#তনুশ্রী♥
#লেখক:হৃদয় আহমেদ
#পর্ব_১৪
চম্পার কান্না দেখে রিমি জড়িয়ে নেন ওকে। বলেন,
– কি হইছে মা? কান্দো কিল্লাই? ‘
চম্পা থামে না। বাচ্চাদের মতন হাউমাউ করে কাঁদতে থাকে। এদিকে তনু সহ সকলে অবাক চোখে তাকিয়ে। রিমি আদেশের ন্যায় বলেন,
– তোমরা সবাই যাও এহন।
আদেশ অনুযায়ী বেড়িয়ে যায় সবাই। রিমির স্বর উতলা,
– ওই মাইয়া কান্দো ক্যা? কি হইছে? ক্যামনে জানছো সব? ‘
অতি কষ্টে কান্না থামায় চম্পা। কিন্তু ফোঁপাচ্ছে আর হেঁচকি তুলছে। বলে,
– শেষ যেইবার আমরা নায়রে গেলাম,নিজ মুখে উনি আমারে সব বলেছিলো। শুনেই কলিজা কেঁপে ওঠে আমার৷ কত টাকা পায় সেসবও বলেছিলো! কেন বলেছিলো জানেন? কারন, ওই নরপশুটার চোখ আমার বোনের দিকে গেছিলো। সে আনন্দের সহিত আমায় বললো তার কিছু টাকার প্রয়োজন এখন সে ককোলিকেও নিয়ে যাবে গোয়ালাদাপূর! লোভ আমাকেও কম দেখালো না! শাড়ি,গহনা,অলকঙ্কার ইত্যাদি ইত্যাদির লোভ দেখাতে ব্যাতিব্যস্ত! এসব আমি কি করে মেনে নিতাম আম্মা? হু, কি করে? যখন না বললাম তখনি উনি রক্তচক্ষু নিয়প করলেন আমার উপর! ঘরের বেড়াল তাড়ানো লাঠি পিঠে ভাঙলেন আমার। চুপ ছিলাম! আম্মা,আব্বা যদি শুনতো তাইলে কি আর জিবনেও আসতে দিত আম্মা? কালোদিনগুলোরও শুরু সেই থেকেই। আপনি…এই দেখেন! ‘
চম্পা নিজের হাতের উল্টোপিঠ বাকিয়ে দেখায়, ঘন কালো আবরনে বড় বড় দুটো ফোসকা পড়েছে! কেউ যেন আগুন বিড়ি লাগিয়ে দিয়েছিলো হাতে! চম্পা উঠে দৌড়ে চলে যায়। লক্ষ্য করেনা পর্দার আড়ালে কে ছিলো। তির্থের প্রতি সে লুকানো ব্যাক্তিও রেগে যায়। পর্দার চাদর খামচে নেয় সে!
__________
সন্ধা নামার পর থেকে তূর ঘরে পাইচারি করছে! চিন্তায় তার হাত পা কাঁপছে! আজ প্রথম তাকে এতটা চিন্তা ঘিরেছে! ইশয়াখ যাওয়ার আগেই তূরকে হরহর বলে গেছে যেন আটটার মধ্যেই তনুকে আনা হয়! এখন কম হলেও বাজে সন্ধ্যা ছয়টার বেশি! কি করবে? তনু তখনি ঘরের দারে দাড়ায়! তূরকে পাইচারি করতে দেখে এগিয়ে আসে,
– কি হইছে? ‘
তূর ফিরে তাকায়। আজ তনুর মুখ বড্ড বিষাদময়! ঠোঁঠের কোনায় হাসি নেই! তূর কিছু বলে না প্রতিত্তোরে। তনু ঘরে প্রবেশ করে বলে,
– সমস্যা কোথায় হুনি? ‘
– না আসলে..
– আসলে কিতা? এতে নকলও আছে নাকি?
– তোমায় অসুস্থ দেখাচ্ছে!
তনু কপাল কুঁচকে হেঁসে বলে,
– কে বললো?
– আমি নিজে দেখছি!.
– ডাক্তারখানায় নিয়ে যাওয়ার ধান্দা? ‘
চোখ বড়বড় করে তাকায় তূর। মেয়েটা খুব তারাতাড়িই জানতে পারছে অনেক কিছু! কি করে? কে বলছে? তূর শান্ত স্বরে বলে,
– তোমার চোখের নিচে কালো দাগ! মুখ নেমে এসেছে কেমন! তাই বললাম! দরকার পড়লে চলো যাই ডাক্তারের কাছে! ‘
– আজ এত তাড়া? ‘
তনুর একেকটা প্রশ্ন ক্ষত তৈরি করছে তূরের মনে! তূর গলা আটকানো শোনায়,
– ক্ কি আবার তাড়া?
– তাইলে ক্যান হাসপিটাল যাইতে চান? ‘
তূর মেঝের দিকে তাকায়। তনু হেঁসে হেঁসেই বলে,
– আমার নিয়া যাইবার কইছে তাই না?
চমক খায় তূর! সে আজ পদে পদে চমক খাচ্ছে! আর এটার শুরু তার মায়ের সবটা জানা নিয়ে! তূরের গলা ভেজা,
– হু।
– কি করবো আমারে নিয়া?
তূর মুখের দিকে তাকায়। তনু এখন না জানলেও পরে সবই জানবে। তূর বলে দেয়,
– তোমার কিডনি নেওয়া হবে! ‘
মাথায় বাজ পড়ে তনুর। চোখ ঘোলা হয়ে আসে ক্রমশ! তবুও তনু ঘাট হয়ে বিছানায় বসে রয় তূরের পাশে।
– সেই জিনিসটার দাম কত?
– জীবিত মানুষের কিডনির দাম মোটামুটি ১,১২,১৯,২৯০ টাকা। মৃত মানুষের কিডনি দাম ০৮,০৬,৪৪৬ টাকা। ‘
– আমারে আগে মারবো তাই না?
– কখনোই না! শুধু…
– শুধু কি তা?
– তোমারে ঘুম পাড়াইয়া অপরেশন করে কাটা হবে, তারপর নিয়ে আবারো সেলাই দেয়া হবে! ‘
– বাকিদের কয়টা কিডনি কাটা হইছে?
– সবারই একটা করেই কাটা হয়। সিঙ্গেল পিচ হিসেবে পাঠানো হয় বিদেশে! ‘
– আমার খবর পাইলেন কই?
– তোমার আব্বা দিছে। বিদেশে একজন কোটিপতির মেয়ের একটা কিডনি অকেজো হয়ে যায়। তারা সুন্দর কারো ছবি চায় এদেশ থেকে। মোড়লপাড়ায় ছিলে শুধু তুমি! তোমাকেই ইশয়াখও পছন্দ করে! ঢাকা গিয়ে পাঠানো হয় ছবি। এখন তোমারই কিডনি চাই! ‘
তনু আজিদের প্রতি ঘৃনা ছোড়ে মনেমনে! কিন্তু আগ্রহ কমে না। সে বলে ওঠে,
– আইজই নিয়া যাইবেন?
– ইশয়াখ তো তাই বলেছে! ‘
তনু আকস্মিক তূরের বুকে মাথা রাখে। দুপুরেও একবার এমন করেছে তনু! আচ্ছা তূরকে তার ঘৃনা হচ্ছে না? ভাবে তূর। তনু স্বর নিচু,
– আমি তো আজ যেতে পারবো না মসাই! ‘
আবারো অবাক হয় তূর! এতকিছু শোনার পরও তনু যেতে রাজি? তূর উতলা হয়,
– মানেহ্?
– কাল যাবো দুজনে কেমন?
– তুমি যাবা?
– হ! ক্যান যামু না? নিজের স্বামী যদি পাপ করতে পারে স্ত্রীও সেই পাপে সেচ্ছায় যোগদান করতে পারে! এটা করলেই তো আপনি মুক্ত তাই না? তাহলেই তো দুজনে একসাথে থাকতে পারবো! সুখী হব! কাল যাবো! যদি আজ জোরাজুরি করা হয় তাহলে আত্নহত্যা করতে পিছু হটবে না তনু! ‘
তূর আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে নেয় তূরকে। চোখ ছলছলে! তূরের নিষেধাজ্ঞা স্বর,
– তুমি পালাও তনু। আমি পারবো না! পারবো না আমি তোমার সাথে এমন অন্যায় করতে! ‘
– পারবে! পারতে আপনারে হবেই! নাহলে আমারে হাড়াবেন আফনি! কাউকে খুন করতে হলেও করবো! কিন্তু চাই আপনারের! ‘
– তুমি স্বার্থপরের মতো কথা বলছো না?
– না তো! নিজের স্বামীরে যাওয়া বুঝি স্বর্থফরের মতোন কাজ? ‘
– আমার অচেনা লাগছে তোমাকে!
– আফনিওতো চেনা ছিলেন কোন একদিন! ‘
তনু উঠে যায় তৎক্ষনাৎ সেখান থেকে! চিন্তামগ্ন তূর বসে রয়। দরজায় দাড়িয়ে তূরকে দেখে হাসে তনু। বিরবির করে বলে,
– জাগো তনুশ্রী! জাগো!
__________
রাত পেরিয়ে আলো ফুটেছে চারিদিকে। তনু টের পেতেই উঠে বসে। তূরের পাশ থেকে আস্তে করে উঠে দরজার সামনে যায়। ঘর এখনো অনেকটা অন্ধকার। তনু ফিরে তাকায় একবার। না! তূর জেগে নেই। সে আস্তে করে ঘর থেকে বের হয়ে যায়। চারিদিকে তিন শাশুড়ি আর পাশে চম্পার ঘর! তনু খুব ধিরে জুঁই এর ঘরে টোকা মারে। পরপর বারোটা আস্তে টোকা দেয়ার পর জাগে জুঁই। খুলে দেয় দরজা! এরপর বাকি সব শাশুড়ীর দরজা খোলে তনু্। জাগায় সবাইকে! চারজনে চুমকির ঘরের পালঙ্কে বসে। সকলে কৌতুহল নিয়ে তাকিয়ে তনুর দিকে। জুঁইতো বলেই ফেললো,
– কিছু হইছে? আমাগোর সবাইকে এইহানে ডাকলা ক্যা? ‘
– কইতাছি!
– কও দেহি বড় বউ!
– আমি একখান কাজ করতে চাই। তোমাগোর সাহায্য খুব দরকার! ‘
– কি কাজ? ‘
বললো টগর। তনু বলে,
– শুনো তাহলে…
____
সন্ধ্যা প্রায় হয়ে এসেছে! তনু মিথ্যে যন্ত্রনার নাটকে ব্যাস্ত! পেট ব্যাথার নাম করে তনু ছটফট করছে। রিমি পাশে বসে। তিনি যেন কোথাও ধ্যান ধরেছেন। তার বুক ফেটে আসে দীর্ঘশ্বাস! তিনি জানেন সবার মতন তনুকেও ঔষধ খাওয়ানো হয়েছে। তাই তনু ছটফট করছে। তূর ডাক্তারের কাছে যাওয়ার জন্য বেরোচ্ছে। তার হিতাহিতজ্ঞান যেন হাড়িয়েছে কোথাও! তনুর ছটফটে এতটাই কঠিনতম যেন সত্যি সত্যিই তার অসয্য ব্যাথা হচ্ছে। তূরের কিছু ভালো লাগছে না। তনু তাকে একবারও বলেনি এটা নাটক! তাহলে কি সত্যিই মেয়েটার অসুখ? বাকি তিন শাশুড়ি এ ঘরের আশেপাশে নেই! ব্যাপারটা আশ্চর্যকর! তূর সবকিছু নিয়ে তনুর সামনে যায়। বাইরে ভ্যান ভারা করা হয়েছে! তূর ভেজা কন্ঠে জিজ্ঞেস করে,
– কোন ডাক্তারের কাছে যাবে তনু? ‘
কোমরে হাত গুজে অস্ফুটস্বরে বলে তনু,
– গোয়ালাদাপুর হাসপাতাল!
#চলবে….
দেড়ি ও ছোট হওয়া নিয়ে কেউ অভিযোগ তুলবেন না দয়া করে! সামনে পরিক্ষা আমার।