষ দেখে বেলায়েত হোসেন উঠে চলে গেছেন।তার দেখাদেখি আজিজ খান ও চলে গেলেন।রয়ে গেলো অরিন্দম আর মানিক সাহেবের আসন।তারা দুজন দুজনের দিকে একবার আড় চোখে তাকিয়ে তারাও চলে গেছেন।সবার শেষে রইলো পূর্ণতা আর ফারাজ।পূর্ণতা তখনও তার মায়ের কথা ভাবছিল।ফারাজ ওকে কিছু না বলে চলে গেছে।
পূর্ণতা কিছু না বললে আজ ফারাজই বলতো।বিয়েটা সারাজীবনের ব্যাপার।এভাবে বড়দের জোরাজুরিতে কেন পড়বে তারা।পূর্ণতা ভালই বলেছে।সে না বললে আজ এগুলো ফারাজ নিজেই বলে দিতো।মেয়েটার মা মারা গেছে সেটা না ভেবে সবাই বিয়ে নিয়ে পড়ে আছে, বয়স কি চলে যাচ্ছে?’
পূর্ণতা তার রুমে ফিরে দরজা বন্ধ করে বসে পড়ে মেঝেতে।মাকে শেষবার সে দেখেছিল খানিকটা সুস্থ।যাবার পথে ওর মাথায় হাত রেখে তিনি বলেছিলেন জলদি তুইও চলে আসিস মা!!
এরপর আর কিছু বলে নাই।এটাই যে তার বলা শেষ কথা হবে কে জানতো!!
নিয়তি এতটা নিষ্ঠুর কেন!কেন আমরা আমাদের সব চাইতে প্রিয় মানুষটাকে সবার আগে হারাই!কেন তাকে নিয়ে আরও কটা বছর সুখে শান্তিতে থাকা যায়না!!তাহলে তারা প্রিয় কেন হয়!!এরপর থেকে মানুষকে প্রিয় বানাতেও ভয় হবে।কারণ আমরা তো জানি প্রিয় মানেই সে হারিয়ে যাবে!
রাতের এগারোটা অবধি পূর্ণতা ওভাবেই বসে ছিল।সবার খাওয়া শেষে অরিন্দম নিজে খেয়ে পূর্ণতার জন্য খাবার এবে অনেকবার নক করেছেন দরজায় কিন্তু সে দরজা খোলেনি বলে তিনি চলে গেছিলেন।ওকে একা থাকতে দেয়া উচিত বলে মনে করলেন।
পূর্ণতা বারোটার সময় দরজা খুললো।দুপুরে যে ভাত খেয়েছিল এরপর আর কিছু খাওয়া হয়নি।খুব জোর খিধে পেয়েছে তার।পুরো বাড়ির আলো নেভানো।সবাই সবার রুমে।পূর্ণতা অন্ধকারে হেঁটে যাচ্ছিল সিঁড়ির দিকে।যাবার পথে দেখলো ফারাজের রুমে হালকা করে আলো জ্বলে।সেই আলোটা সিঁড়ির কোণ ঘেঁষে নিচ তলা অবধি গেছে।পূর্ণতার তাই নামতে অসুবিধা হয়নি।নিচে নেমে ফ্রিজ খুলে সে একটা জুসের বোতল আর কেক এক পিস নিয়ে আবার চলে আসলো উপরে।তখনও ফারাজের রুমে আলো জ্বলছিল।পূর্ণতার ইচ্ছা হলো একবার দেখার।
পা টিপে টিপে কাছে এসে তাকাতেই সে দেখে ফারাজ খুব মনযোগ দিয়ে একটা ছবি আঁকছে।শুরুতে পূর্ণতা ভেবেছিল প্রতিমার ছবি হতে পারে কিন্তু ফারাজ তাতে রঙের এক টান দিতেই পূর্ণতার কাছে ছবিটা পরিষ্কার হয়ে গেলো।ছবিটা ফারাজদের বাগানের একটা ফুল গাছের।ঔ ফুল গাছটা দেখতে খুব সুন্দর হলেও তার সুবাস অতি জঘন্য!!সেই গাছটাই ফারাজ আঁকছে।
পূর্ণতা আর আওয়াজ করেনি।চুপচাপ চলে এসেছে নিজের রুমে।
সে চেয়েছিল কোনো আওয়াজ যাতে না হয় তাও অন্ধকারে দেয়ালের সাথে কপালে খুব জোরে একটা ধাক্কা খেলো।দেয়ালটা ছিল ফারাজের রুমের।আওয়াজটা সে পেয়েই উঠে উঁকি দিলো বাইরে,হাতে টর্চ অন করা।সে ভেবেছিল চোর ডাকাত কিছু কিনা।কিন্তু উঁকি দিতেই দেখলো লম্বা বেনি হেলানো সুতির কাপড়ের তরুণী দ্রুত তার রুমে চলে যাচ্ছে এক হাত দিয়ে কপাল ঘঁষতে ঘঁষতে।
পূর্ণতাকে দেখে ফারাজ টর্চ অফ করে আবার নিজের রুমে ফেরে।
ও যে রাতে খিধায় খাবার খুঁজতে বের হবে এটা ফারাজ জানতো।
————
আনাফ শুয়ে শুয়ে গান শুনছে। খুব ইচ্ছে করছিল একবার গিয়ে সারথির সাথে বসে গল্প করতে কিন্তু তার পরেও ওর মনে হয় সারথিকে সময় দেয়া উচিত।এভাবে ওর সামনে বসে থাকলে সে হয়ত সহজ বোধ করবেনা।
গান শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়ে আনাফ।সারথি জেগে ছিল।তার কিছুতেই ঘুম আসছেনা।রুম থেকে বেরিয়ে আন্দাজ করে আনাফের রুমের বাইরে এসে দাঁড়ায় সে।দরজা খোলা বোঝা যাচ্ছে কারণ ভেতর থেকে ফ্যানের বাতাস এসে গায়ে লাগছে।
সারথি এক পা এক পা করে এগোলো।একটা গান চলছে আনাফের ফোনে।সারথি কাছে গিয়ে দাঁড়িয়েছে তাও আনাফের কোনো সাড়া নেই দেখে সারথি বুঝলো আনাফ বুঝি ঘুমিয়ে গেলো।তাই হাত বাড়িয়ে ফোন হাতে নেয় সে।অনেকক্ষণ হাত চালিয়ে অবশেষে গানটা সে বন্ধ করতে পেরেছে।মুচকি হেসে ফোনটা আগের জায়গায় রেখে সে আবার চলে যাচ্ছিলো।হঠাৎ দরজায় হাত রাখতেই মনে হলো নাকে ফুলের ঘ্রাণ লাগলো তীব্র ভাবে।সারথি দরজায় হাতালো কিছুক্ষণ। একটা শার্ট ঝুলছিল তাতে, শার্টটা হাতে নিতেই ফুলের ঘ্রাণটা আরও তীব্র হয়ে গেলো।সারথি পকেট থেকে ফুলটা বের করে অবাক হয়ে আছে।এই ঘ্রাণ সে চেনে।আজই তো পূর্ণতা ওকে মাথায় পরিয়ে দিয়েছিল এটা।পানিতে নামার পর থেকে ফুলটা কই গেলো তার হিসেব পায়নি সারথি।তার মানে ফুলটা আনাফ নিয়েছিল। সারথি আরও একবার হাসলো।শার্টটা আগের জায়গায় রেখে সে বের হয়ে গেলো।
চুপচাপ নিজের রুমে এসে দীর্ঘশ্বাস নেয়।
প্রত্যেকটা মানুষের জীবনে একদিন একটা সঠিক মানুষ আসে। কারোর শুরুতেই আসে আর কারোর অনেক দেরিতে।
কেউ নিজের অজান্তেই সঠিক মানুষটা পেয়ে যায় আর কেউ জীবনের আশা ছেড়ে দেয়ার সময় পায়।
“আনাফ নামের ছেলেটা শুরুতেই আসতে পারতোনা আমার জীবনে?যখন আমার বিয়ে হয়নি।বিয়ের কথা চলছিল পরিবারে।
তখনও তো তিনি চাকরি করতেন।ডাক্তারি করেন ৪ বছর হলো তার।তাহলে তখন কি তার সাথে আমার দেখা হলে হতোনা??আমার জীবনটা এই সিঁড়িতে এসে আজ অন্যরকম হতো।আমি তার বেডরুমে বসে হাসি হাসি কত কি ভাবতাম।
ফিউচার প্ল্যান করতাম,মাঝে মাঝে তার হাতটা ধরে কত কি কল্পনা করতাম তাকে ঘুমন্ত রেখে।অথচ আমার জীবনটা সেরকম হয়নি।আমার শুরুতেই একটা ভুল মানুষের সাথে দেখা হয়েছে।সে মনমত আমায় কষ্ট দিয়ে শেষে হাতটাই ছেড়ে দিয়েছে।ঠিক সেইসময় আমি আনাফকে পেলাম।কেন পেলাম!আগে কেন পায়নি?আমার জীবনে যে আর কিছুই নেই!!!
একটা পুরুষের সাথে আমি রাত কাটিয়েছি।সে আমায় হয়ত ছুঁয়ে দেখেনি কিন্তু কয়েকটা মাস একসাথে থাকা তো থাকলাম!!!
আনাফ তো অবিবাহিত! সে জেনেশুনে কেন!
এটা ঠিক যে সজীব আমায় ছোঁয়নি তারপরেও আমি তো বিবাহিত। আনাফ তো আরও ভাল কিছুর প্রাপ্য।আমার মতন দূর্বল একটা মেয়ে কেন তার ভাগ্যে জুটবে!!
——-
সজীব ফুটপাতে বসে আছেৃ সারথিকে কোথাও সে পায়নি।কি করে বাসায় ফিরবে এসবই ভাবছিল কিন্তু কিছুক্ষণ আগে সায়না কাকি কল করে জানালেন সারথি নাকি তার বান্ধবীর বাসায়।
“ওর আমার প্রতি অনীহার কারণ আমি জানি আর তাই কিছুই করতে পারছিনা।সে অধিকারটা আমার নেই।আমি নিজেই হারিয়ে ফেলেছি।সারথিকে অনেক অনেক বেশি কষ্ট দিয়েছি আমি। একবার তার কাছে মাফ চাইবো চলে যাবার আগে।
লেভেনের কথা মনে পড়ছে।ও হয়ত পাগল হয়ে যাচ্ছে আমাকে কোথাও না পেয়ে!না জানি আবার বাংলাদেশ চলে আসে!!
উঠে দাঁড়িয়ে সজীব একটা সিএনজি নিলো।সোজা বাসায় যাবে।তার নিজের বাসায়।যেটা সারথির নামে করে দিয়েছে সেটাতে গিয়ে একটু রেস্ট নেবে।কাল সকালে সারথির কাছে গিয়ে ওর সাথে কথা বলে সোজা মালয়েশিয়া চলে যাবে।এসব ভেবে সে যাচ্ছে।মাকে জানায়নি সে কোথায়।ফোনটাও অকেজো!! সিম ছাড়া ফোন আর মাঝি ছাড়া নৌকা একই!!
বাসায় ফিরে কোন ফ্লোরে সজীব থাকতো সেটাই ভুলে গেছে।ডান পাশে ফ্ল্যাটটা ওদের নাকি বামের টা সেটা নিয়ে কনফিউজড হয়ে একটাতে কলিংবেল চেপে দিলো সে।সেটা ছিল আনাফদের ফ্ল্যাট।ওর মা এসে দরজা খুললেন হাই তুলতে তুলতে।সজীবকে দেখে ব্রু কুঁচকে জানতে চাইলেন কি চাই।সজীব কিছু বলার আগেই ওর চোখ গেলো ওনার পেছনে দেয়ালে টাঙানো আনাফের একটা বিরাট ছবি।এই ছেলেটাকেই তো সে আজ সারথির সাথে দেখেছিল।তার মানে কি সারথি আর ছেলেটা একে অপরকে চেনে?
আনাফের ছবি অবাক হয়ে দেখছে দেখে ওর মা সজীবকে বললেন,’ও আমার ছেলে।আনাফ।তোমার কি কিছু লাগবে বাবা?’
‘না আসলে আমি ভুল ফ্ল্যাটে চলে এসেছি।আমি ঐটাতে থাকি’
‘ওহ তুমি সারথিদের বাসার?সারথির কি হও তুমি?’
‘হাসবেন্ড।’
‘তাই নাকি! আসো আসো ভোতরে আসো, বলো কি খাবে?’
‘আন্টি আরেকদিন আসবো।আজ আমার কাজ আছে’
এই কথা বলে সজীব চলে এসেছে।মাথার ভেতর সব গুলিয়ে আসছে। আনাফ আর সারথি কি আগ থেকেই একে অপরকে চেনে?নয়ত আনাফ কি করে হাবিজাবি বাসার ঠিকানা জানলো??
————-
পূর্ণতা খুব ভোরে জামাকাপড় সব গুছিয়ে বাবা যে রুমে ঘুমিয়েছেন সে রুমে এসে বাবাকে জাগিয়ে তুলে বললো পালাতে। সে আর এই বাড়িতে থাকবেনা, ফারাজকে বিয়ে করবেনা।সে চায় সে এবং তার বাবা অনেকদূর চলে যাবে।
অরিন্দম পূর্ণতার এই অদ্ভুত পরিকল্পনার কথা শুনে ঘুম ঘুম চোখে শুরুতে গুলিয়ে গেছিলেন সব কিছুতে।পরে নিজেকে সামলে চোখ মুখ মুছে সোজা হয়ে বসে বললেন,’এসব কি কথা পূর্ণা??বড়দের কথা মানতে হয়।ছেলেমানুষি বন্ধ কর’
‘ছেলেমানুষি?? বিয়েটা তো আমার মতেই হওয়া উচিত।তুমিও এই কথা বলছো?’
অরিন্দম পূর্ণতার হাত ধরে বসালেন পাশে তারপর বললেন,’দেখ মা।তোর মা নেই।কদিন পর হয়ত আমিও চলে যাব।তোকে দেখার জন্য শুধু যে তোর স্বামী থাকবে তা ভেবে তো মরতে পারি না।একটা বড় বাড়িতে তোকে বিয়ে দিব সেটা আমার অনেক আগের ইচ্ছা ছিল।
ছোট থেকেই তুই একা একা বড় হয়েছিস।এখন যখন আমি শুনলাম বেলায়েত মশাই তোর সাথে তার নাতির বিয়ে করাতে চায় তখন আমি আর সাত পাঁচ ভাবিনি কারণ এই বাড়ির মানুষগুলো অদ্ভুত হলেও মনের দিক দিয়ে অনেক ভাল।তোকে খুব ভাল রাখবে।আর ফারাজকে তো আমি চিনি।ও অনেক ভাল একটা ছেলে।রাজি হয়ে যা মা’
‘বাবা এসব কি বলছো!তাছাড়া ফারাজ ভাইয়া নিজেও রাজি না।দুজনের অমতে আমরা কেন বিয়ে করবো!’
অরিন্দম বিরক্ত হলেন।পূর্ণতা ওনার কথার অবাধ্যতা কখনই করেনি।সবসময় উনি যা বলতেন তাই শুনতো।কিন্তু এখন এমন গোঁজামি কেন করছে সেটাই তার মাথায় ধরছে না।
পূর্ণতা রাগে ফুলছিল।অরিন্দম সেসময় জানালা দিয়ে চেয়ে দেখে ফারাজ বাগানে হাঁটছে আর বই পড়ছে।তখন তিনি পূর্ণাকে ডেকে দেখিয়ে বললেন,’কোন ছেলে ভোরবেলা বাগানে হেঁটে হেঁটে বই পড়ে?বরাবরই আমি চেয়েছিলাম তোর যেমন মেধা,তোর বিয়েও যেন হয় এক মেধাবীর সাথে। শুনেছি ফারাজ অনেক মেধাবী একটা ছেলে’
‘মেধাবী হয়েও সে চাকরি করেনা,মন চাইলে ছবি আঁকে,বেচে।সারাদিন দিশেহারা হয়ে ঘুরেফিরে যেটা আমার পছন্দ না’
‘আমার তো পছন্দ।আগেকার সময় বাবা মা পছন্দ করিয়ে বিয়ে করাতো তাতে করে সন্তানদের তাদের প্রতি আনুগত্য বজায় থাকতো। তুই কি চাস না আমি তোর উপর খুশি হই?’
——-
ফারাজের বেশ মনে হচ্ছিল কেউ ওকে উপর থেকে দেখছে।তাই সে মাথা তুলে দেখে দূর থেকে অরিন্দমকে দেখা যায়।আচমকা ওনাকে দেখে ফারাজ হাতের বই বন্ধ করে দ্রুত হেঁটে চলে গেলো।
কাজ করার সময় কেউ তাকিয়ে থাকলে সে কাজ আর ফারাজকে দিয়ে হয়না
———-
সজীবের ঘুম ভাঙলো ডোরবেলের আওয়াজে।এই বেলটা সজীব সারথিকে বিয়ের ৬তম দিনে উপহার হিসেবে দিয়েছিল।সারথি মনে হয় সেটাকে দরজার কিণারায় ঝুলিয়েছে।মাথা তুলে ডোরবেলটার দিকে চেয়ে আছে সজীব।
এখন সারথি থাকলে ঘুরে ঘুরে কত শত কাজ করত।যতদিন সে লেভেনের কথা জানেনি ততদিন তার কাছে সজীবই সব ছিল।সজীব দম ফেললেও ওর ভাল লাগতো।মুচকি হেসে বসে থাকতো শুধু।
আর এখন মেয়েটি নিজেই নেই।এক রাশ অভিমান নিয়ে সে নিরুদ্দেশ।
সজীবের মাঝে মাঝে ওর উপর রাগ হয়।সিরিয়ালের নায়িকাদের মতন জামাইর পরকিয়া জেনেও কেন সে জামাইর জন্য পাগল থাকলোনা?
সারথিকে সজীব এমনটাই ভেবেছিল কিন্তু নাহ!সারথি এমন না।সে জেদ দেখিয়ে সজীবকে ফেলে চলে গেছে।একেবারে অন্যরকম চরিত্র!
‘ কি নাস্তা খাবি ভাইয়া??’
উর্মির কথা শুনে সজীব ঘাঁড় ঘুরিয়ে তাকায়।উর্মি দরজার কিণারায় দাঁড়িয়ে ওর উত্তরের অপেক্ষা করছে। সজীব বললো বাইরে খাবে।সে তখন ওর পাশে বসে ওর মাথার চুলে হাত বুলিয়ে বললো,’বোনের হাতের নাস্তা খেতে ইচ্ছা করেনা?’
সজীব উঠে বসে হঠাৎ উর্মির কাছে জানতে চাইলো আনাফকে চেনে কিনা।
উর্মি বললো চেনে।
‘সারথি আনাফ কি ভাল বন্ধু নাকি?’
‘সেটা তো জানিনা।তবে সারথি ভাবী বাপের বাড়ি চলে যাবার পর আনাফ ভাইয়া অনেকবার করে খবর নিয়েছে।তুমি কি ভাবছো ওদের ক্লোজ কিছু?আরে না ওসব হবেইনা।আনাফ ভাইয়া একজন ডাক্তার।উনি কেন সারথি ভাবীকে লাইক করতে যাবে!শুনেছি ওনার জন্য তো ওনার মা হন্ন হয়ে মেয়ে খুঁজছে।’
‘ওহ।ভাল!
না আসলে কাল সারথির কাছে আনাফকে দেখলাম তো তাই ভাবলাম হয়ত চেনাপরিচয় আগে থেকে থাকতে পারে।সারথি অবশ্য আমাকে এ ব্যাপারে কিছু বলেনি’
চলবে♥#ডাকপাড়ি
#পর্ব_৪০
#আফনান_লারা
________
‘কি বলবে??ভাইয়া তুমিও না!! এত বছর পর এসেছো।কোথায় ভাবীকে নিয়ে কোথাও ঘুরতে যাবা সেটা না করে সন্দেহ করছো?তোমার সন্দেহ হতো যদি ভাবী সুস্থ সবল থাকতো।ভাবী তো চোখেই দেখেনা, সেই রকম একটা মেয়েকে কি করে সন্দেহ করো!’
‘না সন্দেহ না।
থাক বাদ দে।যা নাস্তা বানা’
সজীব বালিশ নিয়ে অন্যপাশ হয়ে শুয়ে পড়ে।উর্মি উঠে চলে গেছে।বালিশ থেকে সারথির চুলের গন্ধ আসছে।
“একটা মানুষের গায়ের গন্ধ এতদিন থাকে??সারথিকে এত কেন মিস করছি!!
লেভেনের সাথে একেবারেই যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে।ওর সাথে কথা বললে হয়ত একটু হলেও ভাল লাগতো।এখন তো আমি একেবারেই একা হয়ে গেলাম!!আজকে বিকালেই ফ্লাইট ধরতে হবে’
———
আনাফের ঘুম ভাঙ্গলো অধরার ডাকে।সে হাঁপিয়ে হাঁপিয়ে বার বার করে ডাকছে আনাফকে।তার কথা হলো সারথি বাসায় নেই।
আনাফ চোখ ডলে উঠে বসে হাই তুলতে তুলতে বললো,’তুই জানিস কি করে যে সারথি এসেছে বাসায়?’
‘আমি কাল রাতে পানি খেতে উঠে দেখেছিলাম আপুকে’
‘দেখ হয়ত ওয়াশরুমে’
‘না ওখানেও নাই ‘
আনাফের এবার ভয় হলো।জলদি উঠে রুম থেকে বেরিয়ে সারথির নাম নিতে নিতে বাসার বাইরে চলে এসেছে।কোথাও সারথিকে দেখা যাচ্ছেনা।চিন্তায় গলা শুকিয়ে গেছে আনাফের।গেইট থেকে বের হয়ে কাছের যে পার্কটা আছে আগে ওটার দিকেই ছোটে সে।পার্কটাতে ঢুকতেই সে সারথিকে দেখলো।দূরে একটা ফুলগাছের তলায় দাঁড়িয়ে ছোট ছোট বাচ্চাদের সাথে গানের কলি খেলছে।আনাফ এক দৌড়ে ওর সামনে এসে রাগে ক্ষোভে ওকে ধরে ঝাঁকিয়ে বললো,’সারথি তোমার কি মাথা ঠিক আছে??তুমি এমন কেন করো আমার সাথে???
না বলে কেন বেরিয়েছো!!আমার চিন্তা হয়না??’
বাচ্চারা সবাই আনাফের ধমক শুনে ছুটে পালিয়েছে।সারথি হতভম্ব হয়ে আছে।এ প্রথম আনাফের ধমক খেলো সে।সজীব ও আজ অবধি ওর সাথে এমন করে কথা বলেনি আগে।সে অবাক হয়ে দাঁড়িয়েই রয়েছে।
আনাফের হুশ যখন ফিরলো তখনই সারথিকে ছেড়ে দিলো।নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণে এনে সে এবার মাফ চাইলো।শান্ত হয়ে একটা বেঞ্চিতে বসেও পড়েছে।সারথি আন্দাজ করার চেষ্টা করছে আনাফ কোথায়।ও হাত বাড়িয়ে ঘুরে দাঁড়িয়ে বললো,’আমি একটু হাঁটতে চেয়েছিলাম।গেইট থেকে বের হয়ে একজনকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারলাম এখানে একটা পার্ক আছে।তাই এসেছি।আবার যেতেও পারতাম’
‘বলে আসা যায়না?কাউকে সাথে আনা যায়না?’
‘আপনি ঘুমাচ্ছিলেন হয়ত তখন’
‘তো??জাগানো যায়না?আমাকে জাগালে তোমাকে খেয়ে ফেলতাম?’
‘সরি’
আনাফ উঠে দাঁড়িয়ে সারথির হাত ধরে চলে যাবার জন্য ঘুরতেই দেখে খাদিজা আন্টি ও তার নাতি মর্নিং ওয়াকে এসে ওদের দেখে এখানে এসে হাজির।আনাফ ওনাকে দেখে সারথির হাত ছেড়ে দিলো।
খাদিজা আন্টি আনাফের কান টান দিয়ে বললেন,’দেখেছো ছেলের কান্ড!না বলে বিয়ে করে নিয়েছে!!এটা ঠিক না আনাফ।অন্তত দাওয়াত না দাও, জানাতে তো পারতে!!’
‘না আসলে!!’
‘কোনো বাহানা না।কি মিষ্টি মেয়ে!!কিসে পড়ে!!’
‘গ্র্যাজুয়েট’
‘ওয়াও গ্রেট!তবে আমি ভাবছিলাম তুমি নিজের জন্য ডাক্তার মেয়ে খুঁজবে’
‘না আন্টি।সব ডাক্তাররা ডাক্তার বউ চায় না।’
‘আমি জানতাম তুমি ভিন্ন কিছু করবে।তা নাম কি ওর?’
‘সারথি করিম’
‘সারথি!!যেমন দেখতে সে তেমনই তার নাম!সারথি ভাল আছো?’
সারথি মাথা নাড়িয়ে বললো ভাল আছে।আনাফ তখন সারথিকে ধরে চলে যাবার জন্য বললো,’আন্টি আবার পরে কথা হবে তাহলে।আসলে আমার একটা জরুরি কাজ আছে বাসায়’
‘তা হবেনা।আজ আমার বাসায় তোমাদের লাঞ্চে আসতেই হবে ‘
‘না আন্টি।পরে একদিন’
‘আমি কিছু শুনবোনা।আসতেই হবে।চলো শামীম।’
খাদিজা আন্টি তার নাতি শামীমকে নিয়ে চলে গেছেন।আনাফ কপালে হাত দিয়ে বললো,’আমি জানতাম সকাল সকাল এই পার্কে খাদিজা আন্টি অবশ্যই থাকবেন।বিরাট বড় ভুলবোঝাবুঝি হয়ে গেলো!ধুর!!’
————
পূর্ণতা কোমড়ে একটা গামছা ঝুলিয়ে আলু কাটছিল রান্নাঘরে।ফারাজ সোফায় বসে বসে এতক্ষণ বই পড়েছে।মনে হলো গলাটা একটু ভেজানো দরকার। তাই ডাইনিংয়ের কাছে এসে গ্লাস হাতে নিতেই পূর্ণতার দিকে তার চোখ গেলো।এক চাহনিতেই ওর চোখ আর সরিয়ে নিতে পারেনি কেন সে জানেনা।হা করে তাকিয়েই আছে।তখন ঘাঁড়ে কারের শীতল হাতের স্পর্শ পেলো।সেই ব্যাক্তি মিষ্টি গলায় বললেন,’মেয়েটা সুন্দর তাই না?’
‘একদম!’
‘শ্যামলা যে এত সুন্দর হতে পারে কাকে না দেখলে বোঝা যেতোনা?’
‘পূর্ণকে না দেখলে’
‘পূর্ণ কে?’
‘পূর্ণতাকে আদর করে আমি ডাকবো পূর্ণ’
‘আহা!!আর কি সুন্দর তার?’
‘তার চুল!তার ফুটানি!!’
‘ফুটানি সুন্দর হয়?’
‘অসাধারণ হয়’
ওমনি সেই ব্যাক্তি ফারাজের গলা চেপে ধরলেন।দাঁতে দাঁত চেপে বললেন,’মেয়েটাকে তোমার এত ভাল্লাগে তাও বিয়া করবানা!!’
ফারাজের হুশ আসায় চমকে পেছনে মাথা ঘুরিয়ে দেখে আজিজ খান চোখ বড় করে চেয়ে আছেন।ফারাজ নিজেকে তার থেকে ছাড়িয়ে বুকে থুথু দিয়ে বললো,’আরেহহ না।আমি তো সিনেমার এক নায়িকার বর্ণনা দিচ্ছিলাম’
‘তার নাম আদর করে পূর্ণ ডাকবে?’
‘না মানে হ্যাঁ।পূর্ণ কি কারোর নাম হতে পারেনা??’
‘কে কোথায় আছো দেখে যাও।ফারাজ পূর্ণতাকে বিয়ে করতে রাজি’
‘আজব!আমি সেটা কখন বললাম!’
——-
পূর্ণতা হইচই শুনে উঠে এগিয়ে এসে দেখলো আজিজ খান ফারাজকে শক্ত করে ধরে রেখে সবাইকে ডাকছে।পূর্ণতা ফারাজকে ইশারা করলো জানার জন্য যে কি হয়েছে।ফারাজ নিজের কপালে নিজে একটা বাড়ি দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।সবাই এসে হাজির।সবার মুখে এক কথা! কি হয়েছে কি হয়েছে!
আজিজ খান সব খুলে বললেন সবাইকে।এসব শুনে পূর্ণতা নিজেও অবাক হয়ে ফারাজের দিকে চেয়ে আছে, তার অজান্তে ফারাজ ওকে দেখছিল এটা আসলেই ভাববার বিষয়।
ফারাজ বলছে সে অন্য কিছু ভাবছিল কিন্তু আজিজ খানের মতন মুরব্বীকে তো মিথ্যাবাদী প্রমাণ করা যায়না!!
সবাই এইসব শুনে ফারাজের মুখের দিকে চেয়ে আছেন একত্রে।
পূর্ণতা পুনরায় নিজের কাজে চলে আসা ধরতেই আজিজ খান বললেন,’যে ছেলে এত ছোটখাটো জিনিস তোমার খেয়াল করে সেই ছেলেকে তো জোর করে ধরে তোমার বিয়ে করা উচিত, সেখানে তুমি বিষয়টা সিরিয়াসলি নিলেই না!’
পূর্ণতা আবার বললো,’ফারাজ ভাইয়াকে আমি বিয়ে করবোনা, মানে করবেনা।এটা আমার শেষ কথা’
এটা বলে পূর্ণতা চলে গেছে। ফারাজ সাহস পেলো কিছু।সে নিজেও বললো,’আমিও ওকে বিয়ে করবোনা।আমি অন্য কিছু নিয়ে ভাবুুক ছিলাম বলে বুঝতেছিলাম না কোন জায়গায় দাঁড়িয়ে ভাবছি সব।আমি মোটেও পূর্ণতাকে ইশারা করে কিছু বলিনি,হহু!!’
ফারাজ ও চলে গেছে।বেলায়েত হোসেন তখন আজিজ খানের হাত ধরে এনে তার রুমে নিয়ে বললেন বড়সড় একটা পরিকল্পনা করতে হবে ওদের দুজনকে ফাঁসানোর জন্য।
‘কি করবা তুমি!এতদিন কিছু করতে পারো নাই, এখন কি করে কিছু করবা!’
‘আরে দেখোই না কি করি।অরিন্দম আছে বাড়িতে।ওকে কাজে লাগাতে হবে।’
———–
সারথিকে নিয়ে খাদিজা আন্টির বাসায় পৌঁছেছে আনাফ।অধরাকে দিয়ে সারথিকে সুন্দর করে সাজিয়ে গুছিয়ে এনেছে।
সারথি যে চোখে দেখতে পারেনা এটা খাদিজা আন্টি এখনও জানেননা।
ওদের সোফায় বসতে বলে তিনি টেবিল সাজাতে ব্যস্ত ছিলেন।তিনি এখানে তার নাতি শামীম আর মেয়ে অর্নীকে নিয়ে থাকে।অর্নীর ছেলে শামীম।অর্নী চাকরি করে বলে সে এখন অফিসে।তার হাসবেন্ড সিঙ্গাপুর থাকে।অর্ণীর শ্বশুর বাড়িতে থাকা হয়না কারণ তার ঐ বাড়িতে কেউ নেই।তার হাসবেন্ড একজন এতিম ছেলে ছিল।কলেজ লাইফ থেকে প্রেম এরপর বিয়ে।কত কাহিনী!!!
এখন শামীম সহ খাদিজা আন্টিকে হেল্প করছে।
কাজের ছলে আন্টি বললেন,’সারথি দেখি আমার কাছে এসো,তোমার বরের জন্য প্লেটে পরিমাণমত পোলাও নেবে’
সারথি প্রথমে ইতস্তত করছিল, তা দেখে আনাফ মানা করতে চাইলো কিন্তু তখনই দেখলো সারথি নিজেই উঠে দাঁড়িয়েছে যাওয়ার জন্য।
হাতিয়ে হাতিয়ে টেবিল অবধি এসে সে প্লেট খুঁজার জন্য হাত বাড়াতেই আনাফ এসে প্লেটটা নিজের হাতে নিয়ে বললো,’আমি করবো,তোমায় করতে হবেনা’
খাদিজা আন্টি রান্নাঘর থেকে এসে বললেন,’বাবা এত আদর!!তোমার বউকে তো বড় ফরমাইশ দেইনি।’
‘ওর আসলে একটা সমস্যা আছে’
‘কি??সরো তো।এগুলা বউদের কাজ।তুমি বসো।সারথি তোমায় সুন্দর করে সব সাজিয়ে দিবে’
‘নাহ,আসলে সমস্যাটা হলো সারথি পৃথিবীর রঙ কালো দেখে সবসময়।সাত রঙা পৃথিবী তার দেখা হয়নি কখনও’
এই কথা শুনে খাদিজা আন্টি অবাক হয়ে গেলেন।বুঝে গেলেন আনাফ কি বোঝাতে চাইলো।তার চোখে পানি এসে গেলো হঠাৎ।এত সুন্দর একটা মেয়ে কিনা এমন একটা পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে বেঁচে আছে!
সারথি তাও নিজ থেকে প্লেটটা হাতে ধরে বলে,’আমাকে দেখিয়ে দিলেই হবে।বাকিটা করতে পারবো।’
খাদিজা আন্টি আর কিছু করতে দিলেননা সারথিকে।ওর হাত ধরে আনাফের পাশে বসিয়ে নিজেই সব করছেন এবার।আনাফ খেতে খেতে দেখলো সারথির পাতে এলাচি।এই লোকমাটা সে এখন মুখে তুলবে।সে চটজলদি হাত বাড়িয়ে এলাচিটা তুলে ফেললো।সারথি তখন বললো,’ফারাজ ছোটকালে আমার পাত থেকে তরকারির আলু নিয়ে নিতো এমন করে।আমি জানি!আপনিও তেমন করলেন?’
‘আলু নিই নাই বোকা মেয়ে!এলাচি সরিয়েছি’
‘আচ্ছা খেয়াল করলাম আপনি আমায় তুমি করে বলছেন।কেন বলুন তো?’
‘খাদিজা আন্টিকে যখন বলেছি তুমি গ্র্যাজুয়েট তখন মনে পড়লো তুমি আমার অনেক ছোট।শুধু শুধু আপনি কেন বলবো তাহলে?’
——-
সজীব ফারাজকে ফোন করে জানতে চেয়েছে সারথি তার কোন বান্ধবীর বাসায় আছে।মালয়েশিয়া চলে যাবার আগে সে একবার সারথির সাথে দেখা করবে।ফারাজ বলে সে ঐ বান্ধুবীর বাসার ঠিকানা জানেনা।কিন্তু সজীব তো নাছোড়বান্দা। সে ঠিকানা জেনে তারপর ছাড়বে।পরে ঠিকানা নেয়ার বাহানা দিয়ে ফারাজ লাইনটা কেটে চলে গেলো।সে ভুলেও আনাফের বাসার ঠিকানা সজীবকে দেবেনা।তার বোন যেখানে সুখ খুঁজে পেয়েছে সেখানে ফারাজ কেন দুঃখ প্রবেশ করতে দেবে??
সজীব অনেকক্ষণ অপেক্ষা করেও সারথির ঠিকানা ফারাজ থেকে নিতে পারেনি বলে কাগজপত্র সব নিয়ে বিমানবন্দরের দিকে চলে গেছে।যাবার পথে মা আর উর্মির সাথে দেখা করে গেলো।মা সব বুঝে গেছেন।বড় কোনো সমস্যা নাহলে আজ এতটাদিন সারথি বাপের বাড়িতে থাকতোনা, সজীব আসার পর সে বাড়ি ছাড়া হতোনা।এর পেছনে কিছু না কিছু আছে তা তিনি বেশ বুঝতে পেরেছেন।সবকিছু তিনি সারথির কাছে জানতে চাইবেন সময় হলে।কারণ সজীব কোনোকিছুর সোজা উত্তর দেয়না।
চলবে♥#ডাকপাড়ি
#পর্ব_৪১
#আফনান_লারা
________
সজীব মালয়েশিয়াতে ফিরেই সিম অন করে লেভেনকে কল করতে করতে বাসায় ঢুকেছে।ওর বাসার কাজের লোক দরজা খুলে ওকে শুরুতেই জানালো লেভেন অনেকবার এসেছিল বাসায়।সজীব যেহেতু কিছু বলে যায়নি তাই তারাও লেভেনকে সজীবের ব্যাপারে কিছুই সঠিক করে বলতে পারেনি।সজীব ওদের কথা শুনে ফোন কানে ধরে নিজের রুমে এসে হাতের ব্যাগটা টেবিলের উপর রেখে লাইট অন করে বললো ডিনার রেডি করতে, আজ সে লেভেনকে নিয়ে ডিনার করবে এখানে।
এই কথা বলে গায়ের কোটটা খুলে টাই ঢিলা করে আরও একবার কল করে সে লেভেনকে।কিন্তু এইবার ও লেভেন রিসিভ করেনি।
লেভেনের বাবাকে কল দেয়ার মতন সাহস সজীবের নেই, তাই সজীব আর লেভেনের ক্লাসমেট অমিসনকে সজীব কল করে জানতে পারলো লেভেন অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছে। এই কথা শুনে সজীব আর এক মিনিট ও বাসায় না থেকে বের হয়ে গেলো।অমিসনের বলা হাসপাতালে এসে লেভেনের কেবিনে ঢুকতে নিতেই লেভেনের বাবার লোকজন এসে সজীবকে ঘিরে ধরে আটকে ফেলে।ওরা সজীবকে বলছে লেভেনের বাবার কড়া নিষেধ আছে সজীবকে ঢুকতে দেয়া যাবেনা।সজীব আশ্চর্য হয়ে জানতে চাইলো এটা কেন বলেছে। ঠিক সেসময় লেভেনের বাবা এসেছেন ওখানে।সজীবের দিকে রাগান্বিত দৃষ্টি রেখে চেয়ে আছেন তিনি।
‘আঙ্কেল ওরা কি বলছে!আমাকে কেন ভেতরে যেতে দিচ্ছেনা।লেভেনের কি হয়েছে?’
‘তুমি এখন কেন এসেছো?’
‘আসলে আঙ্কেল জরুরি একটা কাজে আমাকে বাংলাদেশ যেতে হয়েছিল।তাই যোগাযোগ বন্ধ ছিল’
‘এটা তুমি লেভেনকে বলে যাওনি।লেভেন তোমাকে উন্মাদের মতন ভালবাসে এটা তুমি জানোনা?এরপরেও এত বড় অন্যায় কি করে করেছো??লেভেনের ইমোশনের কি কোনো দাম নেই তোমার কাছে?আমি ঠিক করেছি তোমার সাথে লেভেনের বিয়ে দিবোনা।আমার পছন্দ করা ছেলের সাথেই দিবো।তোমার মতন দায়িত্বহীনতায় ভোগা ছেলের হাতে আমি আমার মেয়েকে তুলে দিবোনা।সোজা বাসায় যাবে এখন।লেভেনের মুখ ও তোমায় আমি দেখতে দিবোনা’
‘আঙ্কেল প্লিজ, একবার দেখা করবো।আই এম সরি ফর এভ্রিথিংক আই ডিড’
‘সরি বলে এখন আর লাভ নাই।যেতে বলছি।চলে যাও’
এই কথা বলে লেভেনের বাবা দেহরক্ষীদের ইশারা করে চলে গেলেন।
সজীব বাইরে থেকে লেভেনের নাম ধরে বারবার করে ডাকছে।তার ডাক লেভেন শুনতেও পেলো কিন্তু সজীবের প্রতি জমা একরাশ অভিমানের চোটে সে চুপ করে রইলো।একটা টু শব্দ ও করেনি।
সজীব অনেকক্ষণ লেভেনকে ডাকাডাকির পর কোনো সাড়া না পেয়ে সামনে থাকা দুজন দেহরক্ষীর সাথে মারপিট শুরু করে দিয়েছে।হইচই শুনে লেভেন মাথায় হাত দিয়ে ফেললো এরপর নার্সকে বললো গিয়ে সজীবকে ভেতরে ডাকতে।নার্স জলদি গিয়ে দরজা খুলে সজীবকে বললো ভেতরে আসতে।
সজীব দেহরক্ষী গুলোর সাথে জমপেশ মারপিট করে তিনজনেই রক্তাক্ত অবস্থায় নার্সের দিকে চেয়ে ছিল।সজীব তখন খুড়িয়ে খুড়িয়ে ভেতরে চলে গেছে।লেভেন ওর এই হাল দেখে এক চিৎকার দিয়ে নার্সকে ডাকলো।বললো মলমপট্টির ব্যবস্থা করতে।
সজীব এগিয়ে এসে লেভেনকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।লেভেনের চোখে পানি ছলছল করছিল সজীবকে এমন হালে দেখে।সে ভাবেনি তার অভিমানের রেশ এতদূর গড়াবে।সজীবকে পাশে বসিয়ে নার্সকে দিয়ে ওর কপালে আর হাতে ব্যান্ডেজ করিয়ে নিয়ে নার্সকে চলে যেতে বলে সে।
‘বাংলাদেশ গিয়েছিলে?’
‘হ্যাঁ’
‘কেনো?’
‘একটা জরুরি কাজ ছিল’
‘আমাকে বলে গেলে আমি তোমায় যেতে দিতাম না?’
‘সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছি’
‘কিসের সারপ্রাইজ? ‘
সজীব পকেট থেকে একটা ভাঁজ করা দলিল বের করে লেভেনের দিকে ধরে বললো,’সারথি আর আমার ডিভোর্স হয়ে গেছে’
লেভেন তো যেন হাতে আকাশের চাঁদ পেয়ে গেছে।খুশিতে সে কাগজ না দেখেই সজীবকে জড়িয়ে ধরলো।চিৎকার করে বললো,’আমি তোমায় অনেক বেশি ভালবাসি সজীব।’
———-
অরিন্দম কর্মকারকে ভুলিয়ে ভালিয়ে বেলায়েত হোসেন শিখিয়ে নিয়েছেন অসুস্থ হবার নাটক করার জন্য।
যাতে করে পূর্ণতা বিয়ে করতে রাজি হয়।
অরিন্দম শুরুতে নাকচ করলেও পরে রাজি হয়ে গেলো।বুকে হাত দিয়ে দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে বেলায়েত হেসেনের ইশারার অপেক্ষায় ছিলেন। বেলায়েত হোসেন সিঁড়ি দিয়ে চেয়ে দেখছেন পূর্ণতা আসছে কিনা।অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর তিনি দেখলেন পূর্ণতা হাতে মিষ্টির প্লেট নিয়ে উরের তলার দিকে আসছে।ওমনি তিনি ছুটে এসে অরিন্দমকে নাটক শুরু করতে বললেন।
অরিন্দম বুকে হাত দিয়ে লম্বা হয়ে শুয়ে পড়েছেন মেঝেতে।পূর্ণতা সিড়ি বেয়ে উপরে আসা ধরতেই পেছন থেকে মিসেস সায়না ডেকে বললেন রান্নাঘরের ডালাটা চেক করে আসতে।তাই আর উপরে গেলো না সে।
অরিন্দম বুকে হাত দিয়ে বলছে,উহু! আমি শেষ।মাগো কেউ বাঁচাও!!পানি পানি!!!’
বেলায়েত হোসেন পূর্ণতাকে আবার চলে যেতে দেখে এগিয়ে এসে বললেন,’নাটক থামাও।তোমার মেয়ে উল্টো পথে চলে গেছে’
অরিন্দম তখন সোজা হয়ে বসে বলে,’তবে আবার কখন নাটক করতে হবে?আমি শুয়ে পড়লে উঠতে আমার কোমড় ব্যাথা করে।’
‘এত অধৈর্য্য হলে চলবে?পরে আবার বিকেলের দিকে করিও।এখন নিজের কাজে যাও’
———-
পূর্ণতা বাগানে বের হয়েছিল অর্ককে খুঁজতে।ওকে না পেয়ে আবার চলে আসার সময় তার চোখ গেলো গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা ঐদিনের সেই ছেলেটার দিকে,শাহেদ।
গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে সে ফোনে কথা বলছিল।
পূর্ণতা কাছে গিয়ে হাত নাড়িয়ে বললো,’হাই??আপনি বাইরে কেন?ভেতরে আসুন।ফারাজ ভাইয়া বাসাতেই আছে’
শাহেদ পূর্ণতাকে দেখে থতমত খেয়ে গেছে।সে ওকে এসময় এখানে আশাই করেনি।কলে কথা বলতে বলতে এখানে এসে পড়েছিল ভুলে।এখন পূর্ণতা তো ওকে ছাড়বেনা।
ঢোক গিলে শাহেদ বললো,’ভাল আছেন?’
‘আরে ওসব পরে হবে।আগে ভেতরে আসুন’
‘না না!পরে আসবো।আমি একটা কাজে এইদিকে এসেছি’
‘আপনি ফারাজ ভাইয়ার বন্ধু হোন।আপনাকে তো আসতেই হবে’
শাহেদ কথাই না পেরে দিলো এক দৌড়।
পূর্ণতা এক দৃষ্টিতে শাহেদকে পালাতে দেখলো।তারপর ভাবলো ছেলেটা অদ্ভুত!নিজেই আসে আবার নিজেই পালায়।এত ভয় পাবার কি আছে?বন্ধু তো বন্ধুই। বাসায় আসতেই পারে!
শাহেদ দূরের সেই চা দোকানের কাছে এসে বসলো হাঁপাতে হাঁপাতে।সেই দোকানদার শাহেদকে দেখে চা বানাতে বানাতে বললেন,’এখনও হাবিজাবির লাইন ছাড়লেনাৃ
তুমি তো বাপু খারাপ বংশপর সাথে আত্নীয়তা করার শখ পোষণ করে বসে আছো!’
‘না সেটা নয়।ফারাজের ব্যাকগ্রাউন্ড নিয়ে খুঁটিয়ে দেখছি, এই আর কি!’
‘ব্যাকগ্রাউন্ড মানে ঐ বাউন্ডারি তাই তো?আরে বাউন্ডারির খবর আমার কাছে জানতে চাইবা।আমি জানি বাউন্ডারির ভেতরে কি চলো আর বাইরে কি চলে!তুমি জানো? এখন ওদের বাসায় ঐ নতুন আসা পূর্ণা মেয়ের সাথে ফারাজের বিয়ের কথা চলছে?’
‘এগুলা ভুয়া!’
‘আরে ভুয়া কি কও!আমি নিজের কানে শুনে আসছি।তোমার বোনের সাথে তো ফারাজের বিয়া হইবোনা’
‘ফারাজ অনেক ভাল ছেলে।আমি বোনের বিয়ে দিলে ফারাজের সাথেই দিবো!!দরকার হলে ঐ পূর্ণতাকে আমি নিজে বিয়ে করে পথ ক্লিয়ার করবো’
দোকানদারের হাত থেকে চায়ের কাপ পড়ে গেলো এই কথা শুনে।ইয়া বড় হা করে বললেন,’না এ হতে পারেনা।তুমি কেন পূর্ণতাকে বিয়া করবা!তুমি ওরে বিয়া করলে হাবিজাবিতে তো ঝামেলা বলে কিছুই থাকবেনা।আমি কি দেখে বিনোদন নিবো তাইলে!’
দোকানদারের কথা শুনে শাহেদ টাস্কি খেয়ে বসে আছে।তার মানে ভেজাল করতে এবং লাগাতেই এই দোকানদারের ভাল লাগে?এই ছিল তার মনে?
দোকানদার শাহেদকে চুপ হয়ে থাকতে দেখে আবার বললো,’আরেহ কথা দাও আমাকে, তুমি ঐ মেয়েকে বিয়া করবানা’
‘অবশ্যই করবো।ওকে আমার খুব ভাল লেগেছে।’
‘চুপ করো পোলা!তোমাকে আর চা’ই খাওয়াবোনা।একজনের সাথে আরেকজনের ভেজাল না লাগালে সব কিছু তো একটা সময় পানসে হয়ে যাবে।তাই চেষ্টা করবা ভেজাল লাগিয়ে চলাফেরা করতে।তবেই দেখবা চারপাশটা খুব রঙিন’
‘আপনি তো মশাই একটা পাগল!’
দোকানদার নিজের টাকার বাক্স থেকে একটা ফাইল বের করে শাহেদের দিকে বাড়িয়ে ধরেছে তখন।শাহেদ হাতের কাপ রেখে ফাইলটা মেলে ধরলো।
ফাইলে লেখা আছে ‘লোকমান রহিম’,বয়স ৫১।মানসিক রোগী!!আচ্ছা!আপনি মানসিক রোগী?’
দোকানদার বিরক্তি চাহনিতে বলে,’পাগল নিজে বলে সে পাগল?তুমি তো মিয়া নিজেও পাগল!’
শাহেদ টুকুস করে ফাইলটা রেখে সরে বসলো।ওমনি দোকানদার বাক্স হাতিয়ে একটা লিপলেট বের করে ধরলো শাহেদের দিকে।
লিপলেটে লেখা”পাবনা মানসিক হাসপাতালের সিরিয়াল নাম্বার ৩০৯ রোগী পলাতক।নাম লোকমান রহিম’
এটা দেখে শাহেদের কাশি শুরু হয়ে গেছে।গলা চুলকে সে উঠে দাঁড়ালো।লোকমান রহিম ব্রু কুঁচকে বললেন,’শুনো মিয়া।আমি মোটেও পাগল না।পাগল হইলে এইসব কাগজপত্র গুছিয়ে রাখতাম না।এগুলা হলো জমির দলিল।আমাকে একজন পড়ে কইছে।নিজে পড়তে তো জানিনা,যারেই পড়তে দিই সেই তোমার মতন উঠে এক দৌড় দেয়।এখন কি তুমিও দৌড় দিবা?
শাহেদ ধপ করে বসে গেলো আবার।যা বোঝা গেলো তা হলো ভাল পাগল।খারাপ পাগল হলে চামড়া আস্ত রাখতোনা।দম ফেলে আরেক কাপ চা চাইলো শাহেদ।
লোকমান করিম চা বানাচ্ছেন আগের মতন।
‘আচ্ছা আপনি কি জানেন এগুলা আসলেই জমির দলিল না?’
‘দেখো মিয়া!চা খাইতে আসছো চা খাও।আমার জমির দলিলকে পাগলা গারদের কাগজ বলে দখল নিতে আসিওনা।তোমার আগেও দুজন বলে গেছে এটা নাকি পাগলা গারদের কাগজ।শেষেরটারে যে পিডান পিডাইছিলাম উল্টাপাল্টা কথা বলার জন্য।তুমিও কি পিডা খাইতে চাও?’
শাহেদ ভাবছে কোন দিক দিয়ে দৌড় দেবে।এই লোক তো মোটেও সুবিধার না।কিন্তু দৌড় দেয়া মনে হয় সম্ভব হবেনা কারণ রাস্তায় গাড়ী চলাচল করছে দ্রুত।পরে দেখা গেলো পাগলের ভয়ে দৌড় দিতে গিয়ে গাড়ীর নিচে পড়তে হবে।
চুপচাপ চায়ের কাপ হাতে নিয়ে বড় করে একটা হাসি দিয়ে শাহেদ বললো আসলেই কাগজটা জমির।
———–
খাদিজা আন্টির বাসার দাওয়াত শেষ হওয়ায় আনাফ সারথিকে নিয়ে একটা জায়গার উদ্দেশ্যে বেরিয়েছে।সারথি জানেনা।সে জানে তারা বাসার দিকে যাচ্ছে।
—-
‘আচ্ছা দাওয়াতে অধরাকে আনলেন না কেন?’
‘সে তার কলেজের অনুষ্ঠানে গেছে’
‘আপনি এখন আর আতর ব্যবহার করেননা?’
‘না’
‘কেনো?’
‘কারণ আতর ব্যবহার করলে তুমি বুঝে যাও আমি কোথায় আছি’
‘এটা ঠিক না।তার মানে আমাকে না জানিয়ে আপনি আমার কাছে থাকার চেষ্টা করবেন?’
‘মোটেও না।দূর থেকে যেই দেখা দেখি সেটাতেই যাতে সমস্যা না হয় সে জন্য আমি আতর ব্যবহার বন্ধ করেছি।’
সারথি বুঝে গেলো তারা বাসার দিকে যাচ্ছেনা।যেখানে দশ মিনিটের পথ সেখানে বিশ মিনিট হয়ে গেছে এখনও বাসা আসলোনা।
আনাফ হাসছে।কিন্তু আওয়াজ করছেনা।গাড়ীর স্পীড বাড়িয়ে সে বললো,’তোমার আর সজীবের ডিভোর্স হয়ে গেছে?’
‘আমার আর ওনার কথা শুনেছেন তাহলে?’
‘শুনেছি এবং আন্দাজ ও করে ফেললাম’
‘তবে উনি সই করেছেন কিনা জানিনা’
‘করবে করবে।নেচে নেচে করবে’
‘তো এগুলা কেন বলছেন এখন?’
‘কারণ আজ আমাদের বিয়ে!’
চলবে♥