ডাকপাড়ি পর্ব -৬৩+৬৪+৬৫ ও শেষ

#ডাকপাড়ি
#পর্ব_৬৩
#আফনান_লারা
________
আনাফ সারথির কথাটা শুনে এক সেকেন্ড ও অপেক্ষা করলোনা।বাতাসের গতিতে ছুটে ওর পাশে বসে গেলো ফটাফট।সারথি জানতে চাইলো জানালা কোন দিকে।আনাফ ওর হাতটা তুলে দেখিয়ে দেয়।
সারথি তখন আনাফের ঘাড়ে মাথা রেখে বলে,’আমি আপনি আর এক রাশ ভালবাসার সময়টা শুরু এখান থেকেই।জানালার ফাঁকে,পর্দার আড়ালে,দরজার শেষ অবধি ভালবাসাগুলো খেলা করবে,উড়বে’

‘আর কি করবে?’

‘আর আমাদের মাঝে এসে ধাক্কা লেগে মিশে যাবে’
———
অরিন্দম কর্মকার আজ এসেছে ফারাজ পূর্ণতাকে তার গ্রামের বাড়ি থেকে ঘুরিয়ে আনতে।যদিও সেখানে বাড়ি নেই, খালি জমি পড়ে আছে।ওনার ছোট ভাইয়ের বাড়িতে উঠবেন।
পূর্ণতা তৈরি হয়ে নিলেও ফারাজ বললো সে যাবেনা।এতদিন ধরে যে ছবির পেছনে শ্রম দিয়েছে সেটা যে ক্রেতা কিনবে তার আজই আসার কথা।বিদেশী ক্লায়েন্ট।তাই সে যাবেনা।
অরিন্দমের বাড়িতে অনেক ককাজ বলে উপায়ন্তর না পেয়ে শুধু পূর্ণতাকে নিয়েই তিনি গ্রামে চলে গেছেন।এটা ফারাজ জানতোনা।সে তার কাজে চলে গেছিলো অনেক আগেই।
তার ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা গড়িয়ে গেলো।
বাড়িতে ফিরে মাকে খাবার দিতে বলে সোজা নিজের রুমে আসে ফারাজ,ভেতরটা ফাঁকা।ফারাজ ভেবেছিল পূর্ণতা রুমেই থাকবে। কারণ আসার সময় সে পূর্ণতাকে দেখেনি।
রুম খালি দেখে ভেবে নিলো হয়ত অর্কর রুমে সে।কারণ পূর্ণতা প্রায় সময় অর্কর রুমে গিয়ে বকবক করে।
হাতের ব্যাগটা টেবিলের ওপর রেখে সে চলে যায় ফ্রেশ হতে। ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে রুমটা আগের মতই দেখে মন খারাপ হলো।মেয়েটা গেলো কই?
তোয়ালে দড়িতে ঝুলিয়ে রুম থেকে বের হয় সে।সোজা অর্কর রুমে যায়।অর্ক পড়ার টেবিলে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে।ফারাজ ওকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে বলে সন্ধ্যাবেলা ঘুমাতে নেই।ওর রুমেও পূর্ণতাকে না পেয়ে ফারাজের এবার চিন্তা হলো।
চিন্তা করতে করতে সে নিচে গিয়ে খেতে বসে।মা খাবার সাজিয়ে রেখে অন্য কাজে চলে গেছেন।ফারাজ পাতে হাত রেখে মাথা ঘুরয়িে এদিক সেদিক চেয়ে নিলো।আশ্চর্য!

‘কি গো নতুন জামাই?কাকে খোঁজো?’

‘কাউকে না কাকি’

‘ফারাজ তোমায় কিন্তু কখনও ভাতে হাত রেখে এদিক ওদিক তাকাতে দেখিনি।তবে এখন দিশা বদলে গেলো ক্যান?’

‘এমনিতেই দেখলাম রাত কত হলো’

সায়না কাকি মুচকি হাসলেন,বলতে চাইলেন সে যাকে খুঁজছে ও বাড়িতে নেই,পরে কি যেন দুষ্টু বুদ্ধি মাথায় আসায় আর বললেন না।চলে গেলেন ওখান থেকে।ফারাজ লজ্জায় কারণে জানতে চায়নি পূর্ণতার কথা।সে নিজেই খুঁজে বের করবে বলে ঠিক করে।চটজলদি ভাতটা শেষ করে হাত ধুয়ে বাগানের দিকে যায় সে।বাগান খালি না,সেখানে দাদাজান বসে বসে রেডিওতে পুরোনো দিনের গান শুনছেন।
দাদাজানকে ওখানে দেখে ফারাজ আর সেদিকে যায়নি।পা টিপে টিপে ওখান থেকে চলে গেছে। বাড়িতেও নেই,বাগানেও নেই তবে গেলো কোথায়য়?
পরে মাথায় আসলো ছাদের কথা।দিলো এক দৌড় ছাদের দিকে।দৌড়ের সময় সিঁড়িতে খেলো এক হোচট।এরপর বসে বসে পা যখন সে ঘঁষছিল,সেসময় অর্ক ওকে দেখে বলে,’তুমি কি পূর্ণতা চাচিমণিকে খুঁজতেছো?’

‘না তো’

‘মনে হয় তাকেই খুঁজতেছো,কারণ এর আগে পুরো বাড়িতে তোমায় এমন ডিটেক্টরের মতন ঘুরতে দেখিনি।
যাই হোক শোনো,চাচিমণি তার আব্বুর সাথে গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে চলে গেছে’

‘আজই?’

‘হুম আজই।তোমায় ও তো বলেছিল।তুমিই তো গেলে না’

ফারাজ ভেবেছিল হয়ত দুদিন পর যাবে।এভাবে আজ বলে আজই চলে যাবে সেটা ভাবেনি।
ছাদে আর যাওয়া হয়নি,সোজা তার রুমেই আসা হলো।

‘ভালই হয়েছে।থাকলে এখন ঘ্যান ঘ্যান করে মাথা খারাপ করতো।শান্তিতে ঘুমাতে পারবো আজ।’

টেবিলের ওপর থেকে একটা বই নিয়ে পড়তে বসে ফারাজ।বিয়ের আগে এই সময়টা সে বই পড়তো।সময় কেটে যেতো।এখন হঠাৎ সময় কাটছেনা।কি ব্যাপার??এত চেইঞ্জ!!
————
পূর্ণতা তার বাবার সাথে গ্রামের বাড়ি এসে ফারাজের চাইতে বেশি বোর হয়ে আছে।মনে হয় অনেক মূল্যবান কিছু সে শহরে ফেলে এসেছে।তার এখানে কিছুই ভাল লাগছেনা।মন চাইছে এক ছুটে হাবিজাবিতে চলে যেতে।এরকমটা লাগবে জানলে সে কখনওই আসতোনা।সেই তখন থেকে পুকুর ঘাটে বসে পা দুলাচ্ছে সে।কেউ তার সাথে কথাও বলছেনা,যে যার কাজ নিয়ে ব্যস্ত। দাদার বাড়িতে নিজের সমবয়সী কাজিন না থাকলে এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হয়।নিজেকে মরুভূমির পর্যটক মনে হয়।
বয়সে ছোট কেউ হলেও হতো।পর্ণতার সব কাজিন তার চেয়ে পনেরো/ বিশ বছরের বড়।তাদের সাথে সে কি করে আড্ডা জমাবে?বোন যারা ছিল সবার বিয়ে হয়ে বাচ্চাগুলো প্রাইমারিতে পড়ছে।বাবা আসার পর থেকে ব্যস্ত। সে এখানে এসে মস্তবড় ভুল করেছে সেটা বুঝেছে কিন্তু কিছু করতে পারছেনা।মন চাইলো ফারাজকে কল করে তার সাথে কথা বলার। পরে ভাবলো সে কেন আগে ফোন দেবে?ফারাজ কি তাকে মিস করেনা?ফারাজ কেন একবারও কল করেনি?
—–
ফারাজ ফোন হাতে নিয়ে শুয়ে আছে। একবার কল করা উচিত আসলেই।দম ফেলে কলটা দিয়েই দিলো সে।
সাথে সাথে রিসিভ হলো।পূর্ণতা ওর কলেরই অপেক্ষায় ছিল।

‘কি খবর আপনার ম্যাডাম?’

‘মনে আছে আমাকে, আদৌ?’

‘কলটা কিন্তু আমিই করেছি’

‘আপনারই করা উচিত।আমি এসেছি সেই কখন।আরও আগে ফোন দিয়ে জানা উচিত ছিল আমি পৌঁছেছি কিনা’

‘নিজে তো ফোন দেন নাই,আমি দিছি এখন আমাকেই দাম দেখাচ্ছেন?’

‘খেয়েছেন?’

‘হ্যাঁ,আর আপনি?’

‘পরে খাবো।তো কেমন লাগছে আমায় ছাড়া?’

‘আপনি তো দুদিনের মানুষ।আমি এতদিন একা থাকি নাই?’

‘তার মানে আমায় মিস করছেন না?’

‘না করছিনা।আমি বিন্দাস খাচ্ছি দাচ্ছি,আয়েশ করছি’

পূর্ণতা রাগ করে কলটাই কেটে দিয়েছে।ফারাজ ফোনের দিকে চেয়ে থেকে বলে, ‘সরি!কিন্তু আমি আসলেই আপনাকে খুব মিস করতেছি’

সারথিকে দেখার জন্য কোনো প্রতিবেশী আসেনি।কারণ সারথি যে সজীবের বউ ছিল এটা সকলে জানে।তাই ঠিক কি কারণে আসেনি সেটাই ভাবছে আনাফের বাসার সবাই।

রাতের বেলা ডিনারটা সেরে আনাফ সারথিকে নিয়ে ছাদে এসেছিল হাওয়া খেতে। সারথি ফুলগাছে হাত বুলাচ্ছিল।এগুলা তারই যত্নের ফুলগাছ।অনেকদিন পর তার এই ছাদে আসা।আনাফ হঠাৎ করে সারথিকে বললো,”জানো আজ সজীবদের বাসায় অনেক মেহমান’

‘কেন?’

‘শুনলাম সজীবের গার্লফ্রেন্ড লেভেন না কি যেন সে তার পরিবার নিয়ে আসবে’

‘আসবে তো মেহমান কিসের আগেভাগে?’

‘আরেহ সজীবের আত্নীয় ওরা।হবু বউকে দেখবে সবাই’

‘ওহ আচ্ছা ভালই।আমার পরে উনিও নিজের জীবনটা গুছিয়ে নিচ্ছেন।’

‘ওই সজীবের জীবন গোছানোই ছিল।মাঝ দিয়ে তোমার জীবনের ১৪টা বাজিয়ে রাখছিল এতদিন’

সারথি মুচকি হেসে বলে,’তবে আপনি আমার জীবনের কয়টা বাজালেন?’

‘আমি বাজাই নাই।বাজানো ভাল না’
————
লেভেনকে একটুও পছন্দ করেন না সজীবের বাবা এবং মা।কিন্তু এখন তাদের কাছে আর কোনো পথ খোলা নেই বলে যাকে পছন্দ হয়না তাকেই পছন্দ করার অভিনয় করতে হবে।মানসম্মান আগে তারপর সবকিছু।
যেটা নিয়ে ভয় ছিল সেটাই হলো।লেভেন তার বাবাকে নিয়ে এসেছে ঠিকই, কিন্তু তার পোশাক মার্জিত ছিল না।হাঁটু দেখা যায় এমন পোশাক পরে সে এসেছে।সজীব এটার কথা ভুলে গেছিলো।যদি মনে থাকতো তবে সে লেভেনকে শিখিয়ে পড়িয়ে নিতো যাতে ভাল জামা পরে আসে।লেভেনকে এই বেশে দেখে সজীবের আত্নীয় হতে শুরু করে সজীবের বাবা মা রীতিমত আশ্চর্য হয়ে আছেন।কি বলবেন ভেবেই পাচ্ছেন না।এদিকে কিছু যে বলবে সেটার অবস্থাও নেই।কিয়াম তার বডিগার্ড সবকয়টাকে নিয়ে আসছে। সবাই মিলে ঘিরে রেখেছে সজীবের বাবা -মাকে। ওদের দেখে ভয়ে আর কেউ টু
শব্দ টুকুও করেনি।সজীবের মা উর্মিকে ফিসফিস করে জানিয়ে দিছেন যেন লেভেনকে নিয়ে ভাল কোনো পোশাক পরিয়ে আনে।
উর্মি আর দেরি না করে লেভেনকে সবার সামনে থেকে সরিয়ে নিয়ে গেলো।

সজীবের বাবার পাশে এসে বসেছেন মিঃ কিয়াম।তিনি এমন ভাব ধরছেন যেন বিয়েটা তিনি চাপে পড়ে করাচ্ছেন।তার কোনো মতই নেই এ বিয়েতে।এদিকে সজীবের বাবা আরও ভাব দেখাচ্ছেন।দু বেয়ানের ভাবের চাপাচাপি তে থাকা যাচ্ছেনা।কেউ কারো সাথে কথাই বলছেনা অথচ তারা একই সোফায় বসে আছে একই জায়গায়।তাদের মাঝের দুরুত্ব ১০ইঞ্চির।
—–
উর্মি লেভেনকে একটা সুন্দর শাড়ী পরিয়ে দেয়।
লেভেন জীবনে শাড়ী পরেনি।এ প্রথম পরা হলো।সে নিজেকে আয়নায় দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিল।উর্মি বললো,’আপু তোমায় অনেক সুন্দর লাগছে।মনে হয় যেন শাড়ীটা তোমার জন্যই তৈরি’

সজীব ভীড় ঠেলে এ রুমে এসেছিল লেভেনের সাথে কথা বলার জন্য।রুমে এসে লেভেনকো শাড়ীতে দেখে তার হাঁটাই বন্ধ হয়ে যায়।
লেভেনকে এতটা সুন্দর লাগছিল সজীব কি বলার জন্য এসেছে সেটাই ভুলে গেছে।

উর্মি সজীবকে দেখে রুম ছেড়ে চলে গেলো।লেভেন লজ্জা পেয়ে এক ছুটে বারান্দায় চলে আসে। সজীব ও ওর পাশে এসে ওকে জড়িয়ে ধরলো শক্ত করে।
ঠিক সেসময়ে পাশের ইউনিটের বারান্দায় আনাফ আর সারথি ছিল।সারথি মেঝেতে বসে বসে গুন গুন করছিল।আর আনাফ রেলিংয়ে হাত রেখে আকাশের তারা গুনার বৃথা চেষ্টা করছিল।সজীব আর লেভেনের এমন দর্শন দেখে সে হা হয়ে তাকিয়ে ছিল কিছুক্ষণ।
“”বাংলাদেশেই এমন করে জড়িয়ে ধরে বিয়ের আগে তার মানে মালয়েশিয়া তে না জানি কেমন কেমন কাজ করতো এরা দুজন।
শ্বশুর মশাই দেখেশুনে কত বড় চরিত্রহীনের সাথে আমার বউটার বিয়ে দিছিলো।আমার এখনও বিশ্বাস হয়না মেয়েটাকে আমি উদ্ধার করে নিজের করতে পেরেছি।’

ওমা আনাফের সামনে সজীব লেভেনকে হঠাৎই কিস করে ফেলে। এটা দেখে আনাফ চোখ বড় করে পিছিয়ে যায়।তোতলাতে তোতলাতে সারথির হাত ধরে মেঝে থেকে তুলে দাঁড় করায় সে।

‘কি হলো?টান দিয়ে দাঁড় করালেন কেন??’

‘না মানে!চলো রুমে যাই’

‘আমার তো এখানে ভাল লাগছে।আরেকটু থাকি’

‘না না।থাকতে হবেনা।চলো’

আনাফ জোর করে সারথিকে রুমে নিয়ে আসে।বিছানায় বসে এখন জোর জোরে হাঁপাচ্ছে।চোখের সামনে এইসব দেখলে বুকের ভেতর ধড়ফড় করা স্বাভাবিক।সারথি আনাফের হাতটা ধরে বলে,”কি হলো?কিছু দেখলেন নাকি?এমন হাঁপাচ্ছেন কেন?’

‘তুমি কি জানো সজীব অনেক বাজে একটা ছেলে?’

‘হয়তবা’

‘সে কি করছে জানো..সে এখন….’

‘কি?’

‘নাহ কিছুনা।বাদ দাও।আমার খুব ভাল লাগছে,আমি তোমায় সজীবের কাছে থেকে আর কষ্ট পেতে দেইনি।নিজের কাছে রেখে শান্তি দেবো’

‘পাশের বারান্দায় সজীব ছিল তাই না?’

‘তুমি জানলে কি করে?’

‘আমি সজীবের গায়ের গন্ধ চিনি,তার সাথে একটা মেয়েলী গায়ের গন্ধ ও পেযেছি।হয়ত লেভেন’

‘অন্য কেউ ও তো হতে পারে’

‘ঐ বাড়ির সবার গায়ের গন্ধ আমি চিনি’

‘আজ তো তাদের বাসায় অনেক
আত্নীয়’

‘আপনি ওনার হয়ে সাফাই কেন দিচ্ছেন?আমি নিশ্চিত ওখানে সজীব আর লেভেন ছিল।যদি সজীবের সাথে অন্য কেউ হতো তবে তারা কথা বলতো।
আমি কেবল শুনেছি চুড়ির ঝুনঝুন আওয়াজ। আর কিছু………।নাই বা বললাম।ভাল কিছু নয়।হয়ত খারাপ কিছু যেটা জানলে আমার কষ্ট হতো বলেই আপনি আমায় এখানে নিয়ে আসলেন।আপনার ধারণা ভুল।আমি কষ্ট পেতাম না কিংবা পাইনি।উনি আমার কেউ হোন না।

আমি যাকে ভালবাসি,যদি জানি সে আমায় ভালবাসেনা,যদি হাতেনাতে প্রমাণ পাই সে আমায় ধোকা দিচ্ছে,ভুলধারণা পরিষ্কার হয়ে যায় তবে ঐ মানুষটাকে আমি ঘৃনা করি’

চলবে♥#ডাকপাড়ি
#পর্ব_৬৪
#আফনান_লারা
পূর্ণার ঘ্যানঘেনে আওয়াজে রাতে ঘুম শুরু হতো ফারাজের।বিরক্তি যে জিনিসে ছিল সেটা যে এত তাড়াতাড়ি অনুভব করার বস্তু হয়ে পড়বে তা কে জানতো?
ফারাজের সে রাতে বিন্দু মাত্র ঘুম হলোনা।রাতের শেষভাগে এসে মন চাইছিল পূর্ণতার কাছে ছুটে চলে যেতে এরপর ওর চোখে চোখ রেখে বলতে,’পূর্ণ যা মন চায় বলেন,আমি শুনবো।না শুনলে যে ঘুম আসেনা আমার’

আলমারির একটা শেলফে পূর্ণতার নতুন নতুন শাড়ী গুলা সাজিয়ে রাখা ছিল।সেগুলো হাতে নিয়ে দেখছে ফারাজ।দরজা খোলাই ছিল,দাদাজান সে সময় ঐখান দিয়েই নিজের রুমের দিকে যাচ্ছিলেন।হঠাৎ দেখলেন ফারাজকে,হাতে নিয়ে আছে পূর্ণতার সব শাড়ী।এমন দৃশ্য দেখে একদিকে তার মনটা যেমন প্রফুল্ল হয়ে গেলো তেমনই তার মনে হলো এটাই আসল সময় পূর্ণাকে এনে ফারাজের পাশে বসিয়ে দেয়া।এ সময়টাতেই ওদের একে অপরকে প্রয়োজন।যে করেই হোক কাল পূর্ণতাকে এই বাড়িতে নিয়ে আসতেই হবে।দ্রুত হেঁটে তিনি নিজের ঘরে এসে ফোন হাতে তুললেন।কল করলেন অরিন্দমকে।
অরিন্দম সবেমাত্র খাবার সেরে বিছানায় মাথা রেখেছিল,চোখ এখনও লাগেনি।ফোন বাজতেই উঠে বসে রিসিভ করলেন।

‘তুমি জানো পূর্ণতা কোথায় অরিন্দম? ‘

‘এত রাতে ফোন দিলেন যে?আমি তো ভয় পেলাম।পূর্ণতা কোথায় আবার,নিজের রুমেই আছে হয়ত’

‘গিয়ে দেখো তো সে কি করতেছে?’

‘কেন?কিছু হলো নাকি?’

‘যেটা বলেছি করো’

অরিন্দম বাধ্য হয়ে বিছানা ছেড়ে রুম থেকে বের হয়ে পূর্ণতা যে রুমে আছে সেদিকে গেলো।গিয়ে দেখে পূর্ণতা ফারাজের আঁকা একটা ছবি যেটা সে সাথে নিয়ে এসেছিল সেটা নিয়ে বসে আছে।ছবিটা একটা মেয়ের।দাঁড়িয়ে পাহাড় দেখার দৃশ্য।ছবিটাকে খুব মনযোগ দিয়ে সে দেখছিল।অরিন্দম যা দেখলেন সেটাই বললেন দাদাজানকে।দাদাজান খুশি হলেন,এরপর অরিন্দমকে কড়া গলায় জানিয়ে দিলেন কাল যেন তিনি পূর্ণতাকে পাঠিয়ে দেয়।ওর এখানে থাকা খুব জরুরি’
——-
পরেরদিন সকাল সকাল ফারাজ হয়ত ঘুমের ঘোরে বলছিল,’পূর্ণতা এত চেঁচামেচি করিয়েন না,আমায় একটু ঘুামতে দিন পূর্ণা’

সামনে ছিল মা।তিনি ফারাজের এইসব কথা শুনে ওকে ডাক দিলেন।ওমনি ফারাজ হকচকিয়ে উঠে বসে।মায়ের সামনে লজ্জিত চোখে চুপটি করে বসে থাকলো সে।কিসব বলেছে তা সে জানে।কারণ ঘুম চোখে থাকলেও সে জেগে থেকে কথাগুলো ইচ্ছে করেই বলছিল মন হালকা করতে কিন্তু রুমে যে কখন মা এসে সব গুছাচ্ছিল এত সময় ধরে তা সে টের পায়নি।মায়ের এই একটা স্বভাব।কাজ এমন ভাবে করে কাকপক্ষী ও আওয়াজ শোনেনা।
ফারাজের ও তাই হলো।মা মুচকি হেসে বললেন,’তুই না ওরে পছন্দ করিস না?তাহলে এখন ওরে এত মিস করছিস?’

‘মোটেও না।ঘুমের ঘোরে মানুষ কি নিজের ইচ্ছেতে কিছু বলতে পারে?’

‘সেটাই বলছিলি যেটা আসলে বাস্তব।এখন যা ফ্রেশ হয়ে নে।খাবার তৈরি ‘

ফারাজ মনটা খারাপ করে চলে গেলো।মনে পড়ে গেলো ওর পাশে বসে গাপুসগুপুস করে খাওয়া মেয়েটি আজ ওর পাশে বসে খাবেনা।তাকে একাই খেতে হবে।কারণ এখন যে সময় সেইসময়ে সকলের খাওয়া শেষ।
কাল রাতে দেরিতে ঘুম হয়েছিল বলেই আজ তার এত দেরি ওঠা।
—–
পূর্ণতা পুকুর ঘাটের কাছে এসে এক দৃষ্টিতে একটা দৃশ্য দেখছিল।তার চাচাতো ভাই তার বউকে পানিতে ডুবিয়ে দুষ্টামি করছে।
দুজনের হাসাহাসিতে পুকুরের পাড়ে যেন আওয়াজ গিয়ে বার বার বাড়ি খাচ্ছে।
পূর্ণতার দীর্ঘশ্বাস বলে দিলো তার কপালে এইসব নাই।নিজের মতে বিয়েটা করলেও ফারাজ হয়ত এখনও প্রতিমার জায়গা অন্য কাউকে দিতে ২বার ভাবছে।ভাবারই কথা। যাকে ঘিরে ডাকপাড়িতে কতগুলো বছর ফারাজ গুনেছে, সেই বছর গুলো ফিরিয়ে নেয়া যায়না,যাবেও না।ভালবাসার যে সোনার বালা ফারাজ আলমারিতে তুলেছিল সেটা কি করে ভোলা যায়?ডাকপাড়ির ডাক হয়ত ফারাজের কান থেকে যায়নি,হয়ত আজ পার্কের পাশের সেই ডাকপোস্ট তাকে মনে করিয়ে দেয় প্রতিমা কেবল ফারাজের সরলতার উপমা।পূর্ণতা বুঝি কেউ নয়!!!
———
যন্ত্রে বাঁধা মন, ছিল ক্লান্ত অসহায়
অর্থে কেনা সুখ, ম্রিয়মাণ দুঃখের ছায়ায়

আর নয় সময় উদ্দেশ্যহীন মিছিলে
তুমি সেই পূর্ণতা আমার অনুভবে
আর নয় আঁধার, তুমি স্বপ্নে ডেকে নিলে
ভরে মন অন্তহীন রঙ্গিন এক উৎসবে

‘ভাই কি এই গান পূর্ণতা ভাবীকে নিয়ে গাইলেন??’

মতিনের কথা শুনে ছাদের রেলিং থেকে সরে এসে টাংকির পাশে এসে বলে,’কিছু গান আমরা গাই প্রিয় মানুষটাকে উদ্দেশ্য করে।আর কিছু গান গাই সেই গানে প্রিয় মানুষটার নাম আছে বলে।
হয়ত যে গানে প্রিয় মানুষটার নাম উল্লেখ থাকে সে গানটা গাইলে মনের ভেতর যে শান্তিটা পাওয়া যায় তা অন্য গান গেয়ে পাওয়া যায়না।
পূর্ণতা বলেছিল তাকে নিয়ে আমি গান গাইনা।সে যদি শুনতো!’

‘তাহলে হাবিজাবি আরও হিজিবিজি করে দিতো’

ফারাজ ব্রু কুঁচকে বলে,’ও ওতোটাও খারাপ না’

‘খারাপ তো আমিও বলি নাই।উনি অনেক অদ্ভুত ধরনের’
——–
সারথি আনাফের ওয়াশরুমে ঢুকে হারাই গেছে।এত বড় ওয়াশরুম।যত পা চালাচ্ছে কোণার দেয়ালের খোঁজই পাচ্ছেনা।অনেক কষ্টে শাওয়ার খুঁজে গোসলটা শেষ করে বের হয় সে।আনাফ সকাল সকাল বাবার সাথে মর্ণিং ওয়াকে গেছে।
সারথি গোসল করে বের হয়েই বড়সড় একটা ধাক্কা খেলো ওয়ারড্রবের সাথে।এই রুমে সব তার কাছে নতুন।তাই দিশ করে উঠতে পারছেনা।অভ্যাস হওয়া অবধি এমন ধাক্কা খেয়ে যেতে হবে।
হাত ঘঁষতে ঘষতে সে রুম থেকে বের হয়।রান্নাঘর থেকে ফুফু আর আনাফের আম্মুর কণ্ঠস্বর শোনা গেলো।সম্ভবত তারা ফুফুর ছোট বউকে বিয়ে আলোচনা করছিলেন।সেই মেয়ে নাকি খুব ভাল রান্না জানে।কোন কোন পদ করে ফুফুকে খাওয়ায় সেগুলোরই হিসাব দিচ্ছিলেন ফুফু।রান্নার টপিক আরও এগোলো সারথির প্রসঙ্গ আসায়।ফুফু চট করে বলে দিলেন সারথি বুঝি কখনও আনাফের বাবা মাকে রেঁধে বেড়ে খাওয়াতে পারবেনা।এ কথা শুনে সারথির মন খারাপ হয়ে গেলো।সে আর ঐদিকে গোলোনা।চলেই আসছিল কিন্তু হঠাৎ আনাফের আম্মু ওকে অবাক করে দিয়ে ফুফুকে বললেন সারথি খুব ভাল রান্না জানে।কোন উপকরণ কোথায় আছে সেটা শিখিয়ে পড়িয়ে দিলে সে একাই রাঁধতে পারবে।এটা শুনে ফুফু অবাক হয়ে বললেন,’তাই নাকি?খাইয়েছে কিছু?’

‘আপনার ভাইকে তো রান্না খাইয়েই রাজি করিয়েছে’

‘ওমা কি বলো!!!’

সারথির মুখ ভর্তি হয়ে গেলো এক রাশ আনন্দে।আনাফের আম্মু এমন বলবেন তা সে কল্পনাও করতে পারনি।সকাল সকাল মনটা অনেক অনেক ভাল হয়ে গেলো
মনের আনন্দে সামনের দিকে ছুটলো সে।হঠাৎ খেতে হলো জোরেসোরে এক ধাক্কা।এবার ধাক্কাটা কোনো ফার্ণিচারের সাথে নয় বরং লেগেছে আনাফের সাথে।বাইরে থেকে সবেই ফিরেছিল সে।সারথি এবার আর ব্যাথা পায়নি।আনাফ বললো,’এত খুশি কেন জানতে পারি?হাসির কারণে মুখের সৌন্দর্য্য ও তো মেলাতে পারছিনা ঠিক করে।এমন দাঁত কেলিয়ে রাখার কারণ বলো,ওহ হ্যাঁ।তোমার দাঁত কেলানোটাকে আরেকটু বাড়িয়ে দিতে তাজা খবর নিয়ে এসেছি’

‘কি সেটা?’

‘কাল নাকি সজীবের বাবাকে চা পরিবেশন করতে গিয়ে সজীবের হবু বউ লেভেনের শাড়ী খুলে হাতে চলে এসেছিল’

সারথি এ কথা শুনে হাসলোনা।কিন্তু আনাফ হাসতে হাসতে লুটোপুটি খাচ্ছে।

‘এত হাসির কিছু নেই।
মেয়েটা বিদেশে বড় হয়েছে।শাড়ী পরে ধরে রাখা জানবে কি করে?’

আনাফ হাসতেছিল সেইসময় আনাফের বাবা এসে তিনিও হাসছেন।লেভেনের এই কথা আনাফ তাকে না বললেও তিনি শুনেছেন সজীবের আঙ্কেল সানাউল্লাহ থেকে।তিনিও হাসি আটকাতে পারছেন না।এবার ছেলের সাথে এসে একসাথ হয়ে হাসছেন।সারথি লজ্জা পেয়ে এক পা এক পা করে সরে যাচ্ছে।

বাবা হাসতে হাসতে রুমে চলে গেছিলেন, আনাফ সারথিকে তখনই খপ করে ধরে বললো,’পুরো কথা তো শুনবে।শাড়ী খোলার পর সে রাগ করে শাড়ীটা বাকি যেটুকু বাকি ছিল খোলার সেটাও খুলে উর্মির হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলেছে,’মাফ করবা আমার পক্ষে এটা সম্ভব না।বিয়ের দিন লেহেঙ্গা পরে বিয়ে করবো’

‘সবার সামনেই?’

‘হুম।ও জিন্সের সাথে শাড়ী পরছিল।আচ্ছা বাবা হাসছে কেন?’

‘জানিনা তো!’
———-
ফারাজের আজ কাজ নেই। যার কারণে সারাদিন তাকে বাড়িতেই থাকতে হবে।এটা সে একেবারে চায়নি।মন খারাপ শেষ সীমানায় পৌঁছে গেছে।কিছুই ভাল লাগছেনা।অথচ সে এই বাড়িতে এতদিন এমন করেই দিন কাটাতো।ফারাজের বন্ধুবান্ধব নাই বললেই চলে।তারা থাকলে হয়ত তাদের সথে আড্ডা জমিয়ে সময় কাটানো যেতো।এখন সে একেবারেই একা পড়ে গেছে।আগে তো প্রতিমাকে নিয়ে চিঠি লেখে সময় কেটে যেতো।এখন যে একটা সেকেন্ড শেষ হতে এক মিনিট লাগাচ্ছে।কি মুশকিল!
সে কি ছোট বাচ্চা ছেলে যে এত জলদি আবেগে পড়ে গেলো?মেয়েটা কয়দিন বা হলো এসেছে।

‘এত মিস কেন করছি!তাও তার সেই ঘ্যানঘ্যান মিস করতেছি।মেয়েটা ছিল আজব ধরনের আর আমাকেও আজব করে তুলেছে।
তবে আমি চাই সে তাড়াতাড়ি ফিরে আসুক।তার কমতি আমি খুব করে টের পাচ্ছি।আর পেতে চাইনা।’

অর্ক আর বাকি বাচ্চারা স্কুলে।মা আর সায়না কাকি রান্নাঘরের কাজে ব্যস্ত। বাবা বাজারে,দাদাজান হাঁটতে গেছেন।পুরো বাড়িতে নিজেকে কেমন খাপছাড়া লাগলো তার।বইতেও মন বসছেনা।পছন্দের যে বইটা এতদিন সে একানব্বই বার পড়েছিল, আজ বিরানব্বই বারে এসে সেটা অসহ্য লাগছে।অথচ ফারাজের একশোর উপরে একটা বই পড়ার রেকর্ড আছে।ভাল লাগলে ঐ বইয়ের পাতা ছিঁড়া অবধি সে পড়তেই থাকে।
বইটা টেবিলে সাজিয়ে তুলি আর রঙ পেন্সিল নিয়ে বসে সে।আজ সে আঁকবে,একটা মেয়ের ছবি।সেই মেয়েটি পূর্ণ।
সেদিনের সেই ভদ্র লোকরে বলা কথাগুলো কেমন সত্যি হয়ে গেলো।মন দিতে হয়নি হঠাৎ করেই ছবিটা মনের মতন হয়ে গেলো।যেন মন দিতে না চেয়েও ফারাজ মন দিয়েই ছবিটা এেঁকেছে।রঙ ছুতেই ছবিটা এত ভীষণ সুন্দর হয়ে গেলো যে এটা মার্কেটে চড়া দামে বেচা যেতো কন্তু ফারাজ বেচবেনা।রেখে দিবে নিজের কাছে।
কিছু ছবি বেচার জন্য অাঁকা হয়না।নিজের কাছে রেখে দেয়ার জন্য ও আঁকা হয়।এই ছবিটা সেই কাতারে পড়ে।
——
পূর্ণতা বাড়ি ফিরেছে আধা ঘন্টা হলো।বাড়ির সকলের অনুরোধেও সে এখনও ফারাজের কাছে যায়নি।সে ভেবে রেখেছে সারপ্রাইজ দিবে,একবার দেখবে তার অগোচরে ফারাজ কি করে।
ফারাজ সকাল থেকে ছবিটা আঁকায় ব্যস্ত ছিল।ছবি আঁকা শেষ করে দিছে এক ঘুম।কাল রাতে ভাল ঘুম হয়নি, ঘুমালে সময়টা জলদি যাবে ভেবে সে ঘুমাতে মন দিছে জোর করেই।
পূর্ণতা চুপিচুপি ওর রুমে এসেছে ঘুরতে।এসে দেখে তার একটা অসাধারণ ছবি এঁকে সাজিয়ে রেখেছে ফারাজ।পূর্ণতার হা বন্ধ হচ্ছেনা।সে আসলেই কি এত সুন্দর?যতটা এই ছবির মেয়েটা সুন্দর!
আসলেই কি এটা পূর্ণতা!!
ছবিটাতে হাত রেখে পূর্ণতা ফারাজের দিকে তাকায়।ফারাজ ঘুমায়।নাটক করছেনা।সত্যি সত্যি ঘুমাচ্ছে সে।

পূর্ণতা অনেকক্ষণ ওকে দেখে চলেই যাচ্ছিল ঠিক সেসময় তার হাতটা ধরে আটকায় ফারাজ।
পূর্ণতা ভয়ে ভয়ে পেছনে তাকায়।ফারাজের মুখে হাসি ফোটা।
পূর্ণতা ওর হাসি দেখে কিছু বুঝে উঠে পারছিল না।সেসময় ফারাজ বলে ওঠে,’আসলেন আর আমায় ডাকলেন না?’

‘ঘুমে ডিস্টার্ব করতে চাইনি’

‘বেনির দুই বাড়িতে জেগে যেতে হলো’

পূর্ণতা জিভে কামড় দিলো ওমনি।বেনি ঝুলিয়ে ফারাজের পাশে দাঁড়িয়ে নিজের ছবিটা দেখছিল যখন তখন বেনির বাড়ি খেয়েছে ফারাজ তাতেই তর ঘুম ভেঙ্গে যায় তাও চোখ বুজে ছিল কয়েক মিনিট।
পূর্ণতা বেনি ঘুরিয়ে খোঁপা করে ফেলে বলে,’ইচ্ছা ছিল দেখার আমার অনুপস্থিতিতে ঠিক কি করেন’

‘দেখা তো হয়নি তোমার, তাই না?’

পূর্ণতা ছবিটা হাতে নিয়ে বললো,’দেখা হয়ে গেছে এবং বোঝাও হয়ে গেছে’

‘এই আর এমন কি!চিত্রকর ছবি আঁকতেই পারে!!’

‘চিত্রকর আমার শাড়ী নিয়ে কি করছিল?গুছিয়ে রাখা শাড়ীগুলো এলোমেলো করা কেন?যতদূর জানি আপনার না থাকাতে এই রুমে কেউ ঢোকেনা।তবে কাজটা যে আপনার সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ আমার নেই’

‘মোটেও না আমি শাড়ী ধরিনি’

‘বাবার থেকে শুনলাম আপনার নাকি ঘুম চলে গেছিলো আমায় ছাড়া? আর তাই দাদাজান আর্জেন্ট বাবাকে কল করে আমাকে এখানে নিয়ে এসেছে’

‘সব যখন জেনেই বসে আছেন তবে আমার পরীক্ষা নিচ্ছিলেন কেন?’

‘মুখ দিয়ে বের করে দেখার ইচ্ছা জাগছিল।কিন্তু আপনি অনেক ঘাড়ত্যাড়া।মচকালো তাও ভাঙ্গলো না’

চলবে ♥#ডাকপাড়ি
#শেষ_পর্ব(৬৫)
#আফনান_লারা
________
সারথির একটা মারাত্মক রকমের ইচ্ছে ছিল।আর সেটি ছিল খুব উঁচু সেতুর কিণারায় দাঁড়িয়ে দুহাত হাওয়ায় ভাসমান রেখে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা যতক্ষণ তার মন চাইবে ঠিক ততক্ষণ। একবার পড়লে সে পানিতে ডুবে যেতে পারে তাই এই স্বাদটা সে মনের ভেতরেই লুকিয়ে রেখেছিল।
একদিন আনাফ তাকে নদী দেখতে নিয়ে যাওয়ায় হঠাৎ মুখ ফুটে সে ইচ্ছেটার কথা জানিয়ে দেয় সে।সেইদিনটা ছিল একটা স্পেশাল দিন।সারথি আনাফকে জানিয়েছিল সে মা হতে চলেছে।
আনাফ খুশিতে তাকে নিয়ে ঘুরতে এসেছিল এই জায়গায়।সারথির মুখে তার এমন ইচ্ছের কথা শুনে সে না করে দেয় শুরুতেই।কিন্তু তখনই সারথির মুখের ফ্যাকাসে ভাব তাকে একটিবার ভাবিয়ে তোলে।সে ভাবে যদি পড়ে যায় তবে কি করে বাঁচাবে,সেইসময় সারথি বললো,”আপনি আমায় শক্ত করে ধরে রাখতে পারবেন না??’

‘সারথি এইরকম ইচ্ছার কি কারণ??আমি চাইনা এইটা পূরণ করতে।তুমি আমায় মাফ করে দাও প্লিজ!”

সারথি গাড়ীতে হাত রেখে নিজে নিজে ভেতরে গিয়ে বসে।আনাফ তখনও বাইরে দাঁড়িয়ে ছিল।বিয়ের পর সারথির কোনো ইচ্ছাই সে অপূর্ণ রাখেনি।তবে আজকের টা কেমন যেন উদ্ভট!! একটা মানুষ ও না।দুইটা মানুষ!!আনাফ কল্পনা করে সারথিকে সে ধরে রাখলো আর তার হাত ছুটে গিয়ে সারথি নিচে পড়ে গেলো।সেও ঝাঁপ দিলো কিন্তু সারথিকে কোথাও পেলোনা।তারপর কি হবে!!!
কপালের ঘাম মুছে আনাফ গাড়ীতে ফিরে এসে দেখে ভেতরে সারথি নেই।বুকের ভেতরটা ধুক করে উঠলো ওমনি।ওর নাম ধরে ডেকে সে একটু এগিয়ে আসতেই দেখে নদীর পাড়ে গাল ফুলিয়ে বসে আছে সারথি।আনাফ ধীরে ধীরে ওর পাশে এসে বসে।সারথি ওমনি আনাফের কাঁধে মাথা রেখে বলে,’বাদ দিন ঐ ইচ্ছার কথা।যদি মরে যাই!আমার তো বাচ্চার কথাও ভাবতে হবে’

আনাফ সারথির কথায় অনেক খুশি হয়।ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে সে নদীর দিকে তাকায়।একটা লঞ্চ যাচ্ছিল তখন।লঞ্চটাতে ছাদের উপর অনেক মানুষ ছিল সেইসময়। রোজার ঈদের পরেরদিন বলে কমবয়সী যুবকেরা গান চালিয়ে ছাদের উপর নাচানাচি করছিল।তার নিচের তলায় অন্যান্য যাত্রীরা ছিল।আনাফ মুচকি হেসে ছেলেগুলোকে নাচতে দেখছিল,হঠাৎই তার চোখের সামনে ঘটে যায় একটি ঘটনা।২য় তলা থেকে একটি বাচ্চা পানিতে পড়ে যাবার দৃশ্য। ঐ বাচ্চাটি পিলার ধরে ঝুলছিল,দুষ্টুমি করছিল হয়ত।কোনোভাবে হাত পিছলে সে পড়ে গেছে।
তার বাবা-মা আশেপাশে ছিল না মনে হয়।আনাফ স্পষ্ট দেখেছে সেটা।লঞ্চের সেই তলায় থাকা অন্য যাত্রীরাও ছেলেটিকে পড়ে যেতে দেখে।আনাফ সারথির হাত ছাড়িয়ে ঐদিকে ছুটলো দ্রুত।কোনোকিছু না ভেবেই সে পানিতে ঝাঁপ দিয়ে দেয়।
সারথি আচমকা কিছুই বুঝে উঠতে পারছিল না।তার পাশ দিয়ে একটা বয়স্ক লোক ছুটে এসে কিণারায় দাঁড়িয়ে জোর দিয়ে বলে উঠলেন,’হায় হায় কাদের জানি বাচ্চা পইড়া গেছে লঞ্চ থেইকা!’

এই কথা শুনে সারথি ভয় পেয়ে যায়।চেঁচিয়ে আনাফের নাম ধরে ডাকে।আনাফ নেই ওখানে।ততক্ষণে সাঁতরে অনেকদূর চলে গেছে সে।এই মূহুর্তে বাচ্চাটিকে বাঁচানো জরুরি।
সারথির হাত পা কাঁপছে।আনাফ কোথায়!!

আনাফ খুব দ্রুত লঞ্চটা যে জায়গায় থেমে আছে সেখানে এসে পৌঁছে গেছে।ডুব দিয়ে ছেলেটিকে খোঁজার চেষ্টা করছিল সে।
দূর্ভাগ্যবশত লঞ্চের একটা মানুষও পানিতে ঝাঁপ দেয়নি ছেলেটিকে বাঁচাতে।অনেকে জানেও না লঞ্চ কেন সেতুর তলায় থেমেছে।
বাচ্চার মা বাবা ততক্ষণে বাচ্চাকে না পেয়ে চিৎকার শুরু করে দিয়েছে।মূহুর্তেই লঞ্চের দিশা বদলে গেলো।সকলে এবার গম্ভীর হয়ে গেছে।আনাফ একাই খুঁজছে ডুব দিয়ে দিয়ে,এটা দেখে এবার কয়েকজন যুবকের হুশ ফিরলো।তারাও ঝাঁপ দিলো পানিতে।পাঁচ ছয় জন মিলে খুঁজছে বাচ্চাটিকে।
সারথি নদীর একদম কিণারায় এসে আনাফের নাম ধরে চিৎকার করছিল,সেই বয়স্ক লোকটি বললো,’এই পানি অনেক গভীর,সরে দাঁড়ান।আপনার জামাইকে দেখলাম ঐদিকেই গেছে।আপনি শান্ত হোন একটু’

সারথির মাথা ঘুরে উঠলো।পানি গভীর!আনাফের যদি কিছু হয়ে যায়!!
কোথায় খুঁজবে সে তাকে!

সন্ধ্যা ছিল বলে ঢেউ বেশি ছিল।যুবকেরা সবাই হাঁপিয়ে গেছে তাও পাচ্ছেনা বাচ্চাটিকে,লঞ্চটি সেতুর একেবারে নিচে বরাবর ছিল।যুবকেরা ছয়জন সকলেই একসাথে পানির উপরে মাথা তুলে খেয়াল করলো এতক্ষণ তাদের সাথে আনাফ ছিল,এখন আর নেই।সে মাথা তুলে তুলে দম ফেলে আবার ডুব দিচ্ছিল।কিন্তু এখন আর উপরেই উঠছেনা,তাকে কোথাও দেখা যাচ্ছেনা।ততক্ষণে উদ্ধারকারী টিম এসে পৌঁছে গেছে ঐ জায়গায়।যুবকেরা সবই লঞ্চে উঠে গেছে ক্লান্ত হয়ে।এবার উদ্ধারকর্মীরা পানিতে নেমেছে।
সারথির পাশ দিয়ে এক লোক যেতে যেতে বললো,’আমাদের এই পাড় থেইকা সবার আগে যে লোক দৌড় দিছিলো বাচ্চা ছেলেটাকে বাঁচাইতে, সেও নাকি ডুইবা মারা গেছে।’

সারথি কথাটা শুনে এক চিৎকার করে পানির দিকে ছুটেছে।সে সাঁতার জানেনা সেটা তার মাথাতেই সে আনেনি।সে আনাফকে নিজে খুঁজবে!এটাই শুধু মাথায় ঘুুরছিল সেই শুরু থেকেই।সেইসময় ছিল সন্ধ্যা সাতটা।অন্ধকার বলে সবাই হাতে টর্চ নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল।সারথি আনাফকে খুঁজতে নিজেই পানিতে ঝাঁপ দিয়েছে এটা কেউ দেখেইনি।

সারথি সাঁতার জানেনা তাও সাঁতরে দূরে যাবার চেষ্টা করলো,এই সময়টায় তার মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছিল।সে কি করছে!এতে করে কোনো কাজ হবে কিনা এতসব সে ভাবেনি।সে শুধু ভেবেছে সে সেইদিকেই যাবে যেদিকে আনাফ গেছে।আনাফ কোনদিকে গেছে সে জানেনা কিন্তু সে আনাফের কাছে যাবেই!

যে লোকগুলোর পাশে গোলাপি রঙের শাড়ী পরা সারথি নামের মেয়েটি এতক্ষণ চোখ ভিজাচ্ছিল আনাফ আনাফ বলে সেই মেয়েটি এখন নেই বলে লোকগুলো তাকে খুঁজতে এদিক সেদিক ছোটাছুটি করলো।সেখানে থাকা কমবয়সী কিছু পথশিশু বলে উঠলো মেয়েটিকে তারা পানিতে ঝাঁপ দিতে দেখেছে।
এবার নদীর ওাড়ে আহাজারি লেগে গেলো।

রাতের বারোটা অবধি অনুসন্ধান করে লাশ পাওয়া গেলো অবশেষে।১ম লাশটি ছিল একটি মেয়ের।সজীব নামের ছেলেটির জন্য বছরের পর বছর যে ডাকপাড়ির অপেক্ষার খাতা খুলে বসেছিল,।সেই খাতার মালিক সারথি নামের মেয়েটির লাশ ছিল সেটি। লঞ্চের কাছাকাছি জায়গা থেকে তার মৃতদেহ উদ্ধার করে উদ্ধারকর্মীরা।পাড়ে আনতেই লোকজনেরা জানায় কি করে মেয়েটির সাথে এমনটা হলো!
এরপর পাওয়া যায় আরেকটি লাশ!!
এটা সেই ছেলেটির লাশ যার পিছু নিয়ে মেয়েটির মৃত্যু হয়।মানুষ কাউকে ভালবেসে অন্ধ হয়,আর যারা জন্ম থেকেই অন্ধ হয় তারা??
তারা মন থেকেও অন্ধ হয়।যেটা আজ সারথি হয়েছিল।যার জন্য সে আজ অন্ধ হয়েছিল সে মানুষটিও আর রইলোনা!!
যে বাচ্চা ছেলেটিকে কেন্দ্র করে দুজনের মৃত্যু হলো সেই বাচ্চা ছেলেটির লাশ এখনও মেলেনি।
খবরে নদীর পাড়ে পানিতে ডুবে মৃত্যুর ঘটনা শুনে আনাফ এবং সারথির পরিবারের সকলে এসে পৌঁছেছে সেখানে।
কেউ কারের চোখকে মানতে পারছেনা।
সকলের মুখে এক কথা””” সব ভালবাসা পূর্ণতা পায়না কেন!!!”””

এই কথায় দুমড়ে মুচড়ে গেলো ভেতরটা।এক লাফ দিয়ে উঠে বসে আনাফ।
খুব খারাপ একটা স্বপ্ন ছিল!!সারথির হাত গায়ের উপর না পড়লে হয়ত স্বপ্নটা আরও সামনে যেতো।বুকে হাত দিয়ে কাঁপতে কাঁপতে সে সারথির হাতটা আরও শক্ত করে ধরে।ওর নাড়ি চেক করে দম ফেললো সে।তাহলে ওটা স্বপ্ন ই ছিল!
বুকের ভেতর এখনও কাঁপছে।ভোরের আলো রুমে ঢুকে যেতেই সেসময় এলার্ম বেজে উঠলো আনাফের ঘড়িতে।সারথি জেগে জাগার আগেই অন্য হাত দিয়ে ঘড়ি বন্ধ করে ফেলে আনাফ।তাও সারথি জেগেই গেলো।জেগে নিজের হাতটা আনাফের কাছে বুঝতে পেরে সে জানতে চায় কি হয়েছে।

‘না কিছুনা।কিসের যেন স্বপ্ন দেখেছি’

‘ওহ!ভাল কথা মনে পড়লো।আপনি না বলছিলেন আমায় আজ নদীতে ঘুরতে নিয়ে যাবেন?মনে আছে তো?নাকি আজও আপনার কাজ।আচ্ছা এলার্ম কিসের জন্য দিছিলেন?’

আনাফ কপাল মুছে বলে এখন কাজে যাবে সে,জরুরি কাজ আছে।কাল রাতে যে রোগী এসেছিল তাকে একটা ইনজেকশান দিতে যেতে হবে এই সময়।’

এই কথা বলে তাড়াহুরো।করে তৈরি হয়ে নেয় আনাফ।সারথিকে কিছু বলার সুযোগই দেয়নি।মিনিট দশেকের ভেতর তৈরি হয়ে সে চলেও গেলো।সারথি বিছানায় বসে আছে এখনও।
বিয়ের কতগুলো মাস কেটে গেলো, তাও মনে হয় এই তো সেদিন আনাফের হাত ধরে এ বাড়ি আসলাম!
সেসব বাদ দিয়ে মুচকি হেসে বালিশের তলা থেকে রিপোর্টের ফাইল বের করে সারথি।আনাফের কলিগ উত্তম দাস সারথির রিপোর্ট দেখে বলেছে সে মা হতে চলেছে।এই খবর সারথি এখনও জানায়নি আনাফকে।উত্তমকেও মানা করেছে।আজ নদী দেখতে গেলে জানাবে।

আনাফ সারাদিনের কাজের চাপে বিকালে ঘুরতে যাবার কথা একেবারেই ভুলে গিয়েছিল।বাসায় ফিরে সারথিকে তৈরি দেখে তার মনে আসলো সেটার কথা।এইদিকে সকালের সেই স্বপ্ন আজ সারাদিন ধরে তাকে তাড়া করে বেরিয়েছিল।একটুও শান্তি সে পায়নি।এখন আবার সেই স্বপ্নের মতন নদী দেখতে যাওয়াতে তার মন সাঁই দিচ্ছেনা।
কিন্তু সারথিও নাছড়বান্দা।সে যাবেই।তার ধারণা একটা সুন্দর পরিবেশে সে সুখবরটা আনাফকে দেবে।সারথির জোরাজুরিতে আনাফ বাধ্য হয়েই ওকে নিয়ে নদীর পাড়ে আসে।কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর আনাফ যখন বলতে যাবে তাদের বাসায় ফিরে যাওয়া উচিত সেইসময় সারথি একটা ফাইল ধরে ওর দিকে।আনাফ ফাইলটা হাতে নিয়ে দেখতে গিয়েও দেখলোনা।না দেখেই বলে,’তুমি প্রেগন্যান্ট? ”

সারথি মুখে হাসি ফুটিয়ে আনাফের হাত টেনে ওকে জড়িয়ে ধরলো শুধু।আনাফের হাত থেকে ফাইলটা পড়ে গেছে ততক্ষণে।স্বপ্ন এভাবে সত্যি কেন হয়ে যাচ্ছে!তাহলে কি সে এখন মারা যাবে!!তাহলে কি তার পিছু পিছু সারথিও মারা যাবে!!দূর থেকে একটা লঞ্চ আসছে এইদিকেই।সেতুর তলা দিয়েই যাবে।
আনাফ লঞ্চ টার ছাদের দিকে তাকায়,স্বপ্নের মতন ওখানে যুবকের দল নেই!তখনই তার মনে হলো মাথার উপর থেকে একটা বোঝা নেমে গেলো।স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে সারথিকে আরও শক্ত করে ধরে সে।এরপর ধীর স্বরে বলে,’সব ভাল মূহুর্ত বাহিরে কাটানোই কি জরুরি সারথি?বাসায় সেলিব্রেট করা যায়না??’

‘কাল নদীতে যে বাচ্চাটি পড়ে গিয়েছিল তার লাশ আজ পাওয়া গেছে।খবর দেখেছিলেন?”

‘হ্যাঁ’

‘আপনার কি সেই ঘটনা নিয়ে আজ নদীর পাড়ে আসতে ভয় হচ্ছিল?’

‘শুরু থেকেই মাথায় একটা কথাই ঘুরেছে।আমাদের এত সুখ হয়ত সইবেনা!সেই ভয় থেকে আমার এখন এমন হাল হয়েছে যে এত ভাল একটা সংবাদ শুনেও হাসতে পারছিনা।আমার বিশ্বাস হচ্ছেনা আমরা সুখী।ভবিষ্যতে আরও সুখী হবো!!!’

‘মাঝে মাঝে কিছু ভালবাসা দারুণ ভাবে পূর্ণতা পায়, জনাব আনাফ!!’
———–
ডাকপোস্টের সামনে দাঁড়িয়ে সবসময়কার মতন দ্বিধায় ভুগছে ফারাজ।আজও সে প্রতিমাকে চিঠি দেবে।তবে আজকের চিঠিটা একেবারে অন্যরকম।
আজ এই চিঠিতে প্রতিমাকে সে ফিরতে বলেনি।নিজের ভালবাসার গভীরতাও জানায়নি।
গোটা চিঠিরাই ছিল অন্য একজনকে নিয়ে।আর সে হলো পূর্ণতা।
ফারাজ প্রতিমাকে লিখেছিল
‘আমি হয়ত তোমায় ভালবেসেছিলাম,প্রেমে পড়েছিলাম,এরপর হারিয়েছিলাম।ভেবেছিলাম তোমায় ছাড়া আমি হয়ত আর কাউকে মেনে নিতে পারবোনা কখনও।কিন্তু কি জানো!তুমি থাকতেই একজন কি করে যেন মনে জায়গা পেতে নিলো।আমি বুঝতেই পারিনি।নিয়তি শুধু জায়গা পরিষ্কার করে দিলো।তুমি হয়ে গেলে অন্য কারোর আর আমি হয়ে গেলাম এই মেয়েটির।পূর্ণাকে নিজের ইচ্ছেতেই বিয়ে করেছি।তাও বুঝতে পারছিলাম না কেন করেছি!মনে হচ্ছিল আমাকে দিয়ে কেউ সব করাচ্ছে।পূর্ণতা নিজেও বিরক্ত ছিল আমার উপর।তার মতে আমি যখন তাকে নিজের সম্মতিতেই বিয়ে করলাম তবে তাকে আপন কেন করে নিচ্ছিনা।মেয়েটা আমায় বোঝে!
জানিনা কেন!আমার সব কিছুর খেয়াল রেখেও দিনের শুরুতে কোমড়ে আঁচল গুজে আবার ঝগড়া করতে নেমে যায়।বুঝিনা সে কেন এমন করে,যেন আমি তার বেস্টফ্রেন্ড।অথচ আগে আমায় সে চিনতোও না।অল্প দিনের পরিচয়ে কতটা মিশে গেলো!ভাবিনি তোমায় এত সহজে ভুলতে পারবো।ধরে নিয়েছিলাম নিজের বউটা আজীবন কষ্ট পাবে!বলবে আমার বর আরেকজনের প্রেমে মত্ত!
আমি কি জানতাম বউটা আমার পূর্ণতা হবে!কেমন করে আমার খুব কাছের হয়ে গেলো।তোমায় ছাড়া কয়েকটা বছর অনেক কষ্টে কাটিয়েছি,আর এখন পূর্ণতাকে ছাড়া একটা দিন আমার বিষের মতন কাটে!
আমি তোমায় এই চিঠিটা লিখেছি জানাতে যে তুমি সুখী থেকো।আমায় নিয়ে ভেবোনা।আমায় তোমার মতন করে ভালবাসার একটা মানুষ পাশে দাঁড়িয়ে গেছে।হয়তবা তোমার চেয়েও একটু বেশিই ভালবাসে।আর আমিও তাকে!!!সকালে বেরিয়েছিল স্কুলে পড়াতে।বিকাল হয়ে গেলো ফেরেনি বলে আমার দুপুরের খাওয়াটা জমেনি।এক লোকমা খেয়েই উঠে পড়েছি।ভাল লাগেনা কাছে না থাকলে।ঠিক করেছি ওর স্কুলের ফাঁকা একটা রুম দখল করে সেখানেই আঁকিবুকির কাজটা চালিয়ে নিবো,অন্তত ওর কাছাকাছি থাকা হবে।এইটা হয়ত তোমায় দেয়া আমার শেষ চিঠি। ভাবছি আর লিখবোনা তোমায়।পূর্ণতা অনেক জেদি।যদি জানে তোমায় চিঠি লিখি এখনও তবে আগুন ধরিয়ে দিবে আমার গায়ে।তোমার গায়েও ধরাতে পারে।তোমার উপকার করতে চেয়েই তোমায় লেখা এই আমার শেষ চিঠি।আজ থেকে তোমায় নিয়ে আমার ডাকপাড়ি বন্ধ হলো,ভাল থেকো’

চিঠিটা পোস্ট করে দিয়ে ফারাজ পূর্ণতার স্কুলে আসে।বিকাল ৪টা বাজে।এখনই ছুটি হবে।
ফারাজ গেটের বাইরে অপেক্ষায় ছিল পূর্ণতার।পূর্ণতা বের হয়েছে পাঁচ মিনিট পরেই।বেশি দাঁড়াতে হয়নি তাকে।আজ রিকশায় পূর্ণতাকে অন্যরকম লাগছিল।দাঁত কেলিয়ে অকারণেই হাসছিল।বাড়িতে ঢোকার সময় ও তার হাসিটা মজুত ছিল।
শেষে ফারাজ ওর হাতটা ধরে ওকে থামায়।জানতে চায় কি হয়েছে।পূর্ণতা হাত ছাড়িয়ে নেয়।জবাব দেয়নি।
সোজা চলে যায় রান্নাঘরে।ফারাজ ভাবছে কি কারণ হতে পারে এর?সোফায় বসে এসবই ভাবছিল ও।দশ মিনিট পর পূর্ণতাকে সে আবার দেখে।হাতে চায়ের কাপ নিয়ে সে ফারাজের সামনে রেখে আবার চলে যায়।
ফারাজ ওর চলে যাওয়া দেখে চায়ের কাপটা হাতে নিতেই দেখে কাপের সাথে একটা চিরকুট।যেটা কিনা কাপ উপরে তোলায় নিচে পড়ে গেছে।সে এবার চিরকুটটা তোলে,পরে ভাবে আগে চা খেয়ে নিই।মাথা ব্যাথা কমাতে গরম গরম চা জরুরি।
চায়ে কয়েকটা চুমুক দিয়ে জলদি চা শেষ করে সে চিরকুটটা মেলে ধরে।তাতে লেখা—-
“”””ঠিক বলেছেন, আপনার প্রতিমাকে চিঠি দেয়া আমার পছন্দ না।অন্যায় হলেও আমি চিঠিটা লুকিয়ে পড়ে ফেলেছি আগেই।আবারও ঠিক বলেছেন ঐ মেয়েকে চিঠি দেয়া আমার পছন্দ হবারও কথা না।হয় ও নি।আর তাই আজ ইউরিন মিক্সের পানি দিয়েই আপনাকে চা বানিয়ে খাওয়ালাম।আপনার এতদিনের রেকর্ড ভাঙ্গলাম।আজ সকালেই যাবার সময় টাংকির তালা খুলে রেখে গেছিলাম।চা নোনতা লেগেছে ডিয়ার হাসবেন্ড😇?’

ফারাজের হাত থেকে চিরকুট পড়ে গেলো নিচে।থু থু করতে করতে সে ভেসিনের দিকে ছুটে চলে গেলো অমনি।
সমাপ্ত

(ভেবেছি সেড ইন্ডিং দিবো।পরে আর পারিনি।সাহস কুলালো না।নতুন গল্প কাল পাবেন♥)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here